text
stringlengths
0
4.32k
তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে
মানুষের শোভা পায়?
ল্যাব্রাডর কুকুরঃ
বিগত ৩০ বছর ধরে এ প্রজাতির কুকুর মানুষের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। এ প্রজাতির কুকুর মানুষের কাছে সবচেয়ে পছন্দীয় থাকার জন্য এরা সবধরনের কাজ করে থাকে। এতে করে তারা তাদের মালিকের প্রতি সবচেয়ে অনুগত থাকে। এ ধরনের কুকুরকে অলরাউন্ডার বলা চলে। কেননা এরা একাধারে শিকার, অভিব্যাক্তি প্রকাশ, ট্রাকিং করে থাকে এবং অনুগত।
জার্মান শেপার্ডঃ
এ প্রজাতির কুকুর যে কারও পছন্দের। কারন এরা দুরে কোথাও ভ্রমণের সময় বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসাবে নিজেদের অনেকবার প্রমান করেছে। এজন্য এরা পুলিশ এবং মিলিটারীর বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়। এদের সার্ভিস কুকুরও বলা হয়। কারন এরা নির্দিষ্ট কাজের জন্য সঠিকভাবে সার্ভিস দেয়। তবে এরা তাদের আসল মালিকের প্রতি অনেক বিশ্বস্ত থাকে।
গোল্ডেন কুকুরঃ
এরা সবচেয়ে বুদ্ধিমান কুকুরদের মধ্যে একটি। অন্য প্রজাতির কুকুরের চেয়ে এরা মানুষের সাথে বেশি মিশুক প্রকৃতির। বিভিন্ন সিনেমাতে অনেক সময় কুকুর ব্যবহার করা হয়। স্টার গ্রুপ সহ অন্য প্রোডাকশনের ছবিতে এ প্রজাতির কুকুর ব্যবহার করা হয়। স্টার গ্রুপের “এয়ার বাড” “ফুল হাউস” “হোমওয়ার্ড বাউন্ড” ইত্যাদি সিনেমাতে অলরেডি এ প্রজাতির কুকুর অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ফ্রেঞ্চ বুলডগঃ
ফরাসিদের বড় ব্যাক্তিত্ব রয়েছে। এ প্রজাতির কুকুরের ক্ষেত্রে কথাটি অনেক গুরুত্বপূর্ন। তবে এরা একটু অলস প্রকৃতির এজন্য এদের সামান্য এক্সারসাইজের প্রায়োজন হয়। তবে পরিবারের সাথে পোষা প্রানী হিসাবে এদের দারুন মানায়। কারন এদের আকার-আকৃতি সহ আরও অনেক দিক থেকে মানুষের কাছে পোষা প্রাণী হিসাবে অনেক প্রাধান্য পায়। মানুষের নিকট জনপ্রিয়তার জন্য এদের দাম একটু বেশি
বুলডগঃ
এ প্রজাতির কুকুর আমেরিকা, হাঙ্গেরি এবং যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এদের দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি মানুষের পছন্দ তালিকায় অনেক উপরে রয়েছে। এদের উৎপত্তি ত্রয়োবিংশ শতাব্দীতে । এদের অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে ট্রেনিং দেওয়া হয়।
বীগলস কুকুরঃ
এ প্রজাতির কুকুর দেখতে অনেকটা মাঝারি আকৃতির। এদের ঘ্রানশক্তি অনেক বেশি। এরা দেখতে অনেকটা শিয়ালের শাবকের মত। এদের জীবনকাল ১২-১৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ প্রজাতির কুকুরের উৎপত্তি ইংল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন, যুক্তরাজ্য দেশগুলোতে।
পোডল কুকুরঃ
এ প্রজাতির কুকুরের যতগুলো জাত আছে সবগুলোই এই নামে পরিচিত। এটি একটি জনপ্রিয় জাতের কুকুর। এ জন্য এটি খেলনা অথবা টেডী হিসাবেও ব্যবহার করে থাকে। এদের শরীরের লোম সুন্দর ভাবে কাটা থাকে। এর লোমই এদের বাকি সব কুকুর থেকে আলাদা করে থাকে।
রটওয়েলার কুকুরঃ
এ কুকুরের উৎপত্তিস্থল জার্মানীতে। এদের জীবনকাল ৮-১০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু এরা এদের অভিভাবক বা মানুষকে বিশেষভাবে সুরক্ষা করে। তবে এরা তাদের মালিকের প্রতি সবচেয়ে বেশি অনুগত থাকে। যেহেতু এরা মালিকের প্রতি সবচেয়ে বেশি আনুগত্য থাকে সেহেতু এরা সহজেই ফ্যামিলিতে থাকতে পারে। বাহিরের দেশগুলোতে এসব কুকুরের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের যথেষ্ট সখ্যতা থাকে। এদেরকে পারিবারিক সদস্যের মত আচরন করা হয়।
জার্মান পয়েন্টারঃ
এরা বাকিসব কুকুরের মত শিকার করতে পারে। তবে এদের বিশেষত্ব হল এরা বুদ্ধিমত্তার জন্য বিশেষ ভাবে পরিচিত। এদের ঘ্রানশক্তি প্রখর এবং এরা কোনকিছু অনুসন্ধান করতে পারদর্শী। এদের জীবনকাল ১২-১৪ বছর এবং এদের ট্রেনিং দিয়ে বিশেষ ভাবে উপযুক্ত করা যায়। কুকুরের সঙ্গে অন্য প্রানীর বিশ্বস্ততা তুলনা করা যায় না কারন এরা নিজেদের জীবন দেয় কিন্তু এদের মালিকের সর্বদা অনুগত থাকে।
ইয়োর্কোশায়ার কুকুরঃ
কুকুরদের মধ্যে যদি ফ্যাশন শো করা হয় তাহলে এরা অনায়সে ট্রফি জিতে নিবে। প্রাচীন ভিক্টোরিয়ার আমল থেকে যুগ যুগ ধরে এরা এদের রূপের জন্য প্রশংসিত। এজন্য এরা ফ্যাশান করতে পছন্দ করে। তবে এদের জীবনকাল ১৩-১৬ বছর পর্যন্ত হয় এবং এদের সর্বোচ্চ ওজন ৭ পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে।
কুকুর কত দিন বাঁচে?
