text
stringlengths
0
4.32k
সতর্কতা : আধাপাকা (ডাঁসা) জাম খাওয়া উচিত নয়। খালি পেটে জাম খাবেন না এবং জাম খাওয়ার পর দুধ খাবেন না। পাকা ফল ভরা পেটে খেলে অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকভাব হতে পারে।
নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি ফল জাম। এ ফল এখন চলে গেছে দামি ফলের তালিকায়। এক সময় প্রচুর জাম গাছ চোখে পড়লেও এখন তেমন দেখা যায় না। অত্যন্ত ঔষধি গুণসম্পন্ন পাকা জামের মধুর রসে এখন আর মুখ আগের মতো রঙিন হয় না। পতিত জায়গাগুলোতে জামের চারা রোপণ করে একদিকে যেমন আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে, অন্যদিকে প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে।
কলা
কলা অতি জনপ্রিয় একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এ ফলে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ভিটামিন এ বি সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ ও পর্যাপ্ত খাদ্যশক্তি রয়েছে। অন্যান্য ফলের তুলনায় কলা দামে সস্তা এবং প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তাই ধনী গরিব নির্বিশেষে সব মানুষ সহজেই কলা খেতে পারে। উৎপাদন, স্বাদ ও সুগন্ধের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়ায় কলাকে ফলের রানী বলা হয়।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিশেষ করে বাংলাদেশ, আসাম ও ইন্দো চীন কলার উৎপত্তি স্থান। কলা মিউজেসি (Musaceae) পরিবারের একটি একবীজপত্রী উদ্ভিদ। কলার বৈজ্ঞানিক নাম Musa Spp দেশের প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে কমবেশি কলা গাছ দেখা যায়। তবে নরসিংদী, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, বগুড়া, যশোর, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরিশাল, পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, জেলায় সবচেয়ে বেশি কলা উৎপন্ন হয়।
কলা গাছ বেরি (Berry) জাতীয় ফল উৎপাদন করে। এর প্রতিটি পুষ্পমঞ্জুরিতে উৎপাদিত ফল সমষ্টিকে ছড়া বা কাঁদি (bunch) বলা হয়। প্রতিটি ছড়া আবার ৫-১৫টি ফানায় (hand) বিভক্ত। কোথাও কোথাও ফানাকে কাঁদি বলে। প্রতিটি ফানায় সাধারণত ১২-১৬টি কলা (finger) থাকে। কলায় দুটি অংশ আছে। ফলের ওপরের সবুজ আবরণকে কলার খোসা বলা হয় এবং ভেতরের নরম সাদা অংশকে পাল্প বলে, যা পরবর্তীতে পাকার পর ভোজ্য অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একবার ফল দিয়ে কলা গাছ মারা যায়। কলা গাছের গোড়া থেকে একাধিক গুঁড়ি-চারা বের হয়, এগুলো দিয়ে কলার বংশবিস্তার করতে হয়। প্রতিটি দেশের কলার নিজস্ব জাত রয়েছে। পৃথিবীতে যে জাতটি সর্বাধিক পরিমাণে জন্মানো হয় তার নাম গ্রোস মিচেল (gros michel)। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৪০-৫০টি জাতের কলার চাষ হয়। এগুলোর মধ্যে অমৃতসাগর, সবরি, কবরি, চাঁপা, সিঙ্গাপুরী বা কাবুলী, মেহেরসাগর, এঁটে বা বিচিকলা, কাঁচকলা বা আনাজি কলা, জয়েন্ট গভর্নর এসব উল্লেখযোগ্য।
