label
stringclasses
6 values
text
stringlengths
1.57k
117k
is_valid
bool
1 class
fe
ভাষার অর্জন, প্রজন্মের ভাষাপ্রেম ভাষার অর্জন, প্রজন্মের ভাষাপ্রেম ফকির ইলিয়াস ------------------------------ শুধু ভাষার সৌন্দর্যই নয়, রাষ্ট্রের অবকাঠামোর সৌন্দর্য, স্খিতিশীলতা এবং শান্তির অব্যাহত ধারা বহাল থাকলে বাংলাদেশও হতে পারে বিশ্বের অন্যতম বিনিয়োগ, পর্যটন এবং বাণিজ্য নগরী। আর সেজন্য রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজনীয়তা থেকেই যাচ্ছে। আমি মনে করি, প্রজন্মকে ভাষাপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হলে আগে সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষার উজ্জ্বলতা দিতে হবে। সকল বাধা সরিয়ে নিতে হবে। শুধু অর্জন নিয়ে বসে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক, সামাজিক মুক্তিই দিতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শান্তির নিবাস। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সিরিজ আয়োজিত একটি সেমিনারের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল ভাষার অর্জন। একটি ভাষা কী ফসল ফলাতে পারে সে বিষয়ে ভাষা বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখছিলেন। একজন স্প্যানিশ ভাষা বিশেষজ্ঞ জিসান রডরিগাস তার বক্তব্যে তুলে ধরেছিলেন, সাহিত্য-সংস্কৃতিতে স্প্যানিশ ভাষার অগ্রগতি এবং আধিপত্যের কথা। তিনি স্প্যানিশ ভাষাভাষী কজন নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকের নাম উলে­খ করে বলেছিলেন, এরা স্প্যানিশ ভাষায়ই তাদের লেখাগুলো লিখেছিলেন। তাদের লেখার দক্ষতা, মুন্সিয়ানা, ভাবপ্রকাশ এবং বিষয় নির্বাচন বিশ্বের বোদ্ধা পাঠককে সাড়া দিতে সক্ষম হয়। তারপর স্খান করে নেয় বিশ্ব সাহিত্যে। একটি লেখা যখন নিজ ভাষায় বিশ্ব মানবের পক্ষে, বিশ্বভাষা হয়েই মাথা উঁচু করে তখনো গোটা মানবসমাজ তা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে পড়ে। একুশে ফেব্রচ্ছারি এলে বাঙালিরা বাংলাভাষার অর্জন, দেনাপাওনার হিসাবও মেলানোর চেষ্টা করেন। সন্দেহ নেই ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে যে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করা হয়েছিল, তা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটি রাষ্ট্র, একটি বৃহৎ জাতি­ বাংলাদেশ এবং বাঙালি। একটি রাষ্ট্রে একটি ভাষাই যে সবার মাতৃভাষা হবে, তারও কোনো সম্ভাবনা শতভাগ নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশে উপজাতি মানুষের ভাষার দিকে নজর দিলে আমরা সে দৃষ্টান্ত পাবো। আর বহুজাতিক-বহুভাষিক ‘মাল্টিকাচারাল কান্ট্রি’ বলে সুপরিচিত যুক্তরাষ্ট্র তো তার বড়ো উদাহরণ। ভাষার স্বীকৃতি দিতে গিয়ে নিউইয়র্কের বোর্ড অফ এডুকেশন বাংলা ভাষাভাষী দোভাষীর ব্যবস্খা করেছে। বিভিন্ন হেলথ ইনস্যুরেন্স, হাসপাতালগুলো গর্বের সঙ্গে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে-‘আমরা বাংলায় কথা বলি’। বাংলা ভাষার এই অর্জন প্রজন্মের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করছে এই বিদেশেও। আরেকটি গুর“ত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভাষার সঙ্গে অর্থনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। চীন এ সময়ে প্রোডাকশনের ক্ষেত্রে বিশ্বের চারণ ভূমি। তাই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব শোরুম, নির্মাণ কারখানা তৈরি করছে চীনে। এজন্য এখন যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্টে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, কিংবা নিতে চাইছে তাদের জন্য চীনা ভাষা অপশনাল করা হয়েছে। এবং অনেক নবিস ব্যবসায়ী নিজ ব্যবসা প্রসারের প্রয়োজনে জাপানি, কিংবা চীনা ভাষা রপ্ত করে নিচ্ছেনও। লক্ষ্য একটিই, বিশ্বে ব্যবসার প্রসারকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা। চীন, জাপান, হংকং, কোরিয়া প্রভৃতি দেশের বাণিজ্যিক ভবিষ্যৎই তাদের ভাষা প্রসারে বিশ্বব্যাপী ভূমিকা রাখছে। দৃষ্টি কাড়ছে বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ীদের। ভাষা একটি রাষ্ট্রের সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে গভীরভাবে। যে শিশু ঐ রাষ্ট্রের ভাষার মর্ম মূলে পৌঁছতে পারে, তার লক্ষ্যের পরবর্তী ধাপটি হয় সে ভাষার সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা। যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতে প্রথম থেকে পঞ্চম গ্রেডের ছাত্রছাত্রীদের একেকটি দেশের উপর বিশেষ এসাইনমেন্ট দিয়ে ঐ দেশ সম্পর্কে পুরো জ্ঞানদানে উদ্বুদ্ধ করা হয়। লক্ষ্যবিন্দু হচ্ছে একজন মার্কিনি যাতে বড়ো হয়ে ঐ রাষ্ট্র, ঐ ভাষার সারটুকু আহরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের কল্যাণে কাজে লাগাতে পারে। দুই. একটি রাষ্ট্রের ভাষা কি বদলে যায়? ভাষা কি আধুনিক হয়? এসব প্রশ্নগুলো আমরা মাঝে মাঝেই দেখি। বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে ‘কবিতার ভাষা’। বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকী, লিটল ম্যাগাজিনগুলো ‘কবিতার ভাষা সংখ্যা’ প্রকাশ করছে মাঝে মাঝে। একটি ভাষায়, অন্য ভাষার ঘনিষ্ঠ প্রভাব পড়াটা খুবই স্বাভাবিক। বাংলা ভাষায় অনেক ইংরেজি প্রতিশব্দ মিশে আছে, যা এখন আমরা বাংলা বলেই মনে করি। ভাষার বদলে যাওয়া সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী সুইডিশ একজন ভাষা বিজ্ঞানী এডলফ মেকিনসের ভাষ্য হচ্ছে­ যেহেতু অক্ষর, শব্দগুলো বদলায় না­ অতএব মৌলিক ভাষা বদলাবার কোনো সম্ভাবনা নেই। যা বদলায় তা হচ্ছে বাক্য গঠনের ধরন। চিত্রকল্পের ব্যবহার এবং বাক্য প্রকরণের গতিবিন্যাস। যে কবি অনুপ্রাস কিংবা নেপথ্য চিত্রের আধুনিক বিন্যাস ঘটিয়ে কবিতা লিখছেন, তিনিই দাবি করছেন­ তিনি নতুন ভাষায় লিখছেন। যদিও শুধুমাত্র তার বলার ধরনটি বদলেছে। বাংলা সাহিত্যে বিদেশী গল্প, কবিতা, উপন্যাসের ছায়া অবলম্বন করে অনেক গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটিকা রচিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, একটি অন্যভাষার লেখা যখন পাঠকের মনে দাগ কাটে, তিনি যদি লেখক হন­ তবে তার আগামী লেখায় এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মাìত্মরে এভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে ভাষার বিবর্তনের আলো। অন্যভাষার দ্যূতিময় সারমর্মকে নিজ ভাষার পাঠকের জন্য তুলে আনাকে এমন দোষের কিছু বলে, বৃহৎ সাহিত্য ভাণ্ডার বিবেচনা করে না। বাংলাদেশে গেলো দুই দশকে নামী-দামি বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার বেড়েছে। বিশ্বের বর্তমান প্রবাহমানতার নিরিখে ইংরেজি শিক্ষা অত্যাবশ্যক বলেই আমি মনে করি। কারণ ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী খুব সহজেই সমসাময়িক বিশ্ব স্ট্যান্ডার্ডকে মোকাবিলা করতে পারে। নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে। আর রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রয়োগ সম্পর্কে প্রথমে যে কথাটি আসে, রাষ্ট্রের আইনি প্রক্রিয়া, দলিল দস্তাবেজ এখনো যখন সেই ব্রিটিশ শাসনের ছায়া নির্ভর, সেখানে শুধু ভাষা পরিবর্তনের কথা আসছে কেন? বদলালে তো আমূল বদলে দিতে হবে পুরো দলিলপত্র, প্রক্রিয়া। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কল্যাণে বদলে যাচ্ছে গোটা বিশ্বভাষা পরিস্ফুটনের দৃশ্যকল্প। ছাপা বই প্রকাশনার পাশাপাশি এখন ইন্টারনেটে ই-বুক প্রকাশের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছে পাঠকের তৃষ্ণাকে। এখনো এক সঙ্গে একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পাঠক-পাঠিকা একই বই পড়তে পারছেন। মেধা এবং মনন বিকাশে তাই ভাষার বিস্তার ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যণ্ত। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে যদি ভাষান্তরের মাধ্যমে বিশ্বের অন্য ভাষাভাষী মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। তবেই উপকৃত হতে পারে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা। শুধু ভাষার সৌন্দর্যই নয়, রাষ্ট্রের অবকাঠামোর সৌন্দর্য, স্খিতিশীলতা এবং শান্তির অব্যাহত ধারা বহাল থাকলে বাংলাদেশও হতে পারে বিশ্বের অন্যতম বিনিয়োগ, পর্যটন এবং বাণিজ্য নগরী। আর সেজন্য রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজনীয়তা থেকেই যাচ্ছে। আমি মনে করি, প্রজন্মকে ভাষাপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে হলে আগে সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষার উজ্জ্বলতা দিতে হবে। সকল বাধা সরিয়ে নিতে হবে। শুধু অর্জন নিয়ে বসে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক, সামাজিক মুক্তিই দিতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শান্তির নিবাস। সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৩৮
false
hm
চণ্ডীশিরা: দ্বিতীয় পর্ব বাদলের কথা হাবিব ভাইকে আমরা সবাই খুব পছন্দ করতাম। অন্তত তার মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। মাঝেমধ্যে সন্দেহ হয়, হাবিব ভাইয়ের এই পাগলাটে স্বভাব উত্তরাধিকারসূত্রে বিলুও খানিকটা পেয়েছে। আজ সকালে সন্দেহটা আবার একটু পানি পেয়েছে হালে। নির্বিকার নিরুত্তেজিত গলায় ছোকরা ফোন করে বলে, "বাদল মামা, বাসায় চলে আসো। বাবা মনে হয় মারা গেছে।" কত বয়স বিলুর? কুড়ি? একুশ? এই বয়সের একটা ছেলের গলায় কোনো দুঃখের ছাপ নাই, অস্থিরতার আভাস নাই, যেন দুধ টকে গেছে, এমনভাবে নিজের বাবার মৃত‌্যুর সংবাদ দিয়ে বেড়াচ্ছে মানুষকে? আর "মনে হয় মারা গেছে" মানে কী? তোর বাপ মরে গেছে কি মরে নাই, তুই নিশ্চিত জানিস না? কিংবা কে জানে, হয়তো বিলুর পক্ষে এটাই স্বাভাবিক। যে ছেলে জীবনে দশ-বারোবার মাত্র দেখেছে নিজের বাবাকে, তার হয়তো এমন নিস্পৃহ থাকাই স্বাভাবিক। হয়তো বিলু ফোন সেরে আবার শুয়ে পড়েছে কাঁথামুড়ি দিয়ে, নয়তো বন্ধুদের সাথে ফোনে আড্ডা মারছে, বলছে, "ওহ বাই দ্য ওয়ে, দোস্ত, বাবা মনে হয় মারা গেছে। এনিওয়ে, তারপর কী হলো শোন ...।" যত দিন যাচ্ছে, কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে ছেলেমেয়েগুলো। খবরটা পাওয়ার পর প্রথমেই আতাহার ভাইয়ের মোবাইলে একটা কল দিলাম। হাবিব ভাই ফোন ব্যবহার করেন না --- করতেন না --- তার সাথে কোনো জরুরি কাজে যোগাযোগ করতে গেলে আতাহার ভাইকেই কল দেয়া দস্তুর। আতাহার ভাই হাবিব ভাইয়ের ঐ পোড়ো বাড়ির ম্যানেজার, খুবই বিটকেলে স্বভাবের লোক, এবং মনে মনে যা আশা করেছিলাম, সেটাই সত্য হলো, মোবাইল বন্ধ। এক মহিলা বিরক্তিকর একঘেয়ে গলায় বলে যাচ্ছে, এই মুহূর্তে মোবাইলে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না ...। আমি এ পর্যন্ত কখনও আতাহার ভাইকে ফোন করে পাইনি। উনি নাকি মাঝেমধ্যে বুবুকে নিজ থেকে ফোন করে কুশল বিনিময় করেন। হাবিব ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ কীভাবে আসতে পারে, এ প্রশ্নটা মাথায় এসেছিলো, কিন্তু উত্তরটা আমার জানা। বুবুকে তবুও ফোন করে জানতে চাইলাম, "চিঠি এসেছে কোনো?" বুবু একটু ধরা গলায় শুধু বললো, "হ্যাঁ ... তুই একটু তাড়াতাড়ি আয়। আমাদের যেতে হবে ওর ওখানে।" দাদা দেশে নেই, তাকে একটা ইমেইল করে জানাতে হলো খবরটা। অফিসে কয়েকটা কল করে আমাদের তাজমহল রোডের বাড়িতে চলে এলাম। একসময় আমাদের বাড়ি গমগম করতো মানুষজনের ভিড়ে, এখন সেটা একেবারে নিঝুম হয়ে পড়ে আছে। বিলুই দরজা খুলে দিলো, তার চোখেমুখে কোনো বাড়তি অভিব্যক্তি নাই। বুবু ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো, চোখ দু'টো ফোলা ফোলা। "খবর কী তোদের? মিলি কেমন আছে?" বুবু এতগুলি বছরেও পাল্টায়নি। হাবিব ভাই মারা গেছেন, কোথায় আমরা ওকে সান্ত্বনা দেবো সবাই মিলে, সেই সুযোগটাও সে দিচ্ছে না। বিলু হয়তো বুবুর কাছ থেকেই এই সংযত স্বভাব পেয়েছে। কিন্তু তাই বলে একটুও দুঃখ পাবে না? বিলু ডাইনিং টেবিলে ফিরে গিয়ে আবার চায়ের কাপ নিয়ে বসলো। আমি বুবুর দিকে ফিরে বললাম, "কী লেখা চিঠিতে?" বুবু একটু চুপ করে থেকে বললো, "অনেক কথা ... সব জানতে হবে না তোর। কিন্তু আমাদের দ্রুত যেতে হবে ওখানে।" প্রায় কুড়ি বছর আগের একটা দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন বাবা, দাদা, বুবু, বুবুর কোলে ছোট্ট বিলু, আর হাবিব ভাই অস্থির হয়ে পায়চারি করছেন, বিড়বিড় করে বলছেন, "বিপদ, ভীষণ বিপদ, আমাকে চলে যেতে হবে!" আমি বিলুর কান বাঁচিয়ে নিচু গলায় বললাম, "কোনো তাবিজ এসেছে?" বুবু নিজের গলায় ঝোলানো একটা তাবিজ শাড়ির আড়াল থেকে বার করে দেখালো। "দুটো। আমার আর বিলুর জন্য। সারাক্ষণ পরে থাকতে বলেছে।" বুবুর মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে আমার অসহায় লাগে। বুবু স্কুলে মেয়েদের ফিজিক্স পড়ায়, কেমিস্ট্রি পড়ায়, অঙ্ক করায়, আর এখন ওকে এই গাবদা তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হচ্ছে, এমনকি বিলুর গলাতেও ঝুলিয়ে দিতে হয়েছে, হাবিব ভাইয়ের প্রায় উন্মাদ কাণ্ডকারখানার জের টেনে। কিন্তু উন্মাদই বা বলি কী করে? "চিঠিটা কি নষ্ট করে ফেলেছো?" জানতে চাইলাম। একটা কাগজপোড়া গন্ধ ভেসে আসছে রান্নাঘর থেকে। বুবু মাথা ঝাঁকালো, "সেরকমই করতে বলেছে।" একেই বোধহয় বলে দেজা ভু। কিশোর বয়সে দেখা কুড়ি বছর আগের দৃশ্যে ফিরে গেলাম আবার। বাবা বিস্মিত হয়ে বলছেন, "কে পাঠালো তোমাকে চিঠি?" হাবিব ভাই পায়চারি থামিয়ে বাবার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলছেন, "বাবা আমি আপনাকে পরে সব বুঝিয়ে বলবো। এখন আমাদের সবারই ভীষণ বিপদ। আমাকে যত দ্রুত সম্ভব আব্বার কাছে যেতে হবে।" বিলুর কথা শুনে আমি আবার বর্তমানে ফিরে এলাম, "চা খাবে মামা?" এগিয়ে সোফার ওপর ধপ করে বসে পড়ে বললাম, "দে এক কাপ।" বুবু বললো, "আমার ঘরে গিয়ে দেখে আয় কী অবস্থা।" সোফা ছেড়ে উঠে বুবুর ঘরে ঢুকলাম। একটা বিটকেলে গন্ধ গোটা ঘরে, মুরগির চামড়া থেকে পশম পুড়িয়ে সরানোর সময় যেমন গন্ধ ছড়ায়, তেমন। বুবুর ঘরের মেঝেতে একটা কুটকুটে কালো ক্রসচিহ্ন। সেটা থেকেই ছড়াচ্ছে গন্ধটা। ব্যাপারটা নতুন। হাবিব ভাই যখন নিজের বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন সারা জীবনের জন্যে, তখন এমন কিছু দেখিনি আমরা। শুধু একটা পার্সেল এসেছিলো, আর একটা চিঠি, যেটা হাবিব ভাই আমাদের সবার সামনেই ম্যাচ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছিলেন, আর একটা হাড়ের টুকরো এসেছিলো কেবল। হাড়ের টুকরোটা হাবিব ভাই বুবুর ঘরের জানালার শিকের সাথে সুতো বেঁধে রেখে গিয়েছিলেন। দাদা খুব জেদ করে সেটা খুলতে গিয়েছিলো, বাবা থামিয়েছিলেন দাদাকে। হাবিব ভাইকে সেদিন পাগলের মতোই দেখাচ্ছিলো। বাকিটা জীবন তিনি তার আচরণ দিয়ে সেদিনের ধারণাটাই পোক্ত করে গেলেন শুধু। বুবুর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আবার ড্রয়িংরুমে বসলাম। হাবিব ভাই চমৎকার একজন মানুষ ছিলেন। স্বল্পবাক, কিন্তু খুব রসিক, মাঝেমধ্যে হুটহাট কয়েক লাইন গান গেয়ে সবাইকে চমকে দিতেন, বেশিরভাগ সময়ই একটা বই নিয়ে বসে বা শুয়ে থাকতেন। সরকারী চাকরি করতেন, বুবুকে নিয়ে একেবারে আক্ষরিক অর্থেই অজ পাড়াগাঁয়ের সরকারি কোয়ার্টারে ছিলেন কয়েক বছর, ঢাকায় এলে উঠতেন আমাদের বাড়িতেই। আমরা সবাই জানতাম, হাবিব ভাইয়ের বাবা মা কেউ বেঁচে নেই। কুড়ি বছর আগে তিনি যেদিন ভোরবেলা জেগে উঠে চিৎকার করে উঠলেন, সেদিন আমরা সবাই খুব অবাক হয়েছিলাম। বাবার মুখটা মনে পড়ে, হাঁ করে তাকিয়ে ছিলেন তিনি হাবিব ভাইয়ের দিকে। "বাবা মারা গেছেন মানে? তোমার বাবা বেঁচে ছিলেন? কোথায় উনি? কী হয়েছে? কে খবর দিলো?" বিলু একটা পিরিচে করে এক কাপ চা দিয়ে গেলো। বাসায় কাজের লোক আসে দেরি করে, সকালে বুবু আর বিলুকেই নাস্তা বানানোর কাজ করতে হয়। ছেলেটা অন্তত চা বানাতে না পেরে চায়ের অভাবে মরবে না। "তুই ঠিক আছিস তো?" প্রশ্নটা আমার কানেই বেখাপ্পা শোনায়। বিলু কাঁধ ঝাঁকায়, "হ্যাঁ! ইটস অল দ্য সেইম মামা ... তুমি তো জানোই। বাবার সাথে আমার শেষ কথা হয়েছে পাঁচ বছর আগে। তার আগে কথা হয়েছিলো আরো পাঁচ বছর আগে। হি ইজ আ স্ট্রেইঞ্জার টু মি ... সরি, হি ওয়াজ।" বিলুর শেষ কথাটা কানে বাজতে থাকে। হাবিব ভাই এখন পাস্ট টেন্সের মক্কেল হয়ে গেছেন। বাবা মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত বুবুকে পীড়াপীড়ি করে গেছেন, আবার বিয়ে করতে। বুবু শোনেনি। হাবিব ভাই মাঝে মধ্যে চিঠি পাঠাতেন, সে চিঠিতে কী লেখা ছিলো আমাদের জানার সুযোগ হয়নি। আমাদের সবাইকে চমকে দিয়ে ছয় সাত বছর পর হাবিব ভাই একদিন বাসায় এসে হাজির। সাথে একটা প্রকাণ্ড চামড়ার ট্রাঙ্ক। পরিষ্কার মনে আছে আমার, দাদা প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়েছিলো হাবিব ভাইয়ের ওপর। বাবা তখন আর বেঁচে নেই। হাবিব ভাই যতক্ষণ ছিলেন বাসায়, একটা কথা বলেননি। শুধু বুবুকে আড়ালে ডেকে নিয়ে কয়েক মিনিট কথা বলে চুপচাপ চলে গিয়েছিলেন। সেই চামড়ার ট্রাঙ্কে কী ছিলো, সেটাও আমরা জানতে পারিনি। বুবুর ঘরে সেটা তালা মারা পড়ে ছিলো বহুদিন। কয়েক বছর আগে বোধহয় বুবু ওটা ফেলে দিয়েছে। বিলু একটু বড় হওয়ার পর বুবু আর বিলুকে একবার ঐ জঙ্গুলে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন হাবিব ভাই। বিলু ফিরে এসে শুধু ভুতুড়ে সব গল্প শোনাতো, "জানো মামা, বাবা একটা বিরাআআট ক্যাসলে থাকে! ওখানে কারেন্ট নাই, রাতের বেলা মশাল জ্বালাতে হয়! ইয়া বড় বড় বাদুড় আছে ওখানে, আর সাপ! আর বাড়ির ভিতরটা একদম ঠাণ্ডাআআআ!" জায়গাটার নাম সম্ভবত চণ্ডীকদম। বুবু একবারই গিয়েছে ওখানে, তারপর আর যায়নি। বিলুও কোনো আগ্রহ দেখায়নি বাবার কাছে যেতে। হাবিব ভাইয়ের সাথেও আর দেখা বা কথা হয়নি আমাদের। শেষ যেবার দেখলাম ওনাকে, দেখে চমকে উঠেছিলাম। এককালের সুদর্শন, সুরসিক স্বল্পবাক মানুষটা হারিয়ে গিয়েছেন, কঠোর, নির্লিপ্ত, কিছুটা নিষ্ঠুর চেহারার এক মাঝবয়েসী অচেনা লোক যেন দাঁড়িয়ে ছিলো ঘরের মাঝে। পরনেও তার অদ্ভুত পোশাক, পা পর্যন্ত ঢোলা আলখাল্লা, গলায় ঝুলছে একটা বিরাট তাবিজ, হাতে বালা। লম্বা রুক্ষ চুল মাথার পেছনে ঝুঁটি পাকানো। কেউ বলবে না, ইনি একজন ডাক্তার। যদিও শুনেছি, ওনার এলাকায় লোকে ওনাকে ডাক্তার হিসেবেই চেনে, ওনার বাড়িটাকেও সবাই ডাক্তারবাড়ি ডাকে। হাবিব ভাইয়ের বাবাকে নিয়ে আমাদের কৌতূহল ছিলো, কিন্তু সেই কৌতূহল মেটানোর কেউ ছিলো না। বুবু হয়তো কিছু একটা জেনে থাকবে, কিন্তু বুবুও আর মুখ খোলেনি। উনি কীভাবে মারা গেলেন, আমাদের আর জানা হয়নি। চায়ের কাপে চা একলা পড়ে ঠাণ্ডা হচ্ছিলো, এমন সময় দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো। বিলুর বন্ধুগুলো প্রায় সবাই উদ্ভট কিসিমের। যে ছোকরা ঘরে ঢুকলো, তাকে প্রথম দর্শনেই অপছন্দ হলো আমার। শেভ না করা খোঁচা খোঁচা দাড়ি মুখে, টিংটিঙে শরীরে ঢোলা একটা টি শার্ট আর অসম্পূর্ণ প্যান্ট পরে চলে এসেছে। কী একটা কবি যেন আছে শাহবাগে, নানারকম ধুনফুন কথাবার্তা বলে বেড়ায়, তাকে দেখেছি এরকম মেয়েলি হাঁটু ছাড়ানো আধখান প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াতে। ছোকরা ঘরে ঢুকেই বলে, "আয়্যাম সো সরি আন্টি! খুবই দুঃখজনক। কিন্তু লাশ কোথায়? দাফন হবে কোথায়?" বুবু বেশ স্নেহের সাথেই ছোকরাকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে বসালো। "বোসো রবি। তোমার মা কেমন আছেন? বাবা ভালো?" বিলু টয়লেটে ছিলো, বেরিয়ে এসে ছোকরার সাথে খোশগল্প জুড়ে দিলো। তার বন্ধুও লাশ দাফন ইত্যাদির কথা ভুলে কচকচ করে কেক খেতে খেতে চায়ের কাপে ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ চুমুক দিতে লাগলো। কপাল ভালো এদের হাতে লাশ দাফনের দায়িত্ব পড়ছে না। পড়লে লাশ নিজেই হয়তো শাবল হাতে মাটি খুঁড়ে ঢুকে শুয়ে থাকতো লজ্জায়। মর্কট। আমি উঠে গিয়ে রান্নাঘরে বুবুকে জিজ্ঞেস করলাম, "দাফনের কী হবে বুবু?" বুবু নুডলসের প্যাকেট কেটে নুডলস বের করছিলো, আমার দিকে না তাকিয়েই বললো, "দাফন হয়ে যাবার কথা এতক্ষণে।" আমি একটু চমকে গেলাম, "মানে? তোমাদের ছাড়াই?" বুবুর হাতটা কিছুক্ষণের জন্যে স্থির হয়ে রইলো, তারপর আবার নুডলসের ভিড়ে ফিরে গেলো। "হ্যাঁ। সিভিল সার্জন তোর হাবিব ভাইয়ের পরিচিত, লিখেছে কিছু হলে উনি গিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট দেবেন। আতা ভাই দাফনের কাজ শেষ করবেন তারপর, আমাদের জন্য আর অপেক্ষা করবেন না।" হাবিব ভাইয়ের ওপর হঠাৎ মেজাজটা খুব খারাপ হয়। "কোথায় হবে দাফন?" বুবু একটা প্যানে পানি গরম দিতে দিতে বললো, "বাড়ির ভেতরেই। ওর বাবার কবর আছে ওখানে, ওর মায়ের কবরও।" আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, "তুমি তাহলে কেন যেতে চাইছো?" বুবু আমার দিকে ফিরে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ধরা গলায় বললো, "আমাদের অনেক বিপদ রে বাদল! কিছু জরুরি কাজ করতে হবে, ওগুলো আমাকে আর বিলুকে মিলেই করতে হবে!" "আমি আসি তাহলে সাথে।" বুবুকে বিলুর সাথে ঐ পোড়ো জঙ্গুলে বাড়িতে যেতে দিতে ইচ্ছা করে না আমার। "আমার অফিসে কয়েকজন খুব কাজের লোক আছে, তাদেরও সাথে নিয়ে যেতে পারি।" বুবু মাথা নাড়ে। "নাহ, তুই ভাবিস না। লোকলস্কর নিয়ে করার মতো কাজ নয় এগুলো ... এগুলো অন্যরকম ঝামেলা। আমি কোনো সাহায্য লাগলে ফোন করবো তোকে, তখন পারলে চটজলদি এলেই হবে।" আমি বুবুকে আর ঘাঁটাই না। বুবু খুব ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়, খামাখা তর্ক করে কী লাভ? রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে বুবুর ঘরে ঢুকে দেখি, বিলু আর তার নচ্ছাড় দোস্ত রবি আয়নার সামনে ঝুঁকে আছে। রবির গলায় বিলুর তাবিজ, সেটা পরে সে ঘুরে ফিরে নিজেকে দেখছে। বিলু আবার তারপর তাবিজ খুলে নিজের গলায় পরে এদিক ওদিক ঘুরে আয়নায় দেখছে নিজেকে। এদের সমস্যাটা কী? এটা কি ফ্যাশন করার সময়, নাকি ফ্যাশন করার জিনিস? ছেলেরা কেউ তাবিজ পরে ফ্যাশন করে? দেশটার হচ্ছেটা কী? কলিং বেল বেজে উঠলো আবার, বুবু রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে দরজা খুলে দিচ্ছে, শুনতে পেলাম। বিলু আয়নায় আমাকে দেখে এগিয়ে এলো, "মামা, একটু তাবিজটা পরে দ্যাখো।" আমি কটমটিয়ে বিলুর দিকে তাকিয়ে বললাম, "বিলু, বিটলামি করিস না। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে শেখ। তোকে এখন বুবুর সাথে চণ্ডীকদম যেতে হবে। জিনিসপত্র গোছগাছ কর। কুইক। আর এই তাবিজ নিয়ে তামাশা মারবি না রাস্কেল!" বিলু হাত নেড়ে বললো, "না মামা, বুঝতে পারছো না ... খুবই আজব ব্যাপার ঘটছে, তুমি একটু এই তাবিজটা পরে দ্যাখো।" বুবু শুনলাম বলছেন, "কেমন আছো জয়া? মা কেমন আছেন?" পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি বিরাট চশমা পরা জ্ঞানী চেহারার এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে। আমাকে দেখে কাঁচুমাচু হয়ে সে বললো, "হ্যাঁ মাসিমা, মা ভালো আছেন। আপনি কি রান্না করছেন এখন? ... আপনি একটু বিশ্রাম নিন, আমি দেখছি রান্নাঘরে কী কাজ ...।" বিলু আমাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে বললো, "জয়া এসে গেছিস? রেডি হ, আমাদের হবিগঞ্জ যেতে হবে।" জয়া নামের মেয়েটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বুবুর দিকে ফিরে বললো, "এখন? কিন্তু ... আমাকে তো বাসায় বলতে হবে মাসিমা ... ।" বুবু এগিয়ে এসে কড়া গলায় বললো, "বিলু, আমাদের কিন্তু অনেক ঝামেলা ওখানে। এই বিপদে তোমার বন্ধুদের টেনো না। আমি নিষেধ করছি।" বিলু মাথা নাড়লো। "মা, ঐ বাড়িতে আমি একবার গিয়েছি। ওখানে আতা কাকা আর পরানদা ছাড়া আর কেউ থাকে না, আমি জানি। তুমি আর আমি ওখানে গিয়ে থাকলে আমরা একজন আরেকজনকে ফ্রিক আউট করবো, এটা তুমিও ভালো করে জানো। আর আমার বন্ধুরা যদি আমার বিপদেই পাশে না থাকে, তাহলে ভালো সময়ে ওদের দরকার নেই আমার। রবি জয়া নাফিসা ওরা সবাই যাবে আমাদের সাথে।" বুবু একটু বিভ্রান্ত হয়ে আমার দিকে তাকালেন, আমি গলা খাঁকরে বললাম, "বিলু, ব্যাপারটা বোধহয় একটু কনফিডেনশিয়াল ...।" বিলু আমার দিকে না ফিরেই বললো, "হোক কনফিডেনশিয়াল। আমি ঐ ভুতুড়ে বাড়িতে একা একা মায়ের সাথে থাকতে পারবো না। মা-ও পারবে না একা আমার সাথে থাকতে। উই নিড কম্প্যানি। দরকার হলে তুমিও চলো।" বুবু হাল ছেড়ে দিয়ে বললো, "আচ্ছা ঠিকাছে, কিন্তু বাদলের যেতে হবে না। ওর মেজাজের ধাত আছে, ওখানে গেলে আতা ভাইয়ের সাথে ওর লেগে যাবে। রবি, জয়া, তোমরা কি যেতে চাও? বাড়িতে জানিয়েছো?" বিলু জয়ার দিকে ফিরে বললো, "নাফিসা কোথায়?" জয়া বললো, "নাফিসার সাথে কথা বলা মানা এখন। ওর সামনে পরীক্ষা। ও বাদ। আমি তাহলে বাবার পারমিশন চেয়ে দেখি।" রবি এসে ফিসফিস করে আমাকে বললো, "ইয়ে, মামা, বিলুর এই তাবিজটার একটা উইয়ার্ড পাওয়ার আছে। এটা পরলে আর ঐ বিশ্রী চামড়াপোড়া গন্ধটা পাওয়া যায় না!" আমি রবির দিকে ফিরে কটমটিয়ে তাকিয়ে বললাম, "কোন গন্ধ? আমি তো কোনো গন্ধ পাচ্ছি না!" রবি নাক কুঁচকে বাতাস শুঁকে একটু থতমত খেয়ে বললো, "কিন্তু ছিলো তো! বিশ্রী একটা চামড়াপোড়া গন্ধ ছিলো আন্টির ঘরে! আপনি শুঁকে দ্যাখেননি? ঐ যে মেঝের এক্স মার্কস দ্য স্পটের কাছে ...?" বুবুর ঘরে একটা বিশ্রী গন্ধ ছিলো, যেটা মাথা ধরিয়ে দেয়, সেটা এখন আর পাচ্ছি না। আমি রবিকে আর পাত্তা না দিয়ে বুবুকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, "কিন্তু বুবু, তুমি কি একা পারবে ওখানে সব ম্যানেজ করতে? আবার নিয়ে যাচ্ছো তিনটা বাচ্চাকে?" বিলু হেঁড়ে গলায় বললো, "কাম অন মামা! আমরা বাচ্চা নই!" বুবু রান্নাঘরে ফিরে যেতে যেতে বললেন, "আতা ভাই আছে, সমস্যা হবে না। তোর গাড়িটা আমাদের বাহুবল পর্যন্ত লিফট দিতে পারলেই হবে।" আমি বললাম, "রফিক তোমাদের সঙ্গেই থাকতে পারে ... কোনো কারণে মুভ করতে হলে গাড়িটা কাজে আসবে।" বুবু রান্নাঘর থেকে বললো, "না, বাইরের লোক ওখানে গেলে ... সমস্যা করবে। তুই তো জানিস, জায়গাটা ঠিক ... স্বাভাবিক না! আমাদের বাহুবলে নামিয়ে রফিক না কী যেন বললি, ওটাই তো ড্রাইভারের নাম? আমাদের বাহুবলে নামিয়ে ও ফিরে আসুক। আতা ভাই ওখানে রিসিভ করবে আমাদের।" জয়া নিচু গলায় কথা বলছিলো মোবাইলে, এবার সে রান্নাঘরে গিয়ে বুবুকে বললো, "মাসিমা, বাবা কথা বলবেন আপনার সাথে।" রবি বিলুকে বললো, "আমার মাথার কাছে কিছু দেখতে পাচ্ছিস না?" বিলু রবির মাথার ওপর তাকিয়ে বললো, "উঁহু। শুধু আমার মাথার ওপর, তাও আয়নায় দেখি শুধু।" রবি বললো, "আয় জয়াকে দিয়ে টেস্ট করে দেখি।" বিলু আমার দিকে ফিরে আবার বললো, "মামা, একটা এক্সপেরিমেন্ট করছি, তুমি একটু পরো না তাবিজটা।" আমি বিরক্ত হয়ে বুবুর ঘরে ঢুকলাম। ছেলেটা ম্যাচিওর্ড হবে কবে? বাপ মরে পড়ে আছে সেই কোন এক পাহাড়ের জঙ্গলে, সে ইয়ার দোস্ত নিয়ে আড্ডা মারতে যাচ্ছে! কোনো দায়িত্বজ্ঞান আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। বুবু বিলুকে নিয়ে সামনে অনেক সমস্যায় পড়বে, সন্দেহ নেই। বিলু এবার জয়ার হাত ধরে টানতে টানতে ঘরে ঢুকলো, "কোনো গন্ধ পাচ্ছিস?" জয়া মেয়েটাকে দেখলেই মনে হয় সে তার স্কুলে ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিলো। চশমার আড়ালে তার চোখ দেখে বোঝা যায়, মেয়েটার মাথায় অনেক বুদ্ধি, রবির মত গর্দভ না। সে নাক টেনে বাতাস শুঁকে বললো, "হ্যাঁ, একটা ফুলের গন্ধ!" আমি নিজের অজান্তেই বুক ভরে শ্বাস নিলাম। কোনো ফুলের গন্ধ পেলাম না, আর সেই বিটকেলে গন্ধটাও গায়েব। রবি কুঁইকুঁই করে বললো, "আমি ফুলের গন্ধ পেয়েছিলাম, যখন তাবিজটা পরেছিলাম। ওটা খুললেই সেই বোঁটকা গন্ধটা পাই।" জয়া বললো, "কোন বোঁটকা গন্ধ?" রবি বললো, "ছিলো একটা বাজে গন্ধ, এখন আর নেই।" বিলু আয়নার দিকে ফিরে নিজের গলা থেকে তাবিজটা ধীরে ধীরে খুলে জয়ার গলায় পরিয়ে দিয়ে বললো, "এবার?" জয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মেয়েটার চেহারায় কোনো ভাবান্তর নেই। "উঁহু! ঐ একই ফুলের গন্ধ।" বিলু আয়নার দিকে চোখমুখ কুঁচকে তাকিয়ে কী যেন দেখলো, তারপর রবির দিকে ফিরে অবাক গলায় বললো, "নেই! এখন আর নেই!" রবি ছাগল ছাগল চোখে তাকিয়ে রইলো বিলুর দিকে। বিলু জয়ার কাছ থেকে তাবিজটা নিয়ে আবার নিজের গলায় পরে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "তুমি কি ফুলের গন্ধ পাচ্ছো মামা?" আমি মাথা নাড়লাম। বিলুর এই ছেলেমানুষি খেলায় তাল দিতে ইচ্ছা করছে না, তবু বললাম, "আমি কোনো বিশেষ গন্ধ পাচ্ছি না।" জয়া রবির দিকে তাকিয়ে বললো, "সকালে দাঁত মেজে এসেছিলি?" রবি চটে গিয়ে বললো, "তুই মামাকে জিজ্ঞেস করে দ্যাখ! সবাই ঐ বাজে গন্ধটা পেয়েছে!" জয়া আর আমাকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো। বুবু রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে মোবাইলটা জয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, "আমরা যাওয়ার সময় তোমাদের বাসা হয়ে যাবো। রেখাদির সাথে কথা হলো, উনি তোমার ব্যাগ গুছিয়ে রাখবেন, শুধু এক দৌড় দিয়ে নিয়ে এলেই হবে। আর রবি ... তোমার মাকে বলেছো, যাচ্ছো যে?" রবি হুড়োহুড়ি করে নিজের মোবাইল বার করে কল করতে লাগলো। বিলু তার নিজের ঘরে ঢুকে আলমারির দরজা খুলে হাঁটকাচ্ছে, শব্দ পাচ্ছি। জয়া ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে চোখ বুঁজে মোবাইলে বিড়বিড় করে কী যেন বলছে। বিলু হেঁকে জিজ্ঞেস করলো, "রবি, আমি তাহলে কয়েকটা এক্সট্রা প্যান্ট আর গেঞ্জি নিচ্ছি। আমার প্যান্ট তো তোর ফিট হবে, হবে না?" রবি ঘুরে কী বললো, আমি আর শুনতে পেলাম না, কারণ বুবুর ঘরে দাঁড়িয়ে পরিষ্কার অনুভব করলাম, আমাকে পাশ কাটিয়ে একটা কিছু ঘরে ঢুকে পড়েছে, আর সেইসাথে সেই বিচ্ছিরি, চামড়া আর পশমপোড়া গন্ধটা সেই আগের মতোই মৃদু অথচ চেতনাগ্রাসী মাত্রা নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে। [প্রথম পর্ব] [তৃতীয় পর্ব সামনে কোনো এক সময় আসবে। নাছোড়বান্দা পাঠক (এবং পাঠিকা) হয়ে সঙ্গে থাকুন।]
false
rg
জনৈক হেকিম ও তাঁর আশ্চার্য নির্বাচনী মলম!! একশত আশি প্রকারের গাছ-গাছরা, জড়ি-বটি, ছাল-বাকল, আমলকি-হরতকি, মধু-সিনামোন, জস-রস-কস দিয়ে তৈরি দেশীয় হেকিমের আশ্চার্য মলম। বাঁশবাড়িয়ার বিপিন বিহারী বসু বসে বসে বাতক ব্যাধী বানিয়ে যখন ওই হেকিমের কাছে গেলেন, তখন প্রথম ওই আশ্চর্য মলমের খোঁজ মিললো। সেই থেকে হাটে-মাঠে-ঘাটে সবখানে ওই আশ্চার্য মলমের কদর বাড়তে থাকে। জনশ্রুতি রয়েছে যে, ওই মলম একবার লাগালে সেই ব্যক্তির জীবনে আর কোনো ধরনের রোগ বালাই হবার সুযোগ নেই। সম্প্রতি ওই দেশীয় হেকিম আরেকটি অতি আশ্চার্য মলম আবিস্কার করেছেন। এটার নাম আশ্চার্য নির্বাচনী মলম। এই মলম যে লাগাবে, সে নির্বাচন করার জন্য উৎসাহিত হবে। সবচেয়ে মজার জিনিস হল, এই মলম লাগালে নাকি তার শুধু জনগণের সেবা করার ইচ্ছা জাগে। মন থেকে সকল কুরীপুর তাড়না দূর হয়। মানুষের সম্পদ হরনের লোভ দূর হয়। দুর্নীতি করার লোভ দূর হয়। কালোবাজারি করার ইচ্ছা দূর হয়। হরতাল ডাকার বাসনা দূর হয়। গাড়িতে আগুন লাগানোর আকাঙ্খা দূর হয়। ককটেল ছোড়ার কামনা দূর হয়। জালিয়াতী করার ইচ্ছা রহিত হয়। খুন-গুম করার বদমতলব তিরোহিত হয়। অবৈধ সম্পদ নিজের দখলে রাখার প্রচেষ্টা বিলুপ্ত হয়। জগতের সকল প্রাণীকে সুখি করার প্রবল ইচ্ছা হৃদয়ে জাগ্রত হয়। আর মানুষের সেবা করার জন্য অন্তরের অন্তস্থল শতভাগ পুলকিত হয়। আমাদের ইকতারুলের দাদী স্বপ্নে এই মলমের আরো অনেক আশ্চার্য গুনের কথা শুনেছেন। কিন্তু বয়সের ভারে তিনি স্বপ্নের সকল কথা মনে রাখতে পারেননি। তিনি শুধু একটা কথা মনে রাখতে পেরেছেন যে, দেশের সকল রাজনীতিবিদদের নাকি অতি সত্বর এই নির্বাচনী মলম লাগানো উচিত। যারা এই মলম না লাগিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে, ভবিষ্যতে তাদের সামনে নাকি মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। এই মলমের যারা বিরুদ্ধাচারণ করবে তাদের নাকি কণ্ঠ হারাতে পারে, চোখের জ্যোতি কমতে পারে, কাছের মানুষকে চিনতে অসুবিধা হতে পারে, আর অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এই মলমের যারা পক্ষে থাকবে, তাদের নাকি উত্তরোত্তর মঙ্গল হবার, ইচ্ছা পূরণ হবার আর জীবনের সকল সাধ-ইচ্ছা পূরণ হবার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। কিন্তু ইকতারুলের দাদী এই স্বপ্ন বলার পর থেকেই নাকি দেশীয় সেই হেকিমকে পাকরাও করার জন্য সর্বত্র নানা ধরনের গুজব শোনা যাচ্ছে। প্রথমতঃ কেউ জানে না ওই হেকিম সাহেব কোথায় থাকেন। দ্বিতীয়তঃ ওই হেকিম সাহেব নাকি নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। তৃতীয়তঃ বাঁশবাড়িয়ার বিপিন বিহারী বসু নাকি রামুতে বৌদ্ধ পল্লী ও পাবনার সাঁথিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার পর নিরাপত্তহীনতার কারণে নিরুদ্দেশ যাত্রা করেছেন। অনেকে বলছেন, তিনি হয়তো গয়া বা কাশি চলে গেছেন। একমাত্র বিপিন বিহারী বসু ওই দেশীয় হেকিমকে চেনেন বলে, হয়তো তার এই নিরুদ্দেশ যাত্রা। এখন ওই হেকিমমে খুঁজে না পাওয়া গেলে দেশের নির্বাচন নিয়ে অচলাবস্থা নাকি আর দূর করা সম্ভব নয়। টেলিভিশনের চ্যানেলগুলোতে একদল বুদ্ধিজীবী রাত জেগে ওই হেকিমকে কিভাবে খুঁজে পাওয়া যায়, সে বিষয়ে নানান ফর্মূলা, সূত্র দিচ্ছেন। সরকারের পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ ওই হেকিমকে হেরিকেন ধরিয়ে খুঁজছেন। নির্বাচন কমিশন ওই হেকিমকে সন্ধান করে দিতে পারলে নগদ পাঁচলাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। কেউ বলছেন ওই হেকিমকে সরকারের লোকজন লুকিয়ে রেখেছেন। কেউ বলছেন, ওই হেকিমকে বিরোধীদলীয় লোকজন নির্বাচনে না আসার জন্যই গুম করেছেন। কেউ বলছেন, ওই হেকিমের সঙ্গে এরশাদ সাহেব একবার হেলিকপ্টারে চড়েছিলেন। অবশ্য তখন তিনি নির্বাচনী দাওয়ার জন্য ওই হেকিমের কাছে যাননি। তিনি গেছিলেন সন্তান লাভের আশায়। কেউ বলছেন, ওই হেকিম সারা দেশের মসজিদে মসজিদে ঘুরে বেড়ান। আজ এই মসজিদে তো কাল সেই মসজিদে। কেউ বলছেন ওই হেকিম সারা দেশের মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়ান। আজ এ মন্দির তো কাল সেই মন্দির। কেউ বলছেন, ওই হেকিমকে গির্জায় প‌্যাগোডায়ও দেখা গেছে। কেউ বলছেন, ওই হেকিম মাঝে মাঝে লালনের আকড়ায়ও যেতেন। কেউ বলছেন ওই হেকিম সুন্দরবনে লুকিয়ে থাকেন। কেউ বলছেন ওই হেকিম পাবর্ত চট্টগ্রামের গহীন অরণ্যে লুকিয়ে থাকেন। কেউ বলছেন ওই হেকিম শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জঙ্গলে লুকিয়ে আছেন। এখন ওই হেকিমকে খুঁজে পাওয়া না গেলে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখন কিভাবে হবে, তা আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ, সবাই চায় আগে ওই হেকিমকে খুঁজে বের করা হোক। তারপর সবাই তার কাছ থেকে নির্বাচনী আশ্চার্য মলম কিনবেন। তারপর একটি শান্তির নির্বাচন হবে। আর তারপর বাংলাদেশ থেকে সকল কলহ-বিবাদ, খুন-গুম, দুর্নীতি-লুটপাট, কালোবাজারি-চাঁদাবাজি, সম্পত্তি দখল, ভেজাল মিশ্রণ, সকল হানাহানি-রক্তপাত চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। সো, আগে ওই হেকিমকে খুঁজে বের না করা পর্যন্ত দেশের অশান্তি কিছুতেই দূর হবে না। দেশের সকল গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা ওই হেকিমের নানা ধরনের কল্পিত চেহারার বর্ণনা দিচ্ছেন। যাতে দেশের জনসাধারণের ওই হেকিমকে খুঁজে পেতে সুবিধা হয়। টুয়েন্টি ফোর নামে একটি প্রাইভেট এফএম রেডিও ওই হেকিমের নানা ধরণের বাণী প্রচার করছে সারাক্ষণ। এখন ওই হেকিমকে খুঁজে পেলেই বাংলাদেশের সকল অশান্তি দূর হবে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস আভাস দিয়েছে, আগে বিপিন বিহারী বসুকে খুঁজে বের করা হোক। তাহলে ওই হেকিমকে পেতে কোনো সমস্যা হবে না। ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস বলছে, তারা শতভাগ নিশ্চিত বিপিন বিহারী বসু নামে কেউ ভারত সীমান্ত অতিক্রম করেনি। হেকিমকে না খুঁজে মার্কিনিরা একটি চক্রান্ত করার পায়তারা করছে। হেকিম বা বিপিন বিহারী বসু এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন ইস্যু। আমাদের সেখানে নাক গলানোর কোনো ইচ্ছে নেই। তবে আমরা বাংলাদেশকে যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। ঢাকার চীন দূতাবাস বলছে, যদি ওই হেকিম অবৈধ ভিসা নিয়ে চীনের কোথাও লুকিয়ে থাকেন, তাহলে চীন এ ব্যাপারে তাঁকে খুঁজে দিতে যথাযথ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। ঢাকার সৌদি দূতাবাস বলছে, অনেক হেকিম কবিরাজ তো হজ্বের সময় আরব ভ্রমণ করেন। আপনাদের আরেকটু অপেক্ষা করা প্রয়োজন। হয়তো হজ্ব করে হেকিম সাহেব শীঘ্রই দেশে ফিরবেন। তখন আর সমস্যা থাকবে না। তবে বাংলাদেশ চাইলে আমরা সকল বাংলাদেশী হাজীদের একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিতে পারি। হেকিমকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত দেশে শান্তি আসবে না। নির্বাচনী উৎসবও শুরু হবে না। আর হেকিমের ওই আশ্চার্য নির্বাচনী মলম না লাগাতে পারলে, যে কোনো উপায়ে করা কোনো নির্বাচন দেশের শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবে না বলে কোনো কোনো জাতীয় দৈনিক সম্পাদকীয় মন্তব্য করছে। এখন আমরা ওই হেকিমের যতো দ্রুত সাক্ষাত পাবো ততো দ্রুতই বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দিকে রওনা দিতে পারবে। ভাই, আপনারা ওই হেকিমকে সবাই একটু মন দিয়ে খোঁজেন। নইলে আর শান্তি নাই... সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৮
false
fe
তথ্য নিয়ে তস্করবৃত্তি ও মানুষের সামাজিক অবক্ষয় তথ্য নিয়ে তস্করবৃত্তি ও মানুষের সামাজিক অবক্ষয়ফকির ইলিয়াস -----------------------------------------------------------কোনো ধরনের তথ্য চুরি করা একটি জঘন্য অপরাধ বলে বিবেচিত। কোনো লেখক যখন একটি লেখা লেখেন, তা হল তার মেধা ও মননের পরিশুদ্ধ প্রকাশ। সে আইডিয়া যদি কেউ চুরি করে, তাহলে শুধু লেখকই ক্ষতিগ্রস্ত হন না, ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজও।সম্প্রতি বাংলাদেশে এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে। যা খুবই বেদনাদায়ক। ঘটনার প্রতিবাদে বইমেলায় মানববন্ধন হয়েছে। দেশের প্রতিভাবান কবি মুজিব মেহদী ও রোকেয়া কবীর সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধ ও নারী’ গ্রন্থটি হুবহু নকল করে আরেকটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন জনৈক মেহদী হাসান পলাশ।এ বিষয়ে ফেসবুকে একটি প্রতিবাদ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। ‘বাংলা একাডেমী থেকে মুক্তিযুদ্ধের বই চুরির প্রতিবাদ জানাই’ শীর্ষক এই প্রতিবাদ ভাষ্যটির অংশ বিশেষ এখানে তুলে দেয়া জরুরি মনে করি।‘আওয়ামী লীগ শাসনামলের (১৯৯৬-২০০১) শেষদিকে বাংলা একাডেমীর অধীনে ৭১ খন্ডে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রণয়নের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই ৭১ খন্ডে ছিল ৬৪ জেলার জন্য ৬৪টি এবং অন্যান্য বিশেষ বিষয়ে আরো ৭টি (যেমন মুক্তিযুদ্ধে কিশোর-কিশোরীদের ভূমিকা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনকার সরকার, মুক্তিযুদ্ধ ও নারী, মুক্তিযুদ্ধ ও বহির্বিশ্ব ইত্যাদি) আলাদা আলাদা গ্রন্থের পরিকল্পনা। তখন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক ছিলেন ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। অধিকাংশ পান্ডুলিপি প্রণয়ন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ যখন প্রায় শেষ, তখনই গঠিত হয় চারদলীয় জোট সরকার। যথারীতি প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ আঁধারে পতিত হয়। সৈয়দ আনোয়ার হোসেনও একাডেমীচ্যুত হন। কিছুদিনের মধ্যে জমাকৃত সব পান্ডুলিপি স্থানান্তরিত হয় নবগঠিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে।এই প্রকল্পের আওতায় মুজিব মেহদী ও রোকেয়া কবীর যথাসময়ে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও নারী’ বিষয়ক পান্ডুলিপিটি জমা দিয়েছিলেন। তারা আশা করেছিলেন গ্রন্থটি ছাপাও হবে। যেহেতু তারা এবারও বাংলা একাডেমী থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ গ্রহণ করেছিলেন, সুতরাং ছাপা না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়ার পর ২০০৪ সালে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে তারা একটি চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে লেখকদ্বয় বলেন, তারা গ্রহণকৃত অর্থ ফেরত দিয়ে জমাকৃত পান্ডুলিপি ও অন্যান্য দলিলপত্র ফেরত পেতে চান। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের আহ্বানে এক বছরেরও বেশি সময়ে কোনো সাড়া দেয়নি। ফোনে যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর তারা পাননি। শেষে লেখকদ্বয় পান্ডুলিপিটির শোক ভুলে গিয়ে প্রাপ্ত নতুন তথ্যাদির সংযোজনসহ ‘মুক্তিযুদ্ধ ও নারী’ নামে ২০০৬ সালে একটি বই বের করেন আইইডি-এ ব্যানারে। ২১৬ পৃষ্ঠার বইটি ব্যাপকভাবে বিতরণও করা হয়।’২০০৯-এর ফেব্রুয়ারির বইমেলায় বই কিনতে গিয়ে মুজিব মেহদীর নজরে পড়ে একটি বই ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী’। ভেতরে লেখক হিসেবে জনৈক মেহদী হাসান পলাশের নাম থাকলেও প্রচ্ছদে রয়েছে দুজন অধ্যাপকের নাম। সম্পাদনায় এমাজ উদ্দিন আহমদ ও জসিম উদ্দিন আহমদ।প্রথমজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি। দ্বিতীয়জন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি। ২০০৮ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী’ নারী বইটি প্রকাশ করেছে এশিয়া পাবলিকেশন্স।প্রশ্ন হচ্ছে ২০০৬ সালে প্রকাশিত বইটির টেক্সট, ধারণা, তথ্য হুবহু নকল করে একজন লেখক বইটি কিভাবে বের করলেন? কেন করলেন? দুজন প্রাক্তন ভিসি সম্পাদনার দায়িত্বই বা নিলেন কি করে?এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, ব্লগ, আলোচনা গ্রুপে আলোচনা চলছে। লেখকদ্বয় মুজিব মেহদী ও রোকেয়া কবির আইনি সহায়তা নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তারা সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই হীনম্মন্যতা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। বাংলা একাডেমী হোক আর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকেই হোক এমন তথ্যের তস্করবৃত্তি জাতীয় স্বার্থ, সামাজিক স্বার্থের পরিপন্থী। কারণ যিনি গবেষক, লেখক, সংগ্রাহক, সম্পাদক কেবল তিনিই জানেন কতটা ত্যাগ স্বীকার করে উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়।মেহদী হাসান পলাশ কর্তৃক কপিকৃত বইটিতে বেশ কিছু ঐতিহাসিক সত্যকেও কাটছাঁট করা হয়েছে। ‘২৬ মার্চ’ কে ‘২৭ মার্চ’, ‘বঙ্গবন্ধু’ কে ‘শেখ মুজিব’ করা হয়েছে। এতেই স্পষ্ট যে এমাজউদ্দীন আহমদ, জসিম উদ্দিন আহমদ ও মেহদী হাসান পলাশরা যোগসাজশে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে স্বজ্ঞানে-সুস্থ মস্তিষ্কে বদলে দেয়ার প্রয়াসী হয়েছেন। তাদের তথাকথিত ‘জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশী’ চেতনার নরসংস্করণ ঘটাতে চেয়েছেন। যা গোটা জাতির জন্যই বেদনা ও লজ্জাজনক।কোনো গ্রন্থাগার কিংবা সংগ্রহশালা থেকে কোনো পান্ডুলিপি কপি করা, ফটোকপি করা, চুরি করা মারাত্মক অপরাধ বলেই বিশ্বস্বীকৃত। এই পা-লিপিটি একাডেমী অথবা মন্ত্রণালয় থেকে চুরি করা হয়েছিল কি না- নাকি গ্রন্থটি ২০০৬-এ প্রকাশিত হওয়ার পর (ফেসবুকের ভাষ্য অনুযায়ী ২০০৬ সালে আইইডির ব্যানারে বইটি বেরিয়েছিল) বইটির টেক্সট কপি করে ২০০৮ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও নারী‘ বইটি করা হয়েছে তাও পরখ করে দেখার দাবি রাখে।যেভাবেই হোক, নকল করার অভিযোগ কোনোমতেই মেনে নেয়া যায় না। এ বিষয়ে তথ্যবিষয়ক মন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দৃৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। কারণ এমাজউদ্দীন, জসিম উদ্দিন ও পলাশ এবং এশিয়া পাবলিকেশন্স তথ্য বিকৃত করে সত্যকে ঢেকে দেয়ার অপচেষ্টা করে যে অপরাধ করেছেন সেজন্যও তাদের জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত বলে মনে করি। আমরা জানি, গোটা বিশ্বে এখন বইছে তথ্য প্রবাহের জোয়ার। তার অর্থ এই নয় যে, মানুষ তার সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটাবে। মানুষ কারো প্রণীত মতবাদ, তথ্য চুরি করবে।গেল কিছুদিন আগে একটি টিভি প্রোগ্রাম দেখছিলাম। সেই প্রোগ্রামে একজন খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ছিল লাইভ প্রশ্ন উত্তর পর্ব। এই পর্বে একজন প্রশ্নকর্তা, ওই শিল্পীকে চরম অশ্লীল ভাষায় একটি প্রশ্ন করলেন। যা ছিল তীব্রভাবে আপত্তিকর এবং বিকৃত রুচিসম্পন।আমরা জানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ‘কলার আইডি’ ব্যবহার করা হচ্ছে। মোবাইল থেকে মোবাইলে ফোন করলে নম্বরটি সহজে ধরা যায়। ল্যান্ড ফোনেও এই কলার আইডি প্রথা এবং প্রযুক্তিটি চালু করা জরুরি। ইভটিজিংয়ের মতো সামাজিক বখাটেপনা ঠেকাতে, সামাজিক হুমকি-ধামকি রোধে ফোনে কলার আইডি প্রথাটি চালু করাটা এখন সময়ের দাবি।মানুষ প্রগতির দিকে এগুচ্ছে। তার অর্থ এই নয় যে, মানুষের সামাজিক অবস্থান ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয়, প্রযুক্তি ও মন্ত্রণালয়কে বিষয়গুলো গভীরভাবে ভেবে দেখার বিনীত অনুরোধ করি।যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বর্তমান সরকার রাষ্ট্রের জনগণকে দেখাচ্ছেন, এ জন্য লক্ষ্যবিন্দু স্থির করতে হবে। যে লক্ষ্যবিন্দুতে স্বীকৃতি পাবেন একজন প্রকৃত লেখক, একজন প্রকৃত শিল্পী। উপকৃত হবে একজন আলোকিত প্রজন্ম। নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছা এ সময়ে খুব কঠিন কিছু নয়। নিউইয়র্ক , ৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-------------------------------------------------------------দৈনিক ডেসটিনি । ঢাকা । ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ।
false
fe
চিন্তকের স্বাধীনতা, শহীদ জননীর বাণী ও আমাদের চারপাশের টিকটিকিরা একজন লেখক লিখবেন । তার মত প্রকাশিত হবে সৃজনের পক্ষে। এটাই আসল কথা । বিশ্বের অনেক দেশের সৃজনশীল লেখকরাই লিখেন। ধরি , নিউইয়র্ক টাইমস এর কথা । এই কাগজ ইহুদীবাদকে সমর্থন করে। সেটা অনেকেই জানেন । তারপরও এই কাগজে লিখেছেন সাক্ষাতকার দিয়েছেন, এডওয়ার্ড সাঈদ, নোয়াম চমস্কি , আমিরী বারাকা সহ অনেক নামী লেখক। মত না জানালে তা প্রকাশিত হবে কী করে ? এই বিষয় টা প্রধান তো বটেই। একবার বরেণ্য আব্দুল গাফফার চৌধুরী কে প্রশ্ন করেছিলাম , আপনি কী ইনকিলাবে লিখবেন ? তিনি সহাস্যে বলেছিলেন , আমার লেখার স্বাধীনতা দিলে আমি কেন লিখবো না ? আমার লেখা হুবহু ছাপতে হবে। দুই যারা চিন্তক , তারা সমাজকে নিয়ে ভাবেন কল্যাণের পথে। মৌলিক লেখকরা সবসময় সে কাজ টাই করে যান। একই কথা বলা যায় সমাজ সংস্কারকদের বেলায় ও । তারা সমাজের কল্যান চিন্তা করে এগিয়ে যান আগামীর দিকে। বাংলাদেশের সমাজ নির্মাণে , একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের দাবীতে এই প্রজন্মকে শাণিত করেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। আমার একটা সুযোগ হয়েছিল তার সাথে কাজ করার। আমি ছিলাম একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির যুক্তরাষ্ট্র শাখার যুগ্ম সচিব । সেই সুবাদে শহীদ জননীর খুব সান্নিধ্য পাবার সুযোগ আমার হয়েছিল। সেই সময় ও দেখতাম , একটা মহল তাঁকে ঘিরে ধরে বার বার বলতো - আম্মা এটা করেন, আম্মা ওটা করেন। শহীদ জননী সিদ্ধান্ত নিতেন খুব সাবধানে। কৌশলে। তাঁর নীতি থেকে কেউ তাঁকে টলাতে পারেনি। তিনি ঐসব অতি আগ্রহী নাবালকদের কথায় কোনোদিনই কান দেননি । একজন বুদ্ধিমত্তা নারীর প্রায় একক সিদ্ধান্তেই সেদিন সম্ভব হয়েছিল , ঘাতক গো আজমের প্রতিকী বিচার। কোনো অতিউৎসাহী দ্বারা প্রভাবিত হননি তিনি। যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে তথাকথিত রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা হয়েছিল, এরা কারা ? কোথায় এখন , কী করছেন ? তা বর্তমান প্রজন্মকে জানার বিনীত অনুরোধ করি । তিন আজকাল একটা প্রবনতা খুব জভীরভাবে লক্ষ্য করি । কোন লেখক কোন কাগজে , কোথায় কী লিখেছেন- তা নিয়ে একটি টিকটিকি মহল বেশ লাফালাফি শুরু করেছে। এরা কবীর চৌধুরী , রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ , সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী , ড আনিসুজ্জামান , আকবর আলী খান , প্রমুখ দেশ বরেণ্য লেখকদেরকে নিয়ে না না কটুক্তি শুরু করেছে। লক্ষ্যনীয় বিষয় , যারা এসব করছে -এরা কেউই কিন্তু বিশেষ কোনো পরিচিত ব্যক্তি নয়। নিজেদের লেখালেখির একটা খেলার মাঠ তৈরি করে সেখানে (প্রতিপক্ষ আসে নাই তাই ) ফ্রি গোল দেবার চেষ্টা করছে। আরো লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে , যেসব লেখকদের সামনে দাঁড়িয়ে দুকথা বলার সাহস ও এদের যোগাবে না , এমন কিছু নাবালকরাই এসব বরেণ্য লেখকদেরকে তুচ্ছতাচ্ছল্য করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। এর কারণ ও মূলতঃ ঐ নিজেদের কামেলত্ব জাহির করা । তাদের কে প্রশ্ন করি - বাংলাদেশের জন্য , বাংলাভাষার জন্য, বাংলা সংস্কৃতির জন্য একজন কবীর চৌধুরী , একজন নির্মলেন্দু গুণ,একজন রফিক আজাদ যা করেছেন , তার দুই পয়সা সমান ওরা কী কিছু করতে পেরেছে ? না পারে নি । তা হলে এতো লাফালাফি কেনো ? চার মেধার প্রতি একটা হিংসা অনেকেরই থাকে। এর অর্থ এই নয় , কোনো সৃজনশীল লেখককে অযথা আক্রমণ করতে হবে। জানা দরকার, ঐসব লেখক এসব নাবালকদের চেয়ে অনেক বেশী ধীশক্তি সম্পন্ন। তাই তাদের কাছ থেকে শেখারই আছে। তাদেরকে শেখানোর কিছু নেই। শহীদ জননীর কথা দিয়ে শেষ করি । তিনি বলতেন , চেনা শত্রুর চেয়ে , নিজেদের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা শত্রুরাই বেশী বিষাক্ত। যারা প্রকারান্তরে সৃজনশীল প্রগতিরই ক্ষতি করে। আমাদের চারপাশে এখন টিকটিকিরা আবারও সক্রিয়। টিকটিকির লেজ বাড়ে , আবার খসেও যায় । আর এতেই মনে করে তারা নবজন্ম পেয়েছে । অথচ প্রকৃত মানবজীবন তো এমন নয় । মেধাহীন , তস্করশ্রেণীর এসব অতিপ্রগতিবাদীরা এখন দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবিদেরকেই পরখ করার অপচেষ্টা করছে। তাই এদের বিষয়ে শুধু সতর্কই নয় , এদেরকে চিহ্নিত করণও খুব জরুরী । ছবি- কে ক্লগি সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১০ ভোর ৬:১৮
false
hm
বাজারের টাকায় পদ্মাসেতু? ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা ও আনিসুলের মা উপন্যাসের দামামাবাদক দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক খবরে [১] দেখতে পাই, জাতীয় সংসদের উপনেতা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাংক টাকা দেয় নাই, তাতে কী হয়েছে? আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করব। দরকার হলে এক বেলা বাজার করব না।’ এক বেলা বাজার না করে বাঁচানো টাকায় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণের মনোবল থাকা ভালো। আজই বিবিসিতে [২] পড়ছিলাম, দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৯৭ সালে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে যে সঙ্কটে পড়েছিলো, তা থেকে উত্তরণের জন্য আইএমএফের কাছ থেকে কঠিন সব শর্তে ৫৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিলো। আজ গ্রিস সাধ্যের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যয় করে আর ধার করে ঘি খেয়ে যে সঙ্কটে পড়েছে, আর ইয়োরোপের আরো কয়েকটি বড় অর্থনীতির দেশ যেভাবে গ্রিসের মতো না হলেও কাছাকাছি সঙ্কটে নিমজ্জিত আছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সমস্যাও ছিলো তেমনি। কিন্তু আইএমএফের ঋণ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া তিন বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ায়, সেইসাথে ঋণও শোধ করে দেয়। কোরিয়ার লোকেও আমাদের মতোই ভাত খায় শুনেছি। কিন্তু সম্ভবত অন্য চালের। অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে যে সে সঙ্কটের ভার এবং সঙ্কট মোকাবিলায় দায়িত্বের ভার সকলকেই ধনানুগভাবে নিতে হবে, এ কথা দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিকরা তার জনগণকে বোঝাতে পেরেছিলেন। গোটা দেশ যখন দেউলিয়া হওয়ার পথে, তখন টেলিভিশনে নাগরিকদের কাছে তাদের অতিরিক্ত সম্পদ রাষ্ট্রকে দানের আহ্বান জানানো হয়। মানুষ তার বিয়ের আংটি খুলে তখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি গহনা-সংগ্রহ কেন্দ্রে গিয়ে দিয়ে আসে। এ ছাড়া দেশীয় পণ্য ক্রয়ে মানুষকে উৎসাহিত করে অতিরিক্ত বিদেশী মুদ্রাও সরকারি কোষাগারে দানের আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া চলতে থাকে নজিরবিহীন অর্থনীতিগত পুনর্গঠন। কোরীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্তার মতে, "Burden-sharing," he said. "Every economic player should take their fair burden of the economic restructuring - so asset holders and major shareholders, they cut their stakes in the companies or passed on their assets. Managers and workers agreed to accept salary cuts and layoffs. The consensus among the people is a key ingredient, so we asked our people to take the bullet. And they did." কেন তারা এমনটা করেছিলো, সে ব্যাপারে কোরিয়াতে দীর্ঘদিন কাটানো এক সাংবাদিক বলেন, ব্যাপারটা এমন নয় যে সরকারের ওপর কোরীয়দের আস্থা বেশি। কোরীয়দের তিনি ইয়োরোপীয়দের মতোই আত্মমগ্ন, অ-ঐক্যবদ্ধ আর অনাস্থাকাতর বলে মনে করেন। কিন্তু কোরীয়দের আরেকটা জিনিস ছিলো, দারিদ্র্যের সাম্প্রতিক স্বাদ। তারা সেই দারিদ্র্য ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয়তাবাদের সাহায্যে মোকাবেলা করে এসেছে, তাই সরকার যখন ঠিকভাবে তাদের সেই বোধে সুড়সুড়ি দিতে পেরেছে, তারা সাড়া দিয়েছে। আমাদের সরকার বা রাজনীতিকরা যখন আমাদের একইভাবে সুড়সুড়ি দিতে চান, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে পদ্মাসেতু ইস্যুতে গোটা জাতিকে অন্তত এক বেলা বাজারের খরচের সমান আত্মত্যাগে আহ্বান জানান, তারা বেশ সুবিধাজনকভাবে ভুলে যান, মুক্তিযুদ্ধের নায়কেরা সেই ত্যাগে নিজেরা অন্য সবার মতোই শামিল ছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিজেকে বা পরিবারকে সুরক্ষিত করে স্বাধীনতার ডাক দেননি, তাজউদ্দীন স্ত্রীকে সসন্তান জনতার ভিড়ে মিশে যাবার কথা চিরকুটে লিখে প্রবাসী সরকার গঠনের জন্যে চলে গিয়েছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় সকলেরই আত্মীয়স্বজন শত্রুকবলিত দেশে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঝুঁকির মাঝে ছিলেন। এক বেলা বাজার না করার হুঙ্কার দেয়া সাজেদা চৌধুরীর নাম দেখতে পাই দৈনিক সংবাদে [৩], শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করা সাংসদদের তালিকায়। সে খবরে বলা হয়েছে, সংসদ সচিবালয়ের হিসাব শাখা থেকে জানা যায়, যেসব গাড়ি আনা হয়েছে তার অধিকাংশ গাড়ি ল্যান্ডক্রুজার, সর্বশেষ মডেলের টয়োটা, কিংবা ডিজেলচালিত ভিএক্স মডেলের বিলাসবহুল গাড়ি। এসব প্রত্যেকটি গাড়ির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা হলেও এমপিরা শুল্ক সুবিধায় এসব গাড়ি এনেছেন ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকায়। বিরোধী দলীয় নেতাদের মাঝে ব্যতিক্রমী কণ্ঠ হিসেবে শুনতে পাই জয়নুল আবদীন ফারুকের কথা। তিনি বলেছেন [৪], ‘প্রয়োজনে আমরা এক বেলা খাব না, তবে এর আগে বিশ্বব্যাংক যে চিঠি দিয়েছে, তা প্রকাশ করুন।’ বিশ্বব্যাঙ্কের ১২০ কোটি ডলারের ঋণ বাতিল হওয়ার পর এক বেলা না খাওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে এমন বেয়াকুল ঐকমত্য আমাদের ভাবিয়ে তোলে। কারণ জয়নুল আবদীন ফারুকের নামটিও দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানিকারক সাংসদের তালিকায় [৩] জ্বলজ্বল করছে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাঙ্কের ওপর গোস্বা করে নিজেদের পয়সায় পদ্মাসেতু করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্বব্যাঙ্কের মতো একটি অর্থনীতিবিনাশী পরাশক্তির খপ্পর থেকে বেরিয়ে নিজেদের ভাগ্যের হাল নিজেরা ধরার চেষ্টা বিচক্ষণ তাজউদ্দীনও নিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি দলের ভেতরে আর দেশের বাইরের চাপে টিকতে পারেননি। তাজউদ্দীনকে বঙ্গবন্ধু নিজেই অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনাকে তাজউদ্দীনের পথে চলার চেষ্টা করতে দেখে তাই মিশ্র অনুভূতি হয়। সংসদের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতুর ব্যয়ের জন্যে অর্থসংস্থানের কথা বলেছেন: চলতি বাজেটে ৫৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ আছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং এখান থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারি। এ জন্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এ টাকা দিয়ে কাজ শুরু করতে পারি। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী সেতুর জন্য বাজেটে আলাদা করে কিছু টাকা রেখেছিলেন।’ তিনি বলেন, বাজেট থেকে সেতু নির্মাণ করতে গেলে উন্নয়নকাজ কিছুটা কমাতে হবে। তবে সেতুটা হলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধিতে তা অবদান রাখবে। প্রধানমন্ত্রী সেতু নির্মাণের জন্য ২২ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, ‘৭৫০ মিলিয়ন ডলারের সভরিন বন্ড ছাড়া হবে। সারচার্জ আরোপ করা হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি কর্মসূচি বা পিপিপিতে তিন হাজার কোটি টাকা আছে। এ টাকা দিয়ে আমরা কাজ শুরু করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পে বিলম্ব ঘটানোর জন্য বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে জরিমানা চাওয়া উচিত বলেও মত দিয়েছেন। তাঁর অর্থমন্ত্রী ও বিশ্বব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্তা আবুল মাল আবদুল মুহিত আপাতত অন্য দাতাগোষ্ঠীর কাছে বিশ্বব্যাঙ্কের নামে আদুরে "বিশ্বব্যাঙ্ক পচা আমাকে মালে ওকে মেলে দাও" গোছের নালিশ ঠুকেছেন। তাতে কী হবে আমরা জানি না। এদিকে জনগণের কাছে মোবাইলে কলপিছু ২৫ পয়সা করে চেয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদ। খবরে দেখি [৬], পদ্মা সেতু নিয়ে রোববার সংসদে স্বতন্ত্র সাংসদ ফজলুল আজিমের বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে স্পিকার বলেন, “আমার একটা প্রস্তাব আছে। প্রত্যেক কলে ২৫ পয়সা নিয়ে দেশকে সেতু নির্মাণে সহায়তা করা যায়। এতে অনেক পয়সা আসবে।” এ ব্যাপারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য আহ্বান জানান স্পিকার। অথচ মাননীয় স্পিকারের সামনে সংসদেই অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দেশে সোয়া লাখ ঋণখেলাপি [৭] রয়েছে। তার মাঝে সরকারি চার ব্যাঙ্কে ঋণখেলাপির সংখ্যা নিতান্ত কম নয়, খবর অনুযায়ী, এছাড়া ২০১২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত অংগ্রণী ব্যাংকের সাত হাজার ৯২৩ জন, জনতা ব্যাংকের চার হাজার ৯৪১ জন, রূপালীর তিন হাজার ৯১৪ জন, সোনালীর সাত হাজার ৭৮১ জন স্পিকার কেন এই ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করার প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীকে দিচ্ছেন না? সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপ করে কয়েক বছর পর পর পুনঃতফশিলীকরণ করে যাবে কিছু বোঁচকামারা বাটপার, আর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে করা রোজগার দিয়ে কোনোমতে জীবনধারণ করে চলা সাধারণ মানুষকে কলপিছু ২৫ পয়সা দিতে হবে পদ্মাসেতুর জন্য? এ কেমন বিচার? অথবা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রীকে আমরা প্রশ্ন করতে পারি, আপনি আপনার উপদেষ্টা, রাজনীতির ময়দানে দলপর্যটক মওদুদের ভায়রাভাই ও বাংলাদেশের একমাত্র দেশপ্রেমিক তৌফিক ইলাহীকে কেন শেভ্রন আর নাইকোর কাছ থেকে আমাদের প্রাপ্য ৪৫ হাজার কোটি টাকা [৮] উদ্ধারের দায়িত্ব দিচ্ছেন না? তাহলে তো সভেরেইন বণ্ড আর সারচার্জের বোঝা থেকে দেশের সাধারণ মানুষেরা বাঁচে। বিশ্বব্যাঙ্কের মতো বাটপার প্রতিষ্ঠানের কাছে আত্মা বিক্রি করে দেয়া আমলা-বিশেষজ্ঞদের ঘাড়ে নিয়ে বাংলাদেশ সামনে কতদূর যেতে পারবে জানি না, কিন্তু নিজেদের ব্যয়ে পদ্মাসেতু নির্মাণের উদ্যোগকে সমর্থন জানাই। কিন্তু পাবলিকের ঘাড়ে সারচার্জ চাপানোর আগে দেখতে চাই, নির্লজ্জের মতো যেসব সাংসদ বিনা শুল্কে কয়েক কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল গাড়ি কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে কিনে এনেছেন, তারা সবার আগে দেশের প্রাপ্য শুল্ক শোধ করেছেন। এক বেলা বাজারবিমুখ সাজেদা চৌধুরী আর এক বেলা অনশনী জয়নাল আবদীন ফারুককে সবার আগে এই শুল্ক শোধকারীর তালিকায় দেখতে চাই। আমি বহু বছর ধরে এক বেলা ভাত খাই, অন্য বেলা ভাতের টাকা পদ্মা সেতুর জন্য দিতে রাজি আছি, যদি দেখি সাংসদেরা দেশের প্রাপ্য টাকা পরিশোধ করেছেন। যদি তারা সেটা না করেন, পাবলিককে যেন দয়া করে এক বেলা উপবাস করতে না বলেন। অশ্লীল শোনায়। তথ্যসূত্র: [১] ‘প্রয়োজনে এক বেলা বাজার করব না’, প্রথম আলো | তারিখ: ০৫-০৭-২০১২ [২] What eurozone countries can learn from South Korea, বিবিসি [৩] এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আনা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ, দৈনিক সংবাদ [৪] প্রয়োজনে আমরা একবেলা খাব না, প্রথম আলো | তারিখ: ০৯-০৭-২০১২ [৫] সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা: নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু, প্রথম আলো | তারিখ: ০৯-০৭-২০১২ [৬] পদ্মা সেতুর জন্য কলপ্রতি ২৫ পয়সা দিন: স্পিকার, বিডিনিউজ২৪.কম [৭] দেশে সোয়া লাখ ঋণখেলাপী, বিডিনিউজ২৪.কম [৮] শেভ্রন ও নাইকোর কাছে আমাদের পাওনা ৪৫ হাজার কোটি টাকা, বিডিনিউজ২৪.কম
false
rg
হিমালয় কন্যার দেশে সাত রজনী। পর্ব দুই ।। রেজা ঘটক খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। হোটেলের ছাদে গিয়ে অনেক ছবি তুললাম। কাঠমুন্ডু হল পাহাড়ের নগরী। গোটা কাঠমুন্ডু ভ্যালীর আয়তন প্রায় ২১৮ বর্গ কিলোমিটার। আর কাঠমুন্ডু মেট্রোপলিটান সিটির আয়তন প্রায় ৫০.৬৭ বর্গ কিলোমিটার। আর কাঠমুন্ডু ভ্যালী সমুদ্র লেভেল থেকে প্রায় ১৩৩৬ মিটার থেকে ১৫২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু। কাঠমুন্ডু নগরী আবার সাব-মেট্রোপলিটাস সিটি দিয়ে ঘেরা। কাঠমুন্ডু থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে কীর্তিপুর মিউনিসিপলিটি, দক্ষিণে ললিতপুর মিউনিসিপলিটি, পূর্বে মধ্যপুর থিমি মিউনিসিপলিটি, আর গোটা কাঠমুন্ডু'র উত্তর, উত্তর-পশ্চিম আর পশ্চিম পার্শ্ব ছোট ছোট পাহাড়ি গ্রামে ঘেরা। গোটা কাঠমুন্ডু ভ্যালী কাঠমুন্ডু, পাতান, কীর্তিপুর, থিমি, ভক্তপুর দিয়ে ঘেরা। গোটা নগরী ছোট ছোট হিন্দু মন্দির, ছোট ছোট স্তূপা, দেব-দেবীর মূর্তি, শিব, বিষ্ণু, গণেশ, গৌতম বুদ্ধ, মা-কালী, দূর্গা, স্বরস্বতি, লক্ষী, ইত্যাদি মন্দির আর মূর্তিতে ভরপুর। সূর্যোদয়ের সময় ছাদ থেকে নেপালের শেষ রাজার বাড়ি 'নারায়নহিতি প‌্যালেসে'র ছবি তুললাম। ছাদ থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে চোখে পড়ে নগরঝুন পাহাড়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে দক্ষিণে চন্দ্রগিড়ি আর পূর্ব-দক্ষিণে নীলগিড়ি পাহাড়ও চোখে পড়বে। সূর্য ওঠার পর আকাশ পরিষ্কার না থাকায় আমাকে অগত্যা নিচে আসতে হল। প্রতীক আর মায়া তখনো ঘুমোচ্ছে। আমি বারান্দায় বসে কবুতরের বাগবাকুম খেলা দেখলাম। এরমধ্যে প্রতীক উঠলো। প্রতীকের কাছে থেকে কাঠমুন্ডু'র কালচারাল হেডকোয়ার্টারের সকল খবরাখবর নিলাম। আমাদের পুরান ঢাকার মতো দেখতে হলেও পুরান কাঠমুন্ডু হল কাঠমুন্ডুর কালচারাল হেডকোয়ার্টার। মায়া ঘুম থেকে ওঠার পর আমরা পুরান কাঠমুন্ডু ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা করি। ৭ এপ্রিল কাঠমুন্ডুতে সরকার বিরোধী ৩৩ টি রাজনৈতিক দল সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেয়। নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি খিল রাজ রেগমিকে দেশের পরবর্তী নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার করার প্রতিবাদে ওই ধর্মঘট। ফলে রাস্তায় কোনো গাড়ি চলবে না। পায়ে হেঁটে আমাদের যা দেখার দেখতে হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম দরবার স্কয়ারে যাবার। গাইয়া রেঁস্তোরায় নাস্তা করে আমরা পায়ে হেঁটে পুরাতন কাঠমুন্ডুতে ঢুকলাম। প্রথমে আমরা বসন্তপুরে একটি ছোট বৌদ্ধ স্তূপায় গেলাম। চারদিকে প্রচুর গণেশ মূর্তি চোখে পড়ল। পুরাতন বৌদ্ধস্তূপা থেকে আমরা বসন্তপুর দরবার স্কয়ারে গেলাম। দশম শতাব্দিতে গুনাপো বা গুপো রাজার বংশধর রাজা গুনাকামাদেব এই প‌্যালেস নির্মাণ করেন। কাঠমুন্ডু ভ্যালী স্বাধীন হলে মাল্লা রাজা রত্না মাল্লা (১৪৮৪-১৫২০) এই প‌্যালেসকে রাজার দরবার হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৭৬৯ সালে যখন রাজা পিথ্বী নারায়ন শাহ কাঠমুন্ডু ভ্যালী শাসন করার দায়িত্ব নেন এবং নেপালে শাহ রাজবংশের সূচনা করেন, তখন এই রয়্যাল প‌্যালেসকে তিনি কাঠমুন্ডু দরবার স্কয়ার নামে অভিহিত করেন। আর ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত শাহ রাজবংশের সবাই এই দরবার স্কয়ার থেকেই নেপাল শাসন করেন। ১৮৬৯ সালে রাজবাড়ি বর্তমানের নতুন নারায়নহিতি রয়্যাল প‌্যালেসে স্থানান্তর করা হয়। দরবার স্কয়ারের একেবারে উত্তর পার্শ্বে একটি তালেজু ভাওয়ানি মন্দির। এটি নির্মাণ করেছিলেন শংকরাদেব (১০৬৯-১০৮৩)। মূল চোকের সামনে এটি বিহারা স্টাইলে নির্মিত। আর দরবার স্কয়ারের কার্নেল চোক হল দেশের সবচেয়ে পুরানো ঐতিহাসিক নিদর্শন। রাজা মাল্লা দেব এটি ১৫০১ সালে নির্মাণ করেন। অষ্টাদশ শতকের শুরুর দিকে রাজা জগোজয়া মাল্লা দরবার স্কয়ারে নির্মাণ করেন একটি ভগবতী মন্দির। যাকে সবাই নারায়ন মন্দির নামে চেনে। নারায়ন মন্দিরের মূল সোনার নারায়ন মূর্তিটি চুরি হয়ে গেলে রাজা পিথ্বী নারায়ন শাহ সেখানে একটি নারায়ন মূর্তি পুনঃস্থাপন করেন। এছাড়া দরবার স্কয়ারে আরো তিনটি মন্দির রয়েছে। জগন্নাথ মন্দির, কটিলিংশ্বরা মহাদেব মন্দির, মহেন্দ্রশ্বরা মন্দির আর তালেজু মন্দির। এগুলো ১৫৬৪ সালের দিকে নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেন রাজা মহেন্দ্র মাল্লা। ১৬৭০ সালে রাজা প্রতাপ মাল্লা আরেকটি মন্দির পুনঃনির্মাণ করেন। দরবার স্কয়ারের একেবারে দক্ষিণে এই মন্দির। এটার নাম কাষ্ঠামান্দপ। কাষ্ঠা মানে হল কাঠ। আর মান্দপ মানে হল আবৃত প্রতিরক্ষা। মানে কভার সেল্টার। কাষ্ঠমান্দপ নির্মাণ করেছিলেন রাজা লক্ষী নরসিংহ মাল্লা। এটাকে সবাই মরু সাতাল নামে ডাকে। এটি প্রথমে নির্মাণ করা হয় ১৫৯৬ সালে। দরবার স্কয়ারে এতো সব মন্দির ছাড়াও আছে রাজ-দরবার। রয়্যাল পালেস। গোটা দরবার স্কয়ার এখন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ। আর হ্যা, নারায়ণ মন্দির বা রয়্যাল প‌্যালেসের ভিতরে ঢুকতে হলে আপনাকে অবশ্যই টিকেট কাটতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য ৩০০ নেপালি রূপি, সার্ক কান্ট্রি হওয়ায় বাংলাদেশীদের জন্য ১৫০ নেপালি রূপি আর নেপালের জনগণের জন্য মাত্র ৫০ রূপি টিকেটের মূল্য। দরবার স্কয়ার ঘুরে আমরা বসন্তপুরের আরেকটি পুরাতন বৌদ্ধ স্তূপা দেখতে যাই। সেখানের সকল মূর্তি তামার তৈরি। পথে একটি ছোট কালী মন্দিরেও যাই। গোটা বসন্তপুর আমাদের পুরান ঢাকার মতো। কিন্তু মোড়ে মোড়ে নানান স্ট্যাচু আর গণেশ মূর্তি। কোথাও আবার মহাদেব বা বিষ্ণুর মূর্তি। কোথাও আছে হরেক রকম দেব-দেবীর মূর্তি। পুরাতন কাঠমুন্ডু ছেড়ে আমরা পায়ে হেঁটে গেলাম সার্ক সচিবালয় দেখতে। তারপর সার্ক সচিবালয়ের ঠিক উল্টো পাশে ড্রিম গার্ডেনে। গার্ডেন অব ড্রিম বা ড্রিম গার্ডেন একেবারে ওয়েস্টার্ন রীতিতে আধুনিক শিল্পকলায় তৈরি। এখানেও টিকেট লাগে। বিদেশীদের জন্য ১৫০ রূপি, সার্ক দেশের জন্য ১০০ রূপি আর নেপালীদের জন্য ৫০ রূপি। ড্রিম গার্ডেনে রয়েছে গ্রিক, রোম, প‌্যারিস, মাদ্রিদের নানা ধরনের স্থাপত্যকলার অনুরূপ নানান ধরনের শিল্প নির্দশন। ড্রিম গার্ডেনের ভেতরে ঢুকলে আপনার মনে হবে আপনি নেপালে নয় ইউরোপের কোনো দেশে ঘুরতে এসেছেন। আধুনিক ইউরোপের স্থাপত্য শিল্পের সঙ্গে নেপালী স্থাপত্যের একটি সংযোগ সাধনের চেষ্টাও আছে কোনো কোনো স্থাপত্যশিল্পে। আফ্রোদিতির স্টাইলে শ্রীমতী লক্ষী দেবী তার একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এখানে আছে গ্রিসের একাডেমী অব এথেন্সের আদলে লাইব্রেরি, আছে এথেন্সের প‌্যাথোননের আদলে আর্কপলিস অব এথেন্স, আছে রোমের ক্যাথিড্রালের আদলে রাসান ক্যাথিড্রাল, আছে মাদ্রিদের ভাসমান লেকের মতো জীবন্ত লেক, আছে প‌্যারিসের জলধারার স্ট্যাচুর মতো হরেক রকম স্ট্যাচু। ড্রিম গার্ডেনে যে কেউ ঢু মারলেই ইউরোপের অনেক কিছু একই বাউন্ডারিতে পেয়ে যাবেন। ড্রিম গার্ডেন পেরিয়ে একটু সামনে আগালেই নারায়নহিতি রাজ প‌্যালেস। রাজা জ্ঞানেন্দ্র অপসারণের পর এটি এখন জাদুঘর। এটাকে সবাই ডাকে নারায়নহিতি দরবার। ২০০১ সালে নেপাল রাজ পরিবারে যে দুঃখজনক নিঃসংশ হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল এটা্ সেই করুণ স্মৃতি এখনো ধারণ করে আছে। ২০০৬ সালে রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে অপসারণের পর এটি এখন জাদুঘর। নারায়নহিতি রয়্যল প‌্যালেসে আমরা ইচ্ছে করেই ঢুকিনি। নারায়নহিতি দরবারে একটি ইতালিয়ান রেঁস্তোরায় আমরা লান্স করলাম। তারপর পায়ে হেঁটে আবার মাস্তাং হোটেলে। বিকেলে আমরা হোটেলেই আড্ডা দিলাম। সন্ধ্যায় ডেনিস আসলো। প্রতীক নাক্সালের বাসায় গিয়ে গিটার নিয়ে আসলো। ডেনিস খুব ভালো করে। মায়াও খুব ভালো গান করে। ডেনিস কৈলাস খেরের গান খুব ভালো গায়। রাতের ডিনারের জন্য আমরা একবার বের হয়েছিলাম। ডিনারের পর আবার গানে গানে ভরপুর আড্ডা। ও মেরে দেওয়ানি। ও মেরে দেওয়ানি। ......................চলবে........................
false
fe
ফিরে দেখা ২০১৪ _ আলো ও আঁধারের লুকোচুরি ফিরে দেখা ২০১৪ : আলো ও আঁধারের লুকোচুরিফকির ইলিয়াস__________________________________________________চলে গেল ২০১৪। রেখে গেল অনেক রক্তের দাগ। রেখে গেল অনেক বিরহ। রেখে গেল অনেক সম্ভাবনার শিশিরবিন্দু। হতে পারতো অনেক কিছু। হয়নি। অনেক সম্ভাবনা ছিল। কাজে লাগাতে পারেননি বিশ্বের শাসকগোষ্ঠী। মানবতার পরাজয় হয়েছে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রে। ফিলিস্তিনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে অগণিত মানুষ। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে আইএস। এমন একটি জঙ্গিবাদী সংগঠনের উত্থান শঙ্কিত করেছে বিশ্ব-প্রজন্মকে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দি শিবিরে টর্চারিংয়ের ঘটনা শিউরে তুলেছে সভ্যতার ইতিহাসকে।বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এর নির্বাচন পাল্টে দিয়েছে রাজনীতির হিসেব-নিকেশ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৪ বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে। এছাড়াও নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।৩০ শে জুন ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশ হয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার শরিক জোটগুলো এর পর থেকেই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা পুনরায় চালু করার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং তখনই বিরোধী দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে ঘোষণা দেন। নির্বাচনের দিন সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১৯ জন। নির্বাচনপূর্ব সহিংসতার দিক থেকেও ২০১৪ এর নির্বাচন অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ৪১ দিনে মারা গেছেন ১২৩ জন। ভোটের দিন এত সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি এর আগে দেখা যায়নি। তারপরও ঐ নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, তারা বর্তমান নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করবে। এটাই নিয়ম। কারণ বাংলাদেশের সমস্যা সমাধান করবে এ দেশের মানুষ। ঐ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হু মু এরশাদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত নিযুক্ত হয়েছিলেন। এটাই চাইছিলেন এরশাদ। আগের পাঁচ বছর যাবৎ তার এই খায়েশ ছিল। তা শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়েছিল। এরশাদ জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কি কোনো কাজ করতে পেরেছেন? ‘বিশেষ দূত’ হিসেবে তার কোনো পদচারণা চোখে পড়েনি, ২০১৪ সালে।বিজয়ী বিশেষ দূত হওয়ার পাশাপাশি একই সঙ্গে পরাজয় হয়েছিল দেশে পরিশুদ্ধ গণতন্ত্র চর্চার। ‘রাজাকারের চেয়ে স্বৈরাচার ভালো’ এই যুক্তি অনেকবার দেখিয়েছেন বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবী। খালেদা জিয়া, রাজাকার নিজামী-মুজাহিদের গাড়িতে মন্ত্রিত্বের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সেটা করেননি। বিএনপি বলেছে, এটা একতরফা নির্বাচন। আর আওয়ামী লীগ বলছে, তারা সংবিধান রক্ষা করছে। সংবিধান বাংলাদেশে অনেকভাবেই সংশোধিত হয়েছে। পনেরোতম সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিপুপ্ত করে মহাজোট। এটা ছিল মহাজোটের একটি একচেটিয়া শক্তি পরীক্ষা। কারণ বিএনপির ২৮ জন এমপি নিয়ে ভোটাভুটির কোনো সুযোগ বিএনপির ছিল না। এর আগে যে প্রশ্নটি আসে, তাহলো বিএনপি ২০০৮-এর নির্বাচনে এমন পরাজয় বরণ কেন করেছিল? এর প্রধান কারণ ছিল, দলটিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবক্ষয়। মীর শওকত আলী কিংবা আজকের এলডিপির অলি আহমেদও সেদিন প্রশ্ন তুলেছিলেন বিএনপির জঙ্গিবাদপ্রিয়তা নিয়ে। তারা দল ছেড়েছিলেন সে কারণেই।জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হলেও তারা মন্ত্রিত্বও নিয়েছে। জাতীয় পার্টি এই যে দ্বৈতনীতি গ্রহণ করলো, তাতে আওয়ামী লীগের মদদ লীগের জন্য ক্রমশ কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে এ সম্ভাবনা ছিল ২০১৪ সালে। সমঝোতার সরকার কিংবা জাতীয় সরকার কখনই বড় একটি রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এতে বরং ভাগ-বাটোয়ারার হিসেবই বাড়ে। ফড়িয়া শ্রেণি লাভবান হয়। খুবই দুঃখের কথা, বাংলাদেশ সবদিক থেকেই সেই ক্ষতির মুখোমুখি ছিল। কিছু রাজনীতিবিদ লুটপাট করছে। আর কিছু রাজনীতিবিদ জ্বালাও-পোড়াও করছে। নির্বাচনের পর যে লুটপাট হয়েছে, হিন্দু স¤প্রদায়ের ওপর যে আক্রমণ হয়েছে তা মানবতার সকল নীতিকে পদদলিত করেছে। এটা রুখতে সরকারের ব্যর্থতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। এই ধ্বংসযজ্ঞ আর কতো চলবে? এক সময়, লাগাতার অবরোধ ও লাগাতার হরতাল কর্মসূচি থেকে সরে এসেছিল বিএনপি। নতুন ধারায় সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার কথা ভাবলেও আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপি ও জোটের শরিকদের মধ্যে মতভিন্নতা ছিল পুরো বছর জুড়ে।সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল অনেক। সেই সঙ্গে ছিল শঙ্কাও। শঙ্কার প্রধান কারণ ছিল আগের মহাজোট সরকারের বেশ কিছু ব্যর্থতা। আমরা দেখেছি, প্রায় চল্লিশজন সাবেক মন্ত্রী বর্তমান কেবিনেট থেকে বাদ পড়েছেন। কেন বাদ পড়েছেন? দেশে এখন অবাধ, মুক্ত মিডিয়ার বিচরণ রয়েছ। এর ফলেই অনেক মন্ত্রী, এমপির দুর্নীতির চিত্র ছিল মানুষের মুখে মুখে। এটা প্রধানমন্ত্রীরও অজানা নয়। এসব দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে খতিয়ে দেখা দরকার ছিল। বিচারের আওতায় আনার দরকার ছিল। তা করতে না পারায় রাজনৈতিক শঙ্কা শুধুই বেড়েছে। সরকারের প্রতিপক্ষ সুযোগ পেয়েছে। মনে রাখা দরকার, যে পরিস্থিতিতে এই সরকার গঠিত হয়েছিল তা ছিল অনেক রক্তস্রোতের সাক্ষী। অনেক মানুষ বলির শিকার হয়েছেন এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে গিয়ে।এবছরের আরেকটি আলোচিত ঘটনা ছিল, দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দিতে দেশটির ঢাকা দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে একটি গোপন বার্তা গিয়েছিল। আলোচিত ওয়েবসাইট উইকিলিকসের ফাঁস করা ওই বার্তাটি ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, ‘রাজনৈতিকভাবে সংঘটিত ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতির জন্য তারেক দায়ী বলে দূতাবাস মনে করে। তার দুর্নীতির কারণে মার্কিন ঘোষণাপত্রের ৪ নম্বর ধারায় বর্ণিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্য বিনষ্ট হওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণœ হয়েছে।’২০১৪ সালে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, বিএনপির সঙ্গে একটা বড় দূরত্ব তৈরি হয়েছে ভারতের। এর জন্য বিএনপির নাশকতামূলক মানসিকতাই দায়ী বলে মন্তব্য করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই বছরে বিলাতে থেকে তারেক রহমান নানা আজগুবি তথ্য শুনিয়েছেন দেশবাসীকে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রথম দাবি করে বলেন, তার বাবা জিয়াউর রহমান দেশের ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’। এর একদিন পর খালেদা জিয়াও একই দাবি করেন। বিএনপির অনেক নেতা এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দেয়ারও চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা যখন এই দাবি করছেন তখনো বিএনপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেখা যায় জিয়াউর রহমান সপ্তম রাষ্ট্রপতি! বছরের শেষ দিকে তিনি আরও অনেক মিথ্যা কথা বলেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। যা ছিল একটি উন্মাদনা মাত্র। বছরের আলোচিত ঘটনা ছিল ভারতের নির্বাচন। ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। ভারতের রাজনীতি অনেকটা আমেরিকার মতো। যে দলই ক্ষমতায় যাক না কেন- প্রায় একই নীতিই অনুসরণ করে।২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর বাংলাদেশ সফরের সময় দুই রাষ্ট্রের সরকারের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তার বিপরীতে নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে বিজেপি। হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স সরকারের ব্যর্থতায়ও হতাশ। ভারতের পার্লামেন্টে চুক্তিটি দৃঢ়ভাবে অনুমোদন পাবে, এমন আশা করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু, মূলত বিজেপি ও আঞ্চলিক অসম গণপরিষদের বিরোধিতার কারণেই সেটা সম্ভব হয়নি।রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছিল, একটি আগ্রাসন ঠেকাতে আরো বহুমুখী আগ্রাসনের জন্ম যেন না দেয় ভারত। তা করা হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শান্তি বিনষ্ট হতে পারে। ভারত এই সময়ে বিশ্বরাজনীতির একটি অন্যতম ফ্যাক্টর। ভারতকে বাদ দিয়ে কোনো উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশ নিজেদের আগামী ভাবতে পারছে না। সেই ভারত যদি কট্টরবাদীদের চারণভূমি হয়- তাহলে প্রকারান্তরে মৌলবাদই আশকারা পাবে। নরেন্দ্র মোদি ও তার দলকে তা ভাবতে হবে। কারণ ভারতের ইতিহাসে গোঁড়ামি তো কম লিখিত হয়নি। গাজায় গণহত্যা ছিল এ বছরের বিষাদময় ঘটনা। পিছন ফিরে পড়া যাক সেই ঘটনাগুলো। বিশ্বে এখন একক পরাক্রমশালী শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা গাজায় গণহত্যা বিষয়ে খুবই নির্বিকার। যেন কিছুই হচ্ছে না। অথচ শিশু, নারী, বৃদ্ধ মানুষের রক্তে রঞ্জিত ফিলিস্তিন। কোথায় জাতিসংঘ? তারা কথা বলছেন- খুব ধীরে। কাজেও খুব ধীরগতি। নিহতের সংখ্যা এই লেখার সময় পর্যন্ত ছয় শতেরও বেশি।গত ১৯ জুলাই শনিবার রাত থেকে ইসরায়েল, ফিলিস্তিনে স্থল অভিযান আরো জোরদার করেছে। একই সঙ্গে নিহতের সংখ্যাও বাড়ছে সমানতালে। রোববার পূর্বাঞ্চলের সুজাইয়া জেলায় ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, বহু ফিলিস্তিনি বিধ্বস্ত বাড়িঘরের নিচে চাপা পড়েছেন। তাদের উদ্ধার তৎপরতায় বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। ওই অঞ্চলে অ্যাম্বুলেন্সও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না তারা। প্রচণ্ড হামলার মুখে দিগি¦দিক পালাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাসের হামলায় তাদেরও সাত সেনার মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, দুপক্ষ দুই ঘণ্টার মানবিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কাতার সফরে এসেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। সেখানে তার ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। ইসরায়েলের সহিংসতা বন্ধে একটি পথ খুঁজে পেতেই বৈঠকে বসছেন তিনি। এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, দুঃখের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে যে, আমাদের যুদ্ধবিরতির আহ্বানে কেউ সাড়া দেয়নি। আরো বেশি বেসামরিক মানুষের হতাহতের আশঙ্কায় আমারা উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘ বলছে, স্থল অভিযান শুরুর পর দ্বিগুণ সংখ্যক ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। স্থল অভিযানে ১৩তম দিন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছিল। ইসরায়েলি ট্যাংকের গোলা আর বিমান হামলায় কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। হামলা এড়াতে গাজার পূর্বাঞ্চল থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। পূর্বাঞ্চলের সুজাইয়া, আল-শাফ ও আল-তুফা শহর প্রায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, নিহতের সংখ্যা ৪১০; আহত হয়েছেন ৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। এই গণহত্যার প্রতিবাদ হয়েছে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদের ক্ষমতা ছিল কম। যাদের ক্ষমতা বেশি তারা জোরালো কোনো ভূমিকা নেয়নি।২০১৪ সালে আমরা হারিয়েছি অনেক বরেণ্য মানুষকে। সাহিত্যিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, বাংলার মহানায়িকা সুচিত্রা সেন, গায়ক পিট সিগার, হলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা-পরিচালক রিচার্ড অ্যাটেনবরো। ভিডিও গেমের পথিকৃৎ রালফ হেনরি বায়ের, সাহিত্যিক খুশবন্ত সিং,সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্য্য, প্রখ্যাত কত্থক শিল্পী সিতারা দেবী, ঐতিহাসিক তপন রায় চৌধুরী এমন অনেক মানুষকে। বাংলাদেশে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, কাইয়ুম চৌধুরী, অভিনেতা খলিল, ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বিচারপতি গোলাম রসুল, সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরী, এমন অনেক মহান মানুষকে। যে ঋণ কোনো দিন শোধ হবার নয়।ঘাতক-দালাল-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ চলেছে নিজ গতিতে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল কম। আইটি ফিল্ডে এগিয়েছে বাংলাদেশ। জনজীবনের নিরাপত্তা ভেঙে পড়েছে বার বার। বছরের শেষে এসে জিহাদের মত একটি শিশুকে উদ্ধার করতে না পারা ছিল সরকারের চরম ব্যর্থতা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়েছে, বলা যাবে হয়তো। কিন্তু বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগোতে পারেনি। সব গ্লানি মুছে দিতে আসছে ২০১৫। বছরটি রাজনৈতিকভাবে গোটা বিশ্বের জন্য উত্তপ্ত হতে পারে- এমন আশঙ্কা করছেন সমাজ বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশেও রাজনীতি নতুন মোড় নিতে পারে। তারপরও মানুষজন শান্তি চান। তারা চান, আইনের শাসন। নিরাপত্তা। সামজ ও রাষ্ট্রের উন্নতি। তারা চান প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। সেই আলোয় আলোকিত হোক ইংরেজি নতুন বছর। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ॥ ঢাকা ॥ বৃহস্পতিবার, ১ জানুয়ারি ২০১৫ প্রকাশিত
false
fe
গণমানুষের সংবিধান, মুক্তিসংগ্রামের সূর্যছটা গণমানুষের সংবিধান, মুক্তিসংগ্রামের সূর্যছটা ফকির ইলিয়াস ====================================== কথা হচ্ছিল সরকারি দলের একজন প্রভাবশালী সাংসদের সাথে। তিনি বললেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাদের সরকার বদ্ধপরিকর। বললেন, এ জন্য নিজ দলীয় কোন সন্ত্রাসীকেও তারা ছাড় দিচ্ছেন না। তার কথা শোনে আমি হেসে উঠি। বলি, সন্ত্রাসীদের আবার দল হয় না কি? তিনি জবাব দেন। বলেন, না হয় না। তবে আরো কিছু রাজনৈতিক দলতো প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী পোষে। আমি বলি, জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলেই তো আপনাদেরকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে নিরংকুশ ভোট দিয়েছে। হ্যাঁ, দুই তৃতীয়াংশ ব্রুট মেজরিটি নিয়ে মতায় এসেছে মহাজোট সরকার। তারা কি জন প্রত্যাশা পূরণে ঠিক মতো কাজ করছে কিংবা করতে পারছে ? এই প্রশ্নটি নানা ভাবে আসছে। সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে বিভিন্ন মহল তৎপর। দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে সর্বহারা পার্টি নামের একটি চরমপন্থী বাহিনীও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার তসলিমা খানম আঁখি নামের একজন চরমপন্থী ক্যাডার গ্রেফতার হয়েছে। এই ‘লেডী মাস্তান’ স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেত্রী বলেও খবর বেরিয়েছে। তার কাছ থেকে একটি ‘একে ফরটি সেভেন’ রাইফেলসও উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে আওয়ামী নাম থেকে বহিষ্কারের আদেশও দিয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা। সরকারের ভেতরে চরম সন্ত্রাসীরা ঢুকে গিয়ে নানা মতলব হাসিল করার ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসকরা যখন বাংলাদেশের গণমানুষের উপর ঝেঁকে বসে তখনই সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রীয় আশ্রয় পাবার মদদ পায়। রাজাকার, রাষ্ট্রদ্রোহী পেশী শক্তিকে আসকারা দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার অপচেষ্টা করেন ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট প্রদানকারী সামরিক জান্তারা। এর পরের ইতিহাস আরো মর্মান্তিক। এক সময়ের যুব মন্ত্রী আবুল কাশেমের বাসায় নিরাপদ আশ্রয় থেকে গ্রেফতার করা হয় গাল কাটা কামাল, ইমদু প্রভৃতি শীর্ষ সন্ত্রাসীকে। আর সেভাবেই সন্ত্রাস লালনে আরেক ধাপ এগিয়ে এদেশে দীর্ঘতম সামরিক শাসন কায়েম করেন জেনারেল হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এরশাদের ট্রাক উঠে গিয়েছিলেন গণমানুষের মিছিলের উপর। নূর হোসেন, ডা· মিলন, শাহজাহান সিরাজ, রউফুন বসুনিয়া প্রমুখ অনেক মেধাবী নেতা কর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিশেষ বাহিনী লেলিয়ে দেয়া হয় নিরীহ জনগণের উপর। বাংলাদেশের মহান সংবিধানকে কারণে-অকারণে সংশোধনের নামে , দলীয় স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে একটি সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল। সেই সংবিধানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে একটি বাঙালির মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল। সেই সংবিধানটি হত্যা করেই সামরিক সুবিধাভোগীরা নতুন দল করেন। নতুন জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা সাজেন। একটি কথা মনে রাখা দরকার, মহান মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, মণিপুরী, গারো, মারমা, হাজং , সাওতাল প্রভৃতি জাতি-উপজাতি, ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ ,কি চেতনা নিয়ে অস্ত্র হাতে নিয়েছিল? তা ছিল একটি স্বাধীন জন্মভূমি প্রতিষ্ঠা। একটি পরিশুদ্ধ সামাজিক রাষ্ট্র। সেই চেতনাটিকেই ভূলুণ্ঠিত করে রাজাকারদের মদদপুষ্ট সামরিক সরকার। দ্বি-জাতি তত্ত্বের ধবজাধারীরা ‘হিন্দু-মুসলমান’ তত্ত্ব বাধিয়ে যে রায়ট ঘটিয়েছিল, সেই চেতনার ছুরিতে শান দিতে উদ্যত হয় এই প্রতারক দুষ্ট চক্র। দুই· এটি অত্যন্ত আশার কথা মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাহাত্তর এর সংবিধান পুনর্বহাল করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন। সেই সংবিধানে ফিরে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছেন। সবমিলিয়ে জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাছে ফিরে যাচ্ছে এটা অত্যন্তই আশার কথা। এই ঘোষণাটি ইতোমধ্যে অনেকের গাত্রদাহের কারণ হয়েছে। তারা বলছে, আওয়ামীলীগই বহুদলীয়, গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। যারা সেই সময় বাকশালে যোগ দেবার জন্য তৎপর ছিলেন, যোগ দিয়েছিলেন কিংবা বাকশালকে অভিনন্দন জানিয়ে লাইম লাইটে আসার চেষ্টা করেছিলেন, আজ তাদের লম্পঝম্প দেখলে, করুণা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। বাকশালের ‘গভর্ণর’ হয়ে যারা ক্ষমতা ভোগ করেছিলেন আজ তারাই হয়ে গেছেন চরম বাকশাল বিরোধী। একটি কথা মনে রাখা দরকার, জাতি ও প্রজন্ম কখনই সত্য বিস্মৃত হয় না। আর সংবিধান সেই জাতির আশা আকাংখাই বহন করে চলে। বাংলাদেশের কতিপয় সুবিধাবাদী রাজনীতিকরা, যারা নৈতিকভাবে একাত্তরে পরাজিত হয়ে ছিলেন তারা শোধ নেবার জন্যই বাহাত্তরের সংবিধানটিকে কাটা ছেঁড়া করেছেন নির্মমভাবে। সেই পক্ষটিই আজ শিক্ষানীতি নিয়েও নানা প্রপাগান্ডা ছড়াবার অপচেষ্টা করছে। একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দুটি শিক্ষানীতি কখনই থাকতে পারে না। এছাড়া সেকেলে শিক্ষানীতি পরিবর্তন করে এর আধুনিকরণ সময়ের দাবীও। বাংলাদেশের একটি মহল ধর্মের দোহাই দিয়ে সব সময়ই তাদের মতলব হাসিল করার চেষ্টা করে আসছে। সময় এসেছে এই চক্রটির সকল অশুভ তৎপরতা রুখে দেবার। শিক্ষানীতি সম্পর্কে প্রতিবেশী দেশসমূহ এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আদর্শ হতে পারে। মনে রাখতে হবে, সরকারকে যে কোন সৃজনশীল কাজে হাত দিলেও একটি পক্ষ এর বিরোধিতা করবেই। কিন্তু সকল বিরোধিতাকে পাত্তা দিলে তো জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। বর্তমান সরকারের প্রধান শক্তি হচ্ছে তাদের হাতে দুই তৃতীয়াংশ ব্রুট মেজরিটি রয়েছে। কিন্তু তাই বলে এর অপচয় কিংবা অপব্যবহার করা সমীচিন হবে না। দেশের মানুষ আসলেই পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তনের স্বরূপ কি তা সরকারকেই অনুধাবন করতে হবে। প্রধান বিরোধী দল ক্রমশঃ হরতাল অবরোধ প্রভৃতির হুমকি দেবে। এবং তা করাও শুরু করবে। তাই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সরকারকে সমকালের সাথে পাল্লা দিয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তি সংগ্রামের যে সূর্যছটা মানুষ দেখেছিল, সেই স্বপ্নের রেশ ধরেই প্রজন্ম খুঁজছে সুখী বাংলাদেশের সুখ। আর এই সুখের প্রধান চাওয়াটি হচ্ছে, জানমালের নিরাপত্তা। যে সংবিধান সেটা নিশ্চিত করে সেটাই হচ্ছে, গণমানুষের সংবিধান। বাংলাদেশের বর্তমান পার্লামেন্টে ১৯৭২ এর সংবিধান প্রণেতা যে সব সম্মানিত এম পিরা রয়েছেন, তাদেরকে সেই সংবিধানের প্রকৃত চেতনাটি তুলে ধরার বিনীত অনুরোধ জানাই। আগামী যে কোন একটি সংসদ অধিবেশনে এই বিষয়ে দীর্ঘ আলোকপাত করা হোক। বাহাত্তর এর সংবিধানটির নানা দিক তুলে ধরা হোক। এই প্রজন্ম জানুক, দেখুক-কী স্বপ্ন বুকে নিয়ে তাদের পূর্বসূরিরা মহান মুক্তিসংগ্রাম করেছিলেন। ---------------------------------------------------------------------- দৈনিক উত্তরপূর্ব । সিলেট । ২২ নভেম্বর ২০০৯ রোববার প্রকাশিত ছবি- কেলি ডিগিনস সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪৬
false
rg