প্রাণী হিসেবে অনেকেরই কুকুর বেশ পছন্দ। সেটা পোষা হোক বা রাস্তার। ছোটখাটো এই প্রাণীটির বিশ্বস্ততা প্রবাদতুল্য। মানুষের সংস্পর্শে আসা প্রাণীদের মধ্যে কুকুরের চেয়ে বেশি বিশ্বস্ত প্রাণী খুব একটা দেখা যায় না। প্রয়োজনে জীবন দিতেও পিছপা হয় না। তা ছাড়া কুকুরের ঘ্রাণশক্তিও বেশ ভালো। তাই মানুষের আগেই অনেক কিছু বুঝতে পারে। বিপদে আগে থেকে সতর্ক করে দেয়। এরকম নানা কারণে হাজার বছর ধরে কুকুর পুষছে মানুষ। শিকার, অপরাধ শনাক্ত করা বা সঙ্গ দেওয়ার মতো কাজে এখনও কুকুর মানুষের নিত্য সঙ্গী।
বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৪৫০ জাতের কুকুর আছে। জাতভেদে কুকুরের আচরণ যেমন কিছুটা ভিন্ন হয়, তেমনি আকারেও হয় ছোটবড়। প্রশ্ন হলো, জাতভেদে কি কুকুরের আয়ু ভিন্ন হয়? কুকুর মূলত কতদিন বাঁচে?
নানাজাতের কুকুরের জীবনকালের গড় নির্ণয় করলে করলে দেখা যায়, এগুলোর আয়ু ১০ থেকে ১৩ বছরের মতো। তবে জাতসহ আরও কিছু বিষয়ভেদে এটা অনেক কম-বেশি হতে পারে। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক কুকুর হিসেবে বিবেচনা করা হয় ‘ব্লুয়ি’কে। অস্ট্রেলিয়ান ক্যাটল প্রজাতির এই কুকুর বেঁচে ছিল প্রায় সাড়ে ২৯ বছর।
কুকুরের জীবনকাল নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে পৃথিবীজুড়ে। বর্তমানেও যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি গবেষণা চলমান। এর নাম ‘দ্য ডগ এজিং প্রজেক্ট’। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করছেন, জিন, জীবনযাপন পদ্ধতি এবং পরিবেশ কুকুরের বয়সবৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় কেমন প্রভাব ফেলে।
এ গবেষণা বলছে, কুকুরের বেঁচে থাকার ‘গড়’ বয়স ১৫ থেকে একটু বেশি। গবেষণা যেহেতু, একটি সঠিকভাবে বলা প্রয়োজন। এখানে ‘গড়’ মানে, মধ্যক। গড় তিনভাবে হিসাব করা যায়। এক, এভারেজ বা মিন বা গড়; দুই, মিডিয়ান বা মধ্যক এবং তিন, মোড বা প্রচুরক। সহজ করে বললে, যে সংখ্যাগুলো নিয়ে হিসাব করা হচ্ছে, তাদের ঠিক মধ্যিখানের মানটিকে বলা হয় মধ্যক। তবে অনেকক্ষেত্রেই গড় ও মধ্যক এক হয় না। তা ছাড়া গড়মান নির্ণয়ের আরও নানা পদ্ধতি আছে। তবে বাংলায় এগুলোকে সাধারণত এক কথায় ‘গড়’-ই বলা হয়।লিঙ্গ, অর্থাৎ স্ত্রী-পুরুষ ভেদে কুকুরের জীবনকাল কিছুটা ভিন্ন হয়। আকারে ছোট প্রজাতির কুকুরগুলো তুলনামূলক বেশি বাঁচে। সবকিছুরই অবশ্য ব্যাতিক্রম আছে। যেমন ফ্রেঞ্চ ম্যাস্টিফ। তুলনামূলক ছোটজাতের কুকুর। গড় জীবনকাল ৫ থেকে ৬ বছর। কুকুরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে কম বাঁচে বলে মনে করা হয়।কুকুরের আয়ুষ্কাল তো জানা গেল। এবার এগুলোর আয়ু কীভাবে কাজ করে, সেটা একটু জানা যাক। বিষয়টা বেশ অদ্ভুত। কুকুরের বয়স মানুষের মতো একই হারে বাড়ে না। মানুষ ১৫ বছরে যতখানি বাড়ে, কুকুর জীবনের প্রথম এক বছরেই সে পরিমাণ বেড়ে ওঠে। অর্থাৎ মানুষের বৃদ্ধির সঙ্গে তুলনা করলে, কুকুরের প্রথম বছরটিকে বলা যায় মানুষের ১৫ বছরের সমান। এই প্রথম বছরেই কুকুর জৈবিকভাবে প্রায় ১৫ বছরের মতো বেড়ে ওঠে, পরিপক্ব হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক কুকুরের বয়স প্রায় নিখুঁতভাবে বের করার একটি উপায় আবিষ্কার করেছেন। কুকুরের আসল বয়স বের করার জন্য স্বাভাবিক বয়সের প্রকৃত লগারিদমকে (Natural logarithm) ১৬ দিয়ে গুণ করতে হবে। এরপর গুণফলের সঙ্গে যোগ করতে হবে ৩১।
ধরা যাক, একটি কুকুর আমাদের হিসেবে ১০ বছর আগে জন্ম নিয়েছে। সেই কুকুরের জৈবিক বয়স বের করতে চাইলে, ১০-এর প্রকৃত লগারিদম (Natural Logarithm), অর্থাৎ প্রায় ২.৩-কে ১৬ দিয়ে গুণ করতে হবে। এরপর গুণফলের সঙ্গে ৩১ যোগ করলে পাওয়া যাবে প্রায় ৬৮ বছর। (২.৩×১৬)+৩১=৬৮। তার মানে, আমাদের হিসেবে এই কুকুরের বয়স ১০ হওয়ার কথা থাকলেও জৈবিক পরিপক্কতার দিক থেকে এর বয়স পেরিয়ে গেছে প্রায় ৬ দশক।