কলা পুষ্টিগুণেসমৃদ্ধ ও সহজপাচ্য একটি উৎকৃষ্ট ফল। মানব দেহের ক্ষয়পূরণ, পুষ্টিসাধন এবং দেহকে সুস্থ-সবল ও নিরোগ রাখার জন্য যেসব পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন তার প্রায় সবগুলোই কলায় রয়েছে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আহার উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কলায় ৭.০ গ্রাম প্রোটিন, ২৫ গ্রাম শর্করা, ০.৮ গ্রাম চর্বি এবং ০.১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ০.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেভিন) ও ২৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ থাকে। তাছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কলা থেকে ১৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৯০ মিলিগ্রাম লৌহ, ৮০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন (ভিটামিন ‘এ’) এবং ১০৯ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। পাকাকলা টাটকা ফল হিসেবে সরাসরি খাওয়া যায় বলে এর পুষ্টি উপাদান অবিকৃত অবস্থায় আমাদের শরীর গ্রহণ করে। তাই নিয়মিত পাকা কলা ও অন্যান্য ফল খেলে পুষ্টি সমস্যা দেখা দেয় না। কলায় যে লৌহ জাতীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তা রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। লৌহের ঘাটতি পূরণে কলার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই লৌহের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা ও অপুষ্টিতে আক্রান্ত মহিলাদের জন্য কলা হতে পারে দুঃসময়ের বন্ধু। ভিটামিন এ এবং বি এর উৎকৃষ্ট উৎস কলা। এজন্য কলাকে বলা হয় মস্তিষ্কের খাবার। কলাতে কোনো ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল নেই। তাছাড়া এতে কোনো দ্রবণীয় চর্বি (Saturated Fat) নেই। বরং কলায় রয়েছে হৃদযন্ত্রের পেশির নিয়মিত স্পন্দন সৃষ্টিকারী পদার্থ পটাশিয়াম। এছাড়াও গবেষকদের মতে, পাকস্থলীর দেয়ালকে এসিডের হাত থেকে রক্ষা করতে কলার অনেক ভূমিকা রয়েছে।
সাম্প্রতিককালের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কলা উচ্চরক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। তাদের মতে, কলায় প্রচুর উচ্চ পটাশিয়াম আছে এবং চর্বির পরিমাণ কম থাকে। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা উচ্চরক্তচাপ কমানোর জন্য শুধু ওষুধের পরিবর্তে কলা জাতীয় ফল, কম চর্বিযুক্ত খাবার খেতে এবং কাঁচা লবণ কম খেতে উপদেশ দেন। এছাড়াও কলা মানসিক চাপ কমায় এবং একই সাথে মানসিক কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি করে। কলায় সোডিয়ামের পরিমাণ কম এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এটি স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমায়। জানা যায়, প্রতিদিনকার খাদ্যাভ্যাসে কলা রাখলে ৪০% স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়। কলায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় এটি মাথাব্যথার প্রাকৃতিক নিরাময় হিসেবে কাজ করে। তাই এখন থেকে যে কোনো সময় মাথাব্যথা শুরু হতে চাইলেই চট করে এটি কলা খেয়ে ফেলুন।