ঐতিহাসিক নৈশভোজ ও একটি মজার স্বপ্ন___ গোটা জাতি এখন একটা ঐতিহাসিক নৈশভোজ দেখার অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুই নেত্রী যেখানে বিগত তেঁইশ বছর কথা বলেন না, দেখা করেন না, সেখানে তারা পরসুদিন ৩৭ মিনিট মোবাইলে কথা বলেছেন। এটাতো বাংলাদেশের জাতীয় রেকর্ড। আন্তর্জাতিক রেকর্ড কিনা একটু গবেষণা করে দেখতে হবে। পৃথিবীর কোন দেশে রেড-টেলিফোনও বিকল থাকে? এক কথায় এই প্রশ্নের জবাব হল সপ্ত আশ্চার্যের দেশ বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সপ্ত আশ্চার্যগুলো কি কি? ১. বাংলাদেশের সবগুলো রাজনৈতিক দল জনগণের কল্যানের জন্য রাজনীতি করেন।২. বাংলাদেশে যে দল ক্ষমতায় যায় তারা দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দেয়।৩. বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোসজনক।৪. বাংলাদেশে আইন সকলের জন্য সমান। ৫. বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পর বন্ধুসুলভ, পরমত সহিষ্ণুতা এবং ভিন্নমতের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল।৬. বাংলাদেশের জনগণই ক্ষমতার একমাত্র উৎস। ৭. বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ একটি দেশ।তো এরকম একটি দেশে নির্বাচনকালীন সরকার কিভাবে গঠিত হবে, সে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানানীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীকে টেলিফোনে নৈশভোজের নিমন্ত্রণ দিলেন। খাবার টেবিলে খেতে খেতে কিভাবে সরকার গঠন করা হবে তা নিয়ে দু'জনে পরামর্শ করবেন। সেই সুযোগে উভয় দলের অনেক বড় বড় দেশনেতাও সেখানে যাবেন। পরম্পর কোলাকুলি করবেন। একসঙ্গে খাবেন। দেশের তাবৎ প্রাইভেট ও সরকারি টেলিভিশন সেই দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করবে। আর আর আমরা আমজনতা সেই ঐতিহাসিক ভোজসভা দেখে খুশিতে ব্লা ব্লা ব্লা...। ক্লাপ ক্লাপ ক্লাপ...বাজাও তালিয়া....আহা এমন সুন্দর দেশ পৃথিবীর আর কোথায় আছেরে ভাই?গত মাসে অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী'র দল হেরে গেছে। সেখানে বিরোধীদল ক্ষমতায় গেছে। তো যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সংসদে এখন তার বসার জায়গা হয়েছে পেছনের সারিতে। কারণ, তিনি জনগণের সমর্থণ লাভে ব্যর্থ হয়েছেন, সো আপনি পেছনে গিয়ে বসেন। আর মাত্র কয়েকদিন আগেও যাকে কেউ পাত্তাই দিতেন না। সংসদে বসতেন পেছনের সারিতে। তিনিই এখন প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার। কপালে থাকলে কেউ তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারে না। সামনে বাংলাদেশের দশম সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে দুই নেত্রী কথাবার্তা বলে একটা ফয়সালা করবেন। তারপর সবাই পান তামাক নিয়ে একযোগে ঝাপিয়ে পড়বে নির্বাচনী উৎসবে। আহা কোন সে মার্কা? সবাই বল, তালে তালে...আমার ভাই, তোমার ভাই...ভোটের দিন অনেক গরিব মহিলা নতুন শাড়ি পড়বেন। অনেক গরিব ভদ্রলোক নতুন শার্ট পড়বেন। অনেক মানুষ দু'চার প্লেট ভাল খাবার খাবেন। তারপর পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে হাসতে হাসতে বাড়িতে যাবেন। ভোট গণণা শেষে যাদের পছন্দের ব্যক্তি বিজয়ী হবে, তারা বিজয় মিছিল বের করবে। কিন্তু হারু পার্টির প্রার্থীও সেই মিছিলে থাকবে। পাশাপাশি তারা গলায় ফুলের মালা নিয়ে গোটা এলাকা ঘুরবেন। সবাই তাদের মিষ্টিমুখ করাবে। রঙ দেবে। আহা কি আনন্দ বাংলার আকাশে বাতাসে...তারপর নির্বাচনে বিজয়ী দল সরকার গঠন করবেন। অন্যরা সবাই তাদের সঙ্গে একসঙ্গে শপথ নেবেন। দেশ গড়ার শপথ। দেশ থেকে দুর্নীতি বিতাড়ন করার শপথ। দেশের সকল উন্নয়নে সবাই মনযোগ দেবেন। আর আমরা আমজনতা আবার ওই পাঁচ বছরের নির্বাচনী উৎসবের জন্য অপেক্ষা করতে থাকব। সাংসদগণ এলাকায় গেলে সবার উঠঅনে উঠানে হেঁটে সবার খোঁজখবর নেবেন। কারো কোনো অসুবিধা থাকলে এমপি সাহেবের কাছে বলবেন। এমপি সাহেব সাধ্যমত তাদের সহযোগিতা করবেন। তারপর সবাই সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে একসঙ্গে বসবাস করতে থাকবেন। আর শিশুরা আমাদের দুই নেত্রী'র নাম মুখস্থ করবেন। ওনাদের জীবনী লিখতে আসবে পরীক্ষায়। তা মুখস্থ করার জন্য ছোট ছোট শিশুরা পড়ায় মনযোগী হবেন। আহা কি আনন্দ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে...কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখলাম, ওটা ছিল স্বপ্ন। বাস্তবে এই বাংলাদেশ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। সেই বাংলাদেশকে আমরা কোথায় পাব, দুইনেত্রী কি আমাদের স্পষ্ট করে বলতে পারেন? যদি না পারেন, তাহলে আপনারা রাজনীতি ছেড়ে দেন। দেশকে বাঁচান।
false
hm
অপর বাঁশতব ডাগরতাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হায়াত মণ্ডল খুব আরাম করে ঘুমাচ্ছিলেন। শীতের রাত। সারা ভাতক্ষীরা জুড়ে কুয়াশা। ডাগরতাড়িতে কুয়াশা যেন আরো বেশি। মাঝে মাঝে ভূতের মতো এক একটা সাইকেল নিঃশব্দে টহল দেয় কাঁচা-পাকা সড়কে। যদিও সদর থানার ডিবির সাব ইন্সপেক্টর ও সাবেক ছাত্রশিবির নেতা হেমায়েত ডিগবাজের তরফ থেকে কোনো ধরনের বার্তা আসেনি, তবুও ডাগরতাড়িতে ছয় ঘণ্টা করে চার শিফটে টহল দিচ্ছে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা। বদমাশ নাস্তিক জেলা সুপার মির্জা বেরহম তোপদার কখন ফোর্স পাঠায়, কিছুই বলা যায় না। কেবল হেমায়েত ডিগবাজের বার্তার ওপর ভরসা রেখে ঘুম দিলে সে ঘুম র‍্যাবের লোক এসে ভাঙাতে পারে। স্বপ্নে আবুল হায়াত মণ্ডল ইউনিয়নের প্রান্তবর্তী গ্রাম বাবুইশিরার মণ্ডলবাড়ির ছেলে হরিপদ মণ্ডলকে বেঁধে রেখে তার সামনেই তার নতুন বৌ অলকাকে ধর্ষণ করছিলেন। হরিপদ মালাউনের এতো বড় সাহস, সে মুসলমানের দেশে নতুন বৌ এনে ঘরে তোলে! শহীদ কাদেরের ফাঁসির পর স্থানীয় আম্লীগের নেতাদের জবাই করার কাজে ব্যস্ত থাকায় হরিপদকে সময়মতো শায়েস্তা করা হয়নি। রাতে সরপুঁটি মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাওয়ার সময় আবুল হায়াত মণ্ডল আনমনা হয়ে হরিপদের দুঃসাহসের কথাই ভাবছিলেন। মণ্ডল সাহেবের বেগম আলতা বিবি একটু দুশ্চিন্তিত হয়ে পাখার ডাঁট দিয়ে গুঁতো দেওয়ার পর তিনি হুড়োহুড়ি করে খাওয়া শেষ করে মোবাইল ফোনে বাবুইশিরা গ্রামের জামায়াত নেতা আলেফ সর্দারকে নানা সাংকেতিক কুশল জিজ্ঞাসা করে শুয়ে পড়েছেন। সেই চিন্তার ধাক্কাতেই হয়তোস্বপ্নে তিনি বেশি দেরি না করে সোজা কয়েকজন মুজাহিদকে নিয়ে রওনা হয়ে পড়েছেন বাবুইশিরার দিকে। স্বপ্নে সড়ক কাটা থাকে না, শীতও লাগে না, হাতে চাপাতি হাঁসুয়া বহন করার তকলিফ পেতে হয় না, তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি হরিপদকে বেঁধেছেঁদে অলকার পেটিকোট ছিন্ন করার কাজে লেগে পড়েন। হরিপদ উঠানে হাত পা বাঁধা অবস্থায় গম্ভীর হয়ে শুধু বলে, ঘড়ঘড়ঘড়। আবুল হায়াত মণ্ডল অলকার ঊরুতে কামড়াচ্ছিলেন, তিনি ভারি বিরক্ত হয়ে হরিপদের দিকে ফিরে বলেন, মানে কী? হরিপদ খোলাসা না করে আবারও বলে, ঘড়ঘড়ঘড়। এবার আবুল হায়াত মণ্ডল চটে উঠে অলকাকে মাদুরের ওপর চেপে ধরার দায়িত্ব আলেফ সর্দারের হাতে সাময়িকভাবে ন্যস্ত করে একটা ছপটি হাতে হরিপদের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে কষে কয়েক ঘা চাবকে বলেন, মানে কী রে ব্যাটা মালু? হরিপদ ভাবুক চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে, ঘড়ঘড়ঘড়। আবুল হায়াত মণ্ডল খুব রেগে গিয়ে চিৎকার করে একটা কিছু বলতে গিয়ে নিজের চিৎকারের শব্দে ঘুম ভেঙে বিছানার ওপর উঠে বসলেন। আর অমনি তার মেজাজটা বিগড়ে গেলো। পাশে শুয়ে ভোঁসভোঁস করে ঘুমাচ্ছে আলতা বিবি। ধুত্তেরি, কেন যে তিনি স্বপ্নের মাঝে খামোকা উঠে বিরক্তিকর হরিপদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলেন। আবুল হায়াত মণ্ডল কাঁথার নিচ থেকে উঠে গিয়ে গামছা দিয়ে কপাল ঘাড়ের ঘাম মুছলেন। সরপুঁটি মাছ কয়েক টুকরো বেশি খাওয়া হয়ে গেছে। বাইরে থেকে শব্দ ভেসে এলো, ঘড়ঘড়ঘড়। মণ্ডল ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ কান পেতে শুনলেন। দূরে ঝিঁঝির ডাক, বহুদূরে শীতার্ত শেয়ালের হুক্কারব, এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। এমনকি তার ছয় ভাইয়ের একজনও নাক ডাকছে না। মণ্ডল খুব সতর্ক হয়ে উঠে শরীরে চাদর জড়িয়ে মোবাইলটাকে গেঞ্জির পকেটে গুঁজে দরজার পাশে রাখা একটা রামদা তুলে নিয়ে সাবধানে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিলেন। উঠানে নরম চাঁদের আলো, সন্দেহজনক কিছু দেখা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবুল হায়াত মণ্ডল বেরিয়ে এলেন। উঠানে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক চাইলেন তিনি, অস্বাভাবিক কিছু্ই নজরে পড়লো না। কেবল তার বাড়িটা অস্বাভাবিক রকম শান্ত। ভাইয়েরা কেউ নাক ডাকছে না, বাড়ির বাচ্চারা মাঝে মাঝে রাতে বেড়ালের বাচ্চার মতো করে কেঁদে ওঠে, সেসব শব্দও নেই। আবুল হায়াত মণ্ডল গলা খাঁকরে ডাক দিলেন, "খায়ের? খায়ের আছিস র‍্যা?" খায়ের কোনো সাড়া দেয় না। মণ্ডল আরেকটু এগিয়ে গিয়ে মেজো ভাই বাশারকে ডাকেন, "বাশার ঘরোত আছিস নাকি?" বাশারের ঘর থেকে কোনো শব্দ আসে না। মণ্ডল বাকি ভাইদের ঘুরে ঘুরে ডাকেন, "বরকত? হোসেন? হাসান? ফজল?" মণ্ডলকে চমকে দিয়ে তার বুড়ি মা নিজের ঘর থেকে খনখন করে বলে ওঠেন, "আবুল হায়াত তুই রাত বিরেতে মরা ভাইদের ডাইকে বেড়াস কেন র‍্যা?" আবুল হায়াতের বুকের মধ্যে রক্ত ছলকে ওঠে। মরা ভাই মানে? সন্ধ্যা বেলায় বরকত আর বাশারের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে কাকে জবাই করা যায়, সে নিয়ে আলাপ করলেন তিনি। হাসান আম্লীগ করে, তাকে দিয়ে পুলিশের হাতে আটক পাশের গ্রামের শিবির কর্মী মোজাম্মেলকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যাপার তদবির করা নিয়েও কথা হলো ভাত খাওয়ার আগে। মণ্ডল রামদাটা মাটিতে ঠেকিয়ে হাতল ধরে তার ওপর ভর দিয়ে বলেন, "মা তুই ঘুমাসনি কেন? এসব কী বকতিছিস আবোল তাবোল?" মণ্ডলের মা খুনখুন করে কাশেন, তারপর কাঁদো কাঁদো গলায় বলেন, "আট মাস পুরইলো তোর ভাইগুনি ঢাকা শহরে যাইয়ে পুলিশের গুলি খাইয়ে শহীদ হলো। তুই এই রাইতের বেলায় তাদের ডাকিস কেনে? তোর কী হয়েছে রে বাপ?" আবুল হায়াত মণ্ডলের বুক ধড়ফড় করে। কী বলছে মা এগুলো? তিনি রামদা ধরে উঠানে বসে পড়ে বলেন, "মা তুই কী কতিছিস এসব? আমার তো তাদের সঙ্গে আজ সন্ধ্যাতেও কথা হলো। আস্তাগফিরুল্লাহ, তারা মরবে কেন?" মণ্ডলের মা এবার সরু গলায় কেঁদে উঠে বললেন, "আরে আগের সালের মে মাসের চার তারিখে তারা সব ঢাকা গেলো। বললো জিহাদে যাতিছি মা দোয়া করিস। মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী। ছয় তারিখ সকালে তোর কাছেই না মবিল ফুন এলো যে তোর ছয় ভাই পুলিশের গুলি খাইয়ে শহীদ হয়েছে। আর তোর ভাইরাই কি শুধু মরিছে? লক্ষ লক্ষ লোক পুলিশের গুলি খাইয়ে মরলো। লাশগুলিও পাইলাম না। সব লাশ নাকি নসিমনে চাপাইয়ে ইনডিয়া পাঠাইয়ে দিছে জালিমের দল। হায় রে আমার কপাল ...।" আবুল হায়াত মণ্ডল চাদর দিয়ে কপালের ঘাম মোছে। কী ভয়টাই না পেয়েছিলো সে। গলা উঁচিয়ে সে বলে, "মা তুই ঘাবড়াইসনি। এসব রটনকথা। আস্তাগফিরুল্লাহ, কেউ মরেনি।" মণ্ডলের বুড়ি মা ধমক দিয়ে বলেন, "আরে সারা গ্রামের লোক আইসে গায়েবানা জানাজা পড়লো, আর তুই কতিছিস রটনকথা! লক্ষ লক্ষ লোক মরি গেলো ...।" আবুল হায়াত মণ্ডল মাকে ধমক দিয়ে বলে, "কী যে তুই বলিস মা। লক্ষ লক্ষ লোক মারা এতো সোজা নাকি? এইটে কি একাত্তর সাল পেয়েছিস? বরকত সেদিন বিকালের মইধ্যে জিহাদের কাজ শ্যাষ করে ভাতক্ষীরার বাসে উইঠে আমারে ফুন দিছিলো।" মণ্ডলের মা তবুও খুনখুন করেন, "নসিমনে চাপাইয়ে আমার বিটাগুলির লাশ ইনডিয়া নিই গেলো গো ...।" আবুল হায়াত মণ্ডল বলেন, "মা তুই বকিসনি তো। ঢাকা শহরে নসিমন নেই। লক্ষ লক্ষ লাশ ইনডিয়া নিতি হলে হাজার হাজার নসিমন লাইগবে। সেইগুলো কি বলদের পুঙ্গা দিয়ে বাইর হবে?" মণ্ডলের বুড়ি মা এবার কপাল চাপড়ে বলেন, "একটা মাত্র ছাওয়াল বিটা বাকি আছে, সিটাও মাথা বিগড়ি মজনু হলো। আল্লাহ গো তুমি এ কী করলে গো ...।" আবুল হায়াত মণ্ডল অস্থির হয়ে গেঞ্জির পকেট থেকে মোবাইল ফোন বার করে বরকতের নাম্বারে কল করে উঠোনের মাঝে এসে দাঁড়ালো। মায়ের কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো? হঠাৎ শীতল বাতাস বয়ে যায় উঠানে। মণ্ডল কেঁপে ওঠে। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে উঠান। বরকতের নাম্বারে কোঁ কোঁ করে রিং হয়, কেউ ধরে না। কিন্তু, চাঁদের আলো কীভাবে? আবুল হায়াত মণ্ডলের রামদা ধরা হাত ভিজে ওঠে ঘামে। আজ কেন চাঁদের আলো? আগামী পরশু রাতে না অমাবস্যা হওয়ার কথা? সে রাতেই তো বাবুইশিরায় গিয়ে হরিপদের বউ অলকার সর্বনাশ করার পরিকল্পনা সে আলেফ সর্দারকে ভাত খেয়ে উঠে ঘুমানোর আগে ফোন করে জানালো। মণ্ডল রামদাটা হাত বদল করে কপালের ঠাণ্ডা ঘাম মোছে, তারপর চাঁদের দিকে তাকায়। একটা ব্যাদান করা মুখ চাঁদের ভেতর থেকে স্মিত হাসি দেয় তার দিকে চেয়ে। সে মুখ ভর্তি লাল দাড়ি। মণ্ডলের হাত থেকে রামদাটা পড়ে যায়। সাঈদী হুজুর না? চাঁদের বুকে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর চেহারাটা এবার চোখ টেপে। আবুল হায়াত মণ্ডলের বুক প্রচণ্ড ধুকপুক করতে থাকে। চাঁদের বুকে কেন সাঈদীকে দেখা যাবে? এ কীভাবে সম্ভব? সে কাঁপা হাতে এবার মোবাইল ফোনের অ্যাড্রেস লিস্ট থেকে একটা বিশেষ নাম্বার খুঁজে বের করে। বাঁশের কেল্লার অপু ভাইকে ফোন দিতে হবে। কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে। বাঁশের কেল্লার অপু ভাইয়ের নাম্বারে রিং বাজতে থাকে, কেউ ধরে না। আবুল হায়াত মণ্ডল আবার চাঁদের দিকে তাকায়। সাঈদী নাক খুঁটছেন একটা আঙুল দিয়ে, পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। মণ্ডল রামদা ধরা হাতের বাহুতে কপালের ঘাম মোছে। অপু ভাইয়ের মোবাইলে রিং বেজে চলে শুধু। মণ্ডলের বুকে এসে ভর করে প্রচণ্ড আতঙ্ক। ঢাকায় লক্ষ লক্ষ লোক মারা যায়নি, বগুড়াতেও চাঁদের বুকে সাঈদীকে দেখা যায়নি। এ সবই হয়েছে বাঁশের কেল্লায়। তার মুঠোফোনে সুনির্দিষ্ট বার্তা এসেছে, এসব খবর কীভাবে ছড়াতে হবে, কোথায় হট্টগোল বাঁধাতে হবে, তারপর লোক ক্ষেপিয়ে কোথায় আক্রমণ করে কী ধ্বংস করতে হবে। কিন্তু মা বলছে তার ছয় ভাই মারা গেছে। মে মাসের পাঁচ তারিখে, পুলিশের গুলি খেয়ে, লক্ষ লক্ষ লোকের সাথে। গায়েবানা জানাজাও হয়েছে। আর এখন চাঁদের বুকে দেখা যাচ্ছে সাঈদীর মুখ। প্রকাণ্ড লাল দাড়ির মাঝে দুটি সরু, কুটিল চোখ তাকিয়ে আছে তার দিকে। আবুল হায়াত মণ্ডল ঘামতে থাকে। সে সম্মোহিতের মতো তাকিয়ে থাকে সাঈদীর মুখের দিকে। সাঈদী তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি ঈষৎ পরিবর্তন করে। আবুল হায়াত মণ্ডল বুঝতে পারে, সাঈদী হুজুর তাকিয়ে আছেন তার বাড়ির অদূরে এলজিইডির সড়কের দিকে। এবার তার কানে ভেসে আসে সেই ঘড়ঘড়ঘড় শব্দ। অনেক স্পষ্ট, অনেক জোরালো। অনেকগুলো গাড়ির এনজিনের শব্দও সে শুনতে পায়। কতোগুলো বুট দ্রুত বেগে খটখট শব্দ তুলে রাস্তা ধরে এগিয়ে আসে, তারপর রাস্তা ছেড়ে নেমে আসে তার ভিটার দিকে। একটা প্রচণ্ড লাথিতে সদর দরজা খুলে যায়। চাঁদের আলোয় দেখা যায় অচেনা উর্দি পরা কয়েকজন সৈনিক আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে মণ্ডলবাড়িতে প্রবেশ করেছে। সৈনিকদের পিছু পিছু ব্যাজ পরা এক সেনা অফিসার এসে মণ্ডলের সামনে দাঁড়ায়। মণ্ডল খোলা দরজা দিয়ে দেখতে পায়, প্রকাণ্ড এক বুলডোজার দাঁড়িয়ে আছে তার বাড়ির সামনে। সেনা অফিসার হাসিমুখে সুর করে বলে, "হামলোগ বাঁশের কেল্লা সে আয়া। কেয়া আপ ক্লোজআপ করতে হাঁয়? ইয়া দুনিয়াসে ডরতে হাঁয়? অওর পেনাল্টি ভরতে হাঁয়? আপ ক্লোজআপ কিঁউ নাহি করতে হাঁয়য়য়য়য়? উল্টি সিধি চলতে হাঁয়? হুম হুম আহাহাহা হাহাহা ...।" বুলডোজারের গর্জন শুনে আবুল হায়াত মণ্ডল রামদা ফেলে দিয়ে উঠানে ঢলে পড়ে। বাঁশের কেল্লা সত্যি হয়ে গেছে। [কাঠবলদদের জন্যে নোট: গল্পের সব ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে মিল কাকতালমাত্র।]
false
hm
শিকার ১. হাসানুজ্জামান টের পায়, তার মুখে একটা হাসি ফুটে আছে। সেটা এই পরিস্থিতিতে তাকে খুব একটা সাহায্য করবে না, তা সে জানে, কিন্তু হাসিটা মুছতে গিয়ে কষ্ট হয় তার। হাসানুজ্জামান দাঁড়িয়ে আছে জয়দেবপুর মোড় থেকে একটু পশ্চিমে, রাস্তার পাশে একটা অঘোষিত স্ট্যান্ডে। উত্তরের হিমেল হাওয়া বড় বড় কারখানার ভবনের ফাঁকে একটু খোলা জায়গা পেয়ে এসে হামলে পড়ছে তার ওপর। তবে হাসানুজ্জামানের গায়ে মোটা উলের সোয়েটার, গলায় মাফলার, কান পর্যন্ত ঢাকা টুপি, শীত তাকে কাবু করতে পারবে না। রাতের এই অন্ধকারকেও ভয় পাচ্ছে না সে, হাসানুজ্জামান নিজেও নিশাচর। তাকে যেতে হবে এলেঙ্গা বাজার। এখন অনেক ট্যাক্সি চলাচল করে টাঙ্গাইল রোড ধরে, মাথাপিছু একটা ভাড়া দিতে হয়। বাসে চড়ার ঝক্কি পোষায় না যাদের, কিংবা কোনো কারণে ভরসা পায় না, তারাই ট্যাক্সি বেছে নেয়। আর এ চর্চাটা আছে বলেই হাসানুজ্জামান মাঝেমধ্যে হাতে কাজ না থাকলে এই সড়কে ছিনতাই করে। তার ব্যাগের মধ্যে একটা বিদেশী পিস্তল আছে। গুলিভরা, ব্যবহারের জন্য তৈরি। তবে আজ রাতে রাস্তায় ছিনতাইয়ের জন্যে দাঁড়ায়নি সে। এলেঙ্গাবাজারে গিয়ে একটা খ্যাপ নিয়ে কথাবার্তা সারতে হবে। কালিহাতিতে এক দুর্ভাগার বডি ফেলার খ্যাপ, মক্কেল অনেক পয়সাওয়ালা লোক, আশ্বাস দিয়েছে এলেঙ্গা বাজারের পার্টি, হাসানুজ্জামানকে টাকা নিয়ে দরাদরি করতে হবে না বেশি। সব ট্যাক্সি অবশ্য এই স্ট্যাণ্ডে থামে না। নানা হিসাবকিতাব আছে। ভেতরে মস্তান প্যাসেঞ্জার থাকলে লাইনের ট্যাক্সিও না থেমে চলে যায়। অনেক সময় লাইনের অন্য লোক ট্যাক্সি নিয়ে এসে এসব স্ট্যাণ্ড থেকে বোকাসোকা লোকজনকে তোলে, কালিয়াকৈর পৌঁছানোর আগেই কাজ হাসিল করে নির্জন কোনো জায়গায় মারধর করে নামিয়ে দেয় শিকারকে। বেশি তেড়িয়াপনা করলে বডি ফেলে দেয় অনেকেই। হাসানুজ্জামানকেও একবার ফেলতে হয়েছিলো। তবে সবকিছু সিস্টেম হয়ে গেছে এখন। ছোটোখাটো দাঁও মারলে যাত্রী-পুলিশ-সাংবাদিক কেউ গা করে না। লাইনে নতুন আসা রুস্তমরা কিছু না বুঝেই মেশিন চালিয়ে বডি ফেলে দেয়, তখন কয়েকদিনের জন্য একটু সমস্যা হয়। ঘাপলার কোনো শেষ নাই, এসব ঠেলেই কাজ চালিয়ে যেতে হয়। পর পর দুটো লোকবোঝাই ট্যাক্সি সাঁ সাঁ করে স্ট্যাণ্ড পেরিয়ে চলে যায়। হাসানুজ্জামান শরীরের ভর বাম পা থেকে ডান পায়ে নিয়ে দাঁড়ায়। সে একটা হোটেলে মুরগি দিয়ে ভাত খেয়েছে ঘন্টাখানেক আগে, কিন্তু আবার মৃদু খিদে পাচ্ছে তার। স্ট্যাণ্ডের পাশে একটা চায়ের দোকান আছে, কিন্তু এখন সেটা বন্ধ। হয়তো দোকানী এই ঠাণ্ডার রাতে আজ একটু জলদি বাড়ি ফিরে কাঁথার নিচে ঢুকে বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে চায়। আর দোকানটা বন্ধ বলেই হয়তো হাসানুজ্জামানের চায়ের তৃষ্ণাটা এক লাফে অনেকখানি বেড়ে গেছে। দূরে একটা গাড়ির আলো দেখে আবার একটু এগিয়ে দাঁড়ায় সে। আয় বাবা ট্যাক্সি, এলেঙ্গা বাজার নিয়ে যা জলদি জলদি। বাজার থেকে গরম এক কাপ চা খেয়ে পার্টির সাথে আলাপসালাপ শুরু করি। নাহ, এটা প্রাইভেট গাড়ি। উল্কাবেগে স্ট্যাণ্ড পেরিয়ে চলে যায় গাড়িটা টাঙ্গাইলের দিকে। দামী জিনিস, হয়তো কোনো বড়লোকের ছেলে যমুনা ব্রিজের রাস্তায় বেশি জোরে গাড়ি চালানোর লোভে বেরিয়েছে। হাসানুজ্জামানকে চায়ের জন্যে আর মনে মনে হাহুতাশ করার সুযোগ না দিয়ে এবার স্ট্যাণ্ডে এসে থামে একটা ট্যাক্সি। ইয়েলো ক্যাব, তার মানে ভেতরে যারা আছে তারা ভালো পয়সা খরচ করেই যেখানে যাওয়ার যেতে ইচ্ছুক। কালো ক্যাবে ভাড়া ইয়েলো ক্যাবের তুলনায় অনেক কম হয়, হাসানুজ্জামান যে শ্রেণীর মানুষের পরিচয় ভাঁড়িয়ে ছিনতাই করে, তারা কখনো ট্যাক্সি চড়লে কালো ক্যাবেই চড়ে। গাড়ির ভেতর থেকে নারী কণ্ঠের চড়া প্রশ্ন শুনতে পায় হাসানুজ্জামান, "এইখানে থামাইলেন ক্যান? অ্যাই ড্রাইভার, এইখানে থামাইলেন ক্যান?" হাসানুজ্জামান একটু ঝুঁকে নিজের গোবেচারা চেহারাটা দেখায় গাড়ির চালক আর পেছনের সিটে বসা আরোহীদের। সে দেখতে একেবারেই নিরীহ, মোটাসোটো, একটু খাটো, চোখে বিনা পাওয়ারের রূপালি ফ্রেমের চশমা, জড়োসড়ো ভীতু অভিব্যক্তি চোখেমুখে। ছিনতাই করতে বেরোলে সে শিকারের সাথে আগে গল্প জমিয়ে তার ভেতরে জমে থাকা শঙ্কাটা গলিয়ে দূর করে, নিজেকে তখন দূরের কোনো মিল বা ফ্যাক্টরির অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টোরকিপার বলে পরিচয় দেয় হাসানুজ্জামান। নানা গল্পগুজবের পর শিকার যখন একেবারে ঢিল দিয়ে দেয়, তাকে হানিসাধনে অপারগ কোনো কেরানী ধরে নেয়, তখনই ছোবল মারে সে। নিজের কাজে মন্দ নয় হাসানুজ্জামান, চড়থাপড় থেকে খুনখারাপি কোনোটাই সে মন্দ চালাতে জানে না। অ্যাকশনের সময় তার সস্তা রূপালি ফ্রেমের ওপাশে চোখদুটো সরীসৃপের চোখের মতো ঠাণ্ডা হয়ে ওঠে, সেটাই অর্ধেক কাজ সেরে ফেলে বেশিরভাগ সময়। পিস্তলটার চেহারা বাকি পঞ্চাশ শতাংশ উসুল করে নেয়। কুড়িটা ঠ্যাক দিলে একটায় হয়তো প্রতিরোধ আসে, তখন পিস্তল কথা বলে। বিগলিত কণ্ঠে সালাম দেয় হাসানুজ্জামান, "স্লামালিকুম! ভাই কি এলেঙ্গা বাজার পর্যন্ত যাবেন?" পেছনে নারী কণ্ঠ আবার উঁচু, চোখা গলায় বলে, "অ্যাই ড্রাইভার, আপনি এইখানে ক্যান থামাইছেন গাড়ি?" ড্রাইভার লোকটা সাধারণ ক্যাব ড্রাইভারের মতোই দেখতে, সে পেছনে না ফিরেই বিরক্ত হয়ে বলে, "আপা, আমার এক সিট এখনও খালি। আরেকজন প্যাসেঞ্জার লমু।" নারীকণ্ঠ আরেক পর্দা চড়ে বলে, "প্যাসেঞ্জার নিবেন মানে? আমরা আপনার সাথে চুক্তি করছি, আপনি আবার আরেকজনরে লইবেন ক্যান?" হাসানুজ্জামান একটু ঝুঁকে পেছনের সিটে আরোহীদের দেখে। ট্যাক্সিতে চড়ে এই রোডে মেয়ে নিয়ে ফূর্তিতে বের হওয়া খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তবে পেছনের সিটে যারা বসে, তাদের দেখে ঐ কেস বলে মনে হয় না। বছর তিরিশের এক যুবতী বসে, তার পাশে শান্ত শিষ্ট গোবেচারা চেহারার এক মাঝবয়সী লোক। মেয়েটার সাজগোজ বেশ্যাদের মতো নয়, বেশ মার্জিতই বলা চলে, রইস ঘরের মেয়েদের মতোই, দুইজন বসেও আছে ভদ্র দূরত্বে। অবশ্য আগে কী হচ্ছিলো তা কে জানে? হাসানুজ্জামান সালাম দেয় আবার। "স্লামালিকুম। ম্যাডাম, আমি একটু এলেঙ্গা বাজার যাবো। আপনারা যদি পারমিশন দেন, তাহলে আপনাদের গাড়িতে একটু শেয়ারে যেতাম। আমার খুব জরুরি দরকার, ইমার্জেন্সি আছে একটা।" কথায় ইংরেজি শব্দ মিশিয়ে দেয় সে সযত্নে, ভদ্রলোকের ছদ্মবেশে তুলির শেষ দাগ হিসেবে। মহিলা তবুও একঘেয়ে চিৎকার করে, "আমরা আপনার সাথে চুক্তি করছি, আপনি তবুও রাস্তার মাঝখানে থামাইলেন ক্যান? এইসব কী?" পাশে বসা লোকটা ভারি গলায় বলে, "সোনিয়া, থামো তো!" ড্রাইভার বেশি কথা বলে না পেছনের আরোহীদের সাথে। হাসানুজ্জামানের দিকে তাকিয়ে বলে, "এলেঙ্গা বাজার পর্যন্ত দুইশো ট্যাকা। যাইবেন?" হাসানুজ্জামান চোখেমুখে একটা হতাশ বিরক্ত আর অনুনয়ের মিশেল ফোটানোর চেষ্টা করে। "দুইশো টাকা? দেড়শোতে চলেন ভাই ...।" দুইশো টাকা খরচ করতে তার তেমন আপত্তি নেই, কিন্তু দরাদরি না করে উঠে পড়লে এরা সন্দেহ করবে। ড্রাইভার মাথা নেড়ে গাড়িতে স্টার্ট দেয় আবার। হাসানুজ্জামান হতাশ মুখে ক্যাবের দরজা খুলে ড্রাইভারের পাশের আসনে বসে। ড্রাইভার বলে, "দরজা জোরে টান দেন, লাগে নাই পুরাপুরি।" হাসানুজ্জামান দুর্বল হাতে আবার টান দেয় দরজা। গাড়ি এবার ঢাকা-টাঙ্গাইল রোডে উঠে পড়ে। পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে হাসানুজ্জামান বলে, "আপনাদের বিরক্ত করার জন্য খুব দুঃখিত। কিন্তু আমার একটা ইমার্জেন্সি ...।" মাঝবয়েসী লোকটার চেহারা ক্ষণিকের জন্য একটা কারখানার সদর দরজায় জ্বলতে থাকা আলোয় দেখতে পেয়ে একটু থতমত খায় হাসানুজ্জামান। লোকটার চেহারা শান্ত, কিন্তু সে টের পায়, লোকটা নিরীহ নয়। মজবুত চোয়াল, শীতল চোখ, ঘন ভুরু। নিচু, ভারি গলায় লোকটা বলে, "আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।" হাসানুজ্জামান লোকটার পাশে বসে থাকা যুবতীর দিকে ক্ষমা প্রার্থনার হাসি হাসে অর্ধেক। "ম্যাডাম বোধহয় খুব বিরক্ত হয়েছেন।" সোনিয়া নামের মহিলার চেহারা রাস্তার পাশের বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত আলোয় এক এক ঝলক দেখতে পায় সে। দেখতে ভালোই, কোনো বাড়তি সাজগোজ নেই, কিন্তু মনে হয় ক্ষেপে আছে, পিঠ সোজা করে বসে আছে, লোকটার মতো হেলান দিয়ে আয়েশ করছে না। হাসানুজ্জামানের কথার কোনো জবাব দেয় না সোনিয়া। ড্রাইভারের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে হাসানুজ্জামান। ড্রাইভারের অভিব্যক্তি বোঝার উপায় নেই আবছা আলোয়, নিবিষ্ট মনে গাড়ি চালাচ্ছে সে। সামনের পৃথিবীর অন্ধকার কয়েক গজ দূরে ঠেলে রেখেছে হেডলাইটের আলো। পেছনে বসা লোকটা নিচু গলাতেই বলে, "আপনি কি একাই যাচ্ছেন এলেঙ্গায়?" হাসানুজ্জামান কিছুটা বিস্মিত হয় কথাটা শুনে। লোকটা কি ভাবছে, সে আরো সাঙ্গোপাঙ্গো ডেকে আনবে পেছন পেছন? নাকি নিতান্তই নিরীহ কৌতূহল থেকেই প্রশ্নটা করলো? ঘাড় ফিরিয়ে হাসানুজ্জামান বলে, "জ্বি। একটা ফ্যামিলি সমস্যা। খুব ইমার্জেন্সি কাজ। তাই রাতেই যেতে হচ্ছে।" লোকটা সিটে হেলান দিয়ে বসে ছিলো, খুব ধীর ভঙ্গিতে পিঠটা সিট ছেড়ে তুলে ঝুঁকে বসে হাসানুজ্জামানের মুখের কাছে মুখ এনে অনুচ্চ গম্ভীর গলায় বললো, "আপনার সঙ্গে আর কেউ যাচ্ছে এখন? নাকি আপনি একাই যাচ্ছেন?" হাসানুজ্জামান বাম হাতে গোপনে নিজের ব্যাগের ভেতরে রাখা পিস্তলটার স্পর্শ নিলো একবার। এই লোক কী জানতে চায় আসলে? এরা ছিনতাই পার্টি না তো? এই লাইনে ছিনতাই করে এমন সবাইকেই সে কমবেশি চেনে, আর সাথে মেয়ে নিয়ে ছিনতাই করার মতো লোক খুব বেশি নাই এদিকটায়। তার মুখের হাসিটা ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিলো বলেই বোধহয় লোকটা একটু আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে হাসে, কিন্তু হাসানুজ্জামানের অস্বস্তিটা দূর হয় না। সে ঘাড় ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে, "জ্বি, একাই যাচ্ছি। আর কেউ নাই সাথে।" সোনিয়া মুখ খোলে এবার, "আপনি এত রাতে ঐ জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, আপনার ভয় লাগে না?" স্বাভাবিক কথার দিকে আলাপ মোড় নিচ্ছে জেনে হাসানুজ্জামান একটু স্বস্তি অনুভব করে। "জ্বি ম্যাডাম, রাতের বেলা একটু ভয় তো লাগেই। কিন্তু মাঝেমধ্যে যেতে হয় তো, অভ্যাস আছে।" সোনিয়া বলে, "আমি প্রায়ই পেপারে পড়ি, এদিকে ছিনতাই হয়।" হাসানুজ্জামান বলে, "জ্বি ম্যাডাম। আমাকেও একবার ছিনতাই করেছিলো কয়েকজন ইয়াংম্যান। তাছাড়া ...।" নাটকীয় একটা বিরত দেয় সে। সোনিয়া বলে, "তাছাড়া কী?" হাসানুজ্জামান ঘাড় ঘুরিয়ে সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, "এদিকে কিছু খারাপ জায়গা আছে ম্যাডাম।" লোকটা বলে, "খারাপ জায়গা মানে?" হাসানুজ্জামান বলে, "নানা রকম কথা শুনি স্যার! ভূতপ্রেত, জ্বিন-পিশাচ, এই সব আর কি।" লোকটা চুপ করে যায়। সোনিয়া খনখনে গলায় বলে, "হাইওয়েতে ভূতপ্রেত থাকে নাকি? ওগুলি তো জানতাম গ্রামেগঞ্জে থাকে!" হাসানুজ্জামান হাসে। বলে, "হাইওয়ের দুই পাশে গ্রামই তো ম্যাডাম! ভিলেজ এরিয়া।" লোকটা বলে, "খারাপ জায়গায় কী হয়?" হাসানুজ্জামান এই গল্প তার অনেক শিকারের সাথেই করেছে। কিছু লোকের ভেতরে সহযাত্রীকে নিয়ে ভয় দূর হয় না, তখন তার মনে জ্বিনভূতের ভয় ঢুকিয়ে দিতে হয়। শিকার তখন গায়েবী শত্রুকে নিয়ে চিন্তিত থাকে। তখন এক ঝটকায় পিস্তল বের করে গলায় চেপে ধরে তার জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিতে হয়। মাঝেমধ্যে অবস্থা বুঝে কয়েকটা কিলঘুষি, কপাল খারাপ থাকলে গুলি। সে সোৎসাহে বহুল ব্যবহৃত গল্পগুলো বলে যায়। "আমি চাক্ষুষ কিছু দেখি নাই স্যার। মানে, সবসময় তো লোকজন থাকে সাথে। বাসে বা ট্যাক্সিতে করে একা একা তো যাওয়া যায় না। কিন্তু শুনেছি মাঝেমধ্যে জ্বিন এসে লোক তুলে নিয়ে যায়। মানে, একা যদি পায়। আবার কিছু গাছ আছে রাস্তার পাশে, সেটাতে পিশাচ বাস করে। আশপাশ দিয়ে একা কাউকে যেতে দেখলে তুলে নেয়।" সোনিয়া জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। লোকটা ঘোঁৎ করে একটা শব্দ করে। হাসানুজ্জামানের ভালো লাগে এদের অস্বস্তিতে ফেলতে পেরে। লোকটা শুরুতেই একটা আচানক প্রশ্ন করে তাকে চমকে দিয়েছিলো। এখন কেমন লাগে, চান্দু? "আমার এক কলিগের ফ্রেন্ড স্যার, এইখানেই হাইওয়ের পাশে একটা মিলে স্যার, চাকরি করত। ব্যাচেলার মানুষ স্যার, মিলের একটা হোস্টেলেই থাকতো। একদিন সে রাতে একটু হাঁটতে বের হয়েছিলো স্যার। একটু বেসামাল ছিলো আর কি ... হেঁ হেঁ হেঁ, মানে একটু ড্রিঙ্ক করেছিলো আর কি। তো তাকে স্যার একটা গাছের উপর পাওয়া যায় পরে। ডেড অবস্থায়। একদম ডেড।" লোকটা বলে, "সোনিয়া, বাসায় বাজার আছে?" সোনিয়া বলে, "না, বাজার করা দরকার ছিলো। করবো?" প্রসঙ্গ থেকে এরা সরে যাওয়ায় হাসানুজ্জামান একটু মনক্ষুণ্ণ হয়, কিন্তু মনোযোগটাকে পেছনের সিটের দিকে রেখে সে ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে তাকায়। শুনতে পায়, লোকটা বলছে, "হ্যাঁ, বাজার করো। ড্রাইভার সাহেব, আমরা বাজার করবো।" হাসানুজ্জামানের কাছে একটু অদ্ভূত লাগে কথাগুলো। এত রাতে কোথায় বাজার করবে এরা? কালিয়াকৈরের আগে তো বাজার নেইও ধারেকাছে। ড্রাইভারের অভিব্যক্তিও বোঝা যায় না অন্ধকারে, সে শুধু সংক্ষেপে বলে, "আচ্ছা।" প্রশ্নটা হাসানুজ্জামানকে ভাবায়, এবং চিন্তায় ক্ষণিকের জন্যে ডুবে গিয়ে সে পেছনের সিট থেকে হঠাৎ ভেসে আসা কড়া মিষ্টি একটা গন্ধের প্রতি এই পৃথিবীতে যতটুকু মনোযোগ দিলে বেঁচে থাকা আর মরে যাওয়ার মধ্যে টানা দাগটা খেয়াল করা যায়, ততটুকু মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়। পেছনের সিট থেকে চুড়ি পরা একটা হাত সাঁড়াশির মতো হাসানুজ্জামানের গলা আঁকড়ে ধরে, আরেকটা হাতে ধরা রুমাল চেপে বসে তার নাকের ওপর। রুমালটা ভেজা, তাতে একটা অসহ্য মিষ্টি গন্ধ। হাসানুজ্জামান টের পায়, যতটুকু বাধা সে দিতে পারতো, ততটুকু বাধা দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও ক্ষমতা তার আর নেই। ক্রমশ তার কাছে ভারি হয়ে আসছে পৃথিবী, হাতের ওজন মনে হচ্ছে একশো কেজি। সে দুর্বলভাবে তার বাম হাতটা দিয়ে ব্যাগটা খোলার চেষ্টা করে, ওর ভেতরে আছে তার পিস্তলটা, গুলিভরা, শুধু সেফটি ক্যাচটা অফ করে ট্রিগারে টান দিলেই হবে। কিন্তু বাম হাতটা চলতেই চাইছে না, পৃথিবীটাও মনে হচ্ছে একটা বিরাট ঢেউয়ের ওপর ভাসছে, কানে আসছে আবছা শোঁ শোঁ শব্দ। হাসানুজ্জামান টের পায়, ড্রাইভার লোকটা বাম হাতে একটা প্রচণ্ড কিল মারে তার পাঁজরের ঠিক নিচে, ফুসফুসের সব বাতাস বেরিয়ে যায় সে আঘাতে। হাসানুজ্জামান বুক ভরে শ্বাস নেয় আবার নিজের অজান্তেই, সেইসাথে বুকে টেনে নেয় রুমালের অনেকখানি ক্লোরোফর্ম। ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক ছেড়ে সে তলিয়ে যায় অচৈতন্যে। ২. ঠাণ্ডা। চৈতন্য ফিরে পাবার পর হিমের অনুভূতিই হাসানুজ্জামানের সমস্ত মনোযোগ গ্রাস করে। অন্ধকার এসে হিমের জায়গাটা দখল করে কয়েক সেকেণ্ড পর। হাসানুজ্জামান অনুভব করে, ঠাণ্ডা আর অন্ধকার কোথাও শুয়ে আছে সে। তার চোখের সামনে একেবারে নিকষ অন্ধকার। সে কি অন্ধ হয়ে গেলো? উদ্বেগটা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তার রক্তস্রোতে। হাসানুজ্জামান একটা হাত দিয়ে নিজের চোখ স্পর্শ করতে গিয়ে শিউরে ওঠে ব্যথায়। তার ঘাড়ের পেশীতে প্রচণ্ড ব্যথা। কিন্তু ঘাড়ে আঘাত লাগার কথা স্মরণ করতে পারে না সে। চোখে কোনো বাঁধন নেই। কিন্তু চোখের সামনে গাঢ় অন্ধকার। হাসানুজ্জামান নিজের আঙুল দেখার চেষ্টা করে, পারে না। একটা চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে আসে তার গলা থেকে, অনিচ্ছাসত্ত্বেও। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে, ঘাবড়ে গেলে চলবে না। শুরু থেকে চিন্তা করতে হবে আবার। সে হাসানুজ্জামান, এলেঙ্গাবাজারে এক পার্টির সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলো, কালিহাতিতে একজনকে মার্ডার করার ব্যাপারে। পথে ট্যাক্সিতে তার নাকে ওষুধ ঠেসে ধরে অজ্ঞান করে ফেলে সোনিয়া নামের মেয়েটা। এই কাজে ট্যাক্সি ড্রাইভার সোনিয়াকে সাহায্য করছিলো। তার মানে পেছনের সিটের ঐ লোকটা, সোনিয়া আর ড্রাইভার, তিনজন একই পার্টির লোক। তারা অজ্ঞান পার্টি, সন্দেহ নাই। বাজার করার কথা বলছিলো লোকটা। ওটাই সঙ্কেত। বাজার করতে বললেই রুমালে ওষুধ ঢেলে শিকারের নাকে চেপে ধরবে সোনিয়া। কিন্তু সে এমন অন্ধকার জায়গায় কেন? মনে হচ্ছে এটা কোনো ঘর। অজ্ঞান পার্টির লোক তাকে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে যাবে, এমনটাই স্বাভাবিক। সে এখন কোথায়? হাসানুজ্জামানের শরীর কেঁপে উঠলো ঠাণ্ডায়। সে আবিষ্কার করলো, তার হাতটা নগ্ন। সোয়েটার নেই, শার্টও নেই। হাসানুজ্জামান হাতড়ে হাতড়ে একটা কাঁথা পেলো শরীরের ওপর। একটা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে সে। কাঁথার নিচে তার শরীর বিবস্ত্র। হাত বাড়িয়ে জাঙ্গিয়া স্পর্শ করে থেমে গেলো হাসানুজ্জামান। না, ওটা আর খোলেনি বদমায়েশগুলো। কিন্তু তার সোয়েটার, শার্ট, প্যান্ট, সবই খুলে নিয়ে গেছে। এ কেমন অজ্ঞান পার্টি? ওগুলো তো মোটেও দামী কিছু ছিলো না। উঠে বসতে গিয়ে ঘাড়ের ব্যথাটা বিদ্যুতের গতিতে ছোবল দিলো গোটা পিঠে। এভাবে কতক্ষণ শুয়ে ছিলো সে? হাসানুজ্জামান টের পেলো, তার শরীরের নিচে মাটি নেই। স্বাভাবিক বিছানাও নেই। খসখস শব্দ আর খোঁচা তাকে স্মরণ করিয়ে দিলো খড়ের কথা। হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করলো সে একবার, হ্যাঁ, খড়ই। খড়ের গাদার ওপর তাকে ন্যাংটো করে কাঁথা পেঁচিয়ে ফেলে রেখে গেছে অজ্ঞান পার্টির দল। একটা ক্ষীণ গোঙানির শব্দ হাসানুজ্জামানের হৃৎপিণ্ডকে একটি স্পন্দনের অপেক্ষা করিয়ে রাখলো কিছুক্ষণ। "উঁ!" ডানদিকে ঘাড় ঘোরাতে গিয়ে ব্যথাটা হাসানুজ্জামানের ঘাড়ের পেশীর ওপর দংশন করলো আবার। অনেক দূরে কয়েকটা কমলা বিন্দু ধিকিধিকি জ্বলছে। গোঙানির আওয়াজটা সেখান থেকেই আসছে। অন্ধকার ইতিমধ্যে হাসানুজ্জামানের চোখে খানিকটা সয়ে এসেছে, আগুন দেখে তার মনে একটা হালকা স্বস্তি ছড়িয়ে পড়লো, যাক, তার চোখের কোনো ক্ষতি হয়নি। একই সাথে হাসানুজ্জামান টের পেলো, সে অনেক বড় একটা ঘরের মাঝে আছে। জ্বলতে থাকা আগুনটুকু ঘরের অন্ধকার দূর করার বদলে তা আরো ঘন করে তুলেছে। বাম হাত বাড়িয়ে দিতে গিয়ে পিঠের ব্যথাটা খচ করে ঘাই দিয়ে উঠলো, কিন্তু হাতের তালুতে ঠাণ্ডা, কঠিন আর শুকনো দেয়ালের স্পর্শটা সে ব্যথার উপস্থিতিকে ম্লান করে দিলো। হাসানুজ্জামান দেয়ালে হাত বোলালো। ইঁট নয়, পাথুরে দেয়াল, একেবারে ঢালাই করা। কোনো খাঁজ নেই। বরফের মতো শীতল। কোথায় এনে ফেলেছে ব্যাটারা তাকে? গোঙানির শব্দটা আবার ভেসে এলো আগুনের কাছ থেকে, "হুঁহুঁ!" হাসানুজ্জামান মুখ খুলে ডাক দিতে গিয়ে আবিষ্কার করে, কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না তার গলা দিয়ে। ঠাণ্ডা ঘরে উদোম গায়ে একটা মোটে কাঁথা গায়ে শুয়ে থাকলে গলা বসে যাওয়াই স্বাভাবিক। কেশে গলা পরিষ্কার করে নেয় সে একবার, তারপর গলা চড়িয়ে ডাকে, "কে ভাই? কে ঐখানে?" গোঙানির শব্দটা এক পর্দা চড়ে যায় এবার, "উঁ! উঁ! উঁ!" হাসানুজ্জামান ঘাড় থেকে কোমর পর্যন্ত বেদনা আর মনভরা অস্বস্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ায়, কাঁথাটা ভালোমতো জড়িয়ে নেয় শরীরে, তারপর এগোতে গিয়ে চমকে ওঠে। তার পায়ের নিচে বরফের মতো শীতল মেঝে। শালারা তার জুতো আর মোজাও খুলে নিয়ে গেছে। সে আরো অনুভব করে, মাটি নয়, পাথুরে মেঝে তার পায়ের নিচে। দেয়ালের মতোই, হিম আর শুষ্ক। অন্ধকার চোখে সয়ে গেলেও ঘরের পরিসর আন্দাজ করতে পারে না হাসানুজ্জামান। ডানে বা বাঁয়ে ঘরটা কতদূর গেছে, বোঝার উপায় নেই। শুধু বেশ খানিকটা দূরত্বে কয়লার মিটিমিটি আগুন জ্বলছে, তার পেছনে আবার গাঢ় অন্ধকার। কোনো গুদাম ঘর হতে পারে, কোনো কারখানার স্টোর হয়তো। কিন্তু আলো নেই কেন? "কে ভাই ঐখানে?" আবার গলা চড়িয়ে ডাকে সে, তার পা বেয়ে মেঝের হিম উঠে আসে কণ্ঠস্বর পর্যন্ত। "কে আপনি?" গোঙানির শব্দটা আগের মতোই মৃদু হয়ে ভেসে আসে, "হুঁহুঁ!" হাসানুজ্জামান অস্বস্তিভরে দুই পা এগোয়। কী ব্যাপার? মুখ বেঁধে রেখেছে নাকি লোকটার? গোঙাচ্ছে কেন? কথা বলে না কেন? "কে? আপনি কে? এখানে কী করেন?" এবার দূর থেকে একটা রিনরিনে, কাঁপা কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, "আমি!" হাসানুজ্জামান চমকে ওঠে কথাটা শুনে, কারণ কণ্ঠস্বরটা নারীর। অল্পবয়স্কা কোনো মেয়ের গলা। এখানে মেয়ে আসবে কোত্থেকে? এরা কি নারী পুরুষ সবাইকে অজ্ঞান করে নিয়ে আসে নাকি? হাসানুজ্জামানের বুকটা আবারও ধুকধুক করে ওঠে, রক্তস্রোতে মিশতে থাকে অ্যাড্রেনালিন। ট্যাক্সির আবছায়ায় দেখা সোনিয়ার অবয়ব আর সেই লোকটার গম্ভীর চেহারা মনে পড়ে যায় তার। এরা সাধারণ অজ্ঞান পার্টি নয়। নানা গুজবের কথা তার একসাথে মনে পড়ে। মানুষজনকে ধরে নিয়ে গোপনে অপারেশন করে কিডনি, কলিজা খুলে বিক্রি করে দেয়া হয়, এমন একটা খবর এসেছিলো না কাগজে? হাসানুজ্জামান শুনেছে, লাশও নাকি এসিডে ধুয়ে কঙ্কাল বের করে বিক্রি করে দেয়া হয়। অনেক রকম বিজনেস নাকি আছে মানুষের বডি নিয়ে। এরা কি সেরকম কোনো পার্টি? মেয়েদের ধরে ভারতে পাচার করা হয়, সে জানে, কিন্তু সেসব মেয়েদের জোর করে বা অজ্ঞান করে ধরে আনে না কেউ, তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বেশি বেতনে কাজের লোভ দেখিয়ে, তারপর দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়, সেখান থেকে মেয়েরা চলে যায় বড় শহরের বেশ্যাপাড়ায়। কিন্তু এরা কেন অজ্ঞান করে ধরে আনছে মানুষকে? বিদ্যুচ্চমকের মতো নিজের ব্যাগটার কথা মনে পড়ে তার। পরক্ষণেই হতাশায় ডুবে যায় হাসানুজ্জামান। জামাজুতাই যেখানে খুলে নিয়ে গেছে ব্যাটারা, পিস্তলটা যে তার নাগালের মধ্যে রেখে যাবে না, সেটা তো বলাই বাহুল্য। পিস্তলটা হাতের কাছে থাকলে ভরসা পায় সে, অন্যরকম একটা সাহস পায় বুকের ভেতর। অন্ধকার, ঠাণ্ডা ঘরের ভেতর উলঙ্গ শরীরে কাঁথামুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে হাসানুজ্জামান নতুন করে দুর্বল বোধ করে। গোঙানির শব্দটা এবার কয়েক পর্দা চড়ে, "হুঁহুঁ! হুঁহুঁ! হুঁহুঁ!" হাসানুজ্জামান মাপা পায়ে সাবধানে সামনে এগোয়। অন্ধকারে কোনো কিছুর সাথে ঠোকর খেয়ে বা হোঁচট খেয়ে চোট পেতে চায় না সে। কিন্তু তার কেন যেন মনে হয়, এই ঘরটা একেবারেই খালি। আর কিছু এখানে রাখা নেই। ঘরের দরজাটা খুঁজে পেতে হবে। সম্ভাবনা শতভাগ যে দরজাটা বন্ধ থাকবে, তারপরও দেখে রাখা প্রয়োজন। এক সময় না এক সময় দরজা খুলবে ব্যাটারা, তখন একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে। স্টোররুমের জানালাগুলো সাধারণত ছাদের কাছে হয়। হাসানুজ্জামান ওপরের দিকে তাকায়, কোনো জানালার আভাস তার চোখে পড়ে না। আলো দরকার। কয়লার আগুনে কিছু খড় দিলে আগুন পাওয়া যাবে। হাসানুজ্জামান সাবধানে এগিয়ে জিজ্ঞেস করে, "আপনি কে? এখানে কীভাবে আসছেন?" রিনরিনে তরুণীকণ্ঠ আবার বলে ওঠে, "আমি!" হাসানুজ্জামান সন্তর্পণে এগোয়। কয়লার মিটমিটে আগুনের পাশে একটা অন্ধকারের স্তুপ, কেউ একজন বসে আছে আগুনের পাশে। আগুন থেকে গজ পাঁচেক দূরে থেমে যায় হাসানুজ্জামান। "আপনি কে? নাম কী আপনার? এখানে কীভাবে আসছেন?" আগুনের কাছেই বসে আছে মেয়েটা। হাসানুজ্জামান দেখে, তারই মতো একটা কাঁথা জড়ানো মেয়েটার গায়ে। মেয়েটার শরীরের রেখা বোঝা যাচ্ছে, মাথায় চুল অবিন্যস্ত হয়ে আছে, মাথা নিচু করে বসে আছে মেয়েটা। হাসানুজ্জামান আরো দুই পা এগোয়। "কী নাম আপনার? বাড়ি কোথায়?" মেয়েটা কাঁপা গলায় কী যেন একটা নাম বলে, স্পষ্ট শুনতে পায় না সে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করে হাসানুজ্জামান, "সখিনি? আপনার নাম সখিনি?" মেয়েটা মাথা ঝাঁকায়, "হুঁ!" হাসানুজ্জামান মাথা নাড়ে। গ্রামের মেয়েদের এমন নাম হতো আগে, এখন গ্রামেও মেয়েদের নাম রাখে নায়িকাদের নামে। "বাড়ি কোথায় আপনার?" মেয়েটা আবার গোঙায়, "উঁ!" হাসানুজ্জামান টের পায়, মেয়েটা শীতে কাঁপছে। একটা সন্দেহ খেলে যায় তার মাথার ভেতর। সে গলা খাঁকরে কয়েক পা সামনে এগিয়ে মেয়েটাকে ভালো মতো দেখার চেষ্টা করে। তার মতোই একটা কাঁথা গায়ে জড়িয়ে বসে আছে মেয়েটা, কাঁথার ফাঁক দিয়ে একটা ফর্সা পা দেখা যাচ্ছে হাঁটু পর্যন্ত। এরা কি এই মেয়েটারও জামাকাপড় খুলে নিয়েছে? হাসানুজ্জামান একটু তপ্ত বোধ করে ভেতরে ভেতরে। অন্ধকার রাতে কাঁথা জড়ানো অপরিচিতা নগ্নিকার সান্নিধ্য তার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। সে অভয় দেয়ার জন্যে বলে, "আমার নাম হাসানুজ্জামান। ঢাকায় থাকি, বাড়ি মানিকগঞ্জে। আপনার বাড়ি কই, বললেন না?" মেয়েটা একটু গুটিশুটি হয়ে বসে বলে, "এইখানেই।" হাসানুজ্জামান হেসে বলে, "এইখানে মানে? এই জায়গাটা কোনখানে?" এবং প্রশ্নটা তার মাথায় প্রথম বারের মতো বাড়ি কষায়। কোন জায়গায় আছে তারা? ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে কোনদিকে, কতদূরে এই ঘর? মেয়েটা প্রশ্নের উত্তর দেয় না, নড়েচড়ে বসে আবার গোঙায়, "উঁ! উঁ! উঁ!" হাসানুজ্জামান ঘরের চারদিকে তাকায়। সবদিকেই নিকষ অন্ধকার। কয়লা জ্বলছে ঘরের আরেক প্রান্তে, একটা চুলার মতো গর্তে। গর্তটা ইঁট দিয়ে পাকা করা। মেয়েটার পেছনে আবার আস্তে আস্তে গাঢ় হয়ে গেছে অন্ধকার। ঘরটা অনেক বড়, সন্দেহ নেই। খড় এনে কয়লার ওপর ফেললে অনেক ধোঁয়া হবে। এই ঘরের দরজা জানালা কোন দিকে, তখন একটা আন্দাজও হয়তো পাওয়া যাবে। বড় ঘর, ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হওয়ার কথা না। হাসানুজ্জামান গলা খাঁকরে বলে, "আপনাকে কখন নিয়াসছে এইখানে? আজকে? নাকি আরো আগে?" মেয়েটা বলে, "হুঁ! হুঁহুঁ!" হাসানুজ্জামান মনে মনে একটু বিরক্ত হয়। কী আজব রে বাবা। মাথা খারাপ নাকি ছেমরির? একটা কথারও ঠিকমতো জবাব দিতে পারে না। নামটা শুধু বলতে পারে, কোত্থেকে আসছে, কবে আসছে কিছুই বলে না ঠিকমতো। অন্ধকারে ফুটে থাকা মেয়েটার ফর্সা পায়ের দিকে চোখ পড়তে হাসানুজ্জামানের রাগ একটু পড়ে আসে। হয়তো কড়া কোনো ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করেছে মেয়েটাকে, সেটার ধকল হয়তো এখনও সামলাতে পারছে না বেচারি। কিংবা হয়তো খিদে লেগেছে তার। কয়দিন ধরে এখানে আছে কে জানে? খিদের কথা মনে হতেই নিজের পেট মোচড় দিয়ে উঠলো হাসানুজ্জামানের। কতক্ষণ ধরে এখানে আছে সে? রাতে হোটেলে খাওয়া ভাত তো হজম হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। কয়লার আগুনের দিকে চোখ পড়তেই হাসানুজ্জামানের মনে টোকা দিলো নতুন প্রশ্ন, আগুনটা জ্বালিয়েছে কে? কয়লায় আগুন ধরতে সময় লাগে, তবে অনেকক্ষণ ধরে জ্বলে। জ্বলতে থাকা কয়লার স্তুপ দেখে মনে হয়, অনেকক্ষণ ধরেই জ্বলছে আগুন। কেউ একজন আগুনটা জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে নিশ্চয়ই। হাসানুজ্জামান মাথা নিচু করে বসে থাকা মেয়েটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিলো, মেয়েটাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করবে না সে। এখন যা জানার, তা তাকে নিজেরই মাথা খাটিয়ে জানতে হবে। এই ঘরের ভেতর তারা দুইজন মানুষ যখন আছে, তার মানে ঘরের একটা দরজা আছে। দরজাটা খুঁজে বের করতে হবে। তারপর সেটা দিয়ে কীভাবে বের হওয়া যায়, তা ভেবে বার করতে হবে। আপাতত এটাই প্রথম কাজ। আর এই কাজের জন্যে লাগবে আলো। আলো পাওয়ার আপাতত একটাই উপায়, কিছু খড় এনে কয়লার আগুনে ফেলে আগুনটাকে উঁচু করা, তারপর খড় পাকিয়ে মশালের মতো বানিয়ে ঘরটা ঘুরে দেখা। হাসানুজ্জামান গলা খাঁকরে বললো, "বসেন দেখি, কী করা যায়। আপনার কি খিদা লাগছে?" মেয়েটা খিদের কথায় একটু যেন চমকে ওঠে। তারপর মুখ তুলে বলে, "হুঁ!" কয়লার আগুনের আবছা আলোয় মেয়েটার মুখ দেখে হাসানুজ্জামানের বুকের ভেতরে রক্ত ছলকে ওঠে একবার। চোখ বুঁজে আছে মেয়েটা, কিন্তু তার প্রতিমার মতো সুন্দর, ধারালো চেহারাটা বোঝা যাচ্ছে। মেয়েটা অনেক ফর্সা, সন্দেহ নেই। খাড়া নাক, ভরাট ঠোঁট, সুডৌল চিবুক, কিন্তু অভুক্ত মানুষের মুখে যে ক্লিষ্ট ভাব থাকে, সেটা পুরোমাত্রায় আছে। হাসানুজ্জামান জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চেটে বলে, "আপনি বসেন এইখানে। আমি দেখি একটু আগুন জ্বালাই।" মেয়েটা আবার মাথা নিচু করে গোঙাতে থাকে, "উঁ! হুঁহুঁ!" হাসানুজ্জামান পেছন ফেরে, তার খড়ের শয্যার কাছে ফিরে যাওয়ার জন্যে। তখনই একটা আবছা আলো ছড়িয়ে পড়ে ঘরের ভেতর। সে ঝট করে ঘুরে তাকায় আলোর উৎসের দিকে। দূরে, ছাদের কাছে একটা চৌকো অংশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। একটা জানালা, বাইরে থেকে সামান্য আলো আসছে ঘরের ভেতর। হাসানুজ্জামান শুনতে পায়, মেয়েটা এখনও গোঙাচ্ছে। হাসানুজ্জামান শরীরে কাঁথাটা জড়িয়ে একটি গিঁট মেরে নেয়। হারামীগুলি ভালো বুদ্ধিই বের করেছে, পালাতে পারলেও ন্যাংটা অবস্থায় বেশি দূর যাওয়ার উপায় নেই এই শীতের মধ্যে। মানুষ কত বদমায়েশ হতে পারে, তা সে ভালো করেই জানে। কিন্তু এই ধরনের বদমায়েশির সাথে সে পরিচিত নয় মোটেও। আলোটা ঘরের অন্ধকার মোটেও দূর করেনি, কিন্তু অন্ধকারে থেকে হাসানুজ্জামানের চোখ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, তার সামনে ঘরের আকার মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে এসেছে এই আলোয়। অনেক বড় একটা ঘর, তার এক কোণায়, ছাদের কাছে জানালাটা। ঘরের দেয়াল এদিকে ইঁটের, ঢালাই করা নয়। এবং এদিকে ঘরটা পুরোই খালি। হাসানুজ্জামান চারপাশে তাকায়, আলোটা খুব বেশিদূর ছড়ায়নি, ঘরের বাকি অংশ অন্ধকারেই ডুবে আছে। কিন্তু তার মনে হয়, এটা একটা প্রকাণ্ড খালি ঘর, ওদিকেও কিছু নেই, খড়ের স্তুপ ছাড়া। হাসানুজ্জামান দ্রুত পায়ে এগোয়। ইঁটের খাঁজে ভর করে যদি জানালা পর্যন্ত ওঠা যায়, তাহলে জানালা দিয়ে বের হওয়ার একটা রাস্তা পাওয়া যায় কি না দেখতে হবে। জানালাটা যথেষ্ট উঁচুতে, লাফ দিয়ে নামতে গেলে হাত-পা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে কাঁথাটা ঝুলিয়ে নামতে হবে। কিন্তু কাঁথার দৈর্ঘ্যও তো বেশি নয়। অবশ্য মেয়েটার গায়ের কাঁথার সাথে তার কাঁথাটা গিঁট দিয়ে দিলে বেশ লম্বা একটা দড়ির মতো হবে, সেটার একমাথা কোথাও বেঁধে ঝুলে কিছু দূর নেমে বাকিটা পথ লাফিয়ে নামা যাবে। কাঁথার নিচে মেয়েটার ফর্সা পা হাসানুজ্জামানের চোখের সামনে ভেসে উঠলো। তার শরীরের রক্ত উষ্ণ হয়ে উঠলো আবার। মেয়েটা অনেক সুন্দর। মাথা ঝাঁকিয়ে মেয়েটার চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দিলো হাসানুজ্জামান। এখন পালাতে হবে, সবার আগে ওটাই কাজ। জোর পায়ে এগিয়ে ঘরের কোণায় গিয়ে দাঁড়ায় সে। মেঝে কিছুটা এবড়োখেবড়ো এখানে, ঘরের অন্য অংশের মতো সমতল নয়। জানালার আলো তির্যকভাবে পড়েছে ঘরের ভেতরে, এখানটায় অন্ধকার। ইঁটের দেয়ালে হাত বুলিয়ে খাঁজ খোঁজে হাসানুজ্জামান। হ্যাঁ, দেয়ালটাও এখানে অমসৃণ। কোথাও ইঁট সামান্য বেরিয়ে আছে, কোথাও আবার গর্ত। জানালা পর্যন্ত এরকম হলেই হয়। লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে ওপরে তাকিয়ে জানালাটা দেখে সে, তারপর হাঁটুর উচ্চতায় দেয়াল থেকে একটু সামনে বেরিয়ে থাকা একটা ইঁটের ওপর পা রেখে সাবধানে নিজের শরীরের ভর চাপায় হাসানুজ্জামান। পুরনো দেয়ালের ইঁট হঠাৎ হড়াশ করে ভেঙে পড়তে পারে। এখন সেরকম কিছু ঘটলে নাগালের ভেতর পালানোর একমাত্র সুযোগটাও মাঠে মারা পড়বে। আর হাড়গোড় কয়টা ভাঙবে কে জানে? পেছনে মেয়েটার গোঙানি শুনতে পায় সে আবারও, "উঁ! উঁ!" পাত্তা দেয় না হাসানুজ্জামান। গুনগুন করুক মেয়েটা। আগে জানালায় পৌঁছাতে হবে। একটু একটু করে ঘরের কোণে দুই পাশের দেয়ালে ইঁটের খাঁজে পা রেখে উঠতে থাকে সে। কিছুদূর উঠে সাবধানে হাত বাড়িয়ে খাঁজ খুঁজতে হচ্ছে তাকে, শরীরটাকে মিশিয়ে রাখতে হচ্ছে দেয়ালের সাথে। একটু ঊনিশ-বিশ হলেই টাল হারিয়ে নিচে গিয়ে পড়তে হবে তাকে। কত উচ্চতা হবে এই ঘরের? পনেরো ফুট? কুড়ি ফুট? এরকম উঁচু থেকে বেকায়দায় নিচে পড়লে হাত পা ভাঙবে নিশ্চিত। হাসানুজ্জামান টের পায়, তার হাত আর পায়ের পেশীতে খিল ধরে যাচ্ছে। ইঁটের খাঁজে হাত রেখে উঠতে গিয়ে থরথর করে কাঁপছে তার বাহুর পেশী। এসব কাজের অভ্যাস নেই তার। সে মানুষ হিট করে নির্জনে বা গোপনে, সেখান থেকে শান্তভাবে নিরীহ পথচারীর মতো পিস্তল লুকিয়ে হেঁটে চলে আসে। দৌড়ঝাঁপ তাকে তেমন একটা করতে হয় না এই কাজে। দেয়াল বেয়ে ওঠা তো দূরের কথা। হাসানুজ্জামান দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিজ্ঞা করে, এখান থেকে ভালোয় ভালোয় উদ্ধার পেয়ে গেলে সে নিয়মিত ব্যায়াম করবে, সকালে উঠে দৌড়াবে কোনো পার্কে। ওপরে ওঠার সময় নিচের দিকে তাকাতে হয় না, কে যেন বলেছিলো, স্মরণ করতে পারে না সে। ঘাড় আর পিঠের পেশীতে ব্যথাটা আবার কামড় দিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যায় তাকে। হাসানুজ্জামান দরদর করে ঘামে, পিপাসায় তার গলার ভেতরটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে, টের পায় সে। ঘরের ভেতরে কোথাও কি পানি আছে? একটু পানি খাওয়া বড় প্রয়োজন। থেমে থেমে, বিশ্রাম নিয়ে জানালা থেকে একটু নিচে এসে হাতে মসৃণ দেয়ালের স্পর্শ পায় হাসানুজ্জামান। এবড়োখেবড়ো ইঁট আর নেই, মসৃণ ঠাণ্ডা পাথুরে সমতল দেয়াল তারপর। একটা অসহনীয় ক্রোধ তার মাথার ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে যায়। শুয়োরের বাচ্চা, দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে গালি দেয় সে। হারামীর দল একেবারে তীরের আগে তরী ডোবানোর কায়দা করে রেখেছে! খুব সন্তর্পণে ইঁটের শেষ খাঁজটায় পা রেখে আরেকটু ওপরে ওঠে হাসানুজ্জামান। জানালার নিচের প্রান্ত ছাড়িয়ে কোনোমতে মাথাটা ওপরে তুলতে পারে সে। জানালার ওপারে আকাশ দেখার প্রত্যাশা ছিলো তার মনে, কিন্তু জানালার ওপাশে একটা ছোটো ঘর। ঘরটার অর্ধেক দেখা যাচ্ছে কেবল। বামে একটা সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরে, আর ডানে একটা সোফা দেখা যাচ্ছে খানিকটা। ঘরটায় আলো জ্বলছে, কিন্তু সে আলো ঘরের অন্য প্রান্তে, এখান থেকে দেখার উপায় নেই। আর জানালাটা সাধারণ জানালার মতো নয়। একটা কাঁচের পাত দেয়ালের মধ্যে বসানো শুধু, কোনো খাঁজ নেই, কব্জা নেই, কপাট নেই। হাসানুজ্জামানের হাত ইঁটের খাঁজ আঁকড়ে ধরে আছে, তার শরীরের অর্ধেক ভর তার হাতের ওপর, সে হাত আলগা করার সাহস পায় না। কাঁচের জানালায় মাথা ঠোকে সে, ঢপঢপ শব্দ হয়। সাধারণ কাঁচ নয়, টের পায় হাসানুজ্জামান। জানালার ওপাশে দেখা ঘরটা ভালোমতো দেখার চেষ্টা করে সে। সোফায় কেউ বসে নেই, কিন্তু একটু পর পর নীলচে আলো এসে পড়ছে সোফার গদির ওপর, সম্ভবত টিভি দেখছে কেউ। সিঁড়িটার পাশে একটা সাইকেলের চাকা দেখতে পাচ্ছে সে, সাইকেলটা দেয়ালে হেলান দিয়ে রাখা। সাইকেল এত উঁচুতে ঘরের ভেতরে তুলে এনে রেখেছে কেন? প্রশ্নের উত্তরটা তাকে চাবুকের মতো আঘাত করে। হাসানুজ্জামান হঠাৎ বুঝতে পারে, এই বিশাল ঘরটা মাটির নিচে। এটা একটা পাতালঘর। ধারণাটা তাকে দুর্বল করে তোলে হঠাৎ। এই লোকগুলো তাকে একটা পাতালঘরে এনে ফেলে রেখেছে একটা মেয়ের সাথে। এতবড় পাতালঘর যারা ম্যানেজ করতে পেরেছে, তারা সাধারণ অজ্ঞান পার্টি নয়। এরা অনেক গভীর জলের শিকারী মাছ, সে এদের তুলনায় নিতান্তই চুনোপুঁটি। এরা নিশ্চয়ই তার ব্যাগ খুলে পিস্তলটা পেয়েছে। এরা জানে, হাসানুজ্জামান সাধারণ কেউ নয়। নিশ্চয়ই এরা যথেষ্ট তৈরি হয়েই আসবে আবার। উলঙ্গ শরীরে ক্ষুধা আর পিপাসায় কাবু হাসানুজ্জামান কাঁথা জড়িয়ে কীই বা প্রতিরোধ করতে পারবে? আক্রমণ করা তো আরো দূরবর্তী বিকল্প বলে মনে হচ্ছে এখন। হাসানুজ্জামান হিম দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে। তৃষ্ণায় তার বুক জ্বলছে। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে, বুদ্ধি হারালে চলবে না। আবার মাথা তুলে ঘরের ভেতরটা দেখার চেষ্টা করে সে। জানালায় কোনো ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করে সেটা ভাঙা যাবে কি? কাঁচটা অনেক মোটা, খালি হাতে আঘাত করে ভাঙার প্রশ্নই আসে না। যদি ভাঙতেও পারে সে, লোকগুলো শুনতে পাবে, পালানোর সুযোগ পাবে না সে। জানালা দিয়ে পালানো যাবে না। দরজাটা খুঁজতে হবে, যে দরজাটা দিয়ে ওরা তাকে আর সখিনিকে ভেতরে ফেলে রেখে গেছে। সখিনির গোঙানি শুনতে পায় হাসানুজ্জামান, ধীরে ধীরে অতি সাবধানে নিচে নেমে আসতে থাকে সে। পাঁজরে বাড়ি দিচ্ছে হৃৎপিণ্ড, একটু্ পানির জন্যে চিৎকার করছে শরীরের সব কোষ। এরা ঘরের কোণে আগুন জ্বালিয়ে রেখে গেছে, একটু পানি কি রেখে যায়নি কোথাও? লাফিয়ে নিচে নামার ইচ্ছাটা বহু কষ্টে দমন করে সাবধানে নিচে নেমে এলো হাসানুজ্জামান। মাটিটা এবড়োখেবড়ো এখানে, কোথাও কোনো ধারালো কিছুর ওপর লাফিয়ে পড়লে পায়ে চোট পেতে পারে সে। এখন খুব সাবধানে থাকতে হবে, আহত হলে চলবে না। সখিনি আগুনের পাশেই বসে আছে। হাসানুজ্জামান কপাল থেকে ঠাণ্ডা ঘাম মোছে কাঁথার খুঁট দিয়ে। দেরি করা চলবে না। যত সময় কাটবে, তত কাবু হয়ে পড়বে তারা। মেয়েটা তো কথাই বলতে পারছে না খিদের চোটে। আগুন জ্বালিয়ে দরজাটা খুঁজতে হবে এখন। হাসানুজ্জামান হনহন করে এগিয়ে যায় খড়ের বিছানার কাছে। দরজাটা মনে হয় এপাশেই কোথাও হবে। অন্তত উল্টোদিকে কোনো দরজা নেই, টের পেয়েছে সে। একটা দরজা থাকবে এদিকে কোথাও, তারপর একটা সিঁড়ি। দরজা খুললেই চলবে না, সেটার ওপারে কারা পাহারায় আছে কে জানে, তাদেরও ফাঁকি দিয়ে পালাতে হবে। অন্ধকারের হাতড়ে হাতড়ে খড়ের স্তুপ খুঁজে বের করে দুই হাতে পাঁজাকোলা করে এক স্তুপ খড় তুলে নিলো হাসানুজ্জামান। খড় পাকিয়ে মশাল বানাতে হবে আগে। দূর থেকে সখিনির গোঙানি ভেসে আসে, "উঁ!" হাসানুজ্জামান খড়ের স্তুপ হাতে করে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় কয়লার আগুনের দিকে। এক বিপুল উদ্বেগ তার ভেতরে একটু একটু করে বড় হচ্ছে, কুলকুল করে ঘামছে তার শরীর। বিপদ, অনুভব করে সে, অনেক বিপদের মাঝে রয়েছে সে। সখিনি চুপ করে বসে আছে, তাকে না ঘাঁটিয়ে কয়লার আগুনের ওপর সাবধানে এক মুঠো এক মুঠো করে খড় চাপায় হাসানুজ্জামান। খড়টা শুকনো, পলকেই লকলকে আগুন জ্বলে ওঠে কয়লার স্তুপের ওপর। এক মুঠো খড় হাতে নিয়ে পাকিয়ে দড়ির মতো তৈরি করার চেষ্টা করে সে, ওটাতে আগুন ধরিয়ে মশাল বানাতে হবে। শুকনো খড় খুব দ্রুত জ্বলে ওঠে, শক্ত করে পাকিয়ে নিলে পুড়তে সময় লাগবে। আগুনটা উঁচু হয়ে উঠতেই সখিনি চমকে ওঠে, সে ছিটকে সরে যায় দূরে। সখিনির ক্ষিপ্রতা হাসানুজ্জামানকে বিস্মিত করে। মেয়েটা আগুন ভয় পাচ্ছে কেন এই শীতের মধ্যে? বুকের ভেতর পিপাসাটা আবার টোকা দেয়, হাসানুজ্জামান সখিনিকে বলে, "এইখানে কোথাও পানি আছে? খাওয়ার পানি?" সখিনি মাথা দোলায়। "উঁ!" হাসানুজ্জামান বড় শ্বাস নেয়, তার ছাতি ফেটে যাচ্ছে তৃষ্ণায়। হাতের খড়-পাকানো মশালটার এক প্রান্ত আগুনে গুঁজে দেয় সে, তারপর বাকি খড়টুকু চাপিয়ে দেয় কয়লার আগুনের ওপর। গনগনে আগুনের শিখায় অনেকখানি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ঘরের এ প্রান্ত, হাতে জ্বলন্ত মশাল নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় হাসানুজ্জামান। সে দেখে, সখিনি উঠে দাঁড়িয়েছে। হাসানুজ্জামান সবিস্ময়ে দেখে, সখিনি অনেক লম্বা। তার মাথা ছাড়িয়ে আরো হাতখানেক ওপরে উঠে গেছে সখিনির মাথা। প্রায় সাড়ে ছয়ফুটের মতো লম্বা মেয়েটা, কাঁথাটা তার শরীরকে ঠিকমতো ঢাকেনি, ফর্সা একটি ঊরু অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, কাঁথার আড়াল থেকে বেরিয়ে আছে সুপুষ্ট একটি স্তনের বলয়ভাগ। কোথাও সমস্যা আছে, হাসানুজ্জামানের মস্তিষ্ক তাকে ফিসফিসিয়ে বলে। সখিনির পেছনে আগুনের শিখায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ঘরের অনেকখানি। ঘরটা শূন্য। কোনো আসবাব নেই, কিছু নেই, শুধু দেয়াল আর মেঝে। সেই মেঝেতে সখিনির ছায়া লম্বা হয়ে পড়েছে। সেই ছায়ার মধ্যে নড়ছে একটা কিছু। মশালটা বাড়িয়ে ধরে হাসানুজ্জামান। আগুনের শিখায় সখিনির অপূর্ব মুখশ্রী উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। হাসানুজ্জামান প্রথমবারের মতো দেখতে পায়, সখিনি আসলে ফর্সা নয়। সখিনির শরীরটা ফ্যাকাসে, মৃত মানুষের মতো। মেয়েটা সটান দাঁড়িয়ে আছে, তার দীর্ঘ হাত দু'টি শিথিল ঝুলছে শরীরের দুই পাশে, কিন্তু সেই হাতের শেষ প্রান্তে লম্বা আঙুলগুলো বাঁকা হয়ে আছে থাবার মতো, আঙুলের শেষ প্রান্তে নখ। মানুষের নখের মতো নয় সে নখ, শ্বাপদের পায়ের নখের মতো। সখিনির মুখে বিচিত্র একটা হাসি ফুটে আছে, দেখে হাসানুজ্জামান। মেয়েটার চোখ বন্ধ। খড়গুলো পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে, আগুনের উচ্চতা একটু একটু করে নিচে নামছে, সখিনির পেছনে আস্তে আস্তে এদিকে এগিয়ে আসছে ঘরের অন্ধকার। সেই ক্রমবর্ধমান অন্ধকারে সখিনির ছায়ায় নড়তে থাকা জিনিসটা কী, সেটা বুঝতে পেরে হাসানুজ্জামানের হাঁটুর কাছটা দুর্বল হয়ে ওঠে। একটা লেজ। সখিনির কোমরের কাছে একবার এসে ঝাপটা মারে লেজটা, সাপের লেজের মতো। সখিনি প্রথমবারের মতো চোখ খুলে তাকায় হাসানুজ্জামানের দিকে। মশালের আলোয় সে চোখ দেখে হাসানুজ্জামানের শরীর কেঁপে ওঠে থরথর করে। সখিনির চোখে সাদা অংশের মাঝে উল্লম্ব সরু একটা মণি, মানুষের চোখের মতো নয়, সাপের চোখের মতো। সখিনির মুখের বিচিত্র হাসিটা ক্রমশ ভয়াল হয়ে ওঠে, হাসানুজ্জামান দেখতে পায়, ধীরে ধীরে হাঁ করছে সে। তীক্ষ্ণ দুই পাটি শ্বদন্ত বেরিয়ে আসে, তার মাঝে দুই সারি এবড়ো খেবড়ো হলদে দাঁত। মেয়েটার অনিন্দ্য সুন্দর চেহারাটাকে ঢেকে দেয় অপার্থিব জান্তব হাসিটা। একটা খলখল হাসিতে ভরে ওঠে ঘর। সে হাসি মানুষের নয়। একই সাথে ঘরের ছাদের কাছে জ্বলে ওঠে একটা আলো। হাসানুজ্জামান এবার সবকিছু পরিষ্কার দেখতে পায়। বিশাল একটি ঘরের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে সে, তার মুখোমুখি সখিনি নামের ঐ জিনিসটা। তার শরীর থেকে কাঁথা খসে পড়েছে, ফ্যাকাসে উলঙ্গ এটা শরীর বেরিয়ে পড়েছে। শরীরটা মানুষের, দীর্ঘদেহী ফ্যাকাসে কোনো তরুণীর, কিন্তু শরীরের অনুপাত মানুষের মতো নয়। অনেক দীর্ঘ একটি উদর এই জীবটির। সখিনি তীক্ষ্ণ, কর্কশ গলায় চেঁচিয়ে ওঠে, "খিদা!" হাসানুজ্জামান অনুভব করে, তার মাথার পেছনের সব চুল খাড়া হয়ে উঠেছে। এক অপরিসীম আতঙ্কে তার হাত থেকে খড়ের মশালটা মেঝেতে পড়ে যায়। সখিনি দুই পা সামনে বাড়ে, তারপর পা ফাঁক করে দাঁড়ায়। হাসানুজ্জামান সম্মোহিতের মতো দেখে, সখিনির দুই পায়ের ফাঁকে বাতাসে ছোবল দিচ্ছে লেজটা। তার হাত দুটো কনুইয়ের কাছে একটু ভাঁজ হয়ে এসেছে, আঙুলগুলো উদ্যত, তাদের প্রান্তে কর্কশ, পাথুরে নখ। হাসানুজ্জামান অস্ফূটে বলে, "শাঁখিনী!" সখিনি নয়। জীবটা তার আসল পরিচয়ই দিয়েছিলো তখন। শাঁখিনী। ডাকিনী-হাঁকিনী-শাঁখিনী, সেই শাঁখিনী। যারা মানুষ টেনে নিয়ে যায় মাটির নিচে, গাছের গর্তে, জলের নিচে, তারপর কড়মড়িয়ে খায়। ছেলেবেলায় অনেক গল্প সে শুনেছে বটে। ছিনতাই করার সময় শাঁখিনীদের গল্পও সে করেছে তার শিকারদের সাথে। সখিনি, বা শাঁখিনী, আরও এক পা এগিয়ে এসে একটু ঝুঁকে দাঁড়ায়। তার ঊরুর পেশীর দিকে তাকিয়ে হাসানুজ্জামান বোঝে, লাফ দেবে জীবটা। হাসানুজ্জামান মেঝে থেকে মশালটা কুড়িয়ে ছুঁড়ে মারে শাঁখিনীর মুখের ওপর, তারপর ঘুরে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুট লাগায় ঘরের কোণের দিকে। জানালাটার কাছে পৌঁছাতে হবে, যে করেই হোক। পেছনে একটা তীব্র আর্তনাদ শুনতে পায় সে, কিন্তু ঘুরে তাকায় না। ঘরের কোণে এবড়োখেবড়ো ইঁটের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হাসানুজ্জামান, হাত আর পায়ে খামচে ধরে দেয়াল বেয়ে উঠতে থাকে। যে করেই হোক জানালার কাছে পৌঁছতে হবে। দেয়াল বেয়ে উঠতে উঠতে হাসানুজ্জামানের মস্তিষ্ক আবার ফিসফিস করে ওঠে। কিছু একটা ঠিক নেই। বাজার নেই, বলেছিলো সেই লোকটা। সোনিয়াকে বলেছিলো বাজার করতে। কার জন্যে বাজার? হাসানুজ্জামানের বুকে বাড়ি খাচ্ছে তার হৃৎপিণ্ড, হাঁপরের মতো হাঁপাতে হাঁপাতে দেয়াল বেয়ে উঠতে থাকে সে। মেঝেতে থপথপ শব্দ শুনতে পায় হাসানুজ্জামান, শব্দটা দ্রুত এগিয়ে আসছে এদিকে। পেছন ফিরে তাকায় না সে, মরিয়া হয়ে উঠতে থাকে দেয়াল বেয়ে। ইঁটের খাঁজে লেগে থেঁতলে যাচ্ছে তার হাত আর পায়ের আঙুল, কিন্তু হাসানুজ্জামান থামে না, সারা দেহের শক্তি সম্বল করে সে উঠতে থাকে। এটা একটা পাতালঘর। এই ঘরে একটা শাঁখিনী আছে। এই ঘরে তাকে নগ্ন করে ফেলে রেখে গেছে ওরা। হাসানুজ্জামানকে তার মন ফিসফিস করে বলে, এই শাঁখিনীর জন্যেই বাজার করে এনেছে সেই লোকটা, সোনিয়া আর কালো ক্যাবের ড্রাইভার। বাজার সে নিজে। শাঁখিনীর জন্যে খাবার। হাসানুজ্জামান দেয়ালে নখের কর্কশ আঁচড়ের শব্দ শুনতে পায়, তার শরীরের সব রোম উদ্যত হয় আতঙ্কে। দেয়াল বেয়ে উঠে আসছে শাঁখিনী, তার পিছু পিছু। একটা কর্কশ হুঙ্কার ঘরের ভেতরটাকে কাঁপিয়ে তোলে, "খিদা!" হাসানুজ্জামানের চোখ ফেটে জল গড়ায়, সে হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে আসে জানালা বরাবর। কাঁচের ওপাশে তিনটা শান্ত, মনোযোগী মুখ দেখতে পায় সে। সেই লোকটা, তার শক্ত চোয়াল, চোখে নির্লিপ্ত দৃষ্টি। তার বাম পাশে দাঁড়িয়ে ট্যাক্সির চালক, একই রকম ভাবলেশহীন চেহারা, কিছু একটা চিবোচ্ছে সে। পান? চুইয়িং গাম? লোকটার ডান পাশে কাঁচের জানালার সাথে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সোনিয়া, তার পরনে রাতের পোশাক। সোনিয়ার মুখে একটা দুষ্টু হাসি, চোখে সরীসৃপের ক্রুরতা নিয়ে গভীর অভিনিবেশ নিয়ে সে দেখছে পাতালঘরের ভিতরের দৃশ্য। হাসানুজ্জামান কপাল ঠোকে জানালায়, তারপর ডান হাত তুলে কিল মারে সে মোটা কাঁচের ওপর। "বাঁচান!" চিৎকার করে কেঁদে ওঠে সে। "আল্লাহর দোহাই লাগে, বাঁচান আমারে! ভাই গো, বাঁচান গো ভাই! বাঁচান!" হাসানুজ্জামানের কয়েক ফুট নিচে ঘড়ঘড়ে কর্কশ একটা রুদ্ধ অস্ফূট হুঙ্কার ঘরের কোণকে অনুরণিত করে, "খিদা! খিদা! খিদা!" হাসানুজ্জামান শরীরের সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে ঘুষি মারে কাঁচের ওপর, কিন্তু আগের মতোই শীতল, কঠিন, বিকারহীন থেকে যায় কাঁচের পাত। ওপাশে দাঁড়ানো তিনটি মানুষের মুখের অভিব্যক্তিতেও কোনো পরিবর্তন হয় না। হাসানুজ্জামান উপলব্ধি করে, এই দৃশ্য এরা বহুদিন ধরে দেখছে। এরা জানে, এমনটা হয়। এরা জানে, এমনটাই হয়। তিনজনই একটু ঝুঁকে আসে সামনে। সোনিয়া জিভ বের করে তার ঠোঁট চাটে, ট্যাক্সি ড্রাইভার চিবানো বন্ধ করে ঢোঁক গেলে, আর মাঝখানের লোকটার মুখে ফুটে ওঠে একটা পাতলা হাসি। একটা ধারালো থাবা প্রচণ্ড হ্যাঁচকা টানে হাসানুজ্জামানকে খসিয়ে আনে দেয়াল থেকে। যন্ত্রণা নয়, একটা বিষাদ গ্রাস করে হাসানুজ্জামানকে, অভিকর্ষের হঠাৎ অস্তিত্ব বিষাদকেও মুছে দেয় তারপর। তিন জোড়া চোখ ওপরে চকচক করে ওঠে, নিচে পাতালঘরের মেঝেতে হাসানুজ্জামানকে ছিঁড়েখুঁড়ে খায় শাঁখিনী।
false
rn
সেই সুন্দর যে সুন্দর কাজ করে ১। গৌতম বুদ্ধ গৃহত্যাগ করার পর একবার গৃহে এসেছিলেন। তখন তাঁর স্ত্রী তাঁর পুত্র রাহুলকে বলেছিলেন বুদ্ধের অনেক সম্পদ আছে, তাঁর কাছ থেকে তা চেয়ে নিতে। সেই মতো রাহুল বুদ্ধের কাছে সম্পদ চাইলে বুদ্ধ বলেছিলেন আত্মদীপ ভব। নিজেকে প্রজ্জ্বলিত করো। ২। মানুষ কষ্ট তৈরি করে কেন? মানুষ চায় তার মনের মতো করে সবকিছু হোক, সবাই তার ইচ্ছাকে বুঝুক, গুরুত্ব দিক, মেনে নিক। ধ্রুব সত্য এই যে, আপনি যতই মনে করেন আপনার ইচ্ছাই সঠিক। আপনার ইচ্ছা মতো সবকিছু হওয়া উচিত কিন্তু আপনার কথামতো কেউই চলবে না। কারণ আপনার নিয়ন্ত্রণে কেউ নেই, আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে শুধু একজন আর সেটা আপনি নিজে। মানুষের নিয়ন্ত্রণে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি থাকে তা হলো আপনি নিজে, আপনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই দেখবেন সবকিছু যেন নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে। আপনার পা দুটিকে ধুলার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আপনি পৃথিবীটাকে চামড়া দিয়ে ঢেকে দিতে পারবেন না। কিন্তু আপনার নিজের ছোট পা দুটিকে চামড়া দিয়ে ঢেকে দিতে পারলেই পৃথিবীটা ঢাকা হয়ে যায়। সুতরাং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। দেখবেন সবকিছুই যেন ঠিক মনে হচ্ছে। আপনি যে রঙের চশমা পরবেন আপনি অন্যকে সেই রঙেই দেখবেন। লাল চশমা পরলে সব লাল, সবুজ পরলে সবকিছু সবুজ, হলুদ পরলে হলুদ। সুতরাং আপনার দৃষ্টিভঙ্গি যেমন হবে আপনি তেমনি সব দেখবেন। মনটি সুন্দর করলে আপনি সবকিছুই সুন্দর দেখবেন। আপনার সুখ, আপনার খুশি, আপনার আনন্দমতো অন্যের ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে আপনার ওপর। ৩। হয়ত জরুরী কাজে হয়ত কোথাও যাবেন বা অফিসে বের হচ্ছেন, আপনার বাইক স্টার্ট নিচ্ছে না, অথচ গতকালই ঠিক ছিল, বা চলতে চলতে স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেছে, কি করবেন তখন? ৪। বই পড়ার সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা হল–‘‘যতই আমরা অধ্যয়ন করি ততই আমাদের অজ্ঞতাকে আবিষ্কার করি’’। ৫। প্রতিবছর ঈদের একই চিত্র। পাখির মত, মাছির মত সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে! এই পরিস্থিতি থেকে কি আমাদের মুক্তি নেই?খুব কষ্ট হয়। ৬। 'ইস্পাত' লেখক- নিকোলাই অস্ত্রভস্কি।বইতো নয় যেন জ্বলন্ত আগুণ। বই পড়তে যেয়ে আমার ভেতরটা মড়-মড় করে উঠলো। শরীরটা ঘেমে গেল, আমি কিসের যেন আওয়াজ শুনতে পেলাম!বইয়ের লেখক নিকলাই অস্ত্রভস্কি তার জীবনীকেই এঁকেছেন এ বইয়ে। স্পন্ডিলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মাত্র ৩২ বছর বয়সে। জীবনের শেষ আটটি বছরের প্রথম চার বছর ছিলেন অন্ধ হয়ে। লাইন সোজা রাখার জন্য তার স্ত্রী তাকে কাগজ সেটে দিতেন কাঠের খাজ কাটা বোর্ডে। আর শেষের চার বছর তার দিন কাটে একেবারে বিছানায়। অন্ধ আর পঙ্গুত্বে জড়াজড়ি করে।ইস্পাত বইটির মূল নাম ‘হাও দ্যা স্টিল ওয়াজ টেম্পার্ড’। বইটি অনুদিত হয়েছে শতাধিক ভাষায় আর পেয়েছে রাশিয়ার সর্বোচ্চ খেতাব লেনিন অর্ডার। সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩৫
false
mk
জিরো টলারেন্সে সরকার প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা মানবপাচারের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, অবৈধভাবে মানবপাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সাম্প্রতিককালে অবৈধভাবে মানবপাচার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। প্রতিরোধে ইতোমধ্যে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাচারকৃত বাংলাদেশী নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনাসহ মানবপাচার রোধে এই অঞ্চলের দেশগুলো যাতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্যও আমাদের সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারী ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে লিখিতভাবে উত্তর দেন। গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পূর্ববর্তী সময় এবং চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পরবর্তী সময়ে অবরোধ-হরতালের নামে বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল নাশকতা, সহিংসতা ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার যে কোন সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে বদ্ধপরিকর। জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পেট্রোলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে মারাসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- যারা ঘটিয়েছে কিংবা যারা এর হুকুমদাতা, তাদের সবার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। সরকারী দলের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদের মানবপাচার নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে কাউন্টার ট্রাফিকিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমনে ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন’ আইন করা হয়েছে। আইনে মানবপাচারের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- ও যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-ের বিধান রাখা হয়েছে।তিনি বলেন, মানবপাচার একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। মানবপাচারকারীরা আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে জড়িত। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরও উন্নত ও অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদানে ‘জাতীয় পরিকল্পনা ২০১২-১৪’ প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়েছে। মানবপাচার প্রতিরোধে ‘জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৫-১৭’ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে, যা শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবপাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটির সভা প্রতি মাসে অনুষ্ঠিত হয়। মানবপাচার বিশেষ করে নারী ও শিশু পাচার সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার অগ্রগতি মনিটর করার বিষয় কমিটিতে পর্যালোচনা হয়।তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে সমুদ্র পথে অবৈধভাবে মানবপাচার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোস্টগার্ডের কার্যক্রমও আরও বিস্তৃত হয়েছে। কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে। কোস্টগার্ডের একটি পেট্রোল ক্রাফট ও একটি অত্যাধুনিক হাইস্পিড মেটাল সার্ক বোট সর্বক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম ও গহিরা অঞ্চলে টহলে নিয়োজিত রয়েছে। এই টহল কার্যক্রম আরও বৃদ্ধির জন্য একটি করে হাইস্পিড মেটাল সার্ক বোট কুতুবদিয়া ও সাঙ্গু স্টেশনে মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া শাহপুরী, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন্স উপকূলীয় অঞ্চলে দুইটি অত্যাধুনিক হাইস্পিড মেটাল সার্ক বোট দিয়ে টহল দেয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সমুদ্র পথে অবৈধভাবে বিদেশ গমনকালে আজ পর্যন্ত এক হাজার ৭৩৬ জন বিদেশগামী নাগরিককে সাগর থেকে আটক করেছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিজিবির ঐকান্তিক তৎপরতায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী এক হাজার ৯৪ জন ও শিশু ৪০৬ জন। এতে ২০১৪ সালে নারী উদ্ধার করা হয় ৮৫২ জন ও শিশু ৩১৭ জন। এছাড়া ২০১৫ সালে নারী উদ্ধার করা হয় ২৪২ জন ও শিশু উদ্ধার করা হয় ৪০৬ জন। এই সময়ে ২৭ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়। একই সময় মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ৪৪৮টি মামলা করা হয়েছে।দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে বিএনপি-জামায়াত ॥ আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টির চারজন সংসদ সদস্যের পৃথক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতি এবং নিহতদের পরিবারসহ আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে সরকারী পদক্ষেপের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, ইস্যুবিহীন আন্দোলন করে তারা কেবল দেশের সম্পদের ক্ষতিই করেনি, তাদের এসব কর্মকা-ে দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ অনেকাংশে নিরুৎসাহিত হয়েছে। এসব নাশকতামূলক কর্মকা- ও অরাজকতার বিরুদ্ধে সারাদেশে অসংখ্য মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টা ও দৃঢ়তায় বিএনপি-জামায়াত জোটের সকল অপপ্রয়াস প্রতিহত করে জনজীবনে নিরাপত্তা ও স্বস্তি বজায় রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি। জনগণও আমাদের পাশে ছিল। তারা অনৈতিক অবরোধ ও হরতাল মানেনি। অপরাধীদের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করে আমাদের সহায়তা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার হুকুমে এ বছরের ৫ জানুয়ারি হতে চলমান হরতাল ও অবরোধকালীন পেট্রোলবোমায় নিহতদের স্বজন ও আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হচ্ছে। নিহতদের নিকট-স্বজন ও আহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ২২০ জনের অনুকূলে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২০ কোটি ২৭ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, আহত ৫ জন ও নিহত আরও ১৩ জনের নিকট-স্বজনের অনুকূলে ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার চেক প্রস্তুত করা হয়েছে, যা শীঘ্রই বিতরণ করা হবে। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। গণতন্ত্রের এই অগ্রযাত্রা আমরা অব্যাহত রাখব ইনশাল্লাহ।বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন শান্তিপ্রিয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ॥ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বের প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন বহুমাত্রিক। বিশ্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশের এই অবস্থান আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাভিত্তিক কর্মকা- চলমান রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরসহ বৈদেশিক সম্পর্কোন্নয়নে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রা লাভ করেছে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হলে অপেক্ষাকৃত স্বল্পোন্নত অঞ্চলের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত সমৃদ্ধশালী অঞ্চলের অর্থনৈতিক একীভূতকরণ সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বৈদেশিক সম্পর্কোন্নয়নে সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কারণে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক, শান্তিপ্রিয়, প্রগতিশীল ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ও অবস্থান যেমন উন্নত ও সুদৃঢ় হয়েছে, সেই সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশীদেরও প্রভূত কল্যাণ সাধিত হচ্ছে। আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- অনুসরণ করে আমাদের ভবিষ্যত কূটনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখব। সরকারী দলের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। কেবল রিরাষ্ট্রীয়করণের মাধ্যমে নয়, দেশে যাতে ব্যক্তিখাতেও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় তাও আমরা নিশ্চিত করেছি। তিনি বলেন, সরকারী ও বেসরকারী খাতে কাজের প্রকৃতি ও সুযোগ-সুবিধা ভিন্ন বিধায় উভয়ক্ষেত্রে পারস্পরিক তুলনাযোগ্য নয়। তাই পেনশনের বিষয়টিও এর ব্যতিক্রম নয়। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে পেনশন প্রথা প্রচলনের কোন পরিকল্পনা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে। এ বিষয়ে সরকার সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ বিষয়ে ‘জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র’-এর আওতায় একটি সমীক্ষা পরিচালনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। দৈনিক জনকণ্ঠ সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:২১
false
rg
বন্ধুদের আমলনামা-১ _ _ তিন ডানার চড়ুই পাখি টোকন ঠাকুর ।। রেজা ঘটক নব্বইয়ের দশকের কবিদের মধ্যে টোকন ঠাকুর বাংলাদেশের ও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম আলোচিত প্রধান কবি। তরুণ কবিদের মধ্যে একই সঙ্গে সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিদের মধ্যেও টোকন ঠাকুর একজন। টোকন ঠাকুরকে কিভাবে পরিচয় করাবো? তিন ডানাওয়ালা ডোডো পাখি নামে? রঙের কারিগর নামে? কবিতার ফেরিওয়ালা নামে? নাকি ক্যামেরার পেছনের ফড়িং নামে? ছোটবেলায় টোকন পৃথিবীর সেরা বাই-সাইকেলওয়ালা হতে চেয়েছিল। বাইকেল নিয়ে তখন ছুটে বেড়াতো হরিণাকুণ্ডুর মেঠো পথ-ঘাট-মাঠ। বাই-সাইকেলে চড়ে হারিয়ে যেতো গাড়াগঞ্জ বাজার পেরিয়ে দূরে মহিষপুরের ভূবনডাঙ্গায়। কখনো বাই-সাইকেলে চড়ে হরিণাকুণ্ডু থেকে চলে যেতো বহুদূরের মাগুরার শ্রীপুরের মহেশচন্দ্র পাইলট হাইস্কুল মাঠের ফুটবল খেলায় একজন মধ্যমাঠের তুখোর মিডফিল্ডার হিসেবে। আবার কখনো টিং টিং করতে করতে ছুটে যেতো ঝিনাইদহের সিনেমা হলে। দলভারী হলে কখনো ছুটে যেতো বাই-সাইকেলে চড়েই যশোরের মনিহার সিনেমা হলে। বাই-সাইকেল জামানা শেষ করে টোকনের সঙ্গী হল মটর সাইকেল। এবার আর টোকনের নাগাল পায় কে? এবার দূরত্ব অটোমেটিক বেড়ে গেল। খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, কুস্টিয়া, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, মেহেরপুর ছুটে বেড়াতে লাগল ইঞ্জিনওয়ালা ফড়িং। জন্ম ও বেড়ে ওঠা: ১৯৭২ সালের ১ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু থানার ভায়ানা গ্রামের নিজ মাতুলালয়ে টোকন ঠাকুর জন্মগ্রহন করেন। বাবা পেশায় একজন ব্যাংকার। আর মা একজন সুগৃহিণী। টোকন তার বাবার চেয়ে মাত্র ২১ বছরের ছোট। টোকনের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে হরিণাকুণ্ডুর ভায়ানা গ্রাম আর গাড়াগঞ্জের নিজেদের বাড়িতে। টোকন সাঁতার শিখেছে গাড়াগঞ্জের কুমার নদে। পড়াশুনা: টোকনের প্রথম স্কুল হরিণাকুণ্ডুর ভায়ানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তিন বছর পর বাবার চাকুরির কর্মস্থলের বদলের কারণে টোকনের স্কুলও বদল হল। এবার নতুন স্কুল হল পৈতৃক নিবাসের বাড়ির পাশে কুমার নদের পারে গাড়াগঞ্জ সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে প্রাইমারি শেষ করে গাড়াগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হল টোকন। তিন বছরের মাথায় আবারো বাবার কর্মস্থলের বদল জনিত কারণে টোকনেরও স্কুল বদল হল। এবারের নতুন স্কুলের নাম মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার মহেশচন্দ্র পাইলট হাইস্কুল। সেখান থেকে এসএসসি পাশের পর টোকন ভর্তি হল ঝিনাইদহ সরকারি কেশবচন্দ্র কলেজে। তখন টোকনের বাবা-মা গাড়াগঞ্জের পৈতৃক নিবাস ছেড়ে তখন ঝিনাইদহ শহরের শুকান্ত সড়কে নিজেদের জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ শুরু করলেন। টোকনের এইচএসসি শেষ না হতেই শুকান্ত সড়কের বাড়ির কাজও শেষ হল। এতোদিন টোকন বাস বা বাই-সাইকেলে চড়ে ঝিনাইদহ-গাড়াগঞ্জ যাতায়াত করতো। বাড়ি নির্মাণ শেষ হবার পর পরিবারের সবাই যখন ঝিনাইদহের নতুন বাড়িতে উঠলেন, টোকনের নতুন ঠিকানা হল তখন খুলনা আর্ট কলেজ। খুলনা আর্ট কলেজে এক বছর পড়াশনা শেষ করেই রঙের কারিগর রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমালো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টসের ওরিয়েন্টাল আর্ট বিভাগে ভর্তি হল টোকন। এমএ ফাইনাল পার্ট নিজের ইচ্ছায়ই আর শেষ করলো না। ফলে টোকন এখনো চারুকলার মাস্টার্সের বড় ভাই। কবিতার সঙ্গে বসবাস: গাড়াগঞ্জ হাইস্কুলে পড়ার সময় স্কুল ম্যাগাজিনে কবিতা লেখার মাধ্যমেই কবিতার সঙ্গে টোকনের ওঠাবসা শুরু। স্কুল দেয়ালিকার টোকন ছিল নিয়মিত কবি। তারপর ঝিনাইদহ থেকে প্রকাশিত সাহিত্যের ছোট কাগজে লেখা শুরু করে টোকন। কবিতায় টোকন পাকনা হতে শুরু করে মূলত কলেজ জীবন থেকে। ঝিনাইদহ সরকারি কেশবচন্দ্র কলেজে শহীদুল স্যারের কাছেই টোকন কবিতা, আর্ট, কালচার বিষয়ে ব্যাপক উৎসাহ ও প্রেরণা লাভ করে। তারপর খুলনা আর্ট কলেজে পড়ার সময় শিল্পী এসএস সুলতানের নৈকট্য লাভ, ঢাকার দৈনিকে কবিতা প্রকাশ শুরু হয়। আর ঢাকায় আসার পর তো টোকন রাজধানী থেকে প্রকাশিত প্রায় সকল দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকী এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, রাহশাহী থেকে প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিনের নিয়মিত কবি হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ গুলো হল- কবিতার বই- ১. অন্তরনগর ট্রেন ও অন্যান্য সাউন্ড, ১৯৯৮ ২. দূরসম্পর্কের মেঘ, ১৯৯৯ ৩. আয়ুর সিংহাসন, ২০০০ ৪. কবিতা কুটিরশিল্প, ২০০২ ৫. ঝাঁ ঝাঁ ঝিঁ ঝিঁ, ২০০৩ ৬. নার্স, আমি ঘুমোইনি, ২০০৮ ৭. টোকন ঠাকুরের কবিতা, ২০১০ ৮. ভার্মিলিয়ন রেড, ২০১০ ৯. রাক্ষস @ gmail.com, ২০১০ ১০. তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, ২০১০ ১১. শিহরণসমগ্র, ২০১১ ১২. ঘামসূত্র, ২০১১ ১৩. রোম ওয়াজ নট বিল্ট ইন আ ডে, ২০১২ গদ্য লেখায়ও টোকনের হাত কবিতার মতোই শক্তিশালী। শব্দ নিয়ে খেলতে পারা এই দক্ষ শব্দজুয়ারি'র এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ছোটগল্পের সংকলন তিনটি। সেগুলো হল- ছোটগল্প ১. জ্যোতি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিল, ২০১১ ২. সুঁই ও ব্লেড, ২০১১ ৩. মি. অ. মি. টি এণ্ড মিসেস মেঘের গল্প, ২০১১ টোকন উপন্যাস লিখেছে অনেকগুলো। দৈনিক পত্রিকার ঈদসংখ্যার হিসাবটা আমার জানা নেই। তবে বই আকারে প্রকাশিত উপন্যাসগুলোর একটা তালিকা দেয়া যেতে পারে। টোকন ঠাকুরের প্রকাশিত উপন্যাস দুইটি। উপন্যাস ১.মমি, ২০১২ ২. চরৈবেতি, ২০১২ টোকন ঠাকুর সম্পাদিত চিত্রকলার স্মারকগ্রন্থের সংখ্যা দুইটি। ১. একবার পায় তারে ( অকালপ্রয়াত শিল্পী সনাতন বিশ্বাসের জীবন ও কর্ম), ২০০৪ ২. ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী ( শিল্পী শশীভূষণ পালের জীবন-শিল্পকর্ম ও মহেশ্বরপাশা স্কুল অব আর্ট এর শতবর্ষ বার্ষিকী ১৯০৪-২০০৪), ২০০৫ টোকন ঠাকুর ছোটদের জন্যও প্রচুর লেখেন। টোকনের ছোটদের জন্য প্রকাশিত কবিকার বইগুলো হল- ১. মেঘলা দুপুর ২. ফড়িঙের বোন ৩. সব পাখিরাই পাখি না রঙের মিস্ত্রী: টোকন ঠাকুর আর্ট কলেজের ছাত্র। ওরিয়েন্টাল আর্টে স্নাতকধারী আর স্বেচ্ছায় এমএ ফাইনাল পরীক্ষা বিসর্জন প্রণেতা। ছবি আঁকার দারুন হাত। কর্মজীবনের শুরুতে শাড়ির ডিজাইন করতেন। অনেক লিটল ম্যাগাজিনের লোগো টোকনের হাতের লেখায় করা। বইয়ের প্রচ্ছদও করেছেন অনেকগুলো। কিন্তু কবিতার নেশায় ছবি আঁকাতে মন বসলো না এই রঙ মিস্ত্রী'র। চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাণ ও পরিচালনা: টোকন একজন আধুনিক স্ক্রিপ্ট রাইটার। এখন পর্যন্ত অনেক চিত্রনাট্য লিখেছেন। ফুল-লেন্থ ছবি বানিয়েছেন একটি। নাম 'ব্ল্যাকআউট', ২০১০। ছবিটি এখনো সিনেমা হলে প্রদর্শনের জন্য সেন্সর বোর্ডের অনুমতির অপেক্ষায় আছে। টেলিভিশন নাটকের চিত্রনাট্য লিখেছেন অসংখ্য। টোকন ঠাকুর নির্মিত ও পরিচালিত টেলিভিশন নাটক গুলো হল- ১. পুতুল বউ (রচনা- টোকন ঠাকুর) ২. ভূত্নী (রচনা- ধ্রুব এষ) ৩. টিকটিকি (রচনা- ধ্রুব এষ) ৪. তাহার নামটি যন্ত্রণা ( রচনা-পরিচালনা: টোকন ঠাকুর) এছাড়া বাংলার ষড়ঋতু নিয়ে টোকন ঠাকুর ছয়টি শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেছেন। যেগুলো এখনো এডিটিং টেবিলে আছে। টোকন ঠাকুর রচিত, নির্মিত ও পরিচালিত শর্ট ফিল্ম গুলো হল- ১. তরমুজ (গ্রীস্মকাল) ২. শালিক দিবস (বর্ষাকাল) ৩. শুধু শুধু (শরৎকাল) ৪. ওয়ানস আপোন অ্যা টাইম (হেমন্তকাল) ৫. দ্যা গ্রেট অস্কার (শীতকাল) ৬. স্প্রিং উইদাউট স্ক্রিপ্ট (বসন্তকাল) চলতি বছর সরকারি অনুদানে টোকন ঠাকুর নির্মাণ করতে যাচ্ছেন শহীদুল জহিরের 'কাঁটা' গল্প অবলম্বনে পূর্ণাঙ্গ বাংলা ছায়াছবি 'কাঁটা'। ১৪ বছরে ১৯ চাকরি অতপর বেকার: ১৪ বছরে ১৯ চাকরি করেছেন আর বেকারত্বের স্বাধীনতা নিয়েছেন।টোকন ঠাকুর কাজের সন্ধানে বারবার চাকরি ধরেছেন আর ছেড়েছেন। প্রায় সবগুলোই বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলে। টোকন ঠাকুরের চাকরির কর্মস্থল ছিল দৈনিক মুক্তকণ্ঠ, দৈনিক বাংলার বাণী, দৈনিক সমকাল, দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক নতুন ধারা, ইত্যাদি বাংলাদেশ আর্মি হেডকোয়ার্টার এর সামরিক জাদুঘর 'বিজয় কেতন' এ, মুক্তিযুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সম্মুখ সমরের যুদ্ধ-ইতিহাসের টেক্সট এডিটর হিসেবে, কখনো এনজিও তে, কখনো প্রাইড টেক্সটাইলসএর শাড়ির ডিজাইনার হিসেবে... এবার শুধু ছবি বানাবেন বলেই মনস্থির করেছেন। এখন সরকারি অনুদানে শহীদুল জহিরের 'কাঁটা' নির্মাণ ও পরিচালনা নিয়ে ব্যস্ত আছেন টোকন ঠাকুর। ব্যক্তি জীবনে শিল্প, সাহিত্য, নাটক, মঞ্চনাটক, ফটোগ্রাফার, চিত্রনাট্য রচয়িতা, ছাড়াও টোকন ঠাকুর বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের রচয়িতা। সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৮:৫১
false
rg
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ থেকে সাবধান।। রেজা ঘটক ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বাংলাদেশের একটি প্রাইভেট এয়ারলাইন্স। বাংলাদেশের ডোমেস্টিক এবং ইন্টারন্যাশনাল উভয় রুটেই তাদের বেশ কয়েকটি ফ্লাইট আছে। বিগত ১২ এপ্রিল ২০১৩ নেপালের কাঠমুন্ডু'র ত্রিভূবন বিমানবন্দর থেকে বিকাল পাঁচটা পঞ্চাশ মিনিটে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ-এর একটি বিমান (ফ্লাইট নাম্বর ৪এইচ ৫৯৪) ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবার সিডিউল ছিল। ২৮৬ জন যাত্রীর মধ্যে আমি এবং আমার স্ত্রীও ওই ফ্লাইটে ঢাকায় আসার যাত্রী। ২৮৬ জন যাত্রীর মধ্যে প্রায় শতকরা ৬৫ ভাগ যাত্রী ছিল ট্রানজিট যাত্রী। তারা ঢাকা হয়ে অন্য বিমানে কুয়ালালামপুর যাবেন। বাকী শতকরা ৩৫ ভাগ যাত্রী ঢাকায় নেমে যাবেন। আমরা বিকাল তিনটায় ত্রিভূবন বিমানবন্দরে চেক-ইন করি। সাড়ে চারটায় ইমেগ্রেশান হবার কথা। কিন্তু পাঁচটায়ও ইমেগ্রেশান শুরু হল না। খোঁজ নিয়ে কিছুই জানা গেল না। সোয়া পাঁচটায় ইমেগ্রেশান শেষ করে লাইঞ্জে বসে আছি। ওই সময় জানা গেল বিমান লেট। লোডিং হতে দেরি হবে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আবার জানা গেল কিছুক্ষণের মধ্যে লোডিং শুরু হবে। শেষ পর্যন্ত রাত আটটায় আমরা বিমানে উঠে নিজ নিজ আসনে অনেকটা আতংক নিয়েই বসলাম। পাইলট জানালেন, ঢাকা থেকে আসার সময় দেরি হওয়াতে এই অনাকাঙ্খিত লেট। এজন্য যাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন। আমরা বিমানে বসে আছি। কিন্তু বিমান স্ট্যার্ট নিচ্ছে না! একঘণ্টা পাইলট চেষ্টা করলেন। বিমান স্ট্যার্ট নিল না। আবার পাইলটের অনুরোধ। আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আবার ইঞ্জিন চেক করবেন। সময় লাগবে। যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে সবাইকে আবার লাউঞ্জে ফেরত আনা হল রাত নয়টায়। তারপর তিনঘণ্টা ধরে নেপাল নেভিগেশান বিমানের ইঞ্জিন চেক করল। রাত বারোটায় আমরা আবার আগের চেয়ে কয়েকগুন বেশি আতংক নিয়ে বিমানে উঠে বসলাম। পাইলট জানালেন, ঢাকা বিমানবন্দর মেরামতজনিত কারণে বন্ধ রয়েছে। তাই আমরা চট্টগ্রাম যাব। সেখান থেকে কুয়ালালামপুরের ট্রানজিট যাত্রীরা অন্য বিমানে কুয়ালালামপুর যাবেন। আর ঢাকার যাত্রীরা চট্টগ্রামে হোটেলে রাত্রীযাপন করবেন। পরদিন সকালে মানে ১৩ এপ্রিল ২০১৩ তাদেরকে আরেকটা বিমানে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া হবে। পাইলট আরো জানালেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে আমরা দেড়ঘণ্টায় চট্টগ্রাম পৌঁছাব। এবার ভারী উৎকণ্ঠা নিয়ে বিমান আকাশে উড়লো। ঘরের চাল ফুটো হলে যেমন বৃষ্টির দিনে পানি পড়ে, তেমনি মাথার উপর ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়া শুরু হল। বিমানের স্বাভাবিক শব্দের বদলে একটা অদ্ভুত ভৌতিক শব্দ শুরু করল। আমরা মধ্যরাতের আকাশে হিমালয়ের উপর পাক খাচ্ছি। যে কোনো সময় মৃত্যু অথবা হিমালয়ের কোনো পাহাড়ে আছড়ে পড়ে জীবনযুদ্ধ শেষ!কিছুই বুঝতে পারছি না কি ঘটতে যাচ্ছে। মনে মনে শুধু পাইলটের জন্য দোয়া করতে লাগলাম। আমার স্ত্রী'র মুখের দিকে তাকাতে পারি না। এসবের মধ্যে আরেকটা উৎপাত শুরু হল যাত্রীদের নিয়ে। যখন যার বেল চাপতে ইচ্ছে করছে সে তখন মাথার উপরের বেল চেপে এয়ার হোস্টেজদের কাছে ডাকছেন। হয়তো কিছু জানার জন্যে। হয়তো পানি খাবার জন্যে। হয়তো কোনো অসুবিধার কথা বলার জন্যে। অথবা স্রেফ এয়ার হোস্টেজকে দেখার জন্যে বা স্রেফ মশকরা করার জন্যে। গোটা বিমানে মুহূর্মুহু বেল বেজেই চলছে। মালয়েশিয়ায় যাবার জন্যে যেসকল ট্রানজিট যাত্রী ছিল তাদের প্রায় সবাই অল্প শিক্ষিত এবং শ্রমিক ভিসায় কাজের সন্ধানে যাচ্ছিল। তারাই এই বেল চেপে খুব আনন্দ করছিল। পাইলট মোবাইল ফোন বন্ধ রাখার অনুরোধ করলেও এরা প্রায় সবাই মোবাইলে উচ্চ ভলিউমে গান বাজাচ্ছিল। কী হচ্ছে বা কী হতে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। নাকী বিমান ছিনতাই হল! কিছুই বোঝা গেল না। রাত দুইটার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের আলো নজরে পড়ল। কিছুই জীবন বুঝিবা ফিরে পেলাম। পাইলট সবাইকে আবারো সিটবেল্ট বাঁধার অনুরোধ করলেন। রাত আড়াইটায় আমরা চট্টগ্রাম ল্যান্ড করলাম। পাইলট ঘোষণা দিলেন, ঢাকার যাত্রীরা বিমানে বসে থাকেন। কুয়ালালামপুরের যাত্রীরা আগে নামুন। সেই ঘোষণা অনুয়ায়ী ট্রানজিট যাত্রীরা আগে নেমে গেল। পরে আমরা যারা ঢাকার যাত্রী তারা নামলাম। চট্টগ্রাম বিমানবন্দেরর দোতলার বিভন্ন কক্ষ ঘুরিয়ে আমাদের সকল যাত্রীকে বিনা বাধায় বিনা ইমেগ্রশানে বিমানবন্দরের বাইরের রাস্তায় নিয়ে আসা হল। আমি খুব অবাক হলাম। এটা কীভাবে সম্ভব?মধ্যরাতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে বিনা বাধায় আমরা এতোগুলো যাত্রী কিভাবে বিনা ইমেগ্রেশানে বিমানবন্দরের বাইরে আসতে সক্ষম হলাম!!! আমার মাথা আর কাজ করছিল না। কারণ, ততোক্ষণে একদল যাত্রী তাদের লাগেজ দেওয়ার জন্যে তর্ক শুরু করেছিল। একদল গালাগালি করছিল। একদল খাবার চাচ্ছিল। একদল চিৎকার করছিল। একদল হুদাই তামাশা করছিল। নেপালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ছোট্ট টিম প্রায় মাস খানেক ট্রেনিং করছিল। তাদের কয়েকজনের ফ্যামিলি এবং কয়েকজন আর্মি অফিসার আমাদের সহযাত্রী ছিল। তারাও এই ঘটনায় অত্যন্ত অখুশি ছিল। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে তারা সবাই আলাদা আলাদা গাড়িতে চলে গেলেন। আর আমরা যারা কলুর বলদ আমরা আরো একঘণ্টা বিমানবন্দরের বাইরের রাস্তায় খাঁড়ায়া আছি। রাত চারটায় আমাদের বাসে করে নিয়ে যাওয়া হল স্টেশান রোডের হোটেল গোল্ডেন ইন-এ। সেখানে গিয়ে আবার সেই পুরানা জটলা। কে আগে রুম নেবে! কে কোথায় থাকবে? খাবার কোথায় ইত্যাদি ইত্যাদি!!!ডাল-মুরগি-ভাত গণ খাবার। খেয়ে বিশ্রামের জন্য মাথা এলিয়ে দিতেই মনে হল দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। সকাল সাতটা বেজে গেছে। সবার নাকী নাস্তা খেয়ে এখনই আবার চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যেতে হবে! নাস্তা খেয়ে বসে আছি, এবার বাসের খবর নাই। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের লোকজন লাপাত্তা! সকাল নয়টায় দুটো লোকাল বাস আসল। বিমানের কেউ নেই। বাসের হেলপাররা আমাদের গাইড করে বিমানবন্দরে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে সেনাবাহিনীর অফিসার ও তাদের পরিবারদের পেলাম। এবার ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের লোকজন আসল। আমাদের এবার আবার বিনা চেকিংয়ে ইমিগ্রেশান পার হয়ে বসে থাকার পালা। এবার দেরি কীসের? শোনা গেল ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কিছু কর্মকর্তা লেভেলের লোকজন নাকী হোটেলে ঘুমোচ্ছে!!! এখন আর চিন্তা নাই। দেশের মাটিতে আছি। বাংলা টাকায় অন্তঃত পানি তো কিনতে পারছি। অবস্থা কাঠমুন্ডু'র চেয়ে অনেক ভালো, সেই কারণেই আমি অনেকটা ফুরফুরে। প্রয়োজনে বাসে ঢাকা চলে যাওয়া যাবে। কিন্তু আমার মাথায় একটা প্রশ্নের জবাব কিছুতেই পেলাম না। ২৮৬ জন যাত্রী কীভাবে বিনা বাঁধায় ইমেগ্রশান চেকপোস্ট অতিক্রম করে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে বের হবার সুযোগ পেল? যাত্রীদের সবাই কী স্বচ্ছ ছিল!!! এভাবে মধ্যরাতের নষ্ট বিমানে কতো মানুষ বাংলাদেশে বিনা বাঁধায় প্রবেশ করতে পারে তা ভেবে আতকে উঠলাম! আমাদের সিভিল এভিয়েশানের কাজটা তাহলে কী? কেউ যদি এভাবে বাংলাদেশে বিনা বাঁধায় ঢুকে গিয়ে হারিয়ে যায়? ফিরতি বিমানের তোয়াক্কা না করে? কোনো দাগী সন্ত্রাসী যদি এভাবে বিনা বাঁধায় বাংলাদেশে ঢুকে যায়? না, আমি আর চিন্তা করতে পারলাম না। এটাই হচ্ছে বিমান পথে। সিভিল এভিয়েশান এসবই হজম করছে। দেখার যেনো কেউ নেই। সকাল সাড়ে দশটায় আমরা আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে আকাশে উঠলাম। এবার যার যেখানে খুশি বসার নিয়ম জারী হল। তা নিয়ে আরেক দফা হট্টগোল। ভাগ্যিস কুয়ালালামপুরের ট্রানজিট যাত্রীরা ছিল না। তাই হট্টগোল সবাই যার যার মত বসার পরেই মিটে গেল। বেলা সাড়ে এগারোটায় আমরা ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁলালাম। পেছনে রেখে আসলাম হাজারো প্রশ্ন আর জীবন-মৃত্যুর দোলনায় চড়া বাইশটা ঘণ্টা!! সবাইকে আবারো মনে করিয়ে দিতে চাই, কাঠমুন্ডু থেকে ঢাকায় আকাশ পথে মাত্র এক ঘণ্টা দশ মিনিটের পথ। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে আমাদের লাগলো দীর্ঘ বাইশ ঘণ্টা। আমরা জানি না কীভাবে এসব প্রাইভেট বিমান বাংলাদেশে লাইসেন্স পায়। চট্টগ্রামের হোটেল গোল্ডেন ইন থেকে জানা গেল, এক সপ্তাহ আগে একই বিমান কলকাতায় বারো ঘণ্টা নষ্ট হয়ে পড়ে ছিল। তখনও যাত্রীদের এমন দুর্দশা হয়েছিল। বাংলাদেশ বিমানের ফেলে দেওয়া ডিসি-১০ এয়ারক্রাফট কম টাকায় কিনে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এই ব্যবসা শুরু করেছে। বারবার যাত্রীদের হয়রানি এবং নষ্ট বিমান আকাশে ওড়ানোর কারণে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। সেই দুর্ঘটনা ঘটার আগেই কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করলেই হয়তো কেবল সেই দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানী রোধ করা সম্ভব হবে। আর রাতের আঁধারে বিনা বাধায় ইমেগ্রেশান পেরিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ঢুকে পরার এই রেওয়াজ বন্ধ না হলে বড় ধরনের সমস্যায় স্বয়ং বাংলাদেশকেই হজম করতে হবে। আশা করি, বিমান কর্তৃপক্ষ, সিভিল এভিয়েশান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিষয়গুলো ভেবে দেখবেন। তাছাড়া কাঠমুন্ডু থেকে ইদানিং বেশ মাদক পাচার হচ্ছে। কাঠমুন্ডু এয়ারপোর্টে বেশ কড়াকড়ি চেক-আপ। কিন্তু বলা তো যায় না, রাঘব বোয়ালরা সব সময় ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায়, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দুনিয়ায়। হায়, কোথায় কহিব এই অনাচার, এই সব অনাকাঙ্খিত ভয়!!!