ফুল
বা পুষ্প হল উদ্ভিদের বিশেষ একটি মৌসুমী অঙ্গ যা উদ্ভিদের প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি উদ্ভিদের পরিবর্তিত বিটপ। ফুল এর সৌন্দর্যের জন্য জনপ্রিয়। ফুল থেকে উদ্ভিদের ফল হয়।
সপুষ্পক উদ্ভিদের যে রুপান্তরিত অংশ ফল ও বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে বংশবিস্তারে সাহায্য করে তাকে ফুল বলে। কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা শীর্ষে অথবা পাতার কক্ষে ফুল জন্মায়। ফুল উদ্ভিদের সবচেয়ে দৃষ্টি নন্দন অংশ। সমস্ত সপুষ্পক উদ্ভিদের ফুল ফোটে ও এরা উদ্ভিদের বংশবিস্তারে সাহায্য করে। ফুলের জৈবিক কাজ হলো প্রজনন সহজতর করা, সাধারনত ডিম্বানু দিয়ে শুক্রানু মিলনের জন্য একটি প্রক্রিয়া সরবরাহ করে। পরাগায়ন দুই ধরনের। যথা:স্ব-পরাগায়ন এবং ক্রস পরাগায়ন। স্ব-পরাগায়ন তখন ঘটে যখন অ্যান্থার থেকে পরাগ একই ফুলের কলষ্কে বা একই গাছের অন্য কোন ফুলের উপর জমা হয়। অন্যদিকে ক্রস পরাগায়ন হলো একই প্রজাতির ভিন্ন গাছের উপর এক ফুলের অ্যান্থার থেকে অন্য ফুলের কলষ্কে পরাগ স্থানান্তর।ফুলের মধ্যে স্ব-পরাগায়ন ঘটে যেখানে স্ট্যামেন এবং কার্পেল একই সময়ে পরিপক্ক হয় এবং অবস্থান করা হয় যাতে পরাগ ফুলের কলষ্কে অবতরণ করতে পারে। কিছু ফুল নিষেক ছাড়াই ডায়াস্পোরস তৈরি করে (পার্থেনোকার্পি)।ফুল গুলিতে স্পোরাঙ্গিয়া এবং গেমটোফাইট গুলি বিকাশ ঘটে এমন সাইট থাকে। অনেক ফুল প্রানিদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে,যাতে তাদের পরাগ জন্য ভেক্টর হতে পারে। নিষেকের পরে ফুলের ডিম্বাশয় বীজ সমন্বিত ফলের মধ্যে বিকাশ লাভ করে। ফুলের পুনঃ উৎপাদন সহজতর করার পাশাপাশি, ফুল দীর্ঘদিন ধরে মানুষের দ্বারা তাদের পরিবেশের সৌন্দর্য আনতে এবং রোম্যান্স , অনুষ্ঠান, জাদুবিদ্যা,ধর্ম, ওষুধ এবং খাবারের উৎসব হিসেবে ব্যবহার হয়েছে।
ফুলের অংশসমূহ
একটি ফুলের দুটা প্ৰধান অংশ থাকে: অঙ্গজ অংশ, আর প্ৰজনন অংশ। একটি আদৰ্শ ফুলের চার প্রকারের অংশ বোঁটার ওপর অবস্থিত পুষ্পাক্ষ নামক একটা অংশের উপর চক্রাকারে বিন্যস্ত থাকে। পুষ্পাক্ষ এর উপর সাজানো এই প্ৰধান অংশ চারটি হল: বৃতি মণ্ডল, দল মণ্ডল, পুং স্তবক আর স্ত্ৰী স্তবক।
অংশসমূহ
ফুলের দুটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ রয়েছে: উদ্ভিজ্জ অংশ যা পাপড়ি এবং পেরিয়ান্থে সংশ্লিষ্ট কাঠামো নিয়ে গঠিত এবং প্রজনন বা যৌন অংশ।একটি স্টিরিওটাইপিক্যাল ফুল একটি ছোট বৃন্তের শীর্ষে যুক্ত চার ধরনের কাঠামো নিয়ে গঠিত। এই ধরনের প্রতিটি অংশ আধারের উপর একটি ঘূর্ণায়মানভাবে সাজানো হয়।
একটি ফুল একটি রূপান্তরিত অঙ্কুর বা অক্ষের উপর একটি নির্ধারিত শীর্ষমুকুল(apical meristem) থেকে বিকশিত হয় ( নির্ধারিত মানে অক্ষটি একটি সেট আকারে বৃদ্ধি পায়)।এটিতে সংকুচিত মধ্যপর্ব রয়েছে, এমন কাঠামো বহন করে যা শাস্ত্রীয় (classical) উদ্ভিদের রূপবিদ্যায় অত্যন্ত পরিবর্তিত পাতা হিসাবে ব্যাখ্যা করা যায়। [৩]তবে বিশদ উন্নয়নমূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে পুংকেশরগুলি প্রায়শই কমবেশি পরিবর্তিত কাণ্ডের ( কৌলোম ) মতো শুরু হয় যা কিছু ক্ষেত্রে এমনকি প্রশাখার মতোও হতে পারে। [৪] [৫]সপুষ্পক উদ্ভিদের পুংস্তবকের বিকাশে সমগ্র বৈচিত্র্যকে বিবেচনায় রেখে, আমরা পরিবর্তিত পাতা (ফাইলোম), পরিবর্তিত কান্ড (কৌলোম) এবং পরিবর্তিত শাখা (shoot) এর মধ্যে একটি ধারাবাহিকতা খুঁজে পাই।
কার্যাবলী