সম্প্রতি আর এক তথ্যে জানা যায়, কলা অন্ত্রের, মুখের ও ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে দেহকে রক্ষা করে। কলায় প্রচুর আঁশ রয়েছে। তাই পাকা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং সহজে হজম হয় বলে রোগীর পথ্য হিসেবে কলা অতুলনীয়। নরম ও মিহি হওয়ার জন্য পেটের সমস্যায় খুবই উপকারী খাবার কলা। খুব বেশি পেট খারাপ রোগেও কলাই একমাত্র ফল যা নির্বিঘেœ খাওয়া যায়। কলা অস্বস্তি কমিয়ে আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। অনেক দেশে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে কলা ব্যবহার করা হয়। গর্ভবতী মহিলাদের জ্বর হলে ওষুধের বদলে খাওয়ানো হয় কলা। থাইল্যান্ডে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে কলা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। পেশি গঠনেও কলার কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্নভাবে কলা আমাদের রসনার স্বাদ মেটায়। দুধভাতে পাকা কলার জুড়ি মেলা ভার। সাধারণত বেশির ভাগ মানুষ সদ্য পাকা কলা খেতে পছন্দ করেন। কলা অতিরিক্ত পেকে গেলে এর চামড়ায় কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। আর এ দাগের কারণে বেশির ভাগ সময় অতিরিক্ত পাকা কলা কেউ খেতে চান না। কিন্তু কলা যখন অতিরিক্ত পেকে যায় এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত পাকা কলা খান, আর সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।
কলা একদিকে পুষ্টিগুণে ভরপুর, অপরদিকে এর প্রচুর ঔষধি গুণও রয়েছে। গলার ঘায়ে, শুল্ক কাশিতে ও কিডনি রোগের ক্ষেত্রে পাকা কলা উপকারী। কলা থোড়ের রস কলেরা রোগীয় তৃষ্ণা নিবারণে ও রক্ত বমি রোধের জন্য উপকারী। কলার কন্দমূল ও কা- দূষিত রক্ত বিশুদ্ধকরণে সাহায্য করে। কাঁচা কলা (সিদ্ধ) সিফিলিসের চুলকানি ও পোড়া ঘায়ে প্রলেপের জন্য উপকারী।
কলার বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। সাধারণত বিশ্বে উৎপাদিত কলার অর্ধেক পরিমাণ পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া হয় এবং বাকি অর্ধেক সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। তবে বাংলাদেশে কেবলমাত্র সবজি হিসেবে কাঁচা কলার ব্যবহার প্রচলিত আছে। এদেশে কলা ছাড়াও কলার থোড় এবং মোচা সবজি হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কাঁচা কলা ও কলার মোচা ভর্তা ও ভাজি এবং সবজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। এটি বেশ সুস্বাদু ও উপাদেয়। তাছাড়া কলার ভুয়া কা-, থোড় ও পাতা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
টাটকা ফল হিসেবে খাওয়া ছাড়াও পাকা কলা ময়দা বা চালের গুঁড়ার সাথে পিষে সুস্বাদু ও মুখরোচক কলার পিঠা তৈরি হয়। কলা থেকে আবার কেক এবং বড়াও তেরি করা যায়। ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এরকম কয়েকটি দেশে কলা পাতলা করে কেটে রোদে শুকিয়ে চিপস তৈরি করা হয়। আজকাল কলা আর দুধ মিশিয়ে মজাদার আইসক্রিম তৈরি করে খাওয়ার রীতি সব দেশেই প্রচলিত।