false
rg
ছোটগল্প__ বেজিকামাল !!! এক.ছোটবেলায় বেজি পালতাম। বেজি পালার কারণে স্কুলের আর পাড়ার দুষ্টু ছোকরারা এক সময় আমার নামের সঙ্গে বেজি উপাধি জুড়ে দিল। কামালের লগে বেজি যুক্ত করে বানাল বেজিকামাল। এই নিয়ে অনেকের সাথেই তখন ছোটখাটো মারামারি বা হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটল। সেই ঘটনা বাবার কানে পৌঁছালে, বাড়িতে বাবা আমার জন্য হঠাৎ রেড এলার্ট জারি করলেন। বেজি নাকি ছেড়ে দিতে হবে। নইলে আমার ভাত বন্ধ। কিন্তু মুশকিল হল, এত কষ্ঠে পোষা বেজি কেমনে ছাড়ি! দু'একদিন নানান কিসিমের তালবাহানা ফন্দিফিকির ছলচাতুরি করলাম। বেজি আর ছাড়লাম না। পোলাপাইনেও আমারে সুযোগ পাইলেই বেজিকামাইল্যা ডাইকা মস্করা করা ছাড়ে না। কিন্তু এভাবে লুকিয়ে পালিয়ে কোনো লাভ হল না। একদিন সত্যি সত্যিই বাবার নির্দেশে আমার সেই পোষা বেজি ছেড়ে দিতে হল। সেই কথায় পরে আসছি। তার আগে শোনো, কিভাবে আমার এই বেজি পালা শুরু হল। ছোটবেলায় গ্রামে রোজ অহরহ বেজি দেখতাম। মুরব্বিরা বলতো, বেজি মানুষের জন্য উপকারী প্রাণী। কারণ বেজি সাপ তাড়াতে ভূমিকা রাখে। বেজির সাথে সাপের সাপে-নেউলে সম্পর্কের কথা আমরা বইয়ের পাতায় পড়তাম, কিন্তু কখনো চেখে দেখিনি তখনো। আমরা পথে ঘাটে কোথাও বেজি দেখলেই তাই একটু অতিরিক্ত সতর্ক হতাম এই ভেবে যে, হয়তো আশেপাশে কোথাও বিষধর কোনো সাপ আছে। বেজি কোনদিকে যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে, কত দ্রুত যাচ্ছে বা কতোটা ধীর গতিতে যাচ্ছে, আমাদের উপস্থিতি টের পেয়েও তার দিক পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ আছে কিনা ইত্যাদি কিছু বিষয় অনেকটা চট করেই আমরা অনুমান করে সাপের অস্তিত্ব সম্পর্কে কাল্পনিক একটা ধারণা করতাম। আর তখন কি করনীয় তাও অনেকটি তাৎক্ষণিক প্রস্তুতিতেই নিতাম আমরা। কিন্তু বেজি'র লক্ষ্যকে ঠিকঠাক না বোঝা পর্যন্ত কৌতুহলী আমরা কেউ কেউ দূরে কোথাও ওৎ পেতেও থাকতাম। দেখতাম, বেজি কি করে?প্রায় সময়ই আমরা বেজির কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে সাপ দেখা থেকে বঞ্চিত হতাম বটে। কারণ ওটা থাকতো বেজির নিয়মিত চলাচল বা ডেইলি ওয়াকিং। শিকার করতে যাওয়া, বা বেড়াতে যাওয়া, বা বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া বা একটু নিজের টেরিটরিতে ঘোরাফেরা করা এমন সব নিয়মিত ব্যাপার স্যাপার থাকতো বেজির। কখনো একা একা, কখনো বা প্রেয়সিকে নিয়ে, কখনোবা পুরো পরিবার বউ বাচ্চাকাচ্চাসহ আমরা বেজি দেখার সুযোগ পেতাম। তাই ছোটবেলা থেকেই বেজি সম্পর্কে আমার একটা আলাদা আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। প্রাইমারিতে যেখানে আমরা ছিলাম সবচেয়ে সিনিয়র; দুষ্টামি করা হোক, খেলাধুলা হোক, বলেশ্বরে সাঁতার কেঁটে এপার-ওপার যাওয়া হোক, বিশ্বাসদের জঙ্গলে গিয়ে গাছে উঠে বসে থাকা হোক, কিংম্বা জোট বেধে কোথাও কোনো উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্যেই হোক, রোজ আমরা চলতে ফিরতে কোথাও না কোথাও বেজি দেখতাম। গ্রামের আমাদের পাড়ায় যেখানে প্রায় সবকিছুতেই নেতৃত্ব দিতাম আমরা। সে বেজি দেখা হোক আর সাপের বিষ নামানো দেখাই হোক। কিংম্বা রাঙা নানার লাঠি খেলা দেখাই হোক। সবখানে আমাদের মত ছোকরাদের তখন একচেটিয়া রাজত্ব। কিন্তু হুট করে হাইস্কুলে এসেই আমরা হয়ে গেলাম গোটা স্কুলের সবচেয়ে জুনিয়র ছোকরাদের দল। নয়া রাজ্যে অনেকটা সেকেন্ড ক্লাস নাগরিকের মত তখন আমাদের দশা। বিশেষ করে স্কুল টাইমে। কারণ সেভেন, এইট, নাইন-টেনের বড়রা আমাদের তেমন পাত্তাই দিত না। কিন্তু দুষ্টামিতে যারা একটু অলরাউন্ডার গোছের, মাঝে মধ্যে তাদের দু'একজনকে একটু আলাদা খাতির করত বটে। সেই সূত্রেই ক্লাস নাইনের এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে আমার ঘটনাচক্রে খুব খাতির হল। জুবেরী ভাই। পুরো নাম জুবেরী আলম। জুবেরী ভাই'র ছোটভাই ফারুক আমাদের সঙ্গে পড়ত। আর জুবেরী ভাই'র বড় বোন জোছনা আপা পড়তেন ক্লাস টেনে। জুবেরী ভাই খুব ভালো ফুটবল খেলতেন। গোলরক্ষক হিসেবে খুব সুনাম ছিল তার। সেই জুবেরী ভাই বেজি পালতেন। তো ফারুকের কাছে জুবেরী ভাই'র বেজি পালার গল্প শোনার পর থেকেই সেই পোষা বেজি দেখার খুব ইচ্ছে হল আমাদের। এমনিতে স্কুল থেকে ফারুকদের বাড়ি প্রায় দুই-আড়াই মাইল দূরে। কুমারখালী গ্রামে। পথে হরিপাগলা-মালিবাড়ির কাছে ফারুকদের একটা বিশাল বাগানবাড়ি ছিল। সেই বাগানবাড়িতেই জুবেরী ভাইয়ের নেতৃত্বে ফারুকরা পিঠেপিঠি চারভাই থাকত আর পড়াশুনা করত। আর কুমারখালী মেইন বাড়িতে ফারুকদের পরিবারের অন্যরা থাকত। ফারুকদের সেই বিশাল বাগানবাড়িটা স্কুল থেকে মাত্র মাইল খানেকের পথ। ওই বাড়িতে কখনো রান্নাবান্না হতো না। সবসময় রান্না করা খাবার আসত ফারুকদের মেইন বাড়ি থেকে। আমাদের চেয়ে দুই-চার বছরের বড় প্রিন্স সেই খাবার নিয়ে আসত। প্রিন্স ফারুকদের বাড়িতে কাজ করত। ওদের পারমানেন্ট কাজের ছেলে সে। প্রিন্সের বাবাও ফারুকদের বাড়িতে কাজ করতেন তখন। কিন্তু জোছনা আপা বাড়ি থেকেই স্কুলে আসতেন। ফারুকদের আস্তানা পর্যন্ত এসে তারপর ওদের সঙ্গেই বাকি পথটুকু হেঁটেহেঁটে স্কুলে আসতেন। আবার স্কুল ছুটির পর ওই বাগানবাড়িতে পৌঁছে খাওয়া দাওয়ার পর প্রিন্সের সঙ্গে কুমারখালী মেইন বাড়িতে যেতেন জোছনা আপা।ফারুকদের সেই বাগানবাড়িটায় ছোট্ট একটা দোচালা ছনের ঘর ছিল। উত্তর মুখো ঘরের ভেতরে দুইটা কক্ষ। একটা ছিল জুবেরী ভাইয়ের অন্যটা ফারুকদের তিনজনের। বাড়ির দক্ষিণ পাশে একটা ঝুল বারান্দাও ছিল। সেই বারান্দার সামনেই বেশ বড় একটা পুকুর। পুকুরের চারপাশেই নানান জাতের গাছগাছালি। আমরা দুষ্টামি করে নাম দিয়েছিলাম ফারুকদের মোকাম। এক সময় জুবেরী ভাইয়ের পোষা বেজির সূত্রেই আমরা নিয়মিত ওই মোকামে যাওয়া আসা শুরু করলাম। তখন আমাদের স্কুলের বড়দের মধ্যে যারা প্রেম-পিড়িতি করত, বা জুবেরী ভাইয়ের যারা বন্ধুবান্ধব, বা জুবেরী ভাইয়ের আস্কারা পাওয়া অনেকেই তখন ফারুকদের সেই মোকামে প্রায়ই স্কুল কামাই দিয়ে ঘুরঘুর করত। ওই সময় আমাদের মত ছোকরাদের জন্য ফারুকদের মোকামে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। এমনিতে মাঝে মাঝে সকালে স্কুলে যাবার আগে ঘুরপথে ফারুকদের মোকামে আমরা নানান অছিলায় উকিঝুঁকি দিতাম। আর বড়দের নানান কাণ্ডকীর্তি দেখার সৌভাগ্য হতো। পরে সেই ঘটনা রাষ্ট্র হলে ফারুকদের মোকামে সেই জুটির চলাফেরা অনেকটাই কমে যেত। এছাড়া বাগানবাড়ির ভেতরের আসল রহস্য পুরোপুরি ফারুক কখনোই আমাদের কাছে স্বীকার করত না। তাই ওই বাগানবাড়ির সকল গোপন রহস্য উন্মোচন করাও আমাদের কাছে তখন নেশার মতই হয়ে গিয়েছিল। ফারুকের কাছে শুধু শুনতাম জুবেরী ভাই বেজি পালেন। কিন্তু আমরা সেই বেজি দেখার নাম করে গেলেও প্রায়ই জুবেরী ভাইয়ের কোপানালে পড়তাম। জুবেরী ভাইয়ের পোষা বেজি আর দেখা হতো না। বাড়ির দরজা থেকেই বিদায় নিতে হতো।একসময় ব্যাপারটা আমাদের কাছে অনেকটা জিদের মত হয়ে গেল। যে করেই হোক জুবেরী ভাইয়ের পোষা বেজি দেখা চাই। নইলে গুজব রটানোর জন্য ফারুককে আমরা দলবল মিলে আচ্ছামত ধোলাই দেব। আমাদের ঘোষণা শুনে ফারুক একটু ভয় পেল। স্কুল ছুটির পর ফারুক বাড়ির দিকে দক্ষিণমুখো না হেঁটে উত্তরমুখো ক্লাস টেনের দিকে হাঁটা ধরল। জুবেরী ভাই আর জোছনা আপার সাথেই সেদিন ফারুক বাড়ি গেল। পরদিন স্কুলে টিফিনের সময় হঠাৎ জুবেরী ভাই আমাকে ডাকলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা নাকি ফারুককে মারার হুমকি দিয়েছ? ঘটনা কি? ক্যাচাল কি নিয়া? জুবেরী ভাইয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্যে চট করেই বললাম, কই নাতো, ফারুককে কেন মারব? আমরা আপনার পোষা বেজি দেখতে চাইছিলাম আরকি। ফারুক না করেছে... তাই...। জুবেরী ভাই হেসে বললেন, ও তাই বুঝি? মারামারির ক্যাচাল না থাকলে একদিন আসো, আমার পোষা বেজি দেখে যাও। কিন্তু আমাকে কথা দিতে হবে, তোমরা ফারুককে কেউ কিছু বলবে না। বললাম, ঠিক আছে। ফারুকের কাছে জানাব কখন যাবো আমরা। জবাবে জুবেরী ভাই বললেন, এই শুক্রবারেই আসো, যে যে দেখতে চাও, আসো। আর ফারুককে তোমরা মারলে কিন্তু তোমাদেরও খবর আছে, বুঝলা?পরের শুক্রবার আমরা আগ্রহী একদল ফারুকদের সেই মোকামে গেলাম। আমাদের ফারুকের পড়ার ঘরে বসিয়ে রেখে জুবেরী ভাই বললেন, একজন একজন করে বারান্দায় আসবা। যার দেখা শেষ হবে, সে ফিরে এসে আরেকজনকে পাঠাবা। আমরা একজন একজন করে ফারুকের পড়ার ঘর থেকে পুকুরের দিকের ঝুল বারান্দায় উকি দিলাম। সেখানে জুবেরী ভাই শিষ বাজালেই তার পোষা বেজি ভো দৌড়ে পুকুরের পাশের ঝোপ থেকে এসে হাজির হয়। কিছুক্ষণ ঘুরঘুর করে আবার ঝোপের দিকে চলে যায়। এভাবে পালা করে আমরা জুবেরী ভাই'র পোষা বেজি দেখলাম। আর মনে মনে জুবেরী ভাইকে অনেক ধন্যবাদ দিলাম। আমরা যারা সেদিন বেজি দেখতে গিয়েছিলাম, সবাই জুবেরী ভাই'র অমন ভেলকি দেখে একেবারে সাক্ষাৎ টাসকি খেলাম। মনে মনে ভাবলাম, তাহলে বেজিকে এভাবে পোষ মানানো সাম্ভব? মূলত সেদিন থেকেই বেজি পোষার একটা খায়েস জাগল মনে। যে করেই হোক বেজি পালতে হবে। কিন্তু সমস্যা হল ফারুকদের বাগানবাড়ির মত অমন আলাদা কোনো মোকাম আমাদের নেই। বাড়িতে পুষতে গেলে বাবা'র হাতে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনাও ব্যাপক। তুবও মনের সেই ইচ্ছাকে একদিন সাহস করেই বাস্তবায়নে লেগে গেলাম। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বাগানের গর্তে একটা বেজি পরিবার ছিল। একবার এক হাটের দিন বিকালে বাড়ির বয়স্ক পুরুষদের সবাই যখন হাটে, তখন আমরা ছোকরারা মিলে সেই বেজি পরিবারের এক পিচ্চিকে দীর্ঘ দুই-আড়াই ঘণ্টা তাড়িয়ে তাড়িয়ে অবশেষে পাকরাও করতে সক্ষম হলাম। মাঝারি সাইজের ইঁদুরের চেয়ে সেই বেজিটা ছিল একটু বড়। লেজসহ লম্বায় চার-পাঁচ ইঞ্চি হবে। আমাদের দলের ছোরাফ ছিল মাছ ধরার সময় কুঁইচা আর ঢোরা সাপ ধরায় দারুণ ওস্তাদ। সেই ছোরাফ-ই পাটের বস্তার সাহায্যে খপ করে সেই বেজি'র ছাও ধরে ফেলল। তার আগে হাটে কবুতর বিক্রি করার জন্য যে ছোট্ট বাঁশের খাঁচা ব্যবহার করতাম, সেই খাঁচার চারপাশে কৈয়া জাল পেচিয়ে বেজি'র জন্য আমরা খাঁচা রেডি করলাম। তারপর বেজি'র ছাওকে কবুতরের সেই খাঁচায় বন্দি করা হল। সূর্য ডোবা পর্যন্ত আমরা সেই বেজি নিয়ে সেদিন মহানন্দে মেতেছিলাম। বাজার থেকে বাবা ফেরার আগেই আমরা সেই খাঁচা বন্দি বেজিকে একটা বড় বেতের ধামা দিয়ে ঢেকে রাখলাম। মা-চাচিরা কেউ কেউ হুশিয়ারী দিলেন, বেজি'র ছাও ধামা চাপায় মারা যাবে। যদি বাতাস পাস না হয় তাহলে ওটা মরবে! তো টুনি দিয়ে ছোট্ট একটা গর্ত করা হল ধামার বাহির থেকে ভেতর পর্যন্ত। যাতে খাঁচার বেজি টুনির ফাঁপা নল দিয়ে বাতাস পায়। কেউ কেউ বলল, কৈয়া জাল কেটে বেজি খাঁচা থেকে বের হবে। আর ওই টুনি ঠেলে রাতে ঠিকই পালিয়ে যাবে। সমস্যা হল, বেজিকে ওভাবে ধামার নিচে আটকে রেখে আমরা কেউ আর সেই রাতে ভালোমত ঘুমোতে পারলাম না। আমাদের কাচারি ঘরের খাটের নিচেই বেজির ধামা রেখেছিলাম। কাচারি ঘরেই তখন আমার পড়ার টেবিল। আর রাতে শোবার খাটে আমার ছোটভাই জামাল আমার ঘুমানোর সময়ের পার্টনার। কখনো কখনো আমার চাচাতো ভাইয়েরা কুদ্দুচ, কালাম, নাসির, আলাম, রিপন, আজগরও আমার সাথে ঘুমায়। সেই রাতে আমরা চার-পাঁচ ভাই মিলে সেই বেজির ছাও পাহারা দিলাম। সকালে খেয়াল করলাম, বেজির ঘটনা জানাজানির পরেও বাবা আমাদের তেমন কিছু বললেন না। বরং বেজিকে কিভাবে খাবার দিতে হবে, সে বিষয়ে মাকে কিছু বাড়তি পরামর্শ দিলেন, যাতে মা সেই পরামর্শগুলো আমাদের শোনাতে পারে। সকালে বেজির খাঁচার উপর থেকে ধামা সরিয়ে দেখা গেল- খাঁচার এককোনে বেজির ছাওটা চুপচাপ মরার মত শুয়ে আছে। কবুতরের খাবার আর পানি খাওয়ার জন্য খাঁচার ভেতরে এককোনে ছোট্ট একটা টিনের কৌটা আর একটা নারকোলের মালা বাধা ছিল। সেই কৌটায় পানি দেওয়ার সময় বেজিটা একটু মিটমিট করে আমাদের দেখল। কৌটায় পানি দেবার পর সে উঠে চুকচুক করে পানি খেল। আর খাঁচার ফাঁক দিয়ে বাইরে আসার জন্য একটু একটু দাপাদাপি করল। তারপর নারকেলের মালায় রান্না করা মাছ আর পান্তা ভাত দিলাম। মাছ মুখে নিয়ে আবার ফেলে দিল। পান্তা ভাত নাক দিয়ে একটু শুঁকে আর ধরল না। কেউ কেউ বলল, রান্না করা মাছ ও খাবে না। ওকে দিতে হবে মরা বা তাজা মাছ। আমাদের উঠানে কলাগাছের উপর বিশেষ কায়দায় একটা নৌকায় তখন পুকুর থেকে ধরা বিভিন্ন ধরনের মাছ জিয়ানো থাকত। নৌকা ভরতি পানির মধ্যে খেজুরের পাতা, নিমের ডাল, আমের ডাল আর কলার পাতার ভেতর সেই মাছ সাঁতার কাটত নতুবা চুপচাপ লুকিয়ে থাকত। যেগুলো আগে মরত সেহুলো আগে রান্না করার নিয়ম ছিল। সেই নৌকা থেকে একটা টাকি মাছ ধরে অর্ধমৃত করে কবুতরের খাঁচার নারকেলের মালায় দেওয়া হল। বেজি সেই মাছ দেখা মাত্রই ছো মেরেই খেয়ে ফেলল। এভাবে দুই তিনটা মাছ খাওয়ানোর পর, বড়দের কেউ কেউ নিষেধ করলো- আর মাছ না দিতে। কারণ বেজির ছাওয়ের পেট নাকি ভারী ছোট। দুপুর নাগাদ আমাদের মাথায় বুদ্ধি আসল, কৈয়া জালের উপর আর ভরসা করা ঠিক হবে না। যে কোনো সময় বেজি জাল কেটে পালিয়ে যেতে পারে। তখন উপায়? কারণ আমাদের দাদী ঠাট্টা কইরা তখন কইছিল, খাঁচা রাইখা তোরা সরলিই বেজি জাল কাইটা পালাবে, আরনলি বেজির বাপ আইসা ওরে উদ্ধার করে নেবেনে। সাবধান!!! যারা বেজির ছাও ধরছো, সগোলরি কিন্তু ওই বুড়া বেজি কামড়াবে এখন!!! আমাদের মনে তখন একদিকে বুড়া বেজির কামড় খাওয়ার ভয়। অন্যদিকে ছাও বেজির পালিয়ে যাবার আশংকা। আমাদের মধ্যে কেউ একজন বাজারে গিয়ে গুনা নিয়ে আসল। দুপুরের পর গোটা বিকাল বসে বসে আমরা কবুতরের খাঁচার চারপাশ গুনা দিয়ে মুড়িয়ে দিলাম। বেজির ছাও আর পালাতে পারল না। আর দাদীর কথা মত বুড়া বেজিও আমাদের কিন্তু কামড়াতে আসল না। উল্টো আমরা খেয়াল করলাম, পুরো বেজি তার পরিবার নিয়েই বাগান থেকে উধাউ। সারা গ্রামে আমাদের সেই বেজি ধরার কাহিনী মুহূর্তে কিভাবে যেনো রাষ্ট্র হয়ে গেল। পরদিন দশগ্রাম থেকে আমাদের বন্ধুদের সবাই বেজি দেখতে আসল। কি কি খাবার দেওয়া উচিত সেই বিষয়ে পরামর্শ দিল কেউ কেউ। কেউ জানতে চাইল, বেজি দিয়ে কি করব? বললাম, বেজি পোষ মানাবো। কেউ কেউ ছোরাফকে উৎসাহিত করল, ধরা সূত্রে বেজির মালিক যেহেতু ছোরাফ। তাই ছোরাফ বেজি নিয়ে গেলে আমার পেস্টিজের কিছুটা হাম্পার হয়। আবার আমার মাস্তানির উপরও কিছুটা খবরদারি করা যায়। কোনো রহস্যময় কারণে ছোরাফ কিন্তু বেজি ছিনিয়ে নিতে আর উৎসাহ পেল না। কিন্তু রোজ বেজিটাকে দেখার জন্য ছোরাফ তখন সকাল বিকাল আমাদের বাড়িতে প্রায়ই ঘুরঘুর করত। দুই-আড়াই সপ্তাহ এভাবে কবুতরের খাঁচায় বন্দি থাকল সেই বেজির ছাও। ওই সময়ের মধ্যে বেজিকে এক ধরনের সিগন্যাল দিয়ে দিয়ে একটা সাংকেতিক ভাষা বোঝানোর চেষ্টা করলাম আমরা। অনেক সময় আমরা নারকেলের মালায় মাছ না দিয়ে খাঁচার অন্য পাশ দিয়ে হাতে হাতেই দিতাম। আর এভাবে বেজিটা এক সময় হাত থেকে খাবার খাওয়ায় অভ্যস্থ হয়ে উঠল। একদিন সকাল বেলায় আমরা প্রস্তুতি নিলাম বেজিকে খাঁচার বাইরে বের করব। কিন্তু যাতে ছুটে পালাতে না পারে সেজন্য উঠানের ঠিক মাঝখানে চারপাশে ছোকরা সৈন্যদের প্রস্তুত রেখে বেজিকে খাঁচা থেকে ছাড়া হল। আমরা হাতে মাছ নিয়ে যেদিকে মাছ ধরি, বেজি দৌঁড়ে সেদিকে আসে। আমরা হাঁটলে বেজি আমাদের পিছু পিছু হাঁটে। রশির মাথায় কাপড়ের সঙ্গে মাছ বেধে আমরা উঠানে বসে ঘুরাতাম, আর বেজিটা সেই মাছকে অনুসরণ করে দৌঁড়াত। আমরা যেদিকে ঘুরাতাম বেজি সেদিকে দৌঁড়াত। একসময় মাছ আলগা করে ঘুরালেই বেজি সহজেই মাছ ধরতে পারত। এভাবে নানান উপায়ে কঠোর ট্রেনিং দিয়ে মাস দুয়েকের মধ্যেই সেই বেজির ছাওকে আমরা পুরপুরি পোষ মানিয়ে ফেললাম। আমরা যখন মাঠে খেলতে যেতাম তখন বেজিকে সেই খাঁচায় বন্দি করে রেখে যেতে হতো। নইলে বেজি আমাদের পেছনে পেছনে মাঠে গিয়ে হাজির হতো। আর স্কুলে যাবার সময়ও ওকে খাঁচায় আটকে যেতাম। ................................চলবে ঢাকা২ বৈশাখ ১৪২২
false
mk
জুনায়দে বাবু নগরী যা যা বললেন___ হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী ২১ মে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে দোষ স্বীকার করে বলেছেন, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত মতিঝিলে অবস্থান নিতে হেফাজতের নেতাদের একটি অংশের পরিকল্পনা ছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কয়েক নেতার পরামর্শে এমন পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। মতিঝিলে টানা হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিতে সব ধরনের আর্থিক সুবিধা দিয়েছে ১৮ দলীয় জোট। ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব দেয়া হয় হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের। জানা গেছে, ১৮ দলীয় জোটের ৪ মে মতিঝিলের ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম, হেফাজতের দিনভর তা-ব, হেফাজতে ইসলামের পাশে দাঁড়াতে দলীয় নেতা-কর্মী ও ঢাকাবাসীদের খালেদা জিয়ার আহ্বান একই সূত্রে গাঁথা। বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের বারবার সরকার বিরোধী আন্দোলন ব্যর্থতা, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত নেতৃত্বশুন্য ও বিধ্বস্ত। আর বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছে, দলকে গ্রাস করে ফেলেছে অবিশ্বাসের কালো ছায়া। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব-অবিশ্বাস, ফারাক। খালেদা জিয়া কোনো নেতাকে বিশ্বাস করতে পারেন না, এমন অবস্থা বিএনপির। আর ১৮ দলীয় জোট তো এখন নামেই। বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া বাকি দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটি করার মতও কর্মী নেই। এমন অবস্থায় হেফাজতের কাঁধে ভর করে সরকার পতনের স্বপ্ন দেখেছিলেন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া! তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হল হেফাজতের পাশে দাঁড়াতে খালেদার নির্দেশকে গ্রহণ করেনি ঢাকাবাসী। এমনকি বিএনপির নেতাকর্মীরাও প্রত্যাখান করেছে খালেদা জিয়ার এ নির্দেশ। এর ফলে রাতের আধারে যৌথবাহিনীর অভিযানের মুখে শিয়ালের মতো লেজগুটিয়ে পালাতে হয়েছে হেফাজতকে। বিএনপি-জামায়াতের এ ষড়যন্ত্রের খবরে সরকার তৎপর হয়ে নড়েচড়ে বসে। দ্রুত গতিতে সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন রাত ১০টার মধ্যে হেফাজতকে রাজধানী ছাড়তে। নইলে সরকার বাধ্য হবে কঠোর ব্যবস্থা নিতে। জবাবে হেফাজত নেতারা পাল্টা হুমকি দেন সৈয়দ আশরাফকে। পালানোর রাস্তা খুঁজতে বলা হয় আওয়ামী লীগকে। পরিস্থিতি অনুধাবন করে সরকার কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রাষ্ট্রের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গভীর রাতে ১০ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথবাহিনীর অভিযান চালানোর নির্দেশ আসে উচ্চ মহল থেকে। অভিযানে ভোর রাতেই খালি হয়ে যায় শাপলা চত্বর। গ্রেফতার হন হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীসহ দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। বাকিরা আতœগোপনে চলে যান।হেফাজত মহাসচিবের স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যহেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী ২১ মে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে দোষ স্বীকার করে বলেছেন, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত মতিঝিলে অবস্থান নিতে হেফাজতের নেতাদের একটি অংশের পরিকল্পনা ছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কয়েক নেতার পরামর্শে এমন পরিকল্পনা করেছিলেন। মতিঝিলে টানা হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিতে সব ধরনের আর্থিক সুবিধা দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব দেয়া হয় হেফাজত শীর্ষ নেতাদের। মতিঝিল এলাকায় এসআই শাহজাহান হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছেন তিনি। জুনায়েদ বাবুনগরীকে দুই দফায় ১৩ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে নেয়ার পর তাঁকে স্বেচ্ছায় জবানবন্দী দেয়ার জন্য ৩ ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর হাকিম হারুন অর রশিদের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় বাবুনগরীর জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দী গ্রহণ শেষে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। গত ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির তা-বের সঙ্গে কারা কারা জড়িত জবানবন্দীতে তাদের নাম বলেছেন বাবুনগরী। নাশকতার ছক কারা করেছিলেন এবং কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সে সব পরিকল্পনার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তিনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক শেখ মফিজুর রহমান তাঁকে দুই দফায় ১৩ দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকার সিএমএম আদালতে এনে স্বীকারোক্তি রেকর্ড করার আবেদন করেন।ঢাকা অবরোধের দিন সহিংসতার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় জবানবন্দী দেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। মতিঝিল এলাকার আলিকো বিল্ডিংয়ের পাশের বহুতল কার পার্কিং ভবনের সামনে কর্তব্যরত পুলিশের এসআই শাহজাহানের মাথায় ইট, লোহার রড, চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়। তবে কারা ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে তাদের নাম জানাতে পারেননি তিনি। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার আগে বাবুনগরীকে চিন্তা ভাবনা করার জন্য তিন ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। জবানবন্দীতে তিনি অবরোধের দিন সহিংস ঘটনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে।১৩ দফা দাবি আদায়ের জন্য হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা গত ৫ মে ঢাকা অবরোধ শেষে মতিঝিলে অবস্থান নিতে থাকেন। এ সময় তারা মতিঝিল ইত্তেফাক মোড় থেকে দৈনিক বাংলার মোড় ও ফকিরাপুল এলাকায় জঙ্গী কায়দায় বাঁশের লাঠি, কাঠের লাঠি, লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্রসহ ইট ও বোমা নিক্ষেপ করে যান চলাচলে বাধা ও বোমা ফাটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন। বিভিন্ন ভবন ও গাড়ি ভাঙচুর এবং ভবন, গাড়ি ও ফুটপাথের বিভিন্ন দোকানে অগ্নিসংযোগ করে তারা। এক পর্যায়ে তাঁরা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন। তারপর বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টি অফিস, হাউজ-বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশন ও তৎসংলগ্ন ফুটপাতের দোকানপাটসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে। তাদের সহিংস তা-ব ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ঢাকাবাসীসহ পুরো দেশ। রাজধানী ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল ও সংলগ্ন বঙ্গভবন ও সচিবালয়কে আশঙ্কামুক্ত করতে রাতেই দশ সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের অবস্থানকারীদের বিতাড়িত করে। পরদিন ৬ মে রাত ৮টার দিকে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ গ্রেফতার করে। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ‘হুজুরকে (আল্লামা আহমদ শফী) ভুল বুঝিয়ে এই সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আরেক পক্ষ; যারা মূলত ১৮ দলীয় জোটের অনুসারী। মতিঝিলের সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ এক সময় আর হেফাজতের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। পরিণামে যা ঘটার তাই ঘটেছে। সমাবেশে যা ঘটেছে তার সবকিছু আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়নি।’ বাবুনগরী তাদের বলেছেন, ১৮ দলীয় জোটের এক নেতা (যিনি হেফাজতে ইসলামেরও নেতা।) অপর গ্র“পের এক নেতাকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, হুজুরকে (শফী) ভুল বুঝিয়েছেন। ওই নেতাকে অভিযুক্ত করে বাবুনগরী দাবি করেছেন, তাঁর কারণেই সব পরিস্থিতি এলোমেলো হয়ে যায়। রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বসে পড়েন হেফাজত নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সমাবেশের দিন হেফাজত নেতারা কোন কোন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, মোবাইল ফোনে কথা বলেছে সে তথ্য ও প্রমাণ গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে। মাওলানা বাবুনগরীর দেয়া তথ্য ও গোয়েন্দাদের কাছে থাকা তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। বাবুনগরীর সমাবেশ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বলেছেন, আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বড় হুজুর চোখে ভাল দেখতে পান না। এজন্য তিনি পত্রিকা পড়েন না এবং টেলিভিশনও দেখেন না। হেফাজতের একটি অংশ ভুল বুঝিয়েছে বড় হুজুরকে। এজন্য তিনি ইচ্ছে থাকার পরও সমাবেশে যেতে পারেননি। ক্ষমতায় গিয়ে মন্ত্রী হওয়ার জন্য ক্ষমতার লোভে তাঁরা এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। অবরোধ-কর্মসূচির ঘটনায় তাঁর কিছুই করার ছিল না বলে জানান। তিনি রাজনীতিবিদ অভিহিত কয়েক হেফাজত নেতার তৈরি করা ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন। হেফাজতের নামে অগ্নি-সংযোগ, ভাঙচুর, ধ্বংসযজ্ঞ ও সহিংস কর্মকা- করেছে জামায়াত-শিবির। বাবুনগরী জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানিয়েছেন, মতিঝিলে তাদের (হেফাজতের) অবস্থানের কোনো কর্মসূচি ছিল না। তবে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কিছু করতে পারেননি তাঁরা। বাবুনগরী জানান, পল্টন ও বায়তুল মোকাররমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হেফাজতকর্মীরা ছিল না। তিনি বলেছেন, এই কাজ করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। হেফাজতে ইসলামের মূল পরিকল্পনা, অর্থ যোগানদাতা, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের উৎস এবং সরকার উৎখাতে কী পরিকল্পনা হয়েছিল সেই ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। বাবুনগরী জানান, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত মতিঝিলে অবস্থান নিতে হেফাজতের নেতাদের একটি অংশের পরিকল্পনা ছিল। ১৮ দলীয় জোটভুক্ত চারটি দল হেফাজতের সঙ্গে থাকবে বলে জানানো হয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কয়েক নেতার পরামর্শে এমন পরিকল্পনা করেছিলেন। হেফাজতের শীর্ষ নেতারা মতিঝিলে টানা অবস্থানে রাজি না হওয়ায় সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রী বানানোরও প্রস্তাব দেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মাওলানা বাবুনগরী জানান, বিএনপি ও জামায়াতের কয়েক নেতার পরামর্শে এমন সিদ্ধান্ত নেন তারা। পুরো সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ১৮ দলীয় জোটভুক্ত ওই অংশটি। এরপরই ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়। এজন্য ১৮ দলীয় জোটে থাকা হেফাজতের নেতাদের কয়েকজন সব সময় বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগও রেখেছিলেন। বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষে শাপলা চত্বরে তাদের দীর্ঘ অবস্থানের জন্য সব ধরনের সহায়তাও দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। ক্ষমতায় গেলে তাকেসহ হেফাজত নেতাদের মন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব আসে বলেও জানান মাওলানা বাবু নগরী।টার্গেট সরকার পতন১৩ দফা নয়, হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরে অবস্থানের টার্গেট ছিল সরকারের পতন ঘটানো। এই পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অর্থ সহায়তা দিয়েছে ১৮ দলীয় জোট। একইসঙ্গে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থানে খাওয়া-দাওয়াসহ সবকিছুর দায়-দায়িত্বও নিয়েছিলেন ১৮ দলের নেতারা। জবানবন্দি দিতে গিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘৫ই মে আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশস্থলে হেফাজতকর্মীরা প্ল্যাকার্ড ও কাপড়-চোপড় নিয়া আসছিল। জামায়াত-শিবির এবং ছাত্রদল-যুবদলের উচ্ছৃঙ্খল লোকজন করাত দিয়া গাছ কাটিয়া রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। তাহারা অগ্নিসংযোগ করিয়া পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ায়। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে আমি সমাবেশস্থলের আশপাশে অগ্নিসংযোগের ফলে আগুনের লেলিহান শিখা দেখিয়া বিচলিত হইয়া পড়ি। জামায়াত-শিবির অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর উপর আক্রমণ চালাইয়াছে বলিয়া আমার কাছে সংবাদ আসে। সমাবেশস্থলের ১৪ জন নেতার উস্কানিমূলক বক্তব্যে আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অশান্ত হইয়া উঠে।’ তিনি দাবি করেন, ‘২০১০ সালে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম নামে একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার পর হইতে এ যাবৎ কোনো নারকীয় ঘটনা ঘটছে বলিয়া আমার জানা নাই।’ তবে না বুঝে হেফাজতের কিছু নেতাকর্মী ওইদিনের তা-বে জড়ান বলে দাবি করেন তিনি। বাবুনগরী বলেন, ‘ওইদিন দিবাগত রাত্র আনুমানিক ২টা থেকে আড়াইটার দিকে অর্থাৎ গত ৬ মে রাত আনুমানিক ২টা থেকে আড়াইটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হ্যান্ডমাইকে সমাবেশস্থলে অবস্থানকারী নেতাকর্মীদের সভাস্থল ত্যাগ করার অনুরোধ জানান। পরবর্তীতে তাহারা ফাঁকা আওয়াজ করিলে সবাই শাপলা চত্বর হইতে পালাইয়া যায়। আমি পড়ে গেছিলাম। আমার ছাত্ররা আমাকে ধরে লালবাগ মসজিদে নিয়া আসছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী কোনো প্রাণহানী ঘটায় নাই বা কেহ আহত হইয়াছে বলিয়াও আমি শুনি নাই। হেফাজতে ইসলামের লোকজন ও জামায়াত-শিবিরের সদস্যদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সংঘর্ষে পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর নিহত হইয়াছে এবং তাহার অস্ত্র লুট হইয়াছে মর্মে আমি সকালবেলা লালবাগ মাদ্রাসায় আসিয়া জানতে পারি।’ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘আমাদের ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা অবরোধ ও শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ কর্মসূচি ছিল। রাজধানী ঢাকার ৬টি প্রবেশপথে ভোর হইতে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল। পরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে রাজধানী ঢাকার শাপলা চত্বরে আমাদের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু আমি লালবাগ মাদ্রাসায় অবস্থানকালীনই জানতে পারি যে, কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল জনতার সঙ্গে আমাদের কিছু ছেলে সকাল হইতে বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন ও বিজয় নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজি, পুলিশের ওপর হামলা, লুটতরাজসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এই খবর শোনার পর আমরা হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফিকে অবহিত করি। তিনি আমাকে কারা ওইসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তা জানার জন্য বলেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উহা বন্ধ করার জন্য বলেন। আমি জানিতে পারি, আমাদের কিছু কর্মী ছাড়াও মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী এবং ছাত্রদল-যুবদলের কিছু প্যান্ট-শার্ট পরিহিত দাড়ি নাই এমন ছেলে এইরূপ সহিংসতা ও লুটতরাজ করিতেছে। তিনি বলেন, “এক পর্যায়ে খবর আসে যে ওই সকল উচ্ছৃঙ্খল লোকজন বইয়ের দোকানসহ কোরআন শরিফ পোড়াইতেছে। এমন সংবাদ শুনিয়া আমরা বিচলিত হইয়া যাই। তখন মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী, মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, আবুল হাসনাত আমিনী, মোস্তফা আযাদ, মাওলানা শাখাওয়াত হোসেন, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা গোলাম মহিউদ্দীন ইকরাম, শেখ লোকমান হোসেন, মাওলানা মাইনুদ্দীন রুহী, শামসুল আলম, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, আমানুল ক্বারী ফজলুল ক্বারী জিহাদী, মুফতি হারুন এজাহারদের সাথে যোগাযোগ করি এবং ওইসব বন্ধ করার জন্য বলি। ওই সকল নেতারা সহিংসতা বন্ধ না করে চুপ থাকার কথা বলেন এবং এমন কথাও বলে যে ‘আমাদের আন্দোলন এখন আর শুধু ১৩ দফার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এখন এটা হবে সরকার পতনের আন্দোলন। এখন আমাদেরকে ১৮ দলের লোকজন সব ধরনের সহায়তা করবে। অর্থ দেবে, খাবার ও পানি দেবে। ১৮ দলের নেতাদের সাথে আমাদের কথা হইয়াছে।” জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, “আগামীকাল (৬ মে) আমরা শাপলা চত্বরে অবস্থানকালে ১৮ দলীয় জোটের নেতা ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সাহেব আমাদেরকে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার সরবরাহ করিবেন। আপনি কোনো চিন্তা করিবেন না। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাপলা চত্বরে অবস্থান করব ইনশাল্লাহ’।অর্থের যোগানদাতা বিএনপি-জামায়াতরাজনীতির মাঠে নতুন খেলোয়াড় অরাজনৈতিক দলের দাবিদার হেফাজতে ইসলামের কোনো সাংগঠনিক শক্তি নেই। দেশের আনাচে-কানাচে গজিয়ে উঠা দেওবন্দিদের অনুসারী কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই এর মূল চালিকা শক্তি। দেশের ধর্মভীরু ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দান-খয়রাতে চলে তাদের জীবন-জীবিকা। সমাজের মূলধারার সঙ্গে তাদের নেই তেমন উঠাবসা। তাদের নেই অর্থনৈতিক শক্তি। এই সংগঠন গত ৬ এপ্রিল মতিঝিলে স্মরণকালের বড় মহাসমাবেশ এবং গত ৫ মে ঢাকা অবরোধের মত এতো বড় ও ব্যয়বহুল কর্মসূচি পালন করে কী করে। এ কারণে হেফাজতের সাম্প্রতিক শো-ডাউন ও কর্মকা- নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মুখে প্রচলিত রয়েছে নানা ধরনের কথাবার্তা। তবে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে- হেফাজতকে ব্যবহার করে এবং তাদের ধর্মীয় প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চায় সরকার বিরোধীরা। ৬ এপ্রিলের মহাসমাবেশে বিএনপি-জামায়াত হেফাজতকে ৮৫ কোটি টাকা দিয়েছে বলে ওই সময় অভিযোগ করেছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। অবশ্য তার আগেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন আভাস দিয়েছিল। প্রকাশ্যে হেফাজতকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছিল বিএনপি ও বর্তমান মহাজোট সরকারের শরীক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। ওই সমাবেশে তারা হেফাজতকে শুকনো খাবার ও শরবত পান করিয়েছে। একই অবস্থান ছিল ৫ মের ঢাকা অবরোধের কর্মসূচিতেও। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ঢাকা অবরোধের সময় সকালে ঢাকার প্রবেশমুখে হেফাজত কর্মীদের স্বাগত জানিয়ে সমাবেশও করেছেন। অভিযোগ রয়েছে- হেফাজতের ঢাকা অবরোধের খরচ ১৮ দলীয় জোটের পাশাপাশি জাতীয় পার্টিও যোগান দিয়েছে। শুধু তাই নয় হেফাজতের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সংঘর্ষে জাতীয় পার্টির দুই কর্মীও নিহত হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এমন তথ্য রয়েছে, ৫ মে রাতে মতিঝিলে হেফাজত অবস্থান নিতে পারলে সকালে ফজরের নামাজে হেফাজতের সঙ্গে যোগ দিতেন দেশের দুই সাবেক রাষ্ট্রপতি। এর যে একজন জাতীয় পার্টির এরশাদ তা গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে। অন্য জন বিকল্পধারার প্রধান সাবেক বিএনপি নেতা ডাক্তার একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ফলে সরকার বিরোধী অনেক শক্তিই হেফাজতকে অর্থ ও সমর্থন দিয়ে সহায়তা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। হেফাজত মহাসচিব রিমান্ডে স্বীকারও করেছেন ১৮ দলীয় জোট থেকে তাদের সমর্থন-সহযোগিতা ও অর্থের যোগানের কথা।
false
ij
None বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন-এর (১৮৮০-১৯৩২) বিস্তারিত পরিচয় দেওয়া এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়। তাঁর সম্বন্ধে আমরা কমবেশি জানি। তাঁর রচিত “অবরোধবাসিনী” বইটি আমাদের কারও কারও পড়া কিংবা কারও কারও এখনও পড়া হয়নি। এ কারণেই বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন-এর অবরোধবাসিনী থেকে পাঠ-এর এই পরিকল্পনা। উদ্দেশ্য, একুশ শতকে বসে বেগম রোকেয়ার চিন্তার স্বরুপ উপলব্দি করা। অবরোধবাসিনীর ভূমিকা লিখেছেন আবদুল করিম (বি·এ·, এম· এল· সি·)। তিনি লিখেছেন: “অবরোধ-বাসিনী” লিখিয়া লেখিকা আমাদের সমাজের চিন্তাধারার আর একটা দিক খুলিয়া দিয়াছেন। অনেকে অনেক প্রকার ইতিহাস লিখিয়া যশস্বী হইয়াছেন; কিন্তু পাক-ভারতের অবরোধ-বাসিনীদের লাঞ্ছনার ইতিহাস ইতিপূর্বে আর কেহ লিখেন নাই। পুস্তকখানি পাঠ করিয়া বারংবার এই কথাই মনে পড়ে,-আমরা কোথা হইতে আসিয়া কোথায় গিয়া পড়িয়াছি! যে মুসলিম সমাজ এককালে সমস্ত জগতের আদর্শ ছিল, সেই সমাজের এক বিরাট অংশ এখন প্রায় সমস্ত জগতের নিকট হাস্যাস্পদ হইয়া দাঁড়াইয়াছে, একথা বলিলে, বোধ হয়, অত্যুক্তি হইবে না। কোথায় বীরবালা খাওলা ও রাজিয়া অশ্বপৃষ্ঠে আরোহনপূর্বক পুরুষ যোদ্ধাদের সহিত যুদ্ধ করিয়াছেন আর কোথায় বঙ্গীয় মুসলিম নারী চোরের হস্তে সর্বস্ব সমর্পণ করিয়া নীরবে অশ্রু বিসর্জন করিতেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, “অবরোধ-বাসিনী” পাঠে ঘুমন্ত জাতির চিন্তা-চক্ষু উন্মীলিখ হইবে। সর্বশেষে লেখিকাকে এই সৎসাহসের জন্য ধন্যবাদ জানাই। “অবরোধ-বাসিনীর” প্রতি পাঠক-পাঠিকাদের সহৃদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছে। এবার মূল গ্রন্থ থেকে পাঠ: অবরোধবাসিনী আমরা বহু কাল হইতে অবরোধ থাকিয়া থাকিয়া অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছি সুতরাং অবরোধের বিরুদ্ধে বলিবার আমাদের-বিশেষতঃ আমার কিছুই নাই। মেছোণীকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায় যে, “পচা মাছের দুর্গন্ধ ভাল না মন্দ?”-সে কি উত্তর দিবে? এস্থলে আমাদের ব্যক্তিগত কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা পাঠিকা ভগিনীদেরকে উপহার দিব-আশা করি, তাঁহাদের ভাল লাগিবে। এস্থলে বলিয়া রাখা আবশ্যক যে গোটা ভারতবর্ষে কুলবালাদের অবরোধ কেবল পুরুষের বিরুদ্ধে নহে, মেয়েমানুষদের বিরুদ্ধেও। অবিবাহিতা বালিকাদিগকে অতি ঘনিষ্ঠ আত্মীয়া এবং বাড়ীর চাকরাণী ব্যতীত অপর কোন স্ত্রীলোকে দেখিতে পায় না। বিবাহিতা নারীগণও বাজীকর-ভানুমতী ইত্যাদি তামাসাওয়ালী স্ত্রীলোকদের বিরুদ্ধে পর্দ্দা করিয়া থাকেন। যিনি যত বেশী পর্দ্দা করিয়া গৃহকোণে যত বেশী পেঁচকের মত লুকাইয়া থাকিতে পারেন, তিনিই তত বেশী শরীফ। শহরবাসিনী বিবিরাও মিশনারী মেমদের দেখিলে ছুটাছুটি করিয়া পলায়ন করেন। মেম ত মেম-সাড়ী পরিহিতা খ্রীষ্টান বা বাঙ্গালী স্ত্রীলোক দেখিলেও তাঁহারা কামরায় গিয়া অর্গল বন্ধ করেন। [ ১ ] সে অনেক দিনের কথা-রংপুর জিলার অন্তর্গত পায়রাবন্দ নামক গ্রামের জমীদার বাড়ীতে বেলা আন্দাজ ১টা-২টার সময় জমীদার-কন্যাগণ জোহরের নামাজ পড়িবার জন্য ওজু করিতেছিলেন। সকলের অজু শেষ হইয়াছে কেবল “আ” খাতুন নাম্নী সাহেবজাদী তখনও আঙ্গিনায় ওজু করিতেছিলেন। আলতার মা বদনা হাতে তাঁহাকে ওজুর জন্য পানি ঢালিয়া দিতেছিল। ঠিক সেই সময় এক মস্ত লম্বাচৌড়া কাবুলী স্ত্রীলোক আঙ্গিনায় আসিয়া উপস্থিত! হায়, হায়, সে কি বিপদ! আলতার মার হাত হইতে বদনা পড়িয়া গেল-সে চেঁচাইতে লাগিল-”আউ আউ! মরদটা কেন আইল!” সে স্ত্রীলোকটি হাসিয়া বলিল, “হেঁ মরদানা! হাম্‌ মরদানা হায়?” সেইটুকু শুনিয়াই “আ” সাহেবজাদী প্রাণপণে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটিয়া তাঁহার চাচীআম্মার নিকট গিয়া মেয়েমানুষ হাঁপাইতে হাঁপাইতে ও কাঁপিতে কাঁপিতে বলিলেন, “চাচি আম্মা! পায়জামা পরা একটা মেয়েমানুষ আসিয়াছে!!” কর্ত্রী সাহেবা ব্যস্তভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “সে তোমাকে দেখিয়াছে?” “আ” সরোদনে বলিলেন “হাঁ”! অপর মেয়েরা নামাজ ভাঙ্গিয়া শশব্যস্তভাবে দ্বারে অর্গল দিলেন-যাহাতে সে কাবুলী স্ত্রীলোক এ কুমারী মেয়েদের দেখিতে না পায়। কেহ বাঘ ভালুকের ভয়েও বোধ হয় অমন কপাট বন্ধ করে না [ ২ ] ইহাও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা-পাটনায় এক বড় লোকের বাড়ীতে শুভ বিবাহ উপলক্ষে অনেক নিমন্ত্রিতা মহিলা আসিয়াছেন। অনেকে সন্ধ্যার সময়ও আসিয়াছেন তন্মধ্যে হাশমত বেগম একজন। দাসী আসিয়া প্রত্যেক পাল্কীর দ্বার খুলিয়া বেগম সাহেবাদের হাত ধরিয়া নামাইয়া লইয়া যাইতেছে, পরে বেহারাগণ খালি পাল্কী সরাইয়া লইতেছে এবং অপর নিমন্ত্রিতার পাল্কী আসিতেছে। বেহারা ডাকিল-”মামা! সওয়ারী আয়া!” মামারা মন্থর গমনে আসিতেছে। মামা যতণে হাশমত বেগমের পাল্কীর নিকট আসিবে ততক্ষণে বেহারাগণ “সওয়ারী” নামিয়াছে ভাবিয়া পাল্কী লইয়া সরিয়া পড়িল। অতঃপর আর একটা পাল্কী আসিলে মামারা পাল্কীর দ্বারা খুলিয়া যথাক্রমে নিমন্ত্রিতাকে লইয়া গেল। শীতকাল-যত পাল্কী আসিয়াছে “সওয়ারী” নামিলে পর সব খালি পাল্কী এক প্রান্তে বট গাছের তলায় জড় করিয়া রাখিয়া দেওয়া হইয়াছে। অদূরে বেহারাগণ ঘটা করিয়া রান্না করিতেছে। তাহারা বিবাহ বাড়ী হইতে জমকালো সিধা পাইয়াছে। রাত্রিকালে আর সওয়ারী খাটিতে হইবে না। সুতরাং তাহাদের ভারী স্ফূর্তি-কেহ গান গায়, কেহ তামাক টানে, কেহ খেইনী খায়-এরূপে আমোদ করিয়া খাওয়া দাওয়া করিতে রাত্রি ২টা বাজিয়া গেল। এদিকে মহিলা মহলে নিমন্ত্রিতাগণ খাইতে বসিলে দেখা গেল-হাশমত বেগম তাঁহার ছয় মাসের শিশু সহ অনুপস্থিত। কেহ বলিল, ছেলে ছোট বলিয়া হয়ত আসিলেন না। কেহ বলিল, তাঁহাকে আসিবার জন্য প্রস্তুত হইতে দেখিয়াছে-ইত্যাদি। পরদিন সকালবেলা যথাক্রমে নিমন্ত্রিতাগণ বিদায় হইতে লাগিলেন-একে একে খালি পাল্কী আসিয়া নিজ নিজ “সওয়ারী” লইয়া যাইতে লাগিল। কিছুক্ষণ পরে একটী “খালী” পাল্কী আসিয়া দাঁড়াইলে তাহার দ্বার খুলিয়া দেখা গেল হাশমত বেগম শিশুপুত্রকে কোলে লইয়া বসিয়া আছেন। পৌষ মাসের দীর্ঘ রজনী তিনি ঐ ভাবে পাল্কীতে বসিয়া কাটাইয়াছেন! তিনি পাল্কী হইতে নামিবার পূর্ব্বেই বেহারাগণ পাল্কী ফিরাইতে লইয়া গেল-কিন্তু তিনি নিজে ত টু শব্দ করেনই নাই-পাছে তাঁহার কণ্ঠস্বর বেহারা শুনিতে পায়, শিশুকেও প্রাণপণ যত্নে কাঁদিতে দেন নাই-যদি তাহার কান্না শুনিয়া কেহ পাল্কীর দ্বার খুলিয়া দেখে! কষ্ট সাধ্য করিতে না পারিলে আর অবরোধ-বাসিনীর বাহাদুরী কি? [ ৩ ] প্রায় ৪০/৪৫ বৎসর পূর্ব্বের ঘটনা-কয়েক ঘর বঙ্গীয় সম্ভ্রান্ত জমীদারের মাতা, মাসী, পিসী, কন্যা ইত্যাদি একত্রে হজ করিতে যাইতেছিলেন। তাঁহারা সংখ্যায় ২০/২৫ জন ছিলেন। তাঁহারা কলিকাতায় রেলওয়ে ষ্টেশন পৌঁছিলে পর সঙ্গের পুরুষ প্রভুগণ কার্য্যোপলক্ষে অন্যত্র গিয়াছিলেন। বেগম সাহেবাদিগকে একজন বিশ্বস্ত আত্মীয় পুরুষের হেফাজতে রাখা হয়। সে ভদ্রলোকটীকে লোকে হাজী সাহেব বলিত, আমরাও তাহাই বলিব। হাজী সাহেব বেগম সাহেবাদের ওয়েটিং রুমে বসাইতে সাহস পাইলেন না। তাঁহারা উপদেশ মতে বিবি সাহেবারা প্রত্যেক মোটা মোটা কাপড়ের বোরকা পরিয়া ষ্টেশনের প্লাটফরমে উবু হইয়া (Squat) বসিলেন; হাজী সাহেব মস্ত একটা মোটা ভারী শতরঞ্জি তাঁহাদের উপর ঢাকিয়া দিলেন। তদবস্থায় বেচারীগণ এক একটা বোচকা বা বস্তার মত দেখাইতেছিলেন। তাঁহাদিগকে ঐরূপে ঢাকিয়া রাখিয়া হাজী সাহেব এক কোণে দাঁড়াইয়া খাড়া পাহারা দিতেছিলেন। একমাত্র আল্লাহ জানেন, হজযাত্রী বিবিগণ ঐ অবস্থায় কয় ঘণ্টা অপেক্ষা করিতেছিলেন-আর ইহা কেবল আল্লাহতালারই মহিমা যে তাঁহারা দম আটকাইয়া মরেন নাই। ট্রেণ আসিবার সময় জনৈক ইংরাজ কর্ম্মচারীটী ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দিতে হাজী সাহেবকে বলিলেন, “মুন্সি! তোমারা আসবাব হিয়াসে হাটা লো। আভি ট্রেণ আবেগা-প্লাটফরম পর খালি আদামি রহেগা-আসবাব নেহি রহেগা।” হাজী সাহেব যোড়হস্তে বলিলেন, “হুজুর, ঐ সব আসবাব নাহি-আওরত হায়।” কর্ম্মচারিটী পুনরায় একটা “বস্তায়” জুতার ঠোকর মারিয়া বলিলেন, “হা, হা-এই সব আসবাব হাটা লো।” বিবিরা পর্দ্দার অনুরোধে জুতার গুতা খাইয়াও টু শব্দটী করেন নাই। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন চলবে ... সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৮:২৯
false
hm
ফুটোস্কোপিক গল্প ০৬ ফুটোস্কোপিক গল্প হচ্ছে ফুটোস্কোপ দিয়ে দেখা কোন গল্প। সামান্যই দেখা যায়। রবীন্দ্রবাবু নিচু গলায় বললেন, "আচ্ছা এই যে একেবারে বক্সে বসলুম, বিনোদ তো আমাকে চেনে। ছুঁড়িটা আমাকে দেখলে কী ভাববে বলো তো?" ভূতোনাথ বিরক্ত হয়ে বলে, "আপনাকে নিয়ে এ-ই এক সমস্যা বাবু। ফূর্তি করতে এসে এতো সাতপাঁচ ভাবলে চলে? ক্যাবারে থ্যাটারে কেউ কাউকে চেনেনা, চিনলেও না চেনার ভান করে। আপনি খামোশ মেরে নাচ দেখবেন, লোট ছুঁড়ে মারবেন, সিটি বাজাবেন ... অত চিন্তা কিসের?" রবীন্দ্রবাবু ছটফট করে উঠলেন, "না না ভূতো, তুমি বুঝতে পারছো না! বিনোদ আমাকে বড়ই শ্রদ্ধা করে! রীতিমতো ভক্তি যাকে বলে! তো, সে যদি দেখে আমি তার নাচ দেখতে এসেছি ...।" ভূতোনাথ বলে, "নিন তো স্যার, পপর্কন চিবোন বসে বসে। এসব শ্রদ্ধাভক্তির কতা ভুলে যান। হাপপ্যান্ট পরা বিনোদিনী দাসী একবার স্টেজে নামলে এসব টেনসন আর থাকবে না আপনার!" রবীন্দ্রবাবু অসহায় মুখে বসে দাঁতে ভূট্টার খই কাটতে লাগলেন। একটু পরেই পাদপ্রদীপের আলোকে মলিন করে হাফপ্যান্টপরিহিতা বিনোদিনী দাসীর মঞ্চে আগমন ঘটে। সব দর্শক হই হই করে ওঠে। ভূতোনাথ বলে, "কী স্যার, কেমন লাগচে?" রবীন্দ্রবাবু ঢোঁক গিলে বলেন, "অদ্ভূত! এ যে নতুন যৌবনের দূত!" কিন্তু বিনোদিনীর চোখ যায় সটান বক্সের দিকে। কে এই সৌম্যকান্তি পুরুষ? ও মা, এ যে রবীন্দ্রবাবু! বিনোদিনী মাথায় ঘোমটা দিয়ে উইংসের আড়ালে চলে যেতে চেষ্টা করে, ইমপ্রেসারিও রমণীমোহন এসে তাকে পাকড়াও করে। "কী হলো বিনোদ, নাচতে নেমে ঘোমটা দিচ্ছিস যে বড়?" বিনোদিনী দাসী ডুকরে ওঠে, "উনি আমার অ্যাক্টো দেখতে এয়েচেন। আমি কিচুতেই ওঁর সামনে এই আধাপেন্টুলুন পরে নাচতে পারবোনি!" রমণীমোহন পান চিবাতে চিবাতে বললো, "নেকি! পারবি না কেন? মারবে নাকি তোকে?" বিনোদিনী বলে, "আমি ওঁকে ভক্তি করি, বড় শ্রদ্ধা করি! কী করে তাঁর সামনে নেংটো হয়ে ক্যাবারে নাচি? ছিহ!" রমণীমোহন বলে, "আ, মরণ! পয়সা খরচ করে সে নাচ দেখতে এসেছে, নেচে দেখিয়ে দে! নাচলে তো আর তোর ভক্তিছেদ্দা নষ্ট হচ্ছে না!" বিনোদিনী আঁচলে নাক মোছে, "আমায় মাপ করে দাও রমণীকর্তা ... এ আমি পারবোনি!" রমণীমোহন ঘাগু লোক, এসবে ভুলবার পাত্র নয়। সে চিবিয়ে চিবিয়ে ভয় দেখায় বিনোদিনীকে। বিনোদিনীও ঘাগু মেয়েছেলে, অনেক ঘাটের জল খেয়েই আজ হাফপ্যান্টের ওপর ঘোমটা টেনেছে, সে-ও শুরু করে দেয় হাফপ্যান্টের ওপর আঁচল পেঁচিয়ে গিঁট মেরে তর্ক। ওদিকে দর্শক তুমুল খাপ্পা। তারা বিনোদিনীর ক্যাবারে দেখতে এসেছে, কোন নাটক নয়। রবীন্দ্রবাবু অস্থির হয়ে ভূতোনাথকে শুধালেন, "কী ব্যাপার, আবার মাথায় ঘোমটা চাপালে কেন? নাচে না কেন? য়্যাঁ?" ভূতো বিরক্ত হয়ে বলে, "তার আমি কী জানি?" বিনোদিনী আর রমণীমোহন মঞ্চের ওপরেই তুমুল তর্ক করতে থাকে। অধৈর্য হয়ে এক পর্যায়ে রবীন্দ্রবাবু পকেট থেকে এক তাড়া কাগজ বার করেন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে মন্দ্রস্বরে বলেন, "আমি কিছু বলতে চাই।" রমণীমোহন আর বিনোদিনী দাসী, দু'জনেই চুপ করে যায়। হলে নেমে আসে পিনপতন নিস্তব্ধতা। রবীন্দ্র বলেন, "বিনোদিনী, মন দিয়ে শোন।" তারপর একখানা কাগজ উঁচিয়ে ধরে ধীরে ধীরে, সুললিতকণ্ঠে আবৃত্তি করেন, "সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ করে পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা!"
false
mk
বিডিআর হত্যাকান্ডের রায় ও কিছু প্রাসঙ্গিক কথা ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারী ২০০৯ তারিখে বিডিআর সদর দপ্তর, পিলখানায় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। এটি ছিল জাতির জীবনের অন্যতম কলংকিত অধ্যায়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত যোগের দু:সহ অত্যাচার, অনাচার এবং দুর্নীতির প্রেক্ষিতে দেশের মানুষ নিজের অধিকার আদায়ের জন্য নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সর্বজন প্রশংসিত নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে মহাজোটকে দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট দিয়েছিল। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে মহাজোট দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার মাত্র ৪৭(সাতচল্লিশ) দিনের মাথায় এহেন বর্বরোচিত হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। উক্ত বর্বরোচিত ঘটনায় সর্বমোট ৭৪(চুয়াত্তর) জন প্রাণ হারায়। যার মধ্যে ৫৭ (সাতান্ন) জন ছিল দেশের সূর্যসন্তান সেনা কর্মকর্তা। এটি সহজে অনুমেয় দেশের স্বাধিনতা ও স্বার্বভৌমত্ব বিরোধী অপশক্তি নব গঠিত সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্যই এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। আজকে তার রায় ঘোষিত হওয়ার মধ্যদিয়ে, ইতিহাসের ন্যাক্কার জনক হত্যাকান্ডের কলঙ্ক মোচন হলো। পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। বিএনপির নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- হয়েছে। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ-সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ হয়েছে ২৬২ জনের। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় খালাস পেয়েছেন ২৭১ জন।বিডিয়ার হত্যাকান্ডের পরে সরকার কাল বিলম্ব না করে তিন পর্যায়ে উক্ত ঘটনার তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে। যা হলো, বিডিআর কর্তৃক তদন্ত, সেনাবাহিনী কর্তৃক তদন্ত এবং জাতীয় তদন্ত । তদন্ত শেষে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবী উত্থাপিত হয়। দাবী সমূহের মধ্যে অনুতম দাবী ছিল বিদ্রোহের বিচার সামরিক আইনে করা। সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সেনা কর্মকর্তাদের সকল দাবী পূরণ করেছেন। একই সাথে বিচার প্রক্রিয়াকে সর্বপ্রকার বিতর্কের উর্ধ্বে রাখার জন্য ১৭ আগষ্ট ২০০৯ তারিখে মহামন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংবিধানের আর্টিকেল ১০৬ এর অধীনে সুপ্রীম কোর্টে রেফারেন্স প্রেরণ করেন। ১৯ আগষ্ট ২০০৯ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ১০ জন সিনিয়র আইনজীবীকে এ্যামিকাস কিউরী নিয়োগ করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে আসামীর সংখ্যা বিবেচনায় এত বড় বিচার কার্যক্রম কোথাও কখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। সংগত কারণেই এই বিচারকে স্বচ্ছ, নিরপ্ক্ষে ও প্রশ্নাতীত করার লক্ষ্যে কিছুটা সময় লেগেছে। এরই সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট এই বিচার বাধাগ্রস্থ করার লক্ষ্যে বিরতিহীনভাবে নানাবিধ অপপ্রচার চালিয়ে গেছে। এমন কি তারা ক্ষমতায় গেলে বিজিবি এর নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম এবং পোশাক বহাল রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে বলেও জানা যায়। বিজিবিতে ভবিষ্যতে যেকোন প্রকার বিদ্রোহ বন্ধের জন্য বর্তমান সরকার” বিজিবি এ্যাক্ট-২০১০” সংসদে পাস করেছে, যা আর্মি এ্যাক্টের অনুরূপ। এই আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্থি মৃত্যুদন্ড। দু:খজনক হলেও সত্য, বিএনপি-জামাত জোট আজ বিডিআর এর বিচার সংক্রান্ত বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে সেনাবাহিনী এবং দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চক্রান্তে জড়িত ছিলো। তাদের অনেকেই ঐ সময় সেনা বিধি ০৫ (পাঁচ) মোতবেক সেনা আইনে এ বিদ্রোহের বিচারের বিরোধিতা করেছিলেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিডিয়ার বিদ্রোহ চলাকালীন সময়ে রহস্য জনক অবস্থান অনেকের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। তৎলীন বিএনপি শাসনামলে ১৯৭৭-১৯৮১ সাল পর্যন্ত সংঘঠিত ২১ টি সামরিক অভ্যুত্থানে ১২০০'র বেশি সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য নিহত হলেও এসব অভ্যুত্থানের কোন দৃশ্যমান বিচার হয়নি। এমনকি অনেক মামলার নথিও গায়েব হয়ে গেছে। বর্তমান সরকার দ্বায়িত্ব নেয়ার পরেই দ্রুততার সাথে বিডিআরকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে গৃহীত উদ্যোগসমূহ নি¤œরূপ: ১. বিজিবিকে পুর্নগঠনের লক্ষ্যে নতুন আইনের খসড়া মন্ত্রীসভায় অনুমোদনের পর ‘বর্ডার গার্ড আইন ২০১০’ সংসদে পাশ করা হয়েছে। ফলে বিডিআর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি নামে আতœপ্রকাশ করেছে। ২. নতুন পোষাক, নতুন নাম এবং সংশোধিত আইন নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান আবারও দৃঢ় পদক্ষেপে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে মাথা উচু করে। বডার গার্ড বাংলাদেশÑ বিজিবি’র ৩৬ ব্যাটালিয়ন বিজিবি অবলুপ্ত করা হয়েছে গত ১৫ জুলাই এবং ১৩ ব্যাটালিয়ন বিজিবিকে আগামী ২৫ আগস্ট অবলুপ্ত করা হবে। এর আগে ২০১১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ২৪ ব্যাটালিয়নকে (পিলখানায় অবস্থিত) অবলুপ্ত করা হয়। বিডিআর বিদ্রোহের পর এই বাহিনীর নাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ব্যাপক সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে পুনর্গঠন করা হয়। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরে চারটি অঞ্চল, চারটি সেক্টর, চারটি অঞ্চল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো এবং তিনটি বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের জন্য (বিয়ানীবাজার, রুমা ও বাবুছড়া) মোট ছয় হাজার ৩১৬টি পদের বিপরীতে লোক নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাগাইহাট এবং কুলাউড়া বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের জন্য এক হাজার ৫২৪টি পদে লোক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। ৩. এজন্য বিজিবিকে ভাগ করা হচ্ছে ৪টি অঞ্চলে। পুনগর্ঠনে পাল্টে যাচ্ছে বিজিবির প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কাঠামো। পাশাপাশি বাড়ছে জওয়ানদের সুযোগ-সুবিধাও। এখন থেকে বিজিবি সব সদস্যই সীমান্ত ভাতা পাবে। ৪. একই সাথে জওয়ানদের পরিবারের মাসিক জ্বালানি খরচও বাড়ানো হয়েছে ৩ গুণ। বাড়ানো হয়েছে মসলা ভাতার পরিমাণও। ইতিমধ্যে পিলখানায় ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়ন বিলুপ্ত করা হয়েছে। আর নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে ১১টি ব্যাটালিয়ন। পুনর্গঠনের আলোকে বিজিবিকে ৪টি অঞ্চলে ভাগ করা হচ্ছে। এসব অঞ্চলের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের সদর দফতর হবে নওগাঁয়, দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সদর দফতর থাকবে যশোর, উত্তর-পূর্ব সদর দফতর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের সদর দফতর থাকবে চট্টগ্রাম। একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা হবেন আঞ্চলিক সদর দফতরের প্রধান। তাছাড়া ১১টি নতুন ব্যাটালিয়ন নিয়ে সদর দফতর করা হবে। একই সাথে তৈরি করা হবে ৪টি সেক্টরও। আর বিওপি তৈরি করা হবে আরো ১শ’। বর্তমানে বিজিবিতে ৪৭টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৪টি ব্যাটালিয়ন বিলুপ্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এসব ব্যাটালিয়নগুলো হচ্ছে ২৪, ৩৬, ১৩ ও ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন। মূলত ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় নৃশংস বিডিআর বিদ্রোহের কারণেই এ বাহিনীর পুনর্গঠনের দাবি ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় এ বাহিনীর পুনর্গঠন নিয়ে একটি সমনি¦ত প্রস্তাব দেয়া হয় সরকারকে।৫. বিজিবির পুনগর্ঠন প্রস্তাবের আলোকে বেশ কিছু সংস্কারমূলক কাজে হাত দেয় কর্তৃপক্ষ। কারণ আধুনিক ও যুগোপযোগী একটি বাহিনী হিসেবে বিজিবিকে গড়ে তুলতে হলে পুনর্গঠনের বিকল্প ছিল না। বিজিবির পুনর্গঠনে জওয়ানদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলোতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে জওয়ানদের রেশন ও অন্যান্য ভাতাও। বিদ্রোহের পর বিজিবি সদস্যরা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ বাহিনীর সদস্যরা আর পেছন ফিরে না তাকিয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। সীমান্ত ভাতা অনুমোদিত হওয়ায় এখন থেকে সকল বিজিবি সদস্যই মাসিক ৩৩৮ টাকা ভাতা পাবেন। ৬. তাছাড়া আগে প্রত্যেক বিজিবি সদস্যকে মাসে মসলা খরচ বাবদ ১৯ টাকা বরাদ্দ দেয়া হবো। কিন্তু এখন থেকে মসলা না দিয়ে প্রতি মাসে ২১ গ্রাম মসলা দেয়া হবে। একই সাথে বিজিবি পরিবারের সদস্যদের জ্বালানি ভাতা ৫২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬৮ টাকা করা হয়েছে। আগে প্রত্যেক জওয়ানকে মাসে ৪০ কেজি কাঠ দেয়া হতো। আর যেখানে কাঠ সরবরাহ সম্ভব হতো না সেখানে ৫২ টাকা জ্বালানি খরচ দেয়া হতো। ৭. ইতিমধ্যে জওয়ানদের রেশন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে শতভাগ। বাড়ানো হয়েছে যানবাহন ও চিকিৎসা সুবিধাও। এজন্য বিজিবি সদস্যদের জন্য আরো ৩টি হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া বিজিবি সদস্যদের জাতিসংঘ মিশনে পাঠানোর বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে সরকার বিবেচনা করছে। পুনর্গঠনের আলোকে বিজিবি সদস্যদের যে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে তাই নয়, একই সাথে জওয়ানদের মানবাধিকার বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বিজিবির ৪টি সেক্টরের সব জওয়ানকে মানবাধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রস। তাছাড়া প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনপাতেও আমূল পরিবর্তনের অংশ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে নতুন পাঠ্যসূচি। বিশেষ করে সীমান্ত সুরক্ষা, জওয়ানদের শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার বিষয়াদি নিয়ে পৃথক ট্রেনিং অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া যুক্ত করা হচ্ছে নারী ও শিশু পাচার রোধে করণীয় সংক্রান্ত অধ্যায়ও। একইভাবে বিজিবি জওয়ানরা কীভাবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় পারদর্শিতা অর্জন করতে পারবে সে বিষয়েও শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। থাকছে মাদকের কুফল ও এর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পাঠ্যসূচিও। তাছাড়া সীমান্তে অপারেশনাল কর্মকা- জোরদারের পাশাপাশি চোরাচালন, মাদক নিয়ন্ত্রণ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। একই সাথে সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার জন্য সরকার বিজিবি সদস্যদের ১৪শ’ মোটরসাইকেল সরবরাহ করছে। ইতিমধ্যে অনেক ব্যাটালিয়নকেই মোটরসাইকেল দেয়া হয়েছে। বিজিবি হত্যাকা-ে শহীদ সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ হতে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নি¤েœ তা উপস্থাপন করা হলো:১। আর্থিক সহযোগিতাঃ ক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুদান ১০,০০,০০০.০০ (দশ লক্ষ) টাকা । খ। সেনাবাহিনী কল্যাণ তহবিল হতে অনুদান ৫,০০,০০০.০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকা । গ। বিডিআর তহবিল হতে অনুদান ৫০,০০০.০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা । ঘ। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস কর্তৃক প্রতি বছর ৪,৮০,০০০.০০ (চার লক্ষ আশি হাজার) টাকা হিসেবে অদ্যাবধি সর্বমোট ০৫ বছরে (৪,৮০,০০০.০০ Χ ০৫) ২৪,০০,০০০.০০ (চব্বিশ লক্ষ টাকা প্রদান । ঙ। শহীদ অফিসার পরিবারবর্গকে ২,০০,০০০.০০ (দুই লক্ষ) টাকার ট্রাস্ট মিউচুয়্যাল ফান্ডের প্লেসমেন্ট শেয়ার প্রদান । চ। তাছাড়া নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক শহীদ পরিবারবর্গকে পরিবার নিরাপত্তা প্রকল্প তহবিল, ডিএসওপি ফান্ড, কল্যাণ তহবিল হতে অনুদান, মৃত্যু আনুতোষিক, ছুটির পরিবর্তে নগদ অর্থ, কম্যুটেশন এবং মাসিক পেনশন প্রদান করা হয়েছে ।২। আর্থিক সহযোগিতাঃ ক। শহীদ অফিসার পরিবারের ৩২ জন সদস্যকে চাকুরী প্রদান করা হয়েছে তন্মধ্যে ০৩ (তিন) জন বিদেশে চাকুরীরত আছেন ।খ। শহীদ অফিসার পরিবারবর্গের ৮৪ জন সদস্যকে (স্ত্রী/সন্তান) বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি এবং বিনা বেতনে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।গ। শহীদ অফিসার পরিবারের ০৯ জন সন্তানকে বিভিন্ন ক্যাডেট কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমান বছরে ০১ জন শহীদ অফিসারের সন্তানকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তিও বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।ঘ। শহীদ অফিসার পরিবারবর্গেও স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য ৩৭ জনকে মিরপুর ডিওএইচএস'এ প্লট দেয়া হয়েছে। ১০ জনকে মিরপুর ডিওএইচএস'এ ০২ টি করে স্বয়ংসম্পূর্ণ ফ্ল্যাট প্রদানের জন্য বহুতল ভবন নির্মানাধীন রয়েছে। তাছাড়া ১১ জন অফিসার শহীদ হওয়ার পূর্বেই বিভিন্ন ডিওএইচএস এবং রাজউক প্লট পেয়েছিলেন।ঙ। ৪৪ জন শহীদ অফিসার পরিবারের অস্থায়ী আবাসন নিশ্চিতকল্পে সেনানিবাসের অভ্যন্তরে সরকারী পারিবারিক বাসস্থান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।চ। ১৫ জন শহীদ অফিসারের গৃহ নির্মাণ অগ্রীম ঋনের সুদ ও আসল মওকুফ এবং ২৫ জন শহীদ অফিসার যাদের ট্রাষ্ট ব্যাংকে লোন ছিল তাদেও ২০০৯ সালের লোনের উপর সুদ মওকুফ করা হয়েছে।ছ। শহীদ অফিসার পরিবারবর্গকে দুধ কুপন কার্ড, সামরিক টেলিফোন সংযোগ এবং নিয়মানুযায়ী সিএমএহচএ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।পরিশেষে এ কথা বলা যায়, নানা প্রতিকূলতা, অপপ্রচার ও চক্রান্তকে অতিক্রম করে বিডিআর বিদ্রোহের বিচার সম্পাদনের মধ্য দিয়ে সরকার একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। যারা নানা ধু¤্রজাল সৃষ্টি করে এ ন্যাক্কারজনক হত্যাকা-ের বিচারকে বাধাগ্রস্থ করতে চেয়েছে তাদের অপপ্রয়াস নস্যাৎ হয়েছে। জাতি একটি কলঙ্কের দায় হতে মুক্তি পেয়েছে। পুনর্গঠিত বিজিবি অতীতের গ্লানি ভুলে নবউদ্যেমে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
false
rg
কে হচ্ছেন ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট_! ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সে দেশের জনগণ কখনো কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে সরাসরি ভোট দেয় না। মার্কিন জনগণ সরাসরি একজন ইলেকটরকে ভোট দেন। আরো মজার ব্যাপার হলো, ব্যালোট পেপারে অনেক সময় আবার ইলেকটরদের সবার নামও থাকে না। এই ইলেকটরদের বলা হয় ইলেকটোরাল কলেজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যা অনুযায়ী মোট ৫৩৮ জন ইলেকটর রয়েছেন। এই ৫৩৮ জন ইলেকটর নির্বাচন করবেন নতুন প্রেসিডেন্ট। নতুন প্রেসিডেন্টকে কমপক্ষে ২৭০ জন ইলেকটরের সমর্থন লাগবে। ইলেকটোরাল কলেজ ৫৩৮ জন = ১০০ জন সিনেটর+ ৪৩৫ জন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ+৩ জন ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার প্রতিনিধি। আগামীকালকের নির্বাচনে ইউএস কংগ্রেসের মোট ৩৪ জন সিনেটর এবং ৪৩৫ জন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসহ মোট ৪৬৯ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। বর্তমানে আপার হাইজ বা সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যা গরিষ্ঠ (৫৪ জন সিনেটর) আর ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যা লঘিষ্ঠ (৪৪ জন সিনেটর)। দুইজন স্বতন্ত্র সিনেটর। লোয়ার হাউজ বা হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ-এ রিপাবলিকানরা (২৪৬ জন প্রতিনিধি) সংখ্যা গরিষ্ঠ। ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যালঘু (১৮৬ জন প্রতিনিধি)। আর ভ্যাকেন্ট ৩ টি আসন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, একটি অঙ্গরাজ্যে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলেকটরদের সমর্থন পাবেন, সেই অঙ্গরাজ্যের শতভাগ ইলেকটরের সমর্থন সেই দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নামে কাউন্ট হবে। অর্থ্যাৎ যে অঙ্গরাজ্যে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলেকটরদের সমর্থন পাবে, সেখানে শতভাগ ভোট সেই দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নামে যোগ হবে। যেটাকে বলা হয় পপুলার ভোট। আরো মজার ব্যাপার হলো, একজন প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ পপুলার ভোট পেলেও ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। আগামীকাল ৩৪ সিনেটের ৩৪টি আসনে আর হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ-এর ৪৩৫টি আসনে ভোট হবে। ৩৪টি আসনের মধ্যে রিপাবলিকান ২৪টি আসনে আর ডেমোক্র্যাটদের ১০টি আসনে ভোট হবে। ডেমোক্র্যাটদের হাউজে জিততে হলে আরো ৩০টি আসনে জিততে হবে। উভয় দলে ভোটের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি!তো ফাইনালি কে হচ্ছেন ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট? রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি ডেমোক্র্যাট হিলারি ক্লিনটন? মিডিয়াগুলোর জরিপ বলছে গতকাল পর্যন্ত হিলারি ৪৫% আর ট্রাম্প ৪৪% এ এগিয়ে। আজ রাতে এটা কাঁটায় কাঁটায় সমান সমান হয়ে যাবে কী? ৮ নভেম্বর নির্বাচন। ৯ নভেম্বর রেজাল্ট। সারা বিশ্বের চোখ এখন কে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউজে তার দিকে! এবারের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন খরচ করেছেন মোট ১.৩ বিলিয়ন ডলার। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প খরচ করেছেন ৭৯৫ মিলিয়ন ডলার। হিলারির খরচ এসেছে (হিলারি নিজে ৫৫৬ মিলিয়ন+ ডেমোক্র্যাট দল ফান্ড রাইজিং ৫৪৪.৪ মিলিয়ন+সুপার পিএসি ১৮৮ মিলিয়ন) মোট ১.৩ বিলিয়ন ডলার। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের খরচ এসেছে (ট্রাম্প নিজে ২৪৮.৩ মিলিয়ন+ রিপাবলিকান দলের ফান্ড রাইজিং ৪৮৬.৭ মিলিয়ন+ সুপার পিএসি ৬০.১ মিলিয়ন) মোট ৭৯৫ মিলিয়ন ডলার। আমার বাজি ট্রাম্পের পক্ষে। আপনারটা কার পক্ষে?.............................৭ নভেম্বর ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৮
false
rn
সমাজ ও রাজনীতি_নারী ও কম্যুনিষ্ট (মায়ের মার নিষ্ঠুর হলেও নিন্দার কারণ মেলে না,সৎমায়ের আদরেও জাগে কৃএিমতার সন্দেহ)যে-কোনো যৌথকর্মে সিদ্ধির ও সাফল্যের জন্য নেতা চাই।যে নেতার থাকবে রুচি-বুদ্ধি-জ্ঞান-সাহস-আত্নপ্রত্যয়,সুস্পষ্ট ও সুপরিকল্পিত উদ্দেশ্য,লক্ষ্য ও কর্মসূচী- এক কথায় নেতার থাকবে দৃঢ় চরিএ ও মনীষা -Intellect O Integrity.১৯৮৪ সালে ঈদ সংখ্যা ইওেফাকে (১৫ই আষাঢ়)তরুন কবি মোফাজ্জল করিমের 'ইতিবাচক সালতামামি' নামের একটা কবিতায় ইদানিংকার বাংলাদেশের সমাজ-সংস্কৃতির ও সরকারী কৃ্তির ব্যঙ্গাত্নক ফিরিস্তি রয়েছে।কবিতাটির কয়েকটি চরণ এরুপঃ আমরা কাজকে তরল কথার সিলিন্ডারে পুরে ফেলেছি/এবং অসংখ্য আশ্বাসের কারখানা স্থাপন করেছি।/ভার্সিটি কোণ ছেড়ে গা ঝেড়ে ভীরু প্রেম সড়কে বসেছে।/আমরা প্রতিনিয়ত নিজেকে হত্যা করে এগিয়ে যাচ্ছি।' পৃ্থিবীতে এমনও ধর্ম আছে কয়েকটি মশা-মাছি পিঁপড়ে হত্যা করা পাপ।ইসলাম বরন করেছে নিম্নবর্নের,নিম্নবর্গের ও নিম্নবৃওির লোকেরাই পূর্ব পঞ্জাব থেকে উওর-দক্ষিন ও পূর্ব ভারত অবধি।১৮৭০ সনের পর থেকে ওয়াহাবী-সিপাহী পরাজয়ের পরে সিভিলিয়ান W.W. Hunter এর মুখে উচ্চারিত হয়-'One Hundread and fifty years ago it was impossible for a Muslim to be poor.' ইট-পাথরের মন্দির-মসজিদ-গির্জা করে ধনী লোকেরা।জীর্ন হলে মেরামত করার মতো ধনী লোক মেলে না।ফল জীর্ন মন্দির-মসজিদ পরিত্যক্ত হয়।সেই পরিত্যক্ত মন্দিরের পাথর মুসলিমেরা মসজিদে লাগিয়েছে।ধর্মের উদ্ভব হয়েছে প্রয়োজনে।নকশালপন্থী আজিজুল হক বলেন-"ইতিহাসে এক সময় ধর্মের অস্তিত্ব ছিলো না।অথচ মানুষ ছিলো,ভবিষ্যতেও ধর্ম থাকবে না,মানুষ থাকবে।মানুষ আরো বহুকাল ইশ্বর মানবে,বিজ্ঞানে তত্বে,তথ্যে ও সত্যে সহজে আথা স্থাপন করবে না,যদিও বা বিজ্ঞানীর আবিস্কার-উদ্ভাবন-সৃষ্টির আদর কদর তাদের কাছে বেশি।মানুষ নিজে স্বাধীন হতে চায়,বড় হতে চায়,মান যশ খ্যাতি ক্ষমতা পেতে চায়,কিন্তু অন্যকে রাখতে চায় অধীনে,আয়ত্বে,দাবিয়ে।এদিকে,শিবনারায়ন রায় বলেছেনঃ তিনি(রবীন্দ্রনাথ) কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে কিছুই চর্চা করেননি।সম্পূর্ন অবহেলা করেছেন--রবীন্দ্রনাথের সমস্ত লেখা পড়লে কোথাও দেখা যাবে না তিনি কোরান দেখেছেনে।এতবড় সংখ্যাক একটা প্রতিবেশী,তাদের যে কি বিশ্বাস সেটা জানার কোন আগ্রহ ছিল না।'ফান্ডামেন্টালিজম' কথাটির উদ্ভব ফ্রান্সে।ফায়দা লুটেছে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন সকার,আর বিপর্যস্ত হয়েছে তৃ্তীয় বিশ্বের সমাজ-সংকৃতি-প্রগতি ও প্রাগ্রসর চিন্তক-ভাবক-শিল্পী-সাহত্যিক।ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন কলার ও কলাকারের।বিয়ে প্রথা চালু করতে হয়েছে কাড়াকাড়ি,মারামারি,হানাহানি নিবারনের জন্য।আজকাল শহুরে শিক্ষিত লোকেরা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ও প্রচারনায় উচ্চকন্ঠ।নারীকে যখন মূল্যবান ভোগ্যবস্তুর মতো করে ভাবল মানুষ,তখন থেকেই তার মনে রিরংসাপ্রসূত ইর্ষা অসূয়া অসহিষ্ণুতা জন্ম নিল।দেহ মন চেতনা স্বামীর অনুগত করেই নারীজীবন সার্থক করতে হয়।(?)দুনিয়ার সমস্ত ধর্ম গন্থে নারীর স্থান পুরুষের নীচে।আগে হাটে বাজারে বেশ্যালয় ছিল,তখন পাড়ায় গৃহস্থের মেয়েরা থাকত হামলামুক্ত।ধর্ষন ছিল না বললেই চলে।আর্থিক স্বনির্ভরতাই নারীকে নিপীড়ন্মুক্ত করবে।নারীমুক্তি লক্ষ্যে নারীর শিক্ষার ও অর্থকর পেশার ব্যবস্থা করা জরুরী।যদি দেশ-জাত-বর্ন-ধর্ম-বংশ-ভাষা-সংস্কৃতি-যোগ্যতা, আর্থিক-শৈক্ষিক-সামাজিক অবস্থা ও অবস্থান নির্বিশেষে কেবল ছেলেমেয়েদের প্রেম-পছন্দের মিলন বা পরিনয় প্রথা এ দেশেও চালু হয়,তাহলেও নারীর অনেক সমস্যার সমাধান মিলবে।কম্যুনিষ্টজগতের ব্যক্তির সমাজের প্রকৃ্ত মন-মনন এবং জীবনযাএার গতি-প্রকৃ্তি সম্বন্ধে জানা দুঃসাধ্য ছিল বাইরের লোকের পক্ষে।মার্কসবাদই দুনিয়েতে প্রথম মানব-মহিমা বুঝে মানবমুক্তির পথ জানিয়েছে।মার্কসীয় পদ্ধতি এখনো উৎকর্ষে অপ্রতিদ্বন্দ্বী।মার্কসবাদে প্রত্যয়ী কেউ কেউ উচ্চকন্ঠে উচ্চারন করে বলেছেন, 'মার্কসবাদে ভুল নেই।'নিঃসঙ্গ,নিঃসহায় নির্বান্ধব রাশিয়া টিকে থাকার দায়েই মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিযোগী হয়েছিল।ব্যক্তিগত বা পারিবারিক জীবনে যেমন আমরা ঘরের কথা বাইরে বলি না,বাইরের লোকের কাছে গোপন রাখার চেষ্টা করি পরিবারের সম্মান রাখার ও নিন্দা এড়ানোর জন্য তেমনি রাশিয়াও তার ঘরের কথা কাউকে জানতে দেয়নি। আমাদের উপমহাদেশের অধিকাংশ কম্যুনিষ্ট-মার্কসবাদ কিংবা লেনিনবাদ কিংবা মাও-সে-তুঙ পরিব্যক্ত তত্ব উপলব্দির চেষ্টা করেননি।সহায়ক গন্থঃবার্ট্রান্ড রাসেল যখন অকপটঃ মোঃ আব্দুল আজিজমেয়েদের ব্রতকথাঃ শ্রী কালী কিশোর বিধ্যাবিনোদম্যানহাটনঃ আবদুল্লাহ আল-মামুননাৎসী নেতা হিটলারঃ আবু আদনাননির্বাচিত প্রবন্ধঃ আহমদ শরীফকুমারী মাটির দেশঃ রাবেয়া খাতুনআরগ আলী মাতুব্বর রচনা সমগ্রঃ (১,২,৩)পাঠক সমাবেশ
false
ij
বিদ্যাসাগরের মা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনে চারটে বিষয় লক্ষ করে মুগ্ধ হয়ে যাই এবং সেই চারটে বিষয় বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকেও বিবেচনা করে দেখতে প্রস্তাব করি। (ক) বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিদ্যাসাগরের অবদান; বাংলা গদ্যে বিরামচিহ্ন তাঁরই অবদান (খ) তীব্র আত্মমর্যাদাবোধ। যে কারণে কোনওদিক থেকেই নিজেকে ব্রিটিশদের চেয়ে ছোট ভাবতেন না বিদ্যাসাগর। (গ) নারীর প্রতি নারীসুলভ সহানুভূতি। যে কারণে রক্ষণশীল একটি সমাজে বিধবা বিবাহের প্রচলনের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করেননি। (ঘ) এবং তাঁর গভীর মাতৃভক্তি। মায়ের ডাকেই এক ঝড়ো রাত্রিতে বিক্ষুব্দ দামোদর (পশ্চিমবঙ্গের একটি নদী) পেরিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। আজ এসব বিশ্লেষন করে আমার মনে হয় যে- বিদ্যাসাগর কেবলই একজন বিশিষ্ট বাঙালিই নন-বিশ্বের প্রাতস্মরণীয় ব্যাক্তিদের নামের তালিকায় তাঁর নামটিও অনেকই উচুঁতে এবং আমার এও মনে হয় যে- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মানবিক মানসিক গঠনের পিছনে ছিল তাঁর মা ভগবতী দেবীর গভীর প্রভাব। স্বর্গের তোয়াক্কা কোনওকালেই করিনি বলেই খ্রিস্টধর্ম সম্বন্ধে আমার নিজস্ব মতামত রয়েছে - যা ক্যাথলিক যাজকদের বিস্মিত করতে পারে । বরাবরই আমার মনে হয়েছে যে যিশু খ্রিস্টর মা মেরি ছিলেন সে যুগের তুলনায় অত্যন্ত প্রখর চেতনাসম্পন্ন এক নারী । এমন তো হতেই পারে। বেগম রোকেয়ার কিছু কিছু বক্তব্য আমাদের বিস্মিত করে না কি? অনুমান করি-তৎকালীন ফিলিস্তিনীয় সমাজের বিদ্যমান বেদনাদায়ক অসঙ্গতিগুলি মেরির চোখ এড়ায়নি। একদিকে, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ওপর ধর্মান্ধ ইহুদিবাদের পীড়ন; মানে, ধর্ম-ট্যাক্স চাপিয়ে দেওয়া, রুটিমাংস তাদেরই ভোগে যাওয়া, নারীর ভূমিকা ক্রমেই সঙ্কুচিত করে ফেলা; অন্যদিকে বৈদেশিক রোমান শাসনের অবিবেচনাপ্রসুত অন্যায় করারোপ। এহেন বিষময় পরিবেশ থেকে মেরি কি এক গভীর সামাজিক পরিবর্তন চাইছিলেন আব্রাহামিয় ধর্মের কাঠামোটি না ভেঙ্গেই ? আমি তাইই অনুমান করি। পরিবর্তন বা বিপ্লবকে কার্যকর করতে পুত্র সন্তান কামনা করেছিলেন? যে সন্তান বিপ্লবের আগুনে নিজেকে উৎসর্গ করবে? আমার তো তাইই মনে হয়। আমরা আজ মেরিপুত্রের বিপ্লবের করুন পরিনতির কথা জানি। নিজের চোখের সামনে বিপ্লবী সন্তানের মৃত্যু দেখেছেন মেরি। অসম্ভব কষ্ট হলেও মেনে নিয়েছেন। আমার বক্তব্যটি বুঝতে হলে মেল গিবসনের The Passion of the Christ ছবিটা আরেকবার দেখুন। এবং গোড়া থেকেই চোখ রাখুন মেরির ওপর। মেল গিবসন মহৎ বলেই বুঝতে পেরেছিলেন পুত্রের জীবনের ওপর মা মেরির ভূমিকা ছিল কী ব্যাপক। মেল গিবসন মহৎ অথবা আমাদের সময় তার ভূমিকা রেখে চলেছে। যেমন, আমাদের সময় বলে মার্কসের নামে কিছু লেখা ওঁর স্ত্রীর-অর্থাৎ জেনি ফন ওয়েস্টফালেনের। (দেখুন: টি জেড লেভিন রচিত: ফ্রম সক্রেতিস টু সার্ত্রে।) ২ ছোটদের জন্য বিদ্যাসাগরের চমৎকার একটি জীবনী লিখেছেন কবি শঙ্খ ঘোষ। বইটি পড়তে পড়তে মা মেরির কথা মনে পড়ে গেল আমার। পুত্রের ওপর মা মেরির ছিল গভীর প্রভাব। বিদ্যাসাগরের মায়েরও তাই। বিদ্যাসাগরের মা ভগবতী দেবী। শঙ্খ ঘোষের লেখা পড়ে জানতে পারি: ভারি ভালো মানুষ ছিলেন ভগবতী দেবী। পাড়া গাঁর অভাবী লোকের খোঁজ খবর নিয়মিত নিতেন, নিজের পাতের ভাত অন্যকে খাওয়াতেন, মাত্তর একশ টাকার জন্য কোনও মেয়ের বিয়ের ঠেকে রয়েছে-ধার করে হলেও টাকাটা যোগার করে দিতেন। স্বভাবতই দুর্দশাগ্রস্থ দুঃস্থ নারীরা ভগবতী দেবীকে ঘিরে থাকত। ভগবতী দেবীর পুত্র সন্তানটি খুব কাছ থেকে মায়ের কল্যাণকর ভূমিকাটি দেখছিল। একদিন মায়ের আর্শীবাদ নিয়ে কলকাতা রওনা হল ছেলে । তারপর? তারপর কলকাতায় বিদ্যাসাগর কি করেছেন এখনও সেসব কথা লোকের মুখে মুখে ফেরে। তখন আমি নারীর প্রতি নারীসুলভ সহানুভূতির কথা উল্লেখ করেছিলাম। ওই আশ্চর্য জাদু বাল্য বয়েসেই অসংখ্যবার লক্ষ করেছিলেন বিদ্যাসাগর। এখন আমি জানি মূখ্যত কার প্রেরণায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বাংলায় নারীমুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন বিদ্যাসাগর। ফরাসী সম্রাট Napoleon Bonaparte একবার বলেছিলেন: The future destiny of the child is always the work of the mother. http://quotationsbook.com/quote/16483/ কথাটা অসত্য নয়। যে কারণে বিদ্যাসাগরের কর্মে আমরা ভগবতী দেবীকে পাই। যিশুর কর্মে তেম্নি মেরিকে। তখন আমি মায়ের কাছে পৌঁছনোর জন্য বিদ্যাসাগরের ঝড়ো রাত্রিতে বিক্ষুব্দ দামোদর নদী পেরোনোর কথা বলছিলাম না? অনেক আধুনিক ঐতিহাসিক ঘটনাটিকে অসত্য মনে করেন। আমি করি না। কেননা, শিষ্য তো প্রাণপ্রিয় প্রণম্য গুরুর জন্য প্রাণকে তুচ্ছ করতেই পারে। মায়ের ডাকে কি একাত্তরে সে রকম আত্তাহূতির ঘটনা ঘটেনি পূর্ব বাংলায়? যিশু কি তাঁর মায়ের আদেশে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেন নি? সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:২৯
false
mk
এপিটাফের একটি শব্দ, কথা অনেক ডেইলি স্টার ৫ মে, ২০১৫। প্রথম পৃষ্ঠার মাঝখানে বড় একটি এপিটাফের ছবি, সঙ্গে ছোট একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটি করেছেন ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা রেজাউল করিম। টাইলস দ্বারা বাঁধানো একটি পাকা কবরের দেয়ালে এপিটাফটি স্থাপিত। এপিটাফে বড় করে লেখা শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা। তারপর পিতা-মাতার নাম এবং শেষে জন্ম তারিখের নিচে মৃত্যু তারিখ লেখা ১২ ডিসেম্বর ২০১৩। এই ছবি ও প্রতিবেদনটি সম্পর্কে অন্য কোনো মিডিয়া, পত্রিকা বা কারও মুখে কোনো উচ্চবাচ্য শুনিনি। কেন শুনিনি, তা আমি ঠিক অনুমান করতে পারছি না। এটা কি সবার চোখ এড়িয়ে গেল, নাকি গুরুত্বহীন সংবাদ বলে সবাই উপেক্ষা করলেন। একজন শিশু হত্যাকারী, নারী ধর্ষণকারী ও নিরপরাধ মানুষের জন্য কসাই বলে পরিচিত একজন অপরাধীকে শহীদ হিসেবে ঘোষণা এবং তার কবরে এই মর্মে এপিটাফ লাগানোর মধ্যে কি কোনো দুরভিসন্ধি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই? এ যাবতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জামায়াত যা করে তা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে করে। জামায়াত যে ওয়াহাবী তন্ত্র অনুসরণ করে তাতে কবর চিহ্নিত করা বা বাঁধাই করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মানুষের মধ্যে তারা এই মতবাদের প্রচারণা চালায়। তারপর নিজেরাই আবার কিভাবে এবং কেন কাদের মোল্লার কবর টাইলস দ্বারা পাকা করেছে? তাহলে ধরে নিতে হবে এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য বা দুরভিসন্ধি আছে।একাত্তরের অপকর্মের জন্য তারা মোটেও অনুতপ্ত নয় এবং কখনো দুঃখ প্রকাশ করেনি। বরং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে ক্ষমতার দাপটে বলেছে, 'একাত্তরে যা করেছি, ঠিক করেছি'। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পর জামায়াত প্রধান গোলাম আযম পাকিস্তান ও লন্ডনে বসে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলন গোপনে নয়, প্রকাশ্যে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে শুরু করেছিল। তারা কি আনুষ্ঠানিকভাবে এই আন্দোলনকে কখনো বাতিল ঘোষণা বা বন্ধ করেছে? সেই পথ থেকে তারা কি সরে এসেছে? তারা কি বাংলাদেশকে মেনে নিয়েছে? আমার এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে কেউ হয়তো পাল্টা প্রশ্ন তুলতে পারেন, তা না হলে জামায়াত কি করে বাংলাদেশে রাজনীতি করছে, মন্ত্রী-এমপি হয়েছে এবং এত ব্যবসা-বাণিজ্য, ধন-সম্পত্তির মালিক হয়েছে, ইত্যাদি? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরের মধ্যে নিহিত আছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের শেকড় এবং বের হবে দেশের অভ্যন্তরে কোন শক্তি বা কারা তাদের পুনরুত্থানের সুযোগ দিয়েছে, কেন দিয়েছে এবং কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা এমপি-মন্ত্রী হয়ে এত দাপট দেখাতে পারছে। আমরা যারা রাজনীতির প্যাঁচ বুঝি না, তারা সবাই দেখেছেন জামায়াত প্রকাশ্যে বাংলাদেশের পতাকা পুড়িয়েছে। এক সময়ে জামায়াতের সহচর ইনকিলাব জাতীয় সংগীতের প্যারোডি ছেপেছে। অনেকেই বলেন, সরকার এখনই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে দিক, তাহলেই তো সব ল্যাঠা চুকে যায়। বিষয়টি এত সরলভাবে দেখার সুযোগ নেই। নির্বাহী আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ হলে সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হবে।১৬ কোটি জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৩০-৩২ ভাগ সমর্থন বহনকারী বিএনপি এ জায়গায় একমত না হলে সরকারি দলের একার পক্ষে জামায়াত নিষিদ্ধ করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে বিএনপির অবস্থান এখনো অটুট। জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসযজ্ঞে বিএনপির যোগ দেওয়ার উদাহরণ নিকট অতীতে রয়েছে। হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি, সে কথাও মনে রাখা দরকার। তাই দেশের একজন প্রবীণ নাগরিক ব্যারিস্টার রফিক-উল হক একবার বলেছিলেন, বিএনপি জামায়াতকে ত্যাগ করলে দেশের রাজনৈতিক সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয়ে যায়। বিএনপির কোনো নড়চড় নেই। তবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের বিচার সম্পন্ন হলে এ বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হবে। এ যাবৎ জামায়াতের কার্যকলাপ এবং কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পাকিস্তান রাষ্ট্রীয়ভাবে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তাতে কি মনে হয় না, জামায়াত পূর্ব-পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলন এখনো জারি রেখেছে এবং আন্দোলনের পথে তারা কাদের মোল্লাকে শহীদ হিসেবে গণ্য করছে। কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামান ইসলামের জন্য জীবন দিলেন- তাদের উত্তরসূরিদের এমন উক্তি এবং ভি-চিহ্ন প্রদর্শনের সঙ্গে আমার উপরোক্ত বিশ্লেষণ কি মিলে যাচ্ছে না? সারা বিশ্বে ফ্যাসিবাদী ও উগ্র-শক্তির চরিত্রই এমন যে, তারা কোনো দিন ভুল স্বীকার করে না, নিজেদের সংশোধন করে না। যুগে যুগে বিশ্বব্যাপী তারা সভ্যতাকে ধ্বংস করেছে এবং মানবতার অবমাননা করছে। কিন্তু চূড়ান্ত যুদ্ধে তারা সব সময় পরাজিত হয়েছে। পরাজয়ের পর পালিয়ে গেছে আর নয়তো ছদ্মবেশ ধারণ করেছে। লুকিয়ে লুকিয়ে শক্তি সঞ্চার করেছে এবং সুযোগ মতো নিজেদের পুনরুত্থান ঘটিয়ে আবার ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত হয়েছে। এই উত্থান-পতন এবং ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ইউরোপে। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমগ্র ইউরোপ ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থান চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে হবে। নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নের ওপর ভর করে বা বিচার প্রক্রিয়ার প্রথাগত ফাঁক-ফোকর দিয়ে তারা পুনরুত্থানের আর কোনো সুযোগ যাতে না পায় তার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়ী তিন পরাশক্তি- আমেরিকা, ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন।ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সংক্ষিপ্ত বিচার করে সব নাজি যুদ্ধাপরাধীকে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে ফায়ারিং স্কোয়াডের ব্যাপারে জোসেফ স্ট্যালিনের বিরোধিতা, যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন সপ্তাহ আগে (১২ এপ্রিল ১৯৪৫) রুজভেল্টের আকস্মিক মৃত্যু এবং চার্চিল ব্রিটেনের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার কারণে ফায়ারিং স্কোয়াডের সিদ্ধান্ত আর কার্যকর হয়নি (সূত্র- দ্য নুরেমবার্গ ট্রায়াল-পল রোলান্ড-লন্ডন, ২০১০)। তবে ১৯৪৫ সালের ২০ নভেম্বর বিচার শুরুর মাত্র এক বছরের মাথায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১২ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।১৯২১ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লিপাজিগ ট্রায়ালের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল জার্মানির ওপর। দেখা গেল ৯০০ জন অভিযুক্তের মধ্যে মাত্র দুজনের শাস্তি হয়। খালাশ পেয়ে যাওয়ার মধ্যে ছিলেন ফিল্ড মার্শাল ভন হিডেনবার্গ, যিনি পরবর্তীতে জার্মানির প্রেসিডেন্ট হন। এই হিডেনবার্গের সহায়তায়ই হিটলার ১৯৩৩ সালে জার্মানির চ্যান্সেলর হন। সুতরাং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের নেতৃবৃন্দ ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থানের সব পথ চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নাজি যুদ্ধাপরাধীদের কবর যাতে ভবিষ্যতে কেউ শহীদ সমাধি ক্ষেত্র বানাতে না পারে তার জন্য সবার কবর অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে মিত্রশক্তির ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন করা হয়। জার্মানির কোনো মানুষ আজ পর্যন্ত জানে না তাদের সমাধি কোথায় (প্রাগুক্ত)। ২০১৩ সালে এরিখ প্রাইবেক নামক প্রায় ১০০ বছর বয়সী একজন নাজি যুদ্ধাপরাধী ইতালিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগরত অবস্থায় মারা যায়। জনতার ক্রোধের মুখে ইতালি সরকার প্রাইবেকের লাশটি প্রকাশ্যে সমাহিত করতে পারেনি। প্রাইবেকের মৃত্যুর পর রোমের কাছের একটি শহরতলী আলবানা লাজিলাতে তাকে সমাহিত করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেয়, কিন্তু কবরস্থানের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে প্রায় ৫০০ বিক্ষোভকারী হত্যাকারী, কসাই ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে প্রাইবেকের লাশবাহী গাড়িতে লাথি মারতে থাকে। কারা কর্তৃপক্ষ লাশ নিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পরে প্রাইবেককে কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে তা কেউ জানে না। মৃত্যুর আগে প্রাইবেক ইচ্ছা পোষণ করেছিল আর্জেন্টিনায় তার স্ত্রীর কবরের পাশে অথবা তার জন্মস্থান জার্মানিতে যেন তাকে কবর দেওয়া হয়। কিন্তু আর্জেন্টিনা ও জার্মানি উভয়েই প্রাইবেকের লাশ গ্রহণে অসম্মতি জানায়। সর্বশেষ একই কারণে ওসামা বিন লাদেনের মরদেহ আমেরিকা কয়েক টন পাথর বেঁধে সাগরে ফেলে দেয়। এহেন আমেরিকার কর্তাব্যক্তিরা আবার বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে, ফাঁসির দণ্ড কার্যকর না করার জন্য অনুরোধ করে। সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে ২০০৩ সালে ইরাক দখলের পর প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে আমেরিকা কিভাবে কত অবমাননাকর ও অমানবিক কায়দায় বিচারে সোপর্দ করে। তারপর গোপনে প্রহসনের বিচার করে মাত্র এক বছরের মাথায় ফাঁসি কার্যকর করে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সন্ত্রাসী হিসেবে আটক করে এনে কিউবার উপকূলে গুয়ানতানামো বে'র কারাগারে বছরের পর বছর মানবাধিকারহীন অবস্থায় সীমাহীন দুর্ভোগ ও নিপীড়নের মধ্যে রেখেছে। তার দুয়েকটি কাহিনী হঠাৎ করে মিডিয়ায় প্রকাশ পেলে সেগুলো পড়ার পর কোনো মানুষের পক্ষে সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। নির্বিচারে ড্রোন হামলা চালানোর কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিনিয়ত নিরীহ বেসামরিক মানুষ মারা যাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষপ্রান্তে এসে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে আণবিক বোমা ফেলে প্রায় দুই লাখ নিরীহবেসামরিক মানুষকে আমেরিকা হত্যা করে। এরপর আমেরিকা যখন বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দণ্ড মওকুফের অনুরোধ জানায় বা জামায়াতের গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলে তখন নিশ্চয়ই ধরে নিতে হবে আমেরিকা সুদূরপ্রসারী কোনো ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ আদায়ের জন্য জামায়াত ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের পক্ষ অবলম্বন করছে নগ্নভাবে। যেটি তারা হয়তো বর্তমান সরকারের কাছ থেকে আদায় করতে পারছে না। জার্মানি ফ্যাসিবাদ ভবিষ্যতে যেন আর কখনো গাত্রোত্থান না ঘটাতে পারে তার জন্য আইন করা হয়েছে। নাজি ফ্যাসিবাদী আদর্শ ও তাদের কোনো অধিকারের পক্ষে কথা বলা ইউরোপে এখনো ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। গত বছর মিডিয়ায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় এই মর্মে যে, কেউ কোনো নাজি যুদ্ধাপরাধীদের খবর পেলে তা যেন যথাযথ সরকারি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, মৃত্যুর আগে তাদের অপকর্মের বিচার হওয়া অপরিহার্য বলে মনে করছে সভ্য জগতের মানুষ। কিন্তু বাংলাদেশে কি বিচিত্র উল্টো চিত্র প্রতিনিয়ত দেখা যায়। বুয়েটের ড. জাহাঙ্গীর আলম নামক একজন শিক্ষক প্রত্যক্ষভাবে দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ অবলম্বন এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায় অবমাননাকারী বক্তব্য দেওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না, প্রকারান্তরে ওই শিক্ষকের পক্ষ অবলম্বন করে। ফাঁসির পর কাদের মোল্লাকে শহীদ হিসেবে ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। তার মানে কি এই নয় যে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাদের মোল্লা পাকিস্তানের হয়ে কাজ করেছে। ফিরে আসি কাদের মোল্লার এপিটাফের কথায়। ফরিদপুরের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এই অপকর্মের প্রতিবাদ করে বলেছেন, কাদের মোল্লার এপিটাফে শহীদ লেখা মানে ৩০ লাখ শহীদ, সব মুক্তিযোদ্ধা এবং সমগ্র মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা করা। এই এপিটাফ অতি দ্রুত উঠিয়ে ফেলা এবং যারা এটা লাগিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে কাদের মোল্লার ভাই বলেছে, স্থানীয় জামায়াত নেতাদের সিদ্ধান্তে এই এপিটাফ লাগানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা আর জানা গেল না। শুনেছি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাকি বলেছেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখেছি। গতানুগতিক দায়সারা কথা। প্রশাসনের মনস্তাত্তি্বকতা বুঝে ওঠা এখনো দুষ্কর। মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি অবমাননা তো রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান। এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ কর্মের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রথাগত প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করতে হয়। কি কারণে কিসের ভয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এমন ক্ষেত্রে অ্যাকশনে যেতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে? এই প্রশ্নটি জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই এপিটাফ শুধু অপসারণ করলে চলবে না। এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ কাজের জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এই রাষ্ট্রদ্রোহীদের আইনের আওতায় আনা এবং দেশের সব মানুষকে আশ্বস্ত করা যে, ভবিষ্যতে আর কাউকে এমন রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করতে দেওয়া হবে না। দ্বিতীয়ত, সর্বোচ্চ আদালত থেকে নিষ্পত্তি হওয়ার পর বাকি ফাঁসির দণ্ডাদেশগুলো কার্যকর হলে তাদের কবর কোথায় কিভাবে হবে তা নিয়ে রাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সব মানুষকে নতুন করে ভাবতে হবে। মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)
false
hm
প্রোগ্রাম ছোট্ট ছিমছাম একটা হাসপাতালের চেহারাই দেখা যায় বাইরে থেকে। ভেতরে ঢুকুন। হাসপাতালই মনে হবে। আপনি রিসেপশনে যান, চশমার ওপর দিয়ে আপনার দিকে মিটমিট করে তাকাবে বয়স্কা রিসেপশন ক্লার্ক। ডানে বামে তাকান, দেখবেন ডাক্তার আর নার্সদের ছোটাছুটি, গার্নির আসাযাওয়া, ওষুধ আর জীবাণুনাশকের গন্ধ। এমনকি রোগীও দেখতে পাবেন কয়েকজন। কিন্তু হাসপাতাল নয় এটা। যদি জিজ্ঞেস করে বসেন, "তবে কী?", তাহলে উত্তর দেয়া মুশকিল। যদি জানতে চান "কেন", তাহলে হয়তো শুরুতে চোখ পাকিয়ে ধমকই দেবো একটা। বলবো, অত কিছু জানতে চান কেন? কিন্তু আপনি নাছোড়বান্দার মতো আমাকে চেপে ধরুন, দেখবেন এক সময় ঠিকই এদিক সেদিক তাকিয়ে, গলা নামিয়ে, আপনার কানের কাছে ফিসফিস করে বলবো, কারণ এর পেছনে আছে এ দেশের সরকার, আটলান্টিকের ওপারের আরেকটা দেশের সরকার, ভূমধ্যসাগরের তীরের সেই গিয়ানজামের দেশটার দুটো গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটা দেশের বিলিয়ন পাউণ্ড স্টার্লিঙের ... এই যাহ দিলাম তো কারেন্সির কথা ফাঁস করে ... যাকগে ... ফান্ড। অনেক গেরো রে বাহে। সহজ কথা যায় কি বলা সহজে? তারপরও আপনি ঝুলোঝুলি করতেই থাকবেন। করতেই থাকবেন। করতেই থাকবেন। এক পর্যায়ে আবার ফিসফিসিয়ে বলবো, প্রত্যেক বছর বাংলাদেশ থেকে একটা লোক আসে লণ্ডনে, দেখেছেন? কখনো এমিরেটসে, কখনো সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, কখনো বৃটিশ এয়ারওয়েজে ... দেখেছেন? আপনি হাসবেন। বাংলাদেশ থেকে প্রত্যেক বছর কত লোকই তো ওভাবে আসছে যাচ্ছে। বিশ্বনাথ থানাটাই তো বলা যায় এই দৌড়ের ওপর আছে। হাসবো আমিও। বলবো, উঁহু। একটা বিশেষ লোক। আপনি আমার হাসার ধরন দেখে একটু মিইয়ে যাবেন। হাসিটা অর্ধেক ঝুলে থাকবে মুখে। অনিশ্চিত কণ্ঠে বলবেন, তাহলে? আমি বলবো, একটা লোক। একটা বিশেষ লোক। আপনি বলবেন, কী করে সে এখানে? আমি হাসবো। তারপর চুপ করে বসে থাকবো কিছুক্ষণ। আপনি কাছে ঘেঁষে বসবেন। একটু ঝুঁকে। আপনার জামার ফাঁক গলে কত কিছু চোখে পড়বে আমার। কিন্তু আড়চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকলেও আর কিছু বলবো না। আপনি ঘ্যানর ঘ্যানর করতেই থাকবেন। বলুন না, বলুন না, বলুন না ...। আমি এবার একটা হাত আপনার ঘাড়ের ওপর দিয়ে কাঁধের ওপর আলতো করে রেখে বলবো, আচ্ছা, কিন্তু কাউকে বলা যাবে না কিন্তু ... খুব গোপন! ফর ইওর ইয়ারস ঔনলি! আপনি আরেকটু ঘেঁষে বসবেন। আমি ফিসফিস করে বলবো, লোকটা আসে। নামে বিমান থেকে। হোটেলে ওঠে। যদিও লণ্ডনে তার একটা বাড়ি আছে। কিন্তু সরাসরি ওখানে সে যায় না। তাহলে? ফিসফিসিয়ে জানতে চাইবেন আপনি। হোটেলেই ওঠে সে। একটা দিন জিরোয়। তারপর যায় সেই হাসপাতালে। একটা কালো ক্যাডিলাকে চড়ে। তার কাঁচ আবার একটু অন্ধকার মতো। সে যখন নামে, তখন একটা ফেডোরা হ্যাট ঝুঁকিয়ে তার মুখটাকে খানিকটা আড়াল করে রাখে। তারপর চটপট ঢুকে পড়ে সেই না-হাসপাতালটার ভেতরে। কেন? আবারও ফিসফিস করেন আপনি। আমি এবার একটু চেপে ধরি আপনাকে। সামান্য চিপক্কে যাকে বলে। আপনি আপত্তি করেন না। আমি বলি, কেন আবার? ঐ না-হাসপাতালটা যে দু'দুটো সরকার, দু'দুটো ইনস্টিটিউট আর দু'দু বিলিয়ন পাউণ্ড স্টার্লিং কেবল প্রোগ্রামের পেছনেই ব্যয় করে? প্রোগ্রাম? আমি জিভ কাটি। সভয়ে তাকাই ডানে বায়ে। গুপ্তচরদের বিশ্বাস নেই, বলি আমি। বিনোকিউলারে ঠোঁটের নড়াচড়া দেখেই যা বোঝার বুঝে নেয় বেটারা। প্রোগ্রাম কী? আপনি একটা হাত আমার ঊরুর ওপর রেখে জানতে চান সাগ্রহে। আমি একটু দ্বিধা নিয়ে তাকাই আপনার চোখের দিকে, তারপর আড়চোখে আবার জামার ফাঁকের দিকে। বলি, উমমমমম, ওটাই কোডনেম। কীসের? আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি। তারপর বলি, শুনুন আগে। সেই না-হাসপাতালে ঢুকে পড়ে লোকটা। তারপর সোজা চলে যায় একটা ঘরে। সে ঘরে কী আছে জানেন? না! কী আছে? জানতে চান আপনি। সে ঘরে একটা লিফট আছে। কিন্তু হাসপাতালটা তো একতলা! আমি হাসি। "হুঁ! এই তো ধরে ফেলেছেন। ওপরে ওঠে না সে লিফট, নিচে নামে। নিচে কী আছে? আপনি চোখ বড় বড় করে জানতে চান। আমি মুখ টিপে হাসি। তারপর বলি, এক বিরাট ল্যাব! কী হয় সে ল্যাবে? রুদ্ধশ্বাসে জানতে চান আপনি। আমি এবার বেশ কষে চেপে ধরি আপনাকে। বলি, জানতে চান? বলছি শুনুন! সেই ল্যাবে প্রথমে লোকটা খুলে রাখে নিজের ফেডোরা হ্যাট। তারপর ডাস্টকোট। তারপর খোলে গলায় বাঁধা রুমাল ...। আহ, বললেই হয় সব জামা কাপড় খুলে রাখে! আপনি ক্ষেপে ওঠেন। আমি বলি, হুঁ! কিন্তু আপনি কীভাবে জানলেন? আপনি এবার কিল মারেন আমার বুকে। সত্যিকারের কিল নয়, ছদ্মকিল। আমি হাসি। তারপর? নাঙ্গা হয়ে সে কোথায় যায়? আমি গম্ভীর মুখে বলি, সে শুয়ে পড়ে একটা স্টিলের বিছানার ওপর। তার ওপর নরম গদি বিছানো আছে অবশ্য। তারপর?? আপনি একটু সোজা হয়ে বসতে চান, কিন্তু হে হে, ওরকম চিপক্কে ধরে রেখেছি, সোজা হওয়া কি এত সোজা? আমি ফিসফিস করে বলি, পাশের ঘর থেকে মুখে মাস্ক আর অ্যাপ্রন পরা দু'জন লোক বেরিয়ে আসে। তারা রয়েসয়ে এক জোড়া গ্লাভস পরে নেয়। তারপর একজন অ্যানেসথিশিয়ার যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়, আরেকজন বার করে একটা চকচকে ক্ষুর। ক্ষুর কেন? আপনি শুধান। মাথা কামানোর জন্যে। কেন? মাথার চুলগুলো না কামালে যন্ত্রটা মাথায় বসাবে কী করে? কীসের যন্ত্র? আরে, অজ্ঞান করার পর যেটা মাথায় বসানো হয়, সেটা? আপনি আমতা আমতা করে কেবল বলেন, কোন যন্ত্রটা কোন যন্ত্রটা কোন যন্ত্রটা ...। আরেকটু চেপে ধরি আপনার নরম শরীরটাকে। আপনি তেমন আপত্তিও করেন না, বলেন, বলুন না কোন যন্ত্রটা? আমি হাসি আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে। বেশ ডাগর কিন্তু। বলি, যেটা দিয়ে তার সমস্ত স্মৃতি শুষে নেয়া হয়, সেটা! স্মৃতি কেন শুষে নেয়া হয়? আপনি জানতে চান অবোধ শিশুর মতো। বলি, শুধু কি তাই? স্মৃতি শুষে নিয়ে জমা করা হয় একটা বিশেষ অর্ধতরলে ভরা বিশাল জারে। আপনি বলেন, কীভাবে? আমি বলি, আমাদের স্মৃতি আসলে কী? কিছু তড়িৎ-রাসায়নিক সংযোগেরই তো ফসল? সেটাই তৈরি করেছে সেই দু'দুটো সরকার, দু'দুটো ইনস্টিটিউট আর দু'দু' বিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিঙের ফান্ড মিলে। আপনি কিছু বলেন না, চোখ গোল গোল করে শোনেন। আ-র-ও চেপে ধরি এবার আপনাকে। বলি, মাই লেডি, এখানেই শেষ নয়। একটা বিশেষ ফ্রিজ থেকে কী বার করে আনা হয়েছে পাশের ঘরে, ঘন্টা খানেক আগে, জানেন? আপনি মাথা নাড়েন বিস্ফারিত চোখে। একটা শরীর। দড়ির মতো পাকানো পেশী আর কুচকুচে কালো চুল তার মাথায়। তবে ...। আপনার শ্বাস একটু দ্রুত হয়, টের পাই। টের আবার পাবো না? আরো চিপক্কে যে! আমি নখ দেখি। আপনি আমাকে খামচে ধরেন এবার। তবে কী? মুখের চামড়া একটু কোঁচকানো। কৃত্রিমভাবে বয়সের ছাপ ফুটিয়ে তোলা সে মুখে। কিন্তু কেন? বলছি। এরপর সে শরীরটাকে চাপানো হয় আরেকটা গদি মোড়ানো স্টিলের বিছানায়। তারপর আরেকটা যন্ত্র বসানো হয় তার মাথায়। চুল কামালো না যে? এই যন্ত্রে আর চুল কামাতে হয় না। ও! আচ্ছা ... তারপর? তারপর সেই যে অর্ধতরলে টইটম্বুর জার ... ওটা থেকে সমস্ত স্মৃতি আবার ঢোকানো হয় এই শরীরের মগজে। কেন? কারণ এই শরীরটা কৃত্রিমভাবে ক্লোন থেকে বড় করা। ওর মগজ আছে, কিন্তু স্মৃতি নেই। তারপর? তারপর একসময় সমস্ত স্মৃতি ডাউনলোড শেষ হয়। ওহ! তারপর? তারপর লোকটা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। আচ্ছা! হুমমম! পুরনো শরীরটাকে একটা চুলোতে ফেলে একদম পুড়িয়ে ছাই করা হয়। আর নতুন শরীরটা বেরিয়ে আসে? হুঁ। বিছানা থেকে উঠে প্রথমে গলায় রুমালটা বেধে নেয়। তারপর জাঙ্গিয়া, গেঞ্জি, প্যান্ট ...। বুঝেছি বুঝেছি! এজন্যই ব্যাটা বুড়ো হয় না! আর মরে না! আর ওরকম কুচকুচে চুল দেখা যায় টিভিতে! আচ্ছাআআআআআ! তারপর কী হয় বলুন! আপনি একটু যেন অধৈর্য হয়ে ওঠেন। অভয় দেয়ার জন্যে আরেকটু চেপে ধরি। তারপর যায় লন্ডনে তার নিজের বাড়িতে। এবার তো পার্টি টাইম। নতুন শরীর, একটু খেলিয়ে দেখতে হবে না? যাহ আপনি অসভ্য একটা! আরে না সত্যি! তাহলে বইতে যে পড়েছিলাম, কী সব পিল যেন খেতে হয় ব্যাটাকে? হুঁ। কী করবে বলুন, ক্লোন তো। আসল শরীরের মতোই। একটু টাটকা, হার্ট-কিডনি-লিভার সব টনটনে, কিন্তু ঐ ডিপার্টমেন্টে তো সেই পুরনো শরীরটার মতোই গণ্ডগোল। সে কী? দু'দুটো সরকার, দু'দুটো ইনস্টিটিউট, দু'দু বিলিয়ন ডলারের ফান্ড মিলে ঐ ডিপার্টমেন্টের জন্য কিছু করতে পারলো না? আমি মাথা নাড়ি। ফান্ডে শর্ট পড়েছিলো বুঝলেন। সময়মতো কেউ খেয়াল করেনি ব্যাপারটা। কী নাম সেই না-হাসপাতালের? আপনি জানতে চান। আমি হাসি। কেন, যাবেন নাকি আপনিও? আপনি কিল মারেন আমার বুকে। ছদ্মকিল, আগেরটার মতোই। এটায় জোর আরো কম অবশ্য। যেভাবে চিপক্কে ধরেছি বুকের সাথে, আয়েশ করে কিল মারার জায়গাই বা কোথায়? বলেন না! আমি মাথা নাড়ি। কেন? প্লিজ প্লিজ প্লিজ। না। তাহলে ঐ প্রোজেক্টটার নাম বলেন। গুগল মেরে ঠিক বের করে ফেলবো। এবার হাসি আমি হো হো করে। আরো চেপে ধরি আপনাকে। বলি, এরকম গোপন প্রোজেক্টের খবর কি আর গুগলে আছে রে বোকা সুন্দরী? "প্রোগ্রাম" লিখে সার্চ করলে আসবে না? আপনি জানতে চান। কে জানে! কখনো তো করে দেখিনি। তবে প্রোজেক্টের নামটা বলতে পারি। আপনি আরো ঘনিয়ে আসেন। কী, কী, কী? ইলেকট্রোকেমিক্যালি রিচার্জড সিমবায়োটিক হিউম্যানয়েড (অ্যানুয়ালি ডিকমিশন্ড)। ওফফফ কী বিচ্ছিরি নাম! আপনি নাক কোঁচকান। অনেক কিউট লাগে ওভাবে আপনাকে, সত্যি। ইংরেজিতে সহজ অবশ্য। আমি বলি। কী? সোজা। অ্যাক্রোনিমটা বানান। ERSH[AD] ।
false
hm
ভারত বনধ, মার্চ ১: এয়ারটেল সচলায়তনে এর আগে ভারত বনধ কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন অনেকে। সংক্ষেপে এই কর্মসূচি সম্পর্কে আবার সবাইকে জানাতে চাই। ১। এই কর্মসূচি সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক নির্বিচার হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদ হিসেবে পালিত হচ্ছে। ২। ভারত তার অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর নাগরিকের সাথে এমন আচরণ করে না, তাই আমরা বুঝতে পারি, বাংলাদেশী নাগরিকের সাথে এমন আচরণের পেছনে ভারতীয় রাজনীতিক ও আমলাযন্ত্রের একটি সুস্পষ্ট তাচ্ছিল্য ও ঘৃণা কাজ করে। আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একটি বড় বাজার, কিন্তু সেই বাজারে ক্রেতা হয়েও আমরা মার খাই। আমরা তাদের মালও কিনবো, তাদের মারও খাবো, এমনটা চলবে না। ৩। আমরা চাই ভারত আমাদের প্রাপ্য সম্মান দিক। আমাদের আচরণ না পাল্টালে তারা আমাদের সম্মানের চোখে দেখবে না। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক যেহেতু প্রায় একতরফা বিক্রেতা ও ক্রেতার, তাই ভারতকে প্রতিবেশীসুলভ ভদ্র আচরণ করতে চাপ দেয়ার একটিই উপায়, তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে দাগ কাটা। ৪। ১ মার্চ আমরা তাই একদিনের জন্যে ভারতের সমস্ত পণ্য, সেবা, বিনোদন বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছি। ৫। এই আহ্বান খুব বেশি মানুষের কাছে না-ও পৌঁছাতে পারে, কিন্তু এক দিনেই আমরা সবাইকে আমাদের পাশে পাবো, এমনটিও আমরা আশা করছি না। এই বর্জন কর্মসূচি ভবিষ্যতে নিয়মিত পালিত হবে, এবং আরো অনেক বর্জন দিবসের প্রথম দিনটি ১ মার্চ। ৬। এই কর্মসূচি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন কর্মসূচি নয়। এটি ভারত রাষ্ট্রের রাজনীতিক ও আমলাযন্ত্রের বিপরীতে আপনার একার প্রতিবাদ কর্মসূচি। আপনাকে লোকদেখানো মানববন্ধন করতে হবে না, রাস্তায় নেমে কলিজাকাঁপানো বক্তৃতাও দিতে হবে না, শুধু নীরবে ভারতকে প্রতিদিন যে টাকা যুগিয়ে চলছেন, সেটি ১ দিনের জন্য বন্ধ করুন। প্রশ্ন উঠতে পারে, আমরা অল্প কয়েকজন মানুষ এই কর্মসূচি পালন করলে ভারতের কী এসে যাবে? বাংলাদেশে তারা হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য বৈধ ও অবৈধ পথে বিক্রি করে, আমাদের অল্প কয়েকজনের বর্জনে কী এসে যাবে? এর উত্তর হচ্ছে, এই বর্জন কর্মসূচিতে আমরা যেন একদিনেই অভীষ্ট লাভের স্বপ্ন না দেখি। আমরা গত চল্লিশ বছর ধরে একটু একটু করে নিজেদের অবকাঠামো পণ্ড করে ভারতের একটি বিরাট বাজারে পরিণত হয়েছি, এবং এই প্রক্রিয়ার এক পর্যায়ে ভারতের চোখে তুচ্ছ একটি জাতিতে পরিণত হয়েছি, যাদের চাইলেই উলঙ্গ করে পেটানো যায়। একদিনে আমরা এই পরিস্থিতি উল্টে ফেলতে পারবো না। এই বর্জন আমাদের হাতে একটি শান্তিপূর্ণ কিন্তু শক্তিশালী অস্ত্র, এর নিয়মিত চর্চা এবং প্রচার আমাদের শক্তিবৃদ্ধি করবে, এবং ভারতের রাজনীতিক ও আমলাযন্ত্রের কাছে ক্রমশ শক্তিশালী বার্তা পৌঁছাবে। বাণিজ্যিক স্বার্থে আঁচড় পড়লে ভারতের ব্যবসায়ীরাই তাদের রাজনীতিক ও আমলাযন্ত্রকে পরিস্থিতি বাণিজ্যিক স্বার্থের অনুকূলে রাখার জন্যে ভদ্র আচরণ করতে চাপ দেবে। কিন্তু সে জন্যে প্রয়োজন একটি জোরালো বার্তা পৌঁছানো। ভারতের বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সক্রিয়, তার মধ্যে একটি হচ্ছে এয়ারটেল। এয়ারটেলের গ্রাহকরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, যারা একদিনের জন্যে এয়ারটেলের সেবা বর্জন করে এই বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটিকে একটি সঙ্কেত দিতে পারবেন। আকাশে মেঘ করলে আমরা তেমন গা করি না, কিন্তু যখন সূর্যগ্রহণ হয়, তখন সেদিকে মনোযোগ দিতে বাধ্য হই। আমাদের উদ্দেশ্য, একদিনের জন্যে বর্জনের মাধ্যমে এয়ারটেল কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টিগ্রাহ্য একটি মেসেজ পৌঁছে দেয়া। অর্থাৎ, এয়ারেটেলের আয়ের লেখচিত্রটি যেন এমন হয়, অন্য সব পণ্য, সেবা, বিনোদনের পাশাপাশি কেন এয়ারটেলকেই বর্জন করতে বলছি? কারণ এই প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক অসংখ্য সাধারণ মানুষ। ভারতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক হয়তো অল্প কিছু মানুষ, যারা ব্যবসায়িক স্বার্থে ১ দিনের জন্যে ভারত বনধে অংশ নেবেন না, অথবা নিলেও ১ দিনের বর্জনের কারণে দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো মেসেজ সে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পৌঁছাবে না। কিন্তু টেলিযোগাযোগ খাতে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে রিপোর্টিং হয়, এবং সেখানে প্রচুর সংখ্যক সাধারণ মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণ থাকায় প্রত্যেকের পক্ষেই আলাদাভাবে নিজের কাজটি করা সম্ভব হয়। আমরা চাই, এই শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অপমানিত হবার বিষয়টি উপলব্ধি করুক, এবং ভবিষ্যতে বর্জনের কারণে আর্থিক ক্ষতি এড়ানোর জন্যে বিষয়টি তাদের হাইকমিশনের কাছে তুলে ধরুক। ১ মার্চ রাত বারোটা থেকে ২ মার্চ রাত বারোটা পর্যন্ত এয়ারটেলসহ সকল ভারতীয় পণ্য, সেবা, বিনোদন গ্রহণ থেকে বিরত থাকি, আসুন। বিএসএফের একটি ইনসাস ৫.৫৬ ক্যালিবারের রাইফেলের দাম খোলা বাজারে ৩০০ ইউ এস ডলার, এক একটি গুলি তৈরিতে তাদের ব্যয় হয় আনুমানিক ৫-১০ রূপি। আপনিই হিসাব করে দেখুন, সারা বছর ধরে আপনি ভারতকে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী নিধনের জন্যে কতগুলো রাইফেল আর কতগুলো গুলি কেনার টাকা তুলে দিচ্ছেন। একটি দিনের জন্যে সেই কাজ থেকে বিরত থাকুন। ১ মার্চ ভারত বনধে নিজে অংশ নিন, আপনার পরিজনকেও অংশ নিতে বলুন। রাজনীতিকদের গালি দেয়া খুব সহজ, প্রমাণ করুন আপনি তাদের চেয়ে ভালো, প্রমাণ করুন আপনার গায়ের চামড়া তাদের চেয়ে পাতলা, প্রমাণ করুন নিজের সম্মান আপনি নিজে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে জানেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বেডরুম পাহারা দেয়া সরকারের দায়িত্ব নয়। তাই আপনার বেডরুমে ঢুকে পড়া ভারতীয় বাণিজ্যের হাতিটিকে শনাক্ত করুন, তাকে ঘাড়ে ধরে বেডরুম থেকে বার করে দিন সরকারের সাহায্য ছাড়াই। না পারলে সরকারকে গালি দিয়ে লাভ নাই, আপনিও তাদের মতোই। ধন্যবাদ। এই বার্তাটি ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে কৃতজ্ঞতা জানাই। মন্তব্য থেকে সংযোজন [সৌজন্য: সাফি] এই লিঙ্কে ক্লিক করলে এয়ারটেলের অফিসের ইমেইল ঠিকানা সম্বলিত একটি ইমেইল, আপনার প্রিয় ইমেইল সফটওয়্যার এ খুলে যাবে (জিমেইল ব্যবহারকারীরা এই লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেন।) এয়ারটেল বর্জনের পাশাপাশি কেন আপনি এয়ারটেল ব্যবহার থেকে বিরত আছেন, সেটা যদি ইমেইল করে এয়ারটেল কর্তৃপক্ষকে জানানো যায়, তাহলে সেটা আরো ভাল কাজ দিবে বলে আশা করি।
false
mk
সজীব ওয়াজেদ জয় _ নৌকার নতুন কাণ্ডারি সজীব ওয়াজেদ জয় একটি নতুন বাংলাদেশের নাম, অগ্রসরমান এদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পথের দিশা। তাঁর নেতৃত্বে নৌকার জোয়ার আরম্ভ হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকার নতুন কা-ারি। ১ নভেম্বর (২০১৩) থেকে তিনি দেশের গ্রাম-গঞ্জের পথে-ঘাটে চলতে শুরু করেছেন। প্রদীপ্ত শিখার মতো তাঁর ঔজ্জ্বল্য বিএনপি-জামায়াতকে হতবিহ্বল করে তুলেছে। তিনি মাঠে-ময়দানের বাংলার জনগণকে বলছেন, ‘উন্নয়নের ধারা সচল রাখতে নৌকায় ভোট দিন।’ আরো যুক্ত করছেন ‘বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী দল, ওরা ক্ষমতায় এলে ফের হাওয়া ভবন, জঙ্গিবাদ।’ তাঁর পথসভাগুলোতে অসংখ্য মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর মতোই দরদ ঢেলে বক্তৃতার পর বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন। তিনি জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছেন যে, আওয়ামী লীগকে পুনরায় বিজয়ী করা ছাড়া এদেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক ও দেশকে প্রকৃত অর্থে ভালোবাসে আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দলটিই। এজন্য সংবিধান মান্য করে নির্বাচিতদের নিয়ে গঠিত সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে তাঁর প্রত্যাশা। কারণ জাতি এখন আর কোনো অনির্বাচিত সরকার দেখতে চায় না। কোনো অনির্বাচিতরা আর তত্ত্বাবধায়কের নামে ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। তাঁর এই যুক্তিবাদী কথার পর বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধকে তরুণ প্রজন্ম প্রত্যাখ্যান করবে এটাই স্বাভাবিক।সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য স্পষ্ট। বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্যের শুরুতেই তিনি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সিরিজ জয়ে দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ক্রিকেট টিমকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। যুক্তি দিয়ে তিনি মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, বিএনপি-জামায়াত ‘সন্ত্রাসী দল’। তিনি বলেছেন, দেশের মানুষ বিএনপিকে ভোট দিলে দেশে আবারও সন্ত্রাস ফিরে আসবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, লোডশেডিং, গ্রামে গ্রামে মঙ্গার পাশাপাশি দেশে ফের ‘হাওয়া ভবন’ ফিরে আসবে। দেশের জনগণ কোনো সন্ত্রাসী দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই দেশকে পুরোপুরি সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে এবং উন্নয়ন-সমৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।আমাদের মতে তিনি সত্য কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসমুক্ত থাকে, সার্বিক উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানেই লুটপাট, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস। বিএনপি বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, সন্ত্রাসী কর্মকা- করছে। তারা বিগত সময়ে ক্ষমতায় থাকাকালে যেভাবে দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সন্ত্রাসী কর্মকা- করছে। এখন হুজি, জামায়াত, শিবিরকে জঙ্গিদের মাঠে নামিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত আর রাজনৈতিক দল নয়, সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এখন যেমন তেমনি আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে, প্রতিটি গ্রামে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা হবে, যেখানে বিনামূল্যে মানুষ চিকিৎসাসেবা পাবে। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা রয়েছে বর্তমান সরকারের। স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষাকার্যক্রম অবৈতনিক করারও টার্গেট রয়েছে এ সরকারের। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত জোট আবার ক্ষমতায় আসলে দেশে জঙ্গিবাদ, বোমাবাজি ও সন্ত্রাস ফিরে আসবে। দেশে সর্বদলীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন করতে বিরোধী দলের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হলেও বিএনপি সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ৩ দিনের হরতাল (২৭-২৯ অক্টোবর) দিয়ে ২২ জন মানুষকে হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিএনপি নেত্রীকে ফোন করে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে অনুরোধ উপেক্ষা করে বিএনপি নেত্রী ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন, হরতাল দিয়ে বোমা হামলা চালিয়েছেন। একই উদ্দেশ্যে বিএনপি জোট আবারো ১০, ১১,১২ ও ১৩ নভেম্বর হরতালের ডাক দিয়েছে।সজীব ওয়াজেদ জয়ের মতো সাধারণ জনগণও এখন বলতে শুরু করেছে, যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, কোনো অনির্বাচিত সরকারকে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। আলোচনার পথ ছেড়ে বিএনপি হরতাল দিয়ে আইনমন্ত্রীর বাসভবন, আইসিটি প্রসিকিউটরের বাসভবন, বিচারপতির বাসভবনসহ বিভিন্নস্থানে বোমা মেরে শিশুসহ অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। অথচ বিএনপি বলেছে ২১ জন কম হয়ে গেছে। আগামীতে হরতাল হলে ৪০ জন মারা যাবে। এটা গণতন্ত্রের লক্ষণ হতে পারে না। তাই দেশের জনগণ কোনো সন্ত্রাসী দলকে আবারও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়া জরুরি। উল্লেখ্য, দেশবাসী টিভিতে দেখেছেন ও শুনেছেন কীভাবে বিরোধীদলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করেছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য তিনি শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন। অথচ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য গ্রেফতারকৃত মুফতি হান্নান সাক্ষ্য দিয়েছেন খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান হাওয়া ভবন থেকে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করেছে। খালেদা জিয়ার স্বরাষ্ট প্রতিমন্ত্রী বাবর আজ কারাগারে। তারপরও খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন। এরকম মিথ্যাচার কোনো নেত্রীর কাছ থেকে জনগণ আশা করে না। মূল লেখা: স্বদেশ খবর.কম