ফুলের প্রধান উদ্দেশ্য হল ব্যক্তি এবং প্রজাতির প্রজনন।সমস্ত সপুষ্পক উদ্ভিদ হেটারোস্পোরাস, অর্থাৎ, প্রতিটি পৃথক উদ্ভিদ দুই ধরনের স্পোর তৈরি করে ।মিয়োসিসের মাধ্যমে মাইক্রোস্পোরগুলি পরাগধানীর(anther) ভিতরে উৎপাদিত হয় এবং ডিম্বাশয়ের মধ্যে থাকা ডিম্বাণুগুলির মধ্যে মেগাস্পোরগুলি উৎপাদিত হয়।পরাগধানী(anther) সাধারণত চারটি মাইক্রোস্পোরাঞ্জিয়া নিয়ে গঠিত এবং ডিম্বাণু একটি ইন্টেগুমেন্টেড মেগাস্পোরাঞ্জিয়াম।উভয় ধরনের স্পোর স্পোরাঞ্জিয়ার অভ্যন্তরে গ্যামেটোফাইটে বিকাশ লাভ করে।সমস্ত হেটেরোস্পোরাস উদ্ভিদের মতো, গ্যামেটোফাইটগুলোও স্পোরের অভ্যন্তরে বিকশিত হয়, অর্থাৎ, তারা এন্ডোস্পোরিক।
বেশিরভাগ উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে, প্রত্যেক ফুলে কার্যকরী গর্ভপত্র(carpel) এবং পুংকেশর( stamen) উভয়ই থাকে।উদ্ভিদবিদরা এই ফুলগুলিকে নিখুঁত বা উভলিঙ্গ এবং প্রজাতিগুলিকে হারমাফ্রোডিটিক হিসাবে বর্ণনা করেন।উদ্ভিদ প্রজাতির একটি সংখ্যালঘুর মধ্যে, তাদের ফুলে দুই ধরনের প্রজনন অঙ্গের মধ্যে একটি বা অন্য প্রজনন অঙ্গের অভাব থাকে এবং তাদেরকে অপূর্ণ বা একলিঙ্গ হিসাবে বর্ণনা করা হয়।যদি একটি প্রজাতির পৃথক উদ্ভিদের প্রতিটিতে পুং ও স্ত্রীলিঙ্গের প্রতিটির একলিঙ্গী ফুল থাকে তবে প্রজাতিটি মনোইসিয়াস।বিকল্পভাবে, যদি প্রতিটি পৃথক উদ্ভিদে একই লিঙ্গের শুধুমাত্র একলিঙ্গী ফুল থাকে তবে প্রজাতিটি দ্বিজাতিক ।
এছাড়াও ফুল থেকে ফল তৈরি হয়
বীজের ক্রমবিকাশ
মূল নিবন্ধ: বীজের ক্রমবিকাশ
জাইগোট গঠনের পরে এটি নিউক্লিয়াস এবং কোষীয় বিভাজনের মাধ্যমে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যাকে মাইটোসিস বলা হয় এবং অবশেষে কোষের একটি ছোট গ্রুপে পরিণত হয়।এর একটি অংশ ভ্রূণে পরিণত হয়, অন্যটি সাসপেন্সর এ পরিণত হয়; এটি এমন একটি কাঠামো যা ভ্রূণকে এন্ডোস্পার্মে পরিণত করে এবং পরে এটিকে সনাক্ত করা যায় না।এই সময়ে দুটি ছোট প্রাইমর্ডিয়াও তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে কটাইলেডনে বা বীজপত্রে পরিণত হয় এবং এটি শক্তির ভাণ্ডার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।যে সমস্ত উদ্ভিদের মধ্যে এই প্রাইমর্ডিয়ার একটি জন্মায় তাদের বলা হয় একবীজপত্রী(মনোকটাইলেডন), আর যদি প্রাইমর্ডিয়ার দুটি জন্মায় তবে তাদের বলা হয় (ডাইকোটাইলেডন) দ্বিবীজপত্রী ।পরবর্তী পর্যায়টিকে টর্পেডো পর্যায় বলা হয় এবং এতে বেশ কয়েকটি বীজের মূল গঠনের বৃদ্ধি জড়িত, যার মধ্যে রয়েছে: রেডিকেল (ভ্রুণ মূল), এপিকোটাইল ( ভ্রূণীয় স্টেম), এবং হাইপোকোটাইল , (মূল/অঙ্কুর সংযোগস্থল)।শেষ ধাপে বীজের চারপাশে ভাস্কুলার টিস্যু বিকশিত হয়
ক্রমবিকাশ
একটি ফুল একটি রূপান্তরিত অঙ্কুর বা অক্ষের উপর একটি নির্ধারিত শীর্ষমুকুল (apical meristem) থেকে বিকশিত হয় (নির্ধারিত মানে অক্ষ একটি সেট আকারে বৃদ্ধি পায়)। এটিতে সংকুচিত ইন্টারনোড বা মধ্যপর্ব রয়েছে, এমন গঠন রয়েছে যা শাস্ত্রীয় উদ্ভিদের রূপবিদ্যায় সম্পূর্ণ রূপান্তরিত পাতা হিসাবে ব্যাখ্যা করা যায়।[৯]তবে বিশদ উন্নয়নমূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে পুংকেশরগুলি প্রায়শই কমবেশি পরিবর্তিত কাণ্ডের ( কৌলোম ) মতো শুরু হয় যা কিছু ক্ষেত্রে এমনকি শাখার মতোও হতে পারে। [৪] [৫]সপুষ্পক উদ্ভিদের এন্ড্রোসিয়ামের বিকাশে সমগ্র বৈচিত্র্যকে বিবেচনায় রেখে, আমরা পরিবর্তিত পাতা (ফাইলোম), পরিবর্তিত ডালপালা (কৌলোম) এবং পরিবর্তিত শাখা (কান্ড) এর মধ্যে একটি ধারাবাহিকতা খুঁজে পাই।
রূপান্তর