কলা একদিকে যেমন, বহু গুণে গুণান্বিত একটি আদর্শ ফল; অপরদিকে এটি একটি লাভজনক ও অর্থকরী ফসল। স্বল্প পরিশ্রমে ও কম খরচে কলা চাষ করা যায়। খনা বলেন, রুয়ে কলা না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত। খানার বিখ্যাত এ বচনটি নির্দেশ করে কলার অর্থকরী দিকের কথা। এর ফলনও অন্যান্য ফল ও ফসল অপেক্ষা অনেক বেশি। তাই কলার চাষ করে সহজেই আর্থিক দিক থেকে লাভবান হওয়া যায়। সুতরাং, খাদ্য ও পুষ্টি, ফলের চাহিদা পূরণ, দেহকে সুস্থ-সবল ও নিরোগ রাখার জন্য এবং আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে বেশি করে কলার চাষ করা একান্ত প্রয়োজন।
আপেল
আপেল এক প্রকারের ফল। এটি রোসাসি (Rosaceae) পরিবারের ম্যালিয়াস ডমেস্টিকা (Malus domestica ) প্রজাতিভুক্ত। আপেল মূলত তার মিষ্টি স্বাদের জন্য জনপ্রিয়। সারা পৃথিবীব্যাপী আপেলের চাষ হয়ে থাকে এবং সবচেয়ে বেশি চাষকৃত প্রজাতি হচ্ছে জেনাস ম্যলুস (genus Malus)১ । মধ্য এশিয়াকে আপেলের উৎপত্তিস্থল মনেকরা হয়, যেখানে এখনও তার পূর্বতন বুনো প্রজাতি ম্যলুস সিভেরসিকে (Malus sieversii) দেখতে পাওয়া যায়। হাজার হাজার বছর ধরে এশিয়া এবং ইউরোপ জুড়ে আপেলের চাষ হয়ে আসছে এবং ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের মাধ্যমে লাতিন আমেরিকায় এর পদার্পণ হয়। অনেক সংস্কৃতিতে আপেলের ধর্মীয় এবং পৌরাণিক তাৎপর্য আছে, এদের মধ্যে নর্স, গ্রীক এবং ইউরোপীয়ান খ্রিস্টীয় ঐতিহ্য অন্যতম। সাধারণত আপেলের জাতগুলি মূলের কলমের মাধ্যমে তৈরি করা হয়, যা ফলস্বরূপ গাছের আকার নিয়ন্ত্রণ করে। আপেলের প্রায় ৭,৫০০ টির বেশি পরিচিত জাত রয়েছে।
উদ্ভিদের তথ্য
আপেল একটি পাতলা গাছ সাধারণত ২-৪.৫ মিটার, বন্যের প্রজাতি ৯ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। যখন চাষাবাদ করা হয় তখন আকার-আকৃতি এবং শাখা প্রশাখার ঘনত্ব টি ছাঁটাই পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। পাতাগুলি পর্যায়ক্রমে সবুজ আকৃতির ডিম্বাশয় যুক্ত বাঁকা মার্জিন এবং কিছুটা নিচু আন্ডারসাইড সহো সজ্জিত হয়। ৫-১২ মিটার দীর্ঘ এবং চওড়া ও শাখা প্রশাখা যুক্ত শীর্ষভাগ বিশিষ্ট বৃক্ষ। আপেল ফল হেমন্ত কালে পাকে এবং ৫-৮ সেমি ব্যাসের হয়ে থাকে। পুষ্পকলি বসন্তকালে পাতার অঙ্কুরোদগম সহ একসাথে উৎপন্ন হয়, স্পার এবং কিছু দীর্ঘ অংকুরের উপর একসাথে উৎপন্ন হয়। ৩ থেকে ৪ সে.মি. (১-১^২/২ ইঞ্চি) ফুলগুলি গোলাপি রঙের টিনএজের সাথে সাদা হয় যা ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে যায়। পাঁচটি পাপ্রি হয় একটি ফুলের ৪-৬ টি ফুলের সাথে সাইম থাকে। ফুলের কেন্দ্রীয় অংশকে "কিং ব্লুম" বলা হয়। গ্রীষ্মের শেষের দিকে এবং শরতকালে ফল পরিপক্ক হয় এবং বিভিন্ন ধরনের আকারের বিভিন্ন জাত রয়েছে। বাণিজ্যিক উৎসাহ করা বাজারের পছন্দ অনুসারে একটি আপেল উৎপাদন করার লক্ষে রাখছেন যার ব্যাস ৭-৮.৫ সেন্টিমিটার হয়।
বন্য পূর্বপুরুষ
মালুস সোয়েসিয়ার মূল বন্য পূর্বপুরুষ ছিলেন মালুস সিভেরসি। তিনি দক্ষিণ কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান এবং উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের চীনের মধ্য এশিয়ার পাহাড়গুলো তে বড়ো হবার জাতের জঙ্গল দেখতে পেয়েছিলেন। প্রজাতির চাষাবাদ, সম্ভবত তিয়ান শিয়ান পর্বতমালার বনভূমি থেকে শুরু হয়েছিল। তা দীর্ঘ সময় ধরে অগ্রসর ছিল এবং অন্যান্য প্রজাতির জীনের জন্য উন্মুক্ত অধিকার ছিল। [৩]