false
mk
বিএনপির মোদিপ্রিয়তা কি কৌশলগত_ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর শেষ হয়েছে সাত দিন আগে। কিন্তু এ সফর নিয়ে আলোচনা শেষ হচ্ছে না। সমালোচনাও শুরু হয়েছে কিছু কিছু। মনে হয় এসব চলবে আরও অনেক দিন। তার আসার আগে আলোচনা ছিল, মোদি কি বাংলাদেশকে কিছু দিতে আসছেন না কি বাংলাদেশ থেকে নিতে আসছেন? তার এ সফরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কি আগের মতো নাতিশীতোষ্ণ থাকবে না কি উষ্ণতা ছড়াবে? পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটা দৃঢ় হবে কি? তার চলে যাওয়ার পর আলোচনা শুরু হয়েছে, তিনি আমাদের কী দিলেন আর ভারতের জন্য কী নিয়ে গেলেন? দিন যত যাচ্ছে, মনে হচ্ছে 'মোদি-ঘোর' বুঝি কেটে যাচ্ছে। তার এ সফরকে উভয় দেশের স্বার্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলতে হবে। মাত্র ৩৫ ঘণ্টার সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ৬৫ দফা যৌথ ঘোষণাও এসেছে। বলা বাহুল্য, দুই দেশের কাছেই পারস্পরিক স্বার্থ আছে পরস্পরের। ভারতের মোটা দাগের স্বার্থ- ১. ট্রানজিট-কানেকটিভিটি ২. ইনসারজেন্সি রোধে সহযোগিতা ৩. পুঁজি বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি ৪. বাণিজ্য সম্প্রসারণ ৫. চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারের সুযোগ এবং জঙ্গি দমনে সহযোগিতা। বাংলাদেশের স্বার্থ মোটা দাগে- ১. পানি সমস্যা ২. সীমান্ত হত্যা ৩. সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও মৌলবাদীদের আশ্রয় ও ভূমি-সহযোগিতা বন্ধ ৪. বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ও বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমানো ৫. বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহারে ক্ষতিপূরণ ও ন্যায্য শুল্ক প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ দমনে কার্যকর পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতি আন্তরিকতা। উল্লিখিত বিষয়াবলি ছাড়াও আরও অনেক স্বার্থ আছে দুই দেশেরই।নরেন্দ্র মোদির এই সফরের তাৎক্ষণিক ফলাফল আশা করা ঠিক নয়। তবে ভারতের কোনো রাষ্ট্রনেতার বাংলাদেশ সফর এমন সর্বদলীয় বরণমালায় ইতিপূর্বে কখনো ধন্য হয়নি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করার জন্য বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে আগ্রহের কমতি ছিল না বললেই চলে, বলা চলে উভয় দলের মধ্যে একটা দৃষ্টকটু, রুচিহীন প্রতিযোগিতাই যেন হয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকজন ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করে অসীম তৃপ্তিবোধ করেন। তবে অনেক বাংলাদেশি যেমন জানেন যে, এ সম্পর্কটা গড়ে উঠেছে সেই দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান 'অল ইন্ডিয়া কংগ্রেসের মাধ্যমে, তা বিজেপি নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও না জানার কথা নয়। ভারতের সরকারি-বেসরকারি নেতা-নেত্রীর ব্যাপারে আওয়ামী লীগের স্বাভাবিক আগ্রহের চেয়ে নরেন্দ্র মোদির ব্যাপারে আগ্রহী এবার দুই কারণে অনেকটা বেশি বলে মনে হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিতর্কিত, আদর্শবর্জিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত লীগ সরকারের স্বীকৃতি। বিশ্বের প্রায় সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং কমনওয়েলথ, ইইউ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী মহল কর্তৃক প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনটির ব্যাপারে মোদি সরকারের এমন একটা স্বীকৃতি লীগ সরকারের জন্য তাদের নীতিনির্ধারকরা জরুরি মনে করাটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ বাংলাদেশের মানুষ জানেন যে, ওই নির্বাচনটি তারা একতরফাভাবে করতে পেরেছিলেন ভারতের তৎকালীন ক্ষমতাসীন কংগ্রেসি সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে। নির্বাচনের আগে সে দেশের কংগ্রেসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদ এবং পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের বাংলাদেশে আগমন ও তৎপরতা সম্পর্কে দেশ-বিদেশের সচেতন মহলের জানা আছে। উল্লেখ্য, মোদি সরকার সুজাতা সিংকে পদচ্যুত করেছে। লীগ সরকারের মধ্যে দুর্ভাবনা থাকা অস্বাভাবিক নয়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও একটা ধারণা আছে যে, কংগ্রেস বা কংগ্রেসি সরকারের কাছ থেকে আওয়ামী লীগ বা সরকার যে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার কথা বিজেপি বা বিজেপি সরকারের কাছ থেকে তা নিশ্চয়ই পাবে না। এতে লীগ সরকার একটা দুর্বলতায় ভোগার কথা। নরেন্দ্র মোদির সফরকে পুঁজি করে তারা জনগণকে এ ধারণা দিতে চেয়েছে যে, ভারতে দল বড় কথা নয়, সরকার বলে কথা। ভারতে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, তারা আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, কংগ্রেসের সঙ্গে অনেকটা 'সাপে-নেউলে' সম্পর্কের বিজেপির প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশ করে দল হিসেবে বিজেপির সঙ্গেও সখ্য গড়ে তোলা। মনে হয় ভারত রাষ্ট্রের চেয়ে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারই গুরুত্ব পেয়েছে বেশি।বিস্ময়কর ছিল বিএনপির ভূমিকা। দলটির পক্ষ থেকে এখন যাই বলা হোক না কেন, তাদের ভারত-বৈরী মনোভাব কারোই অজানা থাকার কথা নয়। জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময় বাদ দিয়ে ভারতের কোনো রাষ্ট্র নেতা-নেত্রীর ব্যাপারে বিএনপি কখনো এমন আগ্রহ দেখায়নি। বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের কোনো পদক্ষেপকেই সাধুবাদ জানায়নি দলটি। বাংলাদেশ-ভারত নানা সমস্যা নিয়ে, 'ফেলানীদের' লাশ নিয়ে কথাবার্তা এ দেশের দলবহির্ভূত বা বাম প্রগতিশীল দলসমূহও বলেছে। ওইসব বক্তব্য আর ভারত-বৈরিতা কিন্তু এক নয়। অন্যদের সঙ্গে বিএনপির পার্থক্যটা ছিল এক জায়গায় যে, অন্যদের বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো ইস্যুভিত্তিক বক্তব্যে ভারতের প্রসঙ্গ এসেছে, আসে; আর বিএনপি ভারত-বৈরী অবস্থান থেকেই কোনো একটা ইস্যুকে অ্যাড্রেস করে। অথচ আমরা অনেকে বহু আগে থেকেই বলার চেষ্টা করেছি যে, বিএনপির ভারতনীতি ভুল। ভারত-বৈরী নীতি নিয়ে বাংলাদেশে 'নীতিবাগিশ' বাগাড়ম্বরের রাজনীতি করা যাবে, দেশ ও জনগণের কল্যাণের জন্য যে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া দরকার সেই ক্ষমতায় রাজনীতিকরা যাবে না। পৃথিবীর কোথাও বৃহৎ নিকট প্রতিবেশীর সঙ্গে বৈরী আচরণ করে কোনো রাষ্ট্র ও জাতির কল্যাণ হয়নি। ভারত বাংলাদেশের অতি নিকট ও বৃহৎ প্রতিবেশী। ভারতের আয়তনই শুধু বড় নয়, বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ভারত, বিশ্বের উঠতি পরাশক্তি তারা এবং বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারত। এমন প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক, সদ্ভাব, আয়তন ও অর্থনীতির দিকসহ নানা সক্ষমতার প্রশ্নে পিছিয়ে থাকা দেশের উন্নতি, অগ্রগতি, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য খুবই জরুরি। বন্ধু পাল্টানো যায়, কিন্তু প্রতিবেশী পাল্টানো যায় না। প্রতিবেশী ছোট হোক কিংবা বড় হোক, খারাপ সম্পর্ক রেখে ভালো থাকা যায় না। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব আর ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বকে একই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা ঠিক হবে না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সশস্ত্র আক্রমণের মুখে এক কোটি বাঙালি শরণার্থীকে ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশ আশ্রয় দেয়নি, মুক্তিযুদ্ধে সর্বতো সহযোগিতা ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশ করেনি, সর্বোপরি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় জওয়ানরা ছাড়া অন্য কোনো দেশের সৈন্য রক্ত ও জীবন দেয়নি। কাজেই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের স্তরটা নির্ণয় করতে হবে এই নিরিখে। তাই বলে কোনো বিষয়ের সমালোচনা হবে না? করা যাবে না? নিশ্চয়ই যাবে। তবে তা হতে হবে বন্ধুকে বন্ধুর সমালোচনার মতো, শত্রুকে শত্রুর সমালোচনার মতো নয়। বিএনপির সাবেক মহাসচিব মরহুম আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এই মৌলিক বিষয়টিতে ছিলেন খুবই সেনসেটিভ। উভয় দেশের স্বার্থরক্ষা ও সংকট নিরসনে তিনি দুই দেশের মধ্যে একটা 'প্যাকেজ ডিল'-এর কথা বলতেন প্রায়শ। সে জন্য তাকে কখনো বলা হতো কমিউনিস্ট, কখনো নামাজ কালাম না পড়া নাস্তিক আবার কখনো বলা হতো ভারতের দালাল। বিএনপির অভ্যন্তরে বর্তমানে জামায়াত ঘনিষ্ঠ শক্তিশালী চরম দক্ষিণপন্থি যে প্রতিক্রিয়াশীলরা বিএনপি নিয়ন্ত্রণ করে তারাই এসব বলত।বেগম খালেদা জিয়ার 'মোদি ইস্যুতে' গৃহীত অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে ওই চক্রের প্রাচীর তিনি ভাঙার চেষ্টা করছেন। তবে দেখতে হবে এটা কতটা নীতিগত, কতটা কৌশলগত। এটাও মনে করার কারণ আছে যে, এবার দল পুনর্গঠনের যে কথা শোনা যাচ্ছে তাতে দলের প্রগতিশীল গণতন্ত্রী ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদ ও আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক, মেধাবী এবং সাহসী তরুণদের সামনে আনা হতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যাপারে বিএনপির ভূমিকা অবশ্যই মোদিকে শুধু নয়, তার দল বিজেপিকে জয় করার একটি প্রচেষ্টা। ভারতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে বিএনপির কখনোই কোনো সম্পর্ক ছিল না। এক দেশের এক দলের সঙ্গে আরেক দেশের আরেক দলের বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক থাকতে পারে। তাতে দুই দলের মধ্যেই শুধু নয়, এর মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যেও একটা মৈত্রীর সেতু নির্মিত হয়। এই মৈত্রী দেশের কাজে লাগে। বিজেপি কংগ্রেসের প্রতিপক্ষ- বিএনপি-আওয়ামী লীগের মতো। সে ক্ষেত্রে বিএনপি বিজেপির সঙ্গে মৈত্রীবন্ধন গড়তে আগ্রহী হতে পারে এই ভেবে যে, কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মৈত্রী অবিনাশী, ক্ষমতায় না থাকলে আওয়ামী লীগ আবারও ফিরে যাবে কংগ্রেসের কাছে তা বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদিও জানেন। আওয়ামী লীগ নেতারা, তাদের পক্ষের বুদ্ধিজীবীরা, টকশোতে তাদের 'দলদাস'রা এমনকি কোনো কোনো উপস্থাপক-উপস্থাপিকাও মোদির সঙ্গে বেগম জিয়ার বৈঠক নিয়ে নানা উপহাস করছেন। ওদের 'পেটের কামড়টা' কেন তা বোঝা যায়। তারা চায় না কোনো রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের উন্নতি হোক। তারা চান সম্পর্ক যা থাকার আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, একই সঙ্গে তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে- এ কথাও বলেছেন। আওয়ামী লীগের 'দলদাস'রা এ কথার মর্মার্থ কী উপলব্ধি করতে পারেন? পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিএনপির বর্তমান অবস্থান বাস্তবসম্মত ও যথার্থ। এটা স্পষ্টতই বিএনপির ভারতনীতির পরিবর্তন। বিএনপি কখনো ভারতবিরোধী ছিল না- এই ধরনের বাকোয়াজের মাধ্যমে ধূম্রজাল সৃষ্টি না করে তাদের বলা উচিত, হ্যাঁ, আমাদের আগের ভারতনীতি ভুল ছিল, তা আমরা শুধরে নিলাম। হঠাৎ আবার প্রতিক্রিয়াশীলদের পেইড এজেন্ট কোনো কর্মচারী আবার যেন বিবৃতি দিয়ে না বসে যে, 'বিএনপির ভারতনীতিতে কোনো পরিবর্তন হবে না।' বেগম জিয়ার সর্বশেষ ভারত সফরের সময় এমন একটি কাণ্ড কিন্তু ঘটেছিল। বিএনপির কিছু ইনসিগনিফিকেন্ট লোক ৩-৪ দিন ধরে কিন্তু এমন কিছু কথাবার্তা বলছেন, যা বেগম খালেদা জিয়ার ভারত প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এসব নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। বিএনপি বরং এখন ভারতের বন্ধুপ্রতিম সরকারের কাছে এখনো যে সব বিষয় অমীমাংসিত রয়েছে সেসবের মীমাংসার প্রস্তাব ও পরামর্শ তুলে ধরতে পারে। তিস্তার বিষয়টি আলোচনায় আনা যায়। এর মীমাংসা এখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই হতে হবে। এক সময় প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম ১০ দিন বাংলাদেশ অংশে তিস্তার পানির প্রবাহ ছিল ৫ হাজার ৯৮৬ কিউসেক। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা নেমে আসে ৯৬৩ কিউসেকে। আর এবার মধ্য মার্চে তিস্তার নাব্যতা নেমে এসেছিল ২৭৮ কিউসেকে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন খসড়া চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব রয়েছে যে, ৪০ ভাগ পানি ভারত পাবে, বাংলাদেশ পাবে ৪০ ভাগ এবং ২০ ভাগ থাকবে তিস্তার নাব্যতা রক্ষার জন্য। ভারতের পক্ষ থেকে তাতে সম্মতিও জানানো হয়।শেখ হাসিনার আগের সরকারের আমলে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে চুক্তিটি হয়নি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রতিবন্ধকতার কারণে। এবারও তাই হলো। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার উজানে নির্মিত গজলডোবা ব্যারাজসহ আরও প্রায় ১০টি ব্যারাজের মাধ্যমে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। ২০১২ সালে তিস্তার পানি প্রবাহ ভালো থাকায় তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকায় ৬০ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়েছিল। ২০১৫ সালে আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার হেক্টরে। স্বপ্নের গঙ্গা ব্যারাজ আটকে আছে ভারতের অনুমতি মিলছে না বলে। এটি নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে রাজবাড়ী জেলার পাংশায়। এর মাধ্যমে ১৯ লাখ হেক্টরে সেচ সুবিধা দেওয়া যেত। প্রতি বছর নিট আয় দাঁড়াত ৭ হাজার কোটি টাকা। ২৬ লাখ টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো এবং ২ লাখ ৪০ হাজার টন মাছ পাওয়া যেত। সেই সঙ্গে ১২৩টি ছোট নদী পুনরুজ্জীবিত হতো। গঙ্গা কপোতাক্ষ প্রকল্প পানির অভাবে ভুগতো না। উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প রক্ষা পেত। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র পরিচালনায় যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন হতো তা সরবরাহেও কোনো বেগ পেতে হতো না। ফেনী নদীর হিস্যা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তোলায় দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প 'মুহুরি প্রজেক্ট' বিপদের সম্মুখীন। বন্ধুসুলভ দৃষ্টিতে বিএনপি এসব বিষয় দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা বলতে পারে ভারতের বিজেপি সরকারের কাছে। ট্রানজিট-কানেকটিভিটি প্রশ্নে বিএনপি ভারতের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বার্থের কথা তুলে ধরতে পারে। আমাদের অবকাঠামো আমাদের দেশের জনগণের খাজনা-ট্যাক্সে নির্মিত। এর ক্ষতি ও শুল্ক সুবিধা নিয়ে আলোচনার কথা বলতে পারে বিএনপি। তৃতীয় দেশ ছাড়া ভারতের এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে পণ্য পরিবহনে শুল্কের বিষয়টি পরিষ্কার করার কথাও বলতে পারে। চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারে বাংলাদেশের ক্ষতি পুষিয়ে বন্দর ব্যবহারের সুবিধাবলি নিয়েও বন্ধু হিসেবে বন্ধুর কাছে জানতে চাইতে পারে বিএনপি। তবে 'জান দেব-ট্রানজিট দেব না', 'প্রাণ দেব, বন্দর দেব না'- এসব অবাস্তব ও আবেগী অবস্থান থেকে সরে এসে বিএনপি প্রশংসনীয় কাজ করেছে। কাজী সিরাজের কলাম সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৫ সকাল ৯:০৪
false
rg
টিট ফর ট্যাট_ আমেরিকা ভারত কূটনৈতিক যুদ্ধে মার্কিনীরা ধরাসাই!!! ইংরেজিতে 'টিট ফর ট্যাট' যার অনেক বাংলা প্রচলিত আছে। যেমন কুকুর তেমন মুগুর। অথবা ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। গত বৃহস্পতিবার মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় ব্যস্ত রাস্তা থেকেই আটক করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে কর্মরত ভারতীয় দূতাবাসের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবড়াগাড়েকে। পরে দেবযানীকে বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাসী করে হাজখানায় স্ট্রিট প্রস্টিটিউট ও ড্রাগ ইউজারদের সঙ্গে রাখা হয়। দেবযানীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ মার্কিন প্রশাসনের সেটি হল, ২০১২ সালে নিউইয়র্কে ডেপুটি কনসাল জেনারেল পদে যোগ দিয়ে দেবযানী ভারত থেকে সঙ্গীতা রিচার্ড নামে একজন পরিচারিকাকে ‘জাল ভিসায়' আমেরিকায় নিয়ে যান এবং মার্কিন আইন অনুসারে ন্যূনতম মজুরি থেকে সেই পরিচারিকাকে তিনি কম বেতন দিতেন। ভিয়েনা কনভেনশনে কূটনৈতিক রক্ষাকবচ বা শিষ্টাচারের যে সংস্থান রয়েছে তার উল্লেখ করে মার্কিন কর্তৃপক্ষ দাবী করে, দেবযানী এরমধ্যে পড়েন না৷ যা করা হয়েছে সবকিছুই নাকি মার্কিন আইন মেনেই করা হয়েছে৷ এর আগেও মার্কিন প্রশাসন বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশির ঘটনা ঘটিয়েছেন অনেক ভারতীয়'র সঙ্গে। কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মার্কিন এই আচরণের সম্মুখে এর আগে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম, প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ এবং প্রখ্যাত বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খানও মুখোমুখি হয়েছিলেন৷ মার্কিন প্রশানসনের কূটনৈতিক শিষ্টাচারের একই ধরনের আচরণ ইরান, কিউবা ও ভেনেজুয়েলার অনেক উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা ও কূটনৈতিক কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গেও একইভাবে করা হয়েছিল। মার্কিন মোড়লগিরি'র এই অনৈতিক আচরণকে ঘিরে গোটা ভারত এখন ফুঁসে উঠেছে। জবাবে ভারতীয় প্রশাসন আমেরিকার বিরুদ্ধে যে সকল জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো হল- ১. ভারতে বসবাসরত সকল মার্কিন কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পরিচয়পত্র চাওয়া হয়েছে। ২. কনস্যুলেট ও দূতাবাস কর্মকর্তাদের সব ধরনের এয়ারপোর্ট পাস প্রত্যাহার করা হয়। এখন থেকে বিমানবন্দরে দূতাবাসের গাড়ির জন্য আলাদা ব্যবস্থা আর থাকবে না। গাড়ি রাখতে হবে সাধারণ পার্কিংয়ে। ৩. মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ব্যারিকেট তুলে নিয়ে সামনের রাস্তা সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ৪. ভারতের মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে কর্মরত ভারতীয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতার বিবরণ ও গৃহস্থলী কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের বেতন ভাতার বিবরণসহ সকল খুটিনাটি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। ৫. ভারতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোর শিক্ষককদের ভিসার বিবরণসহ বেতন ভাতা ও ব্যাংক একাউন্টের সকল তথ্য চাওয়া হয়েছে। ৬. মার্কিন কূটনীতিকদের আমদানি ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে বিশেষ আমদানি অগ্রাধিকার প্রত্যাহার করা হয়েছে। যে কারণে এখন আর কিছু আনা যাবে না বিদেশ থেকে। ৭. বিমানবন্দরে মার্কিন কূটনীতিকদেরকেও সাধারণ যাত্রীর মতোই শুল্ক পরীক্ষা ও তল্লাশি করা হবে। ৮. ভারত সফররত মার্কিন সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছেন সংসদের স্পিকার মীরা কুমার, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেস উপ-সভাপতি রাহুল গান্ধী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্ডে ও বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী। ভারতের পাল্টা ব্যবস্থার মধ্যেই মার্কিন প্রশাসন বেশ নড়েচড়ে বসেছে। দেবযানীকে ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার মুচলেকা দিয়ে যদিও জামিন করিয়েছে ভারত। পাশাপাশি দেবযানী'র কূটনৈতিক রক্ষাকবচকে আরো সুদৃঢ় করতে জাতিসঙ্গের স্থায়ী মিশনে ইতোমধ্যেই বদলি করা হয়েছে। ভারতীয় প্রশাসনের দাবী, ভারতীয় কূটনীতিকরা দেশ থেকেই পরিচারক-পরিচারিকা নিয়ে যান। সরকারি কর্মী হিসেবে পাসপোর্ট তো বটেই, বেতনের বাইরেও তাঁদের নানারকম সুযোগ-সুবিধা দেয় ভারত সরকার। কিন্তু মাঝে মাঝে গোলমাল বাঁধে আমেরিকা-ইউরোপে যাওয়ার পরে। পাকাপাকি ভাবে সেসব দেশে থেকে যেতে পারলে অনেক সুযোগ-সুবিধা এ কথা বোঝার পরেই তাঁরা প্রথমে কর্মস্থল থেকে উধাও হয়ে যান। তখন তাঁদের পাসপোর্ট বাতিল হয়। তার পরে উদয় হয়ে সেই পরিচারক-পরিচারিকা অভিযোগ করেন যে, তাঁদের মজুরি কম দেওয়া হয় বা তাঁরা পাচারের শিকার। মানুষ পাচারের শিকার প্রমাণ হলে আমেরিকার বিশেষ ভিসা পেয়ে যান এঁরা। আর কয়েক বছর এই নিয়ে কাটাতে পারলেই মিলতে পারে মার্কিন নাগরিকত্বও। এক্ষেত্রেও এমন হয়েছে বলেই সন্দেহ দিল্লির। যে পরিচারিকাকে নিয়ে এই কাণ্ড ঘটলো সেই সঙ্গীতা রিচার্ড জুন-জুলাই মাসে নিউ ইয়র্কেই নিখোঁজ হয়ে যান। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও তখন কোনো ফল হয়নি। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানতে পেরেছে, দেবযানীর গ্রেফতারের মাত্র দু’দিন আগে ওই সঙ্গীতার স্বামী ফিলিপ ও দুই সন্তান নিউ ইয়র্কে যান। মার্কিন দূতাবাসই তাঁদের ভিসার বন্দোবস্ত করে। প্রথমে ফিলিপ দেবযানীর বিরুদ্ধে কম মজুরি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহার করে নেন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সন্দেহ, আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয় ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী কোনও ষড়যন্ত্র শিকার। সেই নিয়ে যাতে যথাযথ তদন্ত হয়, তাই চাপ জারি রাখতে হবে দিল্লীর। দেবযানী'র ঘটনা দিল্লীতে জানাজানি হলে পরদিনই মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে ডেকে প্রতিবাদ জানান বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ। মার্কিন প্রশাসনকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে বলেও ভারতীয় প্রশাসন থেকে দাবী করা হয়। জবাবে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা নয়, দেবযানী খোবরাগাড়ের ঘটনায় সরাসরি দুঃখপ্রকাশ করল আমেরিকা। বুধবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। দেবযানীর সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে, তার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন জন কেরি। দিল্লির অবশ্য দাবি ছিল, নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে আমেরিকাকে। এ দিন ভারতের বিদেশসচিব সুজাতা সিংহের সঙ্গে কথা হয় মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরমানের। কথোপকথন ইতিবাচক হয়েছে বলেও সূত্রের দাবি। আমেরিকার মতো প্রবল প্রতিপত্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে ভারতের এমন কঠোর অবস্থান রীতিমতো বিরল ঘটনা। কূটনীতিকদের কেউ কেউ বলছেন, এর ফলে দিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। কিন্তু দিল্লির রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এখন অন্য অনেক কথাও শোনা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, নিউ ইয়র্কে কর্মরত ভারতীয় ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়ের গ্রেফতারি এবং হেনস্থাকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের কঠোর ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইছে। সামনে যেহেতু লোকসভা ভোট। তার আগে চার রাজ্যে গো-হারা হেরেছে শাসক দল কংগ্রেস। এই ঘটনাকে তাই কংগ্রেস খড়কুটো বলে আঁকড়ে ধরে নিজেদের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও মেরামত করতে চাইছে। না হলে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদী যদি বিষয়টি কেড়ে নেন, সেই ভয়ও রয়েছে তাদের। তার ইঙ্গিতও অনেকটা মিলেছে গতকাল। রাজনাথ সিংহ থেকে রবিশঙ্কর প্রসাদ, সকলেই দেবযানীকে হেনস্থার ঘটনার নিন্দা করে দাবি করেছেন, কংগ্রেস যে ইউপিএ সরকারের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের সখ্যের কথা বলে, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে সেটা আদৌ সত্যি নয়। যশবন্ত সিনহা আবার এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ভারতে কর্মরত মার্কিন কূটনীতিকদের মধ্যে কয়েক জন তাঁদের সমকামী সঙ্গীদের নিয়ে এসেছেন। গত সপ্তাহেই ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট সমকামী সম্পর্ককে বেআইনি ঘোষণা করেছেন। মার্কিন আইন ভাঙায় যদি দেবযানীকে সে দেশে আটক করা হয়, তাহলে তো ভারতেরও উচিত এঁদের জেলে পোরা! আর নরেন্দ্র মোদী? ভারত সফররত মার্কিন কংগ্রেসের পাঁচ জনের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেই থামেননি তিনি, টুইটে ফলাও করে জানিয়েছেনও সে কথা। দুই সন্তানের মা দেবযানী ১৯৯৯-এর ব্যাচের আইএফএস অফিসার। ২০১২ সালে তিনি নিউ ইয়র্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেল পদে যোগ দেন। সে বছরই সঙ্গীতা রিচার্ড নামে এক ভারতীয়কে পরিচারিকা হিসেবে নিয়ে যান দেবযানী। মঙ্গলবার সংসদ ভবনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে দেবযানীর বাবা উত্তম খোবরাগাড়ে দাবী করেন, গত বৃহস্পতিবার রাস্তা দিয়ে হাতকড়া পরিয়ে দেবযানীকে গ্রেফতার করে মার্কিন পুলিশ। উনচল্লিশ বছর বয়সি ওই ভারতীয় কূটনীতিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পরিচারিকার ভিসায় মজুরি সংক্রান্ত ভুল তথ্য দিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, গ্রেফতারের পরে দেবযানীকে নগ্ন করে তল্লাশি করা হয়। চোরাচালানকারীদের দেহের বিভিন্ন গোপন অংশ যেভাবে তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়, বাদ যায়নি তা-ও। সবশেষে মাদকাসক্তদের সঙ্গে একই কুঠুরিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এই খবর জানার পরই হইচই শুরু হয়ে যায় দিল্লীতে। পর দিনই মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে ডেকে প্রতিবাদ জানান বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিবাদ এখানেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এ যাত্রায় তা হয়নি। ভারতের সাধারণ মানুষের দাবী, এ ধরণের অপমানজনক ব্যবহারের উপযুক্ত জবাব না দিলে বিশ্ব ভারতকে মাড়িয়ে যেতে দুঃসাহস দেখাবে। এখন থেকে বিদেশি দেশগুলির জন্য ভারতের আইন আরো কঠোর করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো দেশ ভারতীয় কূটনীতিককে ব্ল্যাকমেল বা হেনস্থা করতে না পারে৷ আবার বিরোধী পক্ষরা বলছেন যে, সংসদীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মনমোহন সিং নিজের দুর্বল সরকারের তকমাটা দেবযানী ঘটনাকে আমলে নিয়ে কাটিয়ে উঠতে চাইছেন। কূটনৈতিক পাড়ার বিষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত অনেকটা সাঁড়ে মহিষে লড়াই করলো। সেই লড়াইয়ে মার্কিনীরা কূটনৈতিক শিষ্টাচার লংঘন করেছে। গায়ের জোরে তারা কূটনৈতিক মর্যাদার একজন বিদেশী মহিলার সঙ্গে অসভ্য, বর্বর এবং ইতরের মত আচরণ করেছে। যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, আমেরিকায় সভ্যতার কোনো উন্নতি ঘটেনি। শক্তি প্রদর্শণ, কাউকে বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাসি করা আর পরিচয় জানার পরেও মাদকসেবী ও দেহব্যবসায়ীদের সঙ্গে একই হাজতখানায় রাখা অরুচিকর, অসুস্থ মানসিকতা এবং অসভ্যতার চরম ঔদ্বত্যের উদারণ। ভারত বিষয়টিকে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সকল সভ্যতা বজায় রেখেই কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করতে পেরেছে। পেরেছে এই কারণে যে দেশটির নাম ভারত। আমেরিকা যে এখনো সভ্যতার কোনো ন্যূনতম সীমা অতিক্রম করতে পারেনি, তা তারা দেবযানী'র ঘটনায় আবারো গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিল। এই আমেরিকাই যখণ আবার দেশে দেশে মানবাধীকার নিয়ে কথা তোলেন, তখন তাদের নিজেদের চেহারা একবার আয়নায় দেখে নিলে বিশ্ববাসী'রই সেটাতে অনেক লাভ হবে। সরি আমেরিকা, ইউ আর টোটালি এ বাঞ্চ অব বাস্টার্ড অ্যানিমলস নট হিউম্যান বিয়িং। তোমাদের মুখে মানবাধিকারের কথা একদম শোভা পায় না। বরং মানবাধিকার শব্দটি নিজেই লজ্বা পায় তোমরা যখন ওটা অন্যদের বেলায় উচ্চারণ কর। আমেরিকা ও ভারতের এই কূটনৈতিক লড়াই থেকে বাংলাদেশের অনেক কিছুই শেখার আছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, সেটি আমরা এই বিষয় থেকেই শিক্ষা নিতে পারি। সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২০
false
ij
গল্প_ মেয়েটা ইস্তিয়াক সব সময়ই অন্যদের সাসপেন্সের মধ্যে রাখতে ভালোবাসে। সকালে ফোন করেছিল। ঠিক দশটার সময় চারুকলার সামনে অপেক্ষা করতে বলল । এখন এগারোটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। ইস্তিয়াকের খবর নেই। লালমাটিয়ার দিকে থাকে ইস্তিয়াকরা, জ্যামে পড়ল কি? নতুন ফিয়াট কিনেছে ইস্তিয়াক, ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার: তাছাড়া একটা দৈনিকে পার্ট টাইম জবও করে। ইনকাম ভালোই; গতমাসের শেষে ইন্ডিয়া গিয়েছিল; কাল রাতে ফিরেছে। বাড়িতে ভালো লাগছিল না শিহাবের । সাড়ে নটার মধ্যেই আর্ট কলেজের সামনে চলে এসেছে। পরিচিত জনরা হাত নাড়ছে। এই কলেজ থেকেই সে পাস করে বেরিয়েছে। অবশ্য এখনও তেমন ভালো চাকরি জোটাতে পারেনি। সেই উদ্বেগ এবং কিছুটা লজ্জ্বা। দূর থেকে ইস্তিয়াকের নীলরঙের ফিয়াটটা দেখে শিহাব এগিয়ে যায়। গাড়িটা থামল। ইস্তিয়াকের বাঁ পাশে একটা মেয়ে। ফরেনার? কে মেয়েটা? শিহাবকে দেখে হাসল। ইস্তিয়াকের ইঙ্গিতে শিহাব পিছনের সিটে উঠে বসে। মিস্টি গন্ধ পেল। শিহাবের চিত্রকরের চোখ-এরি মধ্যেই বিদেশি মেয়েটার ঈষৎ বাদামী চুল, ফরসা ডিম্বাকৃতির মুখ, টানা টানা চোখ ধনুকের মতো বাঁকানো ভুরু ও চোখের মনির খয়েরি রং দেখে ফেলেছে। গাড়িটা আবার স্টার্ট দিয়ে ইস্তিয়াক বলল, শিহাব, এ হচ্ছে অ্যাঞ্জেলা, অ্যাঞ্জেলা শেরম্যান। আমার ফ্রেন্ড। শিহাব মাথা নাড়ে। ঘাড় ফিরিয়ে অ্যাঞ্জেলাও হাসল। থুতনির কাছটা মিষ্টি। তত লম্বা না। সাদা শার্ট পরে আছে। ইস্তিয়াক ইন্ডিয়া গিয়েছিল-ওখানেই কি মেয়েটার সঙ্গে পরিচয়? হতে পারে। সেসব নিয়ে ভাবতে ভালো লাগছিল না শিহাবের। গতকাল মা রুমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। রুমার কি হয়েছে বলছে না। কেবলি মা-মেয়ের মধ্যে ফিসফাস। মেয়েলি সমস্যা সম্ভবত। রুমা কাঁদছে। এ নিয়েও ভীষণউদ্বিগ্ন সে। আর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মত শিহাবদের এখনই আট লাখ টাকা দরকার, নৈলে ওদের খিলগাঁওয়ের বাড়িটা হাতছাড়া হয়ে যাবে। এসব ভেবে শিহাব অস্থির বোধ করে। গাড়িটা দোয়েল চত্তর পেরিয়ে গেল। ইস্তিয়াক বলল,অ্যাঞ্জেলা আমার কাছে বুড়িগঙ্গার ছবি দেখেছে। নদীটা ও দেখতে চায় । ও। ফরাশগঞ্জের দিকে ইস্তিয়াকের এক স্কুল ফ্রেন্ড থাকে । ফারুক। আটা-ময়দার ব্যবসা আছে। তারই জিম্মায় গাড়িটা রেখে ঘাটে এসে নৌকার দরদাম করে ইস্তিয়াক। এক ফাঁকে ইস্তিয়াক শিহাবকে বলে:অ্যাঞ্জেলা ব্রিটিশ। লন্ডনের কাছে বাসিলডনে থাকে। হায়দ্রাবাদে পরিচয় । পড়াশোনা শেষ করে ঘুরতে বেড়িয়েছে। বাংলাদেশটাও ঘুরে দেখতে চায়। অ্যাঞ্জেলাও তোর মতন ছবি আঁকে রে। তাই নাকি? বলে কিছুটা অবাক হয়েই অ্যাঞ্জেলার দিকে তাকালো শিহাব। নদীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে মেয়েটা। নদীতে কালো পানি। দুপাশে ঘিঞ্জি ঘরবাড়ি, ডকইয়ার্ড, খেয়া নৌকার ভিড়, লঞ্চ। অ্যাঞ্জেলার হাতে একটা ১২.১ মেগাপিক্সেলের ক্যানন পাওয়ার শট ডি-টেন। একটা লঞ্চ এদিকেই আসছিল। ছবি তুলল মেয়েটা। নৌকা ছাড়তে ছাড়তে রোদ মুছে গেল । মেঘ করে এল। তখন গরম লাগছিল। এখন ঠান্ডা হাওয়া বইতে লাগল। তবে মনে হয় না বৃষ্টি হবে। বুড়িগঙ্গার পানিতে কেমন দুর্গন্ধ। ইস্তিয়াক বিব্রতবোধ করে এবং কৈফিয়তের সুরে বলে, পনির রং আগে এরকম ছিল না অ্যাঞ্জেলা । অ্যাঞ্জেলা মাথা ঝাঁকায়। যেন কালো নদীর পচা গন্ধে কিছু যায় আসে না। গলুইয়ের ওপর বসে শিহাব সিগারেট ধরিয়েছে। শিহাব নদী কিংবা অ্যাঞ্জেলাকে দেখছিল না। কেবলি নিজের ভিতরে উদ্বেগ টের পায়। রুমা কাল সন্ধ্যার পর থেকে ঘর বন্ধ করে আছে। মার মুখ থমথমে। মেয়ের শরীরের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন। শিহাবের ভয়টা অন্য জায়গায়। রুমাকে পছন্দ করে ইস্তিয়াক। ছেলে হিসেবে ইস্তিয়াককে মাও পছন্দ করে। আগামী বছর রুমার ফাইনাল পরীক্ষাটা হয়ে গেলেই বিয়ে। ইস্তিয়াক সব শুনলে যদি পিছিয়ে যায়? শিহাব দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। অ্যাঞ্জেলা মিষ্টি হেসে বলল, শুনেছি বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালো আর ভীষণ সহজ সরল হয় । হ্যাঁ। বলে ইস্তিয়াক জিজ্ঞেস করল, দেখতে চাও- বাংলাদেশের মানুষ কত ভালো আর সহজ সরল ? সিওর। নৌকার মাঝিটি বুড়ো। মাথায় ছোট ছোট করে ছাঁটা পাকা চুল, গায়ের রং তামাটে, লুঙ্গি আর ময়লা ছেঁড়া গেঞ্জিটা পরে রয়েছে। ইস্তিকাক মাঝিকে জিজ্ঞেস করল, বুড়ামিঞা আপনার বাড়ি কই? শুভাড্যা। লন, আপনাগো বাইত যাই। মাঝি খুশি হয়ে বলল, চলেন। শিহাব খেয়াল করল অ্যাঞ্জেলার মুখটি ঝলমল করে উঠল। মাঝি যা বলল তা অ্যাঞ্জেলা বাংলা না জানলেও বুঝে গেছে। কথায় কথায় জানা গেল মাঝির নাম সনাতন মন্ডল। নদীর একেবারে ধারেই তার বাড়ি । ঘাটের পরেই ছোট্ট উঠান; সেই উঠান ঘিরে মাটির মেঝে আর বেড়ার চারটে ঘর। বিদেশিনীকে দেখে সনাতন মন্ডলের পরিবারের লোকজন বেরিয়ে এল। অ্যাঞ্জেলা মিটমিট করে হাসছে আর ছবি তুলছে। ব্যাগ থেকে চকোলেট বের করে বাচ্চাদের দিল। বাচ্চারা চকোলট পেয়ে খুশি হয়, হাসে; অ্যাঞ্জেলার চোখ চিকচিক করে ওঠে। ইস্তিয়াকের হাতে একটি ক্যানন ইওএস ফিফটি ডি। ওটা দিয়ে সনাতন মন্ডলের ছোট ছেলের এগারো মাসের নাতনিটি স্থানকালপাত্র ভুলে খিলখিল করে হেসে মায়ের কোল থেকে ঝুঁকে অ্যাঞ্জেলার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তে যাওয়ার মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দী করে নিল ইস্তিয়াক । সনাতন মন্ডলের বড় ছেলের নাম শুধাংশু। সে কোত্থেকে ডাব পেরে আনল। ঘরে অতিথি এসেছে, ভালোমন্দ না খাওয়ালে কেমন দেখায়?। সনাতন মন্ডল বাজারে যাবে, মাছ কিনবে। ব্যাপারটা টের পেয়ে ইস্তিয়াক আর শিহাবও সনাতন মন্ডলের পিছন পিছন গেল। সিগারেট ধরিয়ে ইস্তিয়াক বলল, অ্যাঞ্জেলার বাবা রিচার্ড শেরম্যান জার্মানির ওপেল কোম্পানির ইংল্যান্ড ব্রাঞ্চের চিফ মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ। হেবি রিচ নাকি। তবে ভদ্রলোক বেশ উদার। ওয়াল্ড ওয়াইড বেশ কটি চ্যারিটি অর্গানাইজেশনের সঙ্গে জড়িত। ও। বাংলাদেশে একটা কমিউনিটি ক্লিনিক করার কথা ভাবছে অ্যাঞ্জেলা । এখানে করতে বললে কেমন হয় বল তো? মাথা নেড়ে শিহাব বলল, ভালো। সেভেন আপের গ্লাসে ছোট্ট চুমুক দিয়ে সাদিয়া জানতে চাইল, তোর ব্যাপারটা কি ইস্তি ভাই জানে? রুমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, না। এখনও বলিনি। সাদিয়া বলল, চেপে রাখিস না। এক সঙ্গে ঘর করবি যখন। রুমা কফি খাচ্ছে না। চামচ দিয়ে নাড়ছে কেবল। বলল, আমার আর ইস্তির সঙ্গে ঘর করা আর হবে না। সাদিয়া হাত নেড়ে বলল, ধুরও। এসব এখন আরলি স্টেজে কোনও ব্যাপারই না। বীণা খালারও লাম্প হয়েছিল। ঠিকমতো ট্রিটমেন্ট করাতে সেরে গেছে। রে নিতে হয়নি। রুমা বলে, না, না। সে জন্য না। সাদিয়া অবাক। সেভেন আপের ঠান্ডা গ্লাসে ওর হাতটা থেমে যায়। তাহলে? ইস্তির ওপর মা বিরক্ত। বিরক্ত? কেন? ইস্তি ইন্ডিয়া থেকে বিদেশি একটা মেয়েকে ধরে নিয়ে এসেছে। মেয়েটার সঙ্গে এখানে-ওখানে ঘুরছে। শিহাব ভাইও কেমন। মেয়েটাকে এনে বাসায় তুলেছে। বাঙালি কালচার দেখবে। বাঙালি কালচার না ছাই। সিগারেট টানে, হাফপ্যান্ট পরে, ব্রা পরে না। ছিঃ। ও, অ্যাঞ্জেলা। হ্যাঁ। সাদিয়ার মুখে কে যেন কালি ছিটিয়ে দিল। রুমার মুখোমুখি ও গ্রিনরোডের একটা কফিশপে বসে আছে । বেলা এগারোটার মতন বাজে। কফিশপের ভিতরে তেমন ভিড় নেই। রুমার মুখের দিকে তাকালো সাদিয়া। এসির ভিতরে বসেও রুমা ঘামছিল। ওর সুন্দর মুখটা থেকে আগেকার লাবণ্য কে যেন শুষে নিয়েছে। সাদিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দুজন একটা প্রাইভেট ইউনিভারসিটিতে একসঙ্গে পড়ছে। ইউনিভারসিটিতেই রুমার সঙ্গে প্রথম দেখা, তারপরে রুমার মাধ্যমেই রুমার ভাই শিহাবের সঙ্গে পরিচয়, প্রেম। যখনই ওরা কোনও সমস্যায় পড়ে এই কফি হাউজে মিট করে। রুমাই আজ ফোন করেছিল আসতে। সাদিয়া বলল, কাল তো ওরা মানিকগঞ্জ গেল। অ্যাঞ্জেলা গ্রাম দেখবে। গ্রাম দেখতে না ছাই! মুখ বাঁকিয়ে রুমা বলল। সাদিয়া চুপ করে থাকে। রুমা ক্ষেপে উঠে বলল, আমি আর ইস্তি ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখব না। সাদিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বিদেশি একটা মেয়ের সঙ্গে শিহাবের মেলামেশার ব্যাপরটা সাদিয়াও ঠিক মেনে নিতে পারছে না। শিহাবের মুখে অ্যাঞ্জেলার কথা শোনার পর থেকেই শিহাবের প্রতি ওর অনুভূতিগুলিও কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। কেমন এমন হচ্ছে? কাল সন্ধ্যার পর শিহাবকে ফোন করেছিল সাদিয়া । এ্যাই, তুমি এখন কোথায়? ঝিটকা। খুব সুন্দর জোছনা ফুটেছে। সাদিয়া চিৎকার করে বলে, কোন্ আক্কেলে তুমি ঐ বিদেশি মেয়ের সঙ্গে ঘুরাফিরা করতেছ? তুমি জান না ওরা ভালো হয় না। কি বলতেছে তুমি! আমি বিদেশি এক ছেলের সঙ্গে ঝিটকা গেলে তুমি ...তুমি মেনে নিতে পারতে? বল! বল! বল! শিহাব চুপ করে থাকে। তারপর বলে, ছিঃ সাদিয়া, তুমি এত নিচ! হ্যাঁ। আমি নিচ! নিচ! নিচ! ঐ বিদেশি মেয়েটা তোমার ঘরে থাকে। কেন! কেন! কেন! শিহাব চুপ করে থাকে। তার মুখোশ কিংবা খোলশটি খুলে যেতে থাকে। এব সে বলে, আমরা গরিব মাঝির বাড়ি থাকলাম। তারা মাউন্ড খাইল না আর তোমাগে এত মাইন্ড কিসের? সাদিয়া চিৎকার করে বলে, গরীর মাঝির মেয়ে তো আর তোমাকে বিয়ে করবে না, করলে আর তোমাদের এক ঘরে থাকতে দিত না। আমরা এক ঘরে থাকিনি। জানি। বলে সাদিয়া ফোন রেখে দিল। দিয়ে কাঁদল। শিহাবের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পর থেকে সাদিয়া কাঁদেনি। কাঁদার অপেক্ষায় ছিল। আজ কাঁদল। কেননা সাদিয়া জানে শিহাবকে ও হারিয়ে ফেলবে। কাল রাতে যখন গাঢ় জোছনার আলোয় সিগারেট টানতে টানতে শিহাব ও অ্যাঞ্জেলার সঙ্গে ইস্তিয়াক ঝিটকার চরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল তখন রুমাও ফোন করেছিল । খুব ঘুরে বেড়াচ্ছ না? হ্যাঁ। উলটা-পালটা মেয়ের সঙ্গে ঘুরতে লজ্জ্বা করে না তোমার! কে উলটা-পালটা? ঐ অ্যাঞ্জেলা না কি নাম- ইস্তিয়াকের মাথায় রক্ত উঠে যায়। অ্যাই। সাবধানে কথা বল। কি! আমাকে ধমক দিচ্ছ! প্রেমিকা থাকতে অন্য মেয়ের সঙ্গে ঘুরতে লজ্জ্বা করে না! অ্যাঞ্জেলা আমার ফ্রেন্ড। ফ্রেন্ড না ছাই! বাজে মেয়ে, হাফপ্যান্ট পরে, সিগারেট টানে। তুমি ... তুমি এত মিন মাইন্ডেড রুমা? আমি মিন মাইন্ডেড না তুমি মিন মাইন্ডেড? ছিঃ, রুমা। অ্যাঞ্জেলা এনগেজড। ওর সঙ্গে যার বিয়ে হবে তার নাম অ্যারন। বারোদায় সেতার শেখে, ওর ক্লাস চলছে, নইলে আমাদের সঙ্গে আসত। আগামী বছর জুনে অ্যাঞ্জেলার সঙ্গে অ্যারনের বিয়ে হবে। বিয়ে না ছাই! ইস্তিয়াক বিরক্ত হয়ে ফোন অফ করে দেয়। দিনের বেশির ভাগ সময়ই মিসেস ইকবাল ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখেন। রান্নাবান্না কাজ করে মনির মা । আজকাল আর টিভির অনুষ্ঠানে মন বসে না। ড্রইংরুমের সোফায় উদ্বিগ্ন হয়ে বসে থাকেন। টিভিতে মন বসে না। ওতটুকু মেয়ে-বুকে লাম্প হল। ডাক্তার বলেছেন আরলি স্টেজ, সেরে যাবে। যদি না সারে। মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে। তাছাড়া চিকিৎসার খরচও আছে। বাড়িটা ব্যাঙ্কে মর্টগেজ । ছেলেটা এখনও ভালো চাকরি পেল না। ছেলেবেলা থেকে ভালো ছবি আঁকত বলেই শিহাব আর্ট কলেজে পড়েছে। এসব ভেবে ভেসে অস্থির বোধ করেন মিসেস ইকবাল। ড্রইংরুমের দেওয়ালে শিহাবের বাবার ছবি টাঙ্গানো। সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। ফোন এল। নকিয়াটা তুলে নিলেন মিসেস ইকবাল। রওশন আরা- মিসেস ইকবাল এর অনেক দিনের পুরনো বান্ধবী। কলাবাগান থাকেন। মাঝেমাঝে ফোন করে খোঁজখবর নেন। কিছুটা উত্তেজিত স্বরে রওশন আরা বললেন, আমার একটা ভালো খবর আছে রে হুসনা। মিসেস ইকবাল দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। একেই বলে কারও সর্বনাশ কারও পৌষমাস। তিনি নিস্তেজ কন্ঠে বললেন, কি ভালো খবর বল? আমাদের কলাবাগানের জমিটা শেলটেক নিতে রাজী হয়ে। গলির ভিতর হলেও দাম ভালোই পাব। আজই ফাইনাল হল। বিদেশ থেকে ভাইয়েরা সব এসে গেছে। ভালো। তা তোদের খবর কী। রওশন আরা জিজ্ঞেস করলেন। খবর আর কী। নানান সমস্যায় ডুবে আছি। গতকাল ব্যাঙ্ক থেকে আবার চিঠি এসেছে। তারা লোন শোধ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। ইস্, তখন কি কুক্ষণেই না রুমার বাবা বাড়িটা মর্টগেজ দিয়ে বেকারি করার জন্য লোন নিয়েছিল, বেকারির ব্যবসা মার খেল, বাড়ির দলিল ব্যাঙ্কের কাছে। টাকা শোধ না হলে ফেরত দেবে না। রওশন আরা আন্তরিক সুরে বললেন, তোদের জন্য আমি কিছু করতে পারছি না। আমার খুব খারাপ লাগছে রে হুসনা। তুই আর কি করবি-তোরও তো অনেক জ্বালাযন্ত্রণা। খবর নিচ্ছিস-এই তো অনেক। আপন ভাই বোনেরা তো একটা খবরও নেয় না। রওশন আরা চুপ করে থাকেন। এসব সময়ে চুপ করে থাকতে হয়। মিসেস ইকবাল বললেন, বিপদের কি শেষ আছে। রুমার বুকে লাম্প তৈরি হয়েছে। রওশন আরা আঁতকে ওঠেন। বলিস কি! ডাক্তার দেখাচ্ছি তো? হ্যাঁ। এখনও আরলি স্টেজ। ও। আমাদের এইসব ঝামেলা ...আর শিহাব রাস্তা থেকে এক গেষ্ট ধরে এনে ঘরে ঢুকিয়েছে। রওশন আরা কৌতূহলী হয়ে উঠলেন। কে? কার কথা বলছিস তুই? আর বলিস না। একটা বিদেশি মেয়ে। শিহাবের সামনেই হাফ প্যান্ট পরে ঘুরঘুর করে, সিগারেট খায়। শিহাবের কাছে কী সব ছবি আঁকা শিখে। শিহাবের ঘরেই শোয়। কত করে বললাম রুমার ঘরে শুতে। রাজী হল না। রুমার সামনে নাকি সিগারেট খাবে না। এই নিয়ে আমার টেনশানের শেষ নেই। ও। আর বলিস না। শিহাব সেদিন জিঞ্জিরার কোন্ এক পরিবারকে ধরে এনে দাওয়া করে খাওয়াল। চিনি না জানি না; চৌদ্দজন লোকের জন্য আট পদ রাঁধতে হল। ময়নার মায়ের ছুটি ছিল, গ্রামে গেছে। জানিসই তো আমার ডায়াবেটিস, প্রেশার ...এমন পাগলামীর মানে হয়। দুদিন পর ব্যাঙ্ক থেকে বাড়ি ক্রোকের নোটিশ আসবে। কই, সংসার বাঁচাতে চাকরি খুঁজবি-না ... বিমানবন্দরে বৃষ্টি। অ্যাঞ্জেলা বলল, বাংলাদেশ অনেক অনেক সুন্দর দেশ । আমি আবার আসব। শিহাব মলিন হাসে। আড়চোখে চেয়ে দেখল, ইস্তিয়াকের চোখও ছলছল করছে। ফেরার পথে গাড়িতে ইস্তিয়াক গম্ভীরভাবে বলল, দোস, এখন থেকে আর বিদেশি লোকজনের সঙ্গে ঘনিষ্ট ভাবে মিশব না। শিহাব সিগারেট ধরিয়েছিল। একমুখ ধোঁওয়া ছেড়ে বলে, কেন? চলে যাওয়ার সময় কষ্ট হয়। ও। বাইরের বৃষ্টির ভিতর সাদিয়ার মুখটা যেন দেখতে পেল শিহাব। ওর চলে যাওয়ার সময়ও কি অনেক কষ্ট হবে? কদিন পর । মনির মার জ্বর। সকালবেলায় রুমার জন্য স্যুপ রাঁধছিলেন মিসেস ইকবাল । মেয়েটার আজকাল ঘন ঘন জ্বর আসে। এমন সময় রওশন আরার ফোন এল। হ্যালো। রওশন আরা বললেন, কাল কলাবাগানের জমির বন্দোবস্ত ফাইনাল হয়ে গেল। বেশ কিছু টাকা পেলাম। ভালো। তো তোদের যখন টাকাপয়সার এত ক্রাইসিস, আমি তোদের কিছু টাকা দিতে পারব। টাকাটা ব্যাঙ্কে দিয়ে ওদের বুঝ দে। মিসেস ইকবাল বললেন, নারে, আমাদের আর টাকা লাগবে না। টাকা লাগবে না? কেন? শিহাবের কি চাকরি হয়েছে? না রে। সব টাকা সেই মেয়েটা দিয়ে গেছে। কোন্ মেয়েটা? কার কথা বলছিস। ঐ যে ... একটা মেয়ে ... আমাদের বাড়ি এসে কিছুদিন থাকল না-শিহাবের বন্ধু, অ্যাঞ্জেলা। ওহ্। ক্ষাণিকক্ষণ চুপ করে থেকে রওশন আরা বললেন, রুমার বুকে লাম্প ধরা পড়েছে বললি- তারও তো চিকিৎসার খরচ আছে। ঐ মেয়েটা সে টাকাও দিয়ে গেছে। সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০৬
false
hm
মুড়িমঙ্গল দৌড়ের ওপর থাকি, কিন্তু পোস্টাতে ইচ্ছে করে। আজ কাজ করতে করতে খুব মুড়ি খেতে ইচ্ছে করছিলো, মনে পড়ে গেলো সুদূর অতীতে মুড়ি নিয়ে কিছু লিখেছিলাম। সচলের পাঠকদের জন্যে তাই আবারও নতুন মোড়কে পুরান মাল। গুস্তাখি মাফ করবেন। চ্যানেল আইতে মুড়ি নিয়ে একটা প্রোগ্রাম দেখছিলাম। সেটা দেখেই এনথু পেলাম। ভাবলাম, ক্ষতি কী, লিখি। মুড়ি আমার প্রিয় খাদ্য। ঝাল চানাচুর, আচারের তেল, ছোলা-আলু, পেঁয়াজকুচি, মটরশুঁটি, মাঝে মাঝে ভুনা গরুর মাংসের কুচি আর ইত্যাদি মিশিয়ে মাখিয়ে খেতে খেতে বই পড়ি। মুড়ির সঙ্গীসাথী সময়ের সাথে পাল্টায়, কিন্তু জীবনে চলার পথে মুড়ি আমার সাথী। হে মুড়ি, তোমাকে ভালোবাসি। তবে মুড়ি ভাজতে দেখিনি কখনো। দরকারও পড়েনি। ভাজা হয়েই মুড়ি বাজারে আসে, সেখান থেকে কিনে আনা হয়। আমাকে মেখেও দেয়া হয়। মুড়ির সাথে আমার সম্পর্ক ভোজনে। দিনকাল খারাপ গেলে নিজেকে মেখে খেতে হয় (যেমন গভীর রাতে), তখন মুড়ির গায়ে আমার আগ্রহী হাত পড়ে। মুড়ি মাইন্ড করে না। ভালোবেসেই তো গায়ে হাত দেই। সঙ্গম করে মুড়ি খাও, এমন একটা ঝাড়ি আছে। আমাকে কেউ ঐ ঝাড়ি দিলে হেসে ফেলবো। বলবো, আচ্ছা। বলা লাগবে? ও তো এমনিতেই খাবো। তো, এমনই প্রেমঘন সম্পর্ক মুড়ির সাথে আমার, ঠিক যেন খাদ্যখাদক নয়, যেন এক অব্যক্ত প্রেমও ঐ মশলার সাথে মাখা হয়ে যায়। মুড়ি, তোমার নেই জুড়ি। আজকে টিভিতে দেখি বাজারে কিছু খানকিরপোলা-টাইপ মুড়ি উৎপাদক ইউরিয়া মিশিয়ে মুড়ি ভেজে মার্কেটে ছাড়ছে। সাথে হাইড্রোজ। উদ্দেশ্য ঠিক সাধু বলা চলে না। ইউরিয়া আর হাইড্রোজ মিশিয়ে ভাজলে নাকি মুড়ি একটু ফুলকো হয়, একটু সাদাটে হয়, তবে ঝাঁঝরা হয়ে যায় একেবারে। আমি এই ইউরিয়ামিশ্রণের গল্প যে আগে শুনিনি তা নয়। গা করিনি। মেশাক। নাহয় একটু পেট খারাপ করবে। তাতে কী। কত কিছু হজম করে ফেলি। বাঙালি পেট। গানপাউডার দিয়ে ভাজলেও কাবু করতে পারবে না। কিন্তু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জনৈক শিক্ষক আমাকে ভড়কে দিলেন। তিনি বললেন, ইউরিয়া তো ক্ষার। পেটে ঢুকে সে আগে পেপটিক এসিডে জরোজরো পরিবেশটার বারোটা বাজায়, তারপর আবার খাবারের সাথে মিশে রক্তে ঢোকে, ওখান থেকে মগজে, হৃদয়ে ...। নানা জায়গায়। আমি সাথে সাথেই বুঝে ফেলি, কেন আমার এই হৃদয়ঘটিত জ্বালা। কেন এই মাগজিক অধঃপতন। সেই মুড়িমাখা বিষ আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। লোহার বাসরে ফুটো গলে সাপ ঢুকে পড়েছে একেবারে। বলতে না বলতেই আবার শ্রদ্ধেয় শাইখ সিরাজ সরজমিন সারমাখা মুড়ির সারমর্ম তুলে ধরেন। সসার মুড়ি আর অসার মুড়ির গুণগত তফাৎ ততক্ষণে বুঝে গেছি, রূপগত তফাৎও তিনি দেখিয়ে দেন। ইউরিয়াওয়ালি মুড়ি (স্ত্রীলিঙ্গেই বলি), আগেই বলেছি, ফ্যাকাসে, ফ্লাফি, কিন্তু ফাঁপা। আর ইউরিয়ার মেকাপবঞ্চিতা দেশি মুড়ি একটু বাদামী, কিন্তু তন্বী আর সলিড। আমি তৎক্ষণাৎ অন্দরমহলে এত্তেলা পাঠাই, মুড়ির নমুনা দেখতে। হাতে নিয়ে দেখি, উঁহু, এগুলো সেই ফোঁপরা মাল। ইউরিয়া, হাইড্রোজে গিজগিজ অবস্থা। এরপর দেখি শাইখ সিরাজ আলাপ করছেন জনৈক সুশীল মুড়ি উৎপাদকের সাথে। উনার উৎপাদিত মুড়িও সুশীলা। ইউরিয়া বা হাইড্রোজ তিনি মেশান না। কেন মুড়িতে ইউরিয়া মেশানো হয়, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ৫০ কেজি চাল থেকে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ৪৪ কেজি মুড়ি হয়। এই ৬ কেজি "লস" পুষিয়ে নিতেই অনেকে ঐ কাজ করে, মুড়িতে ইউরিয়া মেশায়। রাগে আমার শরীর জ্বলতে থাকে, ৬ কেজি মুড়ি একটি একটি করে ঐ ইউরিয়াবাজদের অপ্রশস্ত কোন দ্বার দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দেবার একটা অন্যায় বাসনা জ্বলে ওঠে মনের বারুদে। কেমন যেন নিঃস্ব, রিক্ত বোধ করি, ঠকে যাই একেবারে। এ যেন সোফিয়া লরেনের ছদ্মবেশে কন্ডোলিদজা রাইসের সাথে উদ্দাম শারীরিক প্রেমের অপঅভিজ্ঞতা। আমার বেচারা পাকস্থলীর ওপর মায়া হয়। মগজে আর হৃদয়ে হাত বুলাই। রক্ত তো শরীরের আরো আরো অঙ্গপ্রত্যঙ্গে গিয়ে বিশেষ বিশেষ সার্ভিস দেয়, ভয় হয় ওইসব ডিপার্টমেন্টেও কোন দীর্ঘমেয়াদী বদআছর পড়ে কি না। সব টুলস জরুরি ভিত্তিতে ঘন ঘন প্রিভেনটিভ মেইনটেন্যান্স করে দেখতে হবে, এমন ভাবতে ভাবতে দেখি শাইখ সিরাজও পরীক্ষা করছেন মুড়ি নিয়ে। একেবারে বাজার থেকে মুড়ি সংগ্রহ করে তিনি পাঠিয়েছেন বিএসটিআইতে। কিন্তু সেখানে মুড়িতে ইউরিয়া বা হাইড্রোজ পরীক্ষার কোন স্বীকৃত পদ্ধতি নেই, সংশ্লিষ্ট কর্তা সিরাজ সাহেবকে প্রতিশ্রুতি দেন যে শীঘ্রই তিনি অমন একটা টেস্টিং মেথড খাড়া করে টেস্ট শুরু করবেন। ওদিকে সুশীলা মুড়ির দাম চড়া, কেজি ৬০ টাকা। দুশ্চরিত্রা মুড়ির কেজি ২৮ টাকা। তার ওপর আবার ফ্যাকাসে, ফুলকো, লোকের কাছে কদরও বেশি। বাঙালি দেখলাম মোটা, ফর্সা জিনিস ভালোবাসে। বাদামী, তন্বী ... এমন ভূমধ্যসাগরীয় চেহারা মার খেয়ে যায় এই বদ্বীপে। যতোসব বদলোকের আখড়া। তবে কি মুক্তি নেই এই অপমুড়ির হাত থেকে? তখনই দেখি চ্যানেল আইতে এক প্রিয় মুখ, ভ্যাজালকারীর যম, বাসি খাবারবিক্রেতার দুশমন, বাংলার রবিনহুড ম্যাজিস্ট্রেট রোকনোদ্দৌলা। এবার ভরসা পাই। রোকনোদ্দৌলা কঠিন চীজ, একবার উঠেপড়ে লাগলে তিনিই রাজপুত্র রোকনকুমার হয়ে বাংলার দুর্গতা মুড়িকে আবার ছিনিয়ে আনবেন দৈত্যদানোর হাত থেকে। জয় মুড়ি, জয় রোকনকুমার।
false
hm
সৈকতে সঞ্চরণ আবারও প্রাচীন পোস্ট। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমরা কয়েকজন পায়ে হেঁটে পার হয়েছিলাম পৃথিবীর দীর্ঘতম সৈকত। তখন রেওয়াজ ছিলো কোথাও এক্সকারশনে গেলে ফিরে এসে ক্লাবের অন্যান্য সদস্যদের জন্যে মুখরোচক একটি আর্টিকেল লেখার। এই আর্টিকেল পড়ে সেই অভিযানে অংশগ্রহণ করতে না পারা সদস্যরা বেজায় ক্ষেপেছিলেন, পারলে আমাদের ধরে পেটান আর কি। পরে অনেক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, সেই আনন্দময় যাত্রার পুনরাবৃত্তি আর করা হয়নি আমাদের। এ লেখা উৎসর্গ করলাম এক্সপ্লোরারস ক্লাবের সেইসব সদস্যদের উদ্দেশ্যে, যারা সেবার আমাদের সঙ্গী হতে পারেননি। ১. কেওকারাডং থেকে ফিরে এসে EXPLORERS' CLUB OF BANGLADESH-এর সদস্যদের নানা বিচিত্র উপসর্গ দেখা দিলো। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ খামোকাই শহরময় হেঁটে বেড়ান, কেউ উঁচু বিল্ডিং দেখলে সেটার পাইপ বেয়ে ওঠা যায় না সেটা নিয়ে গুরুতর চিন্তাভাবনা শুরু করে দেন --- সবমিলিয়ে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। তাই এইসব বদ লক্ষণ ঝেঁটিয়ে বিদায় করার জন্যে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে আরেকটা অভিযানের আয়োজন করার উদ্যোগ নিতেই হলো। এবার আর উল্লম্ব নয়, সমান্তরাল। ক্লাবের সাপ্তাহিক আড্ডায় এ ব্যাপারে কী করা যায়, তা নিয়ে একদফা তর্কবিতর্ক হয়ে যাবার পর হঠাৎ এক বিকেলে উপস্থিত হলেন ওয়াহেদ ভাই, একা একা ট্রেকিং করা যাঁর বদস্বভাব। তাঁর বিস্তারিত পরিচয় গোপন রেখে বলছি, তিনিই মিলন ভাই আর হিমুর মাথায় নতুন খেয়াল চাপিয়ে দিয়ে গেলেন। সেদিনই সন্ধ্যেবেলায় মোটামুটি সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, ক্লাবের সদস্যরা টেকনাফ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেকিং করতে যাবেন। ECB সদস্যদের বয়স আট থেকে আটাশির মধ্যে, স্কুলের ছাত্র থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটির শিক্ষক, সবাই আছেন। হিসেব কষার পর পরিস্থিতি দাঁড়ালো এমন, ঈদের রাতে ঢাকা ছাড়লে সব মিলিয়ে দিন পাঁচেক ছুটি সবাই ম্যানেজ করতে পারবেন। এ নিয়েও বিস্তর তর্কবিতর্ক হলো পরবর্তী মিটিঙে। ঈদের রাতের পক্ষেই বেশির ভাগ সদস্য ভোট দিলেন, কারণ এক্ষেত্রে টিকেটের জন্যে তিন মাইল লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে চুলোচুলি করতে হবে না, আর সবাই অর্ধেকটা ঈদ ঢাকায় কাটিয়ে যেতে পারবেন। সভা শেষে জানা গেলো, চৌদ্দ জনের মতো যাবেন এই যাত্রায়। বাকিরা হয় ছুটি ম্যানেজ করতে পারছেন না (যেমন উচ্ছল), অথবা নতুন বিয়ে করেছেন, শ্বশুরবাড়ির অনুমতি যোগাড় করা প্রায় অসম্ভব (যেমন শিবলি), অথবা কোন কাজে দেশের বাইরে যাচ্ছেন (যেমন শান্ত)। কাজেই এঁদেরকে তালাক দিয়ে বাকিরা গাঁটরিবোঁচকা বাঁধা শুরু করলেন। ঈদের তারিখ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কুতকুত খেলায় সারা দেশের মানুষই সমস্যার মুখে পড়েছিলেন, তবে ইসিবি সদস্যরা এই ঝামেলার মুখোমুখি পড়েন নি। কুঁড়ের বাদশা হিমুর ঘাড়ে টিকেট বুক করার দায়িত্ব পড়েছিলো, সে গড়িমসি করতে করতে ঈদের চাঁদ-এর পাকা দেখা হয়ে গেলো। জানা গেলো, তেরো নয়, বারো তারিখেই ঈদ। বারো তারিখ রাতে কমলাপুরে বাস কাউন্টারে এক এক করে হ্যাভারস্যাক কাঁধে নিয়ে জড়ো হলেন সবাই। কেওকারাডং-এ অনেকেই একগাদা জিনিসপত্র নিয়ে নাকানিচোবানি খেয়ে এসেছেন, কাজেই এখানে সবাই যতদূর সম্ভব কম বোঝা নেয়ার ব্যাপারে মন দিয়েছেন। তবুও দেখা গেলো, একেবারেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে হ্যাভারস্যাকের ওজনটা নেহায়েত মন্দ হয়নি। এবার সবচে ভারি বোঝা শাহুলের ঘাড়ে, আর সবচে হালকা মিলন ভাই, একটা ডেনিমের জ্যাকেট সম্বল করে বেড়িয়ে পড়েছেন তিনি। আর শেষ পর্যন্ত অভিযাত্রীর সংখ্যা সতেরো, যোগ দিয়েছেন পারভীন আপা, চঞ্চল আর ফাইয়াজ। রাত সোয়া দশটায় শুরু করে ভোর সাড়ে পাঁচটার মধ্যে কক্সবাজার পৌঁছে গেলো বাস। রাস্তা প্রায় ফাঁকা, দ্রুত কিন্তু নিরাপদ গতিতে ছুটেছে বাস। শুরুতে কয়েকজন প্রেতসংক্রান্ত গল্পগুজব করে রাতের অন্ধকারটাকে একটা সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। ক্লাবের কিছু সদস্য যে কোন পরিস্থিতিতে ঘুমিয়ে পড়তে সক্ষম, তাঁরা স্বল্প পরিসরেই চাদর মুড়ি দিয়ে জটিল ঘুম দিয়ে তাজা হয়ে গেছেন। আর যারা নিদ্রাবিলাসী, চার পাঁচটা বালিশ আর শ'খানেক বর্গফুট জায়গা ছাড়া ঘুমাতে পারেন না, তাঁরা ভুগেছেন। আর কয়েকজন অসীম সাহার কিশোর জানে না কবিতার সেই বিষণ্ন কিশোরের মতো অন্ধকারে জেগে জেগে রাত্রির ঘ্রাণ শুঁকে কাটিয়ে দিয়েছেন। আর সারাটা পথ যাচ্ছেতাই রকমের বাজে আধুনিক বাংলা গান শুনতে শুনতে একেকজনের অবস্থা আরো কাহিল, গানের সুর আর কথার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছেন তাঁরা, এবং এসব গানের গীতিকার ও সুরকারকে হাতের কাছে পেলে কিঞ্চিৎ লাঠ্যৌষধি শাসনম-এর বন্দোবস্ত করা যায় কি না, তা নিয়ে ভেবে দেখেছেন। এ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে একটু চোখ এবং পা বুলিয়ে আসা হবে। ক্লাবের অন্যতম হন্টক (যিনি কষা হাঁটতে পারেন) মহাকাশ মিলন ভাই তখন জানালেন, কঙ্বাজারে তিনি কিছু কাজ সেরে যেতে চান, অতএব তিনি অন্যান্যদের সাথে সন্ধ্যেবেলা টেকনাফে মিলিত হবেন --- আসল কথা হচ্ছে সেন্ট মার্টিন মিলন ভাইয়ের আগাপাস্তলা দেখা আছে, রোদে ঘুরঘুর না করে একটু গড়িয়ে নিতে চান তিনি। তবে তাঁর এ প্রস্তাবে গররাজি হবার কিছু নেই, কাজেই মিলন ভাইকে তিনটি চকোলেটসহ বিদায় জানানো হলো। বাস্তবিক, তিনটে থেকে একটা বেছে নিতে বলা হয়েছিলো, কিন্তু মিলন ভাই কোনটা ফেলে কোনটা বাছবেন বুঝতে না পেরে সবক'টাই গাপ করেছেন। কক্সবাজার থেকে টেকনাফের বাস ছাড়লো সাড়ে ছ'টার সময়। একঘন্টা সময় বাস স্টেশনেই পায়চারি করে কাটাতে হলো সবাইকে। তবে এর মধ্যে একটু এদিকে ওদিকে ঘুরে ফিরে হালকা হয়ে এসেছেন অনেকেই। সাড়ে আটটা নাগাদ বাস থেকে টেকনাফের সী-ট্রাক ঘাটের কাছে সবাই নেমে পড়লেন। কক্সবাজার থেকে টেকনাফের রাস্তা একটু খারাপ, কড়া রোদ সরাসরি চোখে পড়ায় অনেকেরই মাথা ধরে আছে, আর এই বাসের আধুনিক বাংলা এবং অত্যাধুনিক হিন্দি গানের অবস্থা আরো খারাপ। পাতলি কমর তিরছি নজর ছাড়া এরা আর কিছু বোঝে না। সী-ট্রাক টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় কাঁটায় কাঁটায় দশটায়। ঘাটে নেমে টিকিট কাটার পর সবাই আবার সিদ্ধান্ত নিলেন, হ্যাভারস্যাকগুলোকে মিছিমিছি সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন মানে হয় না। অতএব সেগুলোকে কয়েকজন গিয়ে হোটেল ভাড়া করে রুমবন্দী করে আসুক, আর বাকিরা ঘাটে বসে ঝিমাক। এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে কয়েকজন তৎক্ষণাৎ একটা স্কাউট দল তৈরি করে একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে চড়ে বসলেন। ঘাট থেকে টেকনাফ শহরের দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার, এটুকু পথ এত বোঝা নিয়ে হাঁটতে কেউ রাজি নন। টেকনাফে হোটেল খোঁজাখুঁজির ঝামেলা থেকে রেহাই দিলো মাইক্রোবাসের ড্রাইভার। সে সুড়ুৎ করে বিনা উসকানিতে হঠাৎ একটা সুদৃশ্য হোটেলের সামনে হাজির করলো স্কাউট দলকে, বোঝা গেলো, বিশেষ বন্দোবস্তের অধীনেই তার এই বদান্যতা। হোটেলের নাম, ধরা যাক, হোটেল অমুক। মাঝবয়েসী হোটেল ম্যানেজার কঠোর চেহারা করে অভ্যর্থনা জানালেন অভিযাত্রীদের। ইকবাল আর শাহেদ ভাই দোতলায় উঠে রূমগুলো ঘুরে ফিরে দেখতে গেলেন, ফরিদ ভাই আর হিমু দর কষাকষির দায়িত্ব নিলেন। এ পর্যায়ে ম্যানেজারের সাথে কিছুটা মন কষাকষিও হলো, কারণ বেচারা কিছুতেই ভাড়া সম্পর্কে মুখ খুলবেন না, বিনা আলাপেই অভিযাত্রীদেরকে তিনি নিজের হোটেলে অতিথি করে রাখতে চান। শুধু তাই না, তিনি জানালেন, সী-ট্রাক সাড়ে দশটার আগে কিছুতেই ছাড়বে না, কাজেই দর কষাকষির জন্যে তাদের হাতে এখনো ঘন্টা দেড়েক সময় আছে। তবে যাই হোক, শাহেদ ভাইয়ের ত্বরিৎ হস্তক্ষেপে দশ মিনিটের মধ্যেই বিভিন্ন আকারের পাঁচখানা রূম রফা হলো ষোলোশো টাকায়। একটা রূমে সব লাগেজ রেখে খানিকটা ফ্রেশ হয়ে আবার ঘাটে ফিরে এলেন সবাই। এসে সবার আক্কেল গুড়ুম, সী-ট্রাক বোঝাই লোকজন, বসার কোন জায়গা নেই, মোটামুটি আড়াই ঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে সবাইকে। হিমু আবার কোত্থেকে একটা অর্ধেক লাইফজ্যাকেট যোগাড় করে গায়ে এঁটে বসে আছে, সী-ট্রাকের যাত্রীরা এ নিয়ে কিছুক্ষণ বিমলানন্দ ভোগ করলেন। অবশ্য সাবধানের মার নাই, কখন কী ঘটে যায় কিচ্ছু বলা যায় না। কাঁটায় কাঁটায় দশটায় সী-ট্রাক ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দেখা গেলো সেটাকে গদি বানিয়ে হিমু আর চঞ্চল খুবই আরামে ঝিমাচ্ছে, আর বাকিরা হোটেল ম্যানেজারকে কষে বকাবকি করছেন ভুল তথ্য দেয়ার জন্যে। সত্যি সত্যি যদি সাড়ে দশটায় সবাই আসতেন, কপালে বিস্তর ভোগান্তি ছিলো। নাফ নদীর সৌন্দর্য বর্ণনা আপাতত সিলেবাসের বাইরে। ক্লাবের সদস্যরা কড়া রোদে ভাজা ভাজা হয়ে চঞ্চলের বাইনোকুলার দিয়ে দু'তীরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলেন। বাম পাশে মায়ানমার, ডান পাশে বাংলাদেশ। শাহপুরির দ্বীপ আর বদর মোকাম দেখতে দেখতে কাটলো বেশ কিছুটা সময়। নাফ নদীতে বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে বার্মিজ ট্রলার দেখা যাচ্ছে ঘন ঘন। একসময় নদী পেরিয়ে সাগরে পড়লো সী-ট্রাক, বাম পাশে মায়ানমারের সৈকত শেষ হয়ে গেলো হঠাৎ। সী-ট্রাকের পরিবেশ হয়তো আরো কিছুটা ভালো হতে পারতো, কিন্তু নষ্ট মাইকে ভয়ঙ্কর শব্দ, আর কিছুক্ষণ পর পর জাহাজের সারেঙের সতর্কবাণী শুনতে শুনতে কান বিষিয়ে যাওয়ার যোগাড়। যদিও ডেকে তিলধারণের জায়গাটুকু নেই, সাগর দেখার জন্যে রেলিঙের পাশে ভিড় জমিয়েছে সবাই, নিরাপত্তার খাতিরে রেলিঙের ওপরে না বসার সৎ পরামর্শটিকে ভারি সহিংস ভঙ্গিতে দিয়ে চলছেন সারেঙ ভদ্রলোক। মহাত্মা গান্ধী বেঁচে থাকলে তার সাথে সারেঙের মতের খুবই অমিল হতো, সন্দেহ নেই, সাবমেরিনের ক্যাপ্টেনও বোধহয় অতোটা বদমেজাজি হয় না। ওদিকে সাগরে কিছুক্ষণ পর পর ডাইভ দিচ্ছে ডলফিন, হঠাৎ হঠাৎ দেখা যাচ্ছে উড়ুক্কু মাছের ঝাঁক, দু'তিনবার পানির ওপর জেগে থাকা তীক্ষ্ণ ফিন দেখে কয়েকজন সেগুলোকে হাঙরের আলামত হিসেবে শনাক্ত করলেন। চারপাশে অলস উড়ে বেড়াচ্ছে সাদাকালো শঙ্খচিল। মাছ ধরা সাম্পান আর ট্রলার দেখা যাচ্ছে অহরহ। পানির রঙ চারদিকে মিষ্টি নীলচে সবুজ, শুধু যেখানে সমুদ্রে চর জাগছে, সেখানে পানির রঙ ফ্যাকাসে সাদা। সারেঙের ঝাড়ি খেতে খেতে কাহিল হয়ে একসময় সেন্ট মার্টিনে নামলেন সবাই। হলদে গরম বালি পার হয়ে হুড়োহুড়ি করে বাজারে পৌঁছে খাবার দোকানের সামনে ভিড় জমালেন প্রতিটি অভিযাত্রী। বিশাল আকারের সব গলদা চিঙড়ি, যেগুলোর মধ্যে কোন গলদ খুঁজে পাওয়া মুশকিল, বরং দেখলেই জিভে জলোচ্ছ্বাস হয়, ডালিতে সাজিয়ে বিভিন্ন দোকানে উদ্যোক্তারা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। কেবল দৃষ্টি নয়, পর্যটকদের পকেটের প্রতিও তাদের আকর্ষণ প্রবল, নিউটনের সূত্রকে একটি মাঝারি আকারের কাঁচকলা দেখিয়ে তারা নাগালের বাইরে এমন সব দাম হেঁকে চলেছেন যে চটজলদি মুখ ফিরিয়ে চলে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করছেন সকলে। সে সব মূল্যের কথা শুনে অভিযাত্রীদের জিভের জল চোখে উঠে যাওয়ার শামিল। তবে দুই বিঘত লম্বা একজোড়া নীল গলদা চিংড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার প্রলোভন সামলাতে পারলেন না বরুণদা। চিংড়ি দুটো বয়সে মুরুব্বি, কারণ অনেক বছর না বাঁচলে এদিককার পানিতে গলদা চিংড়ি এতো বড় হতে পারে না। ঢাকা ছেড়ে আসার পর কারো পেটেই দানাপানি পড়ে নি, খিদেয় অন্তরাত্মা চোঁ চোঁ করছে, কাজেই কিছুক্ষণের মধ্যেই চিংড়ির আশা বঙ্গোপসাগরে জলাঞ্জলি দিয়ে সবাই একটি মাছিবহুল ছাউনির নিচে কড়কড়ে ভাত আর কড়া রূপচাঁদা ভাজা খেতে বসে গেলেন। ভাত আর রূপচাঁদার বয়স নিয়ে কয়েকজন সন্দেহ পোষণ করলেও খিদের মুখে আপত্তি করার জোরালো কোন কারণ খুঁজে পাওয়া গেলো না, কারণ সব দোকানেই মাছগুলোকে জান বাজি রেখে ঘোলা তেলে কষে ভাজা হয়। কেউ কেউ ডাল দিয়ে খাবারে একটু কোমলতা আমদানি করার জন্যে ফরমায়েশ দিলেন। ডাল নামক বস্তুটি আসার পর দেখা গেলো, সেটাতে ডাল, মশলা আর তেল, সব কিছু আলাদা করে শনাক্ত করা যাচ্ছে। ডালের রাঁধুনি অত্যন্ত উদার মনের মানুষ, ডালের সাথে ডালের রেসিপিও সরবরাহ করেছেন তিনি, কোন উপাদান যাতে বোধের অতীত হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন তিনি। ভাত খেয়ে ডাবের দোকানের সামনে হুটোপুটি করে ডাব খেয়ে সবাই হাঁটা শুরু করলেন দ্বীপের অন্য প্রান্তের দিকে। দ্বীপটির মাঝে বেখাপ্পা শানবাঁধানো পথ, রীতিমতো বিশ্রী দেখতে। অধিবাসীরা উৎসুক চোখে অভিযাত্রীদের পরখ করতে করতে চলেছে। সেন্ট মার্টিনে মাদ্রাসার সংখ্যা অনেক, এবং একটি বিশেষ রাজনৈতিক অপশক্তির কান্ডকারখানা সেখানে প্রকট, ছোট ছোট নমুনা হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে। দ্বীপের ওদিকটায় প্রবাল সৈকত, প্রাক্তন কথাসাহিত্যিক ও বর্তমান চলচ্চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের একচালা ছিমছাম কুঁড়েটি সেখানে হাঁটু ভেঙে দ হয়ে পড়ে আছে। সৈকতের সে অংশে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি আর হুটোপুটি করে, সেইসাথে স্থিরচিত্রে নিজেদের অক্ষয় করে রাখার স্বাভাবিক প্রবণতাকে প্রশ্রয় দিয়ে আবার সী-ট্রাকের দিকে এগিয়ে চললেন সবাই। পারভীন আপা পানির পোকা, সাগরে শুয়ে একখন্ড প্রবালের ওপর মাথা রেখে প্রায় ঘুমিয়ে পড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি, তাঁকে প্রায় একরকম ধমকে সাগর থেকে তুলে আনা হলো। ফেরার পথে কয়েকজন হেঁটে ফিরলেন, কয়েকজন ফিরলেন ভ্যানরিকশায় চড়ে। আবার সী-ট্রাকে চড়তে হবে ভেবেই সবাই মুষড়ে পড়লেন। এবং গোদের ওপর বিষফোঁড়া, সেটাতে চড়ার দশ মিনিটের মধ্যে সী-ট্রাকের প্যাকেজ প্রোগ্রামের শিকার কয়েকজন মানুষ অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে ঝগড়া শুরু করলেন। বিকেলের রোদে সবাই সেদ্ধ, পাশে আবার কয়েকজন কাচ্চু খেলোয়াড় খুবই উল্লাসের সাথে তাঁদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, আর সামনে এই বিতর্ক --- অতিষ্ট হয়ে খেলাধূলা শুরু করলেন ক্লাবের সদস্যরাও। মনে মনে কোন একটা জন্তুর নাম ভাববেন একজন, বাকিরা দশটা প্রশ্ন (যার উত্তর কেবল হ্যাঁ কিংবা না) করে সেটার পরিচয় উদ্ধার করবেন। এমনি করে গরু, মানুষ, ইঁদুর, ব্যাঙ ইত্যাদি দুরূহ সব জন্তুর নাম উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে সবাই যখন ইস্তফা দিতে যাচ্ছেন, তখন শোনা গেলো টেকনাফ আর বেশি দূরে নেই। টেকনাফ পৌঁছুতে হবে হেঁটে। সবাই হাত পা খানিকটা খেলিয়ে শুরু করলেন হাঁটা। সাত কিলো পিচের রাস্তা পার হতে দেড় ঘন্টার মতো লাগবে। শেষ বিকেলের খানিকটা আলো তখনও আছে, চঞ্চল তার ক্যামেরা বের করে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সী-ট্রাকেও পোর্ট্রেট ফোটোগ্রাফি নিয়ে গলদঘর্ম ছিলো বেচারা। বাকিরা কেউ কেউ গল্পগুজব করতে করতে হাঁটছেন, কেউ ঢিল ছুঁড়ে জংলি বড়ই গাছ থেকে পেড়ে খাচ্ছেন। এমনি করে সন্ধ্যে নেমে এলো, হোটেলে পৌঁছে সবাই বাথরুমে ছুটলেন। সবাই বালি আর নোনা বাতাসে মাখামাখি। মিলন ভাই হাজির হলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই। কঙ্বাজারে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে নিয়েছেন তিনি, সেখানে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কিছু অফিশিয়াল কাজও শেষ করে এসেছেন। ভারি সুখী সুখী চেহারা তাঁর, আর সবার এদিকে সারাদিন ঘোরাঘুরি করে অবস্থা ভূতের মতো। যাই হোক, হোটেল অমুক সংলগ্ন রেস্তোরাঁয় খেতে গেলেন সবাই। সেখানে খাবারদাবারের মান নিয়ে বেশি কথা না বলাই ভালো, তবে সেন্ট মার্টিনের চেয়ে ভালো। খাওয়াদাওয়া শেষে কেউ কেউ গেলেন নাফের সৈকতে হাঁটতে, কেউ ঘরে ফিরলেন আর কয়েকজন গেলেন পরদিনের জন্যে বিস্কুট আর জেলি কিনতে। মিলন ভাই নাফের পারে বসে কিছুক্ষণ তারা চেনালেন, কিন্তু একই তারা রোজ রোজ দেখে সবাই বিরক্ত, তাছাড়া এক রাতে পাঁচটার বেশি তারা মিলন ভাই কখনোই শনাক্ত করতে পারেননি, তাই সবাই আবার হেঁটে হেঁটে ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন। হোটেলে ফিরে সবাই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলেন। ২. পরদিন সকালে মোটামুটি সবাই হাঁটার জন্যে প্রস্তুত। তবে অনেকে রাতে বাসের সেই বাংলা গানগুলো স্বপ্নে দেখে আঁতকে উঠেছেন, ড়িদয়ে যাতনা তবু করিনি আপোষ --- হবো হবো না আমি তোমার পাপোষ --- ইত্যাদি ইত্যাদি। পারভীন আপা শব্দ হলে ঘুমাতে পারেন না, তাঁর পাশের ঘরে কে নাকি ভোর চারটা পর্যন্ত হৈচৈ করেছে, কাজেই তিনি খুবই ক্লান্ত। সোয়া ছয়টার মধ্যে নাস্তা আর লবণাক্ত চা (হোটেল অমুকের চিনিও লবণের মতো নোনতা) খেয়ে সবাই পথে নেমে এলেন। চঞ্চলের সৌজন্যে সবার মুখে চকলেট। হোটেল থেকে টেকনাফ বীচ চার কিলো, সবাই জোর কদমে হাঁটা শুরু করলেন। ঈদের ছুটির ভোর, টেকনাফের পথঘাট নির্জন, দীঘল ইঁট বিছানো পথে এক্সপ্লোরারস ক্লাবের সদস্যরাই হেঁটে চলছেন সৈকতের দিকে। পথে খেত থেকে শসা কিনে খেতে খেতে এক ঘন্টার মধ্যে বীচে পৌঁছে গেলেন সবাই। এর মাঝে পুতুল আপা এক স্থানীয় বেয়াদব পিচ্চিকে কড়া শাসন করেছেন, কৌশলে আঞ্চলিক ভাষায় সবাইকে মশলামাখা গালিগালাজ করে যাচ্ছিলো অপোগন্ডটা, আর চঞ্চল বেশ কিছু ছবি তুলেছে। আকাশের মুখ গোমড়া, সূর্য লেপমুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে, সাগরে পদধূলি বিসর্জন দিয়ে সৈকতে একগাদা সাম্পানের সামনে অফিসিয়াল চিত্রগ্রহণের পর সবাই শুরু করলেন হাঁটা। বামে সমুদ্র, ডানে পাহাড়সারি, সামনে আদিগন্ত সৈকত। সবকিছু মিলিয়ে ভারি মনোরম দৃশ্য। হাঁটতে হাঁটতে বালিতে কাঁকড়ার নকশা আর ঝিনুক ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। কাঁকড়ার এই নকশাগুলো নাকি জহুরীরা সংগ্রহ করে নিয়ে যান সোনার গয়না বানানোর জন্যে। আরো খানিকটা হেঁটে দেখা গেলো জেলি ফিশ, সিন্ধুকচ্ছপের খোলা, তন্দ্রাচ্ছন্ন সামুদ্রিক সাপ আর বালিতে চাঁদের গাড়ির ট্র্যাক। উল্টো দিক থেকে ফিরছে মালবোঝাই একটা জীপ, অভিযাত্রীদের ভালো করে দেখতে ড্রাইভার জানালা দিয়ে কোমর পর্যন্ত শরীর বের করে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। আরো কিছুক্ষণ হাঁটার পর অভিযাত্রীদের সঙ্গ নিলো একটা কুকুর। বয়স হয়েছে কুকুটার, শরীরে বেশ কিছু জায়গায় লোম পড়ে গেছে, মাথায় বাসি ক্ষতচিহ্ন। কিন্তু মিলন ভাই বিস্কুট খাইয়ে সেটার সাথে দোস্তি করে ফেললেন, মহা উৎসাহে সবার আগে আগে ছুটতে লাগলো সে। চারুকলার সজীব তার স্কেচের খাতা সাথে নিয়ে এসেছে, কিছুক্ষণ পর পরই খাতা খুলে ধ্যানস্থ হয়ে যাচ্ছে সে। ঘন্টাখানেক হেঁটে সবাই বালির ওপর দাঁড় করানো কয়েকটা সাম্পানে চড়ে বসলেন। ডাব খাওয়ার বিরতি। ডাব আসতে আসতে আধঘন্টার মামলা, এর মধ্যে হালকা গল্পগুজব চলতে লাগলো। পারভীন আপার ঘুম হয়নি রাতে, তিনি খুবই নাজেহাল হয়ে পড়েছেন, একটা চাঁদের গাড়ি থামিয়ে তাঁকে তুলে দেয়া হলো মনখালির উদ্দেশ্যে। বাকিরা আবার শুরু করলেন হাঁটা। কিছুক্ষণের মধ্যেই মিলন ভাই চোখের আড়াল হয়ে গেলেন, জোর হাঁটা শুরু করেছেন তিনি, মনখালিতে পৌঁছে পারভীন আপাকে খুঁজে বের করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে, সৈকতের ওপর একটু পর পর ছুটে চলেছে চাঁদের গাড়ি, মাইকে চারদিক কাঁপিয়ে স্থানীয় ভাষায় প্রার্থীদের প্রচার চলছে। একটু পর পর দেখা যাচ্ছে স্থানীয় মহিলাদের, ঝিনুক কুড়িয়ে গুঁড়ো করছেন তারা। পোলট্রি ফিড হিসেবে ঝিনুকের গুঁড়ো খুবই উত্তম। পথে আরো কয়েক জায়গায় ছোট ছোট বিরতি নিয়ে গল্পগুজব করতে করতে এক সময় দুপুরের খাবারের জন্যে সবাই জড়ো হলেন বড্যিল বাজারে। টেকনাফ থেকে প্রায় ষোল কিলো দূরে জায়গাটা। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে, আকাশ তখনও বিষণ্ন। এর মধ্যে চঞ্চল একটা কাঁকড়া শিকার করেছে, সেটাকে ভেজে খাওয়ার দুরভিসন্ধি তার। অভিযাত্রীরা বেশ কিছু বিচিত্র নকশাওয়ালা বিশাল সবুজ কাঁকড়া দেখেছেন পথে, তবে সেগুলোকে পাকড়াও করা হয়নি। বড্যিল বাজারে কেউ কেউ হালকা ঘুম দিলেন, সামিয়াকে দেখা গেলো বেশ কিছু শিশু-ফ্যান যোগাড় করে তাদের ন্যায়শিক্ষা বা ফ্যাশনশিক্ষা এই গোছের কিছু একটা লেকচার দিতে, আর এক দোকানে ঢুকে নাজমুল ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে কয়েকজন হূলস্থূল খিচুড়ি রান্না করে ফেললেন। এই খিচুড়ি খেয়ে তৎক্ষণাৎ ক্লাবের বাবুর্চি পদে ওয়াহিদ ভাইয়ের পাশাপাশি নাজমুল ভাইকেও আসীন করা হলো। বড্যিল বাজার পর্যন্ত স্থানীয় জনতা অভিযাত্রীদের যেসব প্রশ্ন করেছেন, সেগুলো হচ্ছে, তারা এদেশের লোক না, মুসলমান না, কেন এত ভালো চাঁদের গাড়ির সার্ভিস থাকতে তারা কষ্ট করে পায়দল চলছেন, তাদের দেশের বাড়ি কোথায়, তারা হেঁটে হেঁটে কতদূর যাবেন ইত্যাদি। ক্লাবের সদস্যাদের শার্টপ্যান্ট পরে হাঁটতে দেখে স্থানীয় মৌলানা আল্লার গজব নেমে এসেছে বলে রায় দিয়ে ফেলেছেন। যদিও অনেকের ধারণা, এটা আসলে স্থানীয় বাকরীতিতে অকুন্ঠ প্রশংসা। ঢেঁকুর তুলতে তুলতেই আবার সৈকতে নেমে এলেন সবাই। মনখালিতে গিয়ে থামবে গোটা দলটা, আরো অনেক পথ বাকি, মাত্র দুই পঞ্চমাংশ পার হয়েছে। চলতে চলতে কিছুদূর গিয়ে জেলেদের মাছধরা দেখার জন্যে থামলেন সবাই। বিশাল এক জাল সমুদ্রে সাম্পানে করে ফেলে আসা হয়, জোয়ারের সময় সেই জাল ডাঙা থেকে বিশ-পঁচিশজন মিলে টেনে তুলতে হয়। ভারি চমৎকার একটি দৃশ্য, কিন্তু কিছুক্ষণ পর যখন সৈকতে দু'টি মৃত তিমির বাচ্চা পাওয়া গেলো, সবার মনই খারাপ হয়ে গেলো। স্থানীয় জেলেরা লগা মাছ বলে চেনে এদের, ডলফিন আর তিমি মাছ তারা সাধারণত ধরে না, এ দু'টি মাছ নাকি দুর্ঘটনাবশত তাদের জালে ফেঁসে গেছে। এবং আরো মুশকিল হচ্ছে, এমন দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কী আর করা, মৃত তিমিশিশু দুটির পাশে বসে থমথমে মুখে ছবি তুলে, সে দু'টিকে পানিতে বিসর্জন দিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলেন সবাই। শঙ্কর প্রজাতির একটা মাছ আর ক্ষুদে স্কুইড ছাড়া আর তেমন কোন বিশেষ মাছ জেলেদের ঝুড়িতে ওঠেনি। স্থানীয় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শহীদউল্লাহ সাহেব চাঁদের গাড়িতে করে নির্বাচনী কাজে যাচ্ছিলেন, তিনি নিজের উদ্যোগে শামলাপুরে অভিযাত্রীদের আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে গেলেন। তাঁর রেফারেন্স চিঠিসহ অভিযাত্রীরা আবার হাঁটা শুরু করলেন। কিছুদূর যেতে না যেতেই মোক্তার ভাই মোটর সাইকেলে চড়ে উপস্থিত, শামলাপুরে ট্রেকারদের সহযোগিতা করার দায়িত্ব শহীদউল্লাহ সাহেব এঁকেই দিয়েছেন। শামলাপুরের কাছে সৈকতে তিনি উপস্থিত থাকবেন, এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি দক্ষিণ দিকে চলে গেলেন আবার। কিছুদূর গিয়ে দেখা গেলো, সামনে গোটা সৈকত টকটকে লাল, যেন কেউ আবীর ছড়িয়ে রেখেছে। কাছে গিয়ে দেখা গেলো হাজারে হাজারে লাল কাঁকড়া গর্ড় ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছে। অভিযাত্রীদের উপস্থিতি টের পেলো তারা সহজেই, অনেকে বিস্তর ছুটোছুটি করেও তাদের টিকিটি স্পর্শ করতে পারলেন না। শাহুল আর চঞ্চল অনেক ছবি তুলেছে এর মধ্যে। ফরিদ ভাই ঢাউস এক বয়াম জেলি নিয়ে ঘুরছিলেন, সন্ধ্যে নামার আগে আগে ক্যানভাস বিছিয়ে বসে সেটাকে বের করে বিস্কুটে মাখিয়ে খেয়ে নিলেন সবাই। জেলিটাই ফরিদ ভাইয়ের সবচে বড় বোঝা, সেটাকে খতম করায় তিনি আনন্দে একেবারে উলু দিয়ে উঠলেন। আবার হাঁটা শুরু করার পর দেখা গেলো, ভর কমে যাওয়ায় ফরিদ ভাইয়ের বেগ অসাধারণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখের আড়াল হয়ে গেলেন তিনি। সূর্য ডুবে যাওয়ার পর চাঁদের আলোয় কয়েকটা খাল পার হয়ে ঘন্টাখানেক সৈকতে হাঁটার পর মোক্তার ভাইয়ের দেখা মিললো আবার, তাঁর পিছু পিছু শামলাপুর বাজারে পৌঁছালেন সবাই। সৈকতের ভেজা বালিতে হাঁটা মোটামুটি কষ্টসাধ্য কাজ, আর শামলাপুর যেতে হলে ঝুরঝুরে নরম বালির ওপর দিয়ে এক কিলো হাঁটতে হয়। কাজেই হয়রান হয়ে অবশেষে সবাই শামলাপুর পৌঁছে কোনমতে একটা চায়ের দোকানে হ্যাভারস্যাক খুলে বসলেন। আর হ্যাঁ, মিলন ভাই সে দোকানে ভারি তৃপ্ত চকচকে মুখে চা খাচ্ছেন কয়েকজন মুরুবি্বর সাথে। শামলাপুরে মোবাইল নেটওয়ার্ক আছে, কয়েকজন গেলেন ফোন করতে, বাকিরা স্থানীয় জনতার কৌতূহল নিবারণের ভার নিলেন। ঢাকায় উৎকন্ঠিত স্বজনদের সাথে যোগাযোগ সেরে ফিরে মিলন ভাইয়ের কাছ থেকে যা জানা গেলো, সেটা হচ্ছে, মনখালিতে বন বিভাগের রেস্টহাউসে রাত্রিনিবাসের বন্দোবস্ত হয়েছে। মিলন ভাই বিকেলে পৌঁছেছেন মনখালিতে, টানা হেঁটেছেন তিনি, স্থানীয় ইমাম তাঁর মেজবান হয়েছেন। পারভীন আপা সেই সকালে মনখালি পৌঁছে জনৈক সাংবাদিকের মেহমান হয়েছেন, তিনি সারাদিন এই এলাকায় শ'দেড়েক শিশু-ফ্যান জুটিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন, একটা প্রেস কনফারেন্স পর্যন্ত করে ফেলেছেন। স্থানীয় জনতা তাঁর বেশভূষা দেখে সিদ্ধান্তে এসেছে, তিনি খ্রিষ্টান, এবং তাঁরা মোটেও সন্তুষ্ট নয়, কারণ পারভীন আপার শিশু-ফ্যানদের ভাড়া করা হয়েছিলো নির্বাচনী প্রচারণার কাজে, তারা সেটিতে ইস্তফা দিয়ে পারভীন আপার পিছু পিছু ঘুরেছে সারা দিন। আর হ্যাঁ, মিলন ভাইয়ের দোস্তান সেই কুকুরটাও তাঁর সাথে সাথে মনখালি পর্যন্ত চলে এসেছে। শামলাপুরের অধিবাসীরা মেরিন ড্রাইভের ব্যাপারে পত্রিকায় জোর লেখালেখির কাতর অনুরোধ জানালেন। তাঁদের অর্থনৈতিক সক্রিয়তা এই পথের কল্যাণে বহুদূর বৃদ্ধি পেতে পারে। এই এলাকায় সামুদ্রিক পণ্যের উৎপাদন প্রচুর, কিন্তু পরিবহনের কাজটি যথেষ্ঠ জটিল ও সময়সাপেক্ষ বলে যথেষ্ঠ পরিমাণে অর্থনৈতিক অগ্রগতি তাঁদের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তাঁরা বিষণ্ন মতামত জানালেন। মনখালিতে পৌঁছানোর জন্যে একটা খাল পার হতে হলো একটা নাজুক চেহারার ডিঙি নৌকোতে চড়ে। পারাপারের আগে মাঝখালে নৌকোটাকে ডানে বামে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে সেটার খোলে জমে থাকা পানি ফেলে দেয়া হলো, এই অভিনব দৃশ্য দেখে কয়েকজনের আত্মারাম খাঁচার দরজা ধরে ঝাঁকাতে লাগলো। এঙ্প্লোরারস' ক্লাব অব বাংলাদেশের সদস্যদের নৌকাভাগ্য খুব একটা ভালো না, এর আগে সাঙ্গু নদীতে রুমাঘাটে তাঁদের কয়েকজন নৌকাডুবির শিকার হয়েছিলেন, তবে এবার উল্লেখযোগ্য কোন ঘটনা ছাড়াই তাঁরা পার হয়ে গেলেন, মোক্তার ভাইয়ের সৌজন্যে। শামলাপুরের মানুষেরা মেজবান হিসেবে অসাধারণ, তাঁরা খুব যত্নে অভিযাত্রীদের এগিয়ে দিলেন মনখালি রেস্টহাউস পর্যন্ত, প্রায় দু'কিলো পথ। রেস্টহাউসে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই প্রায় সবার শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়লো ক্লান্তি। চলি্লশ কিলো পথ বালির ওপর দিয়ে হেঁটে এসে অনেকেই কাবু। হাতমুখ ধুয়ে এসে ব্যান্ডএইড আর মালিশ নিয়ে বসলেন সবাই। যারা কিছুটা চাঙা, তাঁরা স্থানীয় বাজারে গরম পানির সন্ধানে বেরোলেন, কফি বানিয়ে খাবেন। রান্না হতে অনেক দেরি, সারাদিনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্যে বসলেন সবাই। গল্পের পাশাপাশি মালিশও চলতে লাগলো। মিলন ভাই তার সারমেয় সফরসঙ্গিনীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ, কুকুরটা নাকি তাঁর সব কথা বোঝে এবং মেনে চলে। তবে খাল পার হওয়ার সময় সে নৌকার ওপর ভরসা করে নি, সাঁতরে পার হয়ে এসেছে। কুকুরটার নাম দেয়া দরকার, আর মিলন ভাইকে নামকরণের দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি লুব্ধক অগস্ত্যমুনি গোছের নাম রেখে দেবেন। কিন্তু জানা গেলো মিলন ভাই সেটার নাম লালি রেখে আকিকা দেয়ার খায়েশ পোষণ করছেন। তবে হিমু প্রতিবাদ জানালো, কুকুরটা বাদামী, লাল নয়, কাজেই নাম রাখা হলো বালি। কুকুরের বয়সে বালি অনেক সিনিয়র, অনেকে তাকে বালি আপা ডাকা শুরু করলো। একসময় আলুভর্তা, মুসুরির ডাল আর ভাত খাওয়ার আহ্বান এলো, সবাই হুড়মুড় করে ছুটে গেলেন। খাওয়াদাওয়ার পর স্থানীয় সাংবাদিক ইনানীর কাছে মোহাম্মদশফিরবিল এলাকায় কানারাজার গুহার রোমহর্ষক গল্প শোনালেন। সেই গুহায় নাকি ভয়ঙ্কর এক অজগর বাস করে, বার্মা মুলুকের এক সময়ের দসু্য কানা রাজার গুপ্তধন সে পাহারা দেয়। পাকিস্তান আমলে তিন সরকারী অফিসার সেই গুহায় ঢুকে স্বচক্ষে সেই সাপকে দেখে এসেছেন। তারপর থেকে সেই গুহায় আর কেউ ঢোকে না। সঙ্গত কারণেই ঠিক করা হলো, অভিযাত্রীদের কেউ সেখানে ঢুকবেন না। পাকিস্তান আমলের অজগর বয়সে সবারই মুরুবি্ব, তাকে না ঘাঁটানোই শ্রেয়। খাওয়াদাওয়া সেরে হাই তুলতে তুলতে সবাই যে যার স্লিপিংব্যাগের ভেতরে সেঁধিয়ে গেলেন। ভোর পাঁচটার আগে ক্লাবের অন্যতম দুই নাসিকাবীর শাহেদ ভাই আর বরুণদা ছাড়া কারো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না। ফরিদ ভাই এই দু'জনের মাঝে স্যান্ডউইচ হয়ে ঘুমোতে গিয়েছিলেন, কাজেই সারা রাত ভেড়া, তারা ইত্যাদির পরিসংখ্যান নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হলো বেচারাকে। ৩. পরদিন সকালে হুলস্থূল কান্ড। কারোই ঘুম হয়নি ঠিকমতো, অনেকের সারা গায়ে ব্যথা, আর ফার্নিচার সরাতে গিয়ে নাজমুল ভাই ডান পায়ের নখে ভয়ঙ্কর ব্যথা পেয়েছেন। বখতিয়ার ভাই অস্ত্রোপচার করে তাঁকে মোটামুটি সাইজে আনলেন। যাবতীয় প্রভাতীকর্তব্য সেরে, উপল উপকূল রেস্টহাউস-এর দেনাপাওনা মিটিয়ে, অফিশিয়াল চিত্রগ্রহণের আড়ম্বর সেরে বেরোতে বেরোতে রোদ চড়ে গেলো। আকাশ আজ স্মিতমুখ। আজকের গন্তব্য ইনানী, বাংলাদেশের একমাত্র প্রস্তরসৈকত, এশিয়ার প্রশস্ততম সৈকত। মনখালি সৈকতে পৌঁছোনোর পথ এক কথায় অপূর্ব। বেশ কয়েকটা লেগুন, পাশে ঝাউবন, লেগুনে বিভিন্ন ধাঁচের মাছধরা নৌকো, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটির গায়ে বর্মী হরফে আঁকিবুকি কাটা, নোঙর করা রয়েছে। এখানে বালি খুব ঝকঝকে, পানির রঙ অদ্ভূত নীল, আর আকাশও সুর মিলিয়েছে সমুদ্রের সাথে। অভিযাত্রীদের ক্যামেরা ব্যস্ত হয়ে উঠলো তাঁদের পায়ের সাথে। কিছুদূর এগিয়ে ডাব খাওয়ার জন্যে একটা সাম্পানে চড়ে বসলেন সবাই। যুগে যুগে বহু জমিয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ, গোটা বছরের ডাবের দেনা এই সুযোগে মিটিয়ে নিতে চান সবাই। ঢাকায় যেমন ফোস্কাপড়া পিগমি ডাব আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হয়, তেমনটা নয়, খুবই সস্তায় প্রমাণ সাইজের ঝকঝকে ডাব মেলে এখানে। মিলন ভাই আজকে অনেকের টার্গেট। মিলন ভাই নাকি গতদিন মোটেও হাঁটেননি, অন্যেরা চোখের আড়াল হওয়া মাত্র চাঁদের গাড়িতে চেপে বসেছেন, মিলন ভাই নাকি পাঁচটা মাত্র তারার নাম জানেন, এগুলোই কুমীরের ছানার মতো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখান, মিলন ভাই নাকি জ্বীন সাধনা করেন --- ইত্যাদি ইত্যাদি। মিলন ভাই অবশ্য বালির ওপর শুয়ে শুয়ে বালির সাথে খেলা করছিলেন, তিনি জ্বীনসাধকদের মতো মিটিমিটি হাসেন, কিছু বলেন না। ডাব খেয়ে পোক্ত হয়ে হাঁটার গতি বাড়ালেন সবাই। বেশ কয়েক কিলো এগিয়ে অভিযাত্রীদের যা চোখে পড়লো, সেটা একটা বিস্ময়, এবং তা পাঠকদের কাছ থেকে গোপন রাখা হলো। কেবল যাঁরা হেঁটে পৌঁছুতে পারবেন, তারাই সেই অপার্থিব সৌন্দর্যের নাগাল পাবেন, বাকিদের জন্যে ঘেঁচু। কিছুক্ষণ সেখানে উদাস মনে কাটিয়ে আবার উঠলেন সবাই। কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে পারভীন আপার সহকর্মী সাংবাদিক মোরশেদ ভাইকে সস্ত্রীক পাওয়া গেলো। যদিও একই দলে যোগ দেয়ার কথা ছিলো, শেষ মূহুর্তে যোগাযোগের অভাবে এঁরা দুজন দলছুট হয়ে পড়েছিলেন। তবে হাল ছাড়েননি তাঁরা, যাচ্ছেন উল্টো, অর্থাৎ হেঁটে হেঁটে কঙ্বাজার থেকে টেকনাফ। পথলব্ধ উপদেশ-পরামর্শ বিনিময় করে দু'পক্ষ দু'দিকে হাঁটা দিলেন। আজ আর গতদিনের মতো তেজ নেই কারো, বার বার বসা হলো বিশ্রামের জন্যে। পুতুল আপা স্থানীয়দের কাছ থেকে বরই কিনে খাওয়ালেন সবাইকে। রাতে ভালো ঘুম না হলে এই কড়া রোদে গতি বাড়ানো মুশকিল। অনেকের পায়ে ফোসকা পড়েছে, সেগুলো ফেটে গিয়ে জ্বলছে ভীষণ। কারো কাফ মাসল, কারো ঊরুর পেশীতে টান লেগেছে। তবে নাজমুল ভাই ব্যান্ডেজ করা পা নিয়েও চমৎকার হাঁটছেন। বালি আর মিলন ভাই নির্বিকার। বালির চারটা পা বলে তার গতিও দ্বিগুণ, আর মিলন ভাই যদিও দ্বিপদ ---। রূপবতীতে কিছুক্ষণ প্রবাল আর সবুজ পাথরের ওপর কাটিয়ে আবার সবাই এগোলেন, কেউ একটু সামনে, কেউ একটু পেছনে। বালি এখানে খানিকটা ঘুমিয়েছে, স্থানীয় এক প্রৌঢ় তাকে পুষ্যি নিতে চেয়ে অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু সে ট্রেকারদের পিছু ছাড়বার পাত্রী নয়। সবাই হাঁটা শুরুর সাথে সাথে সে ঘুমটুম ফেলে দে দৌড়। কিছুদূরে একটা বালিয়াড়ি পেরোনোর পর পেছনের দলটার সাথে বীচ প্যাট্রল (বিডিআর)-এর দেখা হলো। তারা দূরের একটা উঁচু টিনশেড দেখিয়ে বললেন, ওটা ইনানী রেস্টহাউস। সজীব আর শাহুল সাগরের মাঝে জেগে থাকা সৈকতসংলগ্ন ছোট্ট একটা ঝিকিমিকি দ্বীপে পদবালি দিয়ে এসেছে এর মধ্যে। ওয়াহিদ ভাই আর হিমু দ্বিতীয় দফা ডাব খাওয়ার তোড়জোড় করছিলেন, তবে ডাব আসতে আসতে সবাই এগিয়ে গেলেন অনেকটা। কী আর করা, শুকনো গলা নিয়ে আবার হাঁটা শুরু হলো। কিছুদূর এগিয়ে চোখে পড়লো বিচিত্র দৃশ্য। দূরে একটা কিছু পড়ে আছে সৈকতে, তার একটু সামনে আরো একটা কিছু, তার কিছু সামনে আরেকটা। অনেক দূরে একটা কিছুর সামনে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে চঞ্চল আর ফাইয়াজ। সামিয়া খুবই দুঃখ করতে লাগলো, এইভাবে সমানে তিমির বাচ্চা মারা পড়ছে দেখে, তবে আরেকটু এগোতেই বোঝা গেলো, ওগুলো মানুষের বাচ্চা --- যথাক্রমে পারভীন আপা, ইকবাল, শাহেদ ভাই ---। সৈকতে যে যার মতো চিৎপাত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। সেই দূরের টিনশেডটা আসলে বহুদূরে, সেটাকে শুরুতে যেমন ছোট দেখাচ্ছিলো, ঘন্টাখানেক হাঁটার পরও তেমন ছোটই দেখালো। তারপর একসময় যখন সেটা কাছে এলো, তখন জানা গেলো, সেটা আসলে বিডিআর-এর ফাঁড়ি। সবার মেজাজ খারাপ, গলা শুকনো, বিডিআর সদস্যদের শাপান্ত করে, আবার খানিকটা বসে হাঁটা শুরু করতে হলো। কিছুটা এগিয়ে জনৈক প্রৌঢ়ের সাথে দেখা। তাঁর কাছ থেকে জানা গেলো, অভিযাত্রীদের খবর তিনি পেয়েছেন আগেই, আর ইনানী রেস্টহাউস আরো সামনে। ঐ যে টিনশেড দেখা যাচ্ছে, ওটা পার হলে রেস্টহাউস চোখে পড়বে। ট্রেকাররা ইতিমধ্যে টিনশেডগুলোর স্বভাব বুঝে গেছেন, এরা অনেকক্ষণ যাবৎ দেখা দেয়, কিন্তু ধরা দেয় না। কাজেই আবার গরম মেজাজ নিয়ে পা টেনে টেনে হাঁটা। হিমুর ঊরুর পেশীতে টান পড়েছে, দশ মিনিট পরপরই বসে পড়তে চাইছে সে, কাজেই মিলন ভাই তার অহমে সুড়সুড়ি দেয়ার জন্যে তার ব্যাগটা কাঁধে তুলে জোর হাঁটা শুরু করলেন। এভাবে তার প্রেস্টিজ হাইজ্যাক হয়ে যাচ্ছে দেখে আবার খোঁড়াতে খোঁড়াতে ছুটলো সে, মিলন ভাইয়ের হাত থেকে জগদ্দল ব্যাকপ্যাকটা উদ্ধার করা সহজ কথা নয়। ঘণ্টাখানেক পর যখন ইনানী রেস্ট হাউস চোখে পড়লো, তখন সবাই থামলেন। একটা বড়সড় বিশ্রাম নেয়া হবে। মিলন ভাই, বরুণদা আর শাহেদ ভাই এগিয়ে গেছেন লাঞ্চের খোঁজ নিতে। এই ফাঁকে বিস্কুট দিয়ে ক্ষিদে মারছেন সবাই। বখতিয়ার ভাই সমসাময়িক বাংলা কবিতা এবং ইংরেজি সাহিত্যে এর প্রভাব নিয়ে একটি জটিল তাত্তি্বক আলোচনার সূত্রপাত করতে যাবেন, এমন সময় স্থানীয় জনতা ভিড় করলো সেখানে। বালি রোদে শুয়ে ঘুমাচ্ছিলো, খামোকাই তাকে ঢিল ছুঁড়তে লাগলো একদল বাচ্চাকাচ্চা। এতোদূর হেঁটে হেঁটে সামিয়ার মেজাজ খারাপ, সে উঠে এসে এমন কড়া ঝাড়ি লাগালো যে জনতার ভিড় খুব জলদি জলদি পাতলা হয়ে গেলো। এরই মধ্যে বরুণদা ফিরে এলেন বিস্কিট আর হালকা পানীয় নিয়ে। সামনে কোথাও ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। সব দোকান বন্ধ, আর রেস্টহাউসের বাবুর্চি কোন রকমের সহযোগিতা করতে নারাজ। বরুণদা ইনানীতে অফিশিয়াল ক্যাপাসিটিতে এসে ভবিষ্যতে তাকে কঠোর শাস্তি দেয়ার সংকল্প নিয়েছেন। বিস্কিট খেয়ে আবার উঠলেন সবাই। সূর্য টলে গেছে অনেকখানি। চাঁদের ত্রয়োদশী চলছে, সমুদ্র বেশ উত্তাল। সমুদ্র আর বাতাসের গর্জনে অবশ্য সবাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। অপূর্ব বীচ, আর সন্ধ্যেবেলা পশ্চিমে সূর্য আর পূবে চাঁদ অন্য রকম আলো এনে দিয়েছে সৈকতে। আরো বেশ কিছুদূর হেঁটে, কয়েকটা খাল পার হয়ে একসময় অভিযাত্রীরা পৌঁছালেন সীকিং হ্যাচারিতে। এখানেই রাতে আশ্রয় নেয়া হবে। হ্যাচারিতে পৌঁছে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে হাতমুখ ধুয়ে রান্নার তোড়জোড় নেয়া হলো। খাসির বারবিকিউ করার আয়োজন চলছিলো, কিন্তু সাতপাঁচ ভেবে সেটা বাতিল করা হলো। চাল-ডাল-আলু-ডিম কিনে দেয়া হয়েছে হ্যাচারির বাবুর্চি সেলিম ভাইকে, খিচুড়ি হবে রাতে। কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে একদল গেলেন হ্যাচারির অপারেশন দেখতে, একদল জখম হাত পা নিয়ে পড়ে রইলেন। রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে জলদি জলদি ঘুমুতে গেলেন সবাই। তিরিশ কিলো হাঁটা হয়েছে আজ। পরদিন আরো তিরিশ কিলো। কাজেই উঠতে হবে ভোরে। পুতুল আপা, শিলা আপা, পারভীন আপা আর সামিয়া রইলেন হ্যাচারির গেস্টরুমে, বাকিরা বাইরে ওয়াচহাউসে। ওয়াচহাউসটা একটা গোল দোতলা ঘর, ধূসর সাগর আর মাখনরঙা চাঁদ চোখে পড়ে সেটা থেকে। মোটামুটি ঠান্ডা পড়েছে, স্লিপিংব্যাগ বিছিয়ে আড্ডা মারতে মারতে সবাই ঘুমসাগরে তলিয়ে গেলেন। ৪. ভোরে অ্যালার্মের একটা ছোটখাটো অপেরা হয়ে গেলো। নানা সুরে, নানা তালে একেক জনের অ্যালার্ম সোচ্চার হয়ে উঠলো। রাত ফুরিয়েছে। চাঁদ আস্তে আস্তে হলদে হয়ে ঢলে পড়ছে সাগরে। অপূর্ব একটা দৃশ্য, একে একে রেশম পোকার মতো ঘুমের গুটি কেটে স্লিপিং ব্যাগ ছেড়ে বেরিয়ে এলেন সবাই। আজকে সবাই কিঞ্চিৎ টাটকা। আজই কঙ্বাজারে পৌঁছে ঢাকার বাসে চড়ে বসতে হবে। পরদিন সবার অফিস, ইউনিভার্সিটি খোলা। সবকিছু সেরে চটজলদি বেরিয়ে পড়লেন সবাই। আজ সৈকতে নেমে মিলন ভাই আরো কয়েকটা কুকুরকে দলে জুটিয়ে নিলেন। বালির সাথে ভাব হয়ে গেলো একটার, তার নাম বাঘা। মিলন ভাই অবশ্য আরো তিন চারটাকে টোস্ট বিস্কুটের লোভ দেখাচ্ছিলেন, কিন্তু তারা মনে করে উল্টো দিকে চোঁ চাঁ দৌড়ে পালালো। মিলন ভাই, পারভীন আপা, হিমু আর শাহুল আজ একটু পিছিয়ে, বাকিরা পা চালিয়ে এগিয়ে গেছে। চলতে চলতে শুরু হলো গান। লাকি আখন্দ, আজম খান, সুমন চট্টোপাধ্যায়, মৌসুমী ভৌমিক, জিনাত রেহানা, শামশাদ বেগম, জন ডেনভার, লস লোবোস --- কাউকে রেহাই দেয়া হলো না। টানা দেড়ঘণ্টা গাইতে গাইতে আর হাঁটতে হাঁটতে একসময় রেজু খালের ওপর ব্রিজের ধারে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসা হলো। রেজু খালের দু'ধারে দৃশ্যপটের সৌন্দর্যের জন্যে বিশেষণ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সামনে খানিকটা পথ বীচ ছেড়ে মেরিন ড্রাইভের জন্যে নিধর্ারিত পথে হাঁটতে হবে। সামনের দলটা একটু এগিয়ে গেছে। চা খেয়ে হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগিয়ে একে একে চোখে পড়লো সেনা প্রকৌশলীদের বুলডোজার, নিমর্ীয়মাণ ম্যারিন ড্রাইভ, স্নিগ্ধ সবুজ সুপারি গাছের সারি, গম্ভীর নীল আকাশ, বাদামি বাঁশের কঞ্চিতে ঘেরা পানের বরজ, পান্নাবরণ ধানের ক্ষেত, বেঁটে পাহাড়ের গায়ে নানা চেহারার হাসিমুখ ঝাউবন, দূরে হলদে সৈকত আর নীল সমুদ্র --- রঙের রায়ট একেবারে, সব মিলিয়ে সব দৃশ্যে স্বপ্ন স্বপ্ন ভাব, যদিও স্বপ্ন নাকি লোকে সাদাকালো দেখে। প্যাঁচার দ্বীপ একটা গ্রামের নাম, সেটা পার হয়ে আবার সৈকতে নেমে পড়েছেন অভিযাত্রীরা। পথে স্থানীয় শিশুরা দল বেঁধে তাদের পিছু নিয়েছে, মিলন ভাই তাদের ডেকে জানালেন, বন্ধুরা, তোমরা পপি আপাকে চেনো? বাংলা সিনেমা দেখো নাই? এই যে আপামণিকে দেখছো, ইনি পপি আপার ছোট বোন। ছেলেমেয়ের দল নিজেদের মধ্যে আলাপ করে পটাপট পারভীন আপার সামনে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে গেলো, ছবি তুলবে তারা। পপি আপার পরিবারের একজনের সঙ্গ খোদার ইশারায় মিলে গেছে, এ সুযোগ মাঠে মারতে তারা নারাজ। অবশ্য পারভীন আপাও এই মিথ্যাচারে আপত্তি করলেন না, পপিআপারছোটবোনসুলভ গ্ল্যামার আমদানি করে ছবিতে পোজ দিয়ে দাঁড়ালেন। মিলন ভাইও শিশুপাচারকারীদের মতো হাবভাব নিয়ে, একহাতে একটা কাটারি, অন্য হাতে একটা পিচ্চির কব্জি ধরে কয়েকটা ছবি তুললেন। শাহুল আর হিমুর মাথা আশেপাশের দৃশ্য দেখে গরম, তারা সমানে আকাশসাগরঅরণ্যের ছবি তুলছে। সৈকতে নেমে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে পামের বন চোখে পড়লো। এতক্ষণ সৈকতে কোন আবর্জনা চোখে পড়েনি, কিন্তু যতই হিমছড়ি কাছে চলে আসছে, তত বেশি করে অবিবেচক টু্যরিস্টদের উপস্থিতির পরিচয় পেলেন অভিযাত্রীরা। যেখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে নানা রকম পলি প্যাক, চিপস, বিস্কিট, এমনকি ডিটারজেন্টের প্যাকেট। বিয়ারের খালি কৌটোর কথা না বললেও চলে। পামের বনের ভেতরে একটা খামার বাড়ি, টু্যরিস্টদের জন্যে তৈরি এবং সজ্জিত করা। সেখানে ডাব পাওয়া এবং খাওয়া গেলো। গলা ভিজিয়ে আবার শুরু হলো হাঁটা। কিছুদূর এগিয়ে দেখা গেলো, সামনের দলটা বালির ওপর মেসেজ লিখে গেছে। সেটা পড়ে জানা গেলো, পেছনের দলটা ঘন্টাখানেক পিছিয়ে পড়েছে, কাজেই তাঁরা জোরে পা চালালেন। পথে দু'এক জায়গায় তাঁরা প্লাস্টিক পেতে বসেছিলেন, কিন্তু তীব্র বাতাসে বালির কণা এত জোরে গায়ে বেঁধে যে বেশিক্ষণ বসে থাকা যায় না। আর এ বালি উড়ে আসে মাটি ঘেঁষে, তাই দাঁড়িয়ে থাকলে সমস্যা নেই, বসলেই ঝামেলা। আরো ঘণ্টাখানেক পা চালিয়ে কয়েকটা জীপ দেখা গেলো। সেজেগুজে সমুদ্রদর্শনে এসেছেন কয়েকজন ট্যুরিস্ট। তাদের অনেক সামনে হেঁটে চলেছে কয়েকজন, পিঠে হ্যাভারস্যাক। হুম, এক্সপ্লোরারস' ক্লাবের মেম্বার না হয়েই যায় না। মিলন ভাইকে দূর থেকে সনাক্ত করতে পেরে থেমে পড়লেন অগ্রবর্তীরা। সবাই একসাথে হওয়ার পর একটা লম্বা বিশ্রাম নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। সামনের দলের অভিযাত্রীরা পথে তরমুজ কিনেছেন পিছিয়ে পড়া চারজনের জন্যে, কাজেই পশ্চাদবর্তী দলের সদস্যরা হামলে পড়লেন সেগুলোর ওপর। কিছুক্ষণ সমুদ্রে হাত পা ছুঁড়ে একে একে সবাই এগিয়ে চললেন আবার। এবার মিলন ভাই এগিয়ে গেলেন সামনে, শিলা আপা পিছিয়ে পড়লেন। হিমছড়ি পার হয়ে কক্সবাজারের দিকে এগিয়ে চলতে চলতে চোখে পড়লো অসংখ্য জীপের ট্র্যাক। এবং দুঃখজনকভাবে, অসংখ্য বর্জ্য। এভাবেই মনোরম এই বালুকাবেলাকে নষ্ট করতে করতে এগিয়ে চলছে ট্যুরিস্টভর্তি গাড়িগুলো। প্লাস্টিকের প্যাকেট সৈকতে ছুঁড়ে ফেলতে কারো কোন দ্বিধা নেই। হিমছড়ি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সৈকতের রূপ খানিকটা একঘেয়ে, লোকালয়ের কারণে কিছুটা বিনষ্টরূপ। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই বিশাল বীচের সবচেয়ে নোঙরা অংশটি হচ্ছে হিমছড়ি থেকে কক্সবাজার। তিন দিনের এই অভিযাত্রায় কোন শ্বেতাঙ্গ পর্যটক অভিযাত্রীদের চোখে পড়েনি, যদিও টু্যরিস্ট সীজন এখন তুঙ্গে। অর্থাৎ, সৈকতের মূল সুষমাময় অংশটিতে বহির্বিশ্বের পর্যটকদের চোখ পড়েনি। এই নিয়ে গল্পগুজব করে পথ চলতে চলতে বিকেলবেলা কঙ্বাজারে পৌঁছে গেলো পেছনের দলটাও। বরুণদা অনেক আগে পৌঁছেছেন, জরুরি কাজে তিনি চলে গেছেন চট্টগ্রাম। সবার আগে পৌঁছেছেন বখতিয়ার ভাই। এক এক করে সবাই সৈকত থেকে কক্সবাজার শহরে হোটেল সায়েমানে নজরুল ভাইয়ের রুমে গিয়ে হাজির হলেন। নজরুল ওরফে খোকন ভাই কঙ্বাজারে একটা কার্গো এয়ারলাইন্স-এর পরিচালক, মূলত ইউক্রেনিয়ান ক্রু নিয়েই চলছে তাঁর জেড এয়ারলাইন্স। পুতুল আর শিলা, দুই বোন চলে গেছেন বার্মিজ মার্কেটে, তাঁরা একবারে সন্ধ্যে আটটার সময় বাস কাউন্টারে হাজির হবেন। সবাই গোসল সারতে সারতে সন্ধ্যে হয়ে এলো। গায়ে মৃদু ব্যথা সবারই, খোলা আকাশ ছেড়ে ছাদের নিচে মাথা গুঁজে দেয়ায় সবাই একটা ঘোরের মধ্যে, ভাবখানা এমন, এইটা আবার কী জিনিস? সন্ধ্যেবেলা খোকন ভাই সবাইকে নিয়ে হাজির হলেন তাঁর বন্ধু সাজ্জাদ ভাইয়ের ক্যাফে 'অ্যাঞ্জেল ড্রপ'-এ। সেখানে কফি খেতে খেতে বাসের সময় হয়ে এলো, হুড়োহুড়ি করে সবাই আবার ছুটলেন বাস কাউন্টারের দিকে। মিনিট পাঁচেক দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিলো বাসটাকে, বাসের যাত্রীদের কাছে সেজন্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে একে একে সবাই চড়ে বসলেন। একশো কিলো ট্রেকিং শেষে খানিকটা ক্লান্ত পা নিয়ে ঢাকায় ফিরে চললেন সবাই। ফেরার রাতে পূর্ণিমা। চারদিকে নরম আলো ছড়িয়ে চাঁদ উঠেছে। আজ সাগরে জোয়ার সবচে জোরালো হবে। সাগরের তীর ছেড়ে আবার ধূলিমলিন ঢাকা শহরে ফিরে চলছেন সবাই। এ ক'দিনে টাটকা নোনা বাতাসে অভ্যস্ত সবাই, ঢাকায় ফিরে আবার সেই ধূলা আর কালো ধোঁয়ায় কী হয় কে জানে! বিশেষ দ্রষ্টব্য: বালি অভিযাত্রীদের সাথে কক্সবাজার পর্যন্ত এসেছিলো। বখতিয়ার ভাই বাস কাউন্টারে যাওয়ার জন্যে রিকশা ঠিক করেছিলেন, সে রিকশার পাশে ছুটতে ছুটতে যাচ্ছিলো। রিকশাওয়ালা গতি বাড়িয়ে দেয়ার পর সে আর বেশিক্ষণ তাল মিলিয়ে ছুটতে পারেনি ক্লান্ত শরীর নিয়ে, পিছিয়ে পড়েছিলো। পরে পর্যটন মোটেলের কাছে সে পারভীন আপাকে খুঁজে বের করেছিলো, কিন্তু পারভীন আপা কুকুর ভয় পান বলে তাকে কাছে ঘেঁষতে দেননি। মন খারাপ করে সেখানেই কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে পড়েছিলো সে। ফরিদ ভাই তাকে শেষ দেখেছেন আরেকদল অভিযাত্রীর সঙ্গ নিতে। ৫. পাঠকদের জন্যে দু'টি অনুরোধ। এই অপূর্ব রূপময়ী সৈকতের সানি্নধ্যে যখন যাবেন, দয়া করে এমন কিছু ফেলে আসবেন না, যা জৈবপচনশীল (বায়োডিগ্রেডেবল) নয়। প্লাস্টিকের ব্যাগ বা বোতল, চকলেট বা ব্যান্ডেজের খোসা, পানীয়ের ক্যান --- কিছুই না। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, এক্সপ্লোরারস' ক্লাব অব বাংলাদেশের সদস্যরা তাঁদের ব্যবহৃত প্রত্যেকটি অপচনশীল বর্জ্য নিজেদের সাথে ফিরিয়ে এনে ডাস্টবিনে ফেলার ব্যবস্থা করেছেন। আপনার ফেলে যাওয়া আবর্জনা কিন্তু সৈকতে পড়ে থাকবে বহুদিন। পরবর্তী পর্যটকদের বিরক্তি উৎপাদন করা ছাড়া আর কোন ভূমিকা সেগুলো রাখবে না। নিজের রূপের মতোই নিজের দেশের সৌন্দর্যের প্রতি যত্নবান হোন। আর, কেউ যদি বালিকে খুঁজে পান, দয়া করে ভালো কয়েকটা বিস্কিট খাওয়াবেন।
false
fe
মানবিক আবেদন _ কবি সমুদ্র গুপ্ত কে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন কবির পাশে দাঁড়াও ম য হা রু ল ই স লা ম বা ব লা ================================== রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘যার ভেতরে ক্যান্সার ঢুকিয়েছো তার কাছে মনুষ্যত্বের আশা করো না।’ আমাদের প্রিয় মানুষ কবি সমুদ্র গুপ্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত । জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। চিকিৎসা ব্যয়ের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যরা। তবুও সাহস হারাননি কবি । আজ নির্মোহ-নির্লোভ কবি সমুদ্র গুপ্ত। অর্থ-বিত্তের দিকে কখনও ঝোঁকেননি। নিজেকে বদলে গতানুগতিক স্রোতে গা ভাসিয়েও দেননি। অতি সাধারণ মানের জীবনযাপন করে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের ৬৩টি বছর। সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেয়েছেন, বাড়ি ভাড়া বাকি পড়েছে কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট না হয়ে অভাব-অনটনের সহযাত্রী থেকেছেন। অসুন্দর-অন্যায়-বৈষম্যের বিরুদ্ধে কলমযুদ্ধ করেছেন আজীবন। কিন্তু ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে সেই সাহসই একমাত্র অস্ত্র নয়। তার জন্য প্রয়োজন অর্থের। উন্নত চিকিৎসা তো দূরের কথা, সাধারণ চিকিৎসার সঙ্গতিও তার বা তার পরিবারের নেই। বারডেম হাসপাতালে কর্মরত শ্যালকের কল্যাণে বারডেমে ভর্তি হয়ে সাধারণ চিকিৎসা নিতে পেরেছিলেন। পরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী এগিয়ে না এলে বারডেম হাসপাতাল থেকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নেয়া সম্ভবপর হতো না। বিনা চিকিৎসায় বাসায় ফিরতে হতো। কবি বন্ধুরা এই দুর্দিনে পাশে না দাঁড়ালে পরিণতিটা আরও ভয়াবহ হতে পারত। আশার কথা, তেমনটি হয়নি। তার এই দুরারোগ্য ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রয়োজন অর্থের। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে দেশের বিত্তবানদের কাছে তার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে অর্থ সাহায্য চাওয়া হয়েছে। স্ত্রীর নামে ব্যাংক একাউন্টে অর্থ সাহায্যের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সোহানা হ্যাপী, সঞ্চয়ী একাউন্ট নং-৩৯৫৩, উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড, কলাবাগান শাখা, ঢাকা। তাতে এ পর্যন্ট পাওয়া অর্থ মোটেও যথেষ্ট নয়। চলমান চিকিৎসায় প্রয়োজন আরও অর্থের। ব্যক্তিগত ও দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সরকারকে তার চিকিৎসায় যথার্থ ভূমিকা নিতে হবে। আমাদের দেশে সবচেয়ে ব্যয়বহুল খাত শিক্ষা এবং চিকিৎসা। যা রাষ্ট্র কর্তৃক নাগরিকদের জন্য নিশ্চিত হওয়ার কথা। কিন্তু বা¯-বতা হচ্ছে, রাষ্ট্র নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ না করে অবাধ বাণিজ্যিকীকরণের পথে ঠেলে দিয়েছে। যাদের অর্থ আছে তারাই কেবল উন্নত চিকিৎসা দেশে-বিদেশে নিতে সক্ষম হচ্ছে। অপরদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ শিক্ষা ও চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে চলেছে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি একটি জাতির আত্মপরিচয়ের মূল মাপকাঠি। আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির বিশাল ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে যারা অবদান রেখে চলেছেন তাদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কি করণীয় কিছু নেই? অনেক সময়ই ব্যক্তিগত ও বেসরকারি পর্যায়ে তাদের সাহায্য সহযোগিতার নজির থাকলেও, অতীতে রাষ্ট্র ও সরকারের এগিয়ে আসার ঘটনা বিরল। তবে মৃত্যু-পরবর্তী নানা তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। শোকবাণী, কফিনে ফুল দেয়া, শোকসভায় মৃতের স্তুতি-বন্দনা থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নানা শোক অনুষ্ঠানের আধিক্য। একানব্বইয়ে গুলিবিদ্ধ জননেতা কমরেড রাশেদ খান মেননের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে তৎকালীন সরকারের নিষ্ক্রিয়তা। নিজের উত্তরার প্লট বিক্রি ও ধার-দেনা করে এবং পারিবারিক সাহায্যে তার জীবন রক্ষা পেয়েছিল। কেবল মৃত শিল্পী-সাহিত্যিকের শবে ফুল দেয়া, শোকবাণী প্রচার করাসহ নানা শোকসভায় মৃতের গুণকীর্তন করা। জীবদ্দশায় তাদের পাশে দাঁড়ানোর যেন কোন দায় নেই রাষ্ট্রের। যারা আত্মকেন্দ্রিকতার বিপরীতে সমষ্টির প্রয়োজনে নিজেদের বিলীন করে দেয়, তাদের সুচিকিৎসায় রাষ্ট্রের এগিয়ে আসা উচিত। সরকারের কাছে কবি সমুদ্র গুপ্তের চিকিৎসা ব্যবস্থা করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। --------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক যুগান্তর। ১ জুন ২০০৮ রোববার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০০৮ সকাল ৮:৪৬
false
mk
আমলাতন্ত্রকে শক্তিশালী করছে সরকার প্রশাসনে মেধা ও দক্ষতার মাধ্যমে আমলাতন্ত্রের ভিত শক্তিশালী করছে সরকার। এজন্য কর্মকর্তাদের দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষার্থে আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে। যাতে কর্মকর্তারা বিশ্বের যে কোনো দেশের আমলাতন্ত্রকে টেক্কা দিয়ে কাজ করতে পারে। সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।সূত্র জানায়, সরকার প্রতিবেশী ভারতের মতো দক্ষ, মেধাবী ও স্বতন্ত্র প্রশাসন গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষ আমলাতন্ত্র গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন। এজন্য কর্মকর্তাদের বিদেশ প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তার সরকারের দুই মেয়াদে গত ৫ বছরে (২০১০-১৫) ১ হাজার ৭শ’ কর্মকর্তা স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এছাড়া একই সময়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে (বৃত্তি নিয়ে) ৫ শতাধিক কর্মকর্তা বিদেশে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশাসনে লোভনীয় পদে পদায়নের কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণে আগ্রহ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের যে কোনো ধরনের দেন-দরবারে এগিয়ে থাকতে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে সরকার খুবই আগ্রহী।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে খোদ প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক মনোভাবের কারণে আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ গোটা বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণের নতুন দুয়ার খুলছে। পৃষ্ঠা ২ কলাম ০বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে কোয়ালিটি কর্মকর্তার খুবই প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনীয়তা থেকে আমলাতন্ত্রের উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে সরকার। কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদের বিদেশ প্রশিক্ষণ, বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ করে পিএটিসিতে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে মেধাধারীদের (১ থেকে ১০ম) ক্যামব্রিজ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ আমেরিকা ইউরোপের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবে সরকার।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবকণ্ঠকে জানান, খোদ প্রধানমন্ত্রী বিদেশে প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া ও গবেষণায় কর্মকর্তাদের পাঠানোর ব্যাপারে উৎসহ যোগাচ্ছেন। সেটা সরকারি খরচে হোক বা কেউ ব্যক্তিগত খরচে যাক সে সুযোগ তাদের করে দিতে হবে। প্রশিক্ষণ কর্মকর্তাদের মনোবল বৃদ্ধি করে। তাদের কর্মক্ষেত্রে কাজে আসে।বিদেশে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সরকারি তথ্য দেখা গেছে, গত ৫ বছরে (২০১০-১৫) প্রশাসনের ১ হাজার ৬৬৭ জন কর্মকর্তা বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ২০১০ সালে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণে গেছেন ৪৭ জন, স্বল্পমেয়াদি ৪৩ জন, ২০১১ সালে ৫৫ জন দীর্ঘমেয়াদি, স্বল্প ১১৬ জন, ২০১২ সালে ৭৬ জন দীর্ঘমেয়াদি, ১২০জন স্বল্পমেয়াদি, ২০১৩ সালে দীর্ঘমেয়াদি ৪১ জন, স্বল্প ২৬৭ জন, ২০১৪ সালে ৩৩ মেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি ৫১৭ জন ও ২০১৫ সালের ৬ মাসে ১৪ জন দীর্ঘমেয়াদি ও ৩৩৮ জন স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণে গেছেন।বিশেষ করে গত ১ বছরে (জুলাই ২০১৪ হতে ৩ মে ২০১৫ পর্যন্ত) দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদে ৯০২ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।প্রশাসন বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের অনেক দুর্বলতার মাঝেও কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট রয়েছে। সেটি খুব বেশি আলোচনায় আসে না। নেতিবাচক বিষয়াদি নিয়েই বেশি মতামাতি হয়। ইতবাচক বিষয়গুলো বলা উচিত।ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। দেশের বাণিজ্যিক স্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চুক্তির খুঁটিনাটি সবই এদেশের আমলারাই করেছেন। এ চুক্তি নিয়ে কোথাও দুর্বলতার কথা বলা হচ্ছে না। ভারতের মতো একটি দেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিতে আমলাদের সফলতা আছে। দেশ-বিদেশের প্রশিক্ষণে কর্মকর্তাদের বার্গেনিং ক্যাপাসিটি বাড়ে।কর্মকর্তাদের ব্যাপক অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ: ২০১০ সাল হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে আইন ও প্রশাসন বিষয়ে ২০টি কোর্সে ৬৯৬ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এছাড়া ২০১০ সালের আগস্ট হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিপিটিসিতে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২ হাজার ৭১৪ কর্মকর্তা।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত ৭ বছরে (২০০৯ সাল হতে ১ মে ২০১৫) উচ্চতর প্রশিক্ষণ (এনডিসি, এসএসসি, এসিএডি প্রশিক্ষণ) নিয়েছেন ১ হাজার ৭৬০ কর্মকর্তা।কোর্স মধ্যাহ্ন/নৈশভোজকালীন সেমিনার কোর্স করেছেন ১০৫ সিনিয়র সচিব/সচিব, ক্যাপস্টোন কোর্স করেছেন সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবসহ ৭ জন, পলিসি প্ল্যানিং অ্যান্ড মানেজমেন্ট কোর্স (পিপিএম) করেছেন ৬৭ জন অতিরিক্ত সচিব, এনডিসি কোর্স করেছেন ৬৭ জন যুগ্ম সচিব, এসএসসি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৪৮৭ জন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা (৭১তম পর্যন্ত), এসিএডি কোর্স করেছেন উপসচিব পদমর্যদার ১ হাজার ২৭ কর্মকর্তা। গত এক বছরের উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৪১৮ কর্মকর্তা।দেশবিদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একটি দক্ষ আমলাতন্ত্র গড়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। - See more at: Click This Link সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:০৭
false
hm
ফার্স্ট বেঞ্চে বইতে না দিলে বাইত যামুগা বিরোধী দলকে সংসদে স্পিকারের বাম দিকের প্রথম সারিতে সিট কম দেয়া হয়েছে। সংখ্যার আনুপাতিক হারে নাকি সেখানে সিট বন্টন করা হয়েছে। এতে বিরোধী দল নাখোশ হয়েছে, প্রতিবাদস্বরূপ বিধিসিদ্ধ, চর্চিত ওয়াকআউট করেছে। এই খবর পড়ে অনেক স্মৃতি মাথায় ভিড় করলো। প্রাইমারী স্কুলে যখন পড়তাম, চোখের সমস্যার কারণে ফার্স্টবেঞ্চে বসতে হতো। কোন শয়তানিই করতে পারতাম না, ম্যাডামরা গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকতেন আর একটু পর পর পেছনের সারির কাউকে কোন না কোন অপরাধের কারণে শাস্তি দিতেন। পরিস্থিতির অনেক উন্নয়ন ঘটে হাই স্কুলে গিয়ে। সেখানে মাঝামাঝি বসতাম, নতুন বন্ধুদের সাথে নানারকম নবআবিষ্কৃত শয়তানি পরখ করে দেখতাম। কদাচিৎ ধরা পড়ে গেলে সাধু সাজতাম, মোটা চশমার কারণেই হোক বা ছোট্টখাট্টো ডেক্সটার-টাইপ ছিলাম বলেই হোক, স্যার-ম্যাডামরা অল্পের ওপর দিয়ে ছেড়ে দিতেন। কদাচিৎ কান মলা, বা বিভিন্ন পর্যায়ের সতর্কতা সংকেত দিয়ে ছেড়ে দেয়া হোত। আমাদের এই সুখী স্কুলজীবনে দুর্যোগের ঘনঘটা আসে যখন ক্লাস এইটে উঠে ক্লাসে রোলনম্বর অনুযায়ী আসনবিন্যাসের ব্যবস্থা করেন আমাদের দোর্দন্ডপ্রতাপ ক্লাসশিক্ষক। স্যার মারা গেছেন অনেকদিন হলো, অনেক অম্লমধুর স্মৃতি তাঁকে নিয়ে, তখন মনে মনে অনেক অভিশাপবাক্য উচ্চারণ করলেও তাঁকে নিঃশর্তে ক্ষমা করে দিয়েছি সবকিছুর জন্য। তবে একটি ব্যত্যয় তিনিও করতেন, ক্লাসের বাম পাশে প্রথম সারির পনেরোজনকে বসানো নিয়েই তাঁর মাথাব্যথা সীমাবদ্ধ ছিলো। ক্লাসের বাকি তিরিশপঁয়তিরিশজন কে কিভাবে বসলো তা নিয়ে তাঁর তেমন আগ্রহ ছিলো না। ফলে বিভিন্ন দল উপদলে ভাগ হয়ে সেখানে চ্রম খ্রাপখ্রাপ মজা করতো বাকিরা, আমরা বিরসমুখে প্রথম সারির আসনে বসে লেখাপড়া করতাম। যে কোন নিয়ম তৈরি করলে প্রথম দিকে তা পালনের ব্যাপারে কঠোরতা বেশি থাকে, পরে নানাকারণে তা একটু ফিকে হয়ে আসে। ফলে প্রথম পিরিয়ডটা সবাই সুবোধ ও সুশীল সেজে পার করে পরবর্তী পিরিয়ডেই যে যার মতো করে আসনবিন্যাস করে নিতাম, পরবর্তী ক্লাসের শিক্ষকরা রোলনম্বরানুগ আসনবিন্যাসের ব্যাপারে কোন আগ্রহই দেখাননি। তাই প্রথম সারি থেকে আমি চলে যেতাম তৃতীয় সারিতে, কারণ সেখানেই মূলত শয়তানি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। শেষ বেঞ্চে বসলে পড়া ধরা হয় খামাখা, তাছাড়া অযথা ড়্যানডম কিলচড় খাবার সম্ভাবনাও বেশি ছিলো। ক্লাসের পঞ্চাশজনের সবাই চিৎকার করতাম, কিন্তু অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডস্যার এসে সোজা শেষ সারির ভদ্রলোকদেরই পেটাতেন। স্কুল শেষে কলেজে উঠে কিছুটা নিরাপদ বোধ করলাম। নটরডেমে একজন ছাত্রের জন্যে আসন নির্ধারিত থাকে চার্টার অনুযায়ী। নির্দিষ্ট সময় পর পর ছাত্রের বিভিন্ন পারফরম্যান্স বিচার করে তাকে এগিয়ে বা পিছিয়ে আনা হয়। নটরডেমে রোল কল করার কোন ঝামেলা নেই, স্যাররা রোস্ট্রাম থেকে এক নজর চোখ বুলিয়ে দেখতেন কোন আসনটি ফাঁকা, এবং সেই মোতাবেক একটি লালদাগ দিয়ে রাখতেন সেই ছাত্রের জন্য। কুইজে ডাব্বা আর বিভিন্ন ক্লাসে বাং মেরে মেরে আমি সাফল্যের সাথে পিছিয়ে যেতে সমর্থ হই, এবং একটু আধটু শয়তানি যা করতাম তা পেছন বসে নিরাপদে করতাম। আমাদের প্রিয় কালক্ষেপণক্রীড়া ছিলো, সামনে আসীন কোন অভাগার পিঠে প্রচন্ড এক চাপড় মেরে বলা, "পাস!" সে ব্যথায় বাঁকা হয়ে গেলেও তার সামনে যে আছে, তাকে তৎক্ষণাৎ সেই কিলখানি "পাস" করে দেয়া। বেশ দ্রুততার সাথে একটা কিল শেষ সারি থেকে প্রথম সারি পর্যন্ত চলে যেতো। প্রথম সারির অভাগার হাতে অপশন ছিলো, তুই পারলে স্যারকে একটা কিল মেরে আয়, স্যার তারপর ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে দেয়ালের ওপাশে বসা কেমিস্ট্রি ল্যাবের কোন ব্রাদারকে কিলিয়ে আসবেন। বিভিন্ন ফ্যাক্টর বিচার করে এই গণতান্ত্রিক চর্চাটি থেকে প্রথম সারির পোলাপাইন বিরত থাকতো। তাদের অনেকে এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে। এই যে অনেকেই আমরা গুনগুন করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রদের ওপর অকারণে হম্বিতম্বি করেন, হ্যান করেন ত্যান করেন, কখনো কি ভেবে দেখেছি যে তারা আসলে ছাত্রাবস্থায় সহপাঠীদের ধোলাই খেয়ে খেয়েই "ছাত্র"দের ওপর এমন চটা কিনা? প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি সাফল্যের সঙ্গে ব্যাকবেঞ্চ দখলে রাখতে পেরেছি, প্রথম সারি ক্লাসের হবু স্যার আর মেয়েদের জন্য বরাদ্দ ছিলো। ক্লাসে দেরিতে এসে চুরি করে ঢুকতাম বলে সেটিই সঙ্গত ছিলো। শেষ বেঞ্চে বসে তাস খেলা, ঘুমানো, গল্পের বই পড়া, বিভিন্ন বিষয়ে বন্ধুদের সাথে জোরালো আলোচনা, সবই সম্ভব ছিলো। এত ইতিহাস ফ্যানানোর একটিই কারণ, আমি বলতে চাইছি যে প্রথম সারিতে বসা নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিলো না, এখনও নেই। আমাকে প্রথম সারিতে বসতে না দিলে আমি বাসায় চলে যাবো না। এবং এই কারণেই আমি কখনও বিরোধীদলীয় সাংসদ হতে পারবো না। কিন্তু বিরোধীদল এমন করেন কেন? প্রথমসারিতে বসতে না দিলে কান্দেন কেন? কারণ, প্রথম সারিতে বসলে, ফ্লোর না দিলেও খালি গলায় অনেক কিছু অনেক জোরে বলা যায়। যেটা ক্লাসে বসে স্যারকে বলা যায় না। সাংসদদের তো আর মাইরের ভয় নাই। আর মাইর যদি দেয়ার ব্যবস্থাও থাকতো, তাহলে সেই অজুহাতে আবার ওয়াকআউট, সমস্যা কই? বিরোধী দল তো জানে, স্পীকার ফ্লোর দেয়ার ব্যাপারে কেমন কঠোর হতে পারেন। জমিরুদ্দিন সরকারের কার্যকলাপ তো অনেকেই দেখেছেন। আর ইতিহাস তো পুনরাবৃত্তই হয়। আর যে যায় লঙ্কায় সে-ই হয় রাবণ নয়তো বিভীষণ। গত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ কী কী পয়েন্টে ওয়াকআউট করেছিলো, তার একটা তালিকা খুঁজছি। জানি না পাওয়া সম্ভব হবে কি না। হয়তো এবার বিরোধী দল সেই চোথা নিয়েই তৈরি। আর তা না হলে ওয়াকআউটের জন্য সম্ভাব্য কিছু পয়েন্ট তৈরি করে দিই আসেন। আজকে আকাশে মেঘ ক্যা? প্রতিবাদে ওয়াকআউট। আজকে এত রইদ ক্যা? প্রতিবাদে ওয়াকআউট। গতকাল সোমবার ছিলো, আগামীকাল আবার বুধবার হইলো ক্যা? প্রতিবাদে ওয়াকআউট। ...