ফুলের রূপান্তর হল একটি উদ্ভিদের জীবনচক্রের সময় ঘটা প্রধান পর্যায়ের পরিবর্তনগুলির মধ্যে একটি।রূপান্তরটি অবশ্যই এমন একটি সময়ে ঘটতে হবে যা নিষিক্তকরণ এবং বীজ গঠনের জন্য অনুকূল, সুতরাং সর্বাধিক প্রজনন সাফল্য নিশ্চিত করা।এই চাহিদাগুলি পূরণ করার জন্য একটি উদ্ভিদ গুরুত্বপূর্ণ এনডোজেনাস এবং পরিবেশগত সংকেতগুলি ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয় যেমন উদ্ভিদ হরমোনের স্তরের পরিবর্তন এবং মৌসুমী তাপমাত্রা এবং ফটোপিরিয়ড পরিবর্তন। [১২]অনেক বহুবর্ষজীবী এবং বেশিরভাগ দ্বিবার্ষিক উদ্ভিদের ফুলের জন্য স্থানীয়করণের( vernalization)প্রয়োজন হয়।এই সংকেতগুলির আণবিক ব্যাখ্যা হল ফ্লোরিজেন নামক একটি জটিল সংকেতের স্থানান্তরের মাধ্যমে, যাতে কনস্ট্যানস, ফ্লাওয়ারিং লোকাস সি এবং ফ্লাওয়ারিং লোকাস টি সহ বিভিন্ন ধরনের জিন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফ্লোরিজেন প্রজননের জন্য অনুকূল অবস্থায় পাতায় উৎপাদিত হয় এবং কুঁড়িতে ও বর্ধনশীল শীর্ষে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় এবং রূপগত পরিবর্তনের জন্য ভূমিকা রাখে।
সূর্যমুখী ফুল
একটি সূর্যমুখী ফুলে ২ থেকে ৩ হাজার বীজ থাকে। এ গাছ প্রায় ৩ মিটার লম্বা হয়। ফুল সূর্যের মতো দেখতে এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে, এর নাম সূর্যমুখী। এর বীজ হাঁস মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয় ৷ তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। সমভুমি এলাকায় শীত ও বসন্তকালে, উঁচু লালমাটি এলাকায় বর্ষাকালে ও সমুদ্রকুলবর্তী এলাকায় শীতকালীন শস্য হিসাবে চাষ করা হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী একটি তেল ফসল হিসেবে বাংলাদেশে আবাদ হচ্ছে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাংগাইল প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।
সূর্যমুখীর তেল[২] ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেল হতে ভাল এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে।
গোলাপ
গোলাপ হল রোজেই পরিবারের রোসা গণের এক প্রকারের বহুবর্ষজীবী ফুলের গাছ।[১] এখানে তিন শতাধিক প্রজাতি এবং কয়েক হাজার হাজার জাত রয়েছে।[১] এগুলি এমন এক ধরনের গাছপালা গঠন করে যা ডালপালা খাড়া করে উঠতে বা পিছনে যেতে পারে, ডালপালাগুলির সাথে প্রায়শই তীক্ষ্ন কাঁটা সজ্জিত থাকে।[১] ফুল আকার এবং আকারে পৃথক হয় এবং সাধারণত বড় এবং শোভাকর হয়, সাদা থেকে হলদে এবং লাল রঙের হয়ে থাকে।[১] বেশিরভাগ প্রজাতি এশিয়ার স্থানীয়, এছাড়াও ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার স্বল্প সংখ্যক দেশীয় প্রজাতিও দেখা যায়।[১] প্রজাতি, জাত এবং হাইব্রিড সমস্তই তাদের সৌন্দর্যের জন্য ব্যাপকভাবে জন্মানো হয় এবং প্রায়শই সুগন্ধযুক্ত হয়। গোলাপ বহু সমাজে সাংস্কৃতিকভাবে তাৎপর্য অর্জন করেছে।[১] ছোট, ক্ষুদ্রাকৃতি গোলাপ থেকে শুরু করে পর্বতা্রোহী আকার পর্যন্ত গোলাপ গাছের আকার বিস্তৃত হয়, যার উচ্চতা সাত মিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।[১] বিভিন্ন প্রজাতি সহজেই সংকরিত হয় এবং এটি গার্ডেন রোজের বিস্তৃত আকারের বিকাশে ব্যবহৃত হয়েছে।[১]
গোলাপ নামটি ল্যাটিন রোসা থেকে এসেছে, যা সম্ভবত ওসকান থেকে নেওয়া হয়েছিল, গ্রীক (আইলিক-ক্র্যাডন) থেকে নেওয়া হয়েছিল, যা নিজেই পুরানো ফারসি শব্দ (ওড়্দি) থেকে ধার করা হয়েছিল, যা আভেস্টান ওয়ারিয়া, সোগদিয়ান ওয়ার্ড, পার্থিয়ান ওয়ারের সাথে সম্পর্কিত।কাণ্ড পাতাগুলোকে পর্যায়ক্রমে বহন করে। বেশিরভাগ প্রজাতিতে এগুলি ৫ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার (২ থেকে ৫.৯ ইঞ্চি) লম্বা, পিনাতে (৩–) ৫–৯(১৩) প্ত্রক এবং উপপত্র সহ; পত্রকগুলিতে সাধারণত একটি মার্জিন থাকে এবং প্রায়শই কাণ্ডের নীচে কয়েকটি ছোট ছোট কাঁটা থাকে। বেশিরভাগ গোলাপগুলি পাতলা হয় তবে কয়েকটি (বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে) চিরসবুজ বা প্রায় সবুজাভ হয়।