জিনোম
আপেল ডিপ্লয়েড (যদিও ত্রীপ্লয়েড জাতগুলো অস্বাভাবিক নয়) এতে ১৭ টি ক্রোমোজোম এবং আনুমানিক জিনোম আকার প্রায় ৬৫০ (এম বি) হয়। বেশ কয়েকটি পুড়ো জিনোম সিকোয়েন্স উপলভ্য করা হয়েছে। ২০১০ সালে প্রথমটি ছিল ডিপ্লয়েড চাষকারি 'গোল্ডেন ডিলিশ' এর উপর ভিত্তি করে। যাই হোক এই প্রথম জিনোম ক্রমটি বেশ কয়েকটি ত্রুটি ধারণ করে কিছু অংশে ডিপ্লোডিড আপেল গুলোতে উচ্চতর ডিগ্রিবিহীনতা থাকার কারণে যা প্রাচীন জিনোম এর মডেল এর সাথে যুক্ত হয়ে সমাবেশকে আরও জটিল করে তোলে। সম্প্রতি দ্বিগুণ এবং ত্রীহ্যাপ্লয়েড গুলোকে ক্রমযুক্ত করা হয়েছে, উচ্চমানের ফলন সমৃদ্ধ পুরো জিনোম সিকোয়েন্সদেরও। প্রথমে পুরো জিনোম সমাবেশটি প্রায় ৫৭০০০ টি জীন ধারণ করেছিলো বলে অনুমান করা হয়। যদিও সাম্প্রতিক জিনোম সিকোয়েন্স গুলি ৪২০০০ থেকে ৪৪৭০০ টি প্রোটিন কোডিং জিনের মধ্যে আরও মাঝামাঝি অনুমানকে সমর্থন করে।
প্রজাতি
মানুষের জানা শোনা ৭,৫০০ টিরও বেশি আপেলের জাত (চাষ যোগ্য) রয়েছে। একই মূল থেকে জন্মানোর পরেও কৃষকরা তাদের আকার এবং ফলন নিশ্চিত করেন। নাতিশীতোষ্ণ এবং ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ুর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রজাতি পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যের জাতীয় ফল সংগ্রহ অধিদপ্তর যা পরিবেশ খাদ্য এগুলোর দায়িত্বে আছে। এই দপ্তরের প্রায় ২০০০ এরও বেশি কেন্টে আপেলের জাত রয়েছে। যুক্তরাজ্যের জাতীয় ফল সংগ্রহের তথ্যশালায় অনেকগুলি আপেলের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের প্রজাতি সম্পর্কে তথ্য রয়েছে মূলত একই "জিনগত" আপেল চাষ কারির নামের মূলসহ। এই জাতগুলির বেশিরভাগই তাজা (মরুভূমির আপেল) খাওয়ার জন্য প্রজনন করা হয় যদিও কিছু রান্না করার জন্য ব্যবহার করা হয়। সিডার জাতের আপেল গুলো তাজা খেতে খুব তীব্র লাগে তবে তারা পানীয়গুলোতে অনেক গন্ধ সৃষ্টি করে যা ডেজার্ট আপেল পারে না।
বংশ বিস্তার
অনেক জাতের আপেল বীজ থেকে সহজেই বৃদ্ধি পায়। তবে অনেক বহুবর্ষজীবী ফল আছে যা মাতৃ গাছের চেয়ে মিষ্টি হয়। সে কারণে বীজ থেকে উৎপন্ন চারা গাছটিকে বলে জাইগোসিটি। মাতৃ গাছ থেকে যে চারা বানানো হয় সেটা জীনগত কিছুটা পরিবর্তন হয়।[১০] প্রকৃতঅর্থে আপেলের বীজ থেকে চারা রোপণ করার সময় ভালোভাবে বংশবৃদ্ধি হয় না, কলম করে সাধারণত নতুন আপেল গাছ উৎপাদন করতে হয়। গ্রাফ্টের নিচের অংশের জন্য ব্যবহৃত রুটস্টকগুলি বিভিন্ন ধরনের আকারের গাছ উৎপাদন করতে নির্বাচন করা যেতে পারে, কলম করার সময় গাছের নিচের অংশের রুটস্টকগুলি (রুটস্টক হচ্ছে একটি উদ্ভিদের অংশ, প্রায়শই একটি ভূগর্ভস্থ অংশ, যা থেকে নতুন ভূগর্ভস্থ বৃদ্ধি উৎপাদিত হতে পারে) গুলো ব্যবহার করতে হয়, যার কারণে বিভিন্ন ধরনের আকারের গাছ উৎপাদন করতে নির্বাচন করা যেতে পারে। এছাড়া শীত থেকে রক্ষা পেতে, পোকামাকড়, রোগবালাই দমন ও পুষ্ট গাছের জন্য মাটি নির্বাচন করা প্রযোজন।[১১]
খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অবধি ইরান এবং এশিয়া মাইনরের ইতিহাস থেকে বামন শেকড় থেকে আপেল গাছের চারা তৈরি কথা জানা যায়। মহান আলেকজান্ডার বামন আপেল গাছের নমুনা এরিস্টটলের লিসিয়ামে প্রেরণ করেছিলেন। পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে বামন রুটস্টকগুলি বা শেকড় পদ্ধতি প্রচলিত হয়ে ওঠে এবং পরে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা এবং বিভিন্ন চক্রের মধ্য দিয়ে বিস্তার লাভ করে।
আপেলের পুষ্টিগুণ
খোসাসহ আপেলের খাদ্যযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম অংশে রয়েছে – আপেলে প্রায় ৮০% পানি থাকে যা শরীরের জন্য অতীব দরকারি।
খাদ্যশক্তি----- ৫২ কিলোক্যালরি
শর্করা----- ১৩.৮১ গ্রাম
চিনি----- ১০.৩৯ গ্রাম
খাদ্যআঁশ----- ২.৪ গ্রাম
চর্বি----- ০.১৭ গ্রাম
আমিষ----- ০.২৬ গ্রাম
জলীয় অংশ----- ৮৫.৫৬ গ্রাম
ভিটামিন এ----- ৩ আইইউবিটা
ক্যারোটিন----- ২৭ আইইউ
লুটেইন----- ২৯ আইইউ
থায়ামিন----- ০.০১৭ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লেভিন----- ০.০২৬ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন----- ০.০৯১ মিলিগ্রাম
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড----- ০.০৬১ মিলিগ্রাম
ফোলেট----- ৩ আইইউ
ভিটামিন সি----- ৪.৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই----- ০.১৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে----- ২.২ আইইউ
ক্যালসিয়াম----- ৬ মিলিগ্রাম
আয়রন----- ০.১২ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম----- ৫ মিলিগ্রাম
ম্যাংগানিজ----- ০.০৩৫ মিলিগ্রাম
ফসফরাস----- ১১ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম----- ১০৭ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম----- ১ মিলিগ্রাম
জিংক----- ০.০৪ মিলিগ্রাম
ফ্লোরাইড----- ৩.৩ আইইউ
বীজ বাদে ত্বকসহ সমস্ত অংশই মানুষের ব্যবহারের উপযোগী মূল, কাণ্ড থেকে নিচে,বীজযুক্ত অংশ সাধারণত খাওয়া হয় না। এটা ফেলে দেয়া হয়। আপেল বিভিন্ন উপায়ে গ্রহণ করা যেতে পারে যেমন: রস হিসেবে, পিস হিসেবে রান্না করে, সালাদ হিসেবে এবং আপেল মাখন এর মতো ছড়িয়ে থাকা অংশগুলো। আপেল কখনো কখনো সসেজ এবং স্টাফিং এরকম মজাদার খাবার গুলির উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[১৮]
জনপ্রিয় ব্যবহারবিধি
আপেল প্রায়ই কাঁচা খাওয়া হয়। কাঁচা খাওয়ার জন্য উপযুক্ত জাত গুলিকে ডেজার্ট আপেল বা টেবিল আপেল বলা হয়। যুক্তরাজ্যে টফি আপেল হল প্রচলিত একটি মিষ্টান্ন যা গরম টফিতে আপেল লেপ করে এবং ঠাণ্ডা করতে সাহায্য করে।
জৈব উৎপাদন
জৈব আপেল সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত হয়। পোকামাকড় এবং রোগের কারণে জৈব আপেল ইউরোপে উৎপাদন করা অত্যন্ত কঠিন। জৈব ফলন এবং গুণগত মানোন্নয়নের জন্য সালফার, তামা, অনুজীব, ভাইরাস এবং উদ্ভিদ নিষ্কাশন (পাইরেথ্রাম নিম) এর মতো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
ফাইটোকেমিক্যাল