false
hm
প্রিয় টাইগার্স, পাকিস্তানে যাবেন না ১. ছুটির দিনে একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠে দু'টি খবর চোখে পড়লো। বিডিনিউজের প্রথম খবরটিতে দেখলাম, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে যাচ্ছে। ২৯ এপ্রিল লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে একটি একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ এবং ৩০ এপ্রিল একটি টিটোয়েন্টি ম্যাচ খেলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে পিসিবি ও বিসিবি। বিসিবির সভাপতি মুস্তফা কামাল বলেছে, “পাকিস্তানের জনগণ ক্রিকেট থেকে বঞ্চিত রয়েছে এবং আমরা মনে করি তাদের সমর্থন করা প্রয়োজন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে লাহোর ও করাচিতে সফর করার সময় আমারা যে অর্ভথ্যনা পেয়েছি তা অনন্য।” লাহোরের এই গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আয়োজিত একটি সিরিজ খেলতে গিয়েই ২০০৯ সালের ৩ মার্চ সশস্ত্র হামলার শিকার হয় শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দল [২] । নিহত হয় তাদের বহনকারী বাসের চালক ও নিরাপাত্তয় নিয়োজিত ছয় পুলিশ। আহত হন সাত ক্রিকেটার, তিলন সামারাভিরা, তারাঙ্গা পারানাবিতানা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাক্কারা, অজন্তা মেন্ডিস, সুরাঙ্গা লাকমাল, চামিন্দা ভাস ও সহকারী কোচ পল ফারব্রেস। প্রথম দু'জনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিলো। লাহোরের সেই হামলায় পুলিশ কমপক্ষে ১২ জন সশস্ত্র হামলাকারীর অস্তিত্ব নিশ্চিত করে, এবং জানায়, হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিলো রকেট লঞ্চার ও গ্রেনেড। [ছবিসূত্র: বিবিসি, এএফপি] পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম নায়ক ইমরান খান পাকিস্তান সরকারকে দোষারোপ করেন নিরাপত্তা ব্যবস্থার অসম্পূর্ণতার কথা তুলে। এবং লক্ষ্যণীয়, এই ঘটনার আগেও পাকিস্তান সরকার ও ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ যথাযথ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কুমার সাঙ্গাক্কারা বলেছিলেন, তাঁদের জীবন রক্ষা পেয়েছিলো বাস ড্রাইভারের দক্ষতার কারণেই। এ থেকে আমরা অনুমান করতে পারি, পুলিশের তৎপরতা সে ঘটনায় যথেষ্ট ছিলো না। এই ঘটনা যারা ঘটায়, তাদের গায়ে আঁচড়ও কাটতে পারেনি পাকিস্তানি পুলিশ। নির্বিঘ্নে আক্রমণ সেরে পালিয়েছে আততায়ীর দল। হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র, ছবিসূত্র: হাফিংটনপোস্ট, এএফপি/গেটি ইমেইজেস ২. আরও পেছনে যদি যাই, তাহলে দেখবো, ২০০২ সালের ৮ মে নিউজিল্যাণ্ডের খেলোয়াড়দের হোটেলে বাসভর্তি বোমা নিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিলো কে বা কাহারা। পাকিস্তানের এক সাবমেরিন প্রকল্পে কর্মরত ১১ ফরাসী প্রকৌশলী মারা পড়ে সেই হামলায়। নিউজিল্যাণ্ড এর পর পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলা বন্ধ রাখে দীর্ঘ সময় [৩]। ৩. বিদেশী ক্রিকেটারদের কথা বাদ দিলাম। প্রকাশ্য দিবালোকে খোলা রাস্তায় হত্যার শিকার হয়েছে পাকিস্তানের অনেক রাজনৈতিক নেতা। বেনজির ভূট্টো রাওয়ালপিণ্ডিতে আর তারই শাসনামলে তার ভাই মুর্তজা ভূট্টো করাচিতে খোলা আকাশের নিচে নিহত হয়েছে। পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসির ইসলামাবাদে খোদ নিজের দেহরক্ষীর বুলেটে নিহত [৪] হয়েছে। বর্তমান সরকারের মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টি নিহত হয়েছে ইসলামাবাদে [৫]। পাকিস্তান নিজের মন্ত্রীদেরই যেখানে রক্ষা করতে পারে না, রক্ষা করতে পারে না বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা দলের খেলোয়াড়দের, রক্ষা করতে পারে না নিজের দেশে সামরিক প্রকল্পে কাজ করতে আসা ফরাসী প্রকৌশলীদের। পাকিস্তানে জুম্মার নামাজের সময় মসজিদে চালানো হয় আত্মঘাতী হামলা, আক্রান্ত হয় সামরিক ঘাঁটি, আক্রান্ত হয় ব্যাঙ্ক, আক্রান্ত হয় স্কুল, দাঙ্গায় অচল হয়ে যায় প্রধান বন্দর নগরী করাচি [৬], সেই পাকিস্তানে কেন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে খেলতে যাবে আমাদের টাইগারের দল? সচল অচ্ছ্যুৎ বলাই একটি পোস্টে [৭] পরিষ্কার করেছেন বিসিবির অযোগ্য, লোভী, অকালকুষ্মাণ্ড সভাপতি মুস্তফা কামালের আইসিসির সভাপতি হওয়ার খায়েশের সাথে পাকিস্তানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে ঠেলে খেলতে পাঠানোর সম্পর্ক। পাকিস্তানীরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সে কি আমাদের দোষে? তারা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের নিজেদের বাঞ্চোতপনার কারণে। তাদের বিষ্ঠা সাফ করার দায়িত্ব তাদের, কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুস্তফা কামাল সেই বিষ্ঠা সাফ করার দায় চাপিয়ে দিচ্ছে আমাদের টাইগারদের ওপর। আমরা মোটেও পাকিস্তানী জনগণের সাথে সমব্যথী নই। পাকিস্তান হচ্ছে সেই অসভ্য জাতি, যারা আমাদের তিন মিলিয়ন মানুষ হত্যা করে দীর্ঘ ৪১ বছরেও ক্ষমা চায়নি, দোষীদের শাস্তির উদ্যোগ নেয়নি, এবং তাদের ক্রিকেটার ইউনূস খান কয়েক মাস আগেও বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস হরণ করে তা আফগানিস্তানকে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে আইসিসিকে উদ্দেশ করে। এই পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যে কেন গুরুত্বপূর্ণ? পাকিস্তানের দোস্তি ছাড়া যদি বিশ্বের আরো দশটা দেশ ক্রিকেট খেলে যেতে পারে, আমাদের কী ঠ্যাকা পড়েছে আমাদের টাইগারদের এই মৃত্যুপুরীতে খেলতে পাঠানোর, যেখান থেকে তারা অক্ষত ফিরে আসতে পারবে কি পারবে না তার কোনো গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না? প্রিয় টাইগার্স, যাবেন না পাকিস্তানে। আপনারা বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষের সম্পদ। যে পাকিস্তানের হাতে এখনও আপনাদের স্বজনদের রক্তের দাগ লেগে আছে, তাদের কপাল থেকে কলঙ্কের দাগ মোছার কোনো দায় আপনাদের পড়েনি। পাকিস্তান যদি অস্ট্রেলিয়ার সাথে নিরপেক্ষে ভেন্যুতে খেলতে পারে, বাংলাদেশের সাথেও তা-ই করতে হবে। আমরা খুচরা নই, আমরা ভাংতি নই, আমরা পাকিস্তানের ছোট ভাই নই। আমরা বাংলাদেশ। আমাদের যারা সম্মান দেয় না, তাদের জঞ্জাল গায়ে পড়ে সাফ করতে আমরা কেন যাবো? এই সফর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের প্রত্যেক টাইগারের প্রতি করজোড়ে অনুরোধ জানাই। কত পরাজয়, কত বিষাদ, কত তিক্ত গ্লানির পর আমরা আপনাদের ওপর ভরসা রাখতে শিখেছি, আপনারা পাকিস্তানের মতো অসভ্য একটা দেশে গিয়ে তিলেকমাত্র আহত হন, তা দেখতে চাই না। পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলা নিয়ে যদি মুস্তফা কামাল এতোই ব্যস্ত হয়, সেই ক্রিকেট টিমটি গঠিত হোক তার বাপ, ভাই, ছেলে, চাচা, মামা, খালু, ফুপা আর কাজিন নিয়ে। সেইসাথে এই লোভী স্বার্থপর লোকটাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে লাথি মেরে দূর করে দেয়ার অনুরোধ করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। যদি আমাদের ক্রিকেটারদের কোনো অনিষ্ট ঘটে, সরকার কি তার দায় এড়াতে পারবে? পাবলিক এমনিতেই অন্য বহু কারণে ক্ষিপ্ত, তাদের বিপদগ্রস্ত কাঁধে নতুন কোনো শোকের ভার আর ক্ষোভের আগুন চাপাবেন না। আবারও বলি, প্রিয় টাইগার্স, পাকিস্তানে খেলতে যাবেন না। ইউনূস খান যখন আফগানিস্তানের ক্রিকেট নিয়ে এতোই উদ্বিগ্ন, আফগানিস্তান দলকেই পাকিস্তানের ক্রিকেটকলঙ্ক মোচনের ভার দিক তারা। সংযোজন: বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে ন্যাকামির চূড়ান্ত করা আনিসুল হক ভাইয়া এই ইস্যুতে কলম ধরেন কি না, তা খুব আগ্রহ নিয়ে দেখছি। ২২ মার্চ, ২০১২ সালে প্রথম আলোয় "আমরা যেভাবে চ্যাম্পিয়ন হতে পারি" [সূত্র] শীর্ষক এক জঘন্য আর্টিকেলে (যেখানে তিনি বাংলাদেশের টপ নচ ক্রিকেটারদের অপুষ্ট আর গরিব ডেকে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন, খামাকাই। এই লোক ফিটনেস আর অপুষ্টির মধ্যে তফাত বোঝে না, ক্রিকেট নিয়ে লিখতে যায়) ইরশাদ করেছিলেন, আমরা ক্রিকেটকে ভালোবাসি। আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি। আমরা আমাদের ক্রিকেটারদের ভালোবাসি। ভালোবাসা থেকেই আসে দায়িত্ববোধ। জাতি হিসেবে আমাদের মাথা যেন উঁচু থাকে। সেটা কেবল মুশফিক, সাকিব, তামিম, মাশরাফি, নাসির, নাজমুলেরা করবেন, তা নয়, আমাদের প্রত্যেকের ওপরেই আজ সেই দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আমরা যেন আমাদের নিজেদের দায়িত্বটুকুন পালন করি। আনিসুল ভাইয়ার ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধের পরিচয় দেয়ার সময় কিন্তু এখন চলে এসেছে। ঠিকাছে ভাইয়া? তথ্যসূত্র: [১] পাকিস্তান সফরে যাচ্ছে ক্রিকেট দল, বিডিনিউজ [২] Gunmen shoot Sri Lanka cricketers, BBC [৩] Karachi bus blast kills 15, BBC [৪] Punjab Governor Salman Taseer assassinated in Islamabad, BBC [৫] Sprayed with 25 bullets: Pakistan's only Christian minister executed by Taliban gunman after campaigning for free speech, Daily Mail [৬] Pakistan violence: Karachi killing sparks fatal riot, BBC [৭] বিসিবি সভাপতির লোভের বলি না হোক আমাদের ক্রিকেট, সচলায়তন
false
mk
অধিকারের তালিকা সম্পূর্ণ ভূয়া !!! রাজধানীর শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামকে হটাতে ৫ মে রাতের অভিযানে ‘নিহত ৬১ জনের’ কথিত তালিকাকে কেন্দ্র করে আবারও বিতর্ক উঠেছে। পুলিশ ও বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ‘তালিকা’ নিয়ে বিভ্রান্তিও বেড়েছে।ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বরাত দিয়ে গতকাল শুক্রবার দেশের কয়েকটি সংবাদপত্রে অধিকারের তৈরি তালিকা হিসেবে ৬১ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ইতিপূর্বে অধিকারের কার্যালয় থেকে জব্দ করা কম্পিউটার থেকে কথিত এই তালিকা উদ্ধার করে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আর অধিকার দাবি করছে, প্রকাশিত এই তালিকা তাদের তালিকা নয়। তাদের করা নিহত ৬১ জনের তালিকা ভিন্ন।এদিকে পুলিশের সরবরাহ করা ওই ৬১ জনের তালিকা প্রথম আলোর হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, কম্পিউটার কম্পোজ করা ওই তালিকায় দুটি কলামে এ নিয়ে পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধান এবং এর অগ্রগতিসংক্রান্ত তথ্যও দেওয়া আছে। এই তালিকার শেষ ক্রমিক ৬১ হলেও ১০ নম্বর ক্রমিকে কারও নাম নেই। বাকি ৬০ জনের মধ্যে পাঁচজনের নাম ও পরিচয় দুবার করে উল্লেখ রয়েছে। তালিকার নাম ও ঠিকানা ধরে খোঁজ করে ১৯ জনের কোনো অস্তিত্ব পাননি পুলিশ কর্মকর্তারা। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ছয়জন অন্যত্র মারা গেছেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে একজন হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনজনকে জীবিত পাওয়া গেছে। ২৬ জনের ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।মহানগর পুলিশের কর্মকর্তাদের দাবি, শাপলা চত্বরে অভিযানে নিহত হিসাবে অধিকারের ৬১ জনের তালিকার মধ্যে ৩৫ জনের নামই ভুয়া। হেফাজতের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত ৫ মে দিনভর সংঘাত, ৬ মে নারায়ণগঞ্জের চিটাগং রোডের সংঘাত এবং ঢাকার বাইরের সংঘাতে নিহতদের নামও অধিকার এ তালিকায় দিয়েছে।তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পরই এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে।গতকাল অধিকারের এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে অধিকার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত নিহতদের তালিকাবহির্ভূত অনেক নামই পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি অধিকারের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে যে তিনজন জীবিত আছে বলে দাবি করা হয়েছে, তারা অধিকারের প্রস্তুতকৃত তালিকাতেই নেই।’ বিবৃতিতে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে ‘অসত্য ও বিভ্রান্তিকর’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যখ্যান করা হয়।তবে সংবাদপত্রে প্রকাশিত এই তালিকা তাঁদের নয় বলে অধিকার দাবি করলেও প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করছে না সংস্থাটি। ফলে অধিকারের ‘নিহত ৬১ জনের’ তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি জিইয়ে রইল।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গতকাল অধিকারের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা তাসকিন ফাহমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের কিছু মানদণ্ড মেনে চলতে হয়। ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা এই তালিকা অন্য কাউকে দিতে পারি না।’তাসকিন ফাহমিন দাবি করেন, পুলিশ ১১ আগস্ট অধিকারের কার্যালয় থেকে কম্পিউটার নিয়ে গেছে। তাতে বিভিন্ন ঘটনার নানা তথ্য ছিল। একটা খসড়া তালিকাও ছিল। আরও অনেক কিছু ছিল। কিন্তু হেফাজতের সমাবেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিহতদের যে চূড়ান্ত তালিকা অধিকার তৈরি করেছিল, তা জব্দ করা কম্পিউটারে ছিল না। তিনি বলেন, অধিকারকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ভুয়া তথ্য দিয়ে পুলিশ মনগড়া তালিকা তৈরি ও প্রচার করছে।গত ১০ জুন অধিকার ৫ ও ৬ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে ‘মানবাধিকার’ পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে তারা নিহতের সংখ্যা ৬১ বলে দাবি করে। গত ১০ জুলাই সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় তালিকাটি চেয়ে পাঠালে অধিকার তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ঘটনার জের ধরে অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করা হয়। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।গতকাল অধিকারের বিবৃতিতে বলা হয়, অধিকার ইতিমধ্যে জাতিসংঘ এবং চারটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনকে নিহতদের প্রাথমিক তালিকা সরবরাহ করেছে। এসব সংস্থা ও সংগঠনকে সুষ্ঠু ও সংবেদনশীল তদন্তের মাধ্যমে এ নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার আহ্বান জানিয়েছে অধিকার। একই সঙ্গে শাপলা চত্বরে অভিযানের ঘটনা তদন্তে একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য আবারও সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে। দৈনিক প্রথম আলো
false
rg
!! একে খন্দকারের বই ১৯৭১_ ভেতরে বাহিরে- একটি নতুন বিতর্ক !! বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন। `১৯৭১: ভেতরে বাইরে'। বইটি প্রকাশ করেছে ‘প্রথমা প্রকাশন’। বইটি নিয়ে গতকাল জাতীয় সংসদ বেশ উত্তপ্ত ছিল। বইটি নিয়ে এখন পক্ষে বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক হবে। আমার সেই কুতর্কে সময় নেই। কিন্তু কিছু প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মিস্টার খন্দকার সাহেবের ১৯৭১ সালের সেই বীরত্বসূচক ঘটনাবলী নিয়ে প্রায় ৪২ বছর পর কেন হঠাৎ লেখার ইচ্ছে জাগল ? এর পিছনে রহস্য কি? ইতিহাস নিয়ে লিখতে গেলে বা ইতিহাসের অত্যন্ত চুম্বক অংশ নিয়ে লেখার জন্য সবচেয়ে মোক্ষম সময় তো ছিল স্বাধীনতার পরপরই। বুঝলাম, খন্দকার সাহেব তখন বিমানবাহিনীর চাকরি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। লেখার মত সময় পাননি। কিন্তু বিমানবাহিনী থেকে অবসর নেবার পরেও কি ওনার সময় হয়নি? সময় যখন হল, মাঝখানে সময় চলে গেছে ৪২ বছর। এই ৪২ বছরে খন্দকার সাহেবের স্বাভাবিকভাবে যে পরিমাণে স্মৃতিভ্রম হবার কথা, অন্তত আসল ঘটনা যা ঘটুক, ৪২ বছর আগের ঘটনা লেখার সময় খন্দকার সাহেব কিছু কিছু স্মৃতিভ্রমের খপ্পরে পড়বেন। এটাই খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তাহলে ৪২ বছর পরে এই বই লেখার পেছনে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। অন্তত এই বিষয়টা খুবই পরিস্কার। এখন খন্দকার সাহেবের সেই উদ্দেশ্যটা কি তা আগামী দিনে আরো স্পষ্ট হবে। মুক্তিযুদ্ধের অনেক বীরত্বগাঁথার বই আমরা আগেও পেয়েছি। এখনো পাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঘটনা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকেই বিতর্কিত করার একটা প্রবনতা আমরা দেখেছি। সেই প্রবনতার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই পরাজিত পাকিস্তানী শক্তির একটা কুমতলব জড়িত। পরাজিতরা কখনোই বিজয়কে ভালোভাবে গ্রহন করতে পারে না। বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে পরাজয়। পাকিস্তানও বাঙালিদের কাছে ১৯৭১ সালের সেই পরাজয় মন থেকে মানতে পারেনি। আজো পাকিস্তান বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। বাঙালি জাতিকে সবচেয়ে বেশি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার চেষ্টা করে। এখনো পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের অনেক লেনদেন জড়িত। পাকিস্তান এখনো আমাদের যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দেয়নি। বিহারিদের ফিরিয়ে নেয়নি। ১৯৭৪ সালের ওআইসি সম্মেলন উপলক্ষে বাংলাদেশকে পাকিন্তান যে স্বীকৃতি দিয়েছিল, সেটিও ছিল মুসলিম নেতাদের খুশি করার মত একটা ঘটনা। মন থেকে বাংলাদেশকে পাকিস্তান স্বীকৃতি দেয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হবার পর পাকিস্তান তাদের মিত্রদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশকে এক ধরনের স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেটা কেবল বঙ্গবন্ধুকে খুন করার পর তাদের মধ্যে যে খুশি কাজ করছিল, সেই স্বীকৃতি। কিন্তু প্রকৃত বিচারে পাকিস্তান বাংলাদেশকে আজো স্বীকৃতি দেয়নি। বরং বাংলাদেশে তাদের দোসর ও এজেন্টদের দিয়ে নানাভাবে অঘটন করার খায়েস তাদের অন্তরের আসল মোটিভ।জনাব খন্দকার সাহেব সুস্পষ্টভাবেই ৪২ বছর পরে স্মৃতিচারণমূলক বই লিখতে গিয়ে কিছু বিষয়কে ইচ্ছে করেই উসকে দিয়েছেন। এতে বইটির কাটতি ভালো যাবে বটে। কিন্তু জনাব খন্দকার সাহেবের আসল উদ্দেশ্য কি তাতে সফল হবে!! আমরা জানি না। খন্দকার সাহেব ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খুনী মোশতাকের মন্ত্রীসভায় জায়গা পাবার চেষ্টা করেছিলেন। সামরিক প্রেসিডেন্ট জিয়া ও এরশাদের সময়ও খন্দকার সাহেব রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। এমন কি আওয়ামী লীগের আগের সরকারেও তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রীর মত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাহলে এখন হঠাৎ করে খন্দকার সাহেবের এমন একটি বিতর্কিত বই লেখার আসল উদ্দেশ্য আসলে কি?শেখ হাসিনার বর্তমান মন্ত্রীসভায় স্থান না পাবার ক্ষোভ? নাকি তিনি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদদে এটি করেছেন? নাকি তিনি রাজনৈতিকভাবে চুপসে যাওয়া বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে গতি আনার জন্য এমনটি করেছেন? খন্দকার সাহেবের ছেলেমেয়েরা কেউ বাংলাদেশে থাকে না। কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের যারা রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন, তাদের ছেলেমেয়েরা প্রায় সবাই বিদেশে থাকেন। এটা এখন বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিনত হয়েছে। তাহলে কি খন্দকার সাহেবরা আজীবন রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করার মত মতলব নিয়ে জন্মগ্রহন করেছেন। বাংলাদেশের বাকি ১৬ কোটি সাধারণ মানুষ জালের কাঠি?খন্দকার সাহেবের বইয়ে ইচ্ছাকৃতভাবেই কিছু বিষয়ে জল ঘোলা করার সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যগুেলার পেছনে যারা কলকাঠি নেড়েছেন, তারা আসলে গভীর জলের মাছ। সেই সব রাঘব বোয়ালদের আমরা কখনোই চিনতে পারি না। বাংলাদেশে চেতনা বিক্রি করে, মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি করে অনেকেই দু-চার পয়সা আয়রোজগার করেছেন। এখনো করছেন। যদি খন্দকার সাহেবের জল ঘোলা করে আয় রোজগারের বিষয় থাকে, তাহলে তিনি একটি খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করলেন। ৪২ বছর পরে আপনি যতোই মেধাবী হোন না কেন, সকল ঘটনা আপনার মনে থাকবে না। ধারাবাহিকভাবে থাকবে না। আপনি ৪২ বছর পর এখন যা যা বলছেন, যেভাবে বলছেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে বলছেন অথবা আপনার এই লেখার পেছনে আসলে যে উদ্দেশ্যটি সবচেয়ে মুখ্য, সেটি আবারো বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার কুমতলব থেকেই করেছেন। আপনার এই কুমতলবটি বাংলাদেশের মানুষ ভালোভাবে গ্রহন করার কথা নয়।খন্দকার সাহেব সারা জীবন ঘি খাবেন, আর একবার দুবার ঘি ভাগে না পেলেই মাথা খারাপ করে পাগলামি করবেন, আর আমরা আপনার সেই পাগলামি মেনে নেব, এটা মনে হয় পাগলের প্রলাপই হবে। আপনার উদ্দেশ্যটি অসৎ। এটি আসল কথা। আপনার মতলবটি নিয়ে এখন যতই তর্ক বিতর্ক হোক, আপনার বুড়ো বয়সের ভিমরতিতে জাতি হিসেবে আমাদের অনেক দুর্নাম হয়ে গেল। লাভ হল পাকিস্তানের। আপনি পাকিস্তানকে ৪২ বছর পরেও সহযোগিতা করতে চাইছেন। তাই মিস্টার খন্দকার সাহেব আপনাকে আর গ্রহন করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ আপনাকে খারিজ করে দিচ্ছে। আপনি স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে আসলে কোন পক্ষের প্রতিনিধি হয়ে উপস্থিত ছিলেন, সেই রহস্য এখন নতুন করে গবেষণার বিষয় হতে পারে। নতুবা মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার হিসেবে কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী সাহেবেরই নিয়ম অনুযায়ী ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা। ওসমানী সাহেবের বদলে আপনার সেই উপস্থিতি তাহলে কি পাক সেনাদের নিরাপত্তার বিষয়টির সঙ্গে জড়িত? আপনি তাহলে কি পাকিস্তানীদেরই প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সেদিন?৪২ বছর পর আপনার মুখোশটি আসলে উন্মোচিত হয়ে গেল। আপনি এতোদিন বাংলাদেশের অনেক রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও আপনার মুখোশটি আজ উন্মোচিত হয়ে গেছে। আপনি আসলে পাকিস্তানের দালাল। এতোদিন মুখোশ পড়ে ছিলেন। এখন মুখোশটি নিজেই খুলে দিলেন। মিস্টার খন্দকার সাহেব, আপনার মুখোশটি উন্মোচিত হওয়ায় নতুন প্রজন্মের অনেক সুবিধা হল। সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
false
ij
গল্প_ পুনর্জন্ম সাত সকালে মঞ্জু খালার ফোন। জলদি আয়। তোকে এক জায়গায় যেতে হবে। মঞ্জু খালারা থাকেন লালমাটিয়ায়। আটটার মধ্যে সিরামিক ইটের ঝকঝকে দোতলা বাড়ির কাছে পৌঁছে যাই। একতলার পোর্টিকোয় সাদা রঙের ঝকঝকে একটা টয়োটা এলিয়ন। গাড়ির সামনে তৈমুর দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে হাসল। পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের ঝকঝকে তরুণ । আমি ওকে অনেক দিন ধরেই চিনি, ও আমার চোখে কেবলই ড্রাইভার নয়- ভারি মজার এক মানুষ। চমৎকার বাঁশিও বাজাতে পারে, যে কারণে তৈমুরকে আমার শাহ্ বাগের বন্ধুদের কাছে প্রেজেন্ট করেছি। আমার কবি বন্ধুরা সব তৈমুরের বিশাল ফ্যান। মঞ্জু খালা ড্রইংরুমে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। আমাকে দেখে গম্ভীর মুখটা ভারি উজ্জ্বল হয়ে উঠল । বললেন, শোন, শান্ত। গতকাল আমেরিকা থেকে একজন গেষ্ট এসেছে, রুনুর প্রতিবেশি। ওখানকার এক ইউনিভারসিটিতে পড়ে। দু-তিন দিন থাকবে ঢাকায়। তারপর ইন্ডিয়া চলে যাবে। পদ্মা নদীর নাম শুনেছে, নদীটা ঢাকার কাছে শুনে দেখবে বলল - এখন কী করি বল তো। এদিকে আমার ব্লাগ সুগার বেড়েছে, তোর খালুও ভীষন ব্যস্ত। রেহান-মুনিয়াদেরও সময় হচ্ছে না, পড়ালেখা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। তোর তো হাতে সময় থাকেই। তুই বরং ওকে নদী দেখিয়ে নিয়ে আয়। বললাম, ওকে, নিয়ে যাব। তুমি কিছু ভেব না।মঞ্জু খালা খুশি হয়ে বললেন, চা খাবি?না।মঞ্জু খালার মেজ মেয়ে রুনু আমেরিকার ম্যারিল্যান্ড থাকে। ও দেশে অনেক দিন ধরেই আছে। রুনুর পড়শি কি বাঙালি না আমেরিকান? না, অন্য কোনও দেশের? মঞ্জু খালা বললেন, ঠিক আছে। তা হলে তুই গাড়িতে গিয়ে বোস। স্টেলা ওপরে আছে। নিচে এলেই পাঠিয়ে দেব। আমেরিকান গেস্টের নাম তাহলে স্টেলা! ইউনিভারসিটিতে পড়ে ...তার মানে তরুণী। বছর দুই হল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বসে আছি। একরকম বেকার জীবন কাটাচ্ছি। আসলে আমার চাকরি-বাকরি করবার ইচ্ছে খুব একটা নেই। শৈশব থেকেই লেখালেখি করি। ‘আউশ’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনা করি। নানারকম দিবাস্বপ্নে ডুবে থাকি- একদিন আমার লেখা খুব হিট করবে, বই বেচে পুরনো ধ্যাড়ধেরা টয়োটা করলা কিনব। না, আসলে সে রকম আশা নেই। দু-চার লাইন যা কবিতার লিখতে পারি বটে, কিন্তু কবিতা লিখে আজকাল বিত্তবান লেখক হওয়ার সম্ভাবনা কম ... জীবনানন্দের মতো কবি যেখানে ভয়ানক সাফার করেছেন। এদিকে আমার জীবন থেকে বাস্তববাদী ক্যারিয়ারিষ্ট বন্ধু-বান্ধবরা সব যত সরে যাচ্ছে, তত আমার গোপন স্বপ্ন আরও গাঢ়তর হয়ে উঠছে। এ রকম এক বিষাদিত সময়ে স্টেলা নামের এক মার্কিন তরুণীর সান্নিধ্য পেলে মন্দ হয় না!বাইরে বেড়িয়ে এসে ড্রাইভার তৈমুরকে বললাম, বিদেশি গেষ্ট নিয়ে পদ্মা নদীর পাড়ে যেতে হবে। মানিকগঞ্জের দিকেই যাওয়াই ভালো। কি বলো?তৈমুর খুশি হয়ে মাথা নাড়ে। ওর বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর। হরিরামপুর তো পদ্মা নদীর কাছ ঘেঁষে। গাড়িতে উঠে বসেছি। ইচ্ছে করেই পিছনের সিটে বসেছি। তৈমুরের পাশে বসলে স্টেলা হয়তো পিছনের সিটে নিঃসঙ্গ বোধ করবে। অবশ্য আমার অবচেতনে অন্য ভাবনাও উঁকি দিতে পারে ... একটু পর স্টেলাকে আসতে দেখলাম। লম্বা, চশমা পরা ফরসা মুখ। কাঁধ অবধি ঢেউ খেলানো ইষৎ লালচে চুল। কালো প্যান্ট আর সাদা রঙের টি-শার্ট পড়েছে। কাঁধে কালো রঙের ব্যাগ। গলায় একটা ক্যামেরা। মেয়েটির হাঁটার ভঙ্গিটা ভারি সিরিয়াস। মনে হয় যেন মনে মনে অঙ্ক কষছে; ইন্টেলেকচুয়াল টাইপ বলে মনে হল। স্টেলার পাশে মোনায়েম। ওর হাতে কতগুলি খাবারের বক্স। তৈমুর বক্সগুলি সামনে সিটে রাখল। স্টেলা আমার পাশে বসল। মুহূর্তেই সুগন্ধ ছড়াল। মোনায়েম দৌড়ে যায় গেটের দিকে। তৈমুর গাড়িটা ধীরে ধীরে ব্যাক করাতে থাকে। আমি স্টেলা রিজ। কন্ঠস্বরটা মিষ্টি। আমি শান্ত শাফায়াত।হ্যাঁ। তোমার কথা মিসেস জাহানারার কাছে শুনেছি। কাঁধ ঝাঁকিয়ে স্টেলা বলল। আশা করি সবই ভালো কথা। আমার ইংরেজি আটকে যাচ্ছে। আসলে একেবারেই অভ্যেস নেই। অবশ্যই। তবে, তুমি হলে এক দূর্লভ প্রাণী।মানে? আমি রীতিমতো স্তম্ভিত। মানে আর কি -স্টেলা হাসল। কবিরা এ যুগে দূর্লভ প্রাণী নয় কি?ওহ্ । আমি হাসলাম। যাক। তেমন মন্দ কিছু বলেনি। বরং সত্যি কথাই বলেছে। গাড়ি বড় রাস্তায় উঠিয়ে এনেছে তৈমুর। দিনটা শুক্রবার বলে রাস্তায় ভিড়ভাট্টা কম। ঝকঝকে রোদ। তৈমুরের নিপুন হাতে পড়ে শব্দহীন ছুটছে এলিয়ন। স্টেলা নিজের সম্পর্কে বলে যাচ্ছে। মিষ্টার অ্যান্ড মিসেস সাঈদদের (মঞ্জু খালার মেজ মেয়ে রুনু আর রুনুর হাজব্যান্ড শরাফত ভাই) প্রতিবেশি, ওদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো। বাংলাদেশিরা নাকি ভালো, ভীষণ অমায়িক। বাংলাদেশি রান্না ভালো লাগে ... শিখেছে। ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাথ মেজর নিয়ে পড়ছে। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাফল্যের কারণে বাংলাদেশের ব্যাপারে কৌতূহল আছে। স্টেলা নারী বলেই মুহাম্মদ ইউনূসের প্রকল্পটা বুঝতে পেরেছে, সমর্থনও করে। এবার হাতে সময় নেই, পরের বার সময় নিয়ে আসবে। রবীন্দ্রনাথ, বঙ্গবন্ধু আর পদ্মা নদী সঙ্গে যে বাংলাদেশের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য তা স্টেলা জানে। স্টেলার সংগ্রহে রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে। ওদের সর্ম্পকে কমবেশি জেনেছে ইন্টারনেট থেকে। কাল রাতে মিসেস জাহানারা বললেন, পদ্মা নদীটা এ শহরের অত দূরে নয়। তাই একবার দেখার ইচ্ছে হল। আমি সঙ্গে যাচ্ছি বলে কৃতজ্ঞ বোধ করছে। আমি বললাম, পদ্মা নদী রবীন্দ্রনাথকে বদলে দিয়েছিল।ওহ্ ।আমি আরও বললাম, বঙ্গবন্ধু পদ্মার পাড়েই বেড়ে উঠেছিলেন।ওহ্ ।এরপর স্টেলাকে নিজের সম্বন্ধে কিছু তথ্য দিলাম। যেমন, আমি জন্মগত ভাবেই ভাবুক। আমৃত্যু সেরকমই থাকতে চাই। আমি এমন এক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনা করি যার বিক্রি-টিকরি কম ...তারপরও পরের সংখ্যা বের করতে চাই। আমি আরও বললাম যে, আমার চেয়ে আমার জন্মভূমির কাহিনী আরও আকর্ষণীয়। মহাকাব্যসম।যেমন? স্টেলা কৌতূহলী হয়ে ওঠে। বললাম, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্র“য়ারি কিংবা ১৪ কি ১৫ এপ্রিল এ দেশে থাকলে সেটা বোঝা যাবে।স্টেলা কি বলতে যাবে-ওর সেলফোনটা বাজল। মুখ ঘুরিয়ে কার সঙ্গে চাপা গলায় কী সব বলল। ফরসা সুন্দর মুখটার অভিব্যক্তি বদলে যাচ্ছে। একটু পর ফোন বন্ধ করে স্টেলা চুপ করে রইল। কবি বলেই আমি টের পেলাম মেয়েটা সর্ম্পকের জটিলতায় ভুগছে। আমাদের নীরবতার ফাঁকে তৈমুর গান ছাড়ল।গান গাই আমার মন রে বুঝাই মন করে পাগল পারাআর কিছু চাই না আমি গান ছাড়া ...স্টেলা গানের কথার মানে জানতে চাইল। শাহ সাহেবের ‘ফোক’ গানের কথার অর্থ যথাসাধ্য বুঝিয়ে দিলাম । স্টেলাকে সামান্য চিন্তিত মনে হল। ফোক গান মানে গ্রামবাংলার গান। গ্রামের একজন গীতিকার লিখেছেন ... আর কিছু চাই না আমি গান ছাড়া ...বাংলাদেশ কি দারিদ্রপীড়িত একটি দেশ নয়? তা হলে? তা হলে একজন গ্রামের গীতিকার ভাতের বদলে গান চাইছে কেন? বললাম, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন বাংলার শীর্ষস্থানীয় কবি সাহিত্যিকরা।তারা কি প্রত্যেকেই সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেছেন?না। আমি যাদের কথা বলছি তারা প্রায় সবাই স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। কেবল কাজী নজরুল ইসলাম বাদে। অবশ্য যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি বোধবুদ্ধিহীন নির্বাক ছিলেন। সে কথা তোমাকে পরে বলব। আশ্চর্য! তুমি বললে তোমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন বাংলার শীর্ষস্থানীয় কবি সাহিত্যিকরা-যারা প্রায় সবাই স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। তা হলে?বললাম, আমার কথাটা বুঝতে হলে তোমাকে অন্তত এক ঋতু এ দেশে থাকতে হবে। অনেক কথা আছে যা বলে বোঝানো যায় না। ওহ্ । স্টেলার মুখে গভীর ছায়া ঘনালো। তৈমুর দুপুরের আগেই আমাদের পদ্মার পাড়ে নিয়ে এল। বাঁধের এ পাড়ে বির্স্তীণ মরিচ ক্ষেতের পাশে গাড়ি থামালো । গাড়ির আওয়াজে মরিচের ক্ষেত থেকে সোনালি রৌদ্রে উড়ে গেল এক ঝাঁক সবজে রঙের টিয়ে পাখি। এই প্রথম স্টেলার চোখে মুগ্ধতা আবিস্কার করলাম। উড়ন্ত টিয়ে পাখির ছবি তুলে নিল। তারপর বলল, ফ্লিকারে আপলোড করবে ...গাড়িতে বসেই খেয়ে নিলাম। মঞ্জু খালার রান্নার হাত চমৎকার। স্টেলা ভেজিটারিয়ান। লুচি আর নিরামিষ করেছেন। আর সেই বিখ্যাত ঘোরের সরবত। এসব মুহূর্তে কেন যেন জীবন সার্থক মনে হয় । মনে হয় জীবনের মানে আছে। অনুভূতিটা বেশিক্ষণ থাকে না। হয়তো কোনও দুঃসংবাদ পাই। স্টেলা চামচ দিয়ে নিরামিষ খেল, তবে হাত দিয়েই লুচি ছিঁড়ে খেল। বলল, মিসেস সাঈদ মানে রুনুর কাছে শিখেছে। এশিয়ার ধ্যান, জ্যোতিষ, তন্ত্র, নিরামিষ খাবার অনেক দিন হল ইউরোপ-আমেরিকায় খুব চল হয়েছে। হয়তো সেসব কার্যকরী। আমি কখনও চেষ্টা করিনি। খাওয়ার পর আমি আর স্টেলা বাঁধের দিকে যেতে থাকি। তৈমুর গাড়ির কাছে বসে থাকে। এই মুহূর্তে আকাশে রোদ মিইয়ে গিয়ে সামান্য মেঘ জমেছে। বাঁধের ওপর তুমুল বাতাস; বাঁধের ওপাশে চর, তারপর বিস্তীর্ণ নদী। যতদূর চোখ যায় ঘোলাটে রঙের অথই পানি। একখানা পালতোলা নৌকা দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। পদ্মা দৃষ্টি সীমায় আসতেই স্টেলার চোখে গাঢ় বিস্ময় জমল। মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল- দারুন! তারপর জানতে চাইল, নদীটা ইন্ডিয়া থেকে এসেছে, না?হু।দারুন!বললাম, নদীটা যতক্ষণ ইন্ডিয়ায় -ততক্ষণ নদীটার নাম গঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকে নাম হয়েছে পদ্মা। কেন?কেন আবার-এ দেশটা বাংলাদেশ বলে।ওহ্। স্টেলা যেন অর্ন্তগত মানেটা বুঝতে পারল। হয়তো আমার কথা মনে পড়েছে ... তখন আমি ওকে বললাম, আমার কথাটা বুঝতে হলে তোমাকে অন্তত এক ঋতু এ দেশে থাকতে হবে। অনেক কথা আছে যা বলে বোঝানো যায় না। এখন বললাম, এ নদী আরও দক্ষিণে গিয়ে সমুদ্রে মিশেছে । সেখানে মেঘনা নামে আরও একটি নদী সমুদ্রে মিশেছে।মোহনা?মোহনা। আবার যেন মোহনা না। সেই জায়গাটা না- নদী -না সমুদ্র। কী যে বিশাল, নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। অনেক গুলি দ্বীপও আছে। এর পরের বার যখন আসব, তখন যাব। স্টেলা বলল। ঠিক আছে। বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে একদল ছিন্নমূল মানুষ। হয়তো নদী ভাঙনের শিকার। কোনও মতে ঘর তুলেছে। একদিন এদের ঘর ছিল দোর ছিল, ছিল সামান্য উঠান, উঠানে পুঁইমাচা, ছিল প্রিয় একটা গাভী ...সব হারিয়ে এরা নিঃস্ব ... কি সান্ত্বনা দেয় এরা নিজেকে? এখানে কেউ হিসেব করে না কেমন আছে। সেই হিসেব করে কোনও লাভও নেই। এখানে সবাই ভাসছে। অনন্ত ঢেউয়ের দোলায়। কখনও ডুবছে কখনও ভাসছে। একটা কালো রঙের ছাগলছানার পাশে একটি ন্যাংটো শিশু দাঁড়িয়ে । কি এর ভবিষ্যৎ? দীর্ঘশ্বাস ফেলি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কী হবে। স্টেলা নদী দেখছে। ইচ্ছে হয় ওকে জিগ্যেস করি, এখানে দাঁড়ালে কি তোমার মনে হয় যে তুমি একটা প্ল্যানেটে আছ? আমি জানি ও কি বলবে। সিগারেট ধরালাম। দেখতে দেখতে বিকেলও ফুরিয়ে এল। আকাশে নানা রঙের খেলা। বাঁধের ওপর ক’টা সুপারি গাছ। পাতাগুলি পাগলের মতো কাঁপছে। স্টেলার মোবাইলটা বাজল। এবারও কার সঙ্গে চাপা গলায় কী সব বলল। ফরসা সুন্দর মুখটার স্বাভাবিক এক্সপ্রেশন বদলে যাচ্ছে। সর্ম্পকের জটিলতায় পুড়ে যাচ্ছে একুশ শতকের একটি মেয়ে। স্টেলা যখন ফোনটা অফ করে ব্যাগে রাখল তখনও ওর মুখটা থমথম করছে। চাপা স্বভাবের মেয়ে। ঠিকই সামলে নিল। কি হয়েছে -জিগ্যেস করা যায় না। আমরা দু’জন ঠিক এখনও বন্ধু হয়েও উঠিনি। আমি বড়জোড় একজন গাইড। হ্যাঁ, গাইড। যে কি না এই মার্কিনী তরুণীকে কৌশলে জানিয়ে দিচ্ছে এই পৃথিবীরই আশ্চর্য এক লোকালয়ের বিস্ময়কর উপকথা ...যে লোকালয়ের মানুষের জীবনধারা ও চিন্তাভাবনা নিয়ে পৃথিবীর লোকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে ...ফ্রান্সের প্যারিসের লালনের ভাস্কর্য তৈরি হচ্ছে। তারপরও কি এই মার্কিনী মেয়েটাকে সবটা বলা যাবে? যায়? যদি বলি এদেশে কীর্তনখোলা নামে একটি নদী আছে, যে নদী এই পদ্মারই আরেকটি আশ্চর্য প্রবাহ। একদা যে নদীর পাড়ের এক কবি লিখেছেন ...‘হিজলের জানালায় আলো আর বুলবুলি করিয়াছে খেলা।’ এই বাক্যটির মানে কি স্টেলা কোনওদিনই বুঝতে পারবে? হঠাৎই আমার সাহিত্য পত্রিকা ‘আউশ’ -এর পরবর্তী ‘মিথ’ সংখ্যার সম্পাদকীয় মনে পড়ে গেল। যেখানে আমি লিখেছি: বিশ্বজগৎ সৃষ্টির আগে জিজ্ঞেস করা হল, কে কি নেবে?নানা জাতি নানা কথা বলল। কেউ চাইল হীরের খনি, কেউ-বা চাইল আকরিকসমৃদ্ধ পাহাড়।একটি জাতি শুধু বলল, আমরা শুধু গান নেব, গান। আর কিছু চাইনে।সৃষ্টির দেবতা সন্তুষ্ট হয়ে সেই জাতিকে গান দিলেন।সেই সঙ্গে খুশি হয়ে ধানও দিলেন।অবিরল সোনালি রঙের ধান।তো, গান ও ধানে হল মান।সৃষ্টির দেবতা খুশি হয়ে একটি নদীও দিলেন, আর একজন কবিও দিলেন।তারপর সেই নদীতে আর সেই কবিতে মিলে হল সম্মান।এই কথাগুলির মানে কি স্টেলা বুঝতে পারবে?নদী থেকে স্টেলার চোখ গেল নদী ভাঙনের শিকার ছিন্নমূল মানুষের দিকে । থমকে গেল। অনেকটা আপন মনেই যেন বলল, ওরা ... ওরা কেমন আছে? কি বলব ভাবলাম। তারপর বললাম, এখানে কেউই হিসেব করে না কেমন আছে। সেই হিসেব করে কোনও লাভও নেই। এখানে সবাই ভাসছে। অনন্ত ঢেউয়ের দোলায়। কখনও ডুবছে কখনও ভাসছে।ওহ্। সহসা স্টেলাকে কেমন স্থির আর শান্ত মনে হল। কী যেন ভাবছে। শেষ বেলায় পৃথিবীর এক বিস্ময়কর নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে যেন নিজের জীবনের হিসেব মিলিয়ে নিয়ে চাইছে। যেন বহুদিন হল একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে, ঠিক এই মুহূর্তে পেয়ে গেছে। স্টেলা শ্বাস টানল। তারপর গভীর আবেগে বলল, আমিও এর অংশ হতে চাই।তুমি এরই মধ্যে এর অংশ হয়ে গেছ। বললাম। টের পেলাম বাংলাদেশের জনসংখ্যা এই মুহূর্তে একজন বেড়ে গেল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। তৈমুর মিস কল দিল। সন্ধ্যার আঁধার জড়িয়ে আমরা ফিরে যেতে থাকি।এখন যত জলদি ঢাকায় ফেরা যায়। কাল সকালের স্টিমারে চাঁদপুর যাব। কাল অপরাহ্নে ওখানকার সাহিত্য সংগঠন ‘মেঘনা পাড় ’-এর উদ্যোগে উদয়ন মহিলা কমপ্লেক্সে তিন দিনের কবিতা উৎসবের উদ্বোধন । চাঁদপুর থেকে যাব নোয়াখালীর সেনবাগ। ওখানে আমাদেরই দু-জন কবি বন্ধু সৌম্যদীপ্ত সাহা আর স্বাতী রহমান ওখানকার এক প্রাথমিক স্কুলে পড়ায়-এখানে-ওখানে ঘুরে ওদের স্কুলের গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু ফান্ড জোগার করেছি। সেনবাগ থেকে যাব বান্দরবান-এর রুমায়। ওখানে আমার এক খুমি বন্ধু থাকে। লেলং খুমি । লেলং খুমি প্রায়ই বলে ওর রুমার বাড়িতে বেড়াতে যেতে ... লেলং খুমি অস্ট্রেলিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের খুমি-সংস্কৃতি নিয়ে গবেষনা করছে ; ও এখন দেশেই আছে। কাজেই এখন ওর আব্দার রক্ষা করাই যায়। রাত ন’টার দিকে স্টেলাকে কলাবাগানে নামিয়ে দিয়ে মগবাজারের বাসায় ফিরেছি।সাড়ে দশটার দিকে ফোন এল। স্টেলা ইন্ডিয়া যাওয়া ক্যান্সেল করেছে। আরও কিছুদিন থাকতে চায় এ দেশে ...ঠিক করলাম কাল সকালের স্টিমারে স্টেলাকে চাঁদপুর নিয়ে যাব। ও আগে নদী দেখুক, তারপর নদী পাড়ের আর বনপাহাড়ের বিশাল হৃদয়ের মানুষকে ও সেই মানুষের জীবনদর্শনকে ঠিকই বুঝে নিতে পারবে ... এভাবে স্টেলা নামে মেয়েটির পুনর্জন্ম হবে ...
false
fe
শামসুর রাহমান _ আমাদের অস্তিত্বের অহংকার হ্যাঁ, কবিতার সঙ্গে গেরস্থালিই ছিল তাঁর| বলেছিলেন, যতোদিন বেঁচে থাকবো লিখবো| লিখেছেনও| শেষ সময় পর্যন্ত| এই দেশ, এই সময় তার মনদর্পনে বন্দী ছিল ভালোবাসায়| তিনি কাল, মহাকালকে দেখেছেন খুব কাছে থেকে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত| তিনি স্বাধীনতার কবি, বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান| তাঁর শেষ দিকের একটি কবিতা আমার মনে পড়ছে এ মুহুর্তে| কবিতাটি ২৮ এপ্রিল ’০৬ ছাপা হয়েছিল দৈনিক যুগান্তর সাময়িকীতে| কবিতাটির শেষ পঙ্ক্তিগূলো তুলে দিচ্ছি পাঠকের জন্য| ‘আখেরে পাড়ায় নেমে আসে অপরূপ মধুময়চন্দিন্সমার| এই অপরূপ চন্দিন্সমাকে মুছে ফেলার কালিমা জাগবে না কোনোখানে| কেবল চন্দ্রিমা জাগবে হৃদয়ে— যার আভা চিরকাল রয়ে যাবে| হে চন্দ্রিমা, রেখো মনে, এই যে লিখছি আমি, তার সত্তা তার রইবে না, কিন্তু তুমি আসমানে জ্বলজ্বল করবে সর্বদা!’ (জ্বলজ্বল করবে সর্বদা/ শামসুর রাহমান)‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ দিয়ে যার যাত্রা শূরু হয়েছিল, সেই কবি সহসন্স মৃত্যুকে ভেদ করে গেছেন| কলাম, প্রবন্ধ, সমালোচনা, নিবন্ধ, অনুবাদ কি করেননি তিনি| কিন্তু প্রধান পরিচয় কবি হিসেবেই সর্বদা জðলজðল করবেন শামসুর রাহমান| বাংলার প্রয়োজনে| বাংলা ভাষার প্রয়োজনে| বাংলা কবিতার প্রয়োজনে| মৃদুভাষী শামসুর রাহমানের চাওয়ার কিছুই ছিল না| চাহিদার কোনো দীর্ঘ তালিকা ছিল না তাঁর| কবিতার নেশা ছিল| ছিল পঙ্ক্তির সাথে খেলা করার স্বপ্ন| মনে পড়ছে, তিনি তখন সাপ্তাহিক বিচিত্রার প্রধান সম্পাদক| তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম ডিআইটি এভিন্যুতে| সহাস্যে আমাকে তার অফিসে স্বাগত জানিয়ে তিনি সদ্য বের হওয়া বিচিত্রা আমার হাতে তুলে দিলেন| তিনি আমাকে আপনি সম্বোধন করে বলতে থাকলে আমি ভীষণ লজ্জিত হয়ে বললাম ‘দয়া করে “তুমি” বলবেন আমাকে|’ না, তাতে কোনো কাজ হলো না| মৃদু হেসে বললেন, ‘আপনি সময় পেলে আসবেন|’ আট/দশ মিনিটের এই যে প্রথম দেখা, তা অনেকটা স্বর্ণোজ্জ্বল স্মৃতির চাদরেই মোড়া হয়ে গেল আমার জীবনে| এরপর সময় পেলেই ঢু মেরেছি ডিআইটি এভিন্যুতে| প্রিয় কবিকে দেখে এসেছি এক নজর| বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সামরিক দু:শাসনের যাঁতাকল, অন্যায়-অবিচার আর রাজনৈতিক নিপীড়ন আমার মতো হাজার হাজার তরুণকে দেশ ত্যাগে অনেকটা বাধ্য করে| বিদেশেও বিচিত্র হয়ে ওঠে আমার নিত্য সঙ্গী সাপ্তাহিকী| এক সময় আমি বিচিত্রা’র প্রবাস থেকে কলামে নিয়মিত লেখা শূরু করি| দুই. বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার আমন্ত্রণে কবি শামসুর রাহমান প্রধান অতিথি হয়ে একটি অনুষ্ঠানে আসেন ১৯৯০ সালে| তখন বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার সভাপতি ছিলেন সাঈদ-উর-রব| যিনি এখন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানার প্রেসিডেন্ট সিওও| আমি লীগ সভাপতি সাঈদ-উর-রব এর আমন্ত্রণেই সে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ পাই| কবি’র সাথে সে অনুষ্ঠানেই আবার দেখা হয় দীর্ঘদিন পর| দীর্ঘক্ষণ আড্ডা, সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা হয় মধ্যরাত পর্যন্ত| মনে পড়ছে এরপর কবির সাথে সাহিত্য আড্ডায় অংশ নেবার সুযোগ হয় নিউইয়র্কের ইয়র্ক এভিন্যু’র, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের বাসভবনে| সে আড্ডার মুল আয়োজক ছিলেন গল্পকার পুরবী বসু| তার আমন্ত্রণেই নিউইয়র্ক-নিউজার্সিতে বসবাসরত বাঙালি লেখক-কবিরা সমবেত হয়েছিলেন আড্ডায়| শামসুর রাহমান ছিলেন সে আড্ডার মধ্যমনি| সে আড্ডায় অত্যন্ত প্রাণন্ত অংশ নিয়েছিলেন লেখক হাসান ফেরদৌস, ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, পুরবী বসু, প্রয়াত কবি আল-মুকতাদির, ড. সলিমুল­াহ খান , ড মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রমুখ| সলিমুল­াহ খান, শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ দুটি কবিতা, ‘স্বাধীনতা তুমি’ এবং ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’— এগুলোর তুলনামুলক আলোচনা করেছিলেন অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে| বিভিন্ন প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করছিলেন কবি শামসুর রাহমানকে| লক্ষ্য করেছিলাম, কবি খুব মৃদুভাষায় সংক্ষিপ্ত উত্তর দিচ্ছিলেন| মৃদু হেসে তিনি বলছিলেন, আমি শুনবো, আপনারা বলুন| তাঁর অন্যতম প্রিয় কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ তিনি পড়েও শূনিয়েছিলেন সেদিন| এর ক’বছর পর কবি যখন গ­্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হন, তখন আবারো উদগ্রিব হয়ে পড়েন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তাঁর অনুরাগীরা| কবিকে যুক্তরাষ্টেন্স নিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়| নিউইয়র্কের বিশিষ্ট চিকিৎসকবৃন্দ, বাংলা সাপ্তাহিকীগূলোর সম্পাদকবৃন্দ, সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবিসহ সর্বস্তরের প্রবাসীরা তাঁর চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেন| কবি দেশে থেকেও যাতে তাঁর চোখের ওষুধগূলো নিয়মিত পেতে পারেন, সে ব্যবস্থায়ও এগিয়ে আসেন বেশ ক’জন সুহৃদ প্রবাসী বাঙালি| এসময় কবির সম্মানে একটি সংবর্ধনার আয়োজনও করা হয়| খুব সংক্ষিপ্ত এবং আবেগ আপ্লুত বক্তব্যে কবি শূধুই ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা জানান প্রবাসী সমাজকে| তিন.কবি যখন হরকাতুল জিহাদের জঙ্গিদের দ্বারা আক্রান্ত হন, তখনো যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাঙালীদের প্রতিবাদ ছিল তীব্র| নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় একটি মিলনায়তনে নাগরিক প্রতিবাদসভার আয়োজন করে হামলাকারীদের বিচার দাবী করা হয়| মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন লেখক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনের কাছে কবির নিরাপত্তাদানে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করতে স্মারকলিপিও দেন প্রবাসীরা| কবি অত্যন্ত আবেগ নিয়ে প্রায়ই বলতেন, প্রবাসী বাঙালিদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ| কিন্তু বাংলা সাহিত্য, বাংলা ভাষা, বাঙালির চেতনা, সভ্যতার আলো প্রতিষ্ঠার জন্য কবি শামসুর রাহমান যে কর্ম রেখে গেছেন, তার জন্য গোটা বাঙালি জাতিই তো তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ| কি করেননি তিনি? লেখালেখি থেকে শূরু করে মিছিল, সমাবেশ, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ— কি করেননি তিনি| বাংলাদেশের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মিছিলে, ঘাতক দালাল নির্মুলের আন্দোলনে এই অগ্রজ বয়সেও রাজপথের মিছিলে আমরা দেখেছি শূভ্রকেশধারী এই মহান কবিপুরুষকে| তাঁর সমসাময়িক হবার বাসনায় মগ্ন ছিলেন শামসুর রাহমান তখনই গণঅধিকার আদায়ের মিছিলে রাজপথে লড়েছেন| হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন জাতির প্রতি| অনেকগূলো কবিতার জন্যই অমর হয়ে থাকবেন শামসুর রাহমান| তাঁর ‘আসাদের শার্ট’, ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’, ‘সফেদ পাঞ্জাবী’, ‘বর্ণমালা, আমার দুখিনী বর্ণমালা’, ‘গেরিলা’, ‘এক ধরনের অহংকার’, ‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে’, প্রভৃতি থেকে যাবে অনন্তকাল| পাঠক-পাঠিকা জীবনের স্পর্শ খুঁজে পাবেন তাঁর পঙ্ক্তিতে| শামসুর রাহমানের মৃত্যু , আমাদের একটি পাঁজর ভাঙার শব্দের মতোই। ১৯৯৯ সালে কবি নিজে অটোগ্রাফ দিয়ে তাঁর কিছু বই আমার দু’ মেয়ে নাহিয়ান ও নাশরাত এবং আমার সহধর্মীনি কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি ও আমাকে দিয়েছিলেন| আমার কবিবন্ধু, আবু হাসান শাহরিয়ার অত্যন্ত যত্নের সাথে আমাদের কাছে সেগূলো নিউইয়র্কে পাঠিয়ে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছিলেন| আজ আমি কবির নিজ হাতের স্বাক্ষরে হাত বুলিয়ে তাঁর অস্তিত্ব খুঁজি বারবার| তিনি লিখেছিলেন ‘আমার পুরনো, সামান্য বই দিলাম ভালোবেসে|’ বই কি কখনো পুরনো হয়? কিংবা ভালোবাসা! হে প্রিয় কবি! কবি চলে গেছেন| যেখান থেকে কেউ ফেরে না আর| তিনি তার যাত্রার প্রস্তুতি এভাবেই সেরেছেন ক্রমশ ‘যাত্রার আগে’— এই কবিতাটি ৯ এপ্রিল ১৯৯৯ তারিখে লেখা| স্থান পেয়েছে ‘নক্ষত্র বাজাতে বাজাতে’ গ্রন্থে।‘আমি তো শিগগিরই চলে যাব, বড় একা যাব চুপচাপ, তোমাদের কাউকেই সহযাত্রী করব না নিরুদ্দেশ যাত্রায় আমার| জেদ করে লাভ নেই, আমাকে যেতেই হবে তোমাদের ফেলে|’ কবি, আপনার কবিতা ততোদিনই থাকবে, যতোদিন থাকবে বাংলা ভাষা, বাঙালি জাতি| আপনি আমাদের অস্তিত্বের অহংকার।==========================================
false
mk
মোল্লার ফাঁসির ঋণ শোধ করবে এবার বিএনপি বিএনপির ঘাড়ে চেপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির আড়ালে যুদ্ধাপরাধীদের মুুক্তির আশায় এবার রবিবারের কথিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামের কর্মসূচীকে টার্গেট করেছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সংগঠন জামায়াত-শিবির। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া কর্মসূচীকে গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন বলে ঢাকা অভিমুখে অভিযাত্রার ঘোষণা দিলেও জামায়াত একে ‘নিজেদের নেতাদের মুক্তির চূড়ান্ত আন্দোলন’ ধরে ফাঁয়াদা লোটার ছক কসছে। বিএনপি কর্মসূচী বাস্তবায়নে সমর্থ না হলেও ১৮ দলের ব্যানারেই কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করে দেশজুড়ে শিবির ক্যাডারদের প্রস্তুত হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সারাদেশে ই-মেইলে ও এসএসএস, শিবিরের বাঁশের কেল্লাসহ নিজস্ব সব ওয়েবসাইট ও ওয়েবপেইজের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে নির্দেশ। প্রতিশোধ ও নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিতে নেয়া হয়েছে নাশকতার পরিকল্পনা। শিবিরের ভাষায় প্রতিশোধ ও সব যুদ্ধাপরাধীর মুক্তির আশায় চরম অস্তিরতা তৈরিতে হেফাজতের নেতৃত্বে থাকা ১৮ দলের উগ্রবাদীকে কাজে লাগাতে চায় জামায়াত। হেফাজত তার ব্যানারে সক্রিয় না হলেও জামায়াত সংগঠনিটির নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে একাধিক বৈঠক করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরা, বগুড়া প্রভৃতি স্থান থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ছাত্রশিবিরের প্রশিক্ষিত কর্মীদের ঢাকায় আনছে।জানা গেছে, মহাজোট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বাধা দিতে পারে এই শঙ্কায় কিছুটা কৌশলেই পরিকল্পনা করেছে জামায়াত-শিবির। এখন জামায়াত-শিবিরই বিএনপির ভরসা। জোটের বাকিরা নামে থাকলেও কাজে নেই। নাম সর্বস্ব এসব দলের অধিকাংশেরই সারাদেশ তো দূরের কথা, অফিস নেই খোদ রাজধানীতেই। আবার অনেক দলেরই অফিস চলছে সাবলেট নেয়া জরাজীর্ণ ঘরে। এ ছাড়া ১৮ দলীয় জোটভুক্ত অধিকাংশ দলেরই নিবন্ধন নেই নির্বাচন কমিশনে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৮ দলীয় জোট গঠিত হওয়ার পর থেকে শুধু জামায়াত, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইসলামী ঐক্যজোট ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) প্রতিনিধি দিতে পেরেছে। এমনকি রাজনৈতিক কর্মসূচী ও সফরের খরচের অংশীদার হতেও ব্যর্থ এসব নাম সর্বস্ব রাজনৈতিক দল। বিএনপি ও জোটের শরিক জামায়াতের ঘাড়েই পুরো জোটকে ভর করতে হচ্ছে। জোটের এসব দল কর্মীহীন নেতাদের বড় বড় বক্তব্যে অনেক সময় জোট নেতাদের বিব্রত হতেও দেখা গেছে। তাদের কথা বলার সুযোগ দিতে গিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদেরও বিভিন্ন কর্মসূচীতে সাইডলাইনে বসে থাকতে দেখা যায়। এ নিয়ে কয়েক দফা ক্রমশই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বক্তৃতাবঞ্চিত বিএনপি নেতারা। গত বছরের ১২ মার্চ নয়াপল্টনে জোটের মহাসমাবেশে খালেদার উপস্থিতিতে ভুল করে খালেদা জিয়াকে ‘মুখ্যমন্ত্রী’ অভিহিত করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান শফিউল আলম প্রধান। তাঁর এ বক্তব্যে জোট নেতারা বিব্রত হয়েছেন। শফিউল আলম প্রধান বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক পর্যায়ে জোরালো কণ্ঠে বলেন, এ স্বাধীনতার মাসে তিলকওয়ালি মুখ্যমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে আমরা আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চাই না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গত আড়াই বছর ধরে বিভিন্ন ধাপে হরতাল-অবরোধের মতো কঠিন আন্দোলনের ডাক দেয়া সত্ত্বেও মাঠে-ময়দানে বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া বাকি দলগুলোর কাউকে মিছিল বা কোন ধরনের সভাসমাবেশে দেখা যায়নি। তফিসল ঘোষণার আগে থেকে শুরু হওয়া অবরোধে রাজধানীসহ সারাদেশে সহিংস আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। এসব সহিংসতার ঘটনার খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, যে কয়টি জেলায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে এর সবতে জামায়াতের আধিপত্য রয়েছে। রেললাইন উপড়ে ফেলা ছাড়াও যে সব সহিংসতা হয়েছে তাতে নেতৃত্ব দিয়েছে জামায়াত-শিবির। নিজেদের দলের দুর্বল অবস্থা ধরে নিয়েই এবার রবিবারের কর্মসূচী সফল হতে বিরোধীদলীয় নেত্রীর ভরসাস্থল বিতর্কিত শরিক জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের নেতৃত্বে থাকা ১৮ দলের উগ্রবাদী দলগুলোই।‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামের এ কর্মসূচী যে কোন মূল্যে সফল করতে বিরোধীদলীয় নেত্রীর নির্দেশে বিএনপির কেন্দ্রে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। কিন্তু কর্মসূচী আদৌ সফল হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে খোদ বিএনপির ভেতরেই। নেতারা পলাতক আর কর্মীরা মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে বিএনপির পক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে কিছুই করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন দলীয় নেত্রীও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন একই কথা। কিন্তু বসে নেই আদালতে ক্রিমিনাল সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত জামায়াত-শিবির। জানা গেছে, রবিবারের কর্মসূচী নিয়ে বিএনপি দুর্বল অবস্থানে থাকলেও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে জোটের শরিক দল জামায়াত-শিবির। সরকারের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়া দেখাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের। জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এ খবর জানা গেছে। তবে ঢাকায় বিএনপি শক্তভাবে না নামলে জামায়াতও কৌশলী হবে। বিএনপি পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিলে মাঠে নেমে গ্রেফতার হতে চায় না জামায়াত কর্মীরা। জামায়তের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য বললেন, আমরা আশা করি বিএনপি ভালভাবেই নামবে। যদি তা না হয় আমাদের কর্মীরা বিএনপির অবস্থান দেখেই কর্মসূচীতে অংশ নেবে। তবে যে কোন মূলে ঢাকায় আসবেন আমাদের নেতাকর্মীরা। সূত্রগুলো বলছে, মঙ্গলবার বিকেলে থেকেই জামায়াত-শিবির ও তাদের নেতাকর্মীরা নিজেদের মতো করে ঢাকায় আসা শুরু করেছে। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও বলছে, নির্বাচন ইস্যুতে সমস্যা সমাধানের পথেও তারা যাচ্ছে না। নির্বাচন ইস্যু হলেও জামায়াতের মূল টার্গেট যে কোন মূল্যে তাদের নেতাদের মুক্তির প্রেক্ষাপট তৈরি করা। লক্ষ্য পূরণে তাই স্বাভাবিক রাজনৈতিক অবস্থাকে সুখকর মনে করছে না জামায়াত নেতারা। এসব বিষয় বিএনপিকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় বিএনপি কোনভাবেই জামায়াতের অবস্থানের বাইরে যেতে পারবে না বলে মনে করছেন জামায়াত নেতারা। জামায়াত নেতারা বৃহস্পতিবারও বিবৃতি দিয়ে বলেছে, তারা কর্মসূচী সফল করবেই। যদি সরকার গণতান্ত্রিক সমাবেশে বাধা দেয়ার দুঃসাহস দেখায় তাহলে উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে। রাজপথ দখলে রেখে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার জামায়াত-শিবিরের জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে, আমির মতিউর রহমান নিজামীর রায় দেয়া হবে যে কেন সময়। এসব ঘটনার প্রতিশোধ এবং একই সঙ্গে নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিতে এখন কৌশলে আগাচ্ছে দলটি। প্রতিশোধের জন্য তাই রবিবার ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশের দিনটিকেই কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়ে সারাদেশ থেকে কর্মীদের ঢাকায় আসার নির্দেশনাও পাঠানো হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বাধা দিতে পারে এই শঙ্কায় কিছুটা কৌশলেই পরিকল্পনা করেছে দলটি। দলটির নেতারা বলছেন, নিজেদের নিরাপদ রাখতে তারাও মাঠে প্রস্তুত থাকবে। সরকারের পতন ঘটিয়েই আমাদের আন্দোলন সমাপ্ত হবে। রবিবার মাঠে ইসলামী ছাত্রশিবিরকেই সক্রিয়ভাবে মাঠে দেখতে চায় জামায়াত। এ জন্য সারাদেশ থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মীকে ঢাকায় আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুলিশ যেন পথে বাধা না দিতে পারে এ জন্য নিজেদের মতো করে ঢাকায় ফেরা মানুষদের সঙ্গেই ঢাকা ফিরবে নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে ঢাকায় এসে হোটেলে না থেকে রাজধানীতে থাকা নেতা-কর্মীদের আশ্রয়ে থাকার পরিকল্পনা শিবিরের। দেশের বিভিন্ন জেলার শিবিরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি জেলা থেকেই কর্মীদের ঢাকায় আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কর্মীদের সংখ্যা অনুপাতে প্রতি জেলা থেকে ৫শ’ থেকে ১ হাজার কর্মীকে ঢাকায় আনার নির্দেশ আছে। সবাই একসঙ্গে ঢাকায় না এসে ভিন্ন ভিন্ন পথে আসাসহ বিভিন্ন কৌশলও নেয়া হচ্ছে। শিবির নেতারা বলছেন, কোন বাধায় সরকার সফল হবে না। সভাসমাবেশ বন্ধ করে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না সরকার। শিবির নেতারা হুমকি দিয়ে বলেছেন, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে হলেও আমাদের আন্দোলন সফল করব। দলের বন্দী নেতাকর্মীদের মুক্ত করেই ক্ষান্ত হব। শিবিরের সূত্র আরও জানিয়েছে, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো, খুলনা, সাতক্ষীরা অঞ্চলে স্ট্রাইকিং ফোর্স আছে তাদের পর্যায়ক্রমে ঢাকা পাঠানোরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব বাহিনীকে সব সময় সতর্ক ও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই মুহূর্তকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় মনে করছে জামায়াত-শিবির। ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ আবদুল জব্বার বলেন, চলমান আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীর ওপরে অত্যাচারের ষ্টীমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হত্যা, গুম, নির্যাতন চালিয়ে ছাত্রজনতার মুক্তি আন্দোলন দমানো যাবে না। আন্দোলনের দাবদাহে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।
false
mk
খালেদার মন্তব্য বিএনপির জন্য ক্ষতিকর সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলীয় জনসভায় যে ধরনের বক্তব্য রেখেছেন তা যে আবার সংলাপ শুরু করবার পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রথমেই ধরে নেওয়া যাক নবনির্বাচিত সরকার সম্পর্কে বেগম জিয়ার প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারটা। তিনি বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ’ বলে অবহিত করেছেন। তবে অবৈধ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তিনি যে নিরুৎসাহিত বোধ করছেন না, বক্তব্যে তাও তিনি স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে তো ক্ষমতাসীন দল থেকে বলা হতেই পারে, বৈধ বিরোধী দলীয় সাবেক নেত্রী কেন অবৈধ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন? আর সরকারই বা কেন অবৈধতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসবে? আসলে সরকার বৈধ কি অবৈধ তা নির্ণয়ের মানদ-ই বা কি? একটা নির্বাচিত সরকার ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করার পর সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে। এখানে অবৈধতার প্রসঙ্গ আসে কি করে? বৈধ কি অবৈধ তা তো একান্তই আইনগত ব্যাপার। আর সকল আইনের মূল উৎস হচ্ছে আমাদের জাতীয় সংবিধান। সেই সংবিধানভিত্তিক আইনের শাসনের ধারায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে সরকার গঠিত হওয়ার পর তাকে অবৈধ বলার সুযোগ আছে কি? হ্যাঁ, কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটার উপস্থিত হয়েছিল কি-না, নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, শত শত ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ কারা করলো, প্রায় ৫ শতাধিকেরও বেশি কেন্দ্রে ভোট পুনরায় করতে হলো কেন, সহিংসতা কি মাত্রায় হয়েছে এবং কারা করেছে, ভোটাররা ভোট দেওয়ার পথে বাধাগ্রস্ত হয়েছে কিনা, এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু তাই বলে সরকারকে অবৈধ বলার কোনো অবকাশ আছে কি? আর সরকার যদি অবৈধই হয়ে থাকে তাহলে তো বিরোধী দলকে আদালতের আশ্রয় নেওয়া উচিত। বৈধ কি অবৈধ তার মীমাংসা তো উচ্চ আদালত করতেই পারে।আইনের কোনো আশ্রয় না নিয়ে বৈধভাবে নির্বাচিত সরকারকে অবৈধ বলা, সমীচীন কি? দেশের অধিকাংশ সংবিধান বিশেষজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে এ সরকারকে অবৈধ বলা যায় না। যেহেতু বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি; তাই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নির্বাচিত সরকারকে অবৈধ বলার কোনো নৈতিক অধিকারও তাদের নেই। বেগম খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। কী করে তিনি অবৈধ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন? আইনগতভাবে যাকে অবৈধ মনে করেন, সেই অবৈধ সরকারের সঙ্গে সংলাপ কেন? তিনি তো বারবার সরকার পতনের হুমকি দিয়েছিলেন। সর্বত্র সহিংসতা চালিয়ে নির্বাচন প্রতিরোধ করতে চেয়েছিলেন। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করেছিলেন। তারপরও নির্বাচন প্রতিহত করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সাংবিধানিক ধারায় নির্বাচন কমিশনের দ্বারা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাহলে সরকারকে অবৈধ বলে বেগম খালেদা জিয়া তো সংলাপের পথে বাধা সৃষ্টি করছেন। অবিলম্বে এরূপ বাধা অপসারণ না করলে সরকার কি আলোচনায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করবে? এটা এখন জনগণের ভাবনার বিষয়।সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর অভিযান সম্পর্কে বেগম জিয়ার বক্তব্য ছিল দায়িত্বহীন। কী করে তিনি বলতে পারলেন, যারা সাতক্ষীরায় অভিযান চালিয়েছে তাদের ভেতর অনেক অচেনা লোক অংশগ্রহণ করেছিল। এই অচেনা লোক বলতে যে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে এবং একটা ফেসবুকের বরাত দিয়ে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় যা প্রকাশ করেছিল তা যে মিথ্যা, ইনকিলাব পত্রিকার মালিক তা স্বীকার করেছেন এবং সে কারণে তারা ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু বেগম জিয়া কীভাবে ওই ধরনের উক্তি করলেন। তিনি কি তার দেশকে, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে এবং সেনাবাহিনীকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বলে মনে করেন না? তিনি যদি ক্ষমতাসীন থাকতেন এবং এই ধরনের ঘটনা ঘটতো, যদি বলা হতো ভারতীয় সেনারা এই অভিযানে অংশ নিয়েছে, তাহলে তার অবস্থাটা কী হতো? ভারত বিরোধিতাকে বেগম জিয়া তো নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং সেই বিরোধিতার ভিত্তি কী করে আওয়ামী লীগ সরকারকে দুর্বল করা যায় তার অপপ্রয়াস তো বারবার চালানো হয়েছে। কিন্তু এরূপ একটা সংবেদনশীল বিষয়ে যেখানে শত শত ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, কয়েকডজন মানুষ হত্যা করা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের বিষয় সম্পত্তি লুট করা হয়েছে, দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, সাতক্ষীরায় স্বাধীন বাংলাদেশের ভেতরে আর একটা মিনি পাকিস্তান বানানো হয়েছে এবং নবনির্বাচিত সরকার সেখানে একটু দেরিতে হলেও সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সাতক্ষীরায় উপস্থিত হয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। সেখানে বেগম জিয়ার বক্তব্য কার স্বার্থে করা হলো। এটা কি ধরনের উস্কানি এবং এর লক্ষ্যই বা কী? সেনাবাহিনী সম্পর্কে এ ধরণের বক্তব্য সমগ্র জাতির জন্য অবমাননাকর। ভারত বিরোধিতা যদি তার রাজনীতির লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে তাও তো প্রকাশের একটা ধরণ আছে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হেয় প্রতিপন্ন করার অধিকার তাকে কে দিয়েছে?নির্বাচনের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী যখন আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন তখন তিনি সাড়া দেননি। জোরজবরদস্তিমূলক পন্থায় সরকার পতনই ছিল তার মূল লক্ষ্য। তারপর নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হলে বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচন প্রতিরোধ করার হুমকি দিলেন এবং জামায়াতকে নিয়ে সর্বাত্মক সহিংসতা চালিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেন। তারপর সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচন ও সরকার গঠন বন্ধ করতে তিনি অক্ষম হলেন। এখন নির্বাচিত সরকারকে অবৈধ বলে তিনি আবার সংলাপের পথে বাধা সৃষ্টি করছেন। সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা বারবার করা হয়েছিল। বিভিন্নভাবে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এতে করেও তারা সফলতার মুখ দেখতে পারলেন না। তখন আপাতত সহিংসতা থেকে ফিরে আসার কর্মসূচি দিয়েছেন বলেই মনে হয়। এটা এখন স্পষ্ট তারা যে ধরণের সহিংসতা চালিয়ে ছিলেন জনগণ তাতে কোনো সাড়া দেয়নি। বরং সহিংসতার কারণে অনেক ভোটার ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারেননি।বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবার কারণে তাদের যে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোটার ও সমর্থক রয়েছে তাদের অনুপস্থিতির কারণে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা কম হওয়া তো স্বাভাবিক। সহিংসতার কারণে তো আওয়ামী লীগের অনেক সমর্থক ও ভোটার ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারেননি। তাই ভোট কেন্দ্রে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা কম হয়েছে এ কথা কখনো মনে করা যায় না। বিএনপির বক্তব্য অনুযায়ী তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। আওয়ামী লীগের ভোটের পরিমাণ যদি ৩৫ শতাংশ হয় তাহলে তো সাধারণ ভোটার ৫ শতাংশ ভোট দিয়েছেন। পাশ্চাত্যের অনেক গণতান্ত্রিক দেশে তো ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হয় না। সুতরাং জনগণ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেÑএটা বলা কখনই সমীচীন নয়। বিএনপি ও আন্তর্জাতিক বেশ কিছু মহল থেকে বলা হচ্ছে অবিলম্বে সংলাপে বসার। কিন্তু নবগঠিত সরকারের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংলাপ না অন্য কিছু।প্রায় তিন মাস সহিংসতা চালিয়ে বিএনপি-জামায়াত মিলে দেশে যে অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করে অর্থনীতিকে অচল করে দিয়েছে তাতে জনজীবনের সর্ব ক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করছে। যাতায়াত ব্যবস্থা বিধ্বস্ত করে দেওয়ায় শিল্প ও কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। খেটেখাওয়া মানুষ দৈনন্দিন কাজের অভাবে অনাহার ক্লিষ্ট হয়ে পড়েছে। গ্রামের কৃষক তার কৃষিপণ্য শহরে পাঠাতে পারছে না। কর্মজীবীরা তাদের কর্মস্থলে পৌঁছাতে মারাত্মক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। সামাজিক অনুষ্ঠান পর্যন্ত হতে পারছে না। মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশকে এক চরম বিপর্যয়ের মধ্যে নিপতিত করা হয়েছে। দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। নবনির্বাচিত সরকারের প্রধান দায়িত্ব এসবের দিকে নজর দেওয়া। সংলাপের দাবি তো মাসের পর মাস ধরে চলছে, অতীতেও চলেছে। খুব বেশি একটা সুরাহা তো হয়নি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৎকালীন বিরোধী দল এবং সরকারের সম্পর্ক প্রায় পূর্বের অবস্থানে রয়ে গেছে।তাই নবনির্বাচিত সরকার বোধহয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রথমেই জনগণের দিকে লক্ষ্য দেওয়া। সংলাপ ও সমঝোতার বিরোধী তারা নয়। কিন্তু মাত্র একটা দাবিতে অটল থেকে এক যুগ সংলাপ করেও সমাঝোতায় পৌঁছানো যাবে না। সংলাপের পূর্বেই বিএনপিকে বলতে হবে কিভাবে নির্বাচন সম্পর্কিত সংকট সমাধান করতে চায় তারা। সরকারি দল তো বলেই দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো চিরস্থায়ী সমাধান নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আর একটা নির্বাচন হলেও পরবর্তী নির্বাচনে একই সংকটের সৃষ্টি হবে। তাই আলোচনা হতে হবে ওই সব বিষয় নিয়ে, যা নির্বাচন ব্যবস্থাকে চিরদিনের জন্য সংকটমুক্ত করবে। নির্বাচন এলেই সরকার ও বিরোধী দলের ভীতিকর সংঘাত দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা, জনজীবনে অশান্তি, অর্থনীতিকে থমকে দাঁড়ানো কখনো একটা উন্নয়নমুখী দেশের জন্য বাঞ্ছনীয় হতে পারে না। বিএনপি যদি সত্যিকার অর্থে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা চায় এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই যদি তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে একটা স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা উচিত। সরকার নিশ্চয়ই তাতে সাড়া দেবে।
false
fe
অভিন্ন লক্ষ্যে সব অপশক্তির ছায়া অভিন্ন লক্ষ্যে সব অপশক্তির ছায়া ফকির ইলিয়াস=========================================জাতির বহুল প্রত্যাশিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম শুরু করেছে। যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৌলবাদী রাজনৈতিক দল জামায়াতের চার নেতাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা।১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে একটি চক্র শুধু বিরোধিতাই করেনি, তারা সশস্ত্র হয়ে পাকহানাদার বাহিনীকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে ছিল। আলবদর, রাজাকার, আলশামস বাহিনী গঠন করে গণহত্যার প্রত্যক্ষ মদদ জুগিয়েছিল। তা মাত্র চার দশক আগের ঘটনা। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, এ সময় কিন্তু খুব বেশি সময় নয়। চার দশক সময়ে কোন জাতির মাটি থেকে ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, খুনের চিহ্ন মুছে যায় না। এসব দাগ মুছে যায় না শত শত বছরেও। অথচ দালাল-রাজাকাররা সেটিই মনে করেছিল।বাংলাদেশে এই যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এতে কারা অখুশি, কারা এ বিচার প্রক্রিয়া পন্ড করতে চায়- সেসব বিষয়গুলোও নজরে রাখা দরকার। আমরা দেশে-বিদেশে একটি অতি পরিচিত শ্লোগান শুনছি। 'বাংলাদেশে এখন চরম ক্রান্তিকাল চলছে।'একটি উদাহরণ দিয়ে এ প্রসঙ্গে বলি। যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শফিক রেহমান যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেছিলেন অতি সম্প্রতি। তিনি বিভিন্ন সভায়, সমাবেশে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, বাংলাদেশে এখন চরম দুঃশাসন চলছে। 'মানবাধিকার' ক্ষুণ্ন হচ্ছে এ ধুয়া তুলে তিনি বর্তমান সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন। তার মতে, বর্তমান সরকার নাকি স্বৈরাচারী সরকারের চেয়েও ভয়াবহ।শফিক রেহমানের দুঃখের কারণ কারও অজানা থাকার কথা নয়। কারণ তিনি সেই সুবিধাবাদী সাংবাদিক, যিনি চারদলীয় জোট সরকারের কাছ থেকে নানা রকম বিশেষ সুবিধা-সুযোগ নিয়েছিলেন। এই সেই শফিক রেহমান, যিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হননি।বাংলাদেশে যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করেছিল, আমরা তাদের খুব ভালো করে চিনি। কিন্তু তারা প্রগতিবাদের ধ্বজা ধরে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আজও বিরোধিতা করে যাচ্ছে, তাদের চিনতে প্রজন্মের কষ্ট হচ্ছে তো বটেই। বরং তারা নানাভাবে লেবাস বদল করে মূলত মৌলবাদের পারপার্স সার্ভ করে যাচ্ছে।সংবাদপত্র এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা আমরা সবাই জানি এবং বুঝি। এবং এটাও বুঝি নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য অনেকে কলমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। এ বিষয়ে একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ দেওয়া যাক। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান। তার পরিচয় তিনি পেশায় একজন প্রকৌশলী। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ছিলেন। বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর মাহমুদুর রহমান কলাম লেখায় মনোযোগী হন। এরপর 'আমার দেশ'-এর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব নেন।বলা দরকার, মাহমুদুর রহমান সবই করেছেন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে। এটা দেশবাসীর অজানা নয়, মাহমুদুর রহমান যদি নিজে সাংবাদিক-সম্পাদক হিসেবে জাহির না করতেন তাহলে তার গ্রেফতারের পর এত বেশি প্রতিবাদ হতো না। মাহমুদুর রহমান বলে বেড়াচ্ছেন, তিনি নাকি 'জাতীয় স্বার্থ রক্ষা'র জন্য প্রতিবাদ করেছেন। তিনি তো জ্বালানি উপদেষ্টা ছিলেন। নিজামী-খালেদা সরকারের সময় জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ হাওয়া ভবনের ইজারাদাররা যে বাংলাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তখন তার 'বীরদর্পে প্রতিবাদের ভাষা' কোথায় ছিল? এসব মস্তানির প্রতিবাদ করে তিনি সেদিন পদত্যাগ করেননি কেন?মাহমুদুর রহমান জানতেন, শুধু 'সাংবাদিক সম্পাদক' সাজতে পারলেই মিডিয়ার করুণা পাওয়া যাবে। একই মতবাদ নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন আলবদর রাজাকারদের আরেক দোসর ড. আফতাব আহমাদ। যিনি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের ধৃষ্টতা দেখিয়ে মতবাদ প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। পরে তিনি খুব দুঃখজনকভাবে আততায়ীর হাতে নিহত হন। যা আমার্জনীয় হত্যাকান্ডের সুবিচারও এ রাষ্ট্রে এখনো হয়নি।দুইবাংলাদেশে অনিবার্য ওয়ান-ইলেভেনের নেপথ্য নায়ক কারা ছিল তা নিয়ে নানা কথা শোনা যায়। কিন্তু কোন কোন মহারথির কারণে ওয়ান-ইলেভেন সংঘটিত হয়েছিল, তাদের নাম বলে দিয়েছেন দেশের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তিনি একটি সেমিনারে বলেছেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, ব্যারিস্টার আমিনুল হক এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ চারজনের রাজনৈতিক অধঃপতনের কারণেই দেশে ওয়ান-ইলেভেন হয়েছিল। এ চারজন কে কে, তাদের বিস্তারিত পরিচয় কী তা দেশবাসীর অজানা নয়। তারা ছিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার অন্যতম চার শীর্ষনেতা। তারা দেশে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক স্খলনকে এত বেশি প্রশ্রয় দিয়েছিলেন যে, যা রাষ্ট্র ব্যবস্থার কাঠামো ভেঙে দিয়েছিল। ব্যা. আমিনুল হক এবং সাকা চৌধুরী সরাসরি জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তা নিয়ে দেশবাসী সোচ্চার ছিল। আইনমন্ত্রী ব্যা. মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে রাষ্ট্রের আইনের শাসন ভেঙে খান খান হয়ে পড়েছিল। আর যোগাযোগমন্ত্রী ব্যা. নাজমুল হুদা চরম দুর্নীতির, ভাগ-বাটোয়ারার স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলেন তার মন্ত্রণালয়কে।যে হাওয়া ভবন গোটা দেশজুড়ে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছিল, এসব ক্ষমতাবান নেতা-মন্ত্রীরা ছিলেন সে ভবনের ভিতের মতো। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক সে সত্যটি প্রকাশ করে জাতির চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার উপস্থিতিতেই, তার সামনে এসব কথা বলেছেন রফিক-উল হক।এই যে অনেক সত্য বেরিয়ে আসছে, সেসব কারণেই ভীত হয়ে পড়ছে দেশের ডানপন্থি মোর্চা। তাদের অতীত কর্মকা-ের ফিরিস্তি এখন দেশের বিবেকবান সুধীজনরাই প্রকাশ্যে বলছেন। ফলে তাদের ভয় বাড়ছে।সাকা চৌধুরী প্রকাশ্যে তার বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার নাকি রাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ। তার ভাষায় যা বুঝা যায়, এ বিচারকে দেশের অপশক্তি রাজাকারচক্র চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নেবে। অর্থাৎ বিচার করতে তারা দেবে না।মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্রপক্ষও এ বিচারকার্যকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে না পারলে, এ প্রজন্ম মহাজোট সরকারকে ক্ষমা করবে না। তাই পরাজিত রাজাকার শক্তি আজ যেভাবে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সরকারকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে, তার মোকাবিলা করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে সুসংহত থাকতে হবে। যারা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপকর্ম করেছে এবং বর্তমানে যারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে তাদের সবার লক্ষ্যই এক। তারা অভিন্ন মতলব হাসিলের জন্যই বিভিন্ন প্লাটফর্মে বিভক্ত হয়ে মাঠে আছে। রাষ্ট্রের মানুষকে তাদের জেনে-চিনেই আগামীর পথে অগ্রসর হতে হবে। নিউইয়র্ক , ২৮ জুলাই ২০১০ ---------------------------------------------------------------------দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ৩০ জুলাই ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি - পিট হ্যামিলটন
false
hm
জনপ্রতিনিধি সঙ্কট ফুটবল খেলার মাঠগুলোর পাশে কেন যেন সবসময় বদমেজাজী লোকজনের বাড়ি থাকে। আর তাদের বাড়িতেই হঠাৎ হঠাৎ পাঁচিল টপকে বল গিয়ে পড়ে। তো এমনি এক বেমক্কা শট মেরে জনৈক বদমেজাজীর চৌহদ্দিতে বল পাঠিয়ে দিয়ে আমরা মহামুশকিলে পড়লাম। কী করা যায়? আমরা এখন আর ছোট নই, রীতিমতো ধাড়ি, বিয়েশাদি করা ছেলেপেলেও আছে আমাদের মধ্যে দুয়েকজন, এই বয়সে কে যাবে ঐ ঝাড়ি খেয়ে বল আনতে? মান অপমান বোধ তো সবারই আছে। একজন প্রস্তাব দিলো, একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা হোক খেলোয়াড়দের মাঝ থেকে। কিন্তু প্রার্থী হতে আগ্রহী পাওয়া গেলো না কাউকেই। সবাই একটু উদাস, আনমনা, বল-না-পেলে-খেলবো-না-কিন্তু-বলও-আনতে- যাবো-না ভাব চেহারায়। শেষমেশ সবাই দেখি আমার দিকেই একমন টেরিয়ে তাকাচ্ছে। আমি অস্বস্তিতে পড়ে যাই, বলি, কী, কী দেখিস আমার দিকে এরকম ড্যাবড্যাব করে? বাড়িতে বাপভাই নাই? সবাই গুজগুজ করতে থাকে। হুমম, হিমুটার গায়ের চামড়া অত্যন্ত পুরু মনে হচ্ছে। দুইচারটা তিক্ত কথা শুনলেও ওর কিছু এসে যাবে না। জনপ্রতিনিধি হবার জন্য আদর্শ। বলতে না বলতেই হ্যাঁ-না ভোটাভুটি শুরু হয়ে যায়, ব্যাপক ভোটে জিতে আমি জয়ী হই। আমার বিপক্ষে না ভোট দিয়েছে দুইজন, তাদের মধ্যে একজন আমার সত্যিকারের বন্ধু, আরেকজন বলের ভবিষ্যৎ ভেবে আমাকে না ভোট দিয়েছে, তার ধারণা আমি বল আনতে গেলে ঐ বলটা বটি দিয়ে কুচিয়ে ফেরত দেয়া হতে পারে, রাস্তার পোলাপানকে নাকি ঐভাবেই বল ফেরত দেয়া দস্তুর। কী আর করা, বিষাদগ্রস্ত মনে দাঁড়াই সবার সামনে। আমাকে শপথ পাঠ করায় সকলে মিলে, যেভাবেই হোক বল হাসিল করতে হবে, প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে হলেও। ঐ বাসার বুড়া মালিকের ঐতিহ্য আছে বল ও বলপ্রার্থীদের যুগপৎ আটকে রেখে বেওয়ারিশ মাল হিসেবে পুলিশে সোপর্দ করার, তাছাড়া ঐ বাড়িতে লেলিয়ে দেয়ার জন্য অভ্যস্ত কুত্তা আছে, আছে লাইসেন্স করা শটগান, জব্বারের বলী খেলায় কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট দারোয়ানসহ আরো অনেক প্রতিকূলতা, সর্বোপরি বাড়ির সিংহদরোজায় কোন ঘন্টা নেই, সেটার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁক পেড়ে অভ্যন্তরস্থ লোকজনের মনোযোগ ও কুকুরের অমনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে। তবে একটি সুন্দরী ও যৌনাবেদনময়ী তরুণীও সে বাড়িতে থাকে, হতে পারে সে কাজের বুয়া কিন্তু তাতে কি, সুন্দরী ও যৌনাবেদনময়ী তো, আমি বল উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় তাকে কয়েক ঝলক দেখে ফেলতে পারি, চাই কি মুরোদে কুলালে তাকে পটিয়ে বার করে এনে নন্দন পার্কেও নিয়ে যেতে পারি নাকি। আমি বিরসমুখে শুনি। শপথ পাঠ করানোর পর সবাই হুড়ো দেয় আমাকে, কই, যা! আমি দূর অস্ত বাড়ির দরজার দিকে তাকাই। তারপর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। নাহ, প্রতিনিধি যখন আমাকে নির্বাচিত করাই হয়েছে, প্রতিনিধিসুলভ আচরণই আমাকে করতে হবে। তাছাড়া শাস্ত্রে আছে, দূত অবধ্য, আমার কী ভয়? আমি কেশে গলা পরিষ্কার করি, তারপর রাজনের দিকে ফিরে বলি, "তোর মোটরসাইকেলটা দে আমাকে!" রাজন অতিশয় কঞ্জুস, সে সব কিছুই বাঁচিয়ে চলে, গালি পর্যন্ত গুনে দেয়, আর ওর কয়েক হাতফেরতা মোটরসাইকেলটার মতো মহার্ঘ্য জিনিস হস্তান্তর করবে আমার মতো জনপ্রতিনিধির কাছে, এ আশা করা অন্যায়। তাই ও যখন ফুঁসে উঠে প্রত্যাখ্যান করে, আমি অবাক হই না। "মোটরসাইকেল লাগবে কেন তোর?" রাজন ওর ময়লা দাঁতগুলি খিঁচায়। "কত দূরে বাড়িটা দেখেছিস?" আমি কপালের নিচে হাত রেখে সেই দিল্লির মতোই দূরবর্তী বাড়িটার আগাপাস্তলা খুঁটিয়ে দেখি। "পায়ে হেঁটে যাই কিভাবে? বাহন লাগবে না?" অন্যরা একে অন্যের দিকে তাকায়। একজন দুর্বল যুক্তি দাঁড় করায়, "কী বলিস? এক শট মেরে বল ফেলে দিলাম, আর তুই বলছিস দূর? ঐ তো দেখা যায় ---!" আমি উদাস হাসি। বলি, "ওরে, আসমানের চাঁদও তো দেখা যায়! কোনদিন চাঁদে না বল পাঠিয়ে দিস এক শট মেরে। তাছাড়া বেশি কিছু চাইনি আমি। আইনপ্রণেতা জনপ্রতিনিধিদের মতো বিনাশুল্কে গাড়ি তো চাইনি। স্রেফ মোটরসাইকেল, তাও পুরানা! ভেবে দ্যাখ, মোটরসাইকেলে চড়ে গেলে একটা মানসম্মান থাকে, হয়তো চাওয়ার আগেই বল দিয়ে দেবে!" সবাই নিমরাজি হয়, একা রাজনটা গজগজ করতে থাকে। আমি ওকে আশ্বস্ত করি, "আরে ভাই এমপিদের মতো বেচে দিবো না তোর মোটরসাইকেল! খালি যাবো আর আসবো! এটুকু মেনে নিতে তোর হোগা জ্বলে?" রাজন দাঁত কিড়মিড় করে চাবিটা দেয় আমার হাতে। আমি তবুও আনমনে কী যেন ভাবি। ওরা হুড়ো দেয়, "যা এবার! দাঁড়িয়ে আছিস কেন খাম্বার মতো?" আমি শিবলির দিকে তাকাই। "দোস্ত তোর ক্যামেরাঅলা মোবাইলটা দে!" শিবলি সিঁটিয়ে যায়, "যা ভাগ! মোবাইল দিয়ে তুই কী করবি?" আমি অভিমান করি। "মোবাইল দিয়ে কী করবো মানে? ফুটানগি দেখাবো, আবার কী? তাছাড়া ওরা ... ওরা যদি সত্যি সত্যি কুত্তা ছেড়ে দেয়, শটগান দিয়ে গুলি করে, দারোয়ান দিয়ে প্যাঁদায়, ওগুলোর একটা প্রমাণ লাগবে না? তাই ক্যামেরাঅলা মোবাইল। তাছাড়া আটকে রাখলে আমিই পুলিশের ছোটবোনকে ফোন করবো, তোরা তো জরিনাকে চিনিসই ... ঐ যে ডিআইজির ছোট বোন ...।" শিবলি রাজি হয় না, ওর এতো শখের মোবাইল। আমি রাগ করি। "আরে ভাই আমি তো সাংসদদের মতো কোটি কোটি টাকা ফোনবিল বাকি রাখার আব্দার করি নাই! বড়জোর পাঁচসাত টাকা বিল উঠবে! তা-ও তোরা এমন করিস? মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বল উদ্ধার করতে যাচ্ছি, তবু তোরা কান্টামি করিস বাল!" বাকিরা গুজগুজ করে, শিবলি মুখ গোঁজ করে ওর ঝাক্কাস মোবাইল সেটটা বাড়িয়ে দেয়। আমি সেটাও পকেটস্থ করে দাঁড়িয়ে থাকি। তারপর আরো কিছু নিখাদ যুক্তির প্রকোপে রাশেদের সানগ্লাস, মাহমুদের ব্রেসলেট আর মুন্নার গলার মোটাসোটা চেনটাও বাগাই। ওরা দাঁড়িয়ে থাকে আশা নিয়ে। সবকিছু নিয়ে রওনা হতে যাবো, এমন সময় ছ্যাঁক ছ্যাঁক করে তেলেভাজার শব্দ আর ঘ্রাণ যথাক্রমে কানে ও নাকে ভেসে আসে। গুনগুন করি, ভেসে আসে সুদূর পুরির সুরভী হায় সন্ধ্যায় ...। সবাই অগ্নিদৃষ্টি হানে আমার দিকে। আমি অসহায় হয়ে পড়ি। "আরে বাবা কয়েকটা ডাল পুরি আর কয়েককাপ চা-ই তো খাওয়াবি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মতো কোটি টাকার বাজার তো আর করে দিতে বলছি না। এই সামান্য কাজটুকু করে দিবি না তোরা?" এরপর সবাই ফুঁসে ওঠে। বলে, বল নাকি আর লাগবে না। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, খেলা ডিসমিস। একে একে যে যার মালসামানা ফিরিয়ে নিতে উদ্যত হয়। আমার একটু মন খারাপ হয়, বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি যে জনপ্রতিনিধিদের কিছু কিছু সুবিধা দিতে হয়, নইলে কাজ উদ্ধার হয় না, কিন্তু ওরা যেন কেমন, এদেশে বাস করেও এই নিকষিত সত্য কথা মানতে চায় না। আমাদের খেলা ভেস্তে যায় সেদিনের মতো। পুনশ্চঃ বহু আগে অন্যত্র প্রকাশিত। তবে পরিস্থিতি পাল্টায় নাই, তাই এখনও প্রযোজ্য।
false
rn
সালমা হায়েক আমার খুব প্রিয় একজন অভিনেত্রী হচ্ছেন- সালমা হায়েক। জীবনের প্রথম ক্যামেরার সামনে নগ্ন হতে গিয়ে অনেকক্ষণ কেঁদেছিলেন সালমা হায়েক। বেশ কিছু দাতব্য কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত এবং বেশ কিছু মানবিক বিষয়ে গণসচেতনতাবৃদ্ধিমূলক কাজে সোচ্চার। এর মধ্যে আছে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্য। সালমা হায়েক ১৯৬৬ সালের সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে পৃথিবীতে আসেন। গুজব রটেছিল মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক ছিল সালমার! 'ব্যবসায়ী বাবা আর সংগীতশিল্পী মায়ের আহ্লাদে একেবারে বিগড়ে গেছে'_পাড়া-প্রতিবেশী, আত্দীয়স্বজনের এমন ধারণা ছিল সালমা হায়েক সম্পর্কে। 'ডেসপারেডো’ মুভি দেখে একবার হলেও সালমা হায়েকের প্রেমে পড়েননি, এমন দর্শক তো পাওয়া দুষ্কর। সুপার-ডুপার হিট ব্যবসা করে ছবিটি। এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি “টেলিভিশনের ২৫ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শিল্পী” তালিকায় হায়েকের অবস্থান ১৭তম বলে ঘোষণা করে। মেক্সিকোর ওয়েল বুম টাউনে জন্ম নেওয়া সালমার পাঁচ বছর বয়সে প্রথম নায়িকা হওয়ার স্বাদ জেগেছিল। '৭১-এর দিকের কথা, স্থানীয় একটি সিনেমা হলে 'উইলি ওঙ্কা অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরি' ছবিটি না দেখলে হয়তো সালমা হায়েক থেকে যেতেন আর দশজন মেক্সিকান সুন্দরীর তালিকায়। 'উইলি ওঙ্কা অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরি' দেখার পরই 'নায়িকাই হব' ভাবনাটি চেপে বসে তাঁর মাথায়। হলিউড সুপারস্টার সালমা হায়েক ২০০৯ সালে বিয়ে করেন ফরাসি বিলিয়নিয়ার অঁরি পিনোকে। স্বামী ও চার বছরের মেয়ে ভ্যালেন্টিনাকে নিয়ে তিনি বর্তমানে প্যারিসে বসবাস করছেন। জীবনের এই পর্যায়ে এসে একটি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৪৬ বছর বয়স্কা এই হলিউডি তারকা। প্রথম ক্যামেরার সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়ানোর যে বাজে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন যাতে তার মেয়েকে না হতে হয়, এমনই শিক্ষায় বড় করছেন মেয়েকে। ২০০৩ সালে 'দ্য মেলাডোনাডো মিরাক্যাল' পরিচালনা করে ডে টাইম অ্যামি অ্যাওয়ার্ডে অনবদ্য পরিচালকের বিভাগে মনোনীত হন। ডেসপেরাডো', 'ফ্রিদা', 'ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মেক্সিকো' তিনটি ছবিতে গানে গলাও দিয়েছেন হায়েক। ভালো পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে '৯৬-তে রডরিগুয়েজের আরেকটি ছবি 'ফ্রম ডাস্ক টিল ডাউন'-এ অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। এরপর আর পেছন ফিরতে হয়নি তাঁকে। একে একে উপহার দেন 'ফুলস রাশ ইন', 'ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েস্ট', '৫৪', 'ফ্যাকাল্টি' 'ডগমা', 'টাইম কোড', 'ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মেক্সিকো'র মতো ছবি। ২০০১ সালে একটি তাইওয়ান ম্যাগাজিনের করা জরিপে বিশ্বে ১০০ আবেদনময়ী নারীর তালিকায় অষ্টম হওয়া এই তারকা।' সালমা হায়েক বলেন, 'আমি অনেক কাজের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে দিয়েছি। কিন্তু এর জন্য আমার কোনো অনুশোচনা নেই। পরিবারের সঙ্গে থাকতে এবং পারিবারিক জীবন উপভোগ করতে ভালোবাসি আমি।' ২৪ বছর বয়সে লস অ্যাঞ্জেলেসে 'স্ট্রিট জাসটিস, দ্য সিনবাদ শো, নার্সেস, ড্রিম অন'-এর মতো সিরিজে কাজ করেন সালমা হায়েক। বাঘ পুষতেন মেক্সিকান অভিনেত্রী সালমা হায়েক। এ পর্যন্ত তিনি তিনটি বাঘ পুষেছেন। তবে কোনোটিকেই খুব বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারেননি। সর্বশেষ তিনি র‌্যাম্বো নামের একটি বাঘ পুষেছেন। বাঘটিকে তিনি তিন বছর যত্নসহকারে লালন-পালন করেছিলেন। র‌্যাম্বোর সঙ্গে খেলাধূলা করেই অবসর সময়টা কাটিয়ে দিতেন। কিন্তু র‌্যাম্বোও খুব বেশিদিন বাঁচেনি। শৈশব থেকেই সালমা ভীষণ পশুপ্রেমী। বাঘ, বানর, কুকুর, বিড়াল- সবই পুষতেন তিনি। সালমা হায়েকের দাদি ছিলেন সে সময়ের একজন সফল বিজ্ঞানী। তখন কোনো নারীর জন্য এটা ছিল এক বিশাল অর্জন। সে যুগে তিনি রূপচর্চার ক্রিম আবিষ্কার করে সাড়া তুলেছিলেন। কিন্তু তার দিনের অধিকাংশ সময় কাটত রান্নাঘরে। রান্নাঘরের এক কোণেই ছিল তার গবেষণাগার। কারণ কাজ করতে গিয়ে যেন পরিবারের সময়ের কোনো কমতি না হয়। তার কাছে পরিবারই ছিল প্রধান। মা-বাবা ও দাদির সেই গুণ ও মানসিকতা বড় প্রেরণা হয়ে আছে সালমা হায়েকের জীবনে।
false
fe
টিআই রিপোর্ট _ দুর্নীতিতে দশম স্থানে বাংলাদেশ টি আই রিপোর্টে বলা হয়েছে দুর্নীতিতে দশম স্থানে আছে বাংলাদেশ।দুদকের কর্নেল হানিফ ইকবাল বলেছেন, তাদের হাতে আলাদীনের চেরাগ নেই।চেরাগ নাই থাক, দাগী দুর্নীতিবাজ রা মুক্তি পাচ্ছে কি ভাবে? রাষ্ট্র কি দেখছে না কারা মোস্ট ওয়ান্টেড ছিল ? কারা গডফাদার ? নাকি ১/ ১১এর চেতনা বিক্রী করে মুনাফা নিতে তৎপর কোন কোন মহল ?রিপোর্ট টি বিডি নিউজ ২৪. ডট কম -এর .......তিন ধাপ এগোলেও টিআইবি মনে করছে না দুর্নীতি কমেছে ====================================== ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির সূচকে এবার বাংলাদেশ এবার তিন ধাপ এগিয়েছে। তবে বাংলাদেশের এই উন্নতিকে পরিসংখ্যানের দিক থেকে তাৎপর্যময় বলে মনে করছে না ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবির মতে, বাংলাদেশে এখনও যথেষ্ট দুর্নীতি রয়ে গেছে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে টিআইবি এক সংবাদ সম্মেলনে এ বছরের টিআই এর দুর্নীতি ধারণা সূচক-২০০৮ প্রকাশ করে। টিআই এর সদর দপ্তর বার্লিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে মঙ্গলবার এক যোগে এবছরের দুর্নীতির সূচক প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুর্নীতির সূচকে এবার বাংলাদেশের অবস্থান দশম। স্কোর ২ দশমিক ১। গতবার এ স্কোর ছিল ২ এবং অবস্থান ছিল সপ্তম। এবারের সূচকের তালিকায় বাংলাদেশের সমান স্কোর পেয়ে সম্মিলিতভাবে দশম অবস্থানে রয়েছে কেনিয়া, রাশিয়া ও সিরিয়া। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, "পরিসংখ্যানের দিক থেকে এটা তাৎপর্যময় না। এতে কোন তাৎপর্যপূর্ন পরিবর্তন এসেছে বলে মনে হয় না।" তিনি ব্যাখ্যা করেন, যখন তথ্যের সংখ্যা সুত্রের সংখ্যা বাড়ে তখন স্কোরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর আগে ৩ টি তথ্যসূত্র নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নির্ণয় করা হয়েছিল। এখন ৭ টি তথ্যসূত্র নিয়ে করা হয়েছে তাই স্কোর বাড়ছে। সমানের বছরও পয়েন্ট ১ বাড়তে পারে। এতে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে কিনা বুঝা যাবে না। অধ্যাপক মোজাফফর বলেন, "সিপিআই প্রতিবেদন যখন বের হয় তখন এ নিয়ে বিতর্ক ছিল। একবারই জুন মাসে বের হয়েছিল। প্রতি বছর তথ্যসূত্র পরিবর্তিত হচ্ছে। মেথডলজি উন্নয়নের চেষ্টা থাকে। গতবারের চেয়ে এবার কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। সে কারণে এক বছরের অন্য বছরের তুলনা করা ঠিক হবে না। তবে এটা দিয়ে একটা ধারনা করা যায়।" টিআইবি সভাপতি বলেন,"আমাদের সংসদ কাজ করছে না। সংসদীয় কমিটি কখনই কাজ করে না। বিচারবিভাগে দুর্নীতির মামলা গিয়ে আটকে যাচ্ছে। তবে গণমাধ্যম যথেষ্ট নজরদারি করেছে। আমরা দেখেছি গত ২ বছরে সুশীল সমাজ খুব একটা সক্রিয় ছিল না। যথেষ্ট সভা সেমিনার হয়েছে, তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চ কন্ঠ শুনিনি।" উন্নত দেশেও দুর্নীতি হয় জানিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, দুর্নীতির উৎস যে কেবল দেশের অভ্যন্তরেই, তাই না। দেশের বাইরে থেকেও দুর্নীতির ধাক্কা আসে। মাল্টি ন্যশনাল কোম্পানীগুলো দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, "এ সূচক নিয়ে প্রশ্ন থাকে। এ বছরও আছে। এক সময় নাইজেরিয়া দুর্নীতিতে আমাদের আশপাশেই ছিল। গত বছরও নাইজেরিয়াতে যথেষ্ট দুর্নীতি ছিল। এবছর ১২১ তম অবস্থানে চলে গেছে। কেন গেল এটার ব্যাখা আামাদের কাছে নেই। এ জাতীয় প্রশ্ন সব সময় থাকে।" বাংলাদেশে দুর্নীতি চিত্র তুলে ধরে তিনি বলে, "আমাদের দেশে যথেষ্ট দুর্নীতি থেকে গেছে। প্রতিষ্ঠানিক সংস্কারে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি। প্রশাসনিক সংস্কারে বর্তমান সরকার যথেষ্ট পদেক্ষপ নেয়নি। ছোট ছোট দুর্নীতি বেড়েছে। প্রশাসনিক সংস্কার না নিলে জনগণ সুফল ভোগ করবে না।" বর্তমান সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান সম্পর্কে টিআইবির সভাপতি বলেন," আমাদের ভেবে দেখতে হবে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছিল পরিণতিতে শেষ পর্যন্ত যেতে পারেনি। যেভাবে পরিচালনা করা হয়েছে তাতে তাড়াহুড়া ছিল। মানুষের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যাশা পূরণের জন্য বিচারিক প্রক্রিয়ায় যে গতির প্রয়োজন ছিল তা আসেনি। তদন্ত প্রক্রিয়ায় যে দক্ষতা থাকার প্রয়োজন ছিল সেটাও আমরা দেখতে পাইনি। যে প্রত্যাশা দুর্নীতি দমনের বিষয়ে ১/১১ তৈরি করেছিল এখন এসে দেখতে পাচ্ছি মানুষ সে ব্যাপারে হতাশ।" তার আশা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা আগামী নির্বাচিত সরকার সামনে তা এগিয়ে নিয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "রাজনীতিতেও ব্যবসাীয়দের প্রাধান্য, মনোনয়ন বাণিজ্য এ বিষয়গুলো দুর্নীতির সামনের সারিতে ছিল। সে কারণেই সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে তাদের ওপর দিয়ে ঝড় ঝাপটা গেছে।" সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "আমাদের স্কোর সামান্য হলেও বেড়েছে। ২০০৮ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য থেকে এ সূচক নিরূপিত হয়েছে। এতে চলমান প্রশাসনিক দুর্নীতি, বিচার বিভাগের ওপর প্রভাব এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে চলমান অস্থিরতার প্রভাব পড়তে পারে।" তিনি বলেন, দুর্নীতি বিশ্বজনীন সমস্যা। ১০ স্কোর কেউ করতে পারেনি। সব দেশেই দুর্নীতি আছে। উন্নত দেশের অনেকেরই স্কোর এবার কমেছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুর্নীতিতে এবার শীর্ষে রয়েছে সোমালিয়া। তাদের পয়েন্ট ১। দ্বিতীয় স্থানে আছে যৌথভাবে মিয়ানমার ও ইরাক। তৃতীয় ও চতুর্থস্থানে আছে হাইতি এবং আফগানিস্তান। অন্যদিকে সূচকে ৯ দশমিক ৩ স্কোর করে দুর্নীতি মুক্ত দেশে হিসেবে এবার শীর্ষে রয়েছে ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন। গত কয়েক বছর চতুর্থ স্থানে অবস্থান করা সিঙ্গাপুর এবারও চতুর্থ স্থানে রয়েছে। সিঙ্গাপুরের স্কোর ৯ দশমিক ২। এ বছর বেশ কয়েকটি দেশ উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো অবস্থানে উঠে এসেছে। আলবেনিয়া, সাইপ্রাস, জর্জিয়া, মরিশাস, নাইজেরিয়া, ওমান, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, টোঙ্গা ও তুরস্ক উন্নতি করেছে। এছাড়া জার্মানী, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র নিচের দিকে নেমে গেছে। টিআই প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন দেশের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরার জন্য এ সূচক প্রকাশ করে থাকে। শূন্য থেকে দশ পর্যন্ত স্কোরের ভিত্তিতে দেশ গুলোর দুর্নীতিতে অবস্থান নির্ণয় করা হয়।
false
ij