রোজা সেরিসিয়া ব্যতীত বেশিরভাগ প্রজাতির ফুলের পাঁচটি পাপড়ি থাকে, যার সাধারণত চারটি থাকে। প্রতিটি পাপড়ি দুটি স্বতন্ত্র ভাগে বিভক্ত এবং সাধারণত সাদা বা গোলাপী হয় যদিও কয়েকটি প্রজাতিতে হলুদ বা লাল। পাপড়িগুলির নীচে পাঁচটি বৃত্যংশ রয়েছে (বা রোসা সেরিসিয়ার ক্ষেত্রে, চারটি)। এগুলি উপরের থেকে দেখার সময় দৃশ্যমান হওয়ার জন্য যথেষ্ট দীর্ঘ হতে পারে এবং বৃত্তাকার পাপড়িগুলির সাথে পর্যায়ক্রমে সবুজ পয়েন্ট হিসাবে প্রদর্শিত হয়। একাধিক উচ্চতর ডিম্বাশয় রয়েছে যা অ্যাকেনেসে পরিণত হয়।[৪] গোলাপ পতঙ্গপরাগী হয়।
গোলাপের সামগ্রিক ফলগুলি বেরি জাতীয় কাঠামো বিশিষ্ট, যা গোলাপ হিপ নামে পরিচিত। চাষীরা সাধারণত ফল উৎপাদন করে না, কারণ ফুলগুলির পাপড়ি এত শক্তভাবে লাগানো থাকে যে, তারা পরাগায়নের জন্য জায়গা পায় না। বেশিরভাগ প্রজাতির ফল লাল বর্ণের হয় তবে কয়েকটি (যেমন: রোজা পিম্পিনেলিফোলিয়া) গাঢ় বেগুনি থেকে কালো রঙের থাকে। প্রতিটি হিপের মধ্যে একটি বহিরাগত মাংসল স্তর থাকে, হাইপানথিয়াম, এতে ৫-১৬০টি "বীজ" থাকে (মূলত শুকনো একজাতীয় ফল যাকে অ্যাকেনেস বলে) একটি সূক্ষ্ম, তবে শক্ত ও চুলযুক্ত। কিছু প্রজাতির গোলাপের হিপ, বিশেষত ডগ রোজ (রোজা ক্যানিনা) এবং রুগোসা গোলাপ (রোজা রুগোসা) যে কোনও উদ্ভিদের উৎসগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। হিপগুলি ফল ভোজী পাখি যেমন গায়ক পাখি এবং ওয়াক্সওয়িংস দ্বারা ভক্ষিত হয়, যা তাদের চারপাশে বীজ ছড়িয়ে দেয়। কিছু পাখি, বিশেষত ফিঞ্চগুলিও বীজ খায়।
গোলাপের ডাল বরাবর তীক্ষ্ন বৃদ্ধি, যদিও সাধারণত "কাঁটাগাছ" বলা হয়, প্রকৃ্তপক্ষে কাঁটা, হলো এপিডার্মিসের বহির্মুখ (কান্ডের টিস্যুটির বাইরের স্তর),যা সত্যিকারের কাঁটার তুলনায় পরিবর্তিত ডালপালা হয়। গোলাপের কাঁটাগুলো সাধারণত কাস্তে আকৃতির হয়, যা গোলাপের উপর অন্য গাছের সাথে ঝুলতে সহায়তা করে। কিছু প্রজাতিতে যেমন- রোজা রুগোসা এবং রোজা পিম্পিনেলিফোলিয়াতে ঘনভাবে সোজা কাঁটা রয়েছে, সম্ভবত প্রাণী দ্বারা আক্রমণ হ্রাস করার জন্য এটি একটি অভিযোজন, তবে সম্ভবত ক্ষয় কমাতে এবং তাদের শিকড়কে সুরক্ষিত করার জন্য অভিযোজন (উভয় প্রজাতিই প্রাকৃতিকভাবে উপকূলীয় বালিতে ও টিলাতে জন্মায়)। কাঁটার উপস্থিতি সত্ত্বেও, গোলাপকে প্রায়শই হরিণ আক্রমণ করে। কয়েকটি প্রজাতির গোলাপের কেবলমাত্র গবেষণামূলক কাঁটা রয়েছে, যার কোনও তীক্ষ্নবিন্দুও নেই।ফুল কাটা
গোলাপি গোলাপের একটি তোড়া
গোলাপ দেশীয় এবং বাণিজ্যিকভাবে ফুল কাটা উভয়ের জন্য একটি জনপ্রিয় ফসল। সাধারণত একে কুঁড়ি অবস্থায় কাটা হয় এবং তাদের বিক্রয় সময়ে প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত রেফ্রিজারেটেড অবস্থায় রাখা হয়।
শীতকালীন জলবায়ুতে, কাটা গোলাপগুলি প্রায়শই গ্রীনহাউসে জন্মানো হয় এবং উষ্ণ দেশে এগুলি ফুলের আবহাওয়ার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং কীটপতঙ্গ এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যকরভাবে করা যায় তা নিশ্চিত করার জন্য তারা আচ্ছাদনের অধীনেও জন্মাতে পারে। কয়েকটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গোলাপ জন্মে এবং এগুলি সারা বিশ্বের বাজারে বিমানের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়।[১০]
রঙিন জল ব্যবহার করে কিছু ধরনের গোলাপ কৃত্রিমভাবে বর্ণযুক্ত অরা হয়, যেমন- রংধনু গোলাপ।
সুগন্ধি
জেরানিয়ল (C
10H
18O)
গোলাপের সুগন্ধিগুলো গোলাপ তেল (গোলাপের আতরও বলা হয়) থেকে তৈরি করা হয়, যা গোলাপের চূর্ণিত পাপড়িগুলিকে ছড়িয়ে দিয়ে বাষ্প দ্বারা প্রাপ্ত অস্থায়ী প্রয়োজনীয় তেলের মিশ্রণ। সম্পর্কিত পণ্য হ'ল গোলাপ জল যা রান্না, প্রসাধনী, ঔষধ এবং ধর্মীয় অনুশীলনের জন্য ব্যবহৃত হয়। উৎপাদনের কৌশলটি পার্সিয়ায় উদ্ভূত হয়েছিল এবং এরপরে আরব এবং ভারত এবং আরও সম্প্রতি পূর্ব ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। বুলগেরিয়া, ইরান ও জার্মানিতে গোলাপ ( রোসা × দামাসসিনা 'ত্রিগিন্টাপেতেলা') ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে সাধারণত রোজা সেন্টিফোলিয়া ব্যবহৃত হয়। তেল স্বচ্ছ ফ্যাকাশে হলুদ বা হলুদ-ধূসর বর্ণের হয়। 'রোজ অ্যাবসুলিউট' হেক্সেন দিয়ে দ্রাবক-আহরণ করা হয় এবং একটি গাঢ় রঙ এর তেল উৎপাদিত হয়, যা গাঢ় হলুদ থেকে কমলা রঙের হয়। উত্তোলিত তেলের ওজন ফুলের ওজনের প্রায় এক-তিন হাজার থেকে এক ছয়-হাজার ভাগ; উদাহরণস্বরূপ, এক গ্রাম তেল উৎপাদন করতে প্রায় দুই হাজার ফুলের প্রয়োজন।