আপেলের খোসায় এবং বীজে বিভিন্ন ফাইটোকেমিক্যালস রয়েছে, বিশেষত পলিফেনল গুলো যা তাদের সম্ভাব্য সাস্থের প্রভাবগুলোর জন্য প্রাথমিক গবেষণার অধীনে রয়েছে।
নন ব্রাউনিং আপেল
ফিনোলিক যৌগের জারনকে ও কুইনস একটি বাদামি ফ্যাক্টর দ্বারা অনুঘটক করে, এনজাইম, পলিফেনল,অক্সিডেস কাঁটা আপেল গুলো কে বাদামি বর্ন করে তোলে। ব্রাউনিং আপেলের স্বাদ, রঙ,খাবারের মান হ্রাস করে। আর্টিকিক আপেল ২০১৯ এ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবর্তিত একটি নন-ব্রাউনিং আপেল পলিফেনোল অক্সিডেজ এর শব্দগুলি নিশ্চিহ্ন করার জন্য জিনগতভাবে সংশোধন করা হয়েছে।[১৯][২০]
গবেষণা
প্রাথমিক গবেষণায় আপেল সেবন করা কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকিতে প্রভাবিত করতে পারে কিনা তা তদন্ত চলছে।[২১]
এলার্জি
আপেল এলার্জির এক রুপ যা প্রায়শই উত্তর ইউরোপে পাওয়া যায়, তাকে বার্চ-আপেল সিনড্রোম বলা হয় এবং এটি এমন লোকদের মধ্যে পাওয়া যায় যাদের বার্চ-পরাগজনিত অথবা এলার্জি রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া যা মুখের এলার্জির লক্ষণ এর আর্ন্তভুক্ত হয়, সাধারণত মুখ এবং গলাতে চুলকানি এবং প্রদাহ জড়িত থাকে, তবে বিরল ক্ষেত্রে প্রানঘাতী অ্যানাফিল্যাক্সিসও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি তখনই ঘটে যখন কাঁচা ফল খাওয়া হয়। আপেলের সঠিক প্রজাতি,এর বয়স, এর সংরক্ষণ অবস্থা ইত্যাদি এইগুলো এই রোগ থেকে আমাদের কে দূরে রাখতে পারে। এলার্জেন রান্না প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষ হয় দীর্ঘ সংরক্ষণ সময় এর জন্যও বার্চ-আপেল সিনড্রোম হতে পারে যার কারণে প্রোটিন পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে।
সবুজ আপেল এর পুষ্টি গুন
লাল আপেলের চেয়ে সবুজ আপেলের গুণ বেশি। সবুজ আপেল লাল আপেলের মতো তেমন স্বাদযুক্ত না হলেও এই আপেলের রয়েছে অনেক উপকারিতা। [২৩]
আঁশঃ সবুজ আপেলে রয়েছে আঁশ। আঁশ হজমে সাহায্য করে। এটি বাউয়েল মুভমেন্ট ঠিক রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
হাড় শক্ত করেঃ সবুজ আপেলের মধ্যে রয়েছে আয়রন, কপার, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজম পটাশিয়াম ইত্যাদি। এই মিনারেলগুলো হাড়কে শক্ত রাখে। এটি থাইরয়েড গ্রন্থির সঠিক কার্যক্রমে সাহায্য করে।
কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করেঃ সবুজ আপেলের আঁশ কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে।
বিপাক ক্ষমতা বাড়ায়ঃ সবুজ আপেলের আঁশ হজম ভালো করে। বাউল মুভমেন্ট ভালো করে। এ জন্য এটি বিপাক ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
রক্তের বাজে কোলেস্টেরল কমায়ঃ সবুজ আপেল রক্ত থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়।
আলৎসহাইমারের রোগ প্রতিরোধ করেঃ সবুজ আপেলে থাকা উপাদান মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। এটি প্রবীণ বয়সে আলৎসহাইমারের রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।
লিভার সুস্থ রাখেঃ সবুজ আপেলের মধ্যে থাকা উপাদান লিভারকে ভালো রাখে। এটি বিভিন্ন ধরনের লিভারের সমস্যা প্রতিরোধ করে।