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন-এর ‘অবরোধবাসিনী’ থেকে পাঠ (৫) বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন-এর (১৮৮০-১৯৩২) বিস্তারিত পরিচয় দেওয়া এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়। তাঁর সম্বন্ধে আমরা কমবেশি জানি। তাঁর রচিত “অবরোধবাসিনী” বইটি আমাদের কারও কারও পড়া কিংবা কারও কারও এখনও পড়া হয়নি। এ কারণেই বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন-এর অবরোধবাসিনী থেকে পাঠ-এর এই পরিকল্পনা। উদ্দেশ্য, একুশ শতকে বসে বেগম রোকেয়ার চিন্তার স্বরুপ উপলব্দি করা। [ ৩১ ] একবার কোন স্থলে চলন্ত ট্রেণে মেয়েমানুষদের কক্ষে একটা চোর উঠিল। চোর বহাল তবিয়তে একে একে প্রত্যেকের অলঙ্কার খুলিয়া লইল; কিন্তু লজ্জায় জড়সড় লজ্জাবতী অবলা সরলা কুলবালাগণ কোন বাধা দিলেন না। তাঁহারা সকলে ক্রমাগত ঘোমটা টানিয়া থাকিলেন। “তওবা! তওবা! কাঁহা সে মর্দ্দুয়া আ গয়া!” বলিয়া কেহ কেহ বোরকার “নেকাব” টানিলেন। পরে চোর মহাশয় ট্রেণের এলার্মের শিকল টানিয়া গাড়ি থামাইয়া নির্ব্বিঘ্নে নামিয়া গেল। [ ৩২ ] ভাংনীর জমীদার সাহেবের ডাকনাম,-ধরুন-বাচ্চা মিয়া। তাঁহার পতœীর নাম হাসিনা খাতুন। হাসিনার পিতার বিশাল সম্পত্তি,-অগাধ টাকা। একবার বাচ্চা মিয়া স্ত্রীকে বলিলেন, “আমার টাকার দরকার, আজই তোমার পিতার নিকট পত্র লিখাইয়া টাকা আনাইয়া দাও।” যথাসময়ে টাকার পরিবর্ত্তে তথা হইতে মিতব্যয়ের উপকারিতা সম্বন্ধে এক বক্তৃতার ন্যায় পত্র আসিল। বাচ্চা মিয়ার শ্বশুর অনেকবার জামাতাকে টাকা দিয়াছেন। এখন টাকা দানে তাঁহার অরুচি জন্মিয়া গিয়াছে। তাই কন্যাকে টাকা না পাঠাইয়া উপদেশ পাঠাইলেন। ইহাতে বাচ্চা মিয়া রাগ করিয়া স্ত্রীর “নাইওর” (পিত্রালয়) যাওয়া বন্ধ করিয়া দিলেন। এক দিকে পিতামাতা কাঁদেন, অপর দিকে হাসিনা নীরবে কাঁদেন-পরস্পরে দেখা সাক্ষাৎ আর হয় না। কিছু কাল পরে হাসিনার ভ্রাতা তাঁহাকে দেখিতে আসিলেন। তিনি সোজা ভাংনী না গিয়া পথে দুই ক্রোশ দূরে ফুলচৌকী নামক গ্রামে তাঁহার মাসীমার বাড়ীতে উপস্থিত হইলেন। পরদিন প্রাতঃকালে ভাংনীতে সংবাদ পাঠাইলেন যে তিনি অপরাহ্নে তথায় যাইবেন। যাহাতে ভ্রাতা ও ভগিনীতে দেখা না হইতে পারে, সে জন্য বাচ্চা মিয়া এক ফন্দী করিলেন। তিনি স্ত্রীকে বলিলেন যে তাঁহাদের লইয়া যাইবার জন্য ফুলচৌকী হইতে লোক আসিয়াছে। হাসিনা স্বামীর চালবাজী জানিতেন, সহসা তাঁহার কথায় বিশ্বাস করিলেন না। তিনি কোন প্রকারে জানিতে পারিয়াছিলেন যে অদ্য অপরাহ্নে তাঁহার ভাই সা’ব আসিবেন। বাচ্চা মিয়া পুনরায় কহিলেন, “ভাই সা’বের মাথা ধরিয়াছে, তিনি আজ আসিতে পারিবেন না। সেই জন্য খালা আম্মা ইয়ার মাহমুদ সর্দ্দারকে পাঠাইয়াছেন আমাদের লইয়া যাইতে। তুমি আমার কথা বিশ্বাস না কর ত চল দেউড়ী ঘরে গিয়া স্বকর্ণে সর্দ্দারের কথা শুন।” তদনুসারে দেউড়ী ঘরের দ্বারের বাহিরে ইয়ার মাহমুদকে ডাকিয়া আনা হইল। ঘরের ভিতর হইতে বাচ্চা মিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ইয়ার মাহমুদ! তুমি এখন ফুলচৌকী হইতে আইস নাই?” সে উত্তর করিল, “হাঁ হুজুর! আমিই খবর নিয়া আসিয়াছি-” বাচ্চা মিয়া তাড়াতাড়ি অন্য কথা পাড়িয়া তাহাতে আর বেশী কিছু বলিতে দিলেন না। হাসিনা হাসি-খুশী, মাসীমার বাড়ী যাইতে প্রস্তুত হইলেন। তাঁহার জন্য বানাতের ঘেরাটোপ ঢাকা পাল্কী সাজিল, তাঁহার বাঁদীদের জন্য খেরুয়ার ওয়াড ঘেরা গোটা আষ্টেক ডুলী সাজিল, বাচ্চা মিয়া মেয়ানা, (খোলা পাল্কী বিশেষ) সাজিল। আর্দ্দালী, বরকন্দাজ, আসাবরদার, সোটাবরদার ইত্যাদি সহ তাঁহারা বেলা ১টার সময় রওয়ানা হইলেন। পথে যখন হাসিনা বুঝিতে পারিলেন যে দুইখানি ডিঙ্গী নৌকা যুড়িয়া, তাহার উপর তাঁহার পাল্কী রাখিয়া নদী পার করা হইতেছে, তখন তিনি রোদন আরম্ভ করিলেন যে ফুলচৌকী যাইতে ত নদী পার হইতে হয় না,-আল্লারে, আল্লাহ্! সা’ব তাহাকে এ কোন জায়গায় আনিলেন!! পাল্কীতে মাথা ঠুকিয়া কান্না ছাড়া অবরোধ-বাসিনী আর কি করিতে পারে? [ ৩৩ ] প্রায় ১৮ বৎসর হইল, কলিকাতায় একটী দেড় বৎসর বয়স্কা শিশুর জ্বর হইয়াছিল। তাঁহাদের অবরোধ অতি কঠোর,-তাই ততটুকু মেয়েকেও কোন হি-ডাক্তার দেখিতে পাইবেন না, সুতরাং শি-ডাক্তার আসিয়াছেন। বাড়ী ভরা যে স্ত্রীলোকেরা আছেন, তাঁহাদের একমাত্র “শরাফত” ব্যতীত আর কোন গুন নাই। তাঁহারা লেডী ডাক্তার মিস গুপ্তকে ঘিরিয়া দাঁড়াইয়া আছেন। মিস গুপ্ত দেখিয়া শুনিয়া রোগী মেয়েকে গরম জলে স্নান করাইতে চাহিলেন। শি-ডাক্তার মিস গুপ্ত চাহেন গরম জল,-বিবিরা একে অপরের মুখ! তিনি চাহেন ঠাণ্ডা জল,-বিবিরা বলেন, “বাপরে ঠাণ্ডা জলে স্নান করালে মেয়ের জ্বর বেড়ে যাবে!” ফল কথা, বেচারী মিস গুপ্ত সে দিন কিছুতেই তাঁহাদিগকে নিজের বক্তব্য বুঝাইতে পারিলেন না। তিনি বাহিরে আসিয়া কর্ত্তার নায়েব সাহেবকে সমস্ত বলিয়া বিদায় হইবার সময় বলিলেন, তিনি এ বাড়ীতে আর আসিবেন না। নায়েব সাহেব অনেক অনুনয় বিনয় করিয়া তাঁহাকে ১৬ ফী গছাইয়া দিয়া পর দিন আবার আসিতে বলিলেন। পরদিন আবার শি-ডাক্তার মিস গুপ্তকে লইয়া বাড়ীর গিন্নীদের গণ্ডগোল আরম্ভ হইল। বে-গতিক দেখিয়া নায়েব সাহেব তাঁহার পরিচিতা জনৈকা মহিলাকে আনিয়া মিস গুপ্তের নিকট পাঠাইয়া দিলেন। বীণাপাণি (নায়েব সাহেবের প্রেরিত সেই বাঙ্গালী মহিলা) আসিয়া দেখেন, লেডী ডাক্তার রাগিয়া ভূত হইয়া আছেন। আর সমবেত বিবিরা দাঁড়াইয়া ভয়ে থর থর কাঁপিতেছেন,-তাঁহাদের মুখে ধান দিলে খই ফোটে! শেষে মিস গুপ্ত গর্জ্জন করিয়া বলিলেন, “ময়ঁ তামাসা দেখনে নেহী আয়ী হোঁ!” বীণাপাণি চুপিচুপি বিবিদের জিজ্ঞাসা করিলেন যে, ব্যাপার কি? তাঁহারা বলিলেন, “বুঝিতে পারি না,-তিনি তোয়ালে চাহেন, টব চাহেন, কিন্তু আমরা যাহা দিই, তাহাই দূরে ছুঁড়িয়া ফেলেন।” পরে তিনি মিস গুপ্তকে তাঁহার বিরুদ্ধে বিরক্তির কারণ জিজ্ঞাসা করায় তিনি হাতের ঘড়ী দেখিয়া বলিলেন, “দেখুন দেখি! আধ ঘণ্টার উপর হয়ে এ’ল, এখন পর্যøন্ত মেয়েকে স্নান করাবার জন্য কোন জিনিষ পেলুম না।” বীণা সভয়ে বলিলেন, “উহারা যে জিনিষ দেন, তাই নাকি আপনি পসন্দ করেন না?” মিস গুপ্ত বলিলেন, “কি করে পসন্দ করব বলুন দেখি? আমি চাই একটা বাথ-টাব তাতে বসিয়ে শিশুকে স্নান করাব, ওঁরা দেন আমাকে এতটুকু একটা একসেরা ডেকচি-কাজেই আমি ছুঁড়ে ফেলেছি! আপনিই বলুন ত ঐটুকু ডেকচির ভিতর আমি শিশুকে বসাই কি করে? আমি চাই নরম পুরাতন কাপড়, শিশুর গা মুছে দেবার জন্যে, ওঁরা দেন আমাকে নূতন খসখসে তোয়ালে, - কাজেই আমি ছুড়ে ফেলে দিয়েছি! আমাকে ঐশ্বর্য্য দেখান যে নূতন তোয়ালে আছে! এঁরা মনে করেন যে এঁরা পীর-তাই ঊাবৎুনড়ফু ংযড়ঁষফ ড়িৎংযরঢ় ঃযবস!” শেষে বীণা সমস্ত জিনিষ যোগাড় করিয়া দিয়া শিশুকে স্নান করাইতে মিস গুপ্তের সাহায্য করিলেন। তখন রাগ পড়িয়া গিয়া তাঁহার মুখে হাসি ফুটিল; বিবিরাও নিশ্বাস ছাড়িয়া বাঁচিলেন। [ ৩৪ ] শুনিয়াছি বঙ্গদেশের কোন শরীফ খান্দানের বাড়ীর নিয়ম এই যে বিবাহের সময় কন্যাকে “হুঁ” বলিয়া এজেন দিতে হয় না। মেয়ের কণ্ঠস্বরের ঐ “হু” টুকুই বা পরপুরুষে শুনিবে কেন? সেই জন্য বিবাহসভায় মোটা পর্দ্দার একদিকে পাত্রীর উকিল, সাক্ষী, আত্মীয়স্বজন এবং বর পরে লোকের থাকে, অপর পার্শ্বে কন্যাকে লইয়া স্ত্রীলোকেরা বসে। পর্দ্দার নীচে একটা কাঁসার থালা থাকে,-থালার অর্দ্ধেক পর্দ্দার এপারে, অপর অর্দ্ধাশ পর্দ্দার ওপারে থাকে। বিবাহের কলেমা পড়ার পর কন্যার কোন সঙ্গিনী বা চাকরাণী একটা সরোতা (যাঁতী সেই থালার উপর ঝনাৎ করিয়া ফেলিয়া দেয়-যাঁতীটা সশব্দে পুরুষদের দিকে গিয়া পড়িল বিবাহ-ক্রিয়া সমাপ্ত হয়। এই প্রসঙ্গে আমার আর একটী কথা মনে পড়িল। লক্ষ্ণৌ-এর এক বিবির সহিত আমার আলাপ আছে। একদিন তাহার বাড়ী বেড়াইতে গিয়াছি; কিছুণ পরে তাঁহার সপ্তম বর্ষীয় পুত্র দুষ্টামী করায় তিনি তাহাকে “হারামী-” বলিয়া গালি দিয়া মারিতে উদ্যত হইলেন। ছেলে পলাইয়া গেলে পর আমি তাঁহাকে বিনা সঙ্কোচে জিজ্ঞাসা করিলাম, এ গালি তিনি কাহাকে দিলেন,-ছেলেকে, না ছেলের মাতাকে? তিনি তদুত্তরে সহাস্যে বলিলেন যে বিবাহের সময় যদিও তিনি বয়োপ্রাপ্তা ছিলেন তথাপি কেহ তাঁহার মতামত জিজ্ঞাসা করে নাই। বিবাহ মজলিসে তিনি “হুঁ” “হাঁ” কিছুই বলেন নাই; জবরদস্তী তাঁহার শাদী দেওয়া হইয়াছে। সুতরাং তাঁহার “সব বাচ্চে হারামজাদে!” [ ৩৫ ] মরহুম মৌলবী নজীর আহমদ খাঁ বাহাদুরের প্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখিত দিল্লী গদরের সময় অবরোধ-বন্দিনী মহিলাদের দুর্দ্দশার বর্ণনা হইতে অংশবিশেষের অনুবাদ এইঃ রাত্রি ১০টার সময় আমার ভাইজানকে কাপ্তেন সাহেবের প্রেরিত লোকটী বলিল যে, আমরা রাত্রি ২টার সময় বিদ্রোহীদের আক্রমণ করিব। আপনাদের বাড়ীর নিকটেই তোপ লাগান হইয়াছে। অতএব আপনারা আক্রমণের পূর্ব্বেই প্রাণ লইয়া পলায়ন করুন। এ সংবাদ শুনিবামাত্র আমাদের আত্মা শুকাইয়া গেল। কিন্তু কোন উপায় ছিল না! শেষে আমরা পদব্রজে যাত্রা করিতে বাধ্য হইলাম। সে দিনের দুঃখের কথা মনে হইলে এখনও মনে দুঃখ হয়, হাসিও পায়। এক কর্ত্রী সাহেবা সমস্ত ধন-দৌলত ছাড়িয়া পানদান সঙ্গে লইয়া চলিলেন। হতভাগীদের মোটেই হাঁটিবার অভ্যাস নাই-এখন প্রাণের দায়ে হাঁটিতে গিয়া কাহারও জুতা খসিয়া রহিয়া গেল, কাহাও ইজারবন্দ পায়ে জড়াইয়া গেল; সে দিন যাঁর পায়জামার পাঁয়চা যত বড় ছিল, তাঁহারই হাঁটিতে তত অধিক কষ্ট হইতেছিল। ভাইজান সে সময় তিক্তবিরক্ত হইয়া তাঁহাদের বলিতেছিলেন, “কমবখতিরা আরও দুই থান নয়নসুখের পায়জামা বানাও। লাহোরের রেশমী ইজারবন্দ আরও জরির ঝালর লাগাইয়া লম্বা কর।” বেচারীরা বাজারের পথে চলিলেন; ভাগ্যে রাত্রি ছিল, -তাই রক্ষা! অর্থাৎ আমাদের তৎকালীন দুর্গতি দেখিবার জন্য লোকের ভিড় হয় নাই। আহা রে! সকলের পা ফুলিয়া ভারী হইল যে এক মণ,-দুই পা চলেন আর হোঁচট খান; বারবার পড়েন। একজন পথে বসিয়া একেবারে এলাইয়া পড়িলেন যে আর তিনি হাঁটিতে পারিবেন না। কেবল পায় ব্যথা নয়, আমাদের সর্ব্বাঙ্গে বেদনা হইয়া গেল। বেচারী বিবিদের লাঞ্ছনার অবধি ছিল না। কিছুদূর যাইয়া দেখি, হাজার হাজার গোরা আর শিখ সৈন্য সারি বাঁধিয়া চলিয়া আসিতেছে। তাহা দেখিবামাত্র ভয়ে আমাদের প্রাণ উড়িয়া গেল। আরও চলচ্ছক্তি-বিহীন হইয়া পড়িলাম। অবশেষে বহু কষ্টে কিছু দূর গিয়া ভাইজান চারটা গাধা সংগ্রহ করিলেন। শেষে গাধায় উঠিয়া বিবিরা রক্ষা পাইলেন। [ ৩৬ ] শীতকাল। মাঘ মাসের শীত। সেই সময় কোথা হইতে এক ভালুকের নাচওয়ালা গ্রামে আসিল। গ্রামে কোন নূতন কিছু আসিলে প্রথমে তাহাকে জমীদার বাড়ীতে হাজিরা দিতে হয়। তদনুসারে ভালুকওয়ালা জমীদার বাড়ীতেই অতিথি হইয়াছে। প্রশস্ত দালানের উত্তর দিকের মাঠে প্রত্যেহ ভালুকের নাচ হয়,-গ্রামশুদ্ধ লোকে আসিয়া নাচ দেখে! কিন্তু বাড়ীর বউ ঝি সে নাচ দেখা হইতে বঞ্চিতা। ছোট ছেলেরা এবং বুড়ী চাকরাণীকে আসিয়া গিন্নীদের নিকট গল্প করে।-ভালুকে খেমটা নাচ নাচে; থমকা নাচ নাচে। এমন করিয়া ভালুকওয়ালার সঙ্গে কুস্তি লড়ে; এমন করিয়া পাছাড় ধরে।-ইত্যাদি। এই সব গল্প শুনিয়া শুনিয়া কর্ত্তার দুইজন অল্পবয়স্কা পুত্রবধূর সাধ হইল যে একটু নাচ দেখিলেন। বেশী দূর যাইতে হইবে না, ছোট বউবিবির কামরার উত্তর দিকের জানালার ঝরোকা (খড়খড়ির পাখী) একটু তুলিলেই সুস্পষ্ট দেখা যায়। যেই বধূদ্বয় ঝরোকা তুলিয়াছেন, অমনি তাঁহাদের চারি বৎসর বয়স্কা ননদ জোহরা দৌড়াইয়া আসিয়া বলিল যে, সেও দেখিবে। একজন তাহাকে কোলে তুলিয়া দেখাইতে লাগিলেন। জোহরা কখনও বাড়ীর উঠানে নামিয়া কুকুর বিড়াল পর্যøন্ত দেখে নাই,-এখন দেখিল একেবারে ভালুক! ভালুক কুস্তি লড়িতেছিল, তাহা দেখিয়া জোহরা চীৎকার করিয়া অজ্ঞান হইয়া পড়িল! ভালুকের নাচ দেখা মাথায় থাকুক-এখন জোহরাকে লইয়া তাঁহারা ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। জোহরা সজ্ঞান হইয়া বটে কিন্তু তাহার ভয় গেল না। রাত্রিকালে হঠাৎ চীৎকার করিয়া জাগিয়া উঠিয়া ভয়ে থরথর কাঁপে। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন সুদূর সদর জেলা হইতে বহু অর্থ ব্যয়ে ডাক্তার থাকিতে হইল। ডাক্তার সাহেব সকল অবস্থা শুনিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, শিশু কোন প্রকারে ভয় পাইয়াছিল না কি? কথা গোপন থাকে না, জানা গেল ভালুকের নাচ দেখিয়া ভয় পাইয়াছিল। এদিকে কর্ত্তা সন্ধান লইতে লাগিলেন, জোহরাকে-নাচ দেখাইল কে। খেলাই আন্না প্রভৃতি সকলে একবাক্যে অস্বীকার করিল যে তাহারা সাহেবজাদীকে ভালুকের নাচ দেখায় নাই। অবশেষে জানা গেল, বউ বিবিরা দেখাইয়াছেন। তখন তাঁহার ক্রোধ চরমে উঠিল। জোহরা মরে মরুক, তাহাতে কর্ত্তার তত আপত্তি নাই; কিন্তু এই যে বাড়ীময় রাষ্ট্র হইল যে, তাঁহার পুত্রবধূগণ বেগানা মরদের তামাসা দেখিতে গিয়াছিলেন, তিনি এ লজ্জা রাখিবেন কোথায়? ছি! ছি! ভিন্ন ধর্ম্মাবলম্বী সিভিল সার্জ্জন ডাক্তারও শুনিয়া মৃদু হাসিলেন যে বউয়েরা ভালুকের নাচ দেখিতে গিয়াছিলেন। লাজে খেদে ক্রোধে অধীর হইয়া কর্ত্তা বধূদের তলব দিলেন। মাথায় একহাত ঘোমটা টানিয়া শ্বশুরের সম্মুখে দাঁড়াইয়া বধূদ্বয় লজ্জায় অভিমানে থরথর কাঁপিতেছিলেন; (সেই মাঘ মাসের শীতও) ঘামিতেছিলেন আর পদতলস্থিত পাথরের মেঝেকে হয়ত বলিতেছিলেনঃ “ওমা বসুন্ধরা! বিদর গো ত্বরা- তোমাতে বিলীন হই!” তাই ত, পর্দ্দানশীনদের ধরাপৃষ্ঠে থাকিবার প্রয়োজন কি? দন্ত কড়মড় করিয়া,- “বউমা’রা শুন ত-” বলিয়াই অতি ক্রোধে কর্ত্তার বাকবোধ হইল। তখন তাঁহার “গোস্ব্বায় অজুদ কাঁপে, আঁখি হইল লাল”-তিনি বউমাদের বিনা লুণে চিবাইয়াত খাইবেন, না, আস্ত গিলিবেন, তাহা ঠিক করিতে পারিতেছিলেন না! [ ৩৭ ] একবার পশ্চিম দেশ হইতে ট্রেণ হাবড়ায় আসিবার সময় পথে বালী ষ্টেশনে তিনজন বোরকাধারিণী লোক স্ত্রীলোকদের কক্ষে উঠিল। কক্ষে আরও অনেক মুসলমান স্ত্রীলোক ছিল। ট্রেণ ছাড়িলে পরও তাহারা সবিস্ময়ে দেখিতে লাগিল যে নবাগতা তিনজন বোরকার নেকাব (মুখাবরণ) তুলিল না। তখন তাহাদের মনে সন্দেহ হইল যে ইহারা নাকি জানি কি করিবে। আর তাহারা লম্বাও খুব ছিল। খোদা খোদা করিয়া লিলুয়া ষ্টেশনে ট্রেণ থামিলে যখন মেয়ে টিকেট কালেকটার তাহাদের কামরায় আসিলেন, তখন সকলেই তাঁহাকে ঐ বোরকাধারিণীদের বিষয় বলিল। টিকেট কালেকটার তাহাদের দিকে অগ্রসর হইতে না হইতে তাহাদের একজন ষ্টেশনের বিপরীত দিকে ট্রেণের জানালা দিয়া লাফাইয়া পলাইয়া গেল; তিনি “পুলিশ-পুলিশ” বলিয়া চেঁচাইতে চেঁচাইতে একজনকে ধরিয়া নেকাব তুলিয়া, দেখেন,-তাহার মুখে ইয়া দাড়ী,-ইয়া গোঁফ! তিনি ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “কি আশ্চর্য্য! বোরকার ভিতর দাড়ী গোঁফ!” [ ৩৮ ] আমার পরিচিতা জনৈকা শি-ডাক্তার মিস শরৎকুমারী মিত্র বলিয়াছেন, “বাবা! আপনাদের-মুসলমানদের বাড়ী গেলে আমাদের যা নাকাল হতে হয়! না পাওয়া যায় সময়মত একটু গরম জল; না পাওয়া যায় একখণ্ড ন্যাকড়া!” একবার তাঁহাকে বহুদূর হইতে একজন ডাকিতে আসিয়া জানাইল যে বউবেগমের দাঁতে ব্যথা হইয়াছে। তিনি যথাসম্ভব দাঁতের ঔষধ এবং প্রয়োজন বোধ করিলে দাঁত তুলিয়া ফেলিবার জন্য যন্ত্রপাতি সঙ্গে লইয়া গিয়াছেন। সেখানে দিয়া দেখেন, দাঁতে বেদনা নহে,-প্রসব বেদনা! তিনি এখন কি করেন? ভাগলপুর শহর হইতে জমগাঁও চারি ক্রোশ পথ। এত দূর হইতে আবার সেই একই ঘোড়ার গাড়ীতে ফিরিয়া যাওয়াও অসম্ভব; কারণ ঘোড়া কান্ত হইয়াছে। জমগাঁও শহরতলী,-পাড়া গ্রামের মত স্থান, সেখানে ঘোড়ার গাড়ী কিম্বা পাল্কী পাওয়া যায় না। কোন প্রকারে ভাগলপুরে ফিরিয়া আসিয়া তৎকালীন উপযোগী যন্ত্রপাতি লইয়া পুনরায় জমগাঁও যাইতে যাইতে রোগিনীর দফা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা। মিস মিত্র সে বাড়ীর কর্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করিলেন যে এরূপ মিথ্যা কথা বলিয়া তাঁহাকে অনর্থক ডাকা হইল কেন? উত্তরে কর্ত্রী বলিলেন, “পুরুষ চাকরের দ্বারা ডাক্তারনীকে ডাকিতে হইল, সুতরাং তাহাকে দাঁতে ব্যথা না বলিয়া আর কি বলিতাম? তোবা ছিয়া! মর্দ্দুয়াকে ও কথা বলিতাম কি করিয়া? আপনি কেমন ডাক্তারণী যে, লোকের কথা বুঝেন না?” [ ৩৯ ] সমাজ আমাদিগকে কেবল অবরোধ-কারাগারে বন্ধ করিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই। হজরতা আয়শা সিদ্দিকা নাকি ৯ বৎসর বয়সে বয়োপ্রাপ্ত হইয়াছিলেন; সেই জন্য সম্ভ্রান্ত মুসলমানের ঘরের বালিকার বয়স আট বৎসর পার হইলেই তাহাদের উচ্চহাস্য করা নিষেধ, উচ্চৈস্বরে কথা বলা নিষেধ, দৌড়ান লাফান ইত্যাদি সবই নিষেধ। এক কথায়, তাহার ন্নাচড়াও নিষেধ। সে গৃহকোণে মাথা গুঁজিয়া বসিয়া কেবল সূচি-কর্ম্ম করিতে থাকিবে,-নড়িবে না। এমনকি দ্রুতগতি হাঁটিবেও না। কোন এক সম্ভ্রান্ত ঘরের একটি আট বৎসরের বালিকা একদিন উঠানে আসিয়া দেখিল, রান্নাঘরের চালে ঠেকান ছোট মই আছে। তাহেরা (সেই বালিকা)র মনে কি হইল, সে অন্যমনস্ড়্গভাবে ঐ মইয়ের দুই ধাপ উঠিল। ঠিক সেই সময় তাহার পিতা সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তিনি কন্যাকে মইয়ের উপর দেখিয়া দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হইয়া তাহার হাত ধরিয়া এক হেঁচকা টানে নামাইয়া দিলেন। তাহেরা পিতার অতি আদরের একমাত্র কন্যা,-পিতার আদর ব্যতীত অনাদর কখনও লাভ করে নাই; কখনও পিতার অপ্রসন্ন মুখ দেখে নাই। অদ্য পিতার রুদ্রমূর্ত্তি দেখিয়া ও রূঢ় হেঁচকা টানে সে এত অধিক ভয় পাইল যে কাঁপিতে কাঁপিতে বে-সামাল হইয়া কাপড় নষ্ট করিয়া ফেলিল! অ-বেলায় স্নান করাইয়া দেওয়া হইল বলিয়া এবং অত্যধিক ভয়ে বিহবল হইয়াছিল বলিয়া সেই রাত্রে তাহেরার জ্বর হইল। একে বড় ঘরের মেয়ে, তায় আবার অতি আদরের মেয়ে, সুতরাং চিকিৎসার ক্রটি হয় নাই। সুদূর সদর জেলা হইতে সিভিল সার্জ্জন ডাক্তার আনা হইল। সেকালে (অর্থাৎ ৪০/৫০ বৎসর পূর্ব্বে) ডাক্তার ডাকা সহজ ব্যাপার ছিল না। ডাক্তার সাহেবের চতুর্গুণ দর্শনী, পাল্কী ভাড়া, তদুপরি বত্রিশজন বেহারার সিধা ও পান তামাক যোগান-সে এক বিরাট ব্যাপার। এত যতœ সত্ত্বেও তৃতীয় দিনেও তাহেরার জ্বর ত্যাগ হইল না। ডাক্তার সাহেব বে-গতিক দেখিয়া বিদায় হইলেন। পিতার রূঢ় ব্যবহারের নিষ্ঠুর প্রত্যুত্তর দিয়া তাহেরা চিরমুক্তি লাভ করিল! (ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্না ইলায়হে রাজেউন)। [ ৪০ ] এক ধনীগৃহে কন্যার বিবাহ উপলক্ষ হইতেছিল। বাড়ী ভরা আত্মীয়া কুটুম্বিনীর হট্রগোল-কিছুরই অভাব নাই। নবাগতাদিগের জন্য অনেক নূতন চালাঘর তোলা হইয়াছে। একদিন ভরা সন্ধ্যায় কি করিয়া একটা নূতন খড়ের ঘরে আগুন লাগিল। শোরগোল শুনিয়া বাহির হইতে চাকরবাকর, লোকজন আসিয়া দেউড়ীর ঘরে অপো করিতে লাগিল, আর বারম্বার হাঁকিয়া জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, পর্দ্দা হইয়াছে কিনা,-তাহারা অন্দরে আসিতে পারে কিনা? কিন্তু অন্তঃপুর হইতে কে উত্তর দিবে? আগুন দেখিয়া সকলেরই ভ্যাবা-চেকা লাগিয়া গিয়াছে। এদিকে আগুন-লাগা ঘরের ভিতর বিবিরা বসিয়া বলাবলি করিতেছেন যে প্রাঙ্গণে পর্দ্দা আছে কিনা,-কোন ব্যাটাছেলে থাকিলে তাঁহারা বাহির হইবেন কি করিয়া? অবশেষে এক বুড়ো বিবি ভয়ে জ্ঞানহারা হইয়া উচ্চৈস্বরে বলিলেন, “আরে ব্যাটারা! আগুন নিবাতে আয় না! এ সময়ও জিজ্ঞাসা করিস পর্দ্দা আছে কিনা?” তখন সকলে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াইয়া আগুন নিবাইতে আসিল। কিন্তু আগুন-লাগা ঘরের বিবিরা বাহিরে যাইতে গিয়া যেই দেখিলেন, প্রাঙ্গণ পুরুষ মানুষে ভরা, অমনি তাঁহারা পুনরায় ঘরে গিয়া ঝাঁপের অন্তরালে লুকাইলেন। সৌভাগ্যবশতঃ গোটাকয়েক সাহসী তরুণ বিবিদের টানাহেঁচড়া করিয়া বাহিরে লইয়া আসিল। নচেৎ সেইখানে পুড়িয়া পসেন্দা কাবাব হইতেন!! [ ৪১ ] রায় শ্রীযুক্ত জলধর সেন বাহাদুর গত ১৩৩৫ সনে লিখিয়াছেনঃ সেকালের পর্দ্দা-আমি যে সময়কে সেকাল বলছি, তা সত্য-ক্রেতা-দ্বাপর যুগ নয় কিন্তু-সে আমাদের যৌবনকালের কথা-এই পঞ্চাশ বৎসর পূর্ব্বের কথা। সে সময় আমরা পর্দ্দার যে রকম কঠোর, তথা হাস্যকর ব্যবস্থা দেখিয়াছিলাম, সে সকল দৃশ্য এখনও আমার চরে সম্মুখে ছবির মত জেগে আছে। তারই গুটিকয়েক দৃশ্যের সামান্য বর্ণনা দিতে চেষ্টা করিব। সেই সময় একদিন কি জন্য যেন হাবড়া ষ্টেশনে গিয়াছিলাম। আমি তখন কলেজে পড়ি। ষ্টেশনের প্ল্যাটফরমে গিয়া দেখি কয়েকজন বরকন্দাজ যাত্রীর ভিড় সরিয়ে পথ করছে। এগুতে সাহস হোল না; হয়ত কোন রাজা মহারাজা গাড়ীতে উঠবেন, তারই জন্য তার সৈন্য সামন্তেরা নিরীহ যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। এই ভেবে রাজা-মহারাজার আগমন প্রতীক্ষায় একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলাম। তিন চার মিনিট হয়ে গেল, রাজা মহারাজা আর আসেন না। শেষে দেখি কিনা-একটা মশারি আসছেন। মশারির চার কোণা চারজন সিপাহী ধ’রে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন। আমি ত এ দৃশ্য দেখে অবাক-এ ব্যাপার ত পূর্ব্বে কখনও দেখি নাই। আমার পাশেই এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, “এমন করে একটা মশারি যাচ্ছেন কেন?” তিনি একটু হেসে বল্লেন, “আপনি বুঝি কখন মশারির যাত্রা দেখেন নাই? দেখছেন না কত সিপাহী-সান্ত্রী যাচ্ছে। বিহার অঞ্চলের কোন এক রাজা না জমীদারের গৃহিনী ঐ মশারির মধ্যে আবরু রা করে গাড়ীতে উঠতে যাচ্ছেন। বড় মানুষের বৌ কি আপনার আমার সুমুখ আর দশজনের মত যেতে পারেন; তাঁরা যে অসূর্যস্পশ্যা।” এই বলেই ভদ্রলোকটি হাসতে লাগলেন। আমি এই পর্দ্দার বহর দেখে হাস্য সংবরণ করতে লাগলাম না। হাঁ, এরই নাম পর্দ্দা বটে-একেবারে মশারি যাত্রা। আর একবার কি একটা যোগ উপলক্ষে গঙ্গা-স্নানের ব্যবস্থা ছিল। লোক-সমারোহ দেখবার জন্য এবং এ বৃদ্ধ বয়সে ব’লেই ফেলি, গঙ্গাস্নান করে পাপ মোচনের জন্যও বটে, বড়বাজারে আদ্য-শ্রাদ্ধের ঘাটে গিয়াছিলাম। তখন শীতকাল, স্নানের সময় অপরাহ্নে পাঁচটা। ঘাটে দাঁড়িয়ে লোক সমারোহ দেখছি, আর ভাবছি এই দারুণ শীতের মধ্যে কেমন করে গঙ্গাস্নান ক’রব। এমন সময় দেখি ঘেরাটোপ আগাগোড়া আবৃত একখানি পাল্কী ঘাটে এল। পাল্কীর চার কোণ ধ’রে চারজন আরদালী, আর পাল্কীর দুই দুয়ার বরাবর দুইটী দাসী। বুঝতে বাকী রহিল না যে কোন ধনাঢ্য ব্যক্তির গৃহিণী, বা কন্যা, বা পুত্রবধূ স্নান করতে এলেন। বড় মানুষের বাড়ীর মেয়েরা এমন আড়ম্বর ক’রে এসেই থাকেন, তাতে আশ্চর্য্যের কথা কিছুই নেই। কিন্তু তারপর যা দেখলাম, সে হাস্যরসের এবং করুণ-রসের একেবারে চূড়ান্ত। আমি মনে করেছিলাম গঙ্গার জলের কিনারে পাল্কী নামানো হবে এবং আরোহিণীরা অবতরণ করে গঙ্গাস্নান করে আসবেন। কিন্তু, আমার সে কল্পনা আকাশেই থেকে গেল। দেখলাম বেহারা মায় আরদালী দাসী দুইটী-পাল্কী নিয়ে জলের মধ্যে নেমে গেল। যেখানে গিয়ে পাল্কী থামলো, সেখানে বোধ হয় বুক-সমান জল। বেহারারা তখন পাল্কীখানিকে একেবারে জলে ডুবিয়ে তৎণাৎ উপরে তুললো। এবং তারপরেই পাল্কী নিয়ে তীরে উঠে এসে, যেভাবে আগমন, সেইভাবেই প্রতিগমন। আমার হাসি এলো পাল্কীর গঙ্গাস্নান দেখে; আর মনে কষ্ট হ’তে লাগল, পাল্কীর মধ্যে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অবস্থা স্মরণ করে। এই শীতের সন্ধ্যায় পাল্কীর মধ্যে মা-লক্ষ্মীরা ভিজে কাপড়ে হি-হি করে কাঁপছেন। এদিকে তাঁদের স্নান যা হোলো, তা তো দেখতেই পেলাম। এর নাম পর্দ্দা! সেন মহাশয় পাল্কীর “গঙ্গাস্নান” দেখিয়া হাসিয়াছেন। আমরা শৈশবে চিলমারীর ঘাটে ‘পাল্কীর ব্রপুত্র নদের স্নান’ শুনিয়া হাসিয়াছি। পরে ভাগলপুরে গিয়া পাল্কীর রেল ভ্রমণের বিষয় শুনিয়াছি। একবার একটি ত্রয়োদশ বর্ষীয়া নব-বিবাহিতা বালিকার শ্বশুর-বাড়ী যাত্রা স্বচে দেখিয়াছি; তাহা বেশ স্পষ্ট মনে আছে। ভাগলপুর প্রভৃতি স্থানে জুন মাসে রৌদ্র কিরূপ প্রখর হয়, তা সকলেই জানেন। জুন মাসে দিবা ৮ ঘটিকার সময় সে বালিকা নববধূকে মোটা বেনারসী শাড়ী পরিয়া মাথায় আধ হাত ঘোমটা টানিয়া পাল্কীকে উঠিতে হইল। সেই ঘোমটার উপর আবার একটা ভারী ফুলের “সেহরা” তাহার কপালে বাঁধিয়া দেওয়া হইল। পরে পাল্কীর দ্বার বন্ধ করিয়া জরির কাজ করা লাল বানাতের ঘেরাটোপ দ্বারা পাল্কী ঢাকা হইল। সেই পাল্কী ট্রেনের ব্রেকভ্যানের খোলা গাড়ীতে তুলিয়া দেওয়া হইল। এই অবস্থায় দগ্ধ ও সিদ্ধ হইতে হইতে বালিকা চলিল, তাহার শ্বশুর-বাড়ী-যশিদী!! [ ৪২ ] সেদিন (৭ই জুলাই ১৯৩১ সাল) জনৈকা মহিলা নিন্মলিখিত ঘটনা দুইটি বলিলেনঃ বহুবর্ষ পূর্ব্বে তাঁহার সম্পর্কের এক নানিজান পশ্চিম দেশে বেড়াইতে গিয়া ফিরিয়া আসিলেন। তিনি যথাসময়ে টেলিগ্রাফ যোগে তাঁহার কলিকাতায় পৌঁছিবার সময় জানাইয়াছিলেন। কিন্তু সেদিন তুফানে সমস্ত টেলিগ্রাফের তার ছিঁড়িয়া গিয়াছিল এবং কলিকাতার রাস্তায় সাঁতার-জল ছিল। সুতরাং এখানে কেহ নানিজানের টেলিগ্রাফ পায় নাই এবং হাবড়া ষ্টেশনে পাল্কী লইয়া কেহ তাঁহাকে আনিতেও যায় নাই। এদিকে যথাসময়ে নানিজানের রিজার্ভ-করা গাড়ী হাবড়ায় পৌঁছিল; সকলে নামিলেন জিনিষপত্রও নামান হইল কিন্তু পাল্কী না থাকায় নানিজান বোরকা পরিয়া থাকা সত্ত্বেও কিছুতেই নামিতে সম্মত হইলেন না। অনেকক্ষণ সাধ্য-সাধনের পর নানাসাহেব ভারী বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “তবে তুমি এই ট্রেনেই থাক, আমরা চলিলাম।” বেগতিক দেখিয়া নানিজান মিনতি করিয়া বলিলেন, “আমি এক উপায় বলিয়া দিই, আপনারা আমাকে সেইরূপে নামান।” উপায়টী এই যে, তাঁহার সর্ব্বাঙ্গে অনেক কাপড় জড়াইয়া তাঁহাকে একটা বড় গাঁটরীর মত করিয়া বাঁধিয়া তিন চারি জনে সেই গাঁটরী ধরাধরি করিয়া টানিয়া ট্রেণ হইতে নামাইল। অতঃপর তদবস্থায় তাঁহাকে ঘোড়ার গাড়ীতে তুলিয়া দেওয়া হইল। [ ৪৩ ] এক বোরকাধারিণী বিবি হাতে একটা ব্যাগ সহ ট্রেণ হইতে নামিয়াছেন। তাঁহাকে অন্যান্য আসবাব সহ এক জায়গায় দাঁড় করাইয়া তাঁহার স্বামী কার্য্যান্তরে গেলেন। কোন কারণবশতঃ তাঁহার ফিরিয়া আসিতে কিছু বিলম্ব হইল। এদিকে বিবি সাহেবা দাঁড়াইয়া অশ্রু বর্ষণ করিতে লাগিলেন। তাঁহার অস্ফুট ক্রন্দনধ্বনি শুনিয়া এবং শরীরের কম্পন দেখিয়া ক্রমে লোকের ভীড়ে হইল। লোকেরা দয়া করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “আপনার সঙ্গের লোকের নাম বলুন ত, আমরা তাঁহাকে ডাকিয়া আনি।” তিনি একবার আকাশে সূর্য্যের দিকে ইসারা করেন আর একবার হাতের ব্যাগ তুলিয়া দেখান। ইহাতে উপস্থিত লোকেরা কিছু বুঝিতে না পারিয়া হাসিতে হট্টগোল বাধাইয়া দিল। কিছুক্ষণ পরে এক ব্যক্তি হাঁফাইতে সেখানে দৌড়াইয়া আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইয়াছে? ভীড় কেন?” ঘটনা শুনিয়া তিনি হাসিয়া বলিলেন, “আমার নাম ‘আফতাব বেগ’, তাই আমার বিবি সূর্য্যের দিকে ইসারা করিয়া দেন আর হাতের বেগ (ব্যাগ) দেখাইয়াছেন।” [ ৪৪ ] জনাব শরফদ্দীন আহমদ বিক্স এক্স (আলীগড়) আজিমাবাদী নিন্মলিখিত ঘটনাত্রয় কোন উর্দ্দু কাগজে লিখিয়াছেন। আমি তাহা অনুবাদ করিবার লোভ সম্বরণ করিতে পারিলাম না। যথাঃ গত বৎসর পর্য্যন্ত আমি আলীগড়ে ছিলাম। যেহেতু সেখানকার ষ্টেশন একরূপ জাঁকজমকে ইক্স আইক্স আরক্স লাইনে অদ্বিতীয় বোধ হয়, সেই জন্য আমি প্রত্যহই পদব্রজে ভ্রমণের সময় ষ্টেশনে যাইতাম। সেখানে অন্যান্য তামাসার মধ্যে অনেকগুলি ১৩শ শতাব্দীর বোরকা আমার দৃষ্টিগোচর হইয়াছিল। আর খোদা মিথ্যা না বলান, প্রত্যেক বোরকাই কোন না কোন প্রকার কৌতুকাবহ ছিল। তন্মধ্যে মাত্র তিনটী ঘটনা এখানে বিবৃত হইল। প্রথম ঘটনা এই যে, একদিন আমি আলীগড় ষ্টেশনে প্লাট-ফরমে পায়চারি করিতেছিলাম, সহসা পশ্চাৎদিক হইতে আমার গায়ে ধাক্কা লাগিল। মুখ ফিরাইয়া দেখিলাম যে, এক বোরকাধারিণী বিবি দাঁড়াইয়া আছেন; আর আমাকে শাসাইয়া বলিতে লাগিলেন, “মিয়া দেখে চলেন না?” তাঁহার কথায় আমার প্রবল হাসি পাইল, কারণ তিনি ত আমার পশ্চাতে ছিলেন, সুতরাং দেখিয়া চলা না চলার দায়িত্ব কাহার, তাহা সহজেই অনুমেয়। আমি তাঁহাকে কেবল এইটুকু বলিলাম, “আপনি মেহেরবাণী করিয়া বোরকার জাল চক্ষের সম্মুখে ঠিক করিয়া নিন” এবং হাসিতে হাসিতে অন্যত্র চলিলাম। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৮:১৬
false
rg
`মা' আমার প্রথম উপন্যাস।। রেজা ঘটক `মা' আমার প্রথম উপন্যাস। ম্যাক্সিম গোর্কি'র `মা' (১৯০৬),পার্ল এস, বাকের `দ্য মাদার' (১৯৩৩), মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের `জননী' (১৯৩৫), শওকত ওসমানের `জননী' (১৯৫৮), আনিসুল হকের `মা' (২০০৩) ইত্যাদি অনেক উপন্যাস আছে। তবুও আমি কেনো আরেকটা `মা' লিখতে গেলাম? কারণ, এটা আমার দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনার অংশ। প্রথম উপন্যাস যেটা লিখবো সেটা হবে `মা'। দীর্ঘ দিন এই উপন্যাসের জন্য প্রচুর ঐতিহাসিক দলিল, অনেক বই, অসংখ্য তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। এই মা একজন সাধারণ বাঙালি। একজন সহজ সরল বঙ্গমাতা। বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তে যে কেউ এই মাকে খুব সহজে আবিস্কার করতে পারবে। এই মায়ের বারোটি সন্তান। কাকতলীয়ভাবে সেই সন্তানগুলো বাংলা বারো মাসের সঙ্গে জন্মগতভাবেই সম্পর্কযুক্ত। এই মায়ের সন্তান হারানো বেদনা আছে। স্বামী হারানোর একাকীত্ব আছে। স্বামী মারা যাবার পর যার একটি সন্তানও হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়া সন্তানের ফেলে যাওয়া কিছু ডায়েরি'র সন্ধান পাওয়ার পর সেই ডায়েরির পাতায় মা তার হারানো সন্তানকে খুঁজে পান। এই মা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন। '৪৩ ও '৭৪-এর দুর্ভিক্ষ দেখেছেন। দেশ বিভাগ দেখেছেন। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা দেখেছেন। বায়ান্ন, বাসট্টি, ঊনসত্তর, একাত্তর দেখেছেন। হারানো সন্তানের ডায়েরির পাতায় পাতায় সেই ঘটনাগুলো আবারো ইতিহাস পাঠের মতো উদ্ধার করেন এই মা। কী নেই সেখানে? ইতিহাস আছে। ভূগোল আছে। বিজ্ঞান আছে। রাজনীতি আছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আছে। রাজনৈতিক হত্যা আছে। রাজনৈতিক স্বার্থ আছে। জাতীয় নির্বাচন আছে। সত্তরের ঘূর্ণিঝড় গোর্কি আছে। ঘূর্ণিঝড় সিডর আছে। '৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা আছে। নেপালের রাজপরিবারের নিসংশ হত্যাকাণ্ড আছে। মহাত্মা গান্ধী থেকে রাজীব গান্ধীকে হত্যার ঘটনা আছে। কর্নেল তাহেরের ফাঁসি আছে। ইতিহাসের নানাবাকের অনেক ঘটনাই সেখানে আছে। একাত্তরে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ভারতের গোহাটি থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে বহির্বিশ্বের সাহায্যের জন্য যে ভাষণটি দিয়েছিলেন সেই ভাষণটি আছে। এছাড়াও আছে এই মায়ের দৈনন্দিন জীবনাচার, হাসি-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা। প্রতিবেশী গোয়ালিনীর মুখে রামায়ন-মহাভারত শোনার গল্প। প্রচলিত উপন্যাসের সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নীতি যদি থেকেও থাকে, এই উপন্যাসে তা একদম মানা হয়নি। কারণ, আমি আমার মতো করেই লিখেছি। এই উপন্যাস শুধু একটি পরিবারের গল্প নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বিগত সত্তর বছরের (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে ঘূর্ণিঝড় সিডর পর্যন্ত) ভূ-রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, আর্থ-সামাজিক চিত্র, রাষ্ট্রীয় উত্থান পতন সহ হাজারো ঘটনা'র এক আকড় এটি। এক বাক্যে খারিজ করার মতো হিম্মত কোনো সমালোচক দেখাতে দুঃসাহস যে পাবে না, তা হলোপ করেই বলতে পারি। `মা' উপন্যাসের প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী চারু পিন্টু। বইটি প্রকাশ পেয়েছে আল আমিন প্রকাশন থেকে। সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৫৭
false
mk
সরকারী কর্মকর্তা জড়িত যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত করে কিংবা প্রশাসনকে দলীয়করণের মাধ্যমে অনেক আগেই যে সর্বনাশা পথের সূচনা করা হয়েছিল, তারই সর্বশেষ সংস্করণ ছিল ২০০৬ সালের উত্তরা ষড়যন্ত্র। ২০১৪ সালে এসে আবার প্রকাশ পেল গুলশান ষড়যন্ত্রের কথা। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কোনোভাবেই দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার কথা নয়। চাকরিবিধি অনুযায়ীও তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তা সত্ত্বেও গত বুধ ও বৃহস্পতিবার কিছুসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কিভাবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বৈঠকের কথা অস্বীকার করা হচ্ছে এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরকে ভিত্তিহীন বলা হচ্ছে, কিন্তু প্রকাশিত খবরে নামধাম উল্লেখ করে কে কখন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢুকেছেন, তার উল্লেখসহ যেভাবে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বিএনপি নেতাদের এই দাবি ধোপে টেকে না। এর আগে ২০০৬ সালেও উত্তরায় রাতের গোপন বৈঠকের পর অপেক্ষমাণ ক্যামেরার সামনে মুখ ঢেকে কর্মকর্তাদের পালাতে দেখা গিয়েছিল। তার পরও বিএনপির পক্ষ থেকে সেই বৈঠকের কথা অস্বীকার করা হয়েছিল। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে এ ব্যাপারে গতকাল কালের কণ্ঠে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা থেকে জানা যায়, সেসব বৈঠকে সরকারের কাজকর্মে অসহযোগিতার মাধ্যমে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিকে কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তারই পরিকল্পনা হচ্ছিল। এটিকে অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা উচিত।গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকারের পরিবর্তন হবে, একেকবার একেক দল ক্ষমতায় আসবে। বাংলাদেশের নিকট অতীতও সে কথাই বলে। কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা একই থাকবে এবং দলনিরপেক্ষভাবে বিদ্যমান সরকারের সব কর্মসূচি এগিয়ে নেবে, আর তা করতে হবে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘদিন থেকেই আমরা তার ব্যত্যয় লক্ষ করে আসছি। দলীয়ভাবে যেমন নিয়োগ-পদোন্নতি হয়, তেমনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরাও দলীয় স্বার্থে কাজ করে থাকেন। তারই প্রমাণ গুলশানের অফিসে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৈঠক। বিএনপির কয়েকজন নেতা তা অস্বীকার করলেও প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বিএনপিরই অনেক নেতা এ ধরনের বৈঠকের খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে এ জন্য গুলশান অফিসের কিছু কর্মকর্তাকে দায়ী করেছেন। কেউ কেউ একে অপরিণামদর্শী কাজ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। তদুপরি আমরাও অবাক হই, যে স্তরের এবং যে মানের কর্মচারীদের নিয়ে এই বৈঠক হয়েছে, একাধিকবার ক্ষমতায় থাকা বিএনপির মতো একটি দলের কাছ থেকে তা কোনোক্রমেই আশা করা যায় না।প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের শৃঙ্খলাবিধি এতে গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের স্বার্থেই যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা আশা করব, রাজনীতিবিদরাও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা থেকে ভবিষ্যতে বিরত থাকবেন।
false
ij
‘হেরেমের কৃষ্ণাঙ্গ ইউনাখ’ খোজা। এক দল পৌরুষবর্জিত পুরুষকেই ইউনাখ বলা হয়; এবং এইরকম হীনবীর্য হয়ে যাওয়াটা এদের ইচ্ছেয় ঘটে নি। ইউনাখ-রা আসলে ক্ষমতাধর পুরুষদের স্বার্থের বলি। ক্ষমতাসীন পুরুষের অন্দরমহলে (বা হেরেমে) নারীদের বন্দিত্ব পাকাপোক্ত করতেই ইউনাখ নিযুক্ত করা হত। হেরেমে খোজাকৃত পুরুষের নিয়োগের কারণ সহজেই অনুমান করা যায়। নপুংসক এর প্রজনন ক্ষমতা নেই যে। আশ্চর্য এই যে ... কখনও কখনও বালকেরা কিংবা তরুণেরা স্বেচ্ছায় শিশ্নচ্ছেদকরাতে রাজী হত। কারণ? রাজপ্রাসাদে উচ্ছপদ লাভ করা! এই শিশ্নচ্ছেদ ঘটানো হত বয়োঃপ্রাপ্তির আগে বা পরে। এসব কারণেই ইউনাখ দের ইতিবৃত্ত বিচিত্র বলেই মনে হয় ... বাংলায় আমরা ইউনাখ দের বলি ‘খোজা’। খোজা শব্দটি উর্দু, পুরো শব্দটি হল খোজা সারাহ। তবে ইউনাখ কিংবা খোজাকৃত পুরুষরা যে শুধু মধ্যপ্রাচ্যে ছিল তা নয়- এদের প্রাচীন চিনের অভিজাত সমাজেও এদের বিশেষ ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। চিনে শিশ্নচ্ছেদ (castration) ছিল একাধারে শাস্তি এবং ইউনাখ করার অন্যতম পদ্ধতি। ষোড়শ সপ্তদশ শতকে সম্রাট কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ইউনাখ ছিল প্রায় ৭০,০০০! চৈনিক ইউনাখ। এই লেখায় কুড়ি শতকের এক চৈনিক বালকের শিশ্নচ্ছেদ-এর ভয়াবহ বর্ননা ফুটে উঠেছে ...Sun's impoverished family set him on this painful, risky path in hopes that he might one day be able to crush a bullying village landlord who stole their fields and burned their house...His desperate father performed the castration on the bed of their mud-walled home, with no anesthetic and only oil-soaked paper as a bandage. A goose quill was inserted in Sun's urethra to prevent it getting blocked as the wound healed...He was unconscious for three days and could barely move for two months...When he finally rose from his bed, history played the first of a series of cruel tricks on him -- he discovered the emperor he hoped to serve had abdicated several weeks earlier... তবে চিনে ইউনাখ-রা কখনও কখনও রাজনৈতিকভাবেও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। বিংশ শতকে চিনের অভিজাত সমাজে এদের ভূমিকা হ্রাস পায়। বন্দি নারীদের সামনে দু'জন ইউনাখ কেবল হেরেম পাহারা নয়, আসলে ইউনাখ -রা কাজ করত। যেমন প্রভূর বিছানা তৈরি, গোছল করানো, চুল কাটা, পালকি টানা। ইত্যাদি। ইংরেজি eunuch শব্দটির উদ্ভব হয়েছে গ্রিক শব্দ eune এবং ekhein থেকে। এর অর্থ - "যে বিছানার দেখাশোনা করে"। এই কারণে ইউনাখ এর হিব্রু প্রতিশব্দ ‘কারিক’-এর ইংরেজি তর্জমা করা হয়েছে ‘অফিসার’ এবং ‘চেম্বারলেইন।’ মানচিত্রে সুমেরিয় সভ্যতার লাঘাশ নগর। নীচে, ডান দিকে ... আমরা সুমেরিয় সভ্যতার কথা শুনেছি। সুমেরিয় সভ্যতায় লাঘাশ নামে একটি নগর ছিল। সে নগরের নথিপত্রে প্রথম ইউনাখ-এর কথা জানা গিয়েছে। তার মানে, ইউনাখ রা সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকেই প্রভাবশালী পুরুষের দাসত্ব করত! প্রাচীন গ্রিস ও রোমেও ইউনাখ ছিল; তবে প্রাচ্যের মতন এত প্রবল ভাবে নয়। মানচিত্রে প্রাচীন মিশর। প্রাচীন মিশরেও পুরুষের অঙ্গচ্ছেদ করা হয়। এবং তিনটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হত। (১) পুরুষ জননাঙ্গের অপসারন; (২) কেবল অন্ডকোষের অপসারন; এবং (৩) একত্রে পুরুষাঙ্গ ও অন্ডকোষের অপসারন। প্রাচীন মিশরের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে পুরুষ বন্দিদের অঙ্গচ্ছেদ করে ফারাও-এ কাছে উপস্থাপন করা হত। এ ছাড়া ধর্ষকেরও শাস্তিও ছিল অঙ্গচ্ছেদ। এবং প্রাচীন মিশরের রাজকীয় জেনানামহলে ইউনাখরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করত। প্রাচীন মিশরের ইউনাখ এবার মুসলিম বিশ্বের বাদশাদী হারেম-এর সঙ্গে ইউনাখ এর সম্বন্ধ আলোচনা করা যাক। আগেই বলেছিল বাংলায় আমরা ইউনাখ দের বলি খোজা, এবং এটি উর্দু শব্দ, পুরো শব্দটি হল খোজা সারাহ। খোজারা ছিল মূলত হারেমের প্রহরী ও ভৃত্য। হারেম শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ ‘হারাম’ থেকে। হারাম অর্থ (আমরা জানি) নিষিদ্ধ। তবে হারেমের একটি নিরীহ সংজ্ঞা এই রকম: “দি পার্ট অভ আ হাউজ সেট আপার্ট ফর দ্য ওমেন অভ দ্য ফ্যামিলি ইন মুসলিম কান্ট্রি।” আসলে আমরা জানি হারেমের সংজ্ঞা এত সাদামাটা না। কেননা হারেমের সঙ্গে জড়িত রাজাবাদশাগনের সুপ্ত কামনাবাসনা। যে কারণে আমরা বলি- মুগল হারেম। ‘মুগল হারেমের অন্তরালে’ নামে বাংলায় বিখ্যাত একটি বইই আছে । যে বইটি ছোটবেলায় লুকিয়ে পড়েছি। যা হোক। ইন্টারনেটে হারেমের একটি ভয়ানক সংজ্ঞাও পেলাম। “...দ্য কালেকশন অভ ওম্যান হু ওয়্যার এট ফ্রি ডিসপোজাল অভ দ্য মেল ওনার।” এতক্ষণে বিষয়টি বোঝা গেল! লেখক আরও লিখেছেন: “দ্য ওম্যান অভ দ্য হারেম ওয়্যার নট ওয়াইভস, বাট দেয়ার পজিশন ওয়াজ নট কম্পারাবেল টু দ্যাট অভ আ প্রসটিটিউস।” এবার আরও ভালো করে বোঝা গেল। আমাদের আলোচ্য খোজারা ছিল তুর্কি কি মুগল হারেমের প্রহরী ও ভৃত্য। তুর্কি হেরেম। হেরেম বলতে চোখে ভাসে অটোমান তুর্কি বাদশাদের হেরেম। যেমন ইস্তানবুলের তোপকাপি প্রাসাদ। সময়কাল ১৪৬৫/১৮৫৩। প্রাসাদটি ছিল খোজাদের অধীন। তুর্কিদের হেরেমে দু’ধরনের খোজা ছিল। (ক) কৃষ্ণকায়; ও (খ) শ্বেতকায় খোজা। কৃষ্ণকায়রা মূলত আফ্রিকার। কৃষ্ণকায়রা হেরেমের নারী, অন্যান্য কর্মকর্তা ও নিুশ্রেণির বাঁদিদের দেখাশোনা করত। ইস্তানবুলের তোপকাপি প্রাসাদের শ্বেতকায় খোজারা ছিল মূলত ইউরোপীয় বলকানের-এখনকার বুলগেরিয়া-রুমানিয়া। শ্বেতাঙ্গ খোজারা তোপকাপি প্রাসাদের বিদ্যালয়ের দেখভাল করত ... তবে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের পর এরা আর হেরেমের অভ্যন্তরে ঢোকার অনুমতি পায়নি। ওটোমান দরবারে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ছিল প্রধান কৃষ্ণকায় খোজার; এদের বলা হত-চিফ ব্ল্যাক ইউনাখ। চিফ ব্ল্যাক ইউনাখ ছিল হারেমের গুপ্তচর নেটওয়ার্কের কেন্দ্রে ... এবং যে কোনও ধরনের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। একটি তুর্কি হেরেম এর অভ্যন্তর ভাগ এবার এ প্রসঙ্গে বাংলা ও ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে চোখ ফেরানো যাক। ঐতিহাসিক সিরাজুল ইসলাম লিখেছেন, সংস্কৃতে লেখা নথিপত্র পাঠ করে জানা যায় প্রাচীন বাংলায় শাসকগন হিজড়াদের তাদের অন্দর মহল প্রহরার জন্য নিযুক্ত করত, কখনও খোজাকৃত পুরুষ নিয়োগ করত না। প্রাচীন ভারতেও ওই একই পথা ছিল। এই তথ্যটি আমাদের স্বস্তি দেয়। ঐতিহাসিকেরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন যে বাংলায় এবং ভারতবর্ষে তুর্কি-মুগল শাসনামলের আগে খোজা প্রথার অস্তিত্বই ছিল না। কাজেই তুর্কি-মুগলরাই ভারতীয় উপমহাদেশে এবং মধ্যযুগের বাংলায় খোজা প্রথার প্রবর্তন করে। বহুবিবাহ ও উপপত্নী (বাঁদি) ও হারেম ব্যবস্থা গড়ে ওঠার কারণে মুসলিম বিশ্বে খোজা ব্যবস্থারও উদ্ভব ঘটে। হারেমের নারীদের ওপর নজর রাখার জন্য খোজাকৃত পুরুষ প্রহরী নিয়োগ করা হত। সাধারণত রণাঙ্গনে বন্দি তরুণ সৈনিকদের খোজা করা হত। (মনে থাকার কথা প্রাচীন মিশরে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে পুরুষ বন্দিদের অঙ্গচ্ছেদ করা হত।) তাছাড়া দাস ব্যবসায়ীরা দাস বাজার থেকে স্বাস্থ্যবান ও সুদর্শন বালকদের খোজা করে ও প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে রাজকীয় ও অভিজাত হারেমে বিক্রি করত। মুগল হেরেম মুগল যুগে রাজকীয় হারেম বা জেনানামহলে খোজারা গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করত। এদের কারও কারও অবস্থান ছিল অনেক ওপরে। কোনও কোনও খোজা ছিল খেতাবধারী, বৃত্তিভোগী, যোদ্ধা ও মন্ত্রীদের পরামর্শদাতা। ভারতবর্ষে খোজাপ্রথা গড়ে ওঠে সম্ভবত সুলতানি আমলের গোড়ার দিকে। চিনা খোজাদের মতো এরাও গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করত। সুলতান আলাউদ্দীন খলজির (১২৯৬/১৩১৬) অন্যতম বিখ্যাত সেনাপতি ও ওয়াজির মালিক কাফুর ছিলেন একজন খোজা। দিল্লির খোজাদের মতো বাংলার অভিজাতবর্গের খোজারাও প্রশাসনে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে। এদেরই অন্যতম শাহজাদা ওরফে বারবক নামে এক খোজা ১৪৮৭ বঙ্গাব্দে বাংলার মসনদ দখল করে। বাংলার শাসক অভিজাতবর্গের হারেমগুলিতে দেশীয় ও বিদেশি বংশোদ্ভূত খোজারা প্রহরায় নিয়োজিত থাকত। সুবাহ বাঙালার বাংলার মানচিত্র। ষোড়শ / সপ্তদশ শতকের মুগল শাসিত সুবাহ বাংলা হয়ে উঠেছিল সমগ্র মুগল সাম্রাজ্যের জন্য খোজাদের শীর্ষ যোগানদার। ইউরোপীয় লেখকগন ও বিশিষ্ট মুগল ঐতিহাসিক আবুল ফজল আইন -ই -আকবরী গ্রন্থে এ তথ্য সমর্থন করেছেন । খোজা সরবরাহের একচেটিয়া বানিজ্য করত সিলেট ও ঘোড়াঘাটের সরকারেরা। ঠিক কখন বাংলা এই ব্যবসায় জড়ায় জানা যায়নি। তবে বাংলাই য খোজাদের অন্যতম উৎস ছিল, আধুনিক ঐতিহাসিকেরা স্বীকার করেন না। কেননা, ভারতবর্ষের যে কোনও স্থানেই খোজাদের “তৈরি” করা যেত এবং প্রয়োজনীয় শল্যবিদ্যা জানা ছিল । তথ্য : বাংলাপিডিয়া ও ইন্টারনেট। ছবি: ইন্টারনেট। বিশেষ দ্রষ্টব্য: ‘হেরেমের কৃষ্ণাঙ্গ ইউনাখ’- এই লেখার শিরোনামের জন্য এই বাক্যটি গ্রহন করেছি ২ জুন ২০১০ সালে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত সুবোধ সরকার রচিত একটি নিবন্ধ (দু’পায়ের নীচে দুই মহাদেশ ) থেকে। সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৫
false
ij
যে ফুলে নবীর জন্ম হয়_ লালনের কল্পনাশক্তির এক অনন্য দৃষ্টান্ত আমরা জানি লালনের নবীভক্তি নতুন কিছু নয়। ইসলামের নবীকে নিয়ে অজস্র গান রচেছেন লালন । নবীর তরিকাকে রুপকাঠের নৌকা বলে অবহিত করেছেন। যে নৌকা সহজে ডোবে না। এসব কথা আমরা কমবেশি জানি। কিন্তু, নবীর জন্ম হল কী ভাবে? সামান্য হলেও আমরা সে সব বৃত্তান্তও জানি। তবে নবীর জন্মসংক্রান্ত লালনের ব্যাখ্যাটি অন্যরকমের। একটি গানে তিনি নবীর জন্মবৃত্তান্ত ব্যাখ্যা করেছেন। বড় বিস্ময়কর সে ব্যাখ্যা। গভীর কাব্যধর্মী। লালন কবি বলেই সে ব্যাখ্যা গভীর কাব্যধর্মী। অতএব সে ব্যাখ্যা বোঝা আমাদের মতন সাধারণ্যের সাধ্যি কি! ডুবে দেখ মন দেলদরিয়ায় যে ফুলে নবীর জন্ম হয় সে ফুল তো সামান্য ফুল নয় লালন কয় যার মূল নাই দেশে। কী এর মানে? এবার গানটি পাঠ করি- এক ফুলে চার রং ধরেছে। ও সে ভাবনগর ফুলে কি আজব শোভা করেছে। মূল ছাড়া সে ফুলের লতা ডাল ছাড়া তার আছে পাতা এ বড় অকৈতব কথা কে পেত্যাবে কই কার কাছে। কারণ-বারির মধ্যে সে ফুল ভেসে বেড়ায় একূল ওকূল শ্বেতবরণ এক ভ্রমর ব্যাকূল সেই ফুলের মধুর আশে। ডুবে দেখ মন দেলদরিয়ায় যে ফুলে নবীর জন্ম হয় সে ফুল তো সামান্য ফুল নয় লালন কয় যার মূল নাই দেশে। তখন লালনের কল্পনাশক্তির অনন্যতার কথা বলছিলাম। এক ফুলে চার রং ধরেছে। ও সে ভাবনগর ফুলে কি আজব শোভা করেছে। কী এর মানে? তখন বলছিলাম লালন কবি বলেই সে ব্যাখ্যা গভীর কাব্যধর্মী। অতএব সে ব্যাখ্যা বোঝা আমাদের মতন সাধারণ্যের নাগালের বাইরে। গানটির ইংরেজী অনুবাদ কি আমাদের গানটির মর্ম বুঝতে সাহায্য করতে পারে? দেখা যাক। ২ প্রখ্যাত লালনগবেষক Carol Salmon - এর জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। পড়াশোনা করেছেন নিউইয়র্কের সিটি কলেজে। পরে স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা পেনসিলভেনিয়া ইউনিভারসিটিতে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক। বিয়ে করেছেন ১৯৭০ সালে। স্বামী ডক্টর রিচার্ড সলোমন। সংস্কৃত ভাষার পন্ডিত। ওয়াশিংটন ইউনিভারর্সিটির শিক্ষক। এই অসাধারণ গানটির ক্যারল সলোমনের অনুবাদ। Four colors in a single flower- How strangely beautiful that flower makes the city of love! The flower has a stem, but no roots; it has leaves, but no branches. This story is true. but who can I tell it to? Who would believe me? The flower floats from the bank in the waters of creation. A white bee hankers after its honey. O mind, dive into the Ocean of the flower from which the Prophet was born. Lalon says, Its roots are not in the ground. এবার কিছু বোঝা গেল কি? লালনভক্তরা আলোচনা করবেন কি? উৎস: আবুল আহসান চৌধুরী রচিত: “লালন সাঁইয়ের সন্ধানে।” সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪২
false
fe
সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি ও মৌলবাদের প্রতিপালকেরা সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি ও মৌলবাদের প্রতিপালকেরাফকির ইলিয়াস===================================আমি একজন শহীদের মাকে চিনি। দেশে থাকতে প্রতিটি বিজয় দিবসে আমি তাকে একগুচ্ছ ফুল উপহার দিতাম। সেই মা এখন ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আমেরিকায়। এই শেষ বয়সে শান্তিতে কিছুদিন কাটাতে চান। তাই তার মেঝ ছেলে তাকে ইমিগ্র্যান্ট করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এসেছেন। এখানে আসার পরও তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে আমার। গেলো সপ্তাহে এক পারিবারিক পুনর্মিলনীতে তার সঙ্গে আবারো দেখা হয়ে গেলো। আমাকে দেখেই বুকে জড়িয়ে ধরলেন। ‘বাবা, তুমি কেমন আছো?’ আমি জানতে চাই আপনি কেমন আছেন? বলেন- ‘বিদেশে কি ভালো থাকা যায়?’‘আচ্ছা বাবা, বর্তমান সরকার কি আলবদর-রাজাকারদের বিচার করতে পারবে?’ এই প্রশ্নটি করে শহীদমাতা আমাকে আবারো জড়িয়ে ধরেন। স্যাটেলাইটের কল্যাণে বাংলা টিভি চ্যানেল এখন আমেরিকার ঘরে ঘরে। তাই ঢাকার প্রতিদিনের সংবাদ এখন যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালির আলোচনার বিষয়। শহীদমাতা আমাকে জিজ্ঞাসা করতেই থাকেন। ‘এদেরকে কি শাস্তি দেয়া যাবে বাবা?’আমি তার তীব্র বেদনার কথা জানি। কারণ তার বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান রাজাকারদের হাতে ধৃত হয়েই নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন। এক গভীর রাতে শুধুমাত্র মাকে দেখার জন্যই বাড়িতে এসেছিলেন সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমাস আলী। কীভাবে এলাকার রাজাকার কমান্ডার কেরামত তা টের পেয়ে যায়। সে তার রাজাকার বাহিনী নিয়ে বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। তারপর সেই পরিচিত রাজাকাররাই আলমাস আলীকে ধরে নিয়ে যায়। শেষ যুদ্ধ যে আলমাস করেননি, তা কিন্তু নয়। এককভাবইে স্টেনগানের সবকটি গুলি শেষ করেছিলেন তিনি। হত্যাও করেছিলেন তিনজন রাজাকারকে। নিজের চোখের সামনে পুত্রের এমন নির্মম শেষ বিদায় ধারণ করে বড় শোকে বেঁচে আছেন এই শহীদমাতা। আবারো অশ্র“সিক্ত নয়নে বললেন, ‘আমার শেষ ইচ্ছা এ দেশে রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের বিচার হবে এবং সেটাই যেন দেখে যেতে পারি।’যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন সরগরম। প্রতিদিন বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য। সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে একটি সেমিনারের সংবাদ দেখলাম। এটির আয়োজক ছিল ‘কর্মজীবী নারী’ নামের একটি সংগঠন। এই সেমিনারে জামাতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পনেরোটি ভিডিও ক্যাসেট দেখানো হয়েছে। সাঈদী কিভাবে এ দেশের কর্মজীবী নারী সমাজকে কর্মহীন করা কিংবা থামিয়ে দেয়ার জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। তার বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন দেশের প্রগতিশীল মুক্তমনা বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিকরা। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. অজয় রায় বলেছেন, সাঈদীরা পর্দানশীনতার নামে মূলত রাষ্ট্রকে তালেবানি ধারার দিকেই ঠেলে দিতে তৎপর।রাজনীতিক হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, মনজুরুল আহসান খান প্রমুখ মৌলবাদী বিষবাষ্পের বিরুদ্ধে জাতিকে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানিয়েছেন উদার কণ্ঠে। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়-য়া বলেছেন, বর্তমান মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধীদের বিচার করবেই। নারীনেত্রী শিরিন আকতারের সভাপতিত্বে এই সেমিনারটি প্রমাণ করেছে জামাত নেতা সাঈদী কিভাবে ওয়াজের নামে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধকে তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন।দুই.দেশে গণহত্যার মূল নায়কদেরকে যখন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তখন একটি মহল এদেরকে বাঁচাতে বেশ তৎপর। কদিন আগে একটি টিভিতে প্রজন্ম ’৭১-এর নেতা, বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহীন রেজা নূরের একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার দেখেছি। তার একটি বিশেষ পরিচয় আছে। তিনি শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের পুত্র। শাহীন রেজা নূর খুব দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, এসব চিহ্নিত খুনি, বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়কদের একাত্তরের গণহত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হোক। আসামি করা হোক। আমরা জানি, বর্তমান সময়ে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার গণহত্যা হুকুমদাতা নায়কদের খোঁজা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। নাৎসিবাদী হোতাদের খোঁজার কাজ এখনো শেষ হয়নি। ইতিহাসের নির্মম একটি গণহত্যা ছিল একাত্তরের হত্যাযজ্ঞ। সেই নীল নকশার দালাল এবং হুকুমদাতারা শুধু নেপথ্যেই ছিল না, এরা নিজেরা প্রকাশ্যে গণহত্যার নেতৃত্ব দিয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কারা তাদের চিনিয়ে দিয়েছিল, ধরে এনেছিলÑ তা বর্তমান প্রজন্মের মোটেই অজানা নয়। এসব বিস্তারিত ইতিহাসের ইতিবৃত্ত আকরিক হিসেবেই রয়েছে। সম্প্রতি একাত্তরের নরঘাতকদের রিমান্ডে নেয়ার পর চৌকস গোয়েন্দা রাষ্ট্রের জনগণকে জানিয়েছেন এদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন কোনো কাজ নয় মোটেও। ভাবতে অবাক লাগে তারপরও দেশের ডানপন্থী রাজনৈতিক দল বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষেই অবস্থান নিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির স্যুট-টাই পরা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এসব কুখ্যাত রাজাকারদের পক্ষেই কথা বলছেন। অথচ পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত এই ব্যারিস্টারের জানা উচিত, বাংলাদেশে এসব জঙ্গি-তালেবানিরা মদদ পেয়ে প্রতিষ্ঠিত হলে তারা এক সময় মওদুদের স্যুট-টাইও খুলে নেবে। বলবে, টাই পরা হারাম। যে মৌলবাদীরা ‘নারী নেতৃত্ব হারাম’ ঘোষণা দিয়ে ওয়াজ করতো তারাই গাঁটছড়া বেঁধেছিল চারদলীয় জোট নেত্রীর সঙ্গে। এখন ক্রমশ বেরিয়ে আসছে এই মৌলবাদী জামাতি নেতৃত্বের যোগসাজশেই ১৭ আগস্ট গোটা দেশজুড়ে এক সঙ্গে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল।আমি একটা বিষয় ভেবে কূল পাই না, আর কতো হীনভাবে সত্যকে ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করবে ডানপন্থী দল বিএনপি। এই দেশে শায়খ রহমান বাংলা ভাইয়ের জঙ্গি দানবের সশস্ত্র অবস্থান থাকার পরও জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব স্বীকার করতে চায়নি খালেদা-নিজামীর জোট সরকার। এখন জেএমপির ভারপ্রাপ্ত নেতা সাঈদুর রহমান, দিন-তারিখসহ মুজাহিদ-নিজামীর সঙ্গে বৈঠকের কথা দেশবাসীকে জানাচ্ছে।বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী ছোট ছোট সংগঠনগুলো জামাতের বি সি ডি টিম। তা এই দেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা বারবারই বলে আসছেন। ড. হুমায়ুন আজাদ ছিলেন এই ভাষ্যের অন্যতম প্রবক্তা। তাই তার ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করা হয়। ড. আজাদ আক্রান্ত হওয়ার পর সাঈদী কী বক্তব্য দিয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা বর্তমান সময়ে খুবই জরুরি বিষয়।গোটা জাতি যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ তখন সেই মতলববাজ সামরিক ছাউনিতে বেড়ে ওঠা দলটিই নানা রকমের ভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বোকা বানাতে চাইছে। মনে রাখা দরকার এরা জাতির জনকের স্বঘোষিত খুনিদের বিচার রহিত করেছিল। সেটাও সাধন করেছে এই বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ। এবার রাজাকারদের বিচারকেও তেমনি সাহসিকতার সঙ্গেই সম্পাদন করতে হবে।বাংলাদেশে মওদুদীবাদী মৌলবাদীর সংখ্যা হাতেগোনা। তাই এরা নানাভাবে ধর্মীয় তমদ্দুন প্রতিষ্ঠার নামে শিকড় বিস্তৃতির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের অপতৎপরতা সম্পর্কে প্রজন্মকে সতর্ক থাকতে হবে।পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, বিডিআরের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাও নাকি ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডের’ কথা আগাম জানতো। মনে রাখা দরকার, যে দেশে গোয়েন্দা সংস্থা এমন জঘন্য পরিকল্পনার কথা জানার পরও তা রোধে এগিয়ে আসে না, সে দেশে অনেক অঘটনই সম্ভব। সরকারকে বিষয়গুলো গভীরভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। এই দেশে মৌলবাদের প্রতিপালকেরা নবরূপে আবির্ভূত হতেই থাকবে। সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি নিয়ে। এদেরকে প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমেই প্রজন্ম দাঁড়াতে পারবে শির উঁচু করে।----------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ । ঢাকা । ১৭ জুলাই ২০১০ শনিবার প্রকাশিত ছবি- মিশাল গর্ডন
false
ij
জিপসী কারা_ আধুনিক শিল্পীর আঁকা নৃত্যরত gypsies জিপসী মানেই নাচের দৃশ্য, একদল দলছুট মানুষ, থুড়থুড়ে জিপসী বুড়ি ভবিষ্যৎ বলে দেয়... উত্তর আমেরিকায় এক ধরনের জীবনধারাকে জিপসী বলে। জিপসীদের স্পেনে বলে গিটানো। ফ্রান্সে বলে জিটান। আসলে এরা কারা? অক্সফোর্ড ইংলিস ডিকশনারিতে জিপসি লিখেছে,"member of a wandering race (by themselves called Romany), of Hindu origin, which first appeared in England about the beginning of the 16th c. and was then believed to have come from Egypt". আমরা যাদের জিপসী বলি তারা নিজেদের বলে রোমানি। রোমানি শব্দটার মানে ওদের ভাষায় পুরুষ বা স্বামী। জিপসী বা রোমানিদের রোমাও বলে। পঞ্চদশ- ষোড়শ শতকে রোমানিদের ইউরোপে দেখা গেল। ১৫১৪ সালে শব্দটা প্রথম ইংরেজিতে ব্যবহৃত হয়। শেক্সপীয়ার ও স্পেনসার দুজনই জিপসী শব্দটা ব্যবহার করেছেন। ফরাসী লেখক ভিক্তর হুগোর লেখাতেও রোমানিদের কথা আছে। হুগো ওদের বলেছেন ঈজিপ্টাইন বা মিশরী। মিশর কেন? সেই সময় ইউরোপের লোকের বিশ্বাস মিশর থেকে এসেছে। এদের জীবন যাপন কেমন যেন। আর মিশর মানে আশ্চর্যজনক মমির দেশ। জিপসীদের পোশাক আশাক কেমন মিশরী মিশরী ... গল্প আরও ছড়ালো। জিপসীরা নাকি নবজাতক যিশুকে আশ্রয় দিয়েছিল। কাজেই মিশরের রাজা ওদের মিশর থেকে বিতাড়িত করেছে। জিপসীরা কি সত্যি সত্যিই মিশর থেকে ইউরোপে গিয়েছিল? দেখা যাক। ২ জিপসী বা রোমানিদের উৎপত্তিটা এখনও একটা ধাঁধা। ধাঁধার সমাধানের জন্য ২০০ বছর ধরে ভাষাবিশ্লেন করা হচ্ছে। আগেই বলেছি, আমরা যাদের জিপসী বলি তারা নিজেদের বলে রোমানি। জিপসীদের ভাষার নাম্র রোমানি। এই ভাষার সঙ্গে অবশ্য বলকানের রুমানিয় ভাষাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। ১৭৮২ সালে জোহান ক্রিশ্চিয়ান ক্রিসটোপ রুডিগের রোমানি ভাষা ও হিন্দুস্থানের ভাষার সঙ্গে প্রথম সাদৃশ্য লক্ষ করেন। তিনিই প্রথম বললেন, রোমানিরা এককালে ভারতবর্ষে ছিল! আগেই বলেছি, রোমানি শব্দটার মানে স্বামী। রাম শব্দটারও মানে স্বামী। রোমানিদের কাছে অ-রোমানি রা বরাবরই অস্পৃশ্য। এর কি কারণ? বৈদিক বর্ণভেদ? যা হোক। ১৭৮২ সালের পর থেকে ভাষাবিশ্লেষকরা লক্ষ করেছেন রোমানি ভাষার সঙ্গে মধ্য ও উত্তর ভারতের ভাষার যোগ ঘনিষ্ট। বিশেষ করে উত্তর ভারত ও পাকিস্থানের আঞ্চলিক ভাষার। রোমানি ভাষা আর পাঞ্জাবি ভাষার ব্যকরণ অভিন্ন। তা ছাড়া হিন্দি ভিলি গুজরাটি খানদেশি রাজস্থানী ভাষার সঙ্গে রোমানি ভাষার স ম্পর্ক ঘনিষ্ট। এই ভাষাগুলিই পশ্চিম ভারত বা দক্ষিণপূর্ব পাকিস্থানের আঞ্চলিক ভাষা। সিনতি রা হচ্ছে রোমানিদেরই একটা উপদল। ইউরোপে এদেরও জিপসী বলে। অনেকে বলে সিনতি রা আগে ছিল পাকিস্থানের সিন্ধু প্রদেশে। সিনতি ও সিন্ধু শব্দের মিল রয়েছে। ২০০৩ এ গবেষনায় দেখা গেছে রোমানি ভাষার সঙ্গে শ্রীলঙ্কা সিংহলি ভাষার দারুন মিল । Further evidence for the Indian origin of the Roma came in the late 1990s when it was discovered that Roma populations carried large frequencies of particular Y chromosomes (inherited paternally) and mitochondrial DNA (inherited maternally) that otherwise exist only in populations from South Asia. ইতিহাসে কত কি যে আজও আবিস্কারের অপেক্ষায় রয়েছে। যতই এর চর্চা করছি-ততই অবাক হচ্ছি। ৩ জিপসীদের সম্বন্ধে বাইরে থেকে আমাদের ধারনা যাই হোক না কেন-আসলে এ দের জীবনযাত্রা ঠিক কেমন? এই প্রশ্নটা মনে হতেই পারে। এর উত্তরে বলি-এরা অতিমাত্রায় পরিবার কেন্দ্রীক। পরিবারে মুরুব্বীরা অশেষ সম্মান পান। কম বয়েসে বিবাহ করে জিপসীরা। অনেক মেয়েরই ১২/১৩ বছরে বিয়ে হয়ে যায়। নারীবাদীরা কি বলবেন? বরকনের মা-বাবারা বিয়ে ঠিক করে। এরা বিশ্বাস করে বিবাহ দুটি পরিবারের বন্ধন দৃঢ় করে। কথাটা ঠিকই আছে। A strict sexual morality prevails among most Roma. It is common for unmarried girls to be chaperoned in the presence of males who are not part of their extended family. A number of groups maintain the institution of bride-price, a payment made by the family of the groom to that of the bride. The payment compensates the bride’s family for the loss of their daughter and guarantees that she will be well-treated by her new family. সন্দেহ নাই-এরা এককালে ভারতেই ছিল! ইউরোপের শিল্পের ইতিহাসে এদের ভূমিকা ব্যাপক। Roma fortune tellers, dancing bears, and caravans enliven European literature and folklore. Many Roma traditionally worked as musicians and entertainers, and Romani influence has been particularly strong in the field of music. Romani folk music has inspired many of Europe’s greatest composers, including Hungarian composers Béla Bartók, Franz Liszt, Zoltán Kodály; Georges Bizet of France; and Romanian composer Georges Enesco. The popular flamenco song and dance of Spain were originated by the Roma and still retain a distinctive Romani spirit. Romani musical traditions continue to flourish in many parts of Eastern Europe, especially in Romania, Bulgaria, and Slovakia. এরা প্রায় সবাই ঐতিহ্যবাহী পেশায় জড়িত। যেমন, ধাতুর কাজ, কামারশিল্প, পশু পালন, ক্ষুদ্র ব্যবসা। জ্যোতিষ এদের অন্যতম পেশা। এ ছাড়া, ভেষজ কাঠের কাজ, ঝুড়ি তৈরি করাও এদের জীবিকা। ৪ রোমানিরা ভারত ছাড়ল কেন? জানা যায়নি। তবে ৫ম শতক থেকেই ভারত ছেড়ে পশ্চিমে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ শতকে মুসলিম আক্রমনের পর বড় একটা দল ভারত ছাড়ে। আফগানিস্থান-ইরান হয়ে তারপর তারা পৌঁছে এশিয়া মাইনর। ওখান থেকে বলকান। ১৪ শতকে গ্রিস হয়ে ইউরোপে যায়। ১০০ বছরে ইউরোপে যায়। তখন বললাম, ১৫১৪ সালে জিপসী শব্দটা প্রথম ইংরেজিতে ব্যবহৃত হয়। শেক্সপীয়ার ও স্পেনসার -দুজনই জিপসী শব্দটা ব্যবহার করেছেন। ১৬ শতকের মধ্যেই ব্রিটেন ও স্পেন চলে যায় তারা। প্রথম প্রথম নাকি ভালোই অভ্যর্থনা জুটেছিল রোমানিদের। জিপসীরা নাকি নবজাতক যিশুকে আশ্রয় দিয়েছিল মিশরে থাকার সময়। মিশরের রাজা ওদের বিতাড়িত করেছে। যিশু ইউরোপজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়। কাজেই জিপসীদের অর্ভ্যথনা ভালোই হওয়ার কথা। পরে অবশ্য ইউরোপীয়রা জিপসীদের রক্ষণশীলতার জন্য ওদের ওপর ভয়ানক ক্ষেপে ওঠে। আগেই বলেছি, রোমানি শব্দটার মানে স্বামী। রাম শব্দটার মানেও স্বামী। এদের কাছে অ-রোমানি রা বরাবরই অস্পৃশ্য। এর কারণ কি বৈদিক বর্ণভেদ? তারা কি ইউরোপে ভারতীয় স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য বোধ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল? যে বোধ আজও অনেককেই পীড়িত করে ... যাক। মুসলিম শাসনে অবশ্য স্পেনে ভালো ছিল তারা। ১৪৯২ সালে খ্রিস্টানরা দখল করলে অবস্থা বদলে যায়। Between 1499 and 1783 the Spanish government enacted at least a dozen laws prohibiting Romani dress, language, and customs. In France the first official repression of Roma occurred in 1539 when they were expelled from Paris. In 1563 the Roma were commanded to leave England under the threat of death. Beginning in the 15th century, Hungarian and Romanian nobles, who needed laborers for their large estates, forced many Roma into slavery. In Romania the enslavement of Roma did not end until 1855. জিপসীরা ভয়াবহ সময়ের মুখোমুখি হল, ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময়। নাৎসীরা বলল, জিপসীরা অনার্য। এদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে। ৫ লক্ষ রোমানি নাজী ডেথ ক্যাম্পে প্রাণ হারাল। যুদ্ধের পর পূর্ব ইউরোপের কমিউনিষ্ট শাসকরা জিপসীদের নির্দেশ দিল মূলধারায় মিশে যেতে। তাই কি আর হয় নাকি? চাকমাদের বাঙালি হয়ে যেতে বললেই চাকমারা বাঙালি হয়ে যাবে নাকি! সবাই স্বাতন্ত্র্য নিয়ে বাঁচুক। দেখতে হবে কারও ক্ষতিকর প্রথা -বিশ্বাস যেন অন্যকে পীড়িত না করে। যাক। ৮০ এবং ৯০-এর দশক থেকে ইউরোপে আবার রোমানিবিরোধী মনোভাব চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। জীবনযাপন হুমকীর মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। শিল্পায়নের নামে চারণভূমি থেকে উৎখাত করা হচ্ছে। ৫ The Roma, however, have been increasingly active in political and cultural movements to establish their rights and preserve their heritage. In 1979 the United Nations (UN) recognized the Roma as a distinct ethnic group. The International Romani Union, a non-governmental organization, represents the world’s Roma at the UN. Other organizations, such as the Union Romani of Spain and Phralipe of Hungary, campaign for civil rights in specific countries or regions. বিশ্বে এখন রোমানি জনসংখ্যা প্রায় ১৫ মিলিয়ন। বলকান উপদ্বীপে সবচে বেশি। তারপর মধ্য ইউরোপে। স্পেন ফ্রান্স ইতালি রাশিয়া ইউক্রেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জিপসীরা রয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কে ও উত্তর আফ্রিকায়। উত্তর আফ্রিকায় তারা যায় কলোনিয়াল সময়ে। ১৯ শতকে আমেরিকা কানাডা। আমেরিকায় এরা গিয়েছিল বলকান ও রাশিয়া থেকে। আমেরিকায় ১৯৩০ অবধি গ্রামীন এলাকায় ঘুরে বেড়াত। অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার পরে পূর্ব পশ্চিম উপকূলে বসতি স্থাপন করে জিপসীরা। তথ্য সূত্র: http://en.wikipedia.org/wiki/Romani_people How to cite this article: "Roma (people)." Microsoft® Student 2008 [DVD]. Redmond, WA: Microsoft Corporation, 2007. Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved. সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩১
false
ij
গানের ভিতরে শ্লোগান_ বৃষ্টিতে ভেজার অধিকার চাই ___ ব্ল্যাক। এরা এখন আর একসঙ্গে নেই। একটা সময়ে ছিল। এক সঙ্গে থাকবার শপথ নিয়েই “ব্ল্যাক”-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। সে শপথ কবে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে গেছে। মানুষ,দেখেছি, অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই কি নিয়তি শব্দটায় তার এত বেশি কৌতূহল? যেহেতু আমি ওদের চেয়ে বয়েসে অনেকই বড় তাই আমার "পলিটিকাল ইডিওলজি" ওদের থেকে পৃথক হতে বাধ্য। তারপরও সেই ২০০০ কি ২০০২ সালে আমার ইতিহাস চেতনা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার গানের ভিতরে ঠিক উঠে আসছিল না। জন প্রায় প্রতিদিনই আসছে। গান লিখছি। প্রেমের গান; বিরহের গান। আমাকে জাগিয়ে একা কেন ঘুমালে? আমাকে এড়িয়ে তোমার তোমার আকাশে কবে ফুল ঝরেছে বল? ইত্যাদি। তাই ভাবলাম। আমার লেখা গানে কি ইতিহাস থাকবে না? জন-তাহাসানরা তো রাজনৈতিকচেতনাশূন্যতা নিয়েই বড় হয়েছে যেহেতু ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছে ওরা; কিন্তু আমার রাজনৈতিক হাতেখড়ি হয়েছিল কমরেড মঞ্জুরুল ইসলাম খানের কাছে যেহেতু একই পাড়ায় থাকতাম। এসব প্রশ্নে যখন আমি বহুধা বিভক্ত-ঠিক তখনই লিখলাম:“ডাক।” একদিন বলেছিলে বন্ধু বৃষ্টি ভালোবাস। চল না ভিজে যাই আজ বিকেলে। একদিন বলেছিলে বন্ধু মিছিলে যাবে। চলনা রাত জাগি সংগ্রামে। তা হলে এসব কথা মানে কী যদি না ভাঙ্গতে পার ইতিহাস? যদি না গাইতে পার তুমি পুরনো গানটাকে অস্বীকার করে! পুরনো পথ ছিল ঢাকা মুখোশে। কাঠের সিঁড়িতে ছিল রক্তের দাগ! ও পথে হেঁটো না বন্ধু কিছু পাবে না দেখ লক্ষ শিশু কাঁদে তোমার অপেক্ষায়। তা হলে এসব কথা মানে কী যদি না ভাঙ্গতে পার ইতিহাস যদি না গাইতে পার তুমি পুরনো গানটাকে অস্বীকার করে ছোটবেলায় একটা উচ্চ্ছ্বল কিশোরী মেয়েকে ভীষন বকুনি খেতে দেখেছিলাম। কিশোরীর দোষ? ও বৃষ্টিতে ভিজেছিল। সেই প্রতিবাদই উঠে এল বহুদিন পর- একদিন বলেছিলে বন্ধু বৃষ্টি ভালোবাস। চল না ভিজে যাই আজ বিকেলে। ( বিকেলে যে বৃষ্টি ঝরবেই -কবির এমনই প্রত্যয়!) অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে হয়। মিছিল করতে হবে। দেওয়ালে রাত জেগে চিকা মারতে হয় -মানে দেওয়াল লিখন লিখতে হয়। তাই সেই বকুনি খাওয়া মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে লিখলাম- একদিন বলেছিলে বন্ধু মিছিলে যাবে। চলনা রাত জাগি সংগ্রামে। (মানে রাত জেগে চল দেওয়াল লিখন লিখি। মানে চিকা মারি। বৃষ্টিতে ভেজার অধিকারের কথা লিখি।) তা হলে এসব কথা মানে কী যদি না ভাঙ্গতে পার ইতিহাস? (সেই মেয়েটাকেই বললাম।) যদি না গাইতে পার তুমি পুরনো গানটাকে অস্বীকার করে! পুরনো গান লালন-রবীন্দ্রনাথ নয়। সামন্তবাদ। রক্ষণশীলতা। ছিঃ একটা মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে। পুরনো পথ ছিল ঢাকা মুখোশে। (সামন্তবাদী ভন্ডামী। রক্ষণশীলতা। নারীকে বন্দি করে রাখত) কাঠের সিঁড়িতে ছিল রক্তের দাগ! (১৯৭৫! আমাদের বদলে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল) ও পথে হেঁটো না বন্ধু কিছু পাবে না। (রক্ষণশীল ভন্ডামীর পথে না হাঁটাই ভালেঅ) দেখ লক্ষ শিশু কাঁদে তোমার অপেক্ষায়। (অনাগত মেয়েশিশুরাও যেন বৃষ্টিতে ভিজতে পারে ...) গানটা জন কেমন করুণ ব্লুজ ব্লুজ সুর কর। তিন মাত্রায়। আর, জাহান যে লিড বাজালো ...ও অক্ষয় হয়ে রইল। এভাবেই ডাক গানটা আমার রাজনৈতিক অঙ্গীকার ধরে রেখেছে। আমি কিশোরীদের বৃষ্টি তে ভেজার অধিকারের পক্ষে! http://www.mediafire.com/?n42nmynx24n সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৫৫
false
rg
১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস !!! মজিদ খানের কথা মনে আছে? স্বৈরাচার এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খান? ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানের বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে রাজধানী ঢাকায় জড়ো হয়েছিল ছাত্র-জনতা। তখন গোটা বাংলাদেশে একটাই শ্লোগান ছিল- 'চলো চলো ঢাকা চলো, মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল করো, করতে হবে'। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে শুধু ঢাকা মহানগরে সেদিন ১০ জন নিহত হয়, পুলিশের গুলিতে আহত হয় শতাধিক ছাত্র-জনতা। প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি আসলেই আমাদের সেদিনের সেই রক্তাক্ত ইতিহাসের কথা মনে পড়ে। জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন। গণগ্রেফতার ও পৈশাচিক নির্যাতনের মাধ্যমে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে এরশাদের জারী করা সামরিক শাসন মেনে নিতে বাধ্য করেন। কিন্তু দেশের ছাত্ররা তখন স্বৈরাচার পতনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। সরকার গঠনের শুরু থেকেই স্বৈরাচার এরশাদ ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন। যার প্রতিফলন পড়তে থাকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায়। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পরপরই স্বৈরাচার এরশাদ প্রবর্তিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খান নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। নতুন এই শিক্ষানীতি প্রণয়নের সাথে সাথে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হয়। শিক্ষাখাতের সরকারি ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়া হয়। যার ফলে শিক্ষাব্যয় বাড়তে থাকে।শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধিতে দেশের ছাত্রসমাজ একযোগে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেয়। ১৯৮২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসে মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ছাত্রসমাজ আন্দোলন শুরু করে। সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে তখন গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়। সাথে সাথে চলে সারাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনমত গড়ে তোলার কাজ। ছাত্রদের এই কর্মকাণ্ডকে দমন করতে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ নেতা ও তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি খন্দকার মোহাম্মদ ফারুককে পুলিশ গ্রেফতার করলে ছাত্ররা আরো ফুঁসে ওঠে। তখন ১৯৮৩ সালের ২৭ ও ২৮শে জানুয়ারি সারাদেশে একযোগে ছাত্রধর্মঘট ও ১৪ই ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়।পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী, সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির মিছিলটি সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু হাইকোর্ট গেট ও কার্জন হল এলাকায় আগে থেকেই পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। পুলিশি বাধায় মিছিলটি আর সামনে এগোতে না পারায় মিছিলের সম্মুখে থাকা শতাধিক ছাত্রী ও সাধারণ ছাত্ররা তখন রাস্তায় বসে পড়ে এবং ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে ছাত্রদের উপর বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে এবং সরকারি রায়ট কার রঙ্গিন গরমপানি ছিটাতে থাকে। ছাত্ররা তখন পুলিশের দিকে পাল্টা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। ছাত্রদের ইট-পাটকেলের জবাবে পুলিশও ছাত্রদের মিছিলে অতর্কিত গুলি বর্ষণ করতে থাকে। পুলিশের গুলিতে সেদিন গুলিবিদ্ধ হন জয়নাল নামের এক ছাত্র। পুলিশ পরে তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। পুলিশের অতর্কিত হামলায় সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় দীপালী সাহা নামে এক শিশু। পরবর্তী সময়ে তার লাশ গুম করে ফেলা হয়। একই দাবিতে চট্টগ্রামে সেদিন মিছিল চলাকালে নিহত হয় কাঞ্চন নামে এক যুবক। পুলিশের নির্বিচার গুলিতে সারাদেশে সেদিন কমপক্ষে ১০ জন ব্যক্তি নিহত হন।সেদিন পুলিশ শুধু মিছিলে গুলি চালিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। নির্যাতন ও হয়রানি চলতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে। পুরো ক্যাম্পাস আর্মি-বিডিআর, পুলিশ দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। এরপর চলতে থাকে গণ-গ্রেফতার। সেদিন পুলিশের হাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকও রেহাই পাননি। প্রায় দুই সহস্রাধিক ছাত্রশিক্ষককে সেদিন গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এতকিছুর পরও আন্দোলন দমাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ১৯৮৩ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার এরশাদ সরকার মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন স্তগিত ঘোষণা করেছিল। কী ছিল মজিদ খানের শিক্ষানীতিতে?মজিদ খানের শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক স্তর থেকেই বাংলার সঙ্গে আরবি ও ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। শিক্ষাব্যয়ের পঞ্চাশ ভাগ ব্যয় শিক্ষার্থীর পরিবারকে বহন করতে বলা হয়েছিল। মজিদ খানের শিক্ষানীতি ছিল আমাদের ভাষা আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী এবং পশ্চাৎপদ ও উপনিবেশিক সংস্কৃতির এক জ্বলন্ত আগ্রাসন। শিশুদের জন্য অবশ্যম্ভাবীভাবে তা হতো নিপীড়নমূলক। বুকের রক্ত দিয়ে, নিজেদের জীবন দিয়ে সেদিন ছাত্র-জনতা শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে ভাষা সংস্কৃতি রক্ষায় রুখে দাঁড়িয়েছিল। স্বৈরাচার এরশাদ সরকার ও প্রশাসনকে ছাত্রসমাজ সেদিন বাধ্য করেছিল এই বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতি স্থগিত করতে। ১৪ ফেব্রুয়ারির সেই আন্দোলন বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য কারণ, এই আন্দোলনই ছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রথম বিস্ফোরণ। এরপর গোটা আশির দশকজুড়ে প্রতি বছর এই দিনটি 'স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস' হিসেবে পালিত হয়েছে এবং এরশাদবিরোধী আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তখন আওয়ামীলীগ, বিএনপি, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, বাম প্রগতিশীল ছাত্র ও রাজনৈতিক দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে আলাদা আলাদা কর্মসূচি দিয়ে দিবসটি পালন করতো এবং সংবাদ মাধ্যমগুলোও এর পক্ষে তখন প্রচার চালাতো।ছাত্রজনতার ধারাবাহিক আন্দোলনের চূড়ান্ত ফসল হিসাবে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর দেশে আবার সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃযাত্রা ঘটে। কিন্তু সেই গণতন্ত্রে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি। আমরা দেখেছি নব্বই পরবর্তী সামরিক স্বৈরাচারের স্থানে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সংসদীয় স্বৈরাচার শাসকগোষ্ঠী। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে করা আন্দোলন ও জনগণের আত্মদানের ফসল ঘরে তুলেছে সামন্তবাদের রক্ষক ও সাম্রাজ্যবাদের সেবক-দালাল রাজনৈতিক দলগুলো। জনগণের আন্দোলন, সংগ্রাম ও আত্মদানের ফসল শাসক শ্রেণীরা নিজেদের শাসনক্ষমতা বিকাশের স্বার্থে ব্যবহার শুরু করে। স্বার্থসিদ্ধি হয়ে গেলেই ক্ষমতাসীন শ্রেণীই জনগণের সঙ্গে নতুনভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করে জনগণের উপর চালু করে নতুন শোষণমূলক ব্যবস্থা। শোষণ টিকিয়ে রাখতে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য আইন, প্রথা, ভাষা, সংস্কৃতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে শোষণের অনুকূলে প্রবাহিত করতে তৎপর হয়। বর্তমান সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশ্নপত্র ফাঁস, নম্বরপত্রে শিক্ষকদের বেশি নম্বর দেওয়ার হিরিক, সেই দুঃশাসনেরই জীবন্ত রূপ। নব্বই-উত্তর ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠী তাদের সংসদীয় স্বৈরাচার ব্যবস্থা অটুট রাখতে স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে জনগণের সেই অর্জনগুলোকে আড়াল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তারই অংশ হিসেবে এদেশে আমদানি হয়েছে 'বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে'। ১৯৯২ সালে যায় যায় দিন সম্পাদক শফিক রেহমানের নেতৃত্বে এটি এদেশে আমদানি ও বাজারজাতকরণের কাজ শুরু হয়। সে বছর অমর একুশে বইমেলায় শফিক রেহমান একটি ছোট্ট এক ইউনিটের স্টল নিয়ে বাংলা একাডেমির পুকুর পাড়ে বসেছিলেন। বইমেলায় আগত বইপ্রেমীদের সেদিন একটি গোলাপ আর একটি যায়যায়দিন ধরিয়ে দেন শফিক রেহমান আর তার স্ত্রী তালেয়া রেহমান। সেই থেকে বাংলাদেশে 'বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে' পালনের শুরু। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের অর্জনগুলোকে আড়াল করার কৌশল হিসাবে সেই থেকে দীর্ঘ এই ২৪ বছরের নিরন্তর প্রচারে ও চর্চায় শাসকগোষ্ঠী বেশ সফলভাবেই ছাত্রজনতার স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের নাম ভুলিয়ে দিতে কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির সেই রক্তাক্ত ফেব্রুয়ারিকে ভুলিয়ে দিতেই শাসকগোষ্ঠী এই কাজটি খুব সচেতনভাবেই এখনো করে যাচ্ছে। এ বছর ঢাকার একজন নির্বাচিত মেয়র সাঈদ খোকন ১৪ ফেব্রুয়ারিকে আরো নতুন মোড়ক দেবার চেষ্টা চালিয়েছেন। নগরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর নামে এটি আসলে সেই ১৪ ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ইতিহাসকে আড়াল করার একটি সুস্পষ্ট স্বৈরাচারী কৌশল। সারা বিশ্বে ১৪ ফেব্রুয়ারি 'বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে' পালিত হলেও বাংলাদেশে ১৪ ফেব্রুয়ারি মানে 'স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস'। বর্তমান শাসক গোষ্ঠীও ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই দিবসকে 'স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস' হিসাবে পালন করেছে। কিন্তু এখন তারা কৌশলে সেই ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চায়। কারণ এখন তাদের দুঃশাসনকে আড়াল করার জন্য জনগণকে অন্যদিকে ব্যস্ত রাখার এটি একটি কৌশল। যা সুস্পষ্টভাবে জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করার সামিল। 'স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস'-এ নতুন স্বৈরাচারের সকল অনিয়মকে স্মরণ করাই হবে যৌক্তিক এবং নৈতিক প্রতিবাদ। যুগে যুগে দেশে দেশে স্বৈরাচার আসে শাসকের নামে। সাহসী জনতাই সেই স্বৈরাচারের আবার পতন ঘটায়। এটাই ইতিহাসের নিয়ম। আজ যারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযাত্রী, তাদের কাছে এখন লুটপাট, চুরি-চামারির সময়। তাদের এখন এসব ইতিহাস মনে পড়ার কথা নয়। কিন্তু ক্ষমতার বাইরে গেলেই এরাই আবার এই দিবসকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে নানান কিসিমের আয়োজনে মত্ত হয়। পাছে ছাত্রজনতার অর্জনগুলো নিয়ে শাসকশ্রেণীর এই ব্যবসাটি কেবল চলতেই থাকে। পাঠক, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেনটাইনস ডে'র সাথে আপনার ইতিহাস ও রক্তাক্ত গৌরবকে গুলিয়ে ফেললে আপনিও হয়ে যাবেন জাতীয় বেঈমান। ইতিহাস কখনো জাতীয় বেঈমানদের ক্ষমা করে না। ইতিহাসই তার সাক্ষ্য দেয়। অতএব সাধু সাবধান।.......................................১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:০৫
false
mk
বিএনপির অবাস্তব নির্বাচন কমিশন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে বিএনপি’র দেওয়া প্রস্তাবনা খুবই অস্পষ্ট এবং দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়। তাদের রূপরেখায় উল্লেখ আছে, ‘সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সত্, নিরপেক্ষ, অভিজ্ঞ, প্রজ্ঞা এবং নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন’ পাঁচজন ব্যক্তিকে দিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে। তবে প্রস্তাবে যত সহজে তা বলা হয়েছে, বাস্তবে কিন্তু তা অনেক জটিল। নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে যতদিন পর্যন্ত সবাই একমত না হবেন, ততদিন পর্যন্ত আলোচনা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আলোচনা কতদিন চলবে। প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ ও যোগ্য ব্যক্তি যাদেরকে নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করার কথা হচ্ছে, তারাই আবার প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ অর্থাত্ নানা গুণে গুণান্বিত লোককে খুঁজে বের করবেন। কিন্তু এতো কিছু না করে সার্চ কমিটির পাঁচজনই তো নির্বাচন কমিশনার হতে পারতেন। কাজেই পর্যালোচনা করলে বিএনপি’র এই পুরো প্রক্রিয়ার মাঝে অনেক জটিলতা রয়েছে। তবে বিএনপি’র প্রস্তাবের ভালো দিক হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুপস্থিতি। নির্বাচন এলেই আমাদের এখানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আলোচনা বা দাবির ঝড় ওঠে। বিএনপি এবার সে দাবি থেকে সরে এসেছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত। বিএনপি’র প্রস্তাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি না আসা একটি শুভবুদ্ধির উদয়। কিন্তু বিএনপি’র প্রস্তাবে নেতিবাচক দিক হচ্ছে, অত্যন্ত সুকৌশলে জামায়াতকে রক্ষা করার চক্রান্ত। এর চাইতেও মারাত্মক বিষয় হচ্ছে আরপিওতে পরিবর্তন। গত ৪০ বছরের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার গুরুত্বপূর্ণ অবদান হচ্ছে সেনাবাহিনীকে রাজনীতি মুক্ত করা। বিশেষ করে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে নিয়ে আসা। এর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন যাবত্ জিয়াউর রহমান, হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজনীতি করেছেন। কাজেই বিএনপি যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে ফের রাজনীতিকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের সেনাবাহিনীকে নানাভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর যেভাবে কাজ করার কথা ছিল, তা নানা সময় সামরিক শাসকরা বিতর্কিত করেছেন। এক সময় মনে করা হত উর্দু, পাকিস্তান, বিএনপি এবং সেনাবাহিনী একাকার। এ থেকে বের হয়ে আসার পথ জননেত্রী শেখ হাসিনাই দেখিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে নতুন দিকের উন্মোচন হয়েছে।সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচনকালীন নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করবে- এটা কর্তব্য। তবে সেই কর্তব্য আরো বিস্তরভাবে আলোচনা হওয়া দরকার। নির্বাহী বিভাগ কিভাবে দায়িত্ব পালন করবে এবং সহায়তা করবে। আমাদের এখানে নির্বাচনী আইন-কানুন অন্যান্য দেশের তুলনায় উত্তম। আমাদের এখানে যখনই কোনো নির্বাচন হয়, তখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনার অনেক অভিজ্ঞ। আমরা যাদেরকে ভালো নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দাবি করি, আসলে সবাই একই রকমের। নির্বাচন কমিশনাররা দীর্ঘদিন থেকে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। মনে করা হয়, বিচারপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে নির্বাচন কমিশনার বানালে নির্বাচন ভালো হবে। তবে এব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করি। নির্বাচন করার যে প্রক্রিয়া, তার সঙ্গে বিচারপতিরা পরিচিত নন। নির্বাচনে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, নির্বাচন ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করার বিষয়গুলো কোনো দিন কোনো বিচারপতি দেখেননি। কাজেই হাতে-কলমে নির্বাচন করার এবং দেখার অভিজ্ঞতা কেবল প্রশাসনিক ব্যক্তিদেরই রয়েছে। যাদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা নেই, কেবলমাত্র প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ নানা গুণ রয়েছে এমন লোকদের দ্বারা নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব নয়। সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন একেবারে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ হিসেবে কাজ করবে। নির্বাচন কমিশনাররা কেবল সংবিধান এবং আইনের কাছে দায়বদ্ধ। সেই অর্থে নিরপেক্ষ লোক খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। নিরপেক্ষ লোক চোর এবং পুলিশের উভয় পক্ষ থাকেন কি? কাজেই দেখতে হবে নিরপেক্ষ লোকটি কি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের না বিপক্ষের, কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের না বিপক্ষের। ভারতের নির্বাচনের ইতিহাসে টি.এন. শ্যাসান সম্পর্কে বলা হয় সবচেয়ে ভালো নির্বাচন কমিশনার। বেশ কয়েকটি নির্বাচন করে তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন। সংস্কার করে নির্বাচন কমিশনকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপরই তিনি বিজিপিতে যোগদান করেছেন। এখন তিনি বিজিপির একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি একজন বিজিপির লোক হলেও তার মন-মানসিকতা আগে বোঝার কোনো উপায় ছিল না। হঠাত্ করে তিনি বিজেপি হননি। মানসিকভাবে তিনি বিজেপিই ছিলেন।রাজনৈতিক দলগুলোই নির্বাচনের প্রধান অংশ এবং তারাই নির্বাচন করবে। কাজেই এখানে নির্বাচনের স্টেকহোল্ডার কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোই। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে আলোচনা হয় না। নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে তা অনেক সময় নির্ভর করে রাজনৈতিক দলগুলোর উপর। রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এটাই স্বাভাবিক। যদি সেই রাজনৈতিক দলের তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি থাকে এবং তাদের নেতা-কর্মী কেন্দ্রে উপস্থিত থাকে তাহলে নির্বাচন নিয়ে চিন্তার কিছু থাকে না। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাই নির্বাচনের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করতে পারেন। কিন্তু তা না করে কেবল সংবাদ সম্মেলনে ১৩ পৃষ্ঠার দাবি উত্থাপন করলে সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন হবে না। বর্তমানে বিএনপি’র কি অবস্থা? তাদের তৃণমূলের অবস্থা কি? বিএনপি’র ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা কমিটি ঠিক আছে কিনা, কমিটিতে কারা আছেন? কারা সংসদ নির্বাচনে নমিনেশন পাবেন? তারা কি বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ, নৈতিকতা সম্পন্ন। সে ব্যাপারে ভাবা উচিত। যোগ্যতার প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনারকে অবশ্যই বাংলাদেশের পক্ষের হতে হবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে না বিপক্ষে এমন প্রশ্নের উত্তর যদি আসে, আমি কোনো পক্ষের না, তাহলে এটি প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাসী হলে তাকে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হতে হবে। নিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে যত যোগ্যতার কথাই বলা হোক না কেন, নির্বাচন কমিশনারকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক হওয়া বাঞ্ছনীয়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে কারচুপি অনেকটাই কমে যাবে। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশের ১০ কোটি মানুষের হাতে মোবাইল আছে, ক্যামেরা আছে। কাজেই এতোকিছুর পরও সহজেই কোনো একটা কিছু করে নির্বাচনে জেতা যাবে এমনটি ভাবার কারণ নেই। তবে আমাদের এখানে ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম চালু করা দরকার। ভারতে ২০ বছর আগে থেকে ই-ভোটিং সিস্টেম রয়েছে। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফলাফল ঘোষণা করা সম্ভব। ই-ভোটিং বর্তমান সরকারও অনেক চেষ্টা করেছিল, কিন্তু একটি পক্ষের বিরোধিতার জন্য তা সম্ভব হয়নি।আরপিও পরিবর্তন করে রাজনীতিকে সেনাবাহিনীতে ফেরানোর আর কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন যখন আসে তখন সচরাচর সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। দেখা যায়, অনেক বড় অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সিসি ক্যামেরা শতভাগ কাজ করে না। তারপর পুরো এলাকায় ব্যানারে লেখা থাকে যে, এলাকাটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এর লক্ষ্য হলো দুষ্কৃতকারীরা যেন ভয়ভীতি পেয়ে তাদের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের বিরত রাখে। তবে নির্বাচনের সময় নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনী টহল দিতে পারে। এর বেশি কিছু ভাবা ঠিক হবে না। নির্বাচনের কথা বলে সেনাবাহিনীকে আবার রাজনীতিতে জড়ানো যাবে না। গত শতকের নব্বই দশক থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, তত্সংশ্লিষ্ট নির্বাচনের কোনোটাকেই আমরা অন্তর থেকে গ্রহণ করিনি। তারপর নানাজন নানা অভিযোগ তুলেন। আগামীর নির্বাচনে যদি কোনো দল বলে যে, সেনাবাহিনীর কারণে তাদের পরাজয় হয়েছে, তবে তা জাতির জন্য দুঃখজনক হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে রাজনীতি সেনানিবাসমুক্ত হয়েছে। দলের একজন নেত্রী সেনানিবাস এলাকায় বাস করে রাজনীতি পরিচালিত করবেন- যা একেবারেই অশোভন ছিল। কাজেই সেখানে যাওয়ার আর সুযোগ নেই। বিএনপি’র এবার নির্বাচন না করার কোনো কারণ নেই। তারা নির্বাচনে অংশ নিবেই। আর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তর থেকেই চান সবার অংশগ্রহণে একটি শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। নানা সময় বিভিন্ন কথাবার্তা বক্তব্যের মাধ্যমে শেখ হাসিনার এমন দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া গেছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে নেতা-কর্মীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই ছিল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে। তবে বিএনপি’র জন্য দল গোছানোর গুরুত্বপূর্ণ সময় এখন। অনেক জায়গায় বিএনপি’র কমিটি অনেক পুরনো। সেগুলো নতুন করে গঠন করার কোনো তাগিদ নেই। ভোট কেন্দ্রে যদি সব দলের নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকে, তাহলে শতকরা ৮০ ভাগ স্বচ্ছ নির্বাচন হওয়া সম্ভব। কাজেই নির্বাচনী ফর্মূলা নিয়ে ব্যস্ত না থেকে বিএনপি’র এখন কাজ হওয়া উচিত দল গোছানো। নির্বাচন কমিশন গঠনের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির। সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি পাওয়া বেশ কঠিন। কাজেই যতদূর সম্ভব যোগ্য এবং সঠিক ব্যক্তিকেই নির্বাচন কমিশনার হতে হবে।বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে না পারলে সংবাদ সম্মেলন, সংলাপ, প্রস্তাবনা কোনো কাজেই আসবে না। বিএনপি’র রূপরেখায় জামায়াতের উপস্থিতি স্পষ্ট। বর্তমান সরকার জামায়াতের সাথে কোনো আপস করবে না। ২০ দলীয় জোটের মূল শক্তি হলো বিএনপি এবং জামায়াত। জামায়াতকে সাথে নিয়ে বিএনপি’র পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়। অনেকের ধারণা ছিল, বিএনপি জামায়াতের গোত্র ত্যাগ করেছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। জামায়াতকে একাধিকবার সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দলকে অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত করে শাস্তির বিধান কার্যকর করার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ আমরা কেবল মুখে বলবো জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি নয়, কিন্তু সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো না, তা হয় না। সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০২
false
rg
টেলিভিশন সাংবাদিকতার নৈতিকতা _ দেশ টিভিকে একটি প্রশ্ন!!! রেজা ঘটক কুস্টিয়ার কুমারখালীতে ছয় বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণ করেছে এক পাষণ্ড। পাষণ্ডের নাম প্রতিবেশি রকিবুল ইসলাম চুকু। শিশুটি বিকালে মাঠে খেলা করছিল। সেখানেই রাকিবুলের শয়তানি চোখে পড়ে সে। পরে রাকিবুল ওই শিশুটির উপর পাষবিক নির্যাতন চলায়। হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা শেষে শিশুটি ধর্ষণ হবার খবর নিশ্চিত করছে। কিন্তু পুলিশ এখনো পাষণ্ড রকিবুলকে গ্রেফতার করতে পারেনি। চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে হাসপাতালে নেয়ার পথে রাকিবুলের পরিবারের সদস্যরা বাধা দেয়। শুক্রবার ভোরে লুকিয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করলে মোবাইলে নির্যাতনকারীরা শুশুটির বাবাকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিশুটির মা জানিয়েছেন, ‘জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর ওরা (ধর্ষকদের পরিবার) আমাকে ঘর থেকে বেরোতে দেয়নি।’ সংবাদ এটুকু। কিন্তু দেশ টিভি সকল সাংবাদিক এথিকস ভঙ্গ করে টেলিভিশনে ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশুটি এবং তার আত্মীয় স্বজনকে বারবার টেলিভিশনের পর্দায় দেখালো। এটা কোন ধরনের সাংবাদিকতা? সাংবাদিকতার কোন এথিকসে একটি ধর্ষিত শিশুকে টিভিতে দেখানোর অধিকার আছে? যদি বাংলাদেশের সাংবাদিকতার এথিকসে এখনো ধর্ষিতার ছবি টিভিতে দেখানো বা পত্রিকায় প্রকাশের কোনো অধিকার থাকে, তাহলে এটি আইন করে বন্ধ করা উচিত। একজন ধর্ষিতাকে টেলিভিশনে তার গোটা পরিবার সহ দেখানোর মধ্যে সভ্যতার কোনো সাংবাদিকতা এথিকস থাকতে পারে না। উচিত ছিল পাষণ্ড রাকিবুলের ছবি দেখানো, তার পরিবারকেও দেখানো যেতে পারে। যাতে সমাজের কাছে রাকিবের কর্মকাণ্ডের জন্য ভবিষ্যতে তারা অনুতপ্ত হয় এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার রাকিবকে আইনের আওতায় আনতে সুবিধা হয়। অপরাধীকে না দেখিয়ে ভিকটিমকে কিভাবে দেশ টিভি সংবাদে প্রচার করলো এটা ভেবে দেশ টিভি'র নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন জাগলো! জনাব আসাদুজ্জামান নূর আপনার টেলিভিশনের নৈতিকতা এতো ঠুনকো? আপনি কি করে বিভিন্ন গণ-মাধ্যমে ভিকটিমের পক্ষে কথা বলেন? আপনার টিভিতে একজন ধর্ষিতার ছবি দেখানো হয়, আপনার টিভিতে একজন ধর্ষিতার গোটা পরিবার দেখানো হয়। অথচ আপনার টিভিতে অপরাধী'র কোনো টুটিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। এটা কোন ধরনের নৈতিকতা? এটা কোন ধরনের টিভি সাংবাদিকতা? অবিলম্বে পাষণ্ড রাকিবকে পুলিশের গ্রেফতার করতে হবে। সেই গ্রেফতার দৃশ্য দেশ টিভিতে বিশেষ বুলেটিন আকারে এক ঘণ্টা পরপর প্রচার করতে হবে। আর ভিকটিম যে শিশুটির ছবি দেশ টিভি প্রচার করছে, সেটি প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে। আর ওই টিভি রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যানকে নোটিশ করতে হবে। তাদের টিভি সাংবাদিকতার এথিকস জ্ঞান যদি না থাকে তাহলে তাদের দেশ টিভি থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে। ভিকটিম শিশুটি এবং পরিবার আমাদের এই সমাজের কাছে এখন কিভাবে বেঁচে থাকবে, কিভাবে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করবে, তা কি একবারও দেশ টিভি কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবেন? ধিক আপনাদের এমন সংবাদ প্রচারের জন্য। ধিক আপনাদের নৈতিকতা? ধিক আপনাদের বড় বড় বুলি। ধিক আপনাদের মুখোশের। মানুষ যখন টাকার নেশায় উন্মাদ হয়ে যায় তখন তাদের আর কোনো নৈতিকতা থাকে না। দেশ টিভি'ও এখন সেই দশা হয়েছে। ছিঃ দেশ টিভি, ছিঃ ছিঃ ছিঃ... দেশ টিভির লিংক এখানে Desh TV সাংবাদিকতায় নৈতিকতা কতোটা মানা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার জন্যে মাননীয় তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বর্তমান কেবিনেটে আপনি একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং মহাজোটের শরিক হিসেবে আপনার অবস্থানও আমাদের কাছে পরিষ্কার। দয়া করে আপনি কি দেশ টিভি'র এই নৈতিকতা বিরোধী সাংবাদিকতার ব্যাপারে দেশ টিভি'র কর্নধার মাননীয় সাংসদ জনাব আসাদুজ্জামান নূর সাহেবকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন? যদি তাও জিজ্ঞেস করতে আপনার সমস্যা হয়, তাহলে সাংবাদিকদের নিয়ে একটা খোলা আলোচনা (ওপেন ডায়লগ) করুন। এটা যে কোনো সময় যে কোনো দিন আপনার সদিচ্ছা থাকলেই করা সম্ভব। সেখানে সকল সাংবাদিক ও মিডিয়ার প্রতি অন্তঃত একটি অনুরোধ করুন যে, অন্তঃত মিডিয়ায় যেনো ধর্ষিতার পরিচয়ের ব্যাপারে সবাই একটা ন্যূনতম নীতি মেনে চলে। যারা এটা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আপনি সরাসরি ব্যবস্থা গ্রহন করুন। আমরা মিডিয়ার এতো স্বাধীনতার মধ্যে ধর্ষিতার পরিচয় শুনতে চাই না। দয়া করে কিছু একটা করুন, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:০৬
false
ij
কাসিত (Kassite) সভ্যতা প্রাচীন পারস্যের কাসিত গোত্র ব্যাবিলন জয় করে ৪৫০ বছর শাসন করেছিল। ক্ষুদ্র এক পার্বত্য গোষ্ঠী সংগঠিত হয়ে কী করে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল সে ইতিহাস সত্যিই বিস্ময়কর। কাসিত সভ্যতার সময়কাল: ১৫৯৫ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ১১৫৫ খ্রিস্টপূর্ব । ব্যাবিলন উরুক ও নিপপুর নগরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল কাসিত সভ্যতা । কাসিত শব্দটি দিয়ে মূলত বোঝায় (ক) প্রাচীন পারস্যের এক পাহাড়ি নৃগোষ্ঠী। (খ) একটি প্রাচীন ভাষা। (গ) প্রাচীন ব্যাবিলনের একটি রাজবংশ; এবং (ঘ) ইতিহাসের বিশেষ একটি সময়। চূনাপাথর ও ডোলোমাইটে পরিপূর্ন ১,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ জাগ্রস পাহাড়শ্রেণিটি পশ্চিম ইরনের লুরিস্তানে অবস্থিত। এই পাহাড়শ্রেণিটির অর্ন্তগত জারদ কুহ-র উচ্চতা ৪,৫৪৮ মিটার । শীতে পাহাড়ময় তুষার ঝরে এবং বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের হারও উক্ত পার্বত্য অঞ্চলে সন্তোষজনক। যে কারণে জাগ্রস পাহাড়ের উপত্যকাসমূহ অত্যন্ত উর্বর; ফলে প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের নিওলিথিক বিপ্লবটি সম্পন্ন হয়েছিল অত্র এলাকায় । অর্থাৎ প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের মানবগোষ্ঠীর কৃষিবিপ্লবের প্রধান কেন্দ্র ছিল জাগ্রস পাহাড়ের উপত্যকা । জাগ্রস পর্বতমালা। এখানেই বাস করত প্রাচীন কাসিত জাতি । কাসিতরা আসলে ছিল জাগ্রস পর্বতমালার যাযাবর গোত্রের আর্ন্ত-সংগঠন। কসিত ভাষা সেমিটিকও নয়, ইন্দো-ইউরোপীয়ানও নয়। ভাষাটি ছিল আইসোলেট; অর্থাৎ, কোনও প্রধান ভাষা পরিবারের অর্ন্তভূক্ত না ভাষাকে ভাষাকে বলা হয় আইসোলেট। মানচিত্রে জাগ্রস পর্বতমালা। টাইগ্রিস নদীর অববাহিকায় প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের সর্বাপেক্ষা সমৃদ্ধশালী অঞ্চল ব্যাবিলনের অবস্থান জাগ্রস পাহাড়ের পশ্চিমে। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তদশ শতকে টাইগ্রিস নদীর উপত্যকায় কাসিতরা অনুপ্রবেশ করতে থাকে। সেসময় ব্যাবিলন শাসন করতেন প্রখ্যাত ব্যাবিলনিয় শাসক হামমুরাবির এক উত্তরসূরি: সামসু-ইলুনা। তিনি কাসিতদের বিচ্ছিন্ন অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন। তবে ১৫৯৫ খ্রিস্টপূর্বে হিট্টি সম্রাট প্রথম মুরসিলিস ব্যাবিলন আক্রমন করে তছনছ করলে ব্যাবিলনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শিথিল হয়ে পড়েছিল। এর পরপরই কাসিতদের বিচ্ছিন্ন অনুপ্রবেশ রুপ নেয় প্রবল আগ্রাসনে। ব্যাবিলন প্রশ্ন উঠতে পারে কাসিতরা পার্বত্য বাসভূমি ত্যাগ করে টাইগ্রিস নদীর উপত্যকায় কেন অনুপ্রবেশ করেছিল? এর উত্তরে আর্য আগ্রাসনকে চিহ্নিত করা যায়। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী আর্যরা বাস করত কাসপিয়ান সাগরের দক্ষিণে। জায়গাটির অবস্থান ইরানের উত্তরে। খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দের মাঝামাঝি ইন্দো-ইউরোপীয়রা সমাজে প্রযুক্তিক বিপ্লব ঘটে। তারা ঘোড়ার সামরিক ব্যবহার করতে শেখে ও রথের ব্যবহার আবিস্কার করে । এর ফলে যাতায়াতের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। যে কারণে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্দ আর্য মাইগ্রেমন সম্ভবপর হয়, যে অভিপ্রয়ানের ফলে নানা এশিয় জাতি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও আদিবাসভূমি থেকে উৎখাত হয়ে যায়। এভাবেই জাগ্রস পাহাড়ের পার্বত্য আদিবাসী কাসিতরা আদিবাসভূমি থেকে উৎখাত হয়ে যায়। আগেই বলেছি কাসিতরা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর নয়। আর্য অভিপ্রয়ান ১৫৯৫ খ্রিস্টপূর্বে কাসিতরা দজলা (টাইগ্রিস) ও ফোরাত (ইউফ্রেতিস) নদীর উর্বর উপত্যকায় বসতি গড়ে তুলতে থাকে। ব্যাবিলনের আদি অধিবাসীদের পরিবারের গঠন ছোট হলেও কাসিতদের বিশাল পরিবারের পাহাড়ি ট্রাইবাল জীবন অব্যাহত থাকে এবং তাদের গোত্রীয় স্বকীয় রীতিনীতি বজায় থাকে। তবে খুব শিগগির কাসিতদের ওপর নগর সভ্যতার প্রভাব পড়ে। ক্রমেই তারা শিখল কী করে বিশাল ঐক্যবদ্ধ সৈন্যবাহিনী গড়ে তুলে রাজ্য চালাতে হয়, প্রশাসন কি ও কেন, এবং প্রশাসনিক কাজে কীভাবে গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে হয় । কাসিরা গোত্রপতির পরিবর্তে একজন সম্রাটের প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করে। সামাজিক বিবতর্নের এক পর্যায়ে গোত্রীয় জীবন ভেঙ্গে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়-কাসিতদের ইতিহাস আমাদের সে কথাই মনে করিয়ে দেয়। কাসিত মূর্তি গানদাশ। কাসিতদের প্রথম সম্রাট। তার সময়েই সমগ্র ব্যাবিলন কাসিতদের করতলগত হয়ে যায়। তারা ব্যাবিলনের একটি নতুন নামও দেয়: কারানদুনিয়াশ। নগরটির ধ্বংসস্তুপ বর্তমান ইরাকের দার কুরিজারজু । ব্যাবিলনের ১৫০ কি মি উত্তরে। তবে কাসিতদের সম্বন্ধে খুব বেশি জানা যায়নি। ব্যাবিলনের নথিপত্রে মাত্র ৩০০ কাসিত শব্দ পাওয়া গেছে। তারা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী। তাদের ৩০ দেবদেবীর নাম পাওয়া গিয়েছে। কাসিত প্রধান দেবতার নাম শুকামুনা। তবে ধর্মীয় ব্যাপারে কাসিতরা ছিল উদার। ১৫৯৫ খ্রিস্টপূর্বে হিট্টি সম্রাট প্রথম মুরসিলিস ব্যাবিলন আক্রমন করে তছনছ করার পর তিনি ব্যাবিলনীয় দেবতা মারডুকের মূর্তি নিয়ে গিয়েছিলেন। মূর্তিটি কাসিতরা উদ্ধার করে পুনরায় ব্যাবিলনে স্থাপন করে এবং মারডুকের উপাসনা পুরুরায় প্রচলন করে ব্যাবিলনীয় দেবতা মারডুককে কাসিতরা প্রধান দেবতা শুকামুনার সমকক্ষ ঘোষনা করে। ইরাকের দার কুরিজারজু । কাসিত সভ্যতায় নগরজীবনের কেন্দ্রে ছিল প্রধানত বানিজ্য ও কারুশিল্প। স্বর্নের সঙ্গে লাপিস লাজুলি (নীলকান্ত মনি) বিনিময় করা হত। ঘোড়া ও রথ রপ্তানি করে আমদানী করা হত কাঁচামাল । নগরের বাইরে চারণক্ষেত্রে ছিল রথের জন্য ঘোড়ার খামার। গ্রামীনজীবনের ভিত্তি ছিল কৃষি ও পশুপালন। গ্রামীণজীবন শাসন করত কাসিত অভিজাতরা; অভিজাতদের প্রতিনিধিরা গ্রামে বাস করত এবং তারা অঢেল জমির মালিক ছিল। প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যে সীমান্ত প্রাচীরকে বলা হত কুদুররু। শব্দটি আককাদিয়। এর অর্থ: সীমান্ত বা ফ্রনটিয়র। করদ রাজ্যের রাজাদের ভূমিদানের বন্দোবস্ত বিষয়ে লেখা থাকত। কুদুররু । কাসিত সভ্যতার প্রাপ্ত একমাত্র শিল্পবস্তু। ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়ামে আছে। ইরাকের জাতীয় জাদুঘরেও থাকার কথা, অবশ্য বুশ সাহেবের গুন্ডাপান্ডরা না নিয়ে গেলে। কাসিত অভিজাতরা ছিল সংখ্যালঘু। তাদের ওপর ব্যাবিলনের রীতিনীতির প্রভাব পড়েছিল। অভিজাতরা ব্যাবিলনিয় নাম নিত। কাসিত সরকারি কর্মচারিরাও অনুরুপ । যা হোক। কাসিত সম্রাটদের পরাক্রম অব্যহত থাকে। পরাক্রমশালী মিশর ও সিরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক। গড়ে ওঠে। ১৪২০ খিস্টপূর্বে রাজা কারাইনডাস উরুক এ প্রধান দেবতা শুকামুনার একটি উপসনালয় স্থাপন করেন। হিট্টি (ব্যাবিলনের উত্তরের দেশ) আগ্রাসন রোধ করার জন্য রাজনৈতিক বিবাহ করে । তবে ইলাম ও আরিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ইলামিয় সাম্রাজ্য ছিল ব্যাবিলনের পূর্বে। ইলামিয়রা ব্যাবিলন আক্রমন করে লুন্ঠন করে এবং কাসিত সভ্যতা ধ্বংস করে। কাসিতরা আবার জাগ্রস পাহাড়ে ফিরে যায়। পারস্যের আকামিনিদ শাসনামলে কাসিতরা ছিল অনেকটা স্বাধীন । ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বে এদের আবারও ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে দেখা যায়। মেসিডোনের সম্রাট আলেকজান্দার যখন একবাতানা (পারস্যের একটি নগর) থেকে ব্যাবিলন ফিরছিলেন, পথে Cossaeans দের মুখোমুখি হলে রক্তক্ষয়ী সংঘাত বাধে। এই Cossaeans রাই ছিল কাসিত । গ্রিকসূত্রে কাসিতদের বলা হয়েছে গুহামানব, যাযাবর নয়! প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্য কাসিত সাম্রাজ্য সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:২২
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৩৭ ১. সেদিন ভোরে স্বপ্নে দেখলাম, বিয়ে করেছি। বউ দুইজন। দুইজনই হাসিহাসিমুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তাদের গায়ে জামাকাপড় তেমন ছিলো না। আমি গলা খাঁকারি দিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম যে কিছু পর্দাপুশিদা জগতে অতীব জরুরি, পরস্ত্রীর গায়েই কেবল বস্ত্রসঙ্কট মানায়। জবাবে শুনলাম বাসন মাজার আওয়াজ হচ্ছে। এত সুন্দর স্বপ্নটা ভেঙে খান খান হয়ে গেলো হারামজাদা উগোর জন্য। উগো আমার নতুন মিটবেভোনার (ফ্ল্যাটমেট)। ভাস্কো দা গামার দেশের লোক। পয়লা দিন থেকেই খিটিমিটি লেগে আছে ওর সাথে, কেন কে জানে। এমনিতে সে লোক খারাপ নয়, কিন্তু রাত দেড়টা পর্যন্ত রেডিও ছেড়ে গান শোনে। শুধু শুনলেই সমস্যা ছিলো না, সে বেশ উদাত্ত কণ্ঠে রেডিওর সাথে গলা মিলিয়ে গান গায়। পরদিন পরীক্ষা, রাত জেগে পড়ছি, এই অভূতপূর্ব ক্যাকোফোনিতে তাজ্জুব লেগে গেলো। এই দেশে পা রাখার পর থেকেই বাস করছি আশ্চর্য নৈঃশব্দ্যের মধ্যে, শহরের বেশ সুনসান অংশে বাস করি, আর রাত দশটার পর পড়শিরাও একেবারে চুপ মেরে যায়। সেখানে এই মাঝরাতে কোন চুদির্ভাইয়েরা এইসব গোলমাল করে? দরজা খুলে উত্তর পেলাম, উগো আর তার রেডিও। রেডিওর বোন নাই। উগোর আছে। পরীক্ষা দিয়ে এসে উগোকে মিষ্টি করে বুঝিয়ে বললাম, বাপু হে, গান শোনো, গান গাও, খুব ভালো কথা, কিন্তু রাতের বেলা একটু আস্তে শুনলে কেমন হয়? উগো লজ্জিত হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুরু করলো রান্নাঘরের বদনাম। রান্নাঘর ময়লা। পরিষ্কার করা প্রয়োজন। বুঝলাম, স্যামুয়েল কতো ভালো লোক ছিলো। উগো খুবই পরিচ্ছন্ন, আর আমি কিছুটা উচ্ছন্নে গেছি বললেই চলে। রান্নাঘর যতদূর সম্ভব পরিষ্কার করলাম সেদিন বসে বসে। নতুন কেউ এলে রান্নাঘর পরিষ্কার করে দেয়াই রেওয়াজ, আমিও এসে একেবারে পরিষ্কার পেয়েছি সবকিছু। গ্রীষ্মভাগ শুরু হয়েছে কোর্সের। আবারও সেই সপ্তাহে আটাশ ঘন্টা ক্লাস। যদিও আবহাওয়ার লক্ষণ ভালো না, মাঝে রীতিমতো তুষারপাত হলো কয়েকদিন ধরে, আর এখন চলছে টিপটিপ বৃষ্টির দিন। দিনের আলো নেভে সোয়া আটটার দিকে। ক্লাস ফাঁকি দেয়ার বদভ্যাস তৈরি হয়েছে, সেটাকে গলা টিপে খুন করার ধান্ধায় আছি। হাতে আগাথা ক্রিস্টির বিশাল এক সংগ্রহ, সেটাই পড়ছি গোগ্রাসে। মার্ডার অব রজার অ্যাক্রয়েড, ডেথ কামস অ্যাজ দ্য এন্ড (সেবা প্রকাশনী থেকে এর ভাবানুবাদ বেরিয়েছিলো, "কামিনী"), আ পকেটফুল অব রাই, ক্যাট অ্যামাং দ্য পিজিয়নস শেষ করে গতকাল শেষ করলাম অনবদ্য মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস। ক্রিস্টির লেখা খাই আলুর চিপসের সাথে, দুটোই মচমচে। সিনেমাটা দেখার সুযোগ পেয়েও দেখিনি বইটা পড়বো বলে, এখন মনে হচ্ছে সিনেমাটাও দেখা জরুরি। ২. দ্রোহীকে অনলাইনে পেয়ে ফিসফিসিয়ে জানতে চাইলাম, একসাথে জোড়া বউ পাওয়া যাবে কি না। দ্রোহী চুপিচুপি জানালেন, তিনি ৫০% সফলতা অর্জন করেছেন এ কাজে। বাকি ৫০% নিয়ে আপাতত এগোচ্ছেন না, প্রথম এবং একমাত্র বউ জানলে নাকি সমস্যা হতে পারে। তবে আমার খাতিরে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। দুই বান্ধবী, বা দুই খালাতো বোন হলেও চলবে শুনে তিনি একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছেন (কেন, কে জানে?)। সিয়ামিজ যমজে আমার আপত্তির কথা শুনে মুষড়ে পড়েছেন একেবারে। একটা বউ নিয়েই তিনি হিমসিম খাচ্ছেন, আমি কী ভেবে এক জোড়া বউ চাইছি, সেটার কৈফিয়ৎ তলব করলেন কিছুক্ষণ। পাশাপাশি এ-ও জানালেন, আমার কুমতলবের ছাপ নাকি আমার শিঙালো ছড়ায় পড়েছে, সম্ভাব্য স্ত্রীযুগল দৈবাৎ সেসব ছড়া পাঠ করলে আমাকে সম্মার্জনী হাতে তাড়া করতে পারেন। আমি খুবই হতাশ হলাম এসব শুনে। আমি যে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও কর্মঠ যুবক, তা আমার প্রতিটি শিঙালো ছড়ার পংক্তিতেই ফুটে আছে বলে আমার ধারণা ছিলো। প্রাঞ্জল বাংলা ভাষায় বলে দেয়া আছে, আমি কী করতে চাই। তারপরও যদি আমার দুই বউ আমাকে ঝাড়ু মারতে আসে, তা খুবই গ্লানিকর ব্যাপার হবে বলে আমার মনে হয়। দ্রোহী জানালেন, স্বপ্ন সফল করার ব্যাপারে যদি আমি সিরিয়াস হয়েই থাকি, তাহলে কর্মঠ হতেই হবে, নাহলে অনেক সমস্যা হতে পারে (একটা বউ থাকার সমস্যাকে মনে মনে দুই দিয়ে গুণ করেই বললেন কি না বোঝা গেলো না) । কিন্তু তিনি একই সাথে ঘ্যান ঘ্যান করতে লাগলেন, দুটো বউ কেন? দুটো বউ কেন? বিষয়টা বুঝিয়ে বললাম। ব্যাপারটার চার্মই আলাদা। লোকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো, এরা আমার বউ। তারপর ধরা যাক, সচলায়তনে পোস্ট দেবার সময় হাঁক পাড়বো, ছোট বউ! চা দিও!! আরো আরো সম্ভাবনার কথা ভাবতেই খুব ভালো লাগে। শরীর কন্টকিত হয় রীতিমতো। দ্রোহী একটু আনমনা হয়ে বললেন, দেখি বাসায় গিয়ে ...। আমি বললাম, আপনি বাসায় গিয়ে কী দেখবেন? দ্রোহী শুধু বললেন, আপনার আইডিয়াটা কিন্তু ভালো!