গোলাপের আতরের প্রধান উপাদান হল সুগন্ধযুক্ত অ্যালকোহল জেরানিয়োল এবং এল সিট্রোনেলল এবং গোলাপ কর্পূর, অ্যালকানেস দ্বারা গঠিত একটি গন্ধহীন কঠিন, যা গোলাপ তেল থেকে পৃথক হয়।[১১] β- দামাসসিনোন ঘ্রাণ সৃষ্টিতে একটি উল্লেখযোগ্য অবদানকারী।খাদ্য এবং পানীয়
রোজা ক্যানিনার হিপ
রোজ হিপগুলি মাঝে মধ্যে জাম, জেলি, মারমেলড এবং স্যুপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় বা মূলত তাদের উচ্চ ভিটামিন c-এর জন্য চায়ের সাথে তৈরি করা হয়। গোলাপ হিপ সিরাপ তৈরি করতে এগুলি ফিল্টার করা হয়। গোলাপ হিপগুলি গোলাপ হিপ বীজ তেল উৎপাদন করতে ব্যবহৃত হয় যা ত্বকের পণ্য এবং কিছু মেকআপ পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত হয়।[১২]
গোলাপজল দিয়ে তৈরী গোলাপজাম
গোলাপজল খুব স্বাদযুক্ত এবং এটি মধ্যপ্রাচ্য, পার্সিয়া এবং দক্ষিণ এশীয় খাবারগুলিতে বিশেষত তুর্কি ডিলাইট,[১৩] বারফি, বাকলভা, হালভা, গোলাপ জামুন, কানাফেহ এবং নওগাত মিষ্টিতে ব্যবহৃত হয় । গোলাপের পাপড়ি বা ফুলের কুঁড়ি মাঝে মধ্যে সাধারণ চা স্বাদযুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়, বা ভেষজ চা তৈরির জন্য অন্যান্য গুল্মের সাথে মিলিত হয়। গুলকান্দ নামে গোলাপের পাপড়িগুলির একটি মিষ্টি সংরক্ষণ ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত।
ফ্রান্সে গোলাপের সিরাপের প্রচুর ব্যবহার রয়েছে, যা সাধারণত গোলাপের পাপড়ি থেকে বের করে নেওয়া হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে, রুহ আফজা নামে একটি ঘন স্কোয়াশ জনপ্রিয় যা আইসক্রিম এবং কুলফির মতো গোলাপের স্বাদযুক্ত হিমায়িত মিষ্টান্নগুলিতে ব্যবহার করা হয়।[১৪][১৫]
গোলাপ ফুল খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়, সাধারণত স্বাদকারক হিসাবে বা খাবারে তাদের গন্ধ যুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য ছোট ছোট ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে ক্যান্ডিড গোলাপের পাপড়ি।
ঔষধ
দ্যা গোলাপ হিপ, যা সাধারণত আর.ক্যানিনা থেকে পাওয়া যায়, ভিটামিন সি এর ক্ষুদ্র উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বহু প্রজাতির ফলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন থাকে এবং এটি খাদ্য পরিপূরক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বহু গোলাপ ভেষজ এবং লোক ঔষধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রোজা চিনেনসিস দীর্ঘকাল ধরে চীনা ঐতিহ্যবাহী ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি এবং অন্যান্য প্রজাতিগুলি পেটের সমস্যাগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, এবং ক্যান্সার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য পরীক্ষা করা হচ্ছে
শাপলা