false
mk
চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর চী নের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর ঢাকা সফর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে আরও মজবুত করেছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ বরাবরই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার পররাষ্ট্রনীতিতে নমনীয় নীতি গ্রহণ করে আসছে। যার প্রকৃষ্ট প্রমাণ আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতির মধ্যেই অন্তর্নিহিত রয়েছে- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। মূলত এই মূলনীতিকে ধারণ করেই বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তার বৈদেশিক নীতি পরিচালনা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর বাংলাদেশের বিদেশনীতিরই একটা সফলতার অংশ। গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নিয়ে নানা ধরনের প্রচারণা আসছে যা বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রনীতির সফলতারই বহিঃপ্রকাশ।শি জিনপিং-এর এই সামপ্রতিক সফর বিবেচনা করলে একটা বিষয় বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে আর সেটা হচ্ছে এই যে, কূটনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক দু’দিক থেকেই এ সফর ঐতিহাসিকতার পরিচয় বহন করে। কারণ জিনপিং-এর বৈঠকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ঋণ সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে চীন সরকার যে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে এটা শি জিনপিং-এর সফরের পূর্বেই অনুমান করা হয়েছিল। আর চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম চীনের প্রেসিডেন্টের সফর সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন তা থেকে স্পষ্টভাবেই অনুমেয়—শি জিনপিং- এর সফরে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সফলতা।চীন বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে এগিয়ে আসছে। তার এ সফরে অনেকগুলো বড় চুক্তি স্বাক্ষরিত সম্পন্ন হয়েছে। এ সম্পর্কে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, শি জিনপিং-এর সফরের সময় রেকর্ড পরিমাণ ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই চীনসহ সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়ন বিস্ময়। আর এ কারণেই চীন ঋণ দিতে আগ্রহী। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করলে বলা যেতে পারে যে এ সফর বাংলাদেশের জন্য বেশ তাত্পর্যপূর্ণ। ইতোমধ্যেই চীন নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করাতে সমর্থ হয়েছে। তাই চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে সামপ্রতিক বিশ্বের একজন ক্ষমতাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিবেচনা করলে হয়তো অযৌক্তিক হবে না। কেননা তিনি একদিকে যেমন বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতা তেমনি একইসঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান। শি জিনপিং ২০১০ সালে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে তার আগ্রহ তখন থেকেই। তাই প্রায় তিন দশক পর বিশ্বের শক্তিশালী একটি দেশের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর যে খুবই তাত্পর্যপূর্ণ তা মেনে না নেওয়ার কোনো উপায় নেই।দু’দেশের মধ্যে ২৬টি নানা ধরনের চুক্তি এবং সমঝোতা হয়েছে। বলা হচ্ছে চীনা প্রেসিডেন্ট যেরকম বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে এসেছেন এই সফরের সময় সেটা একটা রেকর্ড। গত ১৪ অক্টোবরের বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেই শেখ হাসিনা এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আনুষ্ঠানিকভাবে ছয়টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম এবং খুলনায় দুটি বড় তাপ বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, যার একেকটির ক্ষমতাই হবে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে একটি টানেল তৈরির প্রকল্পেও অর্থ সহায়তা দিচ্ছে চীন। এছাড়া একটি সার কারখানা, ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট’ নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে চীনা অর্থ সাহায্যে।চীন বাংলাদেশের উপকূলে গভীর সমূদ্রে একটি বন্দর নির্মাণেও আগ্রহী ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিবেশি ভারতের এ নিয়ে আপত্তি আছে। যার ফলে এই প্রকল্পটি নিয়ে কথা-বার্তা আর এগোয়নি বলেই মনে করা হয়। চীনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় ছিলেন চীনা ব্যবসায়ীদের একটি বড় প্রতিনিধি দলও। বাংলাদেশ বিনিয়োগে তারা কতটা উত্সাহী? বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট মতলুব আহমেদ বলছেন, চীনের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের ১৩টা চুক্তি হয়েছে। এই ১৩টি চুক্তিতে প্রায় এক হাজার তিন’শ ষাট কোটি ডলার ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, এর মধ্যে সৌর বিদ্যুত্ থেকে শুরু করে অবকাঠামো, রেলওয়েসহ নানা খাতের বিনিয়োগ ও ব্যবসা রয়েছে।চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা চলছে দেশটির গণমাধ্যমে।৩০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো চীনা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এলেন। ফলে এ সফরের তাত্পর্য তুলে ধরতে চাইছে পত্রিকাগুলো। বিশেষ করে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানের বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে। এ অবস্থানের কারণে চীনের পরিকল্পিত সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট ও ম্যারিটাইম সিল্ক রোড নির্মাণে কীভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তার বিশ্লেষণ চলছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড বলে পরিচিত চীনের এ প্রকল্প এবং বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত ও চীনের মধ্যকার অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণেও বাংলাদেশের অবস্থানকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন চীনের কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা। তাদের ধারণা, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সফরে এসব ইস্যুতে অনেকখানি অগ্রগতি হবে।এছাড়া বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামো, পরিবহন, জ্বালানি, উত্পাদন সক্ষমতা ও সর্বোপরি অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রসঙ্গও উঠেছে। বলা হয়েছে, এ সফরের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা সিনহুয়া বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বেশকটি প্রতিবেদন ছেপেছে। সিনহুয়ার একটি বিশ্লেষণটিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বাংলাদেশ ও কলম্বিয়া সফরের লক্ষ্য হলো—চীনের প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের রূপরেখার অধীনে উভয় পক্ষের কৌশলগত সহযোগিতা গভীর করা ও আঞ্চলিক কানেকটিভিটি ত্বরান্বিত করা। আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, উভয় দেশের মধ্যে বন্ধুপ্রতিম ও সহযোগিতাপরায়ণ প্রতিবেশ অব্যাহত রাখা। রাষ্ট্রায়ত্ত ইংরেজি পত্রিকা গ্লোবাল টাইমসের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল:চীন-বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠতর সম্পর্ককে ভয় পাওয়ার দরকার নেই ভারতের। সেখানে বলা হয়েছে, চীনের অনেকের বিশ্বাস ভারতের উত্থান ঠেকাতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে চীন। আবার ভারতের অনেকের ধারণা, চীনের প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প নিয়েও ভারতে অনেকের মধ্যে সংশয় কাজ করে। ধারণা করা হয়, এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিল করতে চায় চীন। চীনের বৃহত্তম পত্রিকা পিপলস ডেইলির একটি বিশ্লেষণির শিরোনাম ছিল : শি জিনপিং-এর বাংলাদেশ সফর ঐতিহাসিকভাবে তাত্পর্যপূর্ণ।শাসক দলের মালিকানাধীন এ পত্রিকার কলামটিতে বলা হয়েছে, চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কের মাইলফলক হয়ে থাকবে। ইংরেজি পত্রিকা গ্লোবাল টাইমসের আরেকটি প্রতিবেদনে শি জিনপিং-এর বাংলাদেশ সফরকে যুগান্তকারী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নীত করবেন শি—শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কং শুয়ানইয়ুর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠেয় অষ্টম ব্রিকস সম্মেলনের পূর্বে প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।তবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের দিকে চীনা বিশ্লেষকদের বিশেষ নজর দেখা গেছে বিশ্লেষণিগুলোয়। পিপলস ডেইলির বিশ্লেষণিতে এ নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এছাড়া গ্লোবাল টাইমসকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ওয়াং শিডা বলেন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ এ শিল্প বাংলাদেশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।জিয়াং জিংকুই বলেন, চীন নিজেদের শিল্পখাত হালনাগাদ করার চেষ্টা করছে। তাই টেক্সটাইলের মতো শ্রমশক্তিপ্রধান শিল্প বাংলাদেশে স্থানান্তর করা যেতে পারে। এ সফরকে সামনে রেখে পিপলস ডেইলিতে মতামত কলাম লিখেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংকিয়াং। তিনি লিখেছেন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক বাহিনী ও সাংস্কৃতিক খাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নীত করবে এ সফর। উন্মোচন করবে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়। তবে গ্লোবাল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে চীনের রাষ্ট্র মালিকানাধীন চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট ওয়াং শুশেং বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতাও তুলে ধরেছেন। সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:১৬
false
ij
হাইমে সাবিনেস_ মেক্সিকোর লালন কবি হাইমে সাবিনেস। কবিতায় তিনিও দয়ালকে ডাকেন। হাইমে সাবিনেস-এর দয়ালের নাম তারুমবা। লাতিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। চিয়াপাস প্রদেশটি মেক্সিকোর একেবারেই সর্বদক্ষিণে। টাক্সটলা গুতিয়েরেজ তারই রাজধানী শহর। ১৯২৫ সালের ২৫ মার্চ টাক্সটলা গুতিয়েরেজ এ মেক্সিকোর সবচে জনপ্রিয় কবি হাইমে সাবিনেস-এর জন্ম । বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পেনের সাহিত্য নিয়ে পড়বার আগে তিন বছর মেডিকেলেও পড়েছেন সাবিনেস। সরকারি চাকরি করেছেন কিছুকাল। ব্যবসা করতেন । লালনও। রাজনীতিও করতেন সাবিনেস। লালন অবশ্য আত্মার রাজনীতি করেছেন। সাবিনেস এর কবিতায় উঠে আসে পরাবাস্তব চিত্রকল্প, মেক্সিকোর পার্বত্য-প্রকৃতি, মেক্সিকোর শহুরে মানুষের নিত্যদিনকার দিনযাপন এবং ঈশ্বর। ঈশ্বর অবশ্য তৈরি করে নিয়েছেন সাবিনেস-নাম দিয়েছেন তারুমবা। লালনের যেমন-দয়াল। কবিতার শেষে - লালনের মতন তারুমবা তথা দয়ালকে ডাকেন সাবিনেস । কাজেই, তাঁর কবিতার স্বর কখনও গম্ভীর কখনও শ্লেষাত্বক। কবি বলেই সম্ভবত কোণঠাসা আদিবাসী ইনডিয়ানদের প্রতি অশেষ সহানুভূতি ছিল সাবিনেস-এর। দশ খন্ডে হাইমে সাবিনেস-এর কবিতাসমগ্র সমাপ্ত হয়েছে । কবি সাবিনেস-এর মৃত্যু ১৯৯৯ সালের ১৯ মার্চ । তারুমবা তারুমবা। আমি পিঁপড়েদের সঙ্গে যাই। মাছির পায়ের চারিদিকে মাটির ওপর দিয়ে যাই-যাই বাতাসের ভিতর দিয়ে। যাই মানুষের জুতায় খন্ডিত খুরে, যাই পাতায়, কাগজে; আমি যাই যেখানে তুমিও যাও তারুমবা, আমি এসেছি যেখান থেকে তুমি এসেছ। আমি মাকড়শাকে চিনি। আমি জানি তুমি তোমার সম্বন্ধে যা জান এবং তোমার বাবা যা জানতেন আমি জানি তুমি আমার সম্বন্ধে যা বলেছ না জানার জন্য ভয় হয় এখানে আমার পিতামহের মতন- দেওয়ালের দিকে চেয়ে, ভালো ও মৃত; আমি বাইরে গিয়ে এখন চাঁদের আলোয় হিসি করব। তারুমবা, দ্যাখো, কেমন বৃষ্টির মত মনে হয়। দিনের ঘরের ভিতরে দিনের ঘরের ভিতরে ঢোকে মানুষ আর জিনিস । দুর্গন্ধলতা, নির্ঘুম অশ্বেরা চটুল সুর জানালায় মেয়েদের পুতুল তুমি আর আমিও ঢুকি তারুমবা। ঢোকে নাচ, ঢোকে সূর্যও ঢোকে ইন্সুরেন্সের দালাল আর এক কবি। পুলিশ। আমরা সবাই আমাদের বেচতে যাচ্ছি তারুমবা। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১১:০০
false
mk
দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল অবরোধ-হরতালে ভয়াবহ সহিংসতায় সারা দেশে মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমায় মারা যাচ্ছেন অসহায় মানুষ। কথিত বন্দুকযুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। আন্দোলনকারীদের হামলায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীও মারা যাচ্ছেন। সব মিলে চলমান আন্দোলনে এ পর্যন্ত ১৫৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে পেট্রলবোমা ও আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ৬৬ জন। কথিত বন্দুকযুদ্ধ, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গুলি, গণপিটুনি ও ট্রাকচাপা এবং রাজনৈতিক সংঘর্ষে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের মোট ৬৩ নেতাকর্মী মারা গেছেন বলে বিএনপি দাবি করেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যোগ হয়েছে গুম আতংক। বিশেষ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হওয়ার পর বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। গত ২ মাসে ৩৬ নেতাকর্মী গুম হন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এরমধ্যে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আদালতে তোলা হয়েছে ১৪ জনকে। এখনও খোঁজ মেলেনি সালাহ উদ্দিনসহ ১৮ জনের। এই ১৮ জনের মধ্যে ১১ জনের পরিবার যুগান্তরের কাছে অভিযোগ করেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাদের স্বজনদের তুলে নিয়ে গেছে। বাকি ৭টি পরিবারের সঙ্গে যুগান্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ৫ জানুয়ারির পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে এ ৭ জন নিখোঁজের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গুম সম্পর্কে পরিবারগুলোর অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে র‌্যাব। এদিকে হরতাল-অবরোধের সময় বিএনপি-জামায়াতের হামলায় ক্ষমতাসীন দলের ২৫ নেতাকর্মী খুন হয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এবং যুগান্তরের প্রতিনিধিদের নিজস্ব অনুসন্ধান এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে তৈরি করা তালিকা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।পেট্রলবোমা ও পুলিশের হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় দেড় হাজার মানুষ। এদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এদের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সারা দেশের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নেন ৩৫০ জন। এমনকি সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে রেহাই পাননি।বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নেয় আইনশৃংখলা বাহিনী। তারা জিরো টলারেন্স দেখিয়ে সারা দেশে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে শুরু করে কেন্দ্র ও তৃণমূলের নেতাকর্মী আটক এবং গ্রেফতার হন। নাশকতার ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৩৫ হাজার নেতাকর্মীকে ১ হাজার ৪০০ মামলার আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ১৬ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আটক ও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। যদিও সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, এ সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়। নির্যাতন করা হয় পরিবারের সদস্যদেরও বলে ২০ দলীয় জোট সূত্র নিশ্চিত করেছে।আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটকের পর নিখোঁজের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতী মাহমুদ খান যুগান্তরকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’র‌্যাব সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে যথাযথ আইন মেনে আসামি গ্রেফতার করে। যে কোনো আসামিকে আটকের পর তথ্যপ্রমাণসহ নির্দিষ্ট সময়ে সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করা হয়। এক্ষেত্রে র‌্যাব সদস্যরা সব সময়ই আইনের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল থাকেন। আটকের পর অধিকাংশ নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের অভিযোগ র‌্যাবের বিরুদ্ধে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুফতী মাহমুদ খান বলেন, র‌্যাব আইনের বাইরে কিছু করে না। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজের বিষয়ে স্বজনদের অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন যুগান্তরকে বলেন, কেউ মামলার আসামি বা সন্দেহভাজন হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে এটাই স্বাভাবিক। পুলিশ আটকের পর কাউকে খুঁজে না পাওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বপ্রণোদিত হয়েই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হয়। কারণ কেউই আইনের বাইরে নয়। ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোথাও পুলিশ আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার অধিকার পুলিশের রয়েছে। জানুয়ারি থেকে কথিত বন্দুকযুদ্ধ, গণপিটুনি, গুলিবিদ্ধ ও ট্রাকচাপায় বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ৬৩ নেতাকর্মী খুন- দাবি বিএনপির : যুগান্তর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটে এ পর্যন্ত আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধ, গণপিটুনি, গুলিবিদ্ধ হয়ে, ট্রাকচাপায় ৫৩ জন মৃত্যুবরণ করেন। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা মারিয়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি মজির উদ্দিন ৫ জানুয়ারি বানেশ্বর বাজারে মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। একইদিন শিবগঞ্জের কানসাটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করতে গেলে পুলিশের গুলিতে জামশেদ আলী নামে একজন বিএনপি কর্মী খুন হন। জামশেদ শিবনারায়ণপুরের মমতাজ আলীর ছেলে। ৭ জানুয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে পুলিশের গুলিতে মারা যান মিজানুর রহমান রুবেল ও মহিউদ্দিন বাবুর্চি। ওইদিন বিকালে ২০ দলের মিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাদের নোয়াখালীর মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তারা দু’জন মারা যান। রুবেল চৌমুহনী বড়পোল এলাকার দোকান মালিক ছিলেন। আর মহিউদ্দিন যুবদল কর্মী। ১৪ জানুয়ারি লোহাগড়া উপজেলায় ট্রাকের চাপায় মারা যান মোহাম্মদ জুবায়ের নামে এক শিবিরকর্মী। জামায়াতের অভিযোগ, পুলিশ তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কানসাটের শ্যামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি মতিউর রহমান নামে ছাত্রদল নেতা খুন হন ১৫ জানুয়ারি। শ্যামপুরের বাজিতপুর গ্রামের অনুসাক আলী ওরফে মন্টু মিয়ার ছেলে সে। ১৯ জানুয়ারি রাতে ঢাকার মতিঝিলে বন্দুকযুদ্ধে খুন হন জামায়াত নেতা ইমরুল কায়েস। তিনি নড়াইল পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ছিলেন। নড়াইল শহর জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেন মোল্লার ছেলে কায়েস। খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনি ২০ জানুয়ারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তার শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। তিনি ইয়াকুব আলীর ছেলে। তার মৃত্যুর সময় স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। একদিন আগে জনির স্ত্রীর একটি পুত্র সন্তান হয়েছে। লক্ষ্মীপুর সদর ছাত্রদল সাবেক নেতা সোলায়মান উদ্দিন জিসান র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মারা যান। আবদুল কালাম আজাদ ও সুলতান বিশ্বাস ২৫ জানুয়ারি রামপুরার বনশ্রীতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। আজাদের বাড়ি ভোলায়। গত ২২ ডিসেম্বর তিনি নিখোঁজ হন। তারা দু’জন পেশাদার ছিনতাইকারী বলে পুলিশ দাবি করে। আসাদুল্লাহ তুহিন নামে চাঁপাইয়ের ছাত্রশিবিরের নেতাকে ২৬ জানুয়ারি র‌্যাব পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। তুহিনের বাবা ইমাদুল হক অভিযোগ করেন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিকল্পিতভাবে তার ছেলেকে হত্যা করেছে। র‌্যাবের দাবি তাদের গাড়ি থেকে পালানোর সময় ট্রাকের ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়। নবাবগঞ্জ সিটি কলেজ শাখা শিবিরের সভাপতি ছিলেন তুহিন।রাজশাহীর ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম শাহীন ২৮ জানুয়ারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তিনি রাজশাহীর পদ্মা প্রিন্টিং প্রেসের মালিক ছিলেন। রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে সে। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নোওয়াকাটি গ্রামের রফিকুল ইসলাম ২৮ জানুয়ারি মধ্যরাতে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। পুলিশের দাবি তিনি আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। নান্দাইল উপজেলা ছাত্রদল নেতা আসিফ পারভেজ তপনের মরদেহ ২৯ জানুয়ারি ময়মনসিংহ থেকে উদ্ধার করা হয়। তিনি কিশোরগঞ্জ কলেজে এলএলবিতে পড়ালেখা করতেন। রাজশাহী মহানগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আইনুর রহমান মুক্তাকে ২৯ জানুয়ারি আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে গ্রেফতার করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। পরের দিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়। ভোলা চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মুকুলের গুলিবিদ্ধ লাশ ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর রূপনগর থেকে উদ্ধার করা হয়। তার বাবা মোস্তফা কামাল চরফ্যাশন উপজেলা জামায়াতের আমীর। এমদাদুল্লাহ নামে এক শিবিরকর্মী ৩০ জানুয়ারি মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। সে ঢাকা কলেজ পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র ছিল। সে ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড (শাহআলী) ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিল বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুর সদরের বানিয়ারপাড় গ্রামে। সিরাজগঞ্জের উল্লাহপাড়ায় স্থানীয় জামায়াত নেতা সাইদুল ইসলাম ১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। পরের দিন তিনি মারা যান। সাইদুর উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ও ঢেউটিন ব্যবসায়ী ছিলেন। যশোরের মনিরামপুর যুবদল নেতা ইউসুফ মিয়া ও লিটন আলীকে ২ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে তার স্বজনরা অভিযোগ করেন। পরের দিন ট্রাকচাপায় তাদের মৃত্যু হয় বলে পুলিশ জানায়। মুজাহিদুল ইসলাম জিহাদ ও শাখাওয়াত হোসেন রাহাত নামে দু’জন ৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। ৪ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে ভাসানটেক বালুর মাঠে বিএনপি কর্মী আল আমিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৮ জানুয়ারি থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ৪ ফেব্র“য়ারি ভাসানটেকে গাজী মোহাম্মদ নাহিদ নামে এক বিএনপি কর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়। বন্দুকযুদ্ধে তিনি মারা যান বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে মনির হোসেন নামে একজন বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। তিনি একটি কার্টন ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। তার ভাই ইসরাফিল জানান, আগের রাতে পুলিশ পরিচয়ে বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। সাতক্ষীরা জামায়াতকর্মী শহিদুল ইসলাম ৬ ফেব্র“য়ারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তিনি সাতক্ষীরা জামায়াত নেতা নূর আলীর ছেলে। একই দিন শিবির কর্মী শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারী কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। শাহাবুদ্দিন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা শিবির সভাপতি ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবির নেতা সাহাবুদ্দিন রিপন ৬ ফেব্র“য়ারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তিনি ক্রুপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ৭ ফেব্র“য়ারি মো. বাচ্চু নামে জামায়াতের এক কর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ৮ ফেব্র“য়ারি মিরপুরের তালতলায় বন্দুকযুদ্ধে মারা যান জসীমউদ্দিন নামে এক শিবির নেতা। বিএনপি কর্মী রাজু আহমেদ ৮ ফেব্র“য়ারি যশোরে ক্রসফায়ারে মারা যান। ৯ ফেব্র“য়ারি যাত্রাবাড়ীতে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান রাসেল নামে একজন। তিনি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করতেন। বিএনপি নেতা মো. সোহেল মিয়াকে ৮ ফেব্রুয়ারি তার চৌদ্দগ্রামের বাসা থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। পরের দিন দাউদকান্দিতে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। কুমিল্লা সদরে কালা স্বপন নামে একজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ট্রাকচাপায় তার মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়। তার বাবার নাম বাবুল মিয়া। চৌদ্দগ্রামের জগমোহনে তার বাসা। ১৫ ফেব্রুয়ারি সীতাকুণ্ড উপজেলায় পুলিশের গুলিতে ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আরিফ হোসেন আরিফ (২৪) নিহত হন। মাগুরার ছয়ঘরিয়া ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান ১৫ ফেব্র“য়ারি পুলিশের গুলিতে মারা যায়। ১৪ ফেব্র“য়ারি দিনাজপুরের নাশরাতপুর ইউনিয়ন শিবিরের সভাপতি মতিউর রহমান যৌথ বাহিনীর অভিযানে গুলিবিদ্ধ হন। পরের দিন তিনি মারা যান। ১৭ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা সদরের শিবিরের সাবেক সভাপতি মোস্তফা মঞ্জিল ক্রসফায়ারে মারা যান। ১৭ ফেব্রুয়ারি খুলনার ডুমুরিয়ার বিএনপি কর্মী আবু সাইদকে তার বাসা থেকে আটক করে পুলিশ। পরের দিন যশোরের মনিরামপুরে তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। একইদিন মনিরামপুরে স্থানীয় বিএনপি কর্মী বজলুর রহমান বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। যুবদল নেতা মঈনউদ্দিন চৌধুরী বাবলুর মরদেহ ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে সাতটি গুলির চিহ্ন ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বন্দুকযুদ্ধে মারা যান ছাত্রদল নেতা টিপু হাওলাদার ও যুবদল নেতা কবির মোল্লা। আগের দিন তাদের ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। টিপু বরিশাল জেলা ছাত্রদলের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। কবির বরিশাল জেলা যুবদলের রাজনীতি করতেন। শ্রমিক দল নেতা আবদুল ওয়াদুদ বেপারি ২৩ ফেব্র“য়ারি রাজধানীর বাঙলা কলেজের কাছে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। একই রাতে মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকায় বাপ্পী, রবিন ও সুমন রবি দাস নামে তিনজন গণপিটুনিতে মারা গেছে বলে পুলিশ দাবি করলও তাদের তিনজনের শরীরে অসংখ্য গুলির চিহ্ন ছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এরা শ্রমিক দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ সদরে পলাশ হোসেন ও দুলাল হোসেন নামে দু’জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ডিবি পরিচয়ে তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তবে পুলিশ তা অস্বীকার করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীনগর এলাকায় মো. শাহীন নামে স্থানীয় এক বিএনপি কর্মীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ৪ মার্চ ফেনীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ছাত্রদল নেতা আরিফুর রহমানকে না পেয়ে তার বাবা মফিজুর রহমানকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় ভয়ে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। ৮ মার্চ রংপুরের মিঠাপুকুরে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান স্থানীয় জামায়াত নেতা নাজমুল হক লাবলু। ইসরাফিল আহমেদ নামে লক্ষ্মীপুরের বশিকপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা ১১ মার্চ নিখোঁজ হন। পরের দিন নোয়াখালীর ডেইলা বাজার এলাকায় তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। মাগুরার শালিখার শতখালী এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে শালিখার ছয়ঘরিয়া এলাকায় ১৬ ফেব্র“য়ারি সন্ধ্যার প্রাক্কালে বিএনপি সমর্থক মশিয়ার রহমান (৪০) নামের এক রংমিস্ত্রি পুলিশের ওপর বোমা হামলার কথিত অভিযোগে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।বিভিন্ন সংঘর্ষে নিহত : পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫ জানুয়ারি নাটোর ছাত্রদল নেতা রাকিব মুন্সী, রায়হান হোসেন রানা নিহত হন। ১৫ জানুয়ারি নোয়াখালী সোনাইমুড়িতে মোর্শেদ আলম পারভেজ নামে এক ছাত্রদল নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৮ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হাতে খুন হন সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। ২৭ জানুয়ারি ভোলার চরফ্যাশনে ছাত্রদল নেতা হারুনুর রশিদ ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হামলায় গুরুতর আহত হন। ওইদিনই তিনি হাসপাতালে মারা যান। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে যুবদল নেতা ইমাম হোসাইন রুবেল ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হামলায় নিহত হন। মো. সোহেল নামে বেগমগঞ্জে যুবদল কর্মীকে প্রতিপক্ষরা গুলি করে হত্যা করে। যশোর সদরে মো. ডলার নামে এক বিএনপি কর্মীকে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা কুপিয়ে হত্যা করে ২৫ ফেব্রুয়ারি। ৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরে সোহেল রানা নামে বিএনপি কর্মী দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন। ইসলাম হোসেন নামে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা যুবদল নেতাকে ট্রাকচাপায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। তার বাবার নাম ইবরাহিম হোসেন। তিনি ঋষিকুল ইউনিয়ন যুবদলের নেতা ছিলেন। গুলিতে পঙ্গু অর্ধশত জন : গত ২ মাসে পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে অর্ধশত জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের সবারই স্থায়ী পঙ্গু হওয়ার আশংকা রয়েছে। ৯ জানুয়ারি রাজধানীর শ্যামপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, ১২ জানুয়ারি উত্তরার আজমপুরের মুন্সী মার্কেটের সামনে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বিএনপি কর্মী হাজী ফায়েজ আলী, ২০ জানুয়ারি শাহবাগে পুলিশের গুলিতে নূর হোসেন, ২১ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার লতিফপুরে সৌদিপ্রবাসী মহীনউদ্দিন, ২ ফেব্র“য়ারি পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. নোমান, কুমিল্লায় জামায়াত কর্মী ও মসজিদের ইমাম মাওলানা ইউসুফ, ঢাকার পল্লবীতে গাড়িচালক ইসমাইল হোসেন এবং বাড্ডার ক্যামব্রিয়ান কলেজের সামনে খেলনা বিক্রেতা শাহ মো. সালমান ও নিউমার্কেট এলাকায় যুবদল নেতা আবদুর রাজ্জাক গুলিবিদ্ধ হন।৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ৫ জন। তারা হলেন- সাতক্ষীরায় ফারুক হোসেন, রাজশাহী শহরের ভদ্রার সেতু আহম্মেদ, গাজীপুরের শিববাড়ী মোড়ে লেগুনাচালক নাসির উদ্দিন, ঢাকার গুলিস্তানে ইসমাইল হোসেন, মোহাম্মদপুরে সলিমুল্লাহ রোডে নাজমুল আহসান ও ফজলুল হক।৪ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র নয়ন বাছার ও ঢাকার শাহজাহানপুরে কাঁচামাল ব্যবসায়ী চাঁদপুর ফরিদগঞ্জের আবু কাওছার, ৬ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পুলিশের গুলিতে আহত হন ছাত্রদল নেতা আবদুল মজিদ, ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বঙ্গবাজারে সিঙ্গাপুর প্রবাসী আবদুর রহমান (৩০) ও ইমিটেশন ব্যবসায়ী মামুন, ৮ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপকারী সন্দেহে টহল পুলিশের গুলিতে জাকির হোসেন ও কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে জামায়াত কর্মী এবং মসজিদের ইমাম মাওলানা বেলাল, ১১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বাগেরায় বিএনপি সমর্থক ও পান দোকানি শরিফ মোল্লা ও বাসচালকের সহকারী আর মেহেদী, ১৩ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীর দ্বীন মোহাম্মদ মার্কেটের অ্যাম্ব্রডায়রি ব্যবসায়ী আতাউর রহমান পুলিশের গুলিতে আহত হন। ১৫ ফেব্র“য়ারি সিলেটে মিছিলকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালালে শর্মী দেব নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী আহত হয়। শর্মী কিশোরী মোহন বালিকা বিদ্যালয় হতে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে আহত হয় আজিম উদ্দিন কলেজের ছাত্র ফরিদ আহমেদ। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ মার্চ মারা যায় সে।১ মার্চ রাজশাহীতে রিংকু নামে এক তরুণ, ২ মার্চ লক্ষ্মীপুরে যুবদল কর্মী আরিফ হোসেন (১১ মার্চ পঙ্গু হাসপাতালে মৃত্যু), ৮ মার্চ কবি নজরুল সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন, ৯ মার্চ সায়েদাবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ১১ মার্চ রাজশাহী মহানগরীর শ্যামপুরে শিবিরকর্মী সবুজ আলী ও ষষ্ঠীতলা এলাকায় অপর শিবিরকর্মী শোভন গুলিবিদ্ধ হয়।এছাড়া ব্যবসায়ী মোমেন, কদমতলীর যুবদল নেতা আবদুল হামিদ, বাড্ডার মাসুম বিল্লাহ, সিরাজগঞ্জে রফিকুল ইসলাম ও ওবায়দুল ইসলামসহ বহু নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।পেট্রলবোমা ও আগুনে নিহতরা : ৬ জানুয়ারি থেকে চলা দেশব্যাপী অবরোধ ও হরতালে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমা ও আগুনে দগ্ধ হয়ে এ পর্যন্ত ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুর, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় বাসে ভয়াবহ পেট্রলবোমা হামলা হয়। চৌদ্দগ্রামে সাতজন ও রংপুরে ৫ জন তাৎক্ষণিকভাবে মারা যান। এ তিনটি বাসে আগুনে দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন প্রায় অর্ধশত।যশোরের মুরাদ আলী মোল্লা ১১ জানুয়ারি মারা যান। ৬ জানুয়ারি পেট্রলবোমায় তিনি দগ্ধ হন। ১৩ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের জোরানগঞ্জে বোমার আঘাতে ট্রাকে থাকা তিনজন দগ্ধ হন। পরে এনাম হোসেন নামে একজন মারা যান। ১৪ জানুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুরে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় রহিমা খাতুন, তার ছেলে রহিম বাদশা, জেসমিন আক্তার, তসিরন বেগমসহ এক শিশু। পরে হাসপাতালে মারা যান মনোয়ার বেগমসহ আরও দু’জন। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় তোফাজ্জল হোসেন মারা যান। ১৮ জানুয়ারি বরিশালে পেট্রলবোমায় মারা যান সোহাগ বিশ্বাস।ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটে মোট ১৬৭ জন ভর্তি হয়। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৪ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ১৫ জন। তারা হলেন যশোরে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ মুরাদ, রংপুরে বোমা হামলায় তাসিরন, মগবাজারে প্রাইভেট কার চালক আবুল কালাম, সাভারে পেট্রলবোমা হামলা দগ্ধ জাকির হোসেন, ট্রাকচালক আবদুর রহিম, ট্রাক ড্রাইভার বকুল দেবনাথ, কাভার্ড ভ্যান চালক হোসেন মিয়া, অটোরিকশায় বোমা হামলায় আবদুল ওয়াহিদ বার্ন ইউনিটে মারা যান। এছাড়া চট্টগ্রামের মো. জাহিদ, নেত্রকোনার বাপ্পি, কাহালু বগুড়ার ট্রাক হেলপার জাহাঙ্গীর, ভুলতার শাকিল বোমা হামলায় দগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া মাতুয়াইলে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ নূর আলম বার্ন ইউনিটে মারা যান। কক্সবাজারের রাশেদুলও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সবশেষ গাজীপুরের মরিয়ম ১২ মার্চ বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ১৪ জানুয়ারি বঙ্গবাজারে ককটেল হামলায় গুরুতর আহত হন সানজিদ হাসান অভি। পরে ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। অভি কবি নজরুল সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। মিঠাপুকুরে পেট্রলবোমায়া দগ্ধ মনোয়ারা বেগম কয়েকদিন আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ২ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় সাতজন পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। তারা হলেন যশোর শহরের সেন্ট্রাল রোডের বাসিনার নুরুজ্জামান পপলু ও তার মেয়ে মাইসা তাসনিম, কক্সবাজারের চকরিয়ার আবু তাহের ও মো. ইউসুফ, নরসিংদীর বালুরপাড়া গ্রামের আসমা বেগম ও তার ছেলে মো. শান্ত, ঢাকার কাপ্তান বাজার এলাকার মো. ওয়াসিম। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় পেট্রলবোমা ও আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান, নূর হোসেন, জাফর রাঢ়ি, শাহজাহান মিয়া, আবদুর রহিম, আবদুল মালেক, আ. রশিদ, লিটন হোসাইন নয়ন, গনেশ দাস, আলম, লিনি হোসেন, মাহমুদুল হাসান, পলাশ হোসেন, আবুল কালাম, সাজু মিয়া, সোনাভান, মুন্না, ইজাজুল, সুমন, হালিমা বেগম, শিল্পী রানী, সৈয়দ আলী, কামাল হোসাইন, রাশেদুল ইসলাম, শামীম মিয়া ও শহীদুল ইসলাম।গুম ৩৬ : গত ৭১ দিনে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুলির পাশাপাশি আতংক ছড়িয়েছে গুম ও অপহরণ। এ সময়ের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের কমপক্ষে ৩৬ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে বলে পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। আদালতে তোলা হয়েছে ১৪ জনকে। এখনও খোঁজ মেলেনি বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন ও ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খোকনসহ ১৮ জনের।নিখোঁজ ১৮ জনের মধ্যে গত দু’দিনে ১১ জনের পরিবারের সঙ্গে যুগান্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। এসব পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর পরিচয়ে আটকের পর থেকে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এরা হচ্ছে : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা আবদুল বাসেত মারজান, মিঠাপুকুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক বিএনপি কর্মী আল আমিন কবির, তার স্ত্রী বিউটি বেগম, প্রতিবেশী মৌসুমী, বিএনপি সমর্থক আইনজীবী সোহেল রানা, পল্লবী থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নূর আলম, পল্লবীর পোশাক শ্রমিক ও জাতীয় গার্মেন্টস কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা আমিনুল ইসলাম, মতিঝিলের বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের আত্মীয় ও ফকিরাপুলের ব্যবসায়ী মাজেদুর রশীদ ও তিতুমীর কলেজের ছাত্রদল কর্মী মেহেদী হাসান রুয়েল।বাকি সাতজন হচ্ছেন : কাফরুল থানা জামায়াতের নেতা একেএম তৌফিকুল হক, কুষ্টিয়ার বিএনপি কর্মী হাফিজুর রহমান ও সাগর আলী, ঢাকা কলেজের ছাত্র আতাউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যুবায়ের আনসারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুজাহিদ হোসেন অপু ও মাইনুল ইসলাম। এদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে এদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে আটকের পর নিখোঁজ থাকার খবর জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের পরিবারের ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি পাঠিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে আটকের পর নিখোঁজের দাবি করা হয়েছে।মানবাধিকার কর্মীরা বলেন ‘কোনো ব্যক্তিকে আটকের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বীকার বা আদালতে হাজির না করাকে গুম বোঝায়।’ এ ক্ষেত্রে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গত ২৪ জানুয়ারি আটকের ২০ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর আটকের বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। এ কারণে তাকে গুম করা হয়েছে বলা যাবে না।১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে বলে তার পরিবার দাবি করে। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট মামলা ও থানায় জিডি করা হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলছে তারা সালাহ উদ্দিনকে আটক করেনি। আট দিনেও সালাহ উদ্দিনের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।গত ৬ মার্চ রাজধানীর শুক্রাবাদ থেকে ছাত্রদলের জুয়েল-হাবীব কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। ১০ দিনেও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে তার স্ত্রী শাহ ইশরাত জাহান আজমেরি যুগান্তরকে জানান। খোকনের সন্ধান চেয়ে আদাবর থানায় জিডি করা হয়েছে।গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সমর্থক আইনজীবী সোহেল রানাকে উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টর থেকে ছাই রঙের মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। নিখোঁজের স্ত্রী আফরোজা সুলতানা জানান, তার স্বামী বিএনপি সমর্থক হলেও সক্রিয় নেতা নন। ঘটনার দিন সোহেল আদাবরের বাসা থেকে তার বন্ধু রিংকুসহ উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে যান। উত্তরা থেকে রিংকু ও সোহেলকে আটক করে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তোলা হয়। কিছু সময় পর রিংকুকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩৭ দিন পার হলেও সোহেলের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আদাবর থানায় আফরোজা সুলতানার করা জিডি তদন্ত করছেন আদাবর থানার এসআই মারূফ হাসান।গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন ডিবি পুলিশ পরিচয়ে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মারজানকে আটক করে। তার গ্রামের বাড়ি মিঠাপুকুরের তিতলী দক্ষিণ পাড়া। তার স্ত্রী রোকাইয়া খানম লুকি যুগান্তরকে বলেন, বাসেত মারজান মিঠাপুকুর উপজেলার নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদের কাজে তিনি ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় এসে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। সেখান থেকে রাতে ডিবি পরিচয়ে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে। এরপর থেকে এখনও নিখোঁজ তিনি।গত ১৪ জানুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুরের তিতলী গ্রাম থেকে যৌথ বাহিনী দলিল লেখক আল আমিন কবির, তার স্ত্রী বিউটি বেগম ও তাদের প্রতিবেশী মৌসুমীকে শত শত মানুষের সামনে থেকে আটক করে নিয়ে যায়। আল আমিন কবিরের মা মাতুরা বেগম মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান, শতাধিক লোকের সামনে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির অস্ত্রধারী লোকজন বাড়ি থেকে ছেলে আল আমিন, ছেলের বউ বিউটি আক্তার ও প্রতিবেশী মৌসুমীকে আটক করে নিয়ে গেছে। রংপুর জেলা কারাগার, রংপুরের কোতোয়ালি থানা, আশপাশের থানা, র‌্যাব কার্যালয় হাসপাতালসহ সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে পল্লবী থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর আলমকে গাজীপুরের জয়দেবপুরের বড় ভাইয়ের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার স্ত্রী জয়দেবপুর থানায় জিডি ও অপহরণ মামলা করেছেন। কিন্তু মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে নিখোঁজ নূর আলমের স্ত্রী রীনা আলম মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান।গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মতিঝিলের তরঙ্গ ভবনের সামনে থেকে অপহরণ করা হয় মতিঝিলের ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের আত্মীয় মাজেদুর রশীদ মাজেদকে। তার বাসা ১৭৮, ফকিরাপুলে। মাজেদের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন বিথী যুগান্তরকে বলেন, স্বামীর সন্ধান পেতে একাধিক সংবাদ সম্মেলন ও ৫ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।গত ২৬ ফেব্রুয়ারি যমুনা ফিউচার পার্কের দ্বিতীয় তলা থেকে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের কর্মী মেহেদী হাসান রুয়েলকে আটক করে পুলিশ। সঙ্গে শুভ নামে আরেকজন ছিল। শুভকে বিমানবন্দর এলাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু ২০ দিনেও রুয়েলের কোনো খোঁজ মেলেনি বলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা যুগান্তরকে জানান।গত ৫ মার্চ পল্লবী থেকে নিখোঁজ হন পোশাক শ্রমিক ও জাতীয় গার্মেন্টস কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা আমিনুল ইসলাম। তার স্ত্রী মিনা আমিন অভিযোগ করে বলেন, ৫ মার্চ সকালে বাসা থেকে বের হন তার স্বামী। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ। ৬ মার্চ তিনি পল্লবী থানায় জিডি ও ১০ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন। মিনা যুগান্তরকে বলেন, ‘জানি না কোন অপরাধে আমার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে, আমি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা করছি।’গুমের পর গুলিবিদ্ধ ৪ জনের লাশ : তারা হলেন- ১৬ জানুয়ারি নিহত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের শ্যামপুর থেকে ছাত্রদল নেতা মতিউর রহমান, ১৭ জানুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার বাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও বর্তমানে তিনি বিএনপি কর্মী কৃষক নাসির উদ্দিনের, ১৭ জানুয়ারি ৬১, দক্ষিণ মৈশুণ্ডিতে শ্যালম অ্যাডভোকেট সোহেলের বাসা থেকে আটক হওয়া নড়াইলের জামায়াত নেতা ও পৌর কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট ইমরুল কায়েস, ৮ মার্চ শ্যামলী থেকে নিখোঁজ কাজীপাড়া মাদ্রাসার ছাত্র জসিম উদ্দিন মুন্সী। এই চারজনের পরিবারের সঙ্গে যুগান্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। মৃতদেহ পাওয়ার দু-তিন দিন আগে তাদের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করে নিয়ে যায় বলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।আদালতে ১৪ : আইনশৃংখলা রক্ষাকারী পরিচয়ে আটকের পর দীর্ঘদিন গুম থাকার পর যে ১৪ জনকে আদালতে তোলা হয়েছে তারা হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের শ্যামপুর ইউনিয়নের ছাত্রদল কর্মী হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী আবু তাহের শিশির, একই এলাকার ডাল মিলের শ্রমিক মোজাম্মেল হোসেন, ঢাকা কবি নজরুল সরকারি কলেজের ছাত্রদল কর্মী জসিম উদ্দিন, সুজন চন্দ্র দাস, রোমান আহমেদ, এম নজরুল হাসান, ইরাফান আহমেদ ওরফে ফাহিম, ঢাকা পলিটেকনিকের প্রথম বর্ষের ছাত্র সজীব, ঢাকা সিটি কলেজের ছাত্র আবদুল মান্নান, ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের ছেলে এসএসসি পরিক্ষার্থী রিফাত আবদুল্লাহ খান, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী ওসমান গনি, দুই গাড়ি চালক খোকন ও শফিক, ফেজবুক পেজ বাঁশের কেল্লার এডমিন প্রধান কেএম জিয়া উদ্দিন ফাহাদ। যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, জেলায় প্রাণ হারিয়েছেন এগারো জন। আহত হয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক। নাশকতার ঘটনায় জেলা এবং নগরীর সংশ্লিষ্ট থানায় বিএনপি-জামায়াতের ১২ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে ১৪৯টি মামলা করা হয়েছে।রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, গত দুই মাসে বিভিন্ন সংঘর্ষে রাজশাহী ও চাঁপাইয়ে নিহত হয় ১২ জন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই নিহত হয়েছে আটজন আর রাজশাহীতে চারজন। এই দু’জেলায় রাজনৈতিক ঘটনায় ৯০টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮ থেকে ৯ হাজার। গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীকে। আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের শতাধিক বাড়িতে ভাংচুর করা হয়েছে। অনেকের বাসার ফ্রিজ পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হয়। যৌথ বাহিনীর অভিযানের ভয়ে অনেকে এলাকায় ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মহদিপুর গ্রামে অভিযানকালে বেশি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। মহদিপুর ছাড়াও রসুলপুর ও চণ্ডিপুর গ্রামে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ব্যাপক ভাংচুর করা হয় বলে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন।খুলনা ব্যুরো জানায়, চলামান আন্দোলনে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলায় ২ জন নিহত হয়েছে। ৮টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ক্রসফায়ারে ৫ জন মারা গেছে। ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছে দুই জন। ৬৫ মামলায় আসামি করা হয়েছে ১২৩৭ জন। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তরিকুল ইসলামসহ ৬ নেতার বাড়িতে একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বিএনপি নেতাদের বাড়িতে ভাংচুর ও পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে।ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলমের চাতাল, বাড়িসহ অন্তত ৭-৮টি বাড়িতে পুলিশের উপস্থিতিতে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। ৩১ জানুয়ারি গভীর রাতে খোরশেদ আলমের চাতাল ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে তাণ্ডব চালানো হয়। এরপর পুলিশ খোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করে। তার পায়ে গুলি করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। যশোর জেলায় বিএনপি-জামায়াতের ২৬৪ নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন।বগুড়া : বগুড়া ব্যুরো জানায়, বগুড়ায় ৭১ দিনে হরতাল-অবরোধে পেট্রলবোমার আগুনে ৫ জন নিহত ও ৬ পুলিশসহ ৩৮ জন দগ্ধ হয়। এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭ জন। এসব ঘটনায় ৭১টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে জামায়াত-বিএনপির এক হাজার ৫০ জন নেতাকর্মীকে। গত ৪ মার্চ রাতে বগুড়া শহরের ঝাউতলায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ মমতাজ উদ্দিনের ব্যক্তিগত অফিসে পেট্রলবোমা হামলা চালানো হয়। এর প্রতিশোধ নিতে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা শহরে নবাববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপির অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। সোনাতলা ও নন্দীগ্রামে ৮-১০ নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর এবং লুটপাট করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় পেট্রলবোমায় ৮ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হন। এ পর্যন্ত দায়েরকৃত মামলা ২৪, আসামির সংখ্যা ১ হাজার ৪৫০ জন। গ্রেফতার ৩১৬ জন।দিনাজপুর : দিনাজপুরে গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে ১৫ মার্চ-এর মধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে মামলা হয়েছে ৩০টি। আসামি ৩২৮ জন। অজ্ঞাত ২ হাজার ৩০০ জন ও গ্রেফতার হয়েছে ১২৭ জন। পেট্রলবোমায় নিহত হয়েছে ট্রাক হেলপার মতিউর, তার বাড়ি দিনাজপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ কোতোয়ালির কসবা গ্রামে।বরিশাল : যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরো জানায়, চলমান আন্দোলনে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় পেট্রলবোমায় ৬ জন নিহত ও গুরুতর আহত হন ৪ জন। কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় ৩ জন। বিভিন্ন ঘটনায় মামলা হয়েছে ৮৮টি। এতে ৬ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ৩৯২ জন। হিজলা ও নলছিটিতে বিএনপি অফিস ভাংচুর এবং নলছিটিতে একটি কাচারি ও একটি দোকান ভাংচুর করা হয়।সিলেট : সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার ঘটনায় ৯৫ মামলা হয়। এসব মামলায় ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির ৭ হাজার, জামায়াতের ৩ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এতে গ্রেফতার ৪শ’। শতাধিক বাড়িঘর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হয়। পুলিশ জানায়, ঠাকুরগাঁও জিলা স্কুলসংলগ্ন একটি ট্রাকসহ দুর্বৃত্তরা এ পর্যন্ত ৫০-৬০টি যানবাহন ভাংচুর করে।কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জ ব্যুরো জানায়, দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে, পেট্রোলবোমা ও পাথর নিক্ষেপে ১৫ জন দগ্ধসহ অন্তত ৪০ নারী-পুরুষ আহত হন। এদের মধ্যে দু’জনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।নাটোর : নাটোর প্রতিনিধি জানান, চলমান আন্দোলনে বিএনপির দুই নেতা খুন হন। ২০ দলের সাড়ে চার হাজার নেতাকর্মীর নামে ৯১টি মামলা ও শতাধিক নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছে। পুলিশ ও সরকারদলীয় হামলায় আহত হয়েছেন ৩০ জনের বেশি নেতাকর্মী।প্রতিপক্ষের হামলায় ক্ষমতাসীন দলের ২৫ নেতাকর্মী খুন- দাবি আ’লীগের : গত প্রায় আড়াই মাসে সারা দেশে আওয়ামী লীগের ২৫ নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। এগুলো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছে নিহতদের পরিবার ও ক্ষমতাসীনরা। তাদের অভিযোগ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই এ ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি-জামায়াত।আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআইয়ের (সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন) হিসাব মতে ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে কমপক্ষে ২৫ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এরমধ্যে ১২ জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গুলিতে নিহত হয়েছেন ৪ জন, গলাকেটে ৪ জন, পিটিয়ে ৩ জন, আগুনে পুড়িয়ে ১ জন এবং শ্বাসরোধ করে ১ জনকে হত্যা করা হয়েছে।তবে ৮ মার্চের পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রাথমিভাবে খবর পেয়েছে সিআরআই। এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী। নৃশংসতা থেকে রক্ষা পায়নি স্কুলছাত্রও। যৌথ বাহিনী অভিযান চালানোর পর প্রতিশোধ নিতে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে ওই স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের ঘটনা।জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য ছিল সরকারকে অস্থিতিশীল করা। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা অবরোধ-হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করে জনমনে আতংক তৈরি করতে চেয়েছে। এভাবে তারা সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল। কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি জানান, যেসব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন- তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আর খুনিদের গ্রেফতারের পাশাপাশি আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। সিআরআইয়ের গবেষণাপত্রে নিহত ২৫ জনের নাম, ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে, বছরের শেষদিন রাতে (৩১ ডিসেম্বর ২০১৪) কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণপুর বাজারের বানঘর এলাকায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহ আলম নামের স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি শাহ আলমকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তার পরিবারের ধারণা, এটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় জামাল উদ্দিন (৩০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে ছাত্রশিবির। ৮ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরের যুবলীগ কর্মী ইউসুফকে ২০ দলীয় জোটের অবরোধকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে কানসাট বিএন বাজারে ৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় মোবারকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কর্মী মুকুল বিশ্বাসকে (৩০) পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় মুকুলের সঙ্গে থাকা আরও দু’জন গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ বিজিবির সহায়তায় মুকুলের লাশ একটি আমবাগান থেকে উদ্ধার করে।অবরোধ চলাকালে ১২ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে ফেনীর সোনাগাজী-মুহুরী প্রজেক্ট রাস্তার অশ্বিনীয়া পোল এলাকায় পিকেটারদের সঙ্গে যুবলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। পিকেটাররা যুবলীগ কর্মী মোবারক হোসেন ও সোনাগাজী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেলালের মৃত্যু হয়।সিআরআইয়ের গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, যৌথ বাহিনীকে সহযোগিতা করায় প্রতিশোধ নিতে ১৭ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে নবম শ্রেণীর ছাত্র রাজন আলী রকিকে (১৫) পিটিয়ে হত্যা করে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। নিহত রকি শিবগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শেখটোলা মহল্লার রুহুল আমিনের ছেলে। সে স্থানীয় বাবুপুর-উজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিল।কুমিল্লার সদর উপজেলার কালিবাজার ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামে ১৭ জানুয়ারি যুবলীগ কর্মী কামরুজ্জামান টিটু খুন হন। তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত কামরুজ্জামান টিটু ওই উপজেলার ধনুয়াইশ গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে। তিনি এলাকায় পোলট্রি ফার্মের ব্যবসায়ী।২০ জানুয়ারি যশোরের মনিরামপুরে শাহিনুর রহমান নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। শাহিনুর রহমান কাশিপুর গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে ও উপজেলা যুবলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য।২৩ জানুয়ারি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় হুমায়ুন কবীর (৪০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বায়শা ও আশিংড়ি গ্রামের মাঝে তালশারি নামক স্থান থেকে তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়।নিখোঁজের ৬ দিন পর ২৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি মোখলেছুর রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।৩১ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মজির উদ্দিনকে (৫০) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।৩১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার হাইতকান্দি ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামের এতিম আলীর বাড়িতে একাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চারদিকে আতংক সৃষ্টি করে সশস্ত্র ২৫-৩০ জন মুখোশ পরা দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে। দুর্বৃত্তরা যুবলীগ কর্মী মহিউদ্দিনকে কোপায় এবং গায়ে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে নিহত মহিউদ্দিনের ভস্মীভূত মরদেহ উদ্ধার করে। রাজনৈতিক শত্র“তায় জামায়াত ও শিবিরের লোকজন এ হামলা চালায় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।৩ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেলকে (৩০) গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত রুবেল দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে যুবলীগ কর্মী।৬ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পাথৈর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীনকে (৬৫) বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়।লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে ৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাত ৮টার দিকে যুবলীগ নেতা বাবর হোসেনকে (২৩) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি পূর্ব দিঘলী গ্রামের মফিজ উল্লার ছেলে।৮ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রনজু প্রামাণিককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার ফুলতলা এলাকায় নিজ বাড়ির কাছে খুন হন তিনি। নিহত রনজু ফুলতলা বাজার এলাকার মৃত শুকুর প্রামাণিকের ছেলে।৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ও চরমটুয়া ইউনিয়ন কমিটির সহসভাপতি এবং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাবুল মিয়া ওরফে বাবুল মেম্বারকে (৫৫) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ নেতা আবদুল হামিদ ওরফে হিরু মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সরিষার খেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।১৬ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দায় যুবলীগ কর্মী জুয়েল মিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। তার লাশ বিল থেকে উদ্ধার করা হয়।২০ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগ কর্মী আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবদুর রহমান এডুকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত আবুল কালাম আজাদ নাশকতা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের তথ্য পুলিশকে জানানোর কারণে জামায়াত-বিএনপির কর্মীরা তাকে হত্যা করেছে বলে দাবি দলীয় সহকর্মীদের।২২ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জে আদালতে হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আওয়ামী লীগ কর্মী হোসেন মৃধা (৪০) খুন হন। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।২৪ ফেব্রুয়ারি যশোরের সদর উপজেলার ইছালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনকে (৬০) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরে আরিফুর রহমান ফরহাদ (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করা হয়েছে।৫ মার্চ বগুড়ায় মনিরুজ্জামান মানিক (২৮) নামের এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হামলাকারীদের মধ্যে থাকা এক ছাত্রদল কর্মীও আহত হয়।৮ মার্চ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউপির সাবেক সদস্য ও আওয়ামী লীগ কর্মী মকুল হোসেনকে (৪৫) গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি দাড়ামুধা গ্রামের মৃত নওশের আলীর ছেলে। - See more at: Click This Link
false
rg
পৃথিবী একবার পায় তারে !!! আমার জন্মদিনে যারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। অভিজ্ঞতা যত কঠিনই হোক তা জীবনের অংশ। আমি সেই কঠিনকেই ভালোবাসিলাম। টাইম অ্যান্ড টাইড ওয়েটস ফর নান। মন এবং জানালা কোনোটাই বন্ধ করে রাখার কোনো মানে নেই। মানুষের স্বল্পায়ু জীবনে এটা যত বেশি খুলে রাখা যায়, তত বেশি তার দৈর্ঘ্য। মানুষের জীবনটাই এমন। এক জীবনের ছোট্ট ঝুলিতে অনেক অভিজ্ঞতা জমা হয়। যার কোনোটা ভারী মধুর কোনোটা ভারী তিক্ত। কোনো একটি একক অভিজ্ঞতা দিয়ে জীবন পার করে দেবার সুযোগ নেই। পৃথিবী একবার পায় তারে। অথচ সেই একবারের বাবুই পাখির জীবনে কত ঘটনা কতভাবে যে যুক্ত হয়। মানুষ আসলে এই পৃথিবীতে কিছুদিনের জন্য এক অদ্ভুত অনিশ্চিত পর্যটক। অন্য কারো জীবনের দায় কাউকে আটকাতে পারে না। যদি না সে কোনো চরম অপরাধ না করে। অথবা অন্য কারো জীবনের হননকারী না হয়। যদি না সে হত্যাকারী না হয়। তাহলে যার যার জীবনের সকল দায় তার তার। আর মানুষ সেই দায় জেনেই সামনে এগিয়ে যায়। কারো জন্য এখানে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। মানুষের জীবন বড় বিচিত্র ঘটনায় ভরপুর। সেখানে আনন্দ আছে, বেদনা আছে। হাসি-ঠাট্টা-মস্করা আছে। দুঃখ-কষ্ট আছে। সুখ তামাশা তিরস্কার আছে। সুখানুভূতি আছে। আর আছে ভালো লাগা মন্দ লাগা নানান কিসিমের গল্প। মানুষের গোটা জীবন আসলে একটা ছোটগল্পের ব্যবচ্ছেদের মত। সেখানে নিশ্চিত আর অনিশ্চিতের এক দোলনা খেলা করে সারাটা জীবন। এই ভালো তো এই খারাপ। মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দুপিঠ মিলেই মানুষের জীবন। জোয়ার ভাটার প্রবাহের মত এক চলমান টাট্টু ঘোড়া।কিছু প্রশ্নের কোনো ন্যায্য জবাব নেই। কিছু বিষয়ে আছে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক খামখেয়ালীপনা। যার সমাধান অন্য কেউ দিতে পারে না। নিজেকেই খুঁজে নিতে হয় সেই নিরুত্তর সাঁঝের বেলার রঙ। নির্বিকার আকাশের গায়ে সেই জবাব স্পষ্ট লেখা থাকে। কারো অন্তরজগতের বিভ্রাট হলে সেই রঙ অনুবাদ করা যায় না। সেই দুর্মেদ কঠিন ভাষার কোনো বিকল্প অনুবাদক দিয়েও কাজটি হবার নয়। যা কেবল নিজের চোখেই অনুবাদ করে বুঝে নেবার সময়।সময় এক সবুজ ডাইনি। পৃথিবীর চরাচরে সে ঘটনার সাক্ষি হবার জন্য ডানামেলে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ায়। পৃথিবীর শরীরে যখনই অসুখ হয়, সেই রোগের নিরাময় তখন পাতা ঝড়ার মত উড়ে উড়ে পাতা উল্টায়। কোথাও যার কোনো যথার্থ ব্যবস্থাপত্র নেই। সত্যি সেই অসুখের কোনো প্রেসক্রিপসশান নেই।মানুষকে সামাজিক জীব বলা হলেও মানুষ আসলে এক নিঃসঙ্গ প্রাণী। এক মানুষের অন্তর্জগতের খবর অন্য মানুষ পুরোটা টের পায় না। টের পায়না বলেই মানুষে মানুষে অনেক অন্তরলোকের দূরত্ব। সেই দূরত্ব মাপারও কোনো যথার্থ বাটখারা নেই। সমাজবিজ্ঞানীরা যতোই নানান ধরনের অনুজ্ঞা জাহির করুক না কেন, একজনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে অন্য মানুষের বাহ্যিক অনেক সাদৃশ্য চোখে পড়লেও সেই সাদৃশ্যের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব আছে। হাজার হাজার সময় পরমানু সেখানে ভিন্ন সাক্ষ্য দেবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রত্যেকের জীবন তার ইচ্ছের মতন স্বাচ্ছন্দে কাটুক আমরা কেবল এটুকু সুন্দর প্রত্যাশা করতে পারি। মানুষ নিজেই তার জীবনকে এক সময় টেনে নিয়ে যায় মহাশশ্বানের সিঁড়িঘরে। তারপর সে কেবল অন্য মানুষের কাছে গল্প হয়ে কিছু সময় টিকে থাকে। মহাকালের বিচারে সেই গল্পেরও কোনো নিরবিচ্ছিন্ন উপস্থিতি থাকার কথা নয়। কালের অথৈ গভীরে এককালের মানুষের গল্প হারিয়ে যায়। সেখানে আবার কয়েক শো বছর পরের মানুষের নতুন গল্প উড়ে বেড়ায়। ঘুরে বেড়ায়। আমরা আসলে পৃথিবীতে একটা গল্প রেখে তারপর সবাই দূর মহাশূন্যে কেবলই হাওয়া হয়ে যাই। এটাই অবধারিত নিয়তি।মানুষের সব স্মৃতিও একসময় বয়সের সাথে সাথে বিস্মৃতিতে পরিনত হয়। স্মৃতি আর বিস্মৃতি একই মস্তিক্সে বাস করে। তারা একই পাড়ায় খায়দায়, খেলাধুলা করে। একই বাড়িতে তাদের জন্য জীবন জুয়ার আসর বসে। জুয়ার দান শেষে যে যার ভাগ ঠিকঠাক বুঝে নেয়। মানুষের জীবন তাই জুয়া খেলার মত। সেখানে হার-জিত দুটোই গলা ধরাধরি করে সকাল সন্ধ্যা পাশাপাশি হাঁটে। পাশাপাশি একই বিষয় নিয়েই তাদের সকল দেন দরবার। সেই কারবারিতে যে কোন পক্ষ বিজয়ী হবে আগে থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কিছু নেই।তবু মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে । যদি পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নবপ্রেমজালে । যদি থাকি কাছাকাছি, দেখিতে না পাও ছায়ার মতন আছি না আছি– তবু মনে রেখো যদি জল আসে আঁখিপাতে, এক দিন যদি খেলা থেমে যায় মধুরাতে, তবু মনে রেখো । এক দিন যদি বাধা পড়ে কাজে শারদ প্রাতে– মনে রেখো ॥ যদি পড়িয়া মনে ছলোছলো জল নাই দেখা দেয় নয়নকোণে– তবু মনে রেখো ॥ .......................................রেজা ঘটক৮ বৈশাখ ১৪২২২১ এপ্রিল ২০১৫ঢাকা
false
rg
আওয়ামী লীগ আজ থেকে মুসলিম লীগ হয়ে গেল!! নির্বাচন কমিশনের উচিত একটি না ভোটের ব্যবস্থা ব্যালট পেপারে রাখা। আমি নিশ্চিত, চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম আর কোনো রায় দেবে না। আর সংসদের ৩০০ টি আসনে যদি এই না ভোটের আয়োজন করা হয়, ৩০০ আসনে না ভোট-ই জয়যুক্ত হবে। আওয়ামী লীগ গত নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করবে বলে তুরণ প্রজন্মের ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। ক্ষমতায় গিয়ে জাতির সামনে তারা বিচারের মূলা ঝুলিয়েছে। আগামী নির্বাচন সেই মূলার জোরে পাস করতে চায়। বিএনপি তো জামায়াতের এখন ছোটভাই। রাজনৈতিক নির্দেশনা দেয় জামায়াত মিঞাভাই। বিএনপি তাই বাস্তবায়ন করে। এখন আওয়ামী লীগও সেই মিঞাভাইরে কোলে তুলে নিল। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই জনের চরিত্রই একই। ক্ষমতায় গেলে চুরি চামারি লুটপাট দুর্নীতি এসব করা। আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে হরতাল। সংসদে তারা ইতিহাসের বকবকানি দিয়ে কোটি টাকা নষ্ট করে। গোলাম আজমের বিচারের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগের আপোষে যে শ্রেণীর মানুষ মন্দের ভালো হিসেবে আওয়ামী লিগকে ভোট দিতো, এখন তাদের কলিজায় আঘাত দিলো আওয়ামী লীগ। যুদ্ধাপরাধীদের এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেললে সেই বিচারে জাতি বরং খুশি হবে। এই তামাশার বিচারে জাতি এখন ক্ষুব্ধ। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে জাতি যতোদিন বেরোতে না পারবে ততোদিন স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিপক্ষের শক্তি এগুলো মূলার নমুনা। এগুলো জাতিকে শুনিয়ে ক্ষমতায় থাকার বাসনা। সেই বাসনার মায় এখন মরছে। শেখ হাসিনার সেই বাসনা আর পূরণ হবে না। আজ থেকে আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগের মতো আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হল। এখন যা যা করবে সব ভুল করবে। মানুষ নিজের ভুল বুঝতে না পারলে এক সময় পাগল হয়ে যায়। আওয়ামী লীগও পাগল হয়ে গেছে। এখন তারা যা করবে যে সিদ্ধান্ত নেবে, সব ভুল নেবে। সাড়ে চার বছরের দুর্নীতি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, চুরি-চামারি, খুন, গুম এগুলো সাধারণ মানুষ এক সময় ভুলে যাবে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে ভোটের রাজনীতি এটা মানুষ আর মন থেকে মেনে নেবে না। ক্ষমতায় যাবার পায়ে আওয়ামী লীগ নিজেই কুড়াল মারলো। ৫-০ গোলে সিটি কর্পোরেশানে হেরে আওয়ামী লীগ উন্মাদ হয়ে গেছে। সেই পাগলামী থেকে তাকে আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না। যুদ্ধাপরাধীর প্রধান হল গোলাম আজম। তার তো ৯০ বার ফাঁসি হওয়া উচিত। আর তার হল ৯০ বছরের কারাদণ্ড। গো-আজম তো আর ৯০ বছর বাঁচবে না। সো, এটা তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টারা কোথায় কোথায় কার কার সাথে মিটিং করে এই রায় বের করলো, জাতি তা একদিন জেনে যাবে। ইলকট্রনিক যুগে গোপন কিছুই আর গোপন রাখা যায় না রে ভাই। আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো দিন। আওয়ামী লীগ জামায়াত আর হেফাজতের ভয়ে সেই কালো দিনের প্রযোজক। এটা জাতির ইতিহাসে চিরদিন লেখা থাকবে। এখন সবার কাছে সুস্পষ্ট কেন তাজউদ্দিন জাতির কাছে উপযুক্ত সম্মান পায়নি। কেন আওয়ামী লীগ আতাত করে। আওয়ামী লীগ যে লোভ পড়ে এই গোপন আতাতটি করলো, তা কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না। খোদ আওয়ামী লীগের লাখ লাখ মাঠকর্মী খুব হতাশ। এই তামাশার রায় জাতি মানবে না। আর আওয়ামী লীগের এই তামাশার রাজনীতি, দুর্বল অদূরদর্শী ভঙুর নের্তৃত্বের উন্মাদ অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তও জাতি আর ভবিষ্যতে মানবে না। যদি আগামী নির্বাচনে না ভোটের অপসান না থাকে, আমাকে দয়া করে কেউ ভোটের জন্য ডাকবেন না। এই বর্বর রাজনীতি আমি ঘৃণা করি। থুঃ থুঃ থুঃ.....গোলাম আজমের এই রায় মানি না। মানবো না। রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ।
false
ij
গল্প_ ঘুমের ঘর থানার বাইরে একটা ২০০৭ মডেলের নিসান সেনট্রা পার্ক করা। রাত বলেই রংটা ঠিক বোঝা গেল না। তবে বোঝা যায়-ঝকঝকে নতুন। ওরা উঠে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টাট দিল। ক্লান্তিতে রেজার শরীর ভেঙ্গে আসছিল। সেই সঙ্গে ভীষণ ঘুম পাচ্ছিল ওর । আজ দুপুর থেকে ঘটে যাওয়া দুঃসহ স্মৃতিটুকু যত দ্রুত সম্ভব মুছে ফেলতে চায় ও। রেহানের দিকে তাকাল। আলো আঁধারিতে ওকেও বিধ্বস্ত লাগছে। প্রায় ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল রেজা, কাকলীকে কে -কথা শেষ হল না। রেহান চাপাস্বরে বলল, জামিল।জামিল মানে কাকলীর হাজব্যান্ড? রেজা অবাক।হ্যাঁ। রেহান বলল, আজ বিকেলে রমনা থানায় কনফেস করেছে জামিল। বাস্টার্ড!ওহ্ ।গাড়িটা বড় রাস্তায় উঠে এসেছে। রাস্তায় আলো ও অন্ধকারের মিশেল। ক’টা বাজে এখন? অন্ধকারে ঘড়ি দেখতে ইচ্ছে করল না রেজার। শরীরটা অবশ হয়ে আছে ওর। জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছিল?রেহান বলল, কী আর হবে। বিয়ের পর জামিলের সঙ্গে কাকলীর অ্যাডজাস্ট হয়নি। মাস দুয়েক ধরে আমাদের এখানেই ছিল। মা-বাবা আমেরিকায়, তানিয়ার কাছে। আজ সকালে সোমাকে নিয়ে কলাবাগানে ওর বাপের বাড়ি গিয়েছিলাম। বাড়ি ফাঁকা ছিল। এই সুযোগে বাস্টার্ডটা এসে ...কথা শেষ করল না রেহান। রেজা চুপ করে থাকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ভাগ্যিস কাকলীর হাজব্যান্ড পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করেছে। নইলে ...ভাবতেই ও কেঁপে ওঠে। রেহান বলল, সরি রেজা, তোর ওপর অনেক ঝড়-ঝাপটা গেল। না, না। তোর সরি করার কি আছে। বলে রেজা ক্ষাণিকক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর হঠাৎ বলল, ড্রাইভার সাহেব, গাড়ি থামান। আমি নামব।রেহান জিজ্ঞেস করে, এখানে কই যাবি তুই? ওর কন্ঠস্বরে বিস্ময়। কাজ আছে। গাড়িটা ততক্ষণে থেমেছে। রেজা দ্রুত বেরিয়ে আসে। গাড়ির ভিতরে অসহ্য লাগছিল ওর। রেহান বলল, ফোন করিস রেজা। রেজা মাথা নাড়ল। দ্রুত হাঁটতে থাকে। মধ্যরাত বলেই শহরটা নিস্তব্দ হয়ে আছে। ফুটপাতে নিয়ন আলো। বস্তা জড়ানো ঠিকানাহীন মানুষের ঘুম। ঘুম রেজারও পাচ্ছে ভীষণ। এখন কোথায় যাওয়া যায়? ঘুমানো যায়? আসলে কোথাও যাওয়ার নেই ওর। আজ দুপুরে বীণা আপার কথাগুলি মনে পড়ল: তোর বড় দুলাভাইয়ের বোনের ছেলে এসে আমাদের এখানে কিছুদিন থাকবে। তুই বরং কিছু দিন অন্য কোথাও গিয়ে থাক রেজা।বসার ঘরে বসে টিভি দেখছিল রেজা। বীণা আপার কথাটা শোনামাত্রই উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, আরে, তোমাকে তো বলাই হয়নি আপা। কি বলা হয়নি? মুখচোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বীণা আপা ভীষণ অবাক হয়েছেন।প্রায় দরজার কাছে পৌঁছে রেজা বলল, আমি একটা চাকরি পেয়েছি।তুই চাকরি পেয়েছিস! কোথায়? বীণা আপার চোখ ছানাবড়া। পরে বলব। বলে রেজা দ্রুত ঘরের বাইরে বেড়িয়ে আসে । তারপর দুদ্দাড় করে সিঁড়ি বেয়ে নিচতলার গেটের বাইরে। রাস্তায় ঝরঝরে রোদ। নীল আকাশ। সুন্দর একটা দিন। সুন্দর একটা দিনে আমি আমার সর্বশেষ আশ্রয় হারালাম। ও ম্লান হাসল। ঘড়ি দেখল । ১টার মতন বাজে। এখন কোথায় যাওয়া যায়? শুক্রবার, রাস্তায় লোকজন কম। একটু পর খিদে পাবে। শেষ বারের মতন বীণা আপার বাড়ি এক প্লেট ফ্রি ভাত খেয়ে নিলে হত। পকেটে পয়তাল্লিশ টাকা। মোড়ের ভাতের হোটেলে ঢুকতে যাবে ঠিক তখনই একজন বৃদ্ধ এসে রেজার সামনে দাঁড়াল। বৃদ্ধের মাথায় সাদা টুপি; চোয়াল ভাঙ্গা তামাটে রঙের মুখে পাকা দাড়ি। পরনে লুঙ্গি আর খয়েরি পাঞ্জাবি। হাতে একটা লাঠি। বৃদ্ধের বয়স ষাট ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। চোখমুখ দেখলেই বোঝাই যায় ক্ষুধার্ত। কিছু খাওয়ান বাবা। রেজা বলল, আসেন। আজ থেকে আমার ঠিকানা রাস্তায়, এরাই এখন আমার নিত্যসঙ্গী। এদের সামান্য সেবাযতœ করাই যায়।রেজার পিছন পিছন বৃদ্ধ হোটেলে ঢুকল। পয়তাল্লিশ টাকায় দুজনের খাওয়া হবে না। ভাত-ডালের অর্ডার দিয়ে, টাকাটা টেবিলের ওপর বৃদ্ধের সামনে রেখে হোটেল থেকে রাস্তার রোদে বেরিয়ে এল ও। পকেটে এখন শূন্য টাকা। একটু পর খিদে পেলে কি হবে কে জানে। রোদের ভিতরে হাঁটছিল। ফোনটা তখন থেকেই বাজছিল। বীণা আপা: চাকরির খবর জানতে চায়। রেজা মুচকি হাসে। ফোন রিসিভ করে না। বরং জীবনানন্দের কবিতার একটি লাইন মনে মনে আবৃত্তি করে:“পৃথিবীতে নেই কোনও বিশুদ্ধ চাকরি।” হঠাৎই রাস্তার পাশে রেহানদের ঝকঝকে চালতলা বাড়িটায় চোখ আটকে গেল ওর। অনেক দিন দেখা হয় না রেহানের সঙ্গে। এক সঙ্গেই পড়ত, বছর দুয়েক আগে পাশ করে একটা কন্সালটেন্সি ফার্মে জয়েন করেছে রেহান । আজ শুক্রবার, বাসায় থাকার কথা। রেজার কাছে মোবাইল থাকলেও শূন্য ক্রেডিট। যাই তো আগে। মোবাইল যুগের আগে ফোন না-করেই তো ও বাড়ি যেতাম। রেহানদের ফ্ল্যাটটা চারতলায় । রেজা উঠতে থাকে। অল্প অল্প খিদে টের পাচ্ছে। কলিংবেল চাপার সময় চোখে পড়ল দরজাটা খোলা। কলিংবেল না চেপে ও ভিতরে ঢোকে। কত এসেছে এ বাড়িতে। বসার ঘরটায় কেউ নেই। নিঃশব্দে টিভি চলছে। ‘রেহান’ বলে ডাক দিল একবার। সাড়াশব্দ নেই। কেউ নেই নাকি। দরজা খোলা কেন?হঠাৎই ও সিঁড়িতে অনেকগুলি জুতার শব্দ শুনতে পেল। কি ব্যাপার? ছ-সাত জন পুলিশ হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকল । রেজা থতমত খায়। একজন পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করল, আপনি?আমি ... আমি হুমায়ূন রেজা।এখানে কি করছেন!এটা আমার বন্ধুর বাড়ি ...কয়েকজন পুলিশ ভিতরে ঢুকে যায়।কাকলী কে চেনেন? হ্যাঁ। রেহানের বোন।সে খুন হয়েছে জানেন?কী! রেজা চমকে ওঠে। কাকলী খুন হয়েছে মানে-মুহূর্তেই সারা শরীর ওর ভিজে যায়। পুলিশ অফিসার বলল, হ্যাঁ। একটু আগে একজন ফোন করে থানায় বলল।একজন পুলিশ বেরিয়ে এসে বলল, ডেডবডি ভিতরে স্যার।কি অবস্থা?সিলিং থেকে ঝুলতেছে।ওকে। কিছু টাচ করবা না। ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে হবে। বলে পুলিশ অফিসারটি রেজার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি আমাদের সঙ্গে চলুন।কোথায়?আহ্, এত প্রশ্ন করবেন না। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে ওরা যখন রেজাকে হাজতে পাঠিয়ে দিল তখনও দিনের আলো ছিল। সেলটা ছোট। তবে ভিতরে লোকজন বেশি নেই। দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসল। সারা শরীর কাঁপছিল। কী কুক্ষণে গিয়েছিলাম রেহানদের বাড়িতে। কাকালী খুন হয়েছে বলল। কাকলীকে খুন করল কে? ফুটফুটে মেয়ে, সদ্য বিয়ে হয়েছে, স্বামী ডাক্তার। আঠারো বছর বয়েসে ষোল বছরের কাকলীকে চুমু খেয়েছিল রেজা। ঐ পর্যন্তই ...হঠাৎ চোখে পড়ল সেই বৃদ্ধ। মাথায় সাদা টুপি; চোয়াল ভাঙ্গা তামাটে রঙের মুখে পাকা দাড়ি। পরনে লুঙ্গি আর খয়েরি পাঞ্জাবি। হাতে একটা লাঠি। আপনি এখানে? রেজার কাছে নিজের কন্ঠস্বর কর্কস ঠেকল।হ বাবা। আমারে রাস্তা থেকে ধইরা ভ্যানে তুলছে ।ও। কেন ধরল ?তা তো কইতে পারি না বাবা।ও, কাকতালীয়। রেজা চুপ করে থাকে। মাঝেমাঝেই এমন উটকো লোকে ধরে আনে। সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। উপায় নেই। খিদে নেই অবশ্য। অফিসাররা দুপুরে নান আর রুটি কাবাব খাইয়েছে। আর কোক। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ত শুনে ব্যবহার খারাপ করেনি। রেজার কথা অবশ্য বিশ্বাস করেনি। সাব ইনসপেক্টার লোকটা বেশ ভদ্র। কথায় কথা বেরিয়ে গেল থানার সাব ইনসপেক্টার মনিরুজ্জামন বড় দুলাভাইকে চেনে। হঠাৎ কানে এল বৃদ্ধ গুনগুন করে গাইছে-আপন ঘর আপনি ঘড়িআপনি করে রসের চুরিঘরে ঘরে;আপনি করে মেজিস্টারীআপনি পায়ে বেড়ী পড়ে।সাঁইর লীলা বুঝবি ক্ষ্যাপা কেমন করে।গানটা রেজার চেনা। অনেকবার শুনেছে। প্রতি বছর একবার কুষ্ঠিয়া যায় ও। রেজা বৃদ্ধর দিকে তাকাতেই বৃদ্ধ বলল, খান।কি!বিড়ি খান।বিড়ি?হ, বিড়ি।এখানে?খান অসুবিধা নাই। এহানের সবাই আমার পরিচিত।পরিচিত মানে?এইখানে আমারে অনেকবার ধরে আনছে। ওহ। রেজা বিড়ি নেয়। ধরায়। শখ করে জিনিসটা প্রায়ই খায়। বিড়ি ধরাল ও। জিজ্ঞেস করল, আপনার কি নাম?আমার?হ্যাঁ আপনার। লোকে আমারে কয় আরশী মিঞা।আরশী মিঞা?হ বাবা। আরশী মিঞা।এরপর আর কথা জমে নি। চুপচাপ বিড়ি টানতে টানতে রেজা ওর আপন ভাবনায় ডুবে গিয়েছিল। তারপর অনেক রাতে সেলের ভারী দরজাটা সশব্দে খুলে গিয়েছিল।রেজা? রেহান-এর কন্ঠস্বর।হ্যাঁ। বাইরে আয়।রেজা বেরিয়ে এসেছিল। রেজা হাঁটতে থাকে। তাঁর খুব ক্লান্ত লাগছিল। ফুটপাতের ওপরই শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছিল। আকাশের দিকে তাকাল। মিটিমিটি নক্ষত্রের মাঠ। নিচে মধ্যরাতের নিস্তব্দ একটি শহর; যে শহরের ভঙ্গিটা খুব নিরীহ ... যেন কাকলীরা এ শহরে খুন হচ্ছে না, যেন সে খুনের দায়ে অন্যরা ফেঁসে যাচ্ছে না। অপরাধী শহরের ফুটপাতে নিরপরাধ নিয়ন আলো ... যেন তার ফ্যাকাসে আলোয় বস্তা জড়ানো ঠিকানাহীন মানুষজন ঘুমিয়ে নেই ... যেন রেজাও পালাতে চাইছে না এই ভীষণ অপরিচিত শহর থেকে ... যেন ওর ভীষণ ঘুম পাচ্ছে না । কিন্তু এখন কোথায় যাওয়া যায়? সব ভুলে ঘুমানো যায়? আসলে কোথাও যাওয়ার নেই ওর।হঠাৎ চোখে পড়ল সেই বৃদ্ধ। আরশী মিঞা। ফুটপাতের ওপর বসে । বসে থাকার ভঙ্গিটা এরই মধ্যে পরিচিত হয়ে উঠেছে। আশ্চর্য! রেজা দ্রুত এগিয়ে যায়। আপনি এখানে?হ বাবা, আমি । দয়ামায়া কইরা ছাইড়া দিল। বলতে বলতে বৃদ্ধ উঠে দাঁড়াল। ছেড়ে দিল? কেন?জানি না।রেজা খানিকটা কর্কস কন্ঠে বলল, আপনি কে বলেন তো?আমি বুড়া মানুষ বাবা। রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করি।রেজা সামান্য হাঁপাচ্ছে। সত্যি করে বলেন তো আপনি কে?আমি বুড়া মানুষ বাবা। নেন বিড়ি খান একডা।বিড়ি? কি মনে করে বিড়ি নিয়ে ধরাতে ধরাতে রেজা জিজ্ঞেস করল, আপনে থাকেন কই?কাছেই বাবা।ও। আমার সঙ্গে যাইবেন বাবা? আরশী মিঞার কন্ঠে দরদ উথলে পড়ে।কোথায়?যেখানে গেলে নিশ্চিন্তে ঘুমান যায়।রেজা অবাক। ওর যে ঘুম পাচ্ছে, বৃদ্ধ তা জানল কি করে। এত কিছু ভাবার সময় কই। ঘুমের তৃষ্ণায় শরীর রীতিমতো কাঁপছে। বলল, চলেন।বিড়ি টানতে টানতে বৃদ্ধর পাশে পাশে হাঁটতে থাকে রেজা। বৃদ্ধের হাবভাব কেমন যেন, দেহাতীত। আসলে কে এই বৃদ্ধ? সবটা রেজা এখুনি জানতে চায় না। বৃদ্ধ গুনগুন করে গাইছে-শাঁই আমার কখন খেলে কোন্ খেলাজীবের কি সাধ্যি আছে তাই বলা?গান শুনতে শুনতে হাঁটছে রেজা। বাঁ দিকে একটা গলিমুখ। ভিতরে আবছা অন্ধকার। কিছুদূর হেঁটে গেলে রাস্তার আলোও পেল। এক পাশে বড় ড্রেন । সেই দুর্গন্ধ। একটা রিকশা চলে গেল টুংটাং করে। একপাশে নৌকার ছৈয়ের মত পলিথিন মোড়ানো সার সার ঘর। সেই রকম একটা ঘরের সামনে দাঁড়াল আরশী মিঞা। বলল, এই হইল আমার বর্তমান নিবাস। আসেন। রেজা ভিতরে ঢোকে। রাস্তার আলো পড়েছে। মেঝেতে চট পাতা। ভিতরে দুর্গন্ধ নেই, বরং আতরের হালকা গন্ধ পাচ্ছিল। আহ্, এই আমার ঘুমের ঘর। ঘুমে আর ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে আসছিল ওর। ও আর দ্বিধা করে না বরং চটের ওপর টান টান হয়ে শোয়। চোখ বোজে। অন্ধকারে বীণা আপার মুখ। কী যেন বলছেন। ছবিটা জোর করে তাড়িয়ে দেয়। রেহানদের বাড়ি। সিঁড়ি বেয়ে উঠছে। ছবিটা জোর করে তাড়িয়ে দেয়। একটা ঘরে ক’জন মানুষ। নানা কথা জিজ্ঞেস করছে তারা । ছবিটা জোর করে তাড়িয়ে দেয়। কেবল আরশী মিঞাকে গুনগুন করে গান গাইতে শোনে সে-দয়ার বাবা কিবলা কাবা আয়নার কারিগর আয়না বসায়া দে মোর কলবের ভিতর।রেজার দুচোখে ঘুম। ঘুমের আগে নিশ্চিন্ত হল সে ...অনেক কাল পর সে ঠিকঠিক জায়গায় পৌঁছে গেছে। অনেক অনেক দিন ধরে এমন একটা আতরগন্ধী আবছা অন্ধকারজায়গায় পৌঁছতে চেয়েছে ও। যেখানে রেহান- কাকলী-বীণা আপা-বড় দুলাভাই কিংবা থানা-পুলিশ-দারোগা নেই। জিজ্ঞাসাবাদ নেই। কাকলীর ডেডবডি নেই ... গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার আগে টের পেল সেরকম একটি জায়গায় আজ এই মুহূর্তে পৌঁছে গেছে সে ...
false
mk
সন্ত্রাস, অর্থনীতি ও উন্নয়নের সূচক বাংলাদেশ সম্প্রতি সন্ত্রাসের ভয়াবহতম রূপগুলো দেখছে- ভবিষ্যতে আরও দেখতে হবে কি না তা অবশ্য এখনো অজানা। সবার আন্তরিক আকাক্সক্ষা- যা ঘটেছে সেখানেই সমাপ্তি ঘটুক আর যেন কদাপি এমন ভয়াবহ সন্ত্রাসী ঘটনার মুখোমুখি হতে না হয়। সে কামনাটা আমারও। একটি জাতীয় সংবাদপত্রের প্রধান খবরে গত শুক্রবারে (২০.৬.২০১৪) বলা হয়েছিল- গুম, খুন, অপহরণ জুন মাসে অনেক কমেছে। পুলিশ বলেছে, হ্যাঁ, কমেছে কারণ যারা গুম, খুন, অপহরণ ঘটায় ইদানীং তাদের কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে চাইছে না। পুলিশের মন্তব্যটা বেশ মন্থরই বলতে হয় কারণ তারা একথা বলেননি যে, পুলিশি কঠোরতার ফলেই ওই ঘটনাগুলো কমেছে। তারা যে আজতক (২২.৬.১৪) নারায়ণগঞ্জের সাত খুন বা ঢাকার মিরপুরের ১০ খুনের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি, পরোক্ষ হলেও তার একটা স্বীকৃতি মিলল। আর এর ফলে সন্ত্রাসীদের দাপট আবার বাড়ে কি না তা অবশ্য দেখার বিষয়। তৎকালীন বিশ্বরাজনীতির নিরিখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে ভূমিকাই পালন করে থাকুক- এশিয়া তথা বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি চীনের সঙ্গে নিশ্চিতভাবেই অত্যন্ত বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। আবার শুধু আমাদের নয়- চীনেরও স্বার্থ রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। এ প্রক্রিয়া বহুদূর যে এগিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর থেকে আমরা তা ধরে নিতে পারি। তেমনিভাবে ভারতের নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম বিদেশ সফরে বাংলাদেশে আসা এবং আলাপ-আলোচনা পরিপূর্ণ সাফল্যম-িত হবে এমন আশাও উভয় দেশের কোটি কোটি মানুষ পোষণ করেন।জাপান বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু। দেশটি উন্নত অর্থনীতির কারিগরি জ্ঞানসমৃদ্ধও বটে। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে পুঁজিবাদী যে কটি দেশ আমাদের দেশের প্রতি সহযোগিতার হাত এগিয়ে দেয়, জাপান তার মধ্যে অন্যতম। তবে জাপান বা চীন যেই হোক, আবার হোক না ইউরোপীয় কোনো দেশ- সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ প্রভৃতি অব্যাহত থাকলে ও জঙ্গিবাদ দমনে বিন্দুমাত্র শৈথিল্য দেখলে কোনো দেশই এ দেশে বিনিয়োগ করতে আসবে না- এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। এর পেছনে বহু কারণও আছে, যার সবগুলো কারণ হয়তো আমার জানাও নেই। তবুও সাদা চোখে দেখা থেকে যা উপলব্ধি করি তা হলো, আমাদের দেশের মতো দৈনন্দিন সন্ত্রাসের অনুপস্থিতি, যথেষ্ট পরিমাণে জীবন ও স¤পদের নিরাপত্তা, সামাজিক শান্তি, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রভৃতি যথেষ্ট বড় কারণ যার জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ যথেষ্ট পরিমাণে ঘটেছে। সেখানে কদাপি সামরিক শাসন আসেনি রাজনৈতিক কোন্দল-কলহ, পারস্পরিক অশ্রদ্ধা, অবিশ্বাস রাজনৈতিক অঙ্গনকে গ্রাস করেনি- সংগঠিত ও শক্তিশালী আন্দোলনের অস্তিত্ব থাকলেও তা বরং পুঁজির নিরাপত্তাই সূচিত করেছে- শ্রমিকদেরও বেতন-কাজের নিরাপত্তা যথেষ্ট পরিমাণে নিশ্চিত করে শিল্প উৎপাদনে এক ধরনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হওয়ায় তা বৈদেশিক বাজারকেও আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। তদুপরি তারা পেয়েছে ইংরেজ আমলে সৃষ্ট রাজপথ-রেলপথ-নদী ও সমুদ্রপথ এবং তার সঙ্গে আকাশপথ ও যানবাহনের মাধ্যমে বিশাল অবকাঠামোগত সুবিধা, যাকে তারা সযতনে লালন ও উন্নয়ন করেছে ক্রমাগতভাবে। তাই ভারত এশিয়ায় অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে সক্ষম হয়েছে, যদিও প্রকৃত অর্থে এবং বাস্তব ক্ষেত্রে একটি উন্নত দেশে পরিণত হতে ভারতকে এখনো বহুদূর হাঁটতে হবে। বহু পথও অতিক্রম করতে হবে। তবুও নির্দ্ধিধায় মানতেই হবে, ভারত ইতোমধ্যেই এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। তাই প্রতিবেশী হওয়ায়, সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারলে ভারতের বিস্তর সহায়তা বাংলাদেশ পেতে পারে এবং আনন্দের বিষয়, বিগত কয়েক বছরে, নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও, দুদেশের মধ্যকার সম্পর্কের যথেষ্ট উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ভারতের কাছ থেকে উদারতর সহযোগিতা পেলে এ সম্পর্ক সত্বরই আরও উন্নত হওয়া সম্ভব। এ ব্যাপারে ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সদ্য-সমাপ্ত বাংলাদেশ সফরে কিছুটা আশার বাণী শুনিয়েছেন। অপেক্ষা করে দেখতে হবে- আগামী মাসকয়েকের মধ্যে সম্ভাবনাময় নতুন কিছু ঘটে কি না। ঘটলে বিস্তর লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে উভয় দেশেরই। তবে তার জন্যও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ অবশ্যই প্রয়োজন হবে। জঙ্গিবাদ বা ভারতবিরোধী দেশি-বিদেশি সন্ত্রাসী কার্যকলাপও কঠোর হস্তে দমন করতে হবে, আইনের শাসনও প্রতিষ্ঠা করতে হবে।চীন ও ভিয়েতনাম আমাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রধান অর্থনৈতিক মিত্র হতে পারে। উভয় দেশ এশিয়ারই শুধু নয়- বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃত।কি দেশি, কি বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারীদের আরও বেশ কয়েকটা গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশে তাদের পুঁজি বিনিয়োগের এবং ব্যবসায় বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে। তা হলো- এক. আমলাতন্ত্র ও দুর্নীতি। তাদের সবারই অভিযোগ- সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো শিল্পবাণিজ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অনুমোদন দিতে ভয়াবহ আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা ঘটিয়ে থাকে। ফলে কাজের অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে- অনেক ক্ষেত্রে কাজ শুরু করাও কঠিন হয়ে পড়ে। আবার তাদের দুর্নীতি, ঘুষ প্রভৃতি এগুলোকে আরও জটিল করে তোলে। এ ব্যাপারে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হয়ে বিদ্যমান বাধাগুলো অপসারণ করতে হবে।দ্বিতীয়ত, অবকাঠামোগত সমস্যা। এ ক্ষেত্রে প্রধানতম সমস্যাই হলো জ¦ালানি খাতের। তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে শিল্প বিকাশ ও শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হতে বাধ্য এবং তা হচ্ছেও বটে। তাই নানামুখী উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা নিয়ে বিদ্যমান মূল্যের চেয়ে যথেষ্ট কম মূল্যে সব ধরনের জ্বালানি প্রয়োজনানুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের নিজেদের উৎস থেকে তেল, গ্যাস ও কয়লা উত্তোলনের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।এছাড়া রয়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। এই অবকাঠামো বিশেষ করে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার কাহিল চিত্র অনেককেই নিরুৎসাহিত করে। কারণ আমাদের দেশে সর্বাপেক্ষা সস্তা হতে পারত নদী ও সমুদ্রপথ। কিন্তু সেগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় (ড্রেজিং বা খননের অভাবে) এবং নদীগুলোর উৎসমুখও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীপথ চালু হওয়ার সহসা কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু রেলপথের ক্ষেত্রে তো এমন কোনো যুক্তি আদৌ টেকে না। ১৯৪৭-এর পর থেকে কত কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে, কতগুলো বগি ও ইঞ্জিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে কোনো সংসদ সদস্যই (যারা বিরোধীদলীয় সংগঠন তারাসহ) প্রশ্নোত্তরের সুযোগ নিয়েও দেশবাসীকে কেন যে তা অবহিত করেন না, তা বোধগম্য নয়। কিন্তু কেউ যদি তা করেন তার উত্তর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সংসদে দিলে যে তথ্য পাওয়া যাবে তাতে সবাই যে আঁতকে উঠবেন তা জোর দিয়েই বলা যায়। যা হোক অবিলম্বে রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অঞ্চলেই হাজার হাজার কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ, ব্রিজ নির্মাণ, বগি ও ইঞ্জিন প্রয়োজনমতো সংগ্রহের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়ার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ও রেলমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাব। সব স্থবিরতা, নিস্পৃহতা, বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে এ পথে আমাদের অগ্রসর হতেই হবে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। এগুলোর অভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অসম্ভব। সমুদ্র খাতকে অধিকতর কর্মক্ষম করতে হলে এবং তা থেকে প্রয়োজনীয় কাজ পেতে হলে মংলা সমুদ্রবন্দরকে দ্রুত একটি আধুনিক সমুদ্রবন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং একই সঙ্গে সম্প্রতি জাহাজ শিল্প উন্নয়নের যে সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে আমাদের আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে নতুন গতি সঞ্চার করতে হবে। নতুবা ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে যেসব বক্তৃতা-ভাষণ অহরহ করা হচ্ছে কাজে তা অর্থহীন প্রলাপে পরিণত হবে, যা কারও কাছেই কাম্য নয়। বিশাল বিশাল বাজেট আসে- জাতি বছরান্তে উন্নয়নের পরিমাপ করে ওই বাজেটের সঙ্গে তার বিন্দুমাত্র সঙ্গতিও খুঁজে পায় না।আমি কোনো অর্থনীতিবিদ নই। তবে একজন প্রবীণ প্রগতিশীল চিন্তায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক হিসেবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমার ভাবনার আংশিক এখানে তুলে ধরলাম এই বিশ্বাস থেকে যে, সরকার এই পথ ধরে বা এর চেয়ে উন্নত ও আধুনিক চিন্তায় সমৃদ্ধ হয়ে বাস্তবে দেশকে একটি অগ্রসরমান বাংলাদেশে পরিণত করতে এগিয়ে আসবে।কিন্তু আবারও বলি, তার জন্যও সর্বাগ্রে প্রয়োজন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ। এ কথা যেন ভুলে না যাই।
false
hm
আশাকর্পূর কয়েকদিন আগেও এটা ছিলো একটা স্কুল। এর মাঠে সকালে ঘুম ঘুম চোখে সারি বাঁধা ছেলেমেয়েদের সামনে দপ্তরীর হাতের দায়সারা টানে আকাশে এক মন্থর ভূবন চিলের মতো ডানা মেলতো সবুজের মাঝে লাল একটি বৃত্ত, সহকারী প্রধান শিক্ষকের গম্ভীর আদেশের পর অনেক বিপথগামী কণ্ঠের মাঝে পাশের আমগাছের পাতায় কাঁপন ধরাতো কী শোভা কী ছায়া গো কী স্নেহ কী মায়া গো। কী আঁচল মৃত্যু এসে বিছিয়ে দিয়ে গেলো স্কুলের মাঠে। এখন আর এটি মাঠ নেই, শবাগারে পরিণত হয়েছে। একটু পর পর সেনাবাহিনীর ছাপ্পড় মারা চটের বড় ব্যাগে বাহিত হয়ে মাঠে এসে যোগ হচ্ছে গলিত শব। মৃত্যু এসে স্কুলের ঘন্টায় সশব্দ টোকা দিয়ে জানিয়েছে, ছুটি। আগামী কয়েকদিন আর আসতে হবে না স্কুলে। বাতাসে গলিত লাশের তীব্র গন্ধ একটু পর পর স্রোতের টানে ছুটে যাচ্ছে স্কুলের বারান্দায় জবুথবু হয়ে বসে থাকা মানুষের দিকে। এক একটা মৃতদেহ স্কুলের মাঠে এসে জড়ো হলে এরা টলোমলো পায়ে উঠে দাঁড়ায়, ছুটে যায়। লাশের গন্ধে স্থবির হয়ে পড়া আম গাছের পাতা ক্ষীণ আন্দোলনে জীবনে শেখা একমাত্র গানের কলির স্মৃতি মন্থন করে, কী স্নেহ কী মায়া গো। ধ্বসে পড়া ভবনটি তার আলিঙ্গন থেকে একটু একটু করে অর্গল খুলে উগড়ে দিচ্ছে মৃতদেহ। বৈশাখ তার সবটুকু দাপট নিয়ে অণুজীবের কাজ সহজ করে তুলেছে, উদ্ধারকর্মীদের হাতের দস্তানায় উঠে আসছে গলে যাওয়া চামড়া আর মাংস। চটের ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আছে শবের প্রকাশিত অস্থি, তার কোনোটিতে সস্তা স্বর্ণানুকৃতির চুড়ি, কোনোটিতে কালচে হয়ে আসা নূপুর, সস্তা প্লাস্টিকের ডিজিটাল ঘড়ি। স্কুলের বারান্দা থেকে উঠে আসা মানুষেরা ঠাহর করতে পারে না, এই গলিত মাংসের মাঝে হলদে হাড়গুলোর কোনটা তাদের কন্যার, স্ত্রীর, বোনের। তারপরও একটি বালিকা চিনে ফেলে তার মাকে। জীবন যে রূপবৈভিন্ন্য তৈরি করেছিলো, গার্মেন্টস কারখানার চাকরি আর ধ্বসে পড়া দালান মৃত্যুর তুলি বুলিয়ে সেই সামান্য বিভেদ ঘুচিয়ে চটের ব্যাগগুলোতে সব গলিত মাংসের রং খয়েরি আর সব হাড় হলুদ রঙে রাঙিয়েছে, কিন্তু সালোয়ারের জড় নকশায় বিশেষ পরিবর্তন আসেনি। কাপড় দেখে অভুক্ত মেয়েটি অস্ফূট কণ্ঠে গুঙিয়ে ওঠে, মা, ও মা, মা? তার সঙ্গে আসা মধ্যবয়স্কা নারী মুখে কাপড় গুঁজে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকেন, বালিকাটি তাকে জড়িয়ে ধরে স্কুলের পাশের আমগাছের পাতাকে শেখায় আরেকটি নতুন সুর। বাতাসে লাশের জমাট গন্ধ কেটে যায় মেয়েটির কান্নার সুরে, স্কুলের মাঠে বাতাস কেঁপে কেঁপে বলে, মা, ও মা, মা গো। মধ্যবয়স্কা মেয়েটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে অব্যক্ত শব্দে ফোঁপায়। হয়তো মনে মনে ভাবে, আরো অনেক সালোয়ার থাকা উচিত ছিলো নিহত যুবতীর, তার কন্যার স্মরণশক্তিকে পরাস্ত করার মতো সংখ্যায়। আলনায় রাখা মায়ের সবক'টি সালোয়ারের নকশাই বালিকার চেনা। সে ভুল করে শুধু দেখে ফেলেছে, করোটির ওপর গলিত মাংস হয়ে যাওয়া মায়ের মুখটি। আমগাছের পাতা শিহরিত হয় কান্নার শব্দে। মা, তোর বদনখানি মলিন হলে? বালিকাটি তার আত্মীয়াকে জড়িয়ে ধরে ফিরে যায় কম্পিত শরীরে। বাকিরা কান্নার সুযোগ খোঁজে চটের ব্যাগ থেকে চটের ব্যাগে। দূরের গ্রাম থেকে আসা পিতা জানেন না, কন্যার সালোয়ার কেমন, তাই একের পর এক গলিত মুখ দেখে চলেন। একটিও তাঁর কাছে পরিচিত মনে হয় না। তাঁর কন্যাটির ঈষৎ স্ফূরিত ঠোঁট, বাঁশির মতো নাক, হনুর উঁচু হাড়কে তিনি খুঁজে পান না। তাঁর বালক পুত্রটি স্কুলের মাঠে একটি গাছের ডাল কুড়িয়ে পেয়েছে, সে বোনকে চটের ব্যাগের ভেতর খোঁজে না, একটু পর পর তেড়ে যায় আমগাছের ডাল থেকে নেমে আসা রোমাঞ্চাভিলাষী কাকের দিকে। বাতাসে শবের গন্ধ এলাকার অনেক কাককে আমগাছটির নিয়মিত সান্নিধ্যচারী করে তুলেছে। যখন লাশের অধিকার বুঝে নিতে সমাগত মানুষেরা আবার ফিরে যাবে স্কুলের বারান্দায়, কাকগুলো হালকা চক্কর দিয়ে, কয়েক পা নেচে একটু একটু করে ফিরে আসবে পছন্দসই শববাহী ব্যাগের ওপর, সুযোগ পেলে দুয়েকটা ঠোকরও দেবে। বালকটি গতকাল রাতের পর আর কিছু খায়নি। তার অভুক্ত শরীরে সঞ্চিত ক্রোধ কেবল হাতের পেশীকে সচল রাখে, সে একটু পর পর দুর্বল পায়ে ছুটে গিয়ে লাঠি নেড়ে বলে, হেই হুশ হুশ যা যা যা। টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা অনেকেই স্পট থেকে বিদায় নিয়েছে বাতাসে লাশের গন্ধ প্রকট হওয়ার পর। কয়েকজন রয়ে গেছে, তারা দূরে পায়চারি করছে ক্লান্ত পায়ে, মাঝে মাঝে সেনাবাহিনীর নিম্নতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছে, কিংবা হঠাৎ উপস্থিত কোনো হোমরাচোমরার দেখা পেলে ছুটে যাচ্ছে মাইক হাতে, পেছন পেছন অবসন্ন পায়ে ছুটছে তাদের ক্যামেরাচালক। মধ্যবয়স্কা পোড় খাওয়া উচ্চপদস্থ এক নারী সাংবাদিক স্কুলের মাঠে নাকে ওড়না পেঁচিয়ে নিষ্কম্প দাঁড়িয়ে আছেন কেবল, বাতাসে লাশের গন্ধ তাকে বিচলিত করার জন্যে যথেষ্ট নয়। হাতের ইশারায় সঙ্গী ক্যামেরাচালককে বালকের কাক তাড়ানোর দৃশ্য ধারণ করতে বলেন তিনি। বালকটির তাড়া খেয়ে কাকগুলো প্রথমে নাচে তিড়িক তিড়িক, তারপর শেষ মুহূর্তে বাতাসে ডানা ভাসিয়ে উড়াল দেয়। তাচ্ছিল্যমাখানো কা কা ডাক ডাকে দুয়েকটা কাক। নারী সাংবাদিক চুপচাপ সে দৃশ্য দেখেন। কাকগুলোকে চেনা মনে হয় তার কাছে। স্কুলের মাঠে বাতাস এসে দোল খায়, লাশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসের হাত ধরে। স্বেচ্ছাসেবী এক তরুণী নাকে মুখোশ বেঁধে পলিথিন ব্যাগ থেকে কর্পূরের টুকরো বার করে এক এক করে সব চটের ব্যাগে ছড়িয়ে দিতে থাকেন। আরেকটি বালক তার বাবার সঙ্গে চলতে চলতে থমকে দাঁড়িয়ে যায় হঠাৎ। তার বাবা নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে দেখে একটি চটের ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আসা সালোয়ার। তারপর গলায় ঝোলানো গামছা দিয়ে প্রথমে চোখ, তারপর নাক ঢাকে। বালকটি তার বাবার হাত চেপে ধরে শুধু। শবের গন্ধে তার চোখের পাতা ভারি হয়ে আসে। কর্পূর ছড়াতে ছড়াতে এগিয়ে আসা মেয়েটিকে সে হাতছানি দিয়ে ডাকে তারপর। বলে, আপা, এইখানে একটু দেন। মেয়েটি মুহূর্তমাত্র নষ্ট না করে ছুটে এগিয়ে আসে। তার ব্যাগ থেকে আঁজলা ভরে কর্পূর সে ছড়িয়ে দিতে থাকে ব্যাগটির ওপর। কর্পূরের ভারি, মিষ্টি, ঝাঁঝালো গন্ধ লড়াই করতে থাকে বালকটির সামনে শায়িত গলিত শবের সঙ্গে। নিচু গলায় তরুণী প্রশ্ন করে, উনি কে? বালক নিম্নস্বরে শুধু বলে, মা। মেয়েটি ফিরে যাওয়ার আগে আরেক আঁজলা কর্পূর ছড়িয়ে দিয়ে যায়। আমগাছের পাতা কাকের পায়ের ভারে কেঁপে ওঠে, ও মা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে, মরি হায় হায় রে ও মা। বালকের পিতা তাকে দুর্বল হাতে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে স্কুলের মাঠে। ক্ষুধা এসে পরাস্ত করে তাদের শোককে, অভুক্ত পিতাপুত্র শুষ্ক চোখে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে নিহত গার্মেন্টস কর্মী যুবতীর শবের সামনে। ছড়ানো কর্পূর একটু একটু করে উবে যেতে থাকে বাতাসে। স্কুলের মাঠে শবের সারিতে রোদ ঢালে আকাশ। আকাশে ঈশ্বর নেই। নেই শকুনও। তারা থাকে আরো দক্ষিণে, দূরে, শহরে।
false
rg
টেলিভিশন দেশকে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে___ দেশে এখন টেলিভিশনের সংখ্যা কত? আগে আমাদের শুধু সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স বিটিভি'র উপর নির্ভর করতে হত। আর এখন সেই সংখ্যা বেড়ে ২০-২১-২২...!!! অথচ ঈদ-পূজা'র মত বড় বড় অনুষ্ঠানগুলোতে নতুন এবং উপভোগ্য অনুষ্ঠানের সংখ্যা কত? দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিশেষ করে যারা প্রোগ্রামে কাজ করেন, তাদের মধ্যে কোনো নতুনত্ব নেই! এটা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। আরে ভাই, বস্তা পচা একই ধরনের অনুষ্ঠান আর কত চালাবেন? পারলে নতুন কিছু দেখান, নইলে সাফ জানিয়ে দেন আমাদের যোগ্যতা এটুকুই। তাই দিয়ে যা পেরেছি তাই করছি। কিন্তু ভাবটা এমন পৃথিবীর সেরা অনুষ্ঠান এরা করছেন! দেশে কোনো বিশেষায়িত টেলিভিশন নেই এটা একটা বিশাল গ্যাপ। কেউ তা নিয়ে ভাবছে তাও মনে হয় না। সবাই সংবাদ, বস্তাপচা নাটক, ফাউল টকশো, ইনিয়ে বিনিয়ে নানা কাহিনী দেখাচ্ছেন কিন্তু একটাও দেখার মত নয়, তারা কি সেটা জানে? এছাড়া বিজ্ঞাপনের বিড়াম্বনা তো আছেই। বিজ্ঞাপনের আবার কোনো মানদণ্ড নেই। একটা জাতিকে ধ্বংস করার জন্য এরকম হাইব্রিড বিজ্ঞাপনই যথেষ্ট। যারা টেলিভিশনের উপস্থাপক, তাদের উচ্চারণ তো মাশাল্লা সেইরাম! বান ঝালাপালা হয়ে যায়। একটা দেশ চোখের সামনে এভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সম্মিলিত ধান্দাবাজদের খপ্পরে পড়ে। আহা টেলিভিশন...দুই লাইন গাইতে জানলেই সে গিয়ে হাজির হয় টেলিভিশনে। দুই পাতা লিখতে পারলেই সে গিয়ে হাজির হয় টেলিভিশনে। দুই কথা বলতে পারলেই সে গিয়ে বকরবকর শুরু করে টেলিভিশনে। একি? এতো সত্যিই মগের মুল্লুক। যার যা খুশি তাই করছে। আহারে টেলিযুগ!!নতুন আমদানি হয়েছে আবার বিদেশি কালচার। এক একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক আবার হরেব রকম সাজগোজ নিয়ে রঙ-চঙ মেখে হাজির হচ্ছেন। বলতে পারেন, আপনে একটা গাইয়া...আমনে শহুরে কালচার বোঝেন না...হে হে হে...যতোটুকু বুঝি তা দিয়ে বলতে চাই, এটা হাইব্রিড যুগ চলছে। কিছু না শিখে না জেনেই শর্টকাট এখানে সবাই বড় বড় স্টার। স্টারের খনি এখন বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোতে। কেউ সুপার স্টার। কেউ মেগাস্টার। কেউ পাতি স্টার। কেউ পোয়াতি স্টার। কেউ খোয়াতি স্টার। কেউ গোয়াতি স্টার। কেউ শোয়াতি স্টার। কেউ চোয়াতি স্টার। স্টারে স্টারে ভরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আহা এই না হলে টেলিযুগ কেমনে চলবে...সৃজনশীলতার প্রকাশ যদি হয় এমন স্টারে স্টারে লোটপাট, তাহলে এই জাতি শুধু টেলিভিশনের কল্যানেই আমাদের শিশুদের মগজ নষ্ট করার জন্য একদিন কাঠগড়ায় দাড়াবে। কিন্তু তখন আর সময় থাকবে না। ফাজলামি'রও একটা সীমা থাকে রে ভাই....দেশের টেলিভিশনগুলো সম্মিলিতভাবে সেই নষ্ট ফাজলামিগুলো করে যাচ্ছে চোখের সামনে।টেলিভিশন দেখে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। এসব টেলিভিশনের কল্যানে এখন নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ অনেক কমে গেছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফেইসবুক। টেলিভিশন আর ফেইসবুক মিলে নতুন প্রজন্ম এখন বই থেকে যোজন যোজন দূরে। এভাবে একটা দেশ বিকশিত হতে পারে না। সেই সুযোগে সেখানে বাসা বাধে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। সো, সাধু সময় থাকতে সাবধান...