শাপলা (বৈজ্ঞানিক নাম: Nymphaeaceae) সপুষ্পক উদ্ভিদ পরিবারের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। এ পরিবারভূক্ত সকল উদ্ভিদই শাপলা নামে পরিচিত। সাদা শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এই ফুল সাধারণত ভারত উপমহাদেশে দেখা যায়। হাওড়-বিল ও দিঘিতে এটি বেশি ফোটে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের কিছু জেলায় একে নাইল বা নাল বলা হয়।এই উদ্ভিদ প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। থাইল্যান্ড ও মায়ানমারে এই ফুল পুকুর ও বাগান সাজাতে খুব জনপ্রিয়। সাদা শাপলা বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ইয়েমেন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশের পুকুর ও হ্রদে দেখা যায়। এই ফুল পাপুয়া নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু এলাকায়ও দেখা যায়। এই ফুল যেমন দেখা যায় চাষের জমিতে, তেমনই হয় বন্য এলাকায়। কাটা ধান ক্ষেতের জমে থাকা অল্প পানিতে এই ফুল ফুটে থাকতে দেখা যায়। বিশ্বে এই উদ্ভিদের প্রায় ৩৫টি প্রজাতি পাওয়া গেছে।শাপলা ফুল ভোর বেলা ফোটে এবং দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে পাঁপড়ি বুজে যায়। সরাসরি কাণ্ড ও মূলের সাথে যুক্ত থাকে। শাপলার পাতা আর ফুলের কাণ্ড বা ডাটি বা পুস্পদণ্ড পানির নিচে মূলের সাথে যুক্ত থাকে। আর এই মূল যুক্ত থাকে মাটির সঙ্গে এবং পাতা পানির উপর ভেসে থাকে। মূল থেকেই নতুন পাতার জন্ম নেয়। পাতাগুলো গোল এবং সবুজ রঙের হয় কিন্তু নিচের দিকে কালো রঙ। ভাসমান পাতাগুলোর চারদিক ধারালো হয়। পাতার দৈর্ঘ্য ২০-২৩ সেন্টিমিটার এবং এদের ব্যাপ্তি প্রায় ০.৯-১.৮ মিটার। শাপলা ফুল নানা রঙের দেখা যায় যেমনঃ গোলাপী, সাদা, নীল, বেগুনি ইত্যাদি। এই ফুলে ৪-৫টি বৃতি থাকে ও ১৩-১৫টি পাপড়ি থাকে। ফুলগুলো দেখতে তারার মত মনে হয়। কাপের সমান বৃতিগুলো ১১-১৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। প্রায় বছরের সব সময় শাপলা ফুটতে দেখা যায় তবে বর্ষা ও শরৎ এই উদ্ভিদ জন্মানোর শ্রেষ্ঠ সময়.পলা ফুল অনেক রঙের হলেও কেবল সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের পয়সা, টাকা, দলিলপত্রে জাতীয় ফুল শাপলা বা এর জলছাপ আঁকা থাকে।
এই ফুল শ্রীলংকারও জাতীয় ফুল। শ্রীলংকায় এই ফুল Nil Mānel নীল মাহানেল নামে পরিচিত। শ্রীলংকার ভাষায় নীল থেকে এই ফুলকে ইংরেজিতে অনেক সময় blue lotus বলা হয়। শ্রীলংকায় বিভিন্ন পুকুর ও প্রাকৃতিক হ্রদে এই ফুল ফোটে। এই জলজ উদ্ভিদের ফুলের বিবরণ বেশ কিছু প্রাচীন বই যেমন - সংস্কৃত, পালি ও শ্রীলংকান ভাষার সাহিত্যে প্রাচীনকাল থেকে "কুভালয়া", "ইন্ধিয়ারা", "নীলুপ্পালা", "নীলথপালা", "নীলুফুল" নামে পাওয়া গেছে যা শ্রেষ্ঠতা, শৃংখলা, পবিত্রতার প্রতীক। শ্রীলংকার বুদ্ধদের দৃঢ় বিশ্বাস গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপে পাওয়া ১০৮ টি শুভ চিহ্নের মাঝে একটি ছিল এই শাপলা ফুল।শাপলা প্রাচীন যুগ থেকেই বিভিন্ন জাতীর প্রার্থনা বা বাগান সাজানোর পাশাপাশি খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন: মিশর, চীন, জাপান ও এশিয়ার বিভিন্ন এলাকা শাপলার কাণ্ড বা ডাটা বা পুস্পদন্ড সবজী হিসেবে খাওয়া হয়। পূর্ণবিকশিত শাপলা ফুলের গর্ভাশয়ে গুড়ি গুড়ি বীজ থাকে। আঠালো এই বীজ বাংলাদেশের গ্রামের মানুষদের খেতে দেখা যায়। এই বীজ ভেজে একধরনের খাবার খৈ তৈরি হয় যার নাম “ঢ্যাপের খৈ”। উদ্ভিদটির গোড়ায় থাকে আলুর মত এক ধরনের কন্দ যার নাম শালুক, অনেকে এটি সব্জি হিসেবে খেয়ে থাকে।
নীল শাপলা ফুল ও লাল শাপলা ফুল ঘর সাজাতে ব্যবহৃত হয়। এটি বাগানের জলাধারে লাগানো বা অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখার জন্য খুব জনপ্রিয় একটি উদ্ভিদ। কখনো কখনো এই উদ্ভিদ তাদের ফুলের জন্য বেড়ে উঠে।
ভারতে আম্বাল নামের আয়ুর্বেদিক ঔষুধ বানাতে শাপলাকে ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই ঔষধ অপরিপাকজনিত রোগের পথ্য হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া গেছে এই উদ্ভিদে ডায়াবেটিক রোগের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষুধি গুণাগুন রয়েছে।[৪] এই উদ্ভিদ পানি থেকে তুলে রোদে শুঁকিয়ে গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।