false
mk
এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগই জিতবে___ এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগই জিতবে বলে মনে করে বেশিরভাগ জনগণ। তবে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির ওপরই ভরসা রাখছে বেশি। এই বয়সসীমার ৪৮ শতাংশই বিএনপির পক্ষে, আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে বলে জানিয়েছে ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদে ভবিষ্যদ্বাণী দিতে গেলে বিএনপির ভাগ্যই সুপ্রসন্ন বলতে হবে।সম্প্রতি ঢাকা ট্রিবিউনের পক্ষে সামাজিক ও বাজার গবেষণা সংস্থা আইআরসি লিমিটেড পরিচালিত এক জরিপে জানা গেল এ সব তথ্য। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬০০ জন মানুষের ওপর চালানো টেলিফোন-জরিপে আরও দেখা গেছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে এক পঞ্চমাংশেরও বেশি মানুষ। আবার নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন হওয়া উচিৎ বলে মনে করে বেশিরভাগ।অন্যদিকে, চলতি সরকারকে সফল বলে রায় দিয়েছে জরিপে অংশ নেওয়া ৬২ শতাংশ মানুষ। আবার একইসঙ্গে বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীদের ব্যর্থ বলেছে ৬২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।জরিপে আরও দেখা গেছে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ পরবর্তী নেতা হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে যোগ্য মনে করে। তারেক রহমানকে যোগ্য মনে করেন এক চতুর্থাংশেরও কম।এদিকে, ৬ মাস আগে একই প্রতিষ্ঠানের চালানো জরিপে দেখা গিয়েছিল, ৫৩ শতাংশ জনগণ চায় বর্তমান সরকার তার পূর্ণ মেয়াদ শেষ করুক। তখন জরিপে অংশ নেওয়া ২৫ শতাংশ জানিয়েছিল, তারা এক বছরের মধ্যেই নির্বাচন দেখতে চায়। ছয় মাস পর আগাম নির্বাচনের পাল্লা ভারি হয়েছে এবং বিপরীতে কমেছে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন প্রত্যাশীর সংখ্যা। সরকারের যত ব্যর্থতাগত এক বছরে সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন সরকারের কোনও ব্যর্থতা নেই। সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা বলেছেন ২১ দশমিক ৩ শতাংশ। দুর্বল অবকাঠামোর কথা বলেছেন ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। বিদ্যুৎ সঙ্কটের কথা বলেছেন ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কথা বলেছেন ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। বেকারত্বের কথা বলেছেন ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। দুর্বল অর্থনীতির কথা বলেছেন ৫ দশমিক ১ শতাংশ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বলেছেন ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। নির্বাচনকেন্দ্রিক সঙ্কট তথা রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা বলেছেন ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। সরকার সাধারণ মানুষের অধিকার সমুন্নত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন ২ দশমিক ৫ শতাংশ। দুর্বল প্রশাসনের কথা বলেছেন ২ দশমিক ১ শতাংশ। কৃষিখাতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন ১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ।অন্যদিকে, গত এক বছরে সরকারের সামগ্রিক ভূমিকাকে অত্যন্ত সফল মনে করেন ১১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ এবং শুধু সফল মনে করেন ৬০ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ মোট ৭১ দশমিক ৭ শতাংশই মনে করছে বর্তমান সরকার সফল। অন্যদিকে সরকারকে ব্যর্থ মনে করছে ২৪ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ। ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মনে করে সরকার সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়।সাফল্যের খাতবড় সাফল্যের তালিকায় উঠে এসেছে শিক্ষা। পরের অবস্থানে রয়েছে অবকাঠামো। ২৪ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করে শিক্ষা খাতে সরকার সফল। ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন ফ্লাইওভার, ব্রিজ, সড়ক-মহাসড়কের মতো অবকাঠামোর উন্নয়নে সরকার সফল। ৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন বিদ্যুৎ সঙ্কটের ক্ষেত্রে ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে এবং ৭ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে। ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, দারিদ্র কমেছে।কৃষিতে উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে করেন ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। সরকারের সফলতার তালিকায় আই‌‌‌সিটি তথা ডিজিটাল বাংলাদেশকে রেখেছেন ২ দশমিক ৮ শতাংশ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বা শাস্তির কথা বলেছেন ২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা বলেছেন ১ দশমিক ৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতের উন্নতির কথা বলেছেন ১ শতাংশ।অর্থনীতিতে সরকারকে সফল মনে করেন প্রায় ৭৪ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে অত্যন্ত সফল মনে করে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ মনে করে এক্ষেত্রে সরকার সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়। আর সরকারকে সরাসরি ব্যর্থ মনে করেন ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরকারকে খুব সফল মনে করেন ৮ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ। সফল মনে করেন ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক্ষেত্রে সরকার সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়। আর সরকারকে ব্যর্থ মনে করেন ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। একেবারেই ব্যর্থ মনে করেন ২ দশমিক ৪ শতাংশ। জানেন না ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।আইনশৃঙ্খলা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সরকারকে সফল মনে করেন ৬২ শতাংশ মানুষ। ১০ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক্ষেত্রে সরকার সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়। আর সরকারকে ব্যর্থ মনে করেন ২৬ দশমিক ১ শতাংশ।সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সফল মনে করে ৬৪ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ। ৮ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক্ষেত্রে সরকার সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়।সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতকরণে সরকারকে সফল মনে করে ৬৩ শতাংশ মানুষ। ৮ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক্ষেত্রে সরকার সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়। আর ব্যর্থ মনে করেন ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ।এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুএই মুহূর্তে শিক্ষাকে দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মনে করেন অধিকাংশ মানুষ। ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন এই মুহূর্তে দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে শিক্ষা। ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ বলেছেন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নের কথা বলেছেন ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলেছেন ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলেছেন ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। কর্মসংস্থান ৫ দশমিক ২ শতাংশ, কৃষি উন্নয়ন ২ দশমিক ২ শতাংশ এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পক্ষে আছেন ১ দশমিক ৭ শতাংশ। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাকে দেখতে চান?বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনি কাকে দেখতে চান? এমন প্রশ্নের উত্তরে ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনার কথা বলেছেন। খালেদা জিয়ার কথা বলেছেন ২২ দশমিক ১ ভাগ। এইচ এম এরশাদের কথা বলেছেন ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।আজ নির্বাচন হলে কাকে ভোট দেবেন?আজ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ। বিএনপি'র কথা বলেছেন ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ। জাতীয় পার্টিকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। জামায়াতে ইসলামীর কথা বলেছেন ১ শতাংশ। বিএনপি জোটের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন ইসলামী দলগুলোর কথা বলেছেন দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যান্য দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কথা বলেছেন ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এখনও সিদ্ধান্ত নেননি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। না ভোটের কথা বলেছেন ২ দশমিক ৫ শতাংশ। নির্বাচনে কোন দল জিতবে?নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট বিজয়ী হবে বলে মনে করেন ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ মনে করেন নির্বাচনে বিজয়ী হবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। অন্যান্য দলের জোট বিজয়ী হবে বলে মনে করেন ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। ৭ শতাংশ বলেছেন তাদের জানা নেই। উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ১ দশমিক ৬ শতাংশ।বিএনপি ও জোটসঙ্গীদের পারফরমেন্সসরকারের বৈধতার প্রশ্নে বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীদের সফল মনে করেন ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ মনে করে তারা ব্যর্থ। ব্যর্থ বা সফল কিছুই মনে করে না ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।সাধারণ মানুষের সমস্যা তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিএনপি ও তার মিত্রদের সফল মনে করেন ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ মনে করে এক্ষেত্রে বিএনপি ও তার মিত্ররা ব্যর্থ। ২ শতাংশ মনে করে এক্ষেত্রে তারা সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়।জনগণের জন্য অধিকতর ভালো ভবিষ্যত রূপরেখা তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিএনপি ও তার মিত্রদের সফল মনে করেন ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মনে করে এক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ। ১১ দশমিক ৮ শতাংশ মনে করে তারা সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়।আবার বর্তমান সরকারের অধিকতর ভালো বিকল্প হিসেবে নিজেদের উপস্থাপনে বিএনপি ও এর মিত্রদের সফল মনে করেন ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ। ব্যর্থ মনে করে ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ মনে করে এক্ষেত্রে তারা সফলও নয় আবার ব্যর্থও নয়।সামগ্রিকভাবে বিএনপি ও মিত্রদের পারফরমেন্সকে সফল মনে করে ৩২ শতাংশ মানুষ। ব্যর্থ কিংবা অত্যন্ত ব্যর্থ মনে করে ৬২ দশমিক ২ শতাংশ। সফল বা ব্যর্থ কিছুই মনে করে না ২ দশমিক ৭ শতাংশ। বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিগত এক বছরে সংসদে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির সামগ্রিক পারফরমেন্সে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ। অসন্তুষ্ট ৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ। মাঝামাঝি অবস্থানে আছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। দেখুন বিস্তারিত: Click This Link
false
fe
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী _ রনেশ মৈত্র একটা খুব দরকারি লেখা । তাই এখানে শেয়ার করলাম। ******************************************************* মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী রণেশ মৈত্র ----------------------------------------------------------------------- যুদ্ধাপরাধী ও কুখ্যাত জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী দিব্যি স্বাধীনভাবে আবারও ওমরা হজ পালন করতে (নাকি সৌদি সরকারের সঙ্গে গোপন পরামর্শ করতে) পুনরায় সৌদি আরব গেছেন। নিবটি যেদিন ছাপা হবে ততদিনে হয়তো ওই কুখ্যাত হুজুরটি দেশে ফিরে আসবেন এবং বহালতবিয়তে তার বাসভবনে অথবা তার কার্যালয়ে নানা আয়োজনের মাধ্যমে পিত্তি জ্বালানো নানা বক্তব্য উপস্খিত করবেন একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। এই মহান ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে, বিস্ময়কর ব্যাপারই বটে, আজতক কোন সরকারই বিন্দুমাত্র গায়ে আঁচড়ও লাগতে দিলেন না। উল্টো মন্ত্রিত্বের গদিতেও সাদরে বসিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধেরই একজন প্রয়াত সেক্টর কমান্ডারের পত্নী, যার দুর্নীতি আজ সারা দুনিয়ার মানুষই জানতে পেরেছেন। তাই ১৯৭১ সালে তার কৃতকর্মের যৎসামান্য ইতিকথা এই নিবরে মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সংক্ষেপে তার পারিবারিক পরিচয়টি সর্বাগ্রে তুলে ধরছি। জনৈক খোন্দকার লুৎফর রহমানের একটি সন্তান এই মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। তার জন্মস্খান হলো গ্রাম-মন্মথপুর, সোনাতলা, পো : বেড়া, থানা : সাঁথিয়া, জেলা : পাবনা। বর্তমানে তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কীর্তিকলাপের কল্যাণে বাঙালি জাতির সর্বাধিক ও ভীতিকর শত্রু জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, যার বিরুদ্ধে আজও আদালতে দুর্নীতির মোকদ্দমা বিচারাধীন। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতের এই নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে তার যাবতীয় কর্মকাণ্ড অত্যন্ত উৎসাহের, উদ্যমের ও নিষ্ঠার সঙ্গেই পরিচালনা করেন পাকিস্তানি শত্রু বাহিনীর সহায়তায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের, বর্তমানে যার নাম (ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিহত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিমর্ল করার জন্য আলবদর বাহিনী নামে এক ভয়াল সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন তৎকালীন পর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। এই আলবদর বাহিনীরও প্রধান ছিলেন আর কেউ নন নিজামী নামক মাওলানা সাহেবই। তার এই বদর বাহিনীর ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধরত বাঙালি জনগোষ্ঠীকে পাকিস্তানি তথা জামায়াতি ব্যাখ্যা মোতাবেক ‘ইসলামী’ জীবনাদর্শে বিশ্বাসী জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত করা। আলবদর বাহিনীর নেতারা বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করে এবং তাদেরই নির্দেশে মাওলানা নিজামীর প্রত্যক্ষ এবং অপ্রত্যক্ষ পরিচালনাধীনে ১৯৭১ এর ডিসেম্বরে, মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির আনুষ্ঠানিক বিজয় অর্জনের প্রাক মুহর্তে ঢাকাসহ সারাদেশে শত শত বরেণ্য, দেশপ্রেমিক ও প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। নিজামীর বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যার লোমহর্ষক কাহিনী আজতক বাংলাদেশের তাবৎ সংবাদপত্রে ছবি-জীবনীসহ বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে অথবা নভেম্বরের শেষ দিকে ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে (আলবদর বাহিনীর প্রধান ক্যাম্প) ইসলামী ছাত্র সংঘ আয়োজিত এক চা-চক্রে প্রধান অতিথির ভাষণে মতিউর রহমান নিজামী নির্লজ্জের মতো বলেছিলেন, ‘সশস্ত্র ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী ও তাদের এ দেশীয় বিশ্বস্ত দালালরা (?) যে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে একমাত্র পর্ব পাকিস্তানের যুবকরাই তাদের কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম। ‘যারা ইসলামকে ভালবাসে শুধু তারাই পাকিস্তানকে ভালবাসে’ এবারের উদ্ঘাটিত এ সত্যটি যাতে আমাদের রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীরা ভুলে যেতে না পারেন সেজন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এরপর পরই নির্মমভাবে বাঙালি দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে তাদের সে পরিকল্পনাকে অত্যন্ত নিপুণভাবেই সক্ষম হয়েছিল। জামায়াতে ইসলামীর দৈনিক সংগ্রামের ১৪ নভেম্বরে প্রকাশিত সংখ্যাটিতে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর লেখা একটি নিবে বলা হয়েছিল, ‘আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে, দেশপ্রেমিক পাক-বাহিনীর সহযোগিতায় এ দেশের ইসলামপ্রিয় অসম সাহসী তরুণ সমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে অবলম্বন করে পাকিস্তানের সশস্ত্র সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় হিন্দু বাহিনীকে পরাভত করে আলবদর বাহিনী গঠন করেছে। সেদিন আর খুব দরে নয় যে যৌথভাবে তারা হিন্দু-বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে হিন্দুস্তানের অস্তিত্বকে খতম করে সারা বিশ্বে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করবে (সাবাস)। নিজামী ছাহেবের এই সুখস্বপ্ন যে নিতান্তই একটি অর্থহীন দিবাস্বপ্ন মাত্র তা তিলে তিলে প্রত্যেক্ষ করলেও এবং দেশ-বিদেশে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি অত্যন্ত সোচ্চার হয়ে উঠলেও নিজামী ছাহেবরা কিন্তু তা মানতে আজও নারাজ। কারণটি হয়তো বা এই যে, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এবং অতীতের সব নির্বাচিত অনির্বাচিত সরকারকে এবং তাদের অতীত কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করেই তারা তাবৎ সন্দেহমুক্ত হয়েছে যে, আগামীতেও যারাই ক্ষমতায় আসুক, জামায়াতে ইসলামী বা যুদ্ধাপরাধীদের আদৌ কোন ভয়ের কারণ নেই। তাই তারা এখন মরিয়া। বস্তুত একদিকে, স্বাধীনতাবিরোধী চারদলীয় নিজমী-খালেদা জোট এবং বর্তমানে আসন্ন মহাজোট গঠন করতে আওয়ামী লীগ যেভাবে মরিয়া উঠে পড়েছে বা প্রকাশ্যেই তারা তা ঘোষণাও করেছে তাতে তাদের মনে কোন ধর্মীয় দল বেআইনি ঘোষণার বা যুদ্ধাপরাধী বিচারের কথা বলুক না কেন, তা যে ওরা কেউ করবে না সেটা বুঝবার মতো ক্ষমতা জামায়াতে ইসলামীর আছে। যাই হোক, শান্তি কমিটি গঠনের বা আলবদর বাহিনী গঠন করার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেছে তাদের সমলে ধ্বংস করার আহµান সংবলিত নিজামীর ভাষণ ও বিবৃতির বহু বিবরণ ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে সবিস্তারে ছাপা হয়েছে। যশোরে রাজাকার সদর দপ্তরে সমবেত রাজাকারদের উদ্দেশ করে নিজামী বলেছিল, ‘জাতির [পাকিস্তানের] এ সঙ্কটে বা সঙ্কটজনক এক চরম মুহর্তে প্রত্যেক রাজাকারের উচিত ইমামদারির সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও জাতীয় কর্তব্য অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা এবং ওইসব ব্যক্তিকে খতম করতে হবে যারা সশস্ত্র অবস্খায় পাকিস্তান ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।’ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তার নিজ এলাকাবাসীর হত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, নির্যাতন ইত্যাদির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। পাবনা জেলার বেড়া থানার বৃশালিখা গ্রামের আমিনুল ইসলাম ডাবলু শহীদ জননী জাহান আরা বেগমের প্রতিষ্ঠিত গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছিলেন যে, তার পিতা মোহাম্মদ সোহরাব আলীকে নিজামীর নির্দেশেই হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, নিজামীর নির্দেশেই তাদের এলাকার প্রফুল্ল, পিতা নয়না প্রামাণিক, ভাদু, পিতা ক্ষিতীশ প্রামাণিক, মনু পিতা ফেলু প্রামাণিক এবং ষষ্ঠী প্রামাণিক, পিতা প্রফুল্ল প্রামাণিককে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষ সাক্ষীও রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছিলেন। ১৯৭১-এ ৭ নম্বর সেক্টরের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুসকে (পিতা মৃত ডা. সৈয়দ আলী ক্ষোলাবাড়িয়া, থানা ও জেলা পাবনা (সাং মাধবপুর) আলবদর, বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেলে তিনি প্রায় দুই সপ্তাহ আল বদরদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে অবস্খান করেন। ক্যাম্পে অবস্খানের সময় তিনি সেখানে আলবদর কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও নির্যাতন ইত্যাদির গোপন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে প্রত্যক্ষ করেন। এসব পরিকল্পনা প্রণয়নে মতিউর রহমান নিজামী প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব দেন বলে তিনি পরিবর্তীতে জানান। ২৬ নভেম্বর জনৈক সাত্তার রাজাকারের সহযোগিতায় ধুলাউড়ি গ্রামে (পাবনা জেলায় সাঁথিয়া থানাধীন) পাকিস্তানি সৈন্যরা ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে এক রাতে হত্যা করে। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পরিকল্পনা ও নির্দেশ অনুযায়ী সাত্তার রাজাকার তার কার্যক্রম পরিচালনা করত বলে তিনি জানিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা কুদ্দুস আলবদর বাহিনীর একটি সমাবেশ এবং গোপন বৈঠকে তাদেরই বু বলে ভান করে উপস্খিত ছিলেন বলেও জানান। এই বৈঠকে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীও উপস্খিত ছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিহত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সমলে ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। বৈঠকে কোথায় কোথায় আওয়ামী লীগ ও মস্কোপন্থি ন্যাপ নেতাদের বাড়িঘর আছে, দোকান-পাট আছে তা চিহ্নিত করা হয়। তিনি আরও জানান, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি ধ্বংস এবং আওয়ামী লীগ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতাদের শেষ করে ফেলার নির্দেশ জারি করেন। বৈঠকের পরদিনই রাজাকার বাহিনীর সহযোগিতায় বৃশালিখা গ্রামটি পুরোপুরি অতর্কিতে ঘিরে ফেলা হয়, ব্যাপক গোলাগুলি চালানো হয়, নির্যাতন, লুটতরাজ এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি করে ভয়াবহ এক ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কুদ্দুস আরও জানান, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী তার নিজ গ্রামের বটেশ্বর সাহা নামক এক তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। নিজামীর বিরুদ্ধে প্রায় অনুরূপ অভিযোগ এনেছেন সাঁথিয়া থানার মিরপুর গ্রামের মোহাম্মদ শাজাহান আলী, পিতা জামাল উদ্দিন। যুদ্ধের সময় হঠাৎ রাজাকারদের হাতে ধরা পড়লে আরও কয়েকজন আটক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে তার গলায়ও ছুরি চালানো হয়েছিল। একই সঙ্গে আটক অন্যদের জবাই করে হত্যা করতে সক্ষম হলেও শাজাহান আলী ঘটনাচক্রে বেঁচে যান। কিন্তু তার সহযোদ্ধা দারা, চাঁদ, মুসলেম উদ্দিন, আখতার উদ্দিন, শাজাহান প্রমুখদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গরু জবাই করার লম্বা ও ধারালো ছুরির আঘাতে আঘাতে জবাই করে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন প্রায় ১০/১২ জন মুক্তিযোদ্ধাকেও ওরা হত্যা করেছিল। মুক্তিযোদ্ধা কবিরের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের নীলনকশটিও মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী স্বয়ং করেছিল বলে শাজাহান আলী জানিয়েছেন। মাওলানা মতিউর রহমান ও তার সহযোগী আলবদরদের নৃশংস বর্বরতার অজস্র কাহিনী পাবনা, ঢাকাসহ বাংলাদেশের সর্বত্র আজও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। (সিডনি থেকে) -------------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ । ২ নভেম্বর ২০০৮ রোববার সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:০৬
false
rg
।। ভালো লাগা শব্দমালা বনাম ভালো না লাগা বৈরীশব্দ ।। আমাদের বাড়ি গোটা গ্রামের মাঝখানে। চারপাশে খোলা মাঠ। বর্ষাকালে সেই মাঠে শুধু থৈ থৈ জল। গ্রামের সাথে একমাত্র সংযোগ কাঁচা রাস্তাটিও বর্ষাকালে মাঝে মাঝে তলিয়ে যেতো। বাইরে যাবার উপায় তখন নৌকা বা কলাগাছের ভেলা। আমাদের বাড়ির সবচেয়ে নিকট প্রতিবেশী হল মোন্তাজ দাদু। মোন্তাজ দাদু'র দুই ছেলে। আমির আর জুমির। আমরা ডাকি আমর দুদু আর জুমির দুদু। বর্ষাকালে দুই দুদু-ই ছোট নৌকায় করে বাড়ির আশে পাশে মাছ ধরতেন। তো, বর্ষাকালে বাবা প্রায়ই বাজার থেকে ফিরতেন রাত করে। আর তখন হালদার বাড়ির উলুবনের পাশে এসে অথবা করিম খাঁদের বাড়ির সামনের ব্রিজের কাছে এসে বাবা হাঁক ছাড়তেন-ওওওওওওওওওও জুমির.....। এপাশ থেকে জুমির দুদুও তখন পাল্টা হাঁক দিতেন- আসতিছিইইইইই....। ছোটবেলায় শোনা বর্ষাকালের এই নিয়মিত শব্দদুটো খুব ভালো লাগতো। আর বৃষ্টি আসার আগে বৃষ্টির আক্রমন দূর থেকে দেখে খুব ভালো লাগতো। কুমারখালী, হরেঙ্গা, দীঘিরজান গ্রামের পার গ্রাম ভিজিয়ে ফাঁকা মাঠ পারি দিয়ে আমাদের বাড়ি পর্যন্ত আসতে বৃষ্টির অনেক সময় লাগতো। সেই দৃশ্য আসলে লিখে বোঝানো যাবে না। বৃষ্টি শাসন করতে করতে আসতো। তখন আমরা বৃষ্টির একটা শো শো শব্দ শুনতাম। ভারী মুগ্ধ করা সেই শব্দ-সুরের লহরী। উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে সেই শব্দ আমাদের অন্তর ছুঁয়ে কোন অজানায় যেনো আমাদের হারিয়ে নিয়ে যেতো বৃষ্টির সেই হৃদয় ভোলানো সুর। আর টিনের চালের ঘরে বসে শুয়ে বৃষ্টির মাতম করা রিমঝিম সুরে তো এককথায় আমরা হারিয়ে যেতাম। বৃষ্টির নিজস্ব একটি শব্দ আছে। সেই শব্দটি মন কেড়ে নেবার মতো ভারী অবাক করা এক শব্দ। শব্দটি শুনিয়ে শুনিয়ে ভারী ব্যাকুল করে সে আবার হঠাৎ একসময় দূর গাঁয়ের দিকে রওনা দিতো। কিসের যেনো একটা তাড়া তার। কিসের তাড়া বৃষ্টিকন্যার? বৃষ্টির সেই সব মন মাতানো শব্দগুলো ভারী ভালো লাগতো। কিন্তু মেঘের গর্জন শুনলে হঠাৎ বুক ধরফর করতো। কেমন যুদ্ধের কামানের গোলার মতো গুড়ুম গুড়ুম ভয়ংকর সেই শব্দ। গ্রামে কোনো বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান থাকলে সেই বাড়িতে মাইক বাজতো। দিনে সেই মাইকের গান ভারী বিরক্ত লাগতো। কিন্তু রাতের বেলায়? জগন্ময় মিত্র যখন গেয়ে উঠতেন- তুমি আজ কতো দূরে, তুমি আজ কতো দূরে...কিংম্বা লতা মুঙ্গেশকার যখন গাইতেন- হাসি হাসি পড়বো ফাঁসি, দেখবে ভারতবাসী...একবার বিদায় দে না ঘুরে আসি...অথবা হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যখন গাইতেন- রানার ছুটেছে ওই ঝুমঝুম ঘণ্টা বাজছে রানার....যা শুনতে শুনতে কোথায় যেনো এক অজানা রাজ্যে হারিয়ে যেতাম। ভারী চিত্তহারা সেই সব রাতের সেই সব ভূবনময়ী শব্দযুগল। প্রয়োজন ছাড়া আমার হাটে যেতে একদম ভালো লাগতো না। হাটের ভিড়টা আমার একদম অসহ্য লাগতো। কিন্তু হাটে না গেলে তুহিন আর আমি যখন সারা বিকেল আমাদের ফাঁকা রাস্তায় বসে বসে দুনিয়ার সব গপ্পো করে করে সূর্যাস্ত দেখতাম, ভারী মজা লাগতো। সেই সময় হাটের শব্দে আমরা প্রায়ই কান পাততাম। ভারী একটা দুর্বোদ্ধ শব্দ সেই হাটের শব্দে। যার তর্জমা করার জন্য কোনো পণ্ডিৎ বুঝিবা এখনো জন্মগ্রহন করেনি। দূর থেকে সেই হাটের শব্দ ভারী ভালো লাগতো। কিন্তু হাটে গিয়ে সেই বিশেষ শব্দ সারা হাটের কোথাও খুঁজে পাওয়া যেতো না। সে এক ভারী অবাক করা বিস্ময়! পাখির কিচিরমিচির শব্দ আমার ভারী পছন্দ। গ্রামের বাড়িতে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলে সেই শব্দ যতো পরিস্কার শোনা যেতো, দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা যেনো অন্যান্য শব্দের মধ্যে কোথায় হারিয়ে যেতো। কিন্তু দুপুরের ঠা ঠা রোদে সবাই যখন বিশ্রামে যেতো তখন বাগান থেকে হঠাৎ শোনা যেতো ঘুঘুর ডাক। আহা, তখন কি আর আমাদের মতো লিলিপুটদের তখন বিশ্রাম নেওয়া সাজে? বড়দের কোনোমতে ফাঁকি দিয়ে আমরা ছোটরা তখন ঘুঘু খুঁজতে ছুটতাম। সে এক অমর বাল্যকাল বটে। আমাদের হরিসভার ঠিক পাশেই বিপদ ভঞ্জন বৈরাগী'র বাড়ি। বিপদ ভঞ্জন বৈরাগীকে আমরা ডাকতাম দাদু। সাড়ে ছয় ফুট লম্বা বিশাল দেহের বিপদ দাদু খুব সুন্দর গান গাইতেন। এক ছেলে বিনয় আর তিন মেয়ে নমিতা, সবিতা আর কবিতা এবং গাঁয়ের বিন্দু'দা, মনোজ কাকা, মরাই দা, আর ভজনকে নিয়ে বিপদ দাদু'র ছিল এক কীর্তনের দল। প্রতিবছর হরিসভায় মাঘ/ফাল্গুন মাসে কীর্তন হতো। বাইরে থেকে দ্বীজেন বাবু'র দল, বিজয় সরকারের দল, হরিদাসী'র দল আর নীলকান্ত বাবু'র দল কীর্তন গাইতে আসতেন। তখন বিপদ দাদু'র দলও দুই/তিন পালা কীর্তন করতেন। আহা সেই শব্দ যে কতো মধুর তা লিখে বোঝানো যাবে না। এছাড়া প্রায়ই রাতের বেলায় বিপদ দাদু ঘরের দাওয়ায় বসে বসে একমনে ঢোল বাজাতেন। সেই ঢোলের শব্দ শুনে আমার পড়া ছুটে যেতো। অংকের হিসেবে ভুল হতো। বিপদ দাদু ঢোলের সাথে এমনভাবে খেলতেন যে কখনো দাদরা, কখনো কেহারবা, কখনো ত্রিতাল, কখনো ভৈরবী, সেই শব্দের ঘোরে পড়ার ঘরে টেকা ভারী কষ্ট। বিপদ দাদু হারমোনিয়াম, ঢোল, খোল, আর মন্দিরা বাজাতে জানতেন। বিনয় হারমোনিয়াম, ঢোল, মন্দিরা আর বাঁশি বাজাতে জানতো। বিন্দু'দা খোল, ঢোল আর মন্দিরা বাজাতে পারতেন। মনোজ কাকু বাজাতেন হারমোনিয়াম। বিপদ দাদু'র তিন মেয়েই ভালো গাইতেন। হারমোনিয়াম আর মন্দিরা বাজাতে পারতেন তারা। মরাই দা বাজাতেন বাঁশি অথবা মন্দিরা। আর ভজন বিপদ দাদু'র কাছে খোল বাজানো শিখতো। এর মধ্যে ভজন আর বিনয় ছিল আমার ক্লাশফ্রেইন্ড। এক সময় বিপদ দাদুরা ইন্ডিয়া চলে গেলেন। আহা সেই ঢোল আর শুনি না কোথাও। এখন নাগরিক জীবনে গাড়ির হর্ন খুবই বিরক্তি লাগে। বিশেষ করে মেজাজ খারাপ হয় যখন বড়লোকের হাইব্রিড পোলাপাইনরা গাড়ির বাম্পার খুলে রেখে ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, বারিধারার রাস্তায় রেস করে মাতিয়ে বেড়ায়, সেই শব্দ শুনলে। গ্রামে বসে উড়োজাহাজের শব্দ শুনতে ভালোই লাগতো। কিন্তু শহরে বসে উড়োজাহাজের শব্দ শুনলে ভারী বিরক্তি লাগে। কাঁঠালবাগানে সকালের দিকে এক মহিলা গলিতে গলিতে একটা চিৎকার দিতেন- ছাই নিবেন নি ছা-আ-আ-আই? ভারী ভালো লাগতো সেই শব্দ। আর কলাবাগান লেকসার্কাসে এক ফেরিওয়ালা ছিল, যিনি বিরল সব আইটেম ফেরি করতেন। প্রায় রোজই তিনি হাঁক দিতেন- ওই বরই। ওই চালিতা-বরই। ওই কাঁচা বরই। লাগবে বরই? ভারী ভালো লাগতো সেই শব্দ। আগে আমরা ঢাকায় আসতাম লঞ্চে। তো মাঝরাতে লঞ্চ ভিড়তো চাঁদপুর। তখন কিছু ফেরিওয়ালা লঞ্চে উঠতো বিরতী সময়ে। লঞ্চ ঘাট ছাড়ার মুহূর্তে তারা আবার নেমে যেতো। তারা বিচিত্র সব শব্দ করতো। ওই ডিম। ওই গরম ডিম। ওই ডিম ডিম। ওই ডিম আছে। অথবা চানচুররররররর বলে কারো লম্বা চিৎকার, সঙ্গে একটা ঝুনঝুনির শব্দ। হঠাৎ গোটা লঞ্চ যেনো ভারী ব্যস্ত হয়ে উঠতো। ভারী ভালো লাগতো মাঝরাতের চাঁদপুর লঞ্চঘাটের সেই বিচিত্র শব্দ। শব্দ কখনো ভালো লাগা তৈরি করে। আবার শব্দ কখনো বিরক্তি'র উদয় ঘটায়। সকল শব্দ উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে মহাশূন্যের মহাকোঠরে গিয়ে জমা হয়। মাঝরাতে গির্জার ঢং ঢং শব্দ শুনতে ভারী ভালো লাগে। ভোরবেলায় দূর মসজিদ থেকে ভেসে আসা 'আস-সালাতু খায়রুর মিনান নাউম' শুনতে ভারী ভালো লাগে। কিন্তু দিনের বেলায় একসঙ্গে চারপাশের মাইক থেকে যখন এক সাথে আযান হয়, সেই শব্দে কোন আযানই ঠিক মতো শোনার জো থাকে না। শব্দের আচরণই হয়তো এমন, দূরে গেলে সে মায়া তৈরি করে। কাছে আসলে সে বিরক্তির সৃষ্টি করে। কি জানি! শব্দবিজ্ঞানীরা হয়তো ভালো বলতে পারবেন। তবু শব্দরা ভালো লাগা তৈরি করে আবার শব্দরা বিরক্তি লাগায়। আমরা শব্দের বাইরে নির্জনে যেতে পারি না। শব্দরা আমাদের নিয়ে বেঁচে থাকে। সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:১৪
false
ij
তুমি আজও সমুজ্জ্বল হে যে কারণগুলির জন্য বঙ্গবন্ধু কে হত্যা করা হয়েছিল সে কারণগুলি সম্বন্ধে আজ বঙ্গবন্ধুবিরোধীরা কি সাফাই গাইবেন? চার বছরের দুঃশাসনে বঙ্গবন্ধু দেশকে ধ্বংসের দ্বারে নিয়ে গেছেন? তো কারা আজ দেশকে উন্নতির চরম সোপানে নিয়ে গেল? বঙ্গবন্ধুবিরোধী উগ্র ডানপন্থিরা তো বহু বছর এদেশ শাসন করল- তাদের বিরুদ্ধে দুনীর্তিরও যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে; কই-তাদের তো সপরিবারে হত্যা করা হল না! বাংলাদেশ সত্যিই সতিই উন্নতির চরম সোপানে পৌঁছে গেলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে যেন কিছু শান্ত্বনা পাওয়া যেত। কিন্তু, তা হয়নি। জানালার নিচে গলি। সে গলিতে পাড়ার ছেলেদের মিছিল। মিছিল থেকে উচ্চারিত হয়: “নৌকা”, “নৌকা”। “ধানের শীষ”, “ধানের শীষ” বলে চিৎকার করা মিছিলও রয়েছে-তবে,সে গ্র“পের ভয়েস উইক। স¤প্রতি কোকো-সিমেন্স কেলেঙ্কারির পর আরও উইক। এখন দেখা যাক কী হয়। রাজনীতির কথা কিছুই বলা যায় না। কাল কলিং বেল শুনে দরজা খুললাম। দুটি মেয়ে দাঁড়িয়ে। মুহূর্তেই ধানের শীষের পক্ষে লিফলেট হাতে ধরিয়ে দিল। বলল, প্রার্থী পছন্দ হলে ভোট দেবেন। আমার মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল- আবার? মেয়ে দুটি লজ্জ্বা পেয়ে সরে গেল। আসলে বি এন পির সা¤প্রতিক ইতিহাস অপরিসীম লজ্জার ইতিহাসই বটে। পচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই দলটির (আমার এক রাজনীতি সচেতন বন্ধুর মতে সুবিধাবাদীদের ক্লাব) যাত্রা শুরু জঙ্গি-সামরিক পাকিস্থান ও ওয়াহাবী সৌদি আরবের প্রতি নতজানু হয়ে। যেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠায় জন্য এ দুটি উপাদান অনিবার্য । এবং যে মহান আদর্শটি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সাম্যবাদী কর্নেল তাহেরকে অতি অবশ্যই ফাঁসিতে ঝোলাতেই হবে, তারপর প্রতিষ্ঠিত করতে হবে বহুদলীয় গনতন্ত্র। (কিউবার পথে হাঁটা চলবে না) অতএব-একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা মগবাজারে তাদের রাজনৈতিক অফিস খুলুক। লুকোনো গলিঘুঁজি থেকে পিলপিল করে বেরিয়ে আসুক সব দেড়েল ঘাতক-দালালরা। এভাবে বাউলের দেশে উগ্র ডানপন্থিরা হাম্বলী-ওয়াহাবীদের বড় পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠল। বাউলের দেশ? হ্যাঁ, ইতিহাস তো তাই বলে। ইতিহাস? ইতিহাস দিয়ে কী হবে! মাননীয় তারেক রহমান তো বলেছেনই-ইতিহাস দিয়ে কী হবে। যেহেতু অশিক্ষিত খাম্বাওলায়ালা তারেককে বুঝিয়েছিল ইতিহাস দিয়ে কী হবে। আরে বাদ দেও ইতিহাস- দেখ না গাজীপুরে কী সুন্দর জাতীয়তাবাদী বালাখালা “খোয়াব” নির্মিত হইতেছে। আমরা সে সব নষ্ট করুন ইতিহাসের কথা জানি। তখন বলছিলাম, বি এন পির সা¤প্রতিক ইতিহাস অপরিসীম লজ্জার ইতিহাস। আমাদের শিক্ষিত জাতীয়তাবাদীদের আরেক লজ্জ্বার কথা বলি। রাজনীতির একটি সমীকরণ এই রকম-উগ্রজাতীয়তাবাদ+উগ্র মৌলবাদ=ফ্যাসীবাদ। একটি উদাহরণ- র‌্যাব গঠন। এই প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে কী সুফল হল সেটি বড় কথা নয়, আসল কথা হল প্রতিষ্ঠানটি গনতান্ত্রিক নয়। র‌্যাব দ্বারা বিচার বর্হিভূত অজস্র হত্যাকান্ডগুলি এদেশের বিচারিক মূল্যবোধকে হাজার বছর পিছিয়ে দিয়েছে। ইতিহাস চর্চা না করা দলটি জানে না মানুষের অগ্রগতির ইতিহাসে সবচেয়ে পবিত্র হল জাস্টিস বা ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার। সেটিই মহা শিক্ষিত মওদুদ আহমেদরা ধুলিসাৎ করে দিলেন! বাংলাদেশি রাজনীতিতে একেই বলা যায় অগনতান্ত্রিক সৌদি আছর। যা হোক। জানালার নিচে গলি। সে গলিতে পাড়ার ছেলেদের মিছিল। মিছিল থেকে উচ্চারিত হয়: নৌকা, নৌকা। শুনতে শুনতে মনে হয় বঙ্গবন্ধু আজও সমুজ্জ্বল। মিছিলের অনেকেই কিশোর। আমার ভাবতে ভালো লাগে সে কিশোর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কী ভাবে। সেদিন একুশে টিভিতে দেখলাম এক কিশোরী বঙ্গবন্ধু সম্বন্ধে ওর আবেগের কথা বলছে। তা হলে জামায়াত-উগ্র ডানপন্থিদের বঙ্গবন্ধুবিরোধী এত যে অপপ্রচার তার কী হল। আসলে বাংলাদেশের জনগন নৌকায় ভোট দিলে যতটা না দেবে শেখ হাসিনার জন্য বঙ্গবন্ধুর জন্য তার চেয়েও বেশি। এইই আমার প্রত্যয়। প্রত্যয়ের সঙ্গে আবেগের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ট। আবেগের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছন্দের- আজও তুমি সমুজ্জল হে পদ্মাপাড়ের বীর, তোমার মায়ায় তোমার ছায়ায় দেশটা সুখের নীড়। (আমি দীর্ঘদিন হল নিজেকে একজন লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আপ্রান চেষ্টা করছি। এবং আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে কোনও লেখকেরই উচিৎ নয় কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করা। এতে সত্যাসত্য বিপন্ন হতে পারে। তবে বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ লেখকই বঙ্গবন্ধুর প্রতি এক গভীর আবেগ বোধ করেন। এটাই সত্য। এখানেই বঙ্গবন্ধু বিস্ময়কর।) গলির মিছিলের ধ্বনি শুনতে শুনতে ভাবছিলাম-যদি আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসে (ধরা যাক) তবে তাদের জন্য আগামী ৫ বছর হবে অত্যন্ত ক্রশিয়াল। কেন? কেননা, মানুষ তো কেবল ভাত-কাপড়ে বাঁচে না, মানুষের অনেকানেক মানসিক দাবীদাওয়াও থাকে। আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধপরাধীদের বিচারের ওয়াদা করেছে। সেটা যেন ন্যায় বিচারের স্বার্থে বাস্তবায়ন করা হয়। সৌদি জুজুর ভয় পাবেন না বঙ্গবন্ধু কন্যা। মার্কিন আগ্রাসনে পাকিস্থান টুকরো টুকরো হতে চলেছে। সিন্ধিরা বিচ্ছিন্ন হতে চাইছে। আপনি প্রতিশোধ সরুপ সিন্ধিদের অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য করার কথা ভাবতে পারেন। সৌদি ওয়াহাবীরা আর কতদিন। আমাদের প্রগতিশীল আরব ভাইবোনেরা অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে। তারা সময়মতো পরিবর্তন আনবেই। বিশ্বাস করি- তা হলেই মধ্যযুগীয় অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসবে দেশটি। ইসলামী বিশ্বকে মুক্ত করবে হাম্বলী-ওয়াহাবী কলুষ থেকে। আর আমি অনেক আগেই জানতাম-মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার জন্য জাতীয়তাবাদী ক্লাবটি শত শত টুকরো হয়ে যাবে। সে লক্ষণ আজ সুস্পষ্ট। আর নষ্ট মগজের জামায়াতীদের বিশাক্ত মতবাদ নতুন প্রজন্ম প্রত্যাখান করবে। কোমলমতি শিশুদের যা শেখাবেন তারা তাই শিখবে। দরকার কেবল মাদ্রাসার পাঠ্যসূচিতে ওয়াহাবী-মওদুদীর বদলে নমনীয় ইসলামী সুফিবাদের পাঠ বাড়ানো। পরিশেষে বলি: বলা হয় বাংলাদেশের উগ্র ডানপন্থিরা ইতিহাস বিকৃত করেছে। কথাটা ভেবে দেখার মতন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এখন চারিদিকে বঙ্গবন্ধুর নাম শুনছে। তারা হয়তো ভাবছে, বঙ্গবন্ধু মৃত্যুযোগ্য দূর্বল নেতা হলে এতকাল পর তাঁর নাম এত ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হত না। বঙ্গবন্ধুর মধ্যে সত্য অবশ্যই আছে। তারপর? তারপর তারা কি উগ্র ডানপন্থি অশিক্ষিত খাম্বাওয়ালাদের নষ্ট প্রভাব এড়িয়ে ফিরে যাবে প্রকৃত ইতিহাসের কাছে? অতীতে? যে অতীতেও বঙ্গবন্ধু সমুজ্জ্বল। সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৬
false
fe
ফেসবুক _ দীনতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে কারা _ ফেসবুক : দীনতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে কারা? ফকির ইলিয়াস ======================================== ফেসবুক- এই সময়ে একটি বহুল নন্দিত সোস্যাল নেটওয়ার্ক। সামাজিক যোগাযোগ এবং মানবিক সম্পর্কের উন্নয়নে জন্মলগ্ন থেকেই এই অনলাইন নেটওয়ার্কটি বিনামূল্যে তার সদস্যদের নানা সুবিধা দিয়ে আসছে। বিশেষ করে নিজ বন্ধুমহলে সৃজনশীল কোনো ভাবনা দ্রুত পৌঁছে দেওয়া, মতবিনিময় করা ইত্যাদির মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ উপকৃত হচ্ছেন বলা যায়। এটা ফেসবুকের সব সদস্যই জানেন, প্রযুক্তির নতুন দরজা এই অনলাইন কম্যুনিটিরও বেশকিছু নিয়মাবলি রয়েছে। ফেসবুকে বাংলা ভাষাভাষী সদস্যদের সংখ্যা এ মুহুর্তে হয়তো লক্ষাধিক হতে পারে। কারণ এর সদস্য সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এর সদস্য হওয়ার নিয়ম হচ্ছে কেউ একজন ইনভাইটেশন পাঠাবেন। তা অনুসরণ করে সদস্য ফরম পূরণ করতে হবে অনলাইনে। তারপর সার্চ করে বন্ধু তালিকায় নাম যোগ করে আমন্ত্রণপত্র পাঠাতে হবে। আমন্ত্রিত বন্ধুরা সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে কনফারমেশন করবে। এভাবে প্রতিদিনই বাড়বে বন্ধুসংখ্যা। তারপর বন্ধুর বন্ধু কিংবা তারও বন্ধু এমন কেউ বেছে বেছে তার বন্ধু তালিকায় নাম যোগ করবে। এভাবে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে বন্ধুদের দল। হ্যাঁ, কেউ কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবেন কি করবেন না, তার এখতিয়ারও আছে নিজস্ব। মন চাইলে যোগ করবেন- না চাইলে করবেন না। এখানে একটি বিষয় আমি খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি, অনেকে নিজ নাম, নিজ ছবি না দিয়ে ছদ্মনামে ভিন্ন ছবি দিয়ে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলেন কিংবা খুলছেন। কেন তারা তা করেন কিংবা নেপথ্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি-না তা তারাই ভালো বলতে পারবেন। ফেসবুক যে সুবিধাগুলো দিয়ে যাচ্ছে তার অন্যতম হচ্ছে, তাৎক্ষণিক অনলাইনে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করা, গ্রুপ ডিসকাশন করা, আলোচনা করা, নিজ অ্যালবাম খুলে ব্যক্তিগত পারিবারিক ছবিগুলো সংরক্ষণ করা ইত্যাদি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ফেসবুকে বেশকিছু নেতিবাচক কর্মকান্ড আমাকে ভীষণভাবে ব্যথিত করেছে। আগেই বলেছি, অনলাইন কম্যুনিটির বেশকিছু নিয়মকানুন ও শর্তাবলি রয়েছে, যা মেনে চলা একজন মানুষ হিসেবে সবার নৈতিক দায়িত্ব। বড় বেদনার সঙ্গে দেখছি, এসব শর্তাবলি অমান্য করে কেউ কেউ গোটা সোস্যাল নেটওয়ার্ককে কলুষিত করার চেষ্টায় মেতে উঠেছেন। শুধু ফেসবুকে কেন, কোনো অনলাইন গ্রুপ, ব্লগ, ডিসকাশন প্লাটফর্মেই কোনো অশ্লীল ছবি যোগ করা, কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা, কারো চরিত্র হনন করা মারাত্মক গর্হিত কাজ। পরিতাপের বিষয়, কিছু বাংলা ভাষাভাষী সদস্য সে রকম কাজ করে গোটা জাতিসত্তাকে কলংকিত করার চেষ্টা করছেন। ইদানীংকালে আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করছি বেশ হতাশার সঙ্গে। ফেসবুকে ইংরেজি অক্ষরে বাংলা গালাগাল দিয়ে বেশ কিছু গ্রুপ খোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। ‘গ্রামীণফোন’কে এমন অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়ে ব্যানার করা হয়েছে। তাছাড়া বাংলালিংক, একটেল, গ্রামীণ ব্যাংক প্রভৃতি সংস্থাকেও আক্রমণ করা হয়েছে অশ্লীল ভাষায়। মনে রাখতে হবে, বাংরেজিতে কথাগুলো লেখা হলেও এর পাঠক মূলত কে? শুধু বাংলা ভাষাভাষী নয়, অনলাইনে অন্য ভাষাভাষী বন্ধুও তো থাকতে পারে। থাকাটা স্বাভাবিক। কেউ যদি সেসব বাক্যের ইংরেজি অর্থ জানতে চায় তবে কি জবাব দেওয়া যাবে? এমনটাও লক্ষ্য করেছি, কেউ কেউ কোনো নারীর ছবি নিজ ফেভারিট বুকে যুক্ত করে- তাকে বাংলা ভাষায়, ইংরেজি অক্ষরে গালাগাল করেছেন। সোস্যাল নেটওয়ার্কে এমন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ গোটা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্যই লজ্জাজনক। ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর জন্য সোস্যাল নেটওয়ার্ক কি উপযুক্ত স্থান? ফেসবুকে সাম্প্রতিককালে আরো যে উৎপাতটি বেড়েছে তা হচ্ছে, আত্মপ্রচারের জন্য গ্রুপ তৈরি করে একই আমন্ত্রণ বারবার কাউকে পাঠানো। জানা দরকার, কারো আমন্ত্রণ পাঠানোর অধিকার যেমন আছে, তেমনি প্রাপকের ‘ইগনোর’ করার অধিকারও আছে। কিন্তু বারবার একই ইনভাইটেশন পাঠিয়ে কাউকে বিরক্ত করার হেতু কী? এটা কেমন দীন মানসিকতার পরিচায়ক? প্রায় একই কায়দায় বিভিন্ন, আলোচনা গ্রুপে যুক্তিতে না পেরে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার প্রবণতাও বেড়েই চলেছে। এখানে মনে রাখা দরকার, একজন লেখক স্বনামে ,নিজ দায়িত্বে যে লেখাটা লিখেছেন- তা তিনি লিখছেন বৃহৎ কল্যাণের কথা বিবেচনায় রেখে। তার যুক্তির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করতে হলে স্বনামে আবির্ভূত হওয়াটি বাঞ্ছনীয়। যুক্তিতে না পেরে গোপন নাম নিয়ে আক্রমণ করা তো কোনো সৃজনশীল কাজ নয়। নষ্ট মননের ভ্রূণ ছড়িয়ে আমরা কাদের আক্রান্ত করতে চাইছি? সামাজিক সম্প্রীতি বন্ধনের বদলে দীনতার বিষবাষ্প কেন ছড়াচ্ছি আমরা? কার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছি? না, একটি পরিশীলিত মানবগোষ্ঠীর কাছ থেকে এমনটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। অনলাইন কম্যুনিটি আমাদের জ্ঞানচর্চা, মতবিনিময়ের পথ প্রশস্থ করে দিতে চাইছে। এর অপব্যবহার করলে আমরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবো সবচেয়ে বেশি। ক্ষতিগ্রস্থ হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ------------------------------------------------------------------- দৈনিক সমকাল।ঢাকা। ১৮ এপ্রিল ২০০৯ শনিবার প্রকাশিত সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ৭:১৬
false
fe
একাত্তরের পর ভয়াবহ মৌলবাদী তাণ্ডব একাত্তরের পর ভয়াবহ মৌলবাদী তাণ্ডবফকির ইলিয়াস=========================================== একটা ভয়ানক যড়যন্ত্র ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তারা চেয়েছিল দেশটিকে তালেবানি রাষ্ট্র বানাবার একটা স্টোন টেস্ট। না, পারেনি। দেশের মানুষ তা মেনে নেয়নি। এই চিহ্নিত মৌলবাদীরা ৫ মে ঢাকায় কী করেছে- তা দেখেছে দেশবাসী। টিভির পর্দায় দেখেছে বিশ্ববাসী। কী ভয়ানক তাদের অজগরমূর্তি! ওরা আল কুরআন পুড়িয়েছে। রাস্তা ভেঙেছে। গাছ কেটেছে। পুড়িয়েছে দোকানপাট। এটা আমরা একাত্তরে দেখেছি। এই ২০১৩ সালে এসে সেই দৃশ্য আবারো দেখতে হলো! হেফাজতে ইসলাম সে একটা মৌলবাদীÑ সাম্প্রদায়িক দল, তা এদেশের চিন্তাশীল মানুষ আগেই বলেছেন। সরকার খুব একটা পাত্তা দেয়নি ওসব কথা। যদি দিতো, তবে এই ভয়ানক পরিণতি হতো না। এদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় ব্যবস্থা আগেই নেয়া যেতো। কেন নেয়া হয়নি? কেন এরা পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীর সদস্যদের পর্যন্ত হত্যা করার সাহস পেলো? কোথা থেকে পেলো? এই সাহস জুগিয়েছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। ৫ মে একটা ফোন কলই সবকিছু পাল্টে দেয়। খালেদা জিয়া মওলানা শফীকে বলেন তার দেয়া ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের পক্ষেই কাজ করতে হবে। হেফাজত কর্মীরা যেন লাগাতার অবস্থান নেন। এর কারণ ছিল, খালেদা জিয়া হেফাজতের কাঁধে বন্দুক রেখেই শিকার করতে চেয়েছিলেন। যেমনটি ‘বাংলাভাই-শায়খ রহমানের’ ওপর ভর করেই পেশিশক্তি দেখিয়েছিল ‘হাওয়া ভবন’। খালেদা জিয়ার জঙ্গি লালনের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। এটা দেশবাসীর অজানা নয়। যার কারণেই খালেদা জিয়া তার দলকে জানিয়ে দেন হেফাজতকে পূর্ণ সমর্থন দিতে হবে। তার উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন- ‘হেফাজতিরা আমাদের মেহমান। তারা ঢাকার মুসাফির’। এসব বলার পরও কী দেশবাসী বুঝতে দেরি করবে- খালেদা জিয়া কিভাবে একাত্তর পরবর্তী এই তা-বের মদত দিয়েছেন? এ বিষয়ে একটি লেখা এখানে প্রণিধানযোগ্য। আবু হাসান শাহরিয়ার সম্পাদিত ‘আমাদের সময়’-এ ৮ মে লেখাটি লিখেছেন দেশের বর্ষীয়ান কলামিস্ট এবিএম মূসা। শিরোনাম ছিল ‘খালেদার সিদ্ধান্ত ভুল, হাসিনার সঠিক’। তিনি লিখেছেন- ‘আমি এই সরকারের প্রশংসা করেছি হেফাজত ও ধর্মাশ্রয়ী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে শক্ত হাতে দমন করার জন্য। মহাজোট সরকারের অনেক কিছুই সমর্থন করি না সত্য; তার মানে এই নয়, দেশে তালেবান সরকার চাই। হেফাজতি নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযানে দুঃখজনক প্রাণহানি ঘটলেও উপযুক্ত সময়ে সরকারের এই অভিযানকে আমি সমর্থন করি। কারণ তারা অবরোধ ও সমাবেশের নামে হত্যাসহ যে নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালিয়েছিল, তাতে আরো বেশি প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল। বাংলাদেশকে ধ্বংস করার ফন্দি এঁটেছিল এই হেফাজত। গত রোববার ঢাকা অবরোধের নামে এর নমুনা দেখিয়েছে সংগঠনটি। মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা জাকাত ও কুরবানির চামড়া বেচা অর্থ, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দানের অর্থের ওপর নির্ভরশীল। মাদ্রাসা শিক্ষাকে এসব কিছুর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করে পুরোপুরি সরকারের নজরদারি, অনুদান প্রদানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত। তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমিকভাবে পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বর্তমান অসাম্প্রদায়িক সরকারকেই নিতে হবে। এর জন্য দশ বা বিশ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু কুরবানির পশুর চামড়া বেচা অর্থ, জাকাত ও ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল হলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা সমাজের বৃহত্তর কোনো উপকারে আসবে না। আর সে-কারণেই তাদের দিয়ে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- করিয়ে নেয়া সম্ভব। আর হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে দেশে এখন সেটাই হচ্ছে। আমি নাম ধরে বলতে পারি, ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক নাশকতার অর্থ জুগিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করেছে। হেফাজতের নেতারা এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থে মাদ্রাসার কচি-কচি শিক্ষার্থীদেরই অধিক ব্যবহার করেছে। এমনকি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। ওইসব শিশু-কিশোরদের অভিভাবকের উচিত, হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরই জানমালের হেফাজত করতে পারেন না যে কওমি আলেমরা, তারা ইসলামের কি হেফাজত করবেন? স্বাধীনতার পর ধর্মের নামে সুবিধা নেয়া সাম্প্রদায়িক শক্তি গর্তে ঢুকে গিয়েছিল। বিএনপি তাকে গর্ত থেকে বের করে নিয়ে এসেছে। বড় দুদল এদের দুধকলা দিয়ে পুষেছে। এখন এরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। দেশকে বাঁচাতে হলে প্রথমেই এদের অবৈধ অর্থের জোগান বন্ধ করতে হবে। ধর্মের নামে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশের পেছনে বিএনপি-জামাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ম“ ছিল। খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মীদের শাপলা চত্বরে সমবেত হেফাজতিদের পাশে থাকার নির্দেশও দেন। যদিও হেফাজতের ১৩ দফা দাবির সঙ্গে জামাত কী বিএনপি একমত কিনা, তার সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা নেই। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এসব দাবি বাস্তবায়ন করবে কিনা, সে সম্পর্কেও কোনো বিবৃতি নেই। তা হলে প্রশ্ন হচ্ছে, কেন হেফাজতের আন্দোলনকে বিএনপি সমর্থন করছে? সমর্থন এ জন্যে যে, হেফাজত আওয়ামী লীগের শত্রু, তাই তাদের সমর্থন দিয়ে যদি কোনো ফায়দা নেয়া যায়। এক্ষেত্রে, আমি বলবো, ভুল করেছে দলটিÑ ভুল করেছেন এর চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত সঠিক। সম্মানিত সাংবাদিক এবিএম মূসার এই লেখার পর কারোই বুঝতে অসুবিধা হবে না, শেখ হাসিনার সরকার সঠিক কাজটিই করেছে। ৫ মে রাতে তথাকথিত ‘গণহত্যা’র ধুয়া তুলে ‘হাজার হাজার’ মানুষ খুনের অপপ্রচার চালাচ্ছে এই মৌলবাদীদের গডফাদাররাই। কারণ তাদের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম সফল হয়নি। সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদীরা এদেশের কোমলমতি মাদ্রাসা ছাত্রদের সঙ্গে কিভাবে প্রতারণা করেছে, মিথ্যা বলেছে- সেসব খবর আমরা মিডিয়ায় দেখেছি। প্রকাশিত কিছু খবরের খণ্ডচিত্র এখানে পাঠ করা যাক। আমিনুল ইসলাম, সোহেব আহামেদ, আবদুস সালাম টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কওমি মাদ্রাসার ছাত্র। তিনজনেরই বয়স ১৬ বছরের নিচে। সোমবার সকালে বাসের অপেক্ষায় তারা দাঁড়িয়ে ছিল রাজধানীর শ্যামলী বাসস্ট্যান্ডে। তাদের চোখেমুখে আতঙ্ক। তারা হেফাজতের কর্মসূচিতে এসেছিল কিনা জানতে চাইলে আবদুস সালাম বলে, ‘মাদ্রাসার হুজুর আমাগো ধোঁকা দিছে, মিছা কথা কইয়া ঢাকা আনছে। হুজুরের কথায় আর আসুম না।’ আমিনুল বলে, ‘হুজুর কইছে ঢাকায় বড় ওয়াজ মাহফিল হইবো আর আমরা বইসা শুধু শুনমু। হুজুরের কথায় মাদ্রাসার দেড়শ ছাত্র আমরা ঢাকায় আসি, কিন্তু ঢাকায় আইয়া দেখি একেবারে যুদ্ধ লাইগা গেছে। একটুর লাইগ্যা মাথায় গুলি লাগে নাই।’ সোহেব নিজের পিঠে লাঠির আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলে, ‘অল্পের জন্য বাইচ্যা আইছি। আমরা কিছু করি নাই, আমাগো লগের অনেকেই পুলিশের ওপরে ঢিল মারছে, দোকানপাটে আগুন দিছে।’ সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকেও ভুল বুঝিয়ে শিক্ষকরা ঢাকায় আনেন। নাস্তিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে, কোনো ধরনের হট্টগোল হবে না- এমন আশ্বাস দিয়ে দুদিন আগেই সিরাজগঞ্জ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে একটি মাদ্রাসায় আনা হয় তাদের। রোববার ফজরের নামাজ পড়েই আমিনবাজারে অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেয় তারা। দুপুরে আমিনবাজার থেকে হেঁটে মতিঝিলের সমাবেশে অংশ নেয়। পরে রাতে আতঙ্ক আর ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। পুলিশের পিটুনি ও রাবার বুলেটে অনেকেই আহত হয়েছে বলে জানায় নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র রুবেল হাসান, ইলিয়াস হোসেন ও আরিফুর রহমান। নরসিংদীর বেলাব বাজার হাফিজিয়া মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে, ‘আর ঢাকা শহরে আসবো না। ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলের কথা বলে আমাদের আনা হয়, কিন্তু নিজের চোখেই দেখলাম হেফাজতের লোকজনই বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনের দোকানগুলোতে আগুন দিলো। সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো শত শত ইসলামি বই ও অনেক কুরআন শরিফ। এটা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না।’ ওই মাদ্রাসার আরেক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, ‘যাদের ডাকে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ঢাকায় এসেছি কর্মসূচিতে, সেই তারাই যদি কুরআন শরিফে আগুন দেয় তাহলে এরা কেমন লোক! হেফাজতের ডাকে আর ঢাকায় আসবো না।’ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া মাদ্রাসা ছাত্ররা অভিযোগ করে, ঢাকায় নিয়ে আসা হলেও অনেককে দুপুরের খাবার খেতে দেয়া হয়নি। অনেকেই বিস্কুট, চিঁড়া খেয়ে দিন পার করেছে। মানিকগঞ্জের শিবালয় হিফজুল কোরআনিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রায়হান আবেদীন ও নূর মোহাম্মদ জানায়, দিনের বেলায় রোদের মধ্যে কষ্ট করে সমাবেশে থাকলেও রাতে সংঘর্ষ বাধলে তারা কোথায় যাবে সে পথ খুঁজে পায়নি। মতিঝিলের একটি ব্যাংকের ভবনে লুকিয়ে থাকে তারা। পরে পুলিশের কাছে কান ধরে ক্ষমা চেয়ে সেখান থেকে ছাড়া পায়। দুজনই জানায় আর ঢাকায় আসবে না তারা। এই হলো কিছু মর্মান্তিক দৃশ্য। যা তৈরি করেছে হেফাজতের মৌলবাদীরা। যদি বাংলাদেশের প্রতি, এই পতাকার প্রতি তাদের সম্মান থাকতো তাহলে তারা এমনভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষয়ক্ষতি করতে পারতো না। আমরা দেখেছি, কিছু সাম্প্রদায়িক হায়েনা মিথ্যা ছবি দিয়ে না না গুজব ছড়াচ্ছে। মৃতের সংখ্যা অনেক, লাশ গুম করা হয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। যার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে দেশে গোলযোগ বাধাবার চেষ্টা করছে- এরা মূলত শান্তির শত্রু। এদের বিষয়ে সবাইকে সাবধান থাকার বিনীত অনুরোধ করছি। এটা জাতির জন্য ছিল একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এমনভাবে একটা দেশে কিছু মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তি তা-ব চালাতে পারে না। অবরোধের নামে তারা ৫ মে ঢাকায় যা করেছে, তা দেখেছে বিশ্ববাসী। এটা কোনো ধর্মীয়, মানবিক কাজ হতে পারে না। সরকার তাদের ফিরে যেতে বলেছিল। তারা যেতে চায়নি। তাই বাধ্য হয়ে সরকার অ্যাকশনে গিয়েছে। না গিয়ে কোনো উপায় ছিল না। এর পাশাপাশি সরকার শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরও ভেঙে দিয়েছে। আমি সরকারকে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তিনটি প্রশ্ন করতে চাই। ১। হেফাজত শুরু থেকেই সন্ত্রাসী কাজের ম“ দিচ্ছে। মহাজোট হেফাজতিদের ভোটের লালসা ছাড়তে না পারায়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে । গণজাগরণ মঞ্চ কি কোনো সন্ত্রাসী কাজ করেছিল? তাহলে হেফাজতির সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চকে তুলনা করে কেন শাহবাগের মঞ্চ ভেঙে দেয়া হলো? ২। বেগম খালেদা জিয়া ও তার উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু প্রকাশ্যে বলেছেন, হেফাজতিরা তাদের মেহমান। পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন শুরু থেকেই। তারপরও সরকার কেন ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ খেলতে গেলো ? সরকার কি জানে না তারা হেফাজতিদের একটা ভোটও পাবে না? ৩। ৫ মে বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন ‘হেফাজতে যারা আছে খুঁজলে দেখা যাবে এরা নিজেরা রাজাকার আলবদরের চামচা ছিল। অথবা নতুন প্রজন্মের হেফাজতিদের বাপ-দাদা ছিল ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী।’ এতো দেরিতে বিষয়টা বুঝলো সরকার? গণজাগরণ মঞ্চ শুরুতেই সে কথা বলেছে। তারপরও গণজাগরণ মঞ্চই আজ সরকারের চোখের বালি হয়ে গেলো? খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই- গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে দিয়ে সরকার শুধু ভুলই করলো না, নিজেদের রাজনৈতিক ভিতেও কুড়াল মারলো। কারণ গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে দিলেই হেফাজতিরা ‘বাংলাস্থান’ বানাবার খায়েশ বাদ দিয়ে দেবে- তা ভাবার কোনো কারণ নেই। এদেশের মানুষ, এই প্রজন্ম সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মান করে। আর করে বলেই গণজাগরণ চত্বর ভেঙে দেবার পরও তারা রাজপথে নামেনি। এই প্রজন্মই দেশকে এগিয়ে নেবে আলোর পথে। কোনো মৌলবাদী-মধ্যযুগীয়রা তা পারবে না।------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : শনিবার, ১১ মে ২০১৩
false
hm
বোবায় ধরে যখন নেহারুল বার বার জ্যামিতি বাক্স খুলে দেখে নিচ্ছিলেন, ভেতরে সবকিছু ঠিক আছে কি না। কাঁটাকম্পাস, চাঁদা, প্লাস্টিকের ছয় ইঞ্চি রুলার, পেন্সিল, পেন্সিলকাটুনি, পেন্সিলমুছুনি, প্রবেশপত্র, "আল্লাহু" লেখা একটা পিতলের ছোট্ট বোতাম। প্রতিবার জ্যামিতি বাক্স বন্ধ করার পর তাঁর মনে সন্দেহের একটা কাঁটা রুই মাছের ছোটো কাঁটার মতো ঘাই দিচ্ছে কেবল। সবকিছু কি নিয়ে এসেছেন তিনি? কোনো কিছু বাদ পড়েনি তো? বসে বসে আর কিছু করার নেই বলে একটু পর তিনি আবারও জ্যামিতি বাক্স খুলে হন্তদন্ত তদন্ত করেন। কাঁটাকম্পাসটার প্যাঁচ ঘুরিয়ে দেখে নেন, ঠিকমতো টাইট হচ্ছে কি না। আলোর দিকে তুলে চাঁদার গায়ে পঁয়তাল্লিশ আর ষাট ডিগ্রির মোটা দাগগুলোকে তীক্ষ্ণ চোখে পরখ করে আবার যত্ন করে ঢুকিয়ে রাখেন বাক্সে। রুলারটার ধারে আঙুল বুলিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করেন, কোথাও কোনো খাঁজ ধরা পড়ে কি না। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা দুই বগলে দুটো কাগজের বোন্দা নিয়ে ঘরে ঢুকতেই আশেপাশের সবাই চাবি দেওয়া পুতুলের মতো উঠে দাঁড়ালো। উপদেষ্টা টেবিলের ওপর বোন্দা দুটো সযত্নে নামিয়ে রেখে অলস হাত নেড়ে সবাইকে বসার ইঙ্গিত করেন। নেহারুল বসতে গিয়ে পেছনে খোঁচা খেয়ে উহ করে ছিটকে সটান উঠে দাঁড়ান আবার। তাঁর আসনে পেন্সিল দাঁড় করিয়ে রেখেছে বেঞ্চের বাম পাশে বসা অসভ্য পরীক্ষার্থী। বিশেষ উপদেষ্টা কড়া চোখে নেহারুলের দিকে তাকান। নেহারুল কাঁদো কাঁদো মুখে পাশের সিটের পরীক্ষার্থীকে দেখিয়ে বলেন, "স্যার, ও আমার সিটে পেন্সিল উঁচু কৈরা ধরছে স্যার। ব্যথা পাইছি।" বিশেষ উপদেষ্টা পকেট থেকে ছোটো একটা প্লাস্টিকের হাতলওয়ালা নিরীহ চেহারার কাঁচি বের করে বোন্দার সুতো কাটতে কাটতে কড়া গলায় বললেন, "আহ, জাফর সাহেব, এসব কী হচ্ছে?" নেহারুল সন্তর্পণে খুব খেয়াল করে আবার সিটে বসেন। জাফর নামের বিটকেল পরীক্ষার্থী দাঁত বের করে হাসতে হাসতে হাত বাড়িয়ে বললো, "আমার নাম জাফর। তোমার নাম কী?" নেহারুল গোমড়া মুখে হাত বাড়িয়ে বললেন, "আমি নেহারুল ... এ কী? তোমার হাতে আঠা কেন?" জাফরের দন্তপঙক্তি মুখের ভেতরের ছোট্ট ঘরে বেশিক্ষণ বদ্ধ থেকে অভ্যস্ত নয়, তারা জগৎটাকে দেখতে ব্যাকুল, হাসতে হাসতে সে বলে, "হ্যাঞ্ছেকের আগে হাতে ছ্যাপ দিয়া লৈছি।" নেহারুল আঁ আঁ করে চিৎকার করে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, "স্যার, বাথরুমে যামু স্যার! এই জাফর আমার হাতে থুতু মাখায় দিছে স্যার!" প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তখনও কাঁচি দিয়ে বোন্দার সুতো কাটছিলেন, এবার তিনি মুখ তুলে চশমার ওপর দিয়ে কিছুক্ষণ আমলার চোখে নেহারুল আর জাফরকে দেখে নেন। নেহারুল ডান হাতটা বারবার প্যান্টের পায়ায় ঘষেন। উপদেষ্টা আবার সুতো কাটতে কাটতে আমলার গলায় বলেন, "জাফর সাহেব, বি ওয়ার্নড। দিস সর্ট অফ টমফুলারি ইজ নট অ্যাডভাইজেবল অ্যাট অল ইন দ্য অগাস্ট প্রেজেন্স অফ অনারেবল ইনভিজিলেটরস। প্লিজ বিহেইভ ইয়োরসেলফ।" জাফর নামের পরীক্ষার্থী মিহি গলায় বলে, "স্যার ইংরাজি বুঝি না। বাংলায় কন।" উপদেষ্টা এবার কাঁচি টেবিলের ওপর রেখে চশমা খুলে হাতে নিয়ে জাফরকে মনোযোগ দিয়ে দেখেন। নেহারুল জাফরের দিকে বিবাদীর কম্পাসকঠোর আঙুল তাক করে বলেন, "স্যার ও ইংরেজি জানে না কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী হৈতে চায়। এদিকে আমার হাতে থুতু দিছে।" উপদেষ্টা ঘোঁঁৎ করে একটা শব্দ করে বলেন, "মিস্টার নেহারুল, প্লিজ গো অ্যান্ড ওয়াশ ইয়োর হ্যান্ডস।" নেহারুল কড়া চোখে জাফরের দিকে তাকান। জাফর দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলে, "মসিদের ইমাম উর্দুতে খোতবা কয়। পরীক্ষার হলের ইমাম ইংরাজিতে খোতবা কয়। কিচ্ছু বুঝি না। কী দ্যাশে যে আইলাম রে মামা!" নেহারুল গট গট করে হল ছেড়ে বেরিয়ে এসে করিডোরের শেষ মাথার টয়লেটে ঢুকে বেসিনে ট্যাপ ছেড়ে পানির ধারার নিচে ডান হাত গুঁজে দেন। পরীক্ষার শুরুতেই একটা অঘটন ঘটলো। বাকি পরীক্ষা কেমন হয় কে জানে? বাথরুমের ঘোলা আয়নায় নিজের চেহারার দিকে তাকিয়ে নেহারুল শিউরে ওঠেন। গভীর রাত পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি। পুরো সিলেবাস ভাজা ভাজা করেছেন, সব সূত্র মুখস্থ করেছেন, টেস্ট পেপার খুলে নমুনা পরীক্ষা দিয়ে হাতের লেখার গতি খতিয়ে দেখেছেন, শেষমেশ বলপয়েন্ট কলমগুলো খুলে এক দুই লাইন করে লিখে সেগুলোর মান যাচাই করে কলমের বাক্সে ভরে তারপর এক গ্লাস দুধ খেয়ে শুয়ে পড়েছেন। কিন্তু সারারাত ঠিকমতো ঘুম হয়নি, ছটফট করে এপাশ ওপাশ করে শুয়েছেন, শেষটায় অন্ধকার আকাশ থেকে পুরোপুরি মিলিয়ে যাবার আগেই উঠে পড়েছেন। অনিদ্রিত রাত ফুরিয়ে যাবার আগে তাঁর চোখের নিচে তিলক কেটে রেখে গেছে অন্ধকার হাতে। আঁজলা ভরে পানি নিয়ে নিজের মুখে ছিটাতে ছিটাতে নেহারুল টের পেলেন, ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তাঁর। একটু চা খেতে পারলে বড় ভালো হতো। কিন্তু যানজট এড়িয়ে আগে আগে পরীক্ষার হলে পৌঁছানোর জন্য হুড়োহুড়ি করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছেন তিনি, চায়ের কাপে কোনোমতো দুটো চুমুক দিয়েই। মুখ ধুতে ধুতে নেহারুল সিদ্ধান্ত নেন, পরীক্ষায় পাশ করে আবার শিক্ষামন্ত্রী হতে পারলে তিনি পরীক্ষার হলে চা খাওয়ার অনুমতি দিয়ে আইন পাশ করাবেন। জামাতার কাছে শুনেছেন, বিদেশে পরীক্ষার হলে ছেলেপিলে কফির ফ্লাস্ক নিয়ে বসে, কুটকুট করে চকলেট বার চিবাতে চিবাতে পরীক্ষার খাতায় হিজিবিজি লেখে। তাঁর দেশ আর কতো কাল পিছিয়ে থাকবে? পকেট থেকে চেক কাটা রুমাল বের করে নিজের হাত মুখ মুছে নেহারুল আবার পরীক্ষার হলে ফিরে এলেন। বিশেষ উপদেষ্টা হলঘরে পায়চারি করছিলেন, নেহারুলকে হলে ঢুকতে দেখে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। তারপর গটগটিয়ে কাছে এগিয়ে এসে বললেন, "মিস্টার নেহারুল, হ্যাভ ইউ এনি আইডিয়া, হোয়াট টাইম ইট ইজ? এগারোটা বাজে। আপনি পরীক্ষা দেবেন কখন?" নেহারুলের বুক ধক করে ওঠে। এগারোটা বেজে গেলো? পরীক্ষা তো বারোটায় শেষ। তিনি এখন তিন ঘণ্টার পরীক্ষা এক ঘণ্টায় শেষ করবেন কীভাবে? নেহারুল পাগলের মতো ছুটে গিয়ে নিজের আসনে বসে পরীক্ষার খাতা আর প্রশ্নপত্র টেনে নিলেন। জ্যামিতি বাক্স খুলতে গিয়ে টের পেলেন, বাক্স জাম হয়ে গেছে, খুলছে না কিছুতেই। কলমের বাক্স থেকে কলম টেনে নিয়ে বের করে দেখলেন, কলমের কালি প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। বাক্স হাঁটকে কেবল কণ্ঠার কাছে একটু নীল জমে থাকা মন্থিতসমুদ্রবর্তী শিবের মতো একটা কলম খুঁজে পেলেন তিনি, সেটা নিয়ে খাতা টেনে লিখতে গিয়ে থমকে গেলেন তারপর। এসব কী প্রশ্ন এসেছে? প্রশ্নপত্রের পাতা উল্টাতে গিয়ে নেহারুলের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। এ কী? এসব কী প্রশ্ন? এতো কঠিন কেন? অঙ্কগুলো এতো লম্বা কেন? কোন সূত্র খাটবে এখানে? এসব শব্দের মানে কী? উপপাদ্য সম্পাদ্য এগুলো কোন বই থেকে এসেছে? ভাব সম্প্রসারণের নিচে লেখা লঁফে, সে লেজেক্সামাঁ দেজোথ। এর মানে কী? পাশ থেকে জাফর দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলে, "মামু, রফাটটা এট্টু দ্যাও দেহি!" নেহারুল ফুঁসে উঠে বলেন, "রফাট? হোয়াট দ্য হেল ইজ রফাট? ইটস কল্ড ইরেইজার!" বক্তৃতা মঞ্চের ওপরে দাঁড়িয়ে বিশেষ উপদেষ্টাও বলেন, "ইয়েস, ইটস কল্ড ইরেইজার। দেয়ার ইজ নো সাচ থিং ইন দিস ওয়াইড ওয়াইল্ড ওয়ার্ল্ড টু বি অ্যাড্রেসড বাই দ্য ইগনোমিনিয়াস নেইম অফ রফাট। ঔনলি ইন দি ডিপেস্ট ডারকেস্ট ডানজন অফ দ্য ডিভিয়াস ডেলিঙ্কোয়েন্ট ড্রাকুলা মে ওয়ান অর টু রফাটস ক্রল অ্যান্ড ক্রাউচ।" জাফর দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলে, "এত্তো ইংরাজি! বাপরে বাপ, আমার রফাট লাগতো না!" নেহারুল চোখ পাকান। জাফর কাছে ঘেঁষে এসে ফিসফিসিয়ে বলে, "আমার পরীক্ষা শ্যাষ। তোমার পরীক্ষা ক্যামন হইছে?" নেহারুল প্রাণপণে পরীক্ষার খাতার ওপরে নিজের নাম, ক্রমিক নং, নিবন্ধন নং, জাতীয় পরিচয়পত্রের নং, বাবার নাম, মায়ের নাম, উপজেলা, পোস্ট অফিস, পাসপোর্ট নং, মালয়েশিয়ায় খালাতো শালার সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নং, সব লিখতে লিখতে টের পান, কলমের কালি ফুরিয়ে আসছে। ফুঁপিয়ে উঠে তিনি বলেন, "আমি তো পরীক্ষা দিতেই পারলাম না। এতো কঠিন কঠিন প্রশ্ন!" জাফর হাসতে হাসতে বলে, "প্রশ্ন কঠিন তো কী হইছে? ফেসবুকে তো প্রশ্ন উত্তর সবই দিয়া দিছে। তুমি পাও নাই?" নেহারুল কলম তুলে বাতাসে ঝাড়তে ঝাড়তে খাতায় হিজিবিজি লিখতে গিয়ে থমকে গেলেন। "প্রশ্ন ফেসবুকে চৈলা আসছে?" জাফর চোখ টিপে বলে, "হ, গত পরশুই তো চৈলা আসছে। আহারে, তুমি পাও নাই, তাই না? তোমার আব্বা আম্মা তোমারে প্রশ্ন যোগাড় কইরা দেয় নাই?" নেহারুল উদভ্রান্তের মতো ডানে বামে তাকান। ডানে বামে দিগন্তের কাছে গিয়ে মিলিয়ে গেছে পরীক্ষার হলের দেয়াল। তার নিচে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি পরীক্ষার্থী আড়মোড়া ভাঙছে, কেউ কেউ ফ্লাস্ক খুলে চা খাচ্ছে বিদেশী ছাত্রদের মতো, কেউ কেউ বিড়ি টানছে, নিজেদের মধ্যে গল্পগুজবও করছে। সবার মুখ হাসি হাসি। ওদের সবার পরীক্ষা ভালো হয়েছে। প্রশ্ন কমন পড়েছে। ওদের বাবা মা ওদের প্রশ্ন যোগাড় করে দিয়েছে, সল্ভ করে দিয়েছে। নেহারুলের বাবা মা কোথায় ছিলেন গত পরশু দিন? বক্তৃতা মঞ্চ থেকে চশমার ওপরে দুটো জ্বলন্ত আমলার চোখ নেহারুলের দিকে তাক করে বিশেষ উপদেষ্টা বললেন, "মিস্টার নেহারুল, হ্যাভ ইউ কোয়াইট ফিনিশড অলরেডি?" নেহারুল ডুকরে কেঁদে উঠে বলেন, "স্যার স্যার স্যার, আমার প্রশ্ন কমন পড়ে নাই স্যার! ইটস নট ফেয়ার স্যার! সবার পরীক্ষা ভালো হয় কীভাবে?" বিশেষ উপদেষ্টা একটা হলদে আমলার হাসি হেসে বললেন, "উই আর বাউন্ড টু পিক ঔনলি দ্য ভেরি বেস্ট, মিস্টার নেহারুল। আপনার পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?" নেহারুল উঠে দাঁড়িয়ে ধরা গলায় বলেন, "স্যার, এটা অন্যায়। সবার পরীক্ষা ভালো হলে সবাই এ প্লাস পাবে। তখন শিক্ষামন্ত্রী হবে কে?" এবার বিশেষ উপদেষ্টা এগিয়ে এসে হাই বেঞ্চের ওপর এক পাটি পাছা পেতে বসে একটা পা দোলাতে দোলাতে হাসিমুখে বলেন, "সবাই যদি এ প্লাস পায়, সবাইকে শিক্ষামন্ত্রী বানানো হবে। কোনো সমিস্যা?" জাফরও হাসতে হাসতে একটা পেন্সিল উঁচিয়ে বলে, "কোনো সমিস্যা?" হলভর্তি পরীক্ষার্থী এবার নেহারুলের দিকে ঘুরে তাকিয়ে সমস্বরে বলে, "কোনো সমিস্যা?" নেহারুল উদভ্রান্তের মতো ডানে বামে তাকান। বিশেষ উপদেষ্টা তাঁর গলা চেপে ধরে, দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে তাঁর। ওদিকে জাফর তাঁরই জ্যামিতি বাক্স অবলীলায় খুলে ভেতর থেকে পেন্সিলকাটুনি বের করে তার ভয়ানকদর্শন পেন্সিলটাকে চোখা করতে থাকে। পেন্সিলের চোকলা বের হতে থাকে সমানে, ক্রমশ চোকলায় ঢেকে যায় বেঞ্চ, এর মাঝে ছোট্টো গোল একটা ফাঁকা জায়গায় জাফর তার কালান্তক পেন্সিলটাকে সটান উঁচু করে পেতে রাখে। বিশেষ উপদেষ্টা নেহারুলের গলা টিপে ধরে তাঁকে সেই পেন্সিলের ওপর বসিয়ে দেন। হলভরা লোকে স্নেহসিক্ত কণ্ঠে শুধায়, "কোনো সমিস্যা?" নেহারুল ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর অনুভব করেন, তাঁর সারা শরীর ঘামে ভিজে আছে। ডালিয়া তাঁর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করছে, "অ্যাই, কী হইছে? কোনো সমিস্যা?" নেহারুল চুনকাম করা সিলিঙের দিকে তাকিয়ে পরম স্বস্তি বোধ করেন। আহ, পরীক্ষার হলে নেই তিনি। এসব পরীক্ষাটরীক্ষার দিন বহু আগেই পার করে এসেছেন। ডালিয়া বিছানার পাশে রাখা তেপায়ায় ঢাকনা দিয়ে রাখা পানির জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে নেহারুলের দিকে এগিয়ে ধরে, "তোমারে বোবায় ধরছিলো। ন্যাও পানি খাও।" নেহারুল ঢক ঢক করে পানি খেয়ে গ্লাস শূন্য করে আবার ডালিয়ার দিকে বাড়িয়ে ধরে অস্ফূটে বলেন, "আরেকটু ...।" ডালিয়া জগ থেকে পানি ঢালে। নেহারুল চোখ বন্ধ করে পরম তৃপ্তির সঙ্গে স্মরণ করেন, পরীক্ষার বিভীষিকাময় দিন ফুরিয়েছে তাঁর। এখন আর কোনো পরীক্ষা নেই। জেগে থাকা আধো ঘুমের রাতভর উৎকণ্ঠা, সকালে পরীক্ষার আগে রিকশা সিএনজি পাকড়ে যানজটের অংশ হওয়ার তাড়া, যানজট ঠেলে সময়মতো হলে পৌঁছানোর দুশ্চিন্তা, পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন না পড়ার আঘাত, কিছুই নেই। এ যেন নরকবাসের সাজা থেকে বেকসুর খালাস। আসলেই তো, লঁফে, সে লেজেক্সামাঁ দেজোথ। নরক, সে তো অন্য লোকের পরীক্ষা। কে বলেছিলো কথাটা? জঁ পল সাখথ? নাকি মিশেল প্লাতিনি? ডালিয়া পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় তাঁর দিকে। নেহারুল গ্লাসে রসিয়ে রসিয়ে ছোটো ছোটো চুমুক দেওয়ার ফাঁকে বলেন, "বোবা খালি একা আমারে ধরে নাই বৌ। গোটা জাতিরেই ধরছে। দেখি, পাশ ফিরা শুই আবার।"
false
hm
বাংলাদেশে বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাবনাকে কি অঙ্কুরেই নষ্ট করা হচ্ছে? আজ প্রথম আলোর একটি আর্টিকেলে পড়লাম, কুতুবদিয়ায় স্থাপিত দেশের সর্ববৃহৎ বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি একটি সমস্যায় পড়ে অচল, এবং দ্বিতীয় সমস্যায় পড়ে ধ্বংসের মুখোমুখি। প্রথম সমস্যা হচ্ছে, এর একটি যন্ত্রাংশ নষ্ট, এবং গত এক বছর ধরে এই নষ্ট যন্ত্রাংশের কারণে প্ল্যান্টটি অচল হয়ে পড়ে আছে। প্রথম আলোর রিপোর্টাররা লিখেছেন "ইঞ্জিনের বুস্টার" এর কথা, যদিও এর কোন অর্থ দাঁড়ায় না, কারণ বায়ু টারবাইনে ইঞ্জিন বলে কিছু নেই, থাকে ব্লেড-গিয়ারবক্স-জেনারেটর, আর উৎপন্ন অসম ফ্রিকোয়েন্সির বিদ্যুৎকে একটি ইনভার্টার মডিউলের মাধ্যমে আবার ৫০ হার্টজের বিদ্যুতে রূপান্তরিত করা হয়। বুস্টারটি সম্ভবত এই ইনভার্টার মডিউলেরই, যার অভাবে কার্যত গোটা প্ল্যান্টটি নিরর্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ঠিকাদার কোম্পানির নাম প্যান এশিয়া পাওয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড, ব্যবস্থাপক আহসান হাবিব সাহেব নিখোঁজ। প্রথম আলোর ভাষ্যমতে, বুস্টার মডিউলটি চীন থেকে আনার কথা। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সেক্টরে চীনের সাথে সহযোগিতার কুফল আমাদের পদে পদে ভোগ করতে হচ্ছে। এর আগে টঙ্গীতে একটি আশি মেগাওয়াটের থার্মাল প্ল্যান্ট আধ ঘন্টা চলে সেই যে হাঁটু ভেঙে পড়ে গিয়েছিলো, আর কোন খবর নেই তার। যা-ই হোক, চীনের বদনাম করার উদ্দেশ্যে আমি পোস্ট লিখছি না। আমি বিস্মিত দু'টি তথ্য পেয়ে। এক. সরকারের মোট ১২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে ১ মেগাওয়াটের প্রকল্পটির পেছনে (২০০৬ সালে শুরু হয়েছে)। দুই. ২০ কিলোওয়াটের মোট ৫০টি টারবাইন রয়েছে, যার হাব হাইট ৫০ মিটার। প্রথম তথ্যটি খুব একটা বিস্ময়কর কিছু নয়, বায়ুবিদ্যুতে মেগাওয়াটপিছু ইরেকশন কস্ট জার্মানিতেও টাকার অঙ্কে ১০-১১ কোটি টাকা। কিন্তু আমি বিস্মিত এ কারণে, যে ৫০ মিটার হাব হাইটে মাত্র ২০ কিলোওয়াটের ৫০টি টারবাইন বসানোর পরিকল্পনাটি খুব একটা এফিশিয়েন্ট কিছু না। কারণ ৮০-৯০ মিটার হাব হাইটে দুই মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন টারবাইন জার্মানিতে গিজগিজ করছে বেশ কয়েক বছর ধরেই, যেগুলোর রোটর ডায়ামিটার ৮০-৯০ মিটার। ৫০টি ৫০ মিটার উচ্চতার টারবাইন বসানোর পেছনে যে নির্মাণ খরচ গেছে সরকারের, নিঃসন্দেহে একটি ৮০ মিটার উঁচু টারবাইন বসাতে তারচেয়ে অনেক কম খরচ হতো। হ্যাঁ, এ কথা সত্যি যে তখন হয়তো রিস্ক ফ্যাক্টরও বাড়তো, কোন কারণে একমাত্র টারবাইন ক্ষতিগ্রস্থ হলে সারা দ্বীপের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হতো, কিন্তু এখন কি তার কোন ব্যতিক্রম আমরা দেখতে পাচ্ছি? সে-ই তো একটা মাত্র ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্টের অভাবে প্ল্যান্ট ধুঁকছে, উৎপাদন ছাড়াই। দ্বিতীয় যে সমস্যাটির কথা বললাম, যে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ৫০টি টারবাইন বসানো হয়েছে, তার পুরোটা এখন সাগরের চাপে বিপন্ন। আপনারা বুঝতেই পারছেন, বিস্তৃত এই এলাকাকে আবার বাঁধ দিয়ে রক্ষা করার কাজটি খরুচে ও সময়সাপেক্ষ, এবং বছরের এই সময়ে হয়তো অসম্ভবও। পরিবর্তে একটি মাত্র স্থানে একটি টারবাইন বসালে কি এই ঝামেলা হতো? আমার শিক্ষা আর কমনসেন্স বলছে, হতো না। আমার কথায় প্রথম যে আপত্তিটা পাঠক করতে পারেন, তা হচ্ছে, উত্তর ইয়োরোপে তো বাতাসের বেগ অনেক বেশি। সেখানে ৮০ মিটার উচ্চতায় টারবাইন বসালে হয়তো ৬০০-২০০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, বাংলাদেশে তো বাপু বাতাসের বেগ মন্দা। এর উত্তরে আমি বলবো, কুতুবদিয়ায় সাগরের পারে ৮০ মিটার উচ্চতায় কম করে হলেও ৬-৮ মিটার/সেকেন্ড বেগে বাতাস পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে বায়ুর বেগ নিয়ে কিছু মাপজোক হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমি কিছু কাজও করেছি, সেই জরিপটি যে পদ্ধতিগত ত্রুটিমুক্ত, এমনটি কেউ দাবি করতে পারবে না। একগাদা বিল্ডিং আর গাছপালার মাঝে একটা ১০ মিটার বা ২৫ মিটার উঁচু পোলে অ্যানেমোমিটার বসিয়ে যে বেগ পাওয়া গেছে, তাকে প্রামাণ্য ধরলেও সাগর এবং কুতুবদিয়ার টেরেইনকে হিসাবে ধরলে এই বেগ কুতুবদিয়ার ঐ এলাকায় ৮০ মিটার উচ্চতায় অনেকগুণ বেশি হবে। ফলে সহজেই, একটি মাত্র উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টারবাইন দিয়ে প্রকল্পটি সম্পন্ন করা যেতো। আমার পোস্টের শিরোনাম সম্পর্কে এ পর্যায়ে পাঠক আপত্তি জানাতে পারেন, হাঁড়ির একটা ভাত টিপেই কেন আমি চেঁচিয়ে উঠলাম। এর উত্তরে বলবো, ফেনীতে দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প মুহুরি প্রজেক্টের কথা। সেখানে চারটি টারবাইনে মোট ০.৯ মেগাওয়াটের একটি প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে, যেটি এখন কার্যত অচল। তবে ভারতীয় একটি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে স্থাপিত এ প্রকল্পটি শেষ খবর পড়া পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। কিন্তু নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকা ঐ প্ল্যান্ট প্রমাণ করছে, এই দেশে বায়ু বিদ্যুতের সম্ভাবনা তেমন নেই। এই দু'টি মাত্র উদাহরণ থেকেই কিন্তু মানুষের মনে একটি ধারণা জন্মানো সম্ভব, বাংলাদেশে বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। কিন্তু আসলেই কি তাই? সঠিক বায়ুজরিপ আর সঠিক নকশা অনুযায়ী প্রকল্প প্রণয়ন করলে যে জিনিস সারা দুনিয়ায় ঘুরছে, বাংলাদেশে কোন দুঃখে ঘুরবে না? কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত ১০৮ কিমি সৈকত থেকে খানিকটা দূরে স্থাপিত হতে পারে অফশোর উইন্ড টারবাইন প্ল্যান্ট, যা উচ্চবিভব কেবল দিয়ে কক্সবাজারের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সঞ্চালন লাইনে যোগ করা যেতে পারে। উত্তরাঞ্চলে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ নদী তীরবর্তী সমতল অঞ্চলে স্থাপন করা যেতে পারে সুউচ্চ টারবাইনগুলি, যা বন্যা বা ভূমিধ্বসের হাত থেকে নিরাপদে থাকবে। উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ বেশি বলে সেখানে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ সাধারণত টারবাইনের ব্লেডগুলি ৪০ মি/সে বেগ (ঘন্টায় ১৪৪ কি.মি.) পর্যন্ত বাতাস সহ্য করতে পারে, এর ওপরে গেলে তা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গেল সিডরে বাগেরহাটের একটি জায়গায় বাতাসের বেগ রেকর্ড করা হয়েছিলো ৬২ মি/সে। এছাড়া যেসব জায়গায় জলোচ্ছ্বাসের কারণে মাটি ক্ষয় হবার সম্ভাবনা বেশি, সেখানেও টারবাইন স্থাপন করা ঝুঁকিপূর্ণ। পাঠকের জ্ঞাতার্থে জানাই, একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের খরচ মোটামুটি মেগাওয়াট পিছু পাঁচ কোটি টাকা, বায়ুবিদ্যুতের জন্যে ১০-১২ কোটি টাকা, সৌরবিদ্যুতের জন্যে ৪০-৫০ কোটি টাকা। চলমান খরচ ঠিক উল্টো হারে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি, বায়ু বা সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রে নগণ্য। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, আপনারা প্রয়োজনে একটি আলাদা শাখা করুন, সেই শাখার কর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন, প্রয়োজনে বৃত্তি দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে আনুন, কিভাবে বায়ু প্রকল্প জরিপ ও নকশা করতে হয়। বায়ুবিদ্যুতের অমিত সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশে। অপ্রশিক্ষিত হাতে ছেড়ে এর ইমেজ নষ্ট করবেন না। ভারত বা চীন নয়, বড় আকারে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাইলে যোগাযোগ করুন জার্মানি বা ডেনমার্কের সাথে, তারা বিশ্বজুড়ে এই প্রযুক্তির শিখরে।
false
ij
বিজ্ঞান কতদূর এগোল_ বঙ্গোপসাগরের ওপর একটি ভাসমান _ঘূর্নিঝড় নিষ্ক্রিয় কেন্দ্র_ বসানো যায় কি_ ভোলা, সাইক্লোনের পর ... এই ক’বছর আগেও উপকূলীয় এলাকার লোকজনের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা খাতে মাথাপিছু বরাদ্দ ছিল মাত্র ৬ টাকা! এখন কত-জানি না। বেড়েছে খুব সম্ভব। তবে দুর্যোগের সময় প্রাণহানি কমল কি? সিডরের কথা ভাবি; আজও শিউরে উঠি। আহারে, সুন্দরবনের অবুঝ গাছগুলোর শরীরে কী ভয়ঙ্কর দাঁতই না বসিয়েছিল সে রাত্রে সিডর। কত মানুষ যে তলিয়ে গেল! মরে গেল কত পশুপাখি! বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম না কখনও। তবুও কল্পবিজ্ঞানের দোহাই দিয়েই বলছি, বঙ্গোপসাগরের ওপর ভাসমান একটি “ঘূর্নিঝড় নিষ্ক্রিয় কেন্দ্র” বসানো যায় কি? সাইক্লোনের যেহেতু চোখ আছে শুনেছি- সে কারনে ওই চোখটা সই করে তীব্র লেজাররশ্মি মেরে ওটার তেজ শূন্যে নামিয়ে আনা যায় না? (এই নিয়ে একটা ছবিও হয়েছে শুনেছি) জানি সম্ভব নয়। কেননা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর মতন বিজ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্রটির হাতেও নেই“ঘূর্নিঝড় নিষ্ক্রিয় কেন্দ্র”। কয়েক বছর পরপর প্রবল জলোচ্ছ্বাসের তান্ডবে তছনছ হয়ে যায় ফ্লোরিডা, নিউ অর্লিয়েন্স, হিউস্টন। তা হলে? ঘূর্নিঝড় নার্গিস আঘাত করার কথা ছিল বাংলাদেশের উপকূলে। ভাগ্যিস করেনি। করলে মায়ানমারের মত অবস্থা হত করুন ধ্বংসপ্রাপ্ত। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্নিঝর-সাইক্লোন হচ্ছে মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত। কেননা, আমাদের দেশের উপকূলীয় জনগন তো তেমন স্বচ্ছল নয়। প্রত্যহ তাদের নুন আনতে পানতা ফুরোয়; ঘরের খুঁটিটি নড়বরে, ছাউনিও তথৈবচ। কাজে কাজেই ঘূর্নিঝর-সাইক্লোন হচ্ছে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জীবনে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত। তাই বলছিলাম, বঙ্গোপসাগরের ওপর ভাসমান একটি “ঘূর্নিঝড় নিষ্ক্রিয় কেন্দ্র” বসানো যায় কি না। বসিয়ে দুঃখী দরিদ্র মানুষজনকে সুখে না-হলেও একটু স্বস্তিতে রাখা যায় কি না। পৃথিবীব্যাপী বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলো বিগত পঞ্চাশ বছরে একে অন্যের বিরুদ্ধে তীব্র অস্ত্র প্রতিযোগীতায় লিপ্ত না হলে হয়তো এদ্দিনে তৈরি হয়ে যেত Cyclone Diffuse Centre. এসব গুরুতর রাজনীতির বিষয়; যা আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের সাদাসিদে মানুষের বোঝার কথা তো নয়! সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:২০
false
rg
গোলাম আজমের লাশ পাকিস্তানে পাঠানো হোক। বাংলার মাটিতে এই নরঘাতকের কবর চাই না একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী, মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার যোগ্য হলেও আদালতের কাছে কুখ্যাত এই অপরাধীর বয়স ও বার্ধক্য বিবেচনায় ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনাল- ১ তাকে মাত্র ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত একজন যুদ্ধাপরাধীর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী হিসেবেই এই কুখ্যাত নরঘাতক আজ মারা গেল। বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর ইতিহাসের কুখ্যাত মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজম মুক্ত হল। তবে মৃত্যুর আগে এই মানুষখোেকো নরঘাতক রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধায় বেশ আরাম আয়াসেই ছিলেন। জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় এই নরজীবানুকে রাষ্ট্রীয় লোকবল দিয়ে খাবার, চিকিৎসা, বিশ্রামের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের আজ এক খুশির দিন। বাংলার ঘরে ঘরে আজ ঈদের আনন্দ। অন্তত জনগণের ট্যাক্সের পয়সা আর এই নরপিচাশের পেছনে ব্যয় হবে না। এটা একটা স্বস্থির খবর। আরেকটি অস্বস্থির খবরও এই নরপিচাশ তার শেষ ইচ্ছায় করে গেছেন। মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত অপর দুই নরপিচাশ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদী'র যে কাউরে দিয়ে যেনো তার জানাজা পড়ানো হয়, এই শেষ ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন এই নরঘাতক। শেষ ইচ্ছা নিয়েও এই কুখ্যাত শকুনের একটা আবদার। গোলাম আজমের মত একজন কুখ্যাত নরপিচাশের শেষ ইচ্ছাকে এখন যদি রাষ্ট্রপক্ষ মেটাতে যায়, তাহলে এই তরিকায় বাকী যুদ্ধাপরাধিরাও ওদের ওস্তাদের পথ অনুসরণ করে হাজার কিসিমের বাহারি আবদার সম শেষ ইচ্ছা পোষণ করবেন। সামনে হয়তো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর শেষ ইচ্ছা রোহিত সংক্রান্ত কোনো আইন সংসদে পাশ করা লাগতে পারে। নইলে যেসব নরপিচাশের ফায়ারিং স্কোয়াডে মারা উচিত, আদালতের আর আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে তারা এভাবে শেষ ইচ্ছার একটা নতুন তরিকা নিয়ে আবার রাজনীতি করার চেষ্টা করবেন। অতএব সাধু সাবধান। বরং এই নরপিচাশের লাশ পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো উচিত। উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আবেদন করে এই নরপিচাশ। আর লোক দেখানো নাটক হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষ একই মাসের ১২ তারিখে সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল করে। আগামী ২ ডিসেম্বর এই নরপিচাশের আপিলের শুনানীর দিন ধার্য করেছিল আদালত। এখন আর সেই সব বালাই নেই। এখন এই নরপিচাশের লাশ বাংলার মাটিতে কবর না দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হবে। এই কুখ্যাত নরপিচাশের লাশ পাকিস্তানের প্রাপ‌্য। পাকিস্তান এখন বুঝে নিক। নইলে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হোক। বাংলার মাটি এই নরঘাতকের জন্য নয়। প্রয়োজনে বাংলাদেম সরকার এই প্রশ্নে এখন গণভোট আয়োজন করতে পারে। আমি শতভাগ নিশ্চিত গণভোট আয়োজন হলে গোলাম আজমের লাশ এই বাংলায় কেউ কবর দেবার পক্ষে রায় দেবে না। যেহেতু গোলাম আজম নিজেই তার শেষ ইচ্ছায় জানাজা নিয়ে একটা রাজনীতি করেছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামী'র জানাজা অন্য দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী দিয়ে পড়াতে আইনে কোনো বাধা আছে কিনা তাও আইনজীবীরা এখন খতিয়ে দেখছেন। যদি গোলাম আজমের শেষ ইচ্ছা রাষ্ট্রপক্ষ মেনে নেয়, তাহলে জেলখানায় হতে হবে গোলাম আজমের জানাজা। কিন্তু এই বিষয়কে পুঁজি করে এই নরঘাতকের দল আবার নতুন রাজনীতির বিষবাষ্প ছড়াবে। সুতরাং গোলাম আজমের লাশ কোথায় দাফন করা হবে, সেই প্রশ্নে বরং জাতি এখন একটা মোক্ষম গণভোটে যেতে পারে। আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট নিশ্চিত গণভোটের রায়ে এই কুখ্যাত নরঘাতকের লাশ কেউ বাংলার মাটিতে কবর দেওয়ার পক্ষে যাবে না। এই লাশ পাকিস্তানে পাঠানো হোক।
false
hm
প্রবাসে দৈবের বশে ০৩৫ সেদিন ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো ঝড়ের শব্দে। কাসেল এমনিতেই বেশ হাওয়ালো শহর, কিন্তু যাকে অন্তত আমি ঝড় বলি, তেমন কিছু এ পর্যন্ত দেখিনি। জানালায় বাতাসের ঝাপটা শুনে বুঝলাম, শুধু বাতাস নয়, তুষারও আছে সাথে। পরে শুনলাম এই ঝড় বয়ে গেছে পুরো মহাদেশের ওপর দিয়ে। সুমন চৌধুরী একটু বেরিয়েছিলেন ভোরবেলা, তিনি সেদিন বিকেলে বিরসমুখে জানালেন, আমার তো ঝড়ের শব্দে ঘুম ভেঙেছে, আর তিনি ঝড়ে ভিজে চুপচুপে হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, কাজেই এ নিয়ে আর ফালতু আলাপ যাতে না হয় ...। এ কয়দিন ব্যস্ত ছিলাম পরীক্ষা নিয়ে। বিয়োমাসে, মানে জৈববস্তু নিয়ে পরীক্ষা, গোটা সেমিস্টারের সবচেয়ে একঘেয়ে আর চাপ ফেলার কোর্স ছিলো এটা। হপ্তায় একদিন টানা চার ঘন্টা বকর বকর। রসায়ন আমার অপছন্দের বিষয়, কোনমতে টেনেটুনে পাশ করে এসেছি এতে সারাজীবন, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়তো হবে না। কোর্সটার দুটো টুকরো ছিলো, এক অংশে জৈববস্তুর নানারকম তাত্ত্বিক ব্যবচ্ছেদ, অন্য অংশে এর রাসায়নিক গুণযাচাই। শেষের অংশ যে প্রফেসর নিয়েছেন, তিনি খুব নিষ্ঠার সাথে পড়ালেও সকলেই তাকে একটু সমঝে চলে বদমেজাজের কারণে। পরীক্ষার হলে তার নমুনা দেখলাম। এখানে পরীক্ষার আগে পরীক্ষা দপ্তরে নিবন্ধন করতে হয় নাম, ছাত্র ক্রমিক আর স্বাক্ষরসহ। এই পরীক্ষা দপ্তরের ব্যাপারটাও একেক বিভাগের জন্যে একেক রকম। ইলেকট্রোটেকনিক বা ইনফরমাটিক এর ছাত্ররা অনলাইনে ফটাশ করে এই কাজ সেরে ফেলে কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই, আর আমরা যারা এরএকোয়াড্রাটলার, তাদের সিঁড়ি ভেঙে দাপাদাপি করে যেতে হয় বিভাগের পরীক্ষা দপ্তরে, সেখানে খিটখিটে ফ্রাউ মারিনেল্লির কাছে গিয়ে রেজিস্টার খাতায় নামধাম লিখতে হয়। পরীক্ষার কমপক্ষে চৌদ্দদিন আগে এই কর্মটি সাধন করা না হলে পরীক্ষা দেয়ার কোন অধিকার থাকে না ছাত্রের। আমি যেমন একটা সেমিনারের মৌখিক পরীক্ষায় সময়মতো নিবন্ধন করতে পারিনি, সেজন্যে আবার পরীক্ষা দপ্তর থেকে ফর্ম নিয়ে তাতে পরীক্ষকের অনুমোদনসূচক স্বাক্ষর নিয়ে জমা দিতে হয়েছে। হের রোরিগ এবং হের লাঙ্গে অবশ্য কোন রকম ঝামেলা করেননি, ফর্মে সই করে দিয়ে উল্টো আমার হাতে আরেকটা ফর্ম ধরিয়ে দিয়ে বলেছেন, "এবার তাহলে আপনিও একটা সই করে দিন এখানে!" পরীক্ষার হলে এক বেচারা প্রফেসর ক্লোজের কাছে এই একই অনুরোধ নিয়ে এসেছে। এই প্রথম কোন জার্মান প্রফেসরকে রাগারাগি করতে দেখলাম। হোয়রজাল ৎস্বাই কাঁপিয়ে এক গর্জন শুনলাম, "এখানে পরীক্ষা চলছে! তার কিছু নিয়ম কানুন আছে! আপনি বেরোন!" নিবন্ধন করতে দেরি হয়ে গেলে যে ফর্ম দিয়ে পার পাওয়া যায়, সে ফর্ম নিয়ে স্বাক্ষরের জন্যে অনুরোধ করতে ক্লোজে আরো ক্ষেপে গেলেন! "আপনি সময়মতো নিবন্ধন করেননি! কথা শেষ! যান এখান থেকে!" হলের আরেক প্রান্ত থেকে সেই ছোকরার এক বন্ধু বিরক্ত হয়ে বললো, "হের ক্লোজে, একটু বিবেচনা করুন!" ক্লোজে পাঁই করে ঘুরে বললেন, "বিবেচনা করে আপনার বন্ধুকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বাস!" আমি মনে মনে কপালকে ধন্যবাদ দিলাম। ঐ পরীক্ষার জন্যে নিবন্ধনের শেষ দিনে কর্মটি সেরে এসেছিলাম। সময়ের এক ফোঁড় না দিলে অসময়ে যে অগুনতি ফোঁড়েও যে কাজ হয় না, তা দেখে শিখলাম। ক্লোজে অবশ্য পরিচয়পত্র যাচাই করার সময় আমাকেও ভোগালেন খানিকটা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্রে ছবি থাকে না এখানে, কেন জানি না, লোকজনকে তাই ছবিসহ তাদের পেরজোনালআউসভাইজ সাথে রাখতে হয়। আমার পেরজোনালআউসভাইজ বা ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র আমার পাসপোর্ট, তার একটা কপি করে সঙ্গে রেখেছিলাম সৌভাগ্যক্রমে, ক্লোজে আমার মাত্রিকেলনুমার মিলিয়ে দেখে খটখটে গলায় অবিকল পুলিশের মতো করে বললেন, "লিখটবিল্ডআউসভাইজ বিটে!" ছবিসহ পরিচয়পত্র বার করে দেয়ার পর তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আমার খোমাটিকে পরখ করে দেখলেন। সেই পরীক্ষার একদিন পর, অর্থাৎ আজ আবার ছিলো ব্যবস্থাকৌশলের পরীক্ষা। এই ক'দিন পড়তে পড়তে চোখ ব্যথা হয়ে গেছে। ব্যবস্থা কৌশল বেশ গোলমেলে বিষয়, আগের বছরের কোন পরীক্ষার প্রশ্নও কারো কাছে নেই, কী আসতে পারে পরীক্ষায়, তা জিজ্ঞেস করলে প্রফেসর প্রিস গম্ভীর মুখে শুধু বলেন, "যা পড়ানো হয়েছে তা থেকেই একটা কিছু আসবে।" গতকাল রাতে যখন মোটামুটি একবারের মতো সবকিছু পড়ে শেষ করেছি, তখন পর পর দু'টো মেইল এলো। প্রথমটা পাঠিয়েছে আমারই কোন এক সহৃদয় সহপাঠী, সে জানিয়েছে, ভাইসব, তোমরা শুধু অমুক অমুক জিনিস পড়লেই চলবে না, প্রিসের ওয়েবসাইটে আরো কিছু জিনিস তুলে দেয়া হয়েছে, সেগুলোও দেখো। দ্বিতীয় মেইলে টাকলু রোলান্ড জানিয়েছে, আগামীকাল স্ট্রাইক, ট্রাম বাস চলবে না। আরো পড়তে হবে শুনে মেজাজ খিঁচড়ে গিয়েছিলো, স্ট্রাইকের কথা শুনে বুঝলাম, পৃথিবীতে কিছু শব্দকে কেন লোকে খারাপ কথা হিসেবে রেখে দিয়েছে। এর আগেও একবার স্ট্রাইকের ভেতর হেঁটে হেঁটে পরীক্ষা দিতে গেছি। আর হবি তো হ পরীক্ষা আবার ইংশুলে, সেই দূর ভিলহেল্মসহোয়ার আলেতে, আমার বাসা থেকে পায়ে হেঁটে সত্তর মিনিট লাগে যেতে। সেদিন রাস্তায় যেখানে আমার বুলগেরিয়ান সহপাঠী স্লাভের সাথে দেখা হয়েছিলো, প্রায় সেই একই জায়গায় আজ দেখা হয়ে গেলো ওলাফের সাথে। সে স্ট্রাইকের কথা জানতো না, ঘর ছেড়ে বেরিয়েছে তার ঢাউস ল্যাপটপ নিয়ে, তার মেজাজ আরো খারাপ। পথে চলতে চলতে চোখে পড়লো বিক্ষোভ মিছিল। এখানে মিছিলের আগে পিছে পুলিশের গাড়ি থাকে কয়েকটা। জার্মান পুলিশ একটি দর্শনীয় বস্তু, দৈর্ঘ্যপ্রস্থে পৃথিবীর বেশিরভাগ দুষ্কৃতীর চেয়ে বড় হয় তারা। বিক্ষুব্ধ জনতা কোনরকম বেচাল করলে সোজা এসে পিটিয়ে ঠান্ডা করতে তারা সদা প্রস্তুত। মিছিল যারা করে, তারা আমাদের মতো কাঁচভাঙা বা গাড়ি পোড়ানোতে এখনও হাত পাকাতে পারেনি, এরা কয়েকটা লাউডস্পীকার আর হুইসেল-পতাকা নিয়ে মাঠে নামে। পতাকা নাড়াতে নাড়াতে হুইসেলে এক সাথে ফুঁ দেয়, আর লাউডস্পীকারে তাদের পালের গোদাবৃন্দ জলদগম্ভীর স্বরে দাবিদাওয়া জানাতে থাকে। মনে মনে ভাবলাম, এদের সবার আউসবিল্ডুং (প্রশিক্ষণ) করানো উচিত পল্টন ময়দানে নিয়ে গিয়ে। পরীক্ষা শেষ করে খুব হালকা লাগছিলো আজ। এমনিতেই বহুদিন পর লেখাপড়া শুরু করেছি, রীতিমতো চাপ পড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গেলে। চার বছর আগে কঠিন ম্যালেরিয়ায় ভুগে প্রায় মরতে বসেছিলাম, তার পর থেকে লক্ষ্য করে দেখেছি, আগের মতো আর অঙ্ক করতে পারি না। পর পর দু'টো পরীক্ষার ঝামেলা শেষ হবার পর আজ সুমন চৌধুরীর বাড়ি গিয়ে উৎপাত করলাম। হের চৌধুরীর কানাডীয় প্রতিবেশী ভিনসেন্ট কাসেল ছেড়ে চলে গেছে, যাবার আগে দুই বোতল খাসা ওয়াইন রেখে গেছে পড়শীদের জন্যে, তার একটি আমি আর চৌধুরী মেরে দিলাম আজ। দুই হাজার ছয়ের অর্ধশুষ্ক ডর্নফেল্ডার সবসময়ই খাচ্ছি, কিন্তু আজকেরটা রীতিমতো খাসা ছিলো। ভিনসেন্টের পবিত্র স্মৃতির উদ্দেশ্যে কিছু অপবিত্র স্নেহবাক্য বর্ষণ করলাম মনে মনে। গতকাল এমনিই হঠাৎ কী মনে করে খুঁজতে খুঁজতে অনলাইনে পেয়ে গেলাম আগাথা ক্রিস্টির সত্তরটি রহস্যোপন্যাস। ডাউনলোড করে ছি। সামনের ক'টা দিন স্বাভাবিকভাবেই সচলে একটু অচল মেরে যাবো। ষ্ট্রোয়মুংসমাশিনেন এর ওপর কষা পরীক্ষা তো আছেই, ক্রিস্টির অনেক না পড়া উপন্যাস এখন নাগালের মধ্যে।
false
fe
প্রচার বাণিজ্যের পসরা ,পুঁজিসন্ত্রাসের কক্ষপথ প্রচার বাণিজ্যের পসরা ,পুঁজিসন্ত্রাসের কক্ষপথ ফকির ইলিয়াস --------------------------------------------------------------হ্যাঁ, বলা যায় মার্কিনিরাও হুজুগে জাতি। হুমড়ি খেয়ে পড়ার একটা অভ্যেস আমরা সব সময়ই লক্ষ্য করি এই বহুজাতিক সমাজে। গেল কিছুদিন আগে নিউইয়র্কে আবারও দৃশ্যটি প্রত্যক্ষ করলাম। আইফোনের নতুন ভার্সন এসেছে বাজারে। যেদিন এই নতুন মডেলটি বাজারে রিলিজ হলো তার পাঁচদিন আগে থেকে আইফোনের নিউইয়র্কস্থ সদর দফতরের সামনে ছিল লম্বা লাইন। অবিশ্বাস্য সে দৃশ্য। চিড়া, মুড়ি, চিপস, ড্রিংকস নিয়ে মানুষেরা লাইনে দাঁড়িয়ে যায় পাঁচদিন আগে থেকেই। কে প্রথম এই নতুন ভার্সনটির ক্রেতা হবে তা নিয়ে ছিল মূল প্রতিযোগিতা। সমস্যা দেখা দিয়েছিল টয়লেট ব্যবহারের বেলায়। সেটাও তারা পুষিয়ে নিয়েছে সামনে কিংবা পেছনে থাকা লাইনের সহযাত্রীকে বলে-কয়ে। একজন টয়লেটের প্রয়োজনে বেরিয়ে গেছে, অন্যজন তদারকী করছে তার জায়গা।ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, সবই করেছে তারা এই লাইনে থেকেই। তারপরও প্রথম আইফোন কিনে নেয়ার আনন্দ। নানা টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক-রিপোর্টাররা ঘিরে রেখেছেন তাদের এই পাঁচদিন। প্রায় দু’মাস আগে ‘আইকিয়া’ নামের একটি ফার্নিচার দোকানও তাদের ব্র্যান্ড ওপেনিং উপলক্ষে তেমন একটি ঘোষণা দিয়েছিল। প্রথম পঞ্চাশজন কাস্টমারকে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। আর যায় কোথায়? ঠিক একই কায়দায় প্রতিযোগিতা ছিল এই দোকানের সামনে। সবাই লাইন বেধে বসেছিল দীর্ঘ চারদিন। মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল খদ্দেরদের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য। কেউ কেউ তা প্রচার করেছিল ‘লাইভ’।এই যে প্রচার বাণিজ্য এর প্রকৃত অর্থ কি? প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, খুব দ্রুত বাজারে একটি স্থান করে নেয়া। খুব তাড়াতাড়ি মুনাফা লুটে পুঁজিপতি হয়ে যাওয়া। যারা এই বাণিজ্য করে তারা ভালো করে জানে, তাদের ব্যবসার লোকসান হচ্ছে না। বরং লাভবান হচ্ছে তারা বহু গুণে।গ্রীষ্মের অবকাশ যাপনের জন্য ট্রাভেল এ- ট্যুরিজম কোম্পানিগুলো বিনামূল্যে এয়ার টিকিট পর্যন্ত দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে। কোনো দম্পতিকে দুটো টিকিট হয়তো দিল তারা। ওই পরিবারে যদি দুটি সন্তান থাকে তবে সন্তানদের টিকিট, হোটেল ভাড়া, খাওয়া-দাওয়া, ঘোরাফেরার খরচ নিজে বহন করতে হবে। এই যে ‘প্যাকেজ ডিল’ তা থেকেই মুনাফা করে নিচ্ছে ট্যুরিজম কোম্পানিগুলো। আর এভাবেই যুক্তরাষ্ট্র শাসন ও শোষণ করছে সমাজকে, পরিবারকে ও বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলোকে।শাসনের রূপরেখা কালে কালেই বদলায় এই পরাশক্তি। অতিসম্প্রতি আমরা দেখছি, এ মাত্রায় নতুন সংযোজন। যুদ্ধ বাঁধিয়ে অস্ত্রবিক্রি করার কৌশল পুরো হয়ে গেলেও অস্ত্র তৈরির নতুনত্ব প্রতিদিনই পরীক্ষিত হচ্ছে বিশ্বে। আর তা করা হচ্ছে কাউকে রক্ষা করার জন্য, কাউকে নিধন করার জন্য। কারও স্বার্থরক্ষা করে, কাউকে ঘায়েল করা হবে,এটাই নিয়মতান্ত্রিক ধারা। কিন্তু যদি নিধন না করে রক্ষার হাত বাড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে তো আরও উত্তম উত্থান ঘটতে পারতো মানবসভ্যতার।যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট পদপত্যাশী সিনেটর বারাক ওবামা সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফরে বেরিয়েছেন। ইসরাইল সফরকালে তিনি বলেছেন, যে কোনো মূল্যে ইসরায়েলিদের স্বার্থরক্ষা এবং সমুন্নত রাখবেন তিনি। একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টে প্রার্থীর মুখে এমন ঘোষণা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখেছি বিশ্ববাসী। এটা আমরা সবাই জানি, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতিতে ইহুদি কমিউনিস্ট একটি বিশাল প্রভাব রেখে চলে। বারাক ওবামা সেই প্রভাব ও শক্তির সমর্থন পেতেই এমন জোরালোভাবে ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলেছেন। অধিকৃত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে প্রতিদিনই নরহত্যা চলছে। আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধ নারী-পুরুষ। দেশটির মাটি এখন রক্ত ধারণে অপারগই বলা যায়। খুবই পরিতাপের কথা এই অধিকৃত রাষ্ট্রটি বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে এখন পাশ্চাত্যের নেতৃত্ব দোটানা নীতি পোষণ করছে।বিশ্বে এখন চলছে প্রচার বাণিজ্যের দাপট আর তোষামোদের রাজনীতি। পুঁজিসন্ত্রাসের রক্ষচক্ষু গণমানুষের কণ্ঠরোধে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। খুব অবাক হয়ে আমাদের দেখতে শোষক শ্রেণী তাদের কৌশলে নতুন রঙ ঢেলে মাঠে নেমেছে। আর সে ক্ষেত্রে কৃষাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ দ্বন্দ্ব নয়, বরং পুঁজিবাদ দারিদ্র্যের দ্বন্দ্বটাই এখন প্রকট। এমন অস্থিরতা সামনে রেখেই এগুচ্ছে সমাজ। অগ্রসর হচ্ছে বিশ্ব। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই রাজনৈতিক দীনতাকে প্রাধান্য দিয়ে অথবা বাঁচিয়ে রেখে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা কি সম্ভব? মনে রাখতে হবে প্রচারে বাণিজ্য প্রসার ঘটে কিন্তু মালামালের গুণগত মান বিচার করে ক্রেতারাই। যুক্তরাষ্ট্রে নির্ভর বিশ্ব রাজনীতিও চলছে একই কক্ষপথে। ============================================দৈনিক ডেসটিনি । ২৯ জুলাই ২০০৮ মংগলবার প্রকাশিত
false
rn
আমার নাম বাবুই সময় দুপুর বারোটা। বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফার্ম গেট এসে দাঁড়িয়ে আছি। যাবো মিরপুর-দশ । পকেট একেবারে শূন্য। দুপুরবেলা রোদের মধ্যে হেঁটে মিরপুর যেতে ইচ্ছা করছে না। ইচ্ছা করছে গাড়িতে এসি ছেড়ে আরাম করে গান শুনতে শুনতে যাই অথবা পত্রিকা পড়া যেতে পারে। বিদেশে কি সুন্দর লিফট পাওয়া যায়। কি করবো...কি করবো ভাবছি, ঠিক তখনই একটা সাদা রঙের গাড়ি এসে আমার সামনে থামল। গাড়ি থেকে এক ভদ্রলোক নেমে বললেন- এই ছেলে তোমার নাম কি- আজমত উল্লাহ ? চারিদিকে গাড়ি-বাসের বিকট শব্দ, প্রচন্ড রোদের তাপ। আমি ঘামছি। আমি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললাম- এই যে আপনার নাম কি- আহমদ ইবনে রফিক হাইয়ান? ভদ্রলোক চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন না- আমার নাম- রফিক চৌধুরী। আমি একটু হাসি দিয়ে বললাম- আমার নাম- বাবুই। বেলা দুইটা। আমি দাঁড়িয়ে আছি সংসদ ভবনের সামনে। গ্রাম থেকে নতুন শহরে আসা লোকদের মতন হা করে তাকিয়ে আছি সংসদ ভবনের দিকে। এমন সময় দুইজন পুলিশ এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল- এখানে কি করছেন? আমি বললাম- এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খাবো, ভাবছি সংসদ ভবনে কি পানির কল আছে! ওসি সাহেব বললেন- তোর নাম কি ? কী করা হয় ? আমি বললাম- আমার নাম বাবুই। সাংবাদিকতা করি। ছবি তুলি। ওসি বলল, কোন পত্রিকায়? আমি বললাম- বিশেষ কোনো পত্রিকা নেই। ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা। যেখানে সুযোগ পাই টুকটাক কাজ করি। গত সপ্তাহ যুগান্তর পত্রিকায় আমার তোলা ছবি দিয়ে দু'টা লীড নিউজ হয়েছে- হয়তো আপনার চোখে পড়েছে। পুরান ঢাকার সমস্যা নিয়ে। ওসি সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললেন- আপনাকে আমার সাথে থানায় যেতে হবে। আমি পুলিশের গাড়িতে উঠে পড়লাম। থানায় যাওয়ার দুই ঘন্টা পর পুলিশ আমাকে বলল- আমরা পত্রিকা অফিসে খোঁজ নিয়েছি- বাবুই নামে কোনো ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক নেই। ওসি সাহেবের হুমুকে একজন আমাকে ঠাটিয়ে এক চড মারলো। পাঁচ কেজি ওজনের চড়ে আমি ছিটকে পড়লাম। উঠে দাঁড়াতেই- ওসি সাহেব বললেন- এইবার বল তোর আসল ধান্ধা কি? এরপর বেশ কিছু নোংরা কথা- যা বাংলা ভাষায় আমার পক্ষে লেখা সম্ভব নয়। রাত এগারোটায় ডিউটি অফিসার এসে আমাকে ছেড়ে দিলেন। থানা থেকে বের হয়ে আমি হাঁটছি। আমার ভালো নাম রাজীব নূর। পত্রিকাতে এই নামেই আমি কাজ করি। হিমি আমাকে আদর করে বাবুই বলে ডাকে। ইদানিং কেউ যদি আমার নাম জিজ্ঞেস করে- আমি ছোট্র বাচ্চাদের মতন বলি- আমার নাম বাবুই। হাঁটতে হাঁটতে আমি আবার সংসদ ভবনের সামনে এসে দাঁড়াই। অনেক ক্ষুধা পেয়েছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। সংসদ ভবনের দিকে তাকিয়ে মনে হলো- রাতের বেলা-ই সংসদ ভবন দেখতে বেশী সুন্দর লাগে। রাত দুইটায় বাসায় ফিরলাম- বিষন্ন মন এবং ক্লান্ত শরীর নিয়ে। বাসায় ফিরে অনেক সময় আরাম করে গোছল করলাম। পেট ভরে ভাত খেলাম- রুই মাছ, কলমি শাক আর ডাল দিয়ে। ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম। এখন আমি হিমির কথা ভাববো। অনেকদিন হিমির সাথে দেখা হয় না। আমি ইচ্ছা করেই অনেকদিন পর-পর হিমির সাথে দেখা করি। বুদ্ধিমান'রা জানে প্রিয় মানুষদের সাথে রোজ রোজ দেখা করা ঠিক নয়। রাত তিনটায় হিমির বাসায় ফোন দিলাম। ফোন ধরলেন হিমির বাবা। আমি বললাম- তেজগাঁ থানা ? হিমির বাবা বললেন- হারামজাদা, তেজগাঁ থানা তোমার ইয়ে দিয়ে ডুকিয়ে দিবো। আমি বললাম- হিমিকে ফোন দেন- জরুরী কথা আছে।হিমির বাবা চিৎকার করে বললেন- তুই কে ? আমি নরম স্বরে বললাম- আমি আপনার মেয়ের জামাই। হিমির বাবা বললেন- ফোন রাখ শুয়োর। আমি বললাম- আমার নাম বাবুই। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির একটা অলৌকিক ক্ষমতা আছে। প্রতিটা মানুষের মন আদ্রতায় ভরিয়ে দেয়। একজন রিকশাওয়ালা আনন্দে গান গেয়ে উঠে। এত নাম থাকতে হিমি আমাকে কেন বাবুই নামে ডাকে? আজিব ! বর্ষা কালে আকাশের তারা গুলো কম জ্বল জ্বল করে। আকাশের সবচেয়ে জ্বল জ্বল করা তারাটির নাম হচ্ছে হিমি। হিমির কাছে প্রতিদিন একটা করে চিঠি লিখতে ইচ্ছা করে। খুব আয়োজন করে চিঠি লিখতে বসি। কলম হাতে নিয়ে বসে থাকি- কী লিখব ভেবে পাই না। আমি চিঠিতে লিখলাম- হিমি আমার খুব ইচ্ছা করে, জোছনা রাতে সমুদ্রের পাড়ে তোমাকে নিয়ে হাঁটি।সেদিন তোমাকে অবশ্যই নীল শাড়ি পড়তে হবে। দুই হাত ভরতি থাকবে নীল কাঁচের চুড়ী, কপালে একটা বড় নীল টিপ। বাতাসে তোমার মাথার চুল উড়ে এসে আমার গায়ে পড়বে।তোমার শাড়ির আঁচল বাতাসে পতাকার মতন উড়বে। অঅনেকদিন আগে একটি গল্প পড়েছিলাম, গল্পটি অনেকটা এই রকমঃ রাশিয়ার এক শহরে বাস করতো আকসেনভ নামের এক যুবক। পেশায় ছিল ব্যবসায়ী, আর ছিল দু খানা দোকান ও বসত ভিটা। ছোটবেলা থেকে নেশা করলেও এখন সে পুরাপুরি ভালো, মাঝে মাঝে কেবল ভদকা খেয়ে নেশা করে। গ্রীষ্মের এক সকালে ব্যবসার কাজে শহরে যাওয়ার জন্য বের হয় যুবক। স্ত্রী তাকে বলে যে ,আমি খুব একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি তুমি আজ শহরে যেওনা। সে উপেক্ষা করে শহরে যায় এবং রাস্তার মাঝে পরিচয় হয় এক ব্যবসায়ীর সাথে। দু’ জনেই রাতে এক সরাই খানাতে থাকে। পরদিন সকাল বেলা আকসেনভ সরাই খানার সব লেনদেন চুকে দিয়ে বের হয়। প্রায় মাইল পঁচিশ যাবার পর সে আরেকটা সরাই খানাতে দাঁড়িয়ে পড়ে ঘোড়া গুলোকে কিছু খাইয়ে নেবার জন্য। কিছুক্ষণ পর একজন অফিসার এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করে। সে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিলেও মূল ঘটনা বুঝে উঠতে পারেনা। অফিসার আকসেনভকে বলে যে, যে লোকটির সাথে আপনি আপনি রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন সে খুন হয়েছে। আর আমি একজন পুলিশ অফিসার। আপনার পোটলা তল্লাসী করব। যেই বলা সেই কাজ। আকসেনভের ব্যাগ তল্লাসী করে একটা রক্ত মাখা ছোরা পাওয়া গেল। ছোরাতে কেন রক্ত লেগে আছে জিজ্ঞেস করলে আকসেনভ কোন উত্তর দিতে পারেনা। সে শুধু বলে আমি কিছু জানিনা। আমি খুন করিনি।
false
rg
নতুন বছরে অন্তত ১৪ টি প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি!! সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা!!! সবাইকে ইংরেজি নতুন বর্ষ ২০১৪ সালের শুভেচ্ছা। মজার ব্যাপার হল ২০১৪ সালের ২০ আর ১৪ কে জায়গা বদল করলে হয় ১৪২০। এখন বাংলা বছরে চলছে ১৪২০ সাল। ২০১৪ বা ১৪২০ এই দুইটি সালের গানিতিক যোগফল ২+০+১+৫ (অথবা ১+৪+২+০) = ৭। নতুন বছরে এই লাকি সেভেন যেনো সবার জীবনে বিশেষ করে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে দেয়, সেই কামনা করছি। নতুন বছরে অন্য সবার মত আমারও কিছু প্রত্যাশা রয়েছে। সেই ন্যূনতম প্রত্যাশাগুলো যাতে পূরণ হয়, সেই কামনাও করছি। চলুন সেই প্রত্যাশাগুলো একটি সংক্ষেপে আলোচনা করি।১. দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে শান্তিপূর্ণ হয় সেই প্রত্যাশা থাকবে সবার আগে। সাধারণ মানুষ নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে নির্বিঘ্নে যেতে পারবে, নিজের কাজ করতে পারবে, নিরাপদে আবার বাসায় ফিরে আসতে পারবে, এটাই প্রথম চাওয়া। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বা ভোটের নামে বা নির্বাচনকালীণ সহিংসতার নামে বা যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে আমরা কোনো আর নাশকতা দেখতে চাই না। দেশের সকল মানুষ নিরাপদে শান্তিতে বসবাস করুক এটাই প্রথম প্রত্যাশা। ২. রাজনৈতিক দলগুলোর নেতানেত্রীদের মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। দেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচি কোনো মতেই সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। যদি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতানেত্রীদের শুভ বুদ্ধির উদয় না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দুষ্টু রাজনৈতিক বলয় থেকে সাধারণ মানুষ এমনিতেই বেড়িয়ে আসবে। সাধারণ মানুষ দেশের চলমান অসুস্থ রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষের সেই হার্টবিট যদি বুঝতে না পারে, তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে রাজনীতি একটি অসুস্থ সংস্কৃতি হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। সাধারণ মানুষের কল্যানের কথা বলে রাজনৈতিক সহিংসতা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ৩. আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নৈতিকভাবেই গ্রহনযোগ্যতা হারিয়েছে। দেশের সাধারণ ভোটারদের ভোটদানের সুযোগকে বঞ্চিত করে ১৫৪ টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত সাংসদের নিয়ে যে সরকার আগামী ২৭শে জানুয়ারি গঠিত হবে, সেই সরকার হবে নৈতিকভাবে দুর্বল একটি সরকার। সেই সরকার জনগণের আস্থা নিয়ে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে আস্থাসংকটে ভুগবে। তাই যতো দ্রুত সম্ভব একাদশ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা, যেখানে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহনে একটি শান্তিপূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তার ব্যবস্থা করা। সেটি করতে নির্চাচন কমিশন শক্তিশালী করা সহ প্রশাসনকে একটি গ্রহনযোগ্য লেবেলপ্লেয়িং করে সবার কাছে গ্রহনযোগ্য একটি সরকারের অধীনে সেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। নতুবা নৈতিক আস্থাহীনতার কারণে নতুন সরকার যেমন মানসিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে না, তেমনি সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিরোধী রজনৈতিক শক্তি দেশে আরো নাশকতা করা সহ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের উপায় বের করা। যাতে দেশ বাঁচে, দেশের জনগণ বাঁচে। বাঁচে গণতন্ত্র।৪. নতুন সরকার যারাই গঠন করুক একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ২০১৪ সালের মধ্যেই শেষ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করা বা এটি নিয়ে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ আদায় করা বা এটাকে দীর্ঘায়িত করা কোনো মতেই দেশের সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না। যুদ্ধাপরাধী যে দলেরই হোক, সবাইকে বিচারের কাঠগড়ায় এনে যথাযথ বিচার করতে হবে। ৫. ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার শপথ নিতে হবে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করে না, তাদের বাংলার মাটিতে বসবাস করা রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না। এটি শক্ত হাতে দমন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে বাংলার মাটিতে শেকড় গাড়তে দেওয়া হবে না। সেই প্রচেষ্টা যারা করবে বা যারা সেই প্রচেষ্টাকে সহায়তা করবে, দেশের মানুষই তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। সরকারের উচিত হবে সবাইকে এটি যথাযথভাবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া। জামায়াতে ইসলামী যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শপথ নিয়ে একাত্তরের কর্মকাণ্ডের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন করে কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচয় নিয়ে রাজনীতি করতে চায়, তাহলে তাদের সেই সুযোগ সাময়িকভাবে দেওয়া যেতে পারে। অন্তত তিন বছরের জন্য তাদের একটি সুযোগ দিয়ে তাদের চারিত্রিক আচরণ কেমন থাকে তা পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। যদি সেই তিন বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী কোনো কাজ জামায়াত করে, তাহলে তাদের চিরতরে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। কিন্তু সুযোগ পেয়ে তারা যদি একই আচরণ করে, তাহলে তাদের সকল অধিকার কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা সরকারের থাকবে, এমন নীতিমালা করা যেতে পারে। ৬. দেশের সকল দুর্নীতির বিচার করতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যতো দুর্নীতি হয়েছে সবগুলো দুর্নীতির যথাযথ বিচার করতে হবে। ক্ষমতায় গেলেই মবাই টাকা বানানোর আলাদিনের মেশিন পেয়ে যায়। এটি একটি স্বাধীন দেশে কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। দুর্নীতি যারাই করেছে সবার বিচার করতে হবে। রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে দুর্নীতিবাজদের ক্ষমা করলে শস্যের ভেতরের ভূত কোনো দিনই যাবে না। দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব দুর্নীতিবাজরা পার পেয়ে যেতে পারে না। সন্ত্রাসের মত দুর্নীতিও বাংলাদেশের এই সময়ের সব চেয়ে বড় শত্রু। এদের থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। নইলে কথিত গণতন্ত্রের সুফল কেবল দুর্নীতিবাজরাই ভোগ করবে। তা দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের কোনো কল্যান হবে না। ৭. বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত অবশিষ্টদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। জেল হত্যার বিচার শেষ করতে হবে। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ হত্যাকাণ্ড, কর্নেল তাহের হত্যাকাণ্ড, প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যাকাণ্ড, নূর হোসেন হত্যাকাণ্ড, ডাক্তার মিলন হত্যাকাণ্ড সহ স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার নামে যতো হত্যা, খুন, গুম হয়েছে, সবগুলোর বিচার করতে হবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার যতোদিন ঝুলে থাকবে ততোদিন দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে না। রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না করে, একটি সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করে এসব যাবতীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। নইলে বিচারের বাণী কেবল নিভৃতে কাঁদবে। তা কোনো দিন আলোর মুখ দেখবে না। ৮. রাজধানী ঢাকায় রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করার জন্য জাতীয় প‌্যারেড গ্রাউন্ড বা ঢাকা স্টেডিয়াম বা মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেই কেবল ব্যবহার করা যাবে, এই মর্মে আইন পাশ করা হোক। সভা সমাবেশের নামে রাস্তা বন্ধ করে নয়া পল্টন বা বঙ্গবন্ধু এভ্যিনিউ কোনো সভা সমাবেশের স্থান হিসেবে একুৃশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে মেনে নেওয়া যায় না। এসব রাস্তায় রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যানজটে লাখ লাখ মানুষের হাজার হাজার শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়। যানজটে আটকা পড়ে বছরেরর পর বছর সাধারণ মানুষ অসহ্য এক নির্যাতন ও দুর্ভোগ মোকাবেলঅ করে। যা আর কোনো মতেই কারো কাছে কাম্য হতে পারে না। ৯. প্রশাসনকে দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী রাষ্ট্রীয় সম্পদ। তাদেরকে নিজেদের মত স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। প্রশাসনের যারা কর্মকর্তা কর্মচারী, তারা সবাই প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব কর্তব্য পালন করবে, এটাকে দলীয় হীন স্বার্থে ব্যবহার করার সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। ১০. স্বাধীন ন্যায়পাল নিয়োগ করতে হবে। রাষ্ট্রের যে কোনো নাগরিকেরই আইন মেনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে কর দিতে হবে। সেই করের টাকা সরকার যাতে স্বচ্ছভাবে খরচ করে, সেটাতেও সবাইকে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি আইনের প্রতি সবার শ্রদ্ধা দেখানোর সংস্কৃতি চালু করতে হবে। ১১. স্থানীয় সরকারকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীভূত ছাড়া বা মানুষের রাজধানীমুখী হবার প্রবণতা বন্ধ করতে হলে প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ সাত থেকে দশটি মন্ত্রণালয় ঢাকায় রেখে অবশিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করতে হবে। নইলে মানুষের ঢাকামুখী চাপ ভবিষ্যতে রাজধানী ঢাকাকে এমনিতেই একটি অচল নগরিতে পরিনত করবে। সে বিষয়ে এখনই সরকারি সিদ্ধান্ত না আসলে আর তা যথাযথ বাস্তবায়ন না হলে, রাজধানী ঢাকাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। ১২. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দলীয় রাজনৈতিক চর্চা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। ছাত্র রাজনীতি হতে পারে ছাত্রছাত্রীদের কল্যানের জন্য। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা বা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুরবৃত্তির ছাত্ররাজনীতি কেবল টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, ছিনতাই আর ক্ষমতার দাপটের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। যা মোটেও ছাত্ররাজনীতি হতে পারে না। দেশের শিক্ষা অঙ্গনকে বাঁচাতে হলে, ভবিষ্যত প্রজন্মকে শিক্ষিত করে কর্মমুখী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, চলমান দুষ্টু ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ১৩. দেশের স্বাস্থ্যসেবা শুধু রাজধানী কেন্দ্রীক উন্নত না করে সারা দেশে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ছড়িয়ে দিতে হবে। নইলে লোক দেখানো স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের চিকিৎসা দিতে বরাবরের মত ব্যর্থ হবে। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা সর্দি-কাঁশি হলেও বিদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে যান। আর দেশের মানুষের জন্য গরু ছাগলের খামার সর্বস্ব স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে গাল ফুলিয়ে জনসেবায় বক্তৃতা করেন। স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি সারা দেশে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ছড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি ডাক্তারদের নৈতিকতা বাড়াতে কঠোর আইন করতে হবে। ঔষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভদের পরামর্শ নিয়ে যারা প্রেসক্রিপশান করেন, তারা ডাক্তার নামের কলংক। এমনও দেখা গেছে সামান্য প‌্যারাসিটামল কোনো কোনো ডাক্তার সকাল দুপুর রাতে তিন বেলার জন্য তিন কোম্পানির ওষুধের নাম লেখেন। এই সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। নইলে নেতাদের দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যাবার সংস্কৃতির পাশাপাশি দেশে ঔষুধ কোম্পানির পরামর্শের প্রেসক্রিপশানের চিকিৎসা বেশি দিন টিকবে না। আর হাসপাতালে বিদ্যমান রাজনীতি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে। ১৪. কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায়্যমূল্য যাতে কৃষকের হাতে পৌঁছায় সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। কৃষক সারা বছর কষ্ট করেন আর সুফল ভোগ করে কৃষকের উৎপাদিত পন্য নিয়ে যারা দালালি কর তারা। এটা একটি স্বাধীন দেশে মেনে যায় না। কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সারা দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ২০১৪ বছরে এই ১৪টি প্রত্যাশা যদি কোনো সরকার পূরণ করার জন্য ন্যূনতম সচেষ্ট হয়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে নিজ নিজ কাজে অনেক উন্নয়ন করবে, এটা আমি হলফ করেই বলতে পারি। সবাই ভালো থাকবেন। শান্তিতে থাকবেন। নিরাপদে থাকবেন। এই কামনা করছি। জয় বংলা।
false
rg
সীমান্তে বাংলাদেশী নিহত কেন নরেন্দ্র মোদি জবাব চাই!!! স্থল সীমান্ত চুক্তির সফলতা তাহলে এভাবে শুরু হল? বিডিনিউজ২৪ডটকম এক সংবাদে বলছে যে, নওগাঁর সাপাহার সীমান্ত থেকে এক বাংলাদেশি যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যাকে বিএসএফ (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী)'র সদস্যরা ‘গলায় কোপ দিয়ে’ হত্যা করেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। নওগাঁ ১৪ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কলমুডাঙ্গা সীমান্তের ২৩৭ নম্বর পিলারের কাছে এই ঘটনা ঘটেছে।নিহত শহীদুল ইসলাম (২৮) কলমুডাঙ্গা গ্রামের বলদিয়াঘাট এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে। বুধবার রাতে শহীদুলসহ ১০/১২ জন মিলে গরু আনতে সীমান্তের ওপারে গিয়েছিলেন বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছে। নিহতের সঙ্গীদের বরাত দিয়ে বিজিবি কর্মকর্তা রফিকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গরু নিয়ে ফেরার পথে বিএসএফের একটি টহলদল তাদের ধাওয়া করে। অন্যরা পালাতে পারলেও শহীদুল ধরা পড়েন। তার সঙ্গীরা বলছে, বিএসএফ সদস্যরা শহীদুলকে ধরে হাসুয়া দিয়ে গলায় কোপ মারে এবং ওই পিলারের পাশে ফেলে রেখে যায়। পরে বিজিবি সদস্যরা সেখানে গিয়ে শহীদুলের লাশ পায় এবং পুলিশে খবর দেয় বলে রফিকুল হাসান জানান।লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল হাসান বলেন, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বিএসএফের কাছে মৌখিক প্রতিবাদ জানিয়েছি। তবে তাদের দাবি, এ হত্যাকাণ্ড বিএসএফ ঘটায়নি। চোরাকারবারীদের নিজেদের দ্বন্দ্বে এটা ঘটতে পারে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য পতাকা বৈঠক ডেকেছি। স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের প্রধান শর্ত হল সীমান্তে নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে হবে। সীমান্তে যদি বিএসএফ-এর গুলিতে বা হাসুয়ার কোপে বাংলাদেশীদের প্রাণ যেতেই থাকে, তাহলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিস্টার নরেন্দ্র মোদি কি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েই ট্রানজিট বাগিয়ে নিলেন? মিস্টার মোদি ঢাকা থেকে দিল্লী ফেরত গেছেন ৭ জুন। আর মাত্র তিন দিন না যেতেই বিএসএফ তাদের দক্ষতা ও সামর্থ্য জাহির করলো? বাংলাদেশের সরকার বাহাদুর এখন সীমান্তে এই হত্যার কী জবাব দেবে? এমনিতে দেশে হাজার হাজার হত্যা, খুন, গুম নিয়ে সরকার বাহাদুর চুপচাপ নীতি পালন করছেন। চুপেচামে হত্যা-খুন-গুম এসব অবাধে চলছে। দেশের কোথাও নিরাপত্তা নেই। কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী-এমপিদের নিরাপত্তা দিয়ে একটা দেশ চলতে পারে না। আওয়ামী লীগের এক মহিলা সাংসদের ছেলে মদ খেয়ে ট্রাফিক জ্যামে গুলি করে দুই জন গরিব মানুষ মেরে ফেললো। যাদের একজন রিক্সাওয়ালা আরেকজন সিএনজি চালক। কী অপরাধ করেছিল ওই দুই গরিবের পোলা? কই ওই মহিলা এমপি'র পোলার তো এখনো ক্রোসফায়ার হল না। উল্টো অসুস্থ ভান করে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ এড়ানোর কৌশল নিয়েছে ওই মওদুদী যুবরাজ। স্থল সীমান্ত চুক্তির নিরাপত্তার শ্রী যদি এই হয় যে সপ্তাহ না গড়াতেই যথারীতি বিএসএফ আবারো সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা করা শুরু করেছে, তাহলে বুঝতে হবে ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে, তার আড়ালে আসল বিষয় ছিল ওদের ট্রানজিট পাওয়া। বাংলাদেশ আসলে কিছুই পায় নাই। এক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেহারা দেখে আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তার বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় মুখে কুলুপ এটে ছিল। হু ইজ মমতা? বাংলাদেশ বিশ্বের যে কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে আন্তর্জাতিক সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি নিয়ে লড়াই করতে পারা উচিত। ভারতের সঙ্গে তো নদী নিয়ে কোনো ছাড় হতে পারে না। অথচ সরকার বাহাদুর স্থল সীমান্ত চুক্তির দোহাই দিয়ে তিস্তা ও ফেনী নদীর কথা আলোচনায় তুলতেই ভুলে গেল। পানি নিয়ে কথা বলতে গেলে আওয়ামী লীগের ভাসুরের নাম মমতা এসে যায়। তাই এ বিষয়ে নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতেই সরকার বাহাদুর খুশিতে গদগদ।তো এবার সীমান্তে আবার বিএসএফ বাংলাদেশীকে হত্যা করলো কেন? এর জবাব ভারতের চেয়েও আগে দিতে হবে নতজানু ভারতনীতিতে টইটম্বুর বর্তমান সরকার বাহাদুরকেই। মোদি সীমান্তে যে নিরাপত্তার কথা বলে গেলেন, তার নমুনা যদি এই হয়, তাহলে বুঝতে হবে ভারত মূলা দেখিয়ে কাম যা ভাগিয়ে নেবার লিয়ে লিয়েছে গো। সরকার বাহাদুরের উচিত হবে এখন ট্রানজিটের সকল বিষয় স্থগিত করে দেওয়া। সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নিহতের ব্যাপারে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ কোনো ট্রানজিট দিতে পারে না। এমন কি জাহাজ চলাচল ও নৌ চলাচল সহ দুই প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় সকল কানেকটিভিটি বন্ধ ঘোষণা করা হোক। এই বিষয়ে আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তরের ঢিলেমি মানে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বলে আর কিছু থাকলো না। কোথায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পংকজ সরন? তাঁকে কেন এখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রোণালয় ডেকে নিয়ে সীমান্তে এই হত্যার প্রতিবাদ করলো না? নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় ভারতের সঙ্গে একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশ যে দল গঠন করেছে, তা দেখে মনে হয়েছে, পরানের জান বন্ধু ভারতের বিরুদ্ধে ক্রিকেট খেলায়ও কোনো আক্রমন করা উচিত হবে না। নইলে চারজন স্পিনার ও এক পেসার নিয়ে বাংলাদেশ দল গঠিত হয় কোন আক্কেলে? ভারতকে কোনো আক্রমন করা যাবে না, কিন্তু ভারত সময় হলেই মেরে কেটে ভাসিয়ে দেবে, এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। যদি পররাষ্ট্রনীতিতে এতো নতজানু ভারত নীতিই প্রধান বিষয় হবে, তার চেয়ে বরং ঘোষণা দিয়ে ভারতের লগে আমরা একিভূত হয়ে গেলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। তখন বরং আমাদের সুযোগ সুবিধা অনেক বাড়বে। বিনা ভিসায় মুম্বাই-দিল্লী আমরাও দাপিয়ে বেড়াব। নতজানু ভারত নীতির চেয়ে ভারতের প্রদেশ বনে যাওয়া কি ভালো না? সরকার বাহাদুর কী বলতে চায়? আমরা সীমান্তে বিএসএফ-এর বাংলাদেশী হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করছি। পাশাপাশি সরকার বাহাদুরকে এই বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ নেবার অনুরোধ করছি। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বসে বসে আঙুল চুষুক এটা আমরা মানতে চাই না। ধন্যবাদ জানাই ১৪ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল হাসানকে। বিএসএফ-এর কাছে এই হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করুন। ১৬ কোটি বাংলাদেশী আপনাদের সঙ্গে আছে। ..................................১১ জুন ২০১৫ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১
false
fe
ট্রাম্পের রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষ ট্রাম্পের রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষফকির ইলিয়াস=========================================বিশ্বজুড়ে একটিই আলোচনা। ট্রাম্পের শাসনকাল। ট্রাম্পের রাজনীতি। ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ। আমার কাছে একটি বিষয় খুবই জটিল লাগছে। তা হলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কলমের খোঁচায় অনেক কিছুই বাদ দিচ্ছেন কিন্তু তিনি এর যৌক্তিক কোনো রিপলেসমেন্ট দিচ্ছেন না। ধরা যাক আমেরিকানদের মেডিকেল ইনসুরেন্স ‘ওবামাকেয়ার’-এর কথা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ওবামাকেয়ারের বিভিন্ন নিয়ম আইনগতভাবে বাতিলে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। আইনটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করে নির্বাচনী প্রচারণায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা রক্ষা করেছেন ট্রাম্প।ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, আইনপ্রণেতারা ওবামাকেয়ার বাতিল করার আগ পর্যন্ত নির্বাহী বিভাগের সব শাখাকে এ আইনের অর্থনৈতিক বোঝা যতটা সম্ভব লাঘবে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তার মানে এটাই নতুন করে মডিফাই করার কথা বলা হচ্ছে। তাহলে এত ঢামাঢোল কেন? প্রশ্ন করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ওবামাকেয়ার বাতিল করে দিতে চাইলেও এখন পর্যন্ত কংগ্রেসে দু’দলের কেউই এর কোনো উপযুক্ত বিকল্প বের করতে পারেননি। তা হলে হচ্ছেটা কী?ট্রাম্প তার নিজেকে যতটা মহামানব ভাবছেন- আসলে কি তাই? দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিন অফিসে বসেই গণমাধ্যমকে বিষোদগার করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, তার শপথ দেখতে আসা জনসমাগমের আকার নিয়ে মিথ্যাচার করছে গণমাধ্যম। সাংবাদিকদের পৃথিবীর সবচেয়ে অসৎ মানুষ বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। শপথ নেওয়ার পরদিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি’ (সিআইএ)-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন। গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সভার দিকে অতিরিক্ত নজর ছিল সব মহলের। নির্বাচনী প্রচারণায়, এমনকি শপথ নেওয়ার আগেও গোয়েন্দাদের নিয়ে সমালোচনামুখর ছিলেন ট্রাম্প। সভায় উপস্থিত হয়ে শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কী বলবেন, কেমন করে এ সংস্থার সাথে তার সম্পর্ক বৃদ্ধি করবেন এ নিয়ে বক্তব্য আশা করছিলেন সবাই। গোয়েন্দাদের কতটা ভালোবাসেন- এ কথা বলেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বক্তব্য সাংবাদিকদের দিকে ঘুরিয়ে দেন। হাত দিয়ে দেখিয়ে বলেন, সংবাদপত্রের সাথে তার সম্পর্ক বৈরিতার। সাংবাদিকেরা সিআইএ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। ট্রাম্পের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শপথ নেওয়ার দিনের চেয়ে লোকসমাবেশ কম হয়েছে বলে প্রায় সব মার্কিন সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, সাংবাদিকেরা ছবি উঠিয়েছেন কায়দা করে। এমনভাবে ছবি উঠিয়েছেন, যাতে লোকসংখ্যা কম দেখা যায়। নিজের অভিষেকের দিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি লোকের সমাবেশ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অসততার জন্য সাংবাদিকদের মূল্য দিতে হবে বলেও তিনি বলেন।বিশ্বের খ্যাতিমান দৈনিক ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ তাদের অনলাইন সংস্করণে দেয়া তাৎক্ষণিক খবরে বলে দিয়েছে, কোনো সংবাদমাধ্যমের ছবিই প্রেসিডেন্ট বা তার প্রেস সচিবের বক্তব্য সমর্থন করে না। সব ধারণকৃত ছবি পর্যালোচনা করেই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে প্রেসিডেন্ট ওবামার অভিষেকের চেয়ে লোকসমাবেশ এবারে কম হয়েছিল। উপস্থিতি কম হোক আর বেশি হোক, ট্রাম্প সাংবাদিক ও মিডিয়াকে যে হুমকি দিয়েছেন, তা তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি এমন কোনো বিশেষ ব্যক্তিত্ব নন- যে রাজনীতি থেকে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছেন। সাংবাদিকরা এ সূত্রটিকে আগামীতেও কাজে লাগাতে পারেন। শপথ গ্রহণের পরেই একসঙ্গে আশিজন রাষ্ট্রদূতকে বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প, যারা বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সবচেয়ে বেশি আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েছেন ট্রাম্প, ইরাক নিয়ে। তিনি সিআইএ-কে বলেছেন, ইরাক থেকে তেল নেওয়ার ঘটনায় তিনি মোটেও অনুতপ্ত নন। তার মতে, তেল তাদের কাছেই রাখা উচিত। তিনি বলেন, ‘এ থেকে আমরা হয়তো আরো কোনো সুযোগ পেতে পারি।’ কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দু’দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। মেক্সিকো এবং কানাডার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নতুন করে আলোচনার ভিত্তিতে ‘নাফটা’ নিয়ে কাজ শুরু করতে চান তিনি। এদিকে গোটা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে, ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।শপথ নেওয়ার পরদিনই দেশটির একাধিক শহরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন লাখ লাখ মানুষ। নারীদের বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিবাদে প্রথমে ওয়াশিংটনে ওই বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা থাকলেও, পরে দেশটির আরো অনেক শহরে তা ছড়িয়ে পড়ে। মেক্সিকো সিটি, প্যারিস, বার্লিন, লন্ডন আর সিডনিতেও বিক্ষোভ হয়েছে। নারী অধিকার কর্মীদের আশংকা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে তাদের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্বজুড়ে অন্তত ছয় শতাধিক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয়েছে ওয়াশিংটনে। সেখানে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন। সমাবেশে মার্কিন সংগীতশিল্পী ম্যাডোনা বলেছেন, ‘এ দিন আমাদের জীবন শুরু করার দিন। বিপ্লব এখান থেকেই শুরু হচ্ছে। এটা আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের পরিচয়, আমাদের সম অধিকারের লড়াই। এ অন্ধকারের বিরুদ্ধে চলুন সবাই একসঙ্গে লড়াই করে জানিয়ে দিই যে আমরা ভীত নই, আমরা একা নই এবং আমরা পেছনে ফিরবো না।’প্রশ্ন উঠছে, যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে কি তাহলে গভীর বিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছে? ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড কি ভীতির কারণ হবে সাধারণ মানুষের জন্য? তার রাষ্ট্রীয় নীতি, তার বিশ্ব-রাজনীতি কার পক্ষে যাচ্ছে? কার বিপক্ষে যাচ্ছে?আর এর জবাবে এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প লিখেছেন, এ সব মানুষ ভোটের সময় কোথায় ছিল!নির্বাহী আদেশে আরেকটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন প্রেসিডেন্ট। ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। এ-সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের মাধ্যমে তা করেছেন ট্রাম্প। ১২ দেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী বাণিজ্য চুক্তি ছিল টিপিপি। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এশিয়া-নীতির ভিত্তিতে এ চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের পর ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যা করলাম, তা আমেরিকান কর্মজীবীদের জন্য বিশাল ব্যাপার।’অবশ্য টিপিপি চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্বাহী আদেশে ট্রাম্পের স্বাক্ষর করা প্রতীকী বিষয়। কারণ চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে অনুমোদিত হয়নি। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে জোরালো অবস্থান থাকলেও ওবামার আমলে তা কংগ্রেসে পাশ হয়নি।প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ‘এ চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্ভাব্য বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে ধ্বংস করবে। চুক্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ট্রাম্প বাম ও ডানপন্থীদের একটি অংশের বাহবা পেয়েছিলেন।টিপিপি ছিল একটি বাণিজ্য চুক্তি। বিশ্বের ৪০ শতাংশ অর্থনৈতিক অঞ্চল এর আওতাভুক্ত। ২০১৫ সালে চুক্তির বিষয়ে সদস্য ১২ দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়। দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, চিলি, পেরু, ভিয়েতনাম ও মেক্সিকো। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করা ও প্রবৃদ্ধি বাড়ানো ছিল এই চুক্তির লক্ষ্য। শুল্ক কমিয়ে বাণিজ্য বাড়ানোও তাদের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে।শ্রম ও পরিবেশ আইন বাস্তবায়ন, কপিরাইট সংরক্ষণ, প্যাটেন্ট ও অন্যান্য আইনি বিষয়ে সুরক্ষা দেওয়া এ চুক্তির উদ্দেশ্য। চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী স্বার্থের সমর্থন ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্ক রেখে এর মতো আরেকটি একক বাজার সৃষ্টির প্রয়াস ছিল এ চুক্তিতে। সমালোচকরা আগেই বলেছিলেন, এটা এমন কোনো দরকারি বিষয় নয়, যা দিয়ে চীনকে ঘায়েল করা সম্ভব হবে। অবশ্য এ চুক্তিতে চীন অংশ নেয়নি। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের পর, বদলে যাচ্ছে টিপিপির দৃশ্যপট। ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গেলেও অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এ বিষয়ে বেশ আশাবাদী। বিশাল বাণিজ্যের এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরিয়ে নিয়ে গেলেও চীন ও এশিয়ার অন্যান্য দেশকে টিপিপিতে নতুন করে যুক্ত করতে উৎসাহিত করবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেছেন, কীভাবে এ চুক্তিকে বাঁচিয়ে রাখা যায়; সে বিষয়ে তার সরকার জাপান, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য সদস্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে টিপিপির। এছাড়া টিপিপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে চীনের। ট্রাম্পের এ ঘোষণায়, টিপিপি অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো শঙ্কিত হলেও লাভবান হয়েছে বাংলাদেশ। টিপিপি চুক্তি হওয়াতে আমেরিকায় পোশাক বাজার হারানোর একটি শঙ্কা ছিল বাংলাদেশের। এমনকি ওয়াশিংটনে টিকফা বৈঠকে এ ব্যাপারে শঙ্কার কথাও জানিয়েছিল বাংলাদেশ।টিপিপি চুক্তি অনুযায়ী ভিয়েতনাম আমেরিকার বাজারে কোনো শুল্ক ছাড়াই পোশাক রপ্তানি করতে পারবে। কারণ, ভিয়েতনাম টিপিপি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত দেশ। সেই জায়গায় বাংলাদেশকে রপ্তানির জন্য প্রায় ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। কিন্তু এখন চুক্তি বাতিল হওয়ায় আমেরিকার কাছে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশই আবার প্রথম পছন্দ হবে। এমনটাই ধারণা করছে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প যে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর কথা বলছেন, তা কতটুকু তিনি বাস্তবায়িত করতে পারবেন? বার্কলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার এক হিসাব অনুযায়ী, গত আট বছরে ১ শতাংশ পরিবার এই সময়ে অর্জিত সব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ৫২ শতাংশের সুফল করায়ত্ত করেছে। ২০০৮-এর মন্দার কারণে বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষ যে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন, এত দিনে তার দুই-তৃতীয়াংশের কম তা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছেন। সে মন্দার ঝড়ে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় এক কোটি মানুষ বসতবাড়ির মালিকানা হারান। এমনকি ২০১৫ সালেও ১১ লাখ পরিবারের ঋণের কারণে বসতবাড়ি নিলামের মুখে ছিল।বিশ্বব্যাংকের সাবেক পরিচালক এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ মনে করেন, যদি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, ট্রাম্প জিতেও যেতে পারেন! কারণ, রপ্তানির জন্য চীন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর যতটা নির্ভরশীল, অন্য কারো ওপর ততটা নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। কিন্তু বাণিজ্যযুদ্ধে একজন যতটা জেতে, আরেকজন ততটা হারে না। এতে যুক্তরাষ্ট্রেরও হারানোর আশঙ্কা আছে। চীন হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে রাজনৈতিক আঘাত করার প্রতিশোধমূলক নীতিতে অধিক কার্যকর হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা প্রতিদিনই দেখছি- চীনে তৈরি দ্রব্য সামগ্রীর নতুন নতুন আইটেম এসে দখল করছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার।ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার অর্থমন্ত্রী হিসেবে স্টিভেন মিউচিন-এর স্পষ্ট অগ্রাধিকারগুলোর একটি হচ্ছে- যে সব প্রতিষ্ঠানের বিদেশে বিনিয়োগ রয়েছে তাদের ওপর থেকে ট্যাক্স কমিয়ে আনা। উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর ফলে যেন তারা নিজেদের মুনাফা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে পারে। দৃশ্যত, এর মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টিতে সেখানে বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু কর্পোরেশনগুলো ইতোমধ্যে তাদের বিনিয়োগকারীদের বলেছে, নিজেদের অভাবনীয় মুনাফাকে তারা লভ্যাংশ বাড়ানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। আরও মার্কিন নাগরিকদের চাকরি দিতে তারা আগ্রহী নয়।কোন দিকে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? কী হতে পারে আগামী দিনগুলোর অর্থনীতি ও বাণিজ্যনীতি? এ প্রসঙ্গে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ বলছেন, ‘ট্রাম্প উন্নত মানের অবকাঠামো নির্মাণ, প্রতিরক্ষা খাতে উচ্চ শুল্কছাড় এবং উচ্চমাত্রায় বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাকে জাদুবিদ্যার অর্থনীতিই বলতে হবে।’ স্টিগলিৎজের মতে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট রিগ্যান আমলের পশ্চাৎপদ অর্থনীতিকেই ঊর্ধ্বে তুলে ধরছেন। তবে ট্রাম্প তার অর্থনীতিতে আরো দুটি মারাত্মক অস্ত্র যুক্ত করেছেন- চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ এবং লাখো মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ছিনিয়ে নেওয়া। স্টিগলিৎজের দাবি- ট্রাম্প যে ক্ষুব্ধ মার্কিনিদের ভোটে জয়ী হয়েছেন, তারাও তার ওই আগ্রাসী অর্থনীতির শিকার হবেন।না- ট্রাম্প পপুলার ভোটে জিততে পারেননি। কিন্তু তাতে কী! তিনি যদি ইমপিচমেন্টের শিকার না হন- তাহলে চার বছরই ক্ষমতায় থাকছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ স্বার্থ রক্ষার নামে তিনি অন্তত অস্ত্রযুদ্ধে জড়াবেন না, তার পক্ষের মানুষরাও সেটাই চাইছেন।-------------------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ সোমবার সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫১
false
mk
গণতন্ত্র বনাম বিপর্যস্ত অর্থনীতি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির ১৩ দিন অতিবাহিত হচ্ছে আজ। এর সঙ্গে আবার প্রতিদিনই দেশের কোনো কোনো জেলায় হরতাল ডাকছে বিএনপি ও তার জোট শরিকরা। আর এই ১৩ দিনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষিপণ্য পরিবহন, পর্যটন, শিল্প-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, ব্যাংকিং, ক্ষুদ্র ব্যবসা, গার্মেন্ট এবং রেমিটেন্স খাত। সব মিলিয়ে প্রতিদিনই আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা। কৃষিপণ্য উৎপাদন করলেও সেগুলো সময়মতো বাজারজাত করতে না পারায় ক্ষতি গুনতে হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের প্রান্তিক কৃষককে। সার ব্যবসায়ীরাও প্রতিদিন লোকসান গুনছেন ১০ লাখ টাকা। লাগাতার অবরোধে পর্যটন খাতে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। গত ১৩ দিনে এ খাতে কয়েক হাজার পর্যটকের ভ্রমণ বাতিল করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে ভরা মৌসুমে পর্যটন শহরগুলোতে হোটেল ব্যবসায় ধস নেমেছে। ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন খাতে লোকসান হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় বিপর্যয়ের কারণে প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। ক্ষতি হচ্ছে শিল্প ও বাণিজ্য খাতেও। উৎপাদন কমে গেছে শিল্প-কারখানায়। কমে গেছে আমদানি-রপ্তানি। বড় ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। গার্মেন্ট শিল্পেও পড়েছে অবরোধের বিরূপ প্রভাব; প্রতিদিন এ খাতে ক্ষতি ৭০০ কোটি টাকা। হুমকির মুখে রেমিটেন্স খাতও।কৃষক ও কৃষিএখন সবজির ভরা মৌসুম। দেশে শীতকালেই সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হয়। প্রান্তিক কৃষকরা বোরো ও আমনের পর সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেন সবজি উৎপাদন ও বিক্রিতে। এখান থেকে বড় ধরনের আয়ও হয় কৃষকের। কিন্তু উৎপাদিত সবজি তারা ১৩ দিন ধরে বাজারজাত করতে পারছেন না। ৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রতিদিনই কৃষককে চোখের পানি ফেলতে হচ্ছে। কারণ তারা সবজি বিক্রি করতে পারছেন না। সবজির বড় মার্কেট রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলো। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন যেখানে অর্ধলক্ষাধিক ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান সারা দেশে পণ্য পরিবহন করে, সেখানে এখন প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে কিছু ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল করছে। ভাড়াও বেশি নিচ্ছে। এতে পণ্য পরিবহন বিশেষ করে কাঁচামাল পরিবহন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এফবিসিসিআইর তথ্য অনুযায়ী এ খাতে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ২৮৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত ১৩ দিনে এ খাতে ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।কৃষির অন্যতম উপকরণ সার পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। চলমান অস্থিরতা চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই সারা দেশে সারের সংকট দেখা দিতে পারে। তখন কৃষি উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরুল আশরাফ খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ মুহূর্তে কোথাও সারের সংকট নেই। মাঠ পর্যায়ে ডিলারদের কাছে যে মজুদ আছে তা দিয়েই কাজ চলছে। কিন্তু মজুদ শেষ হয়ে গেলে সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করবে। তিনি জানান, বন্দর থেকে সার গুদামজাত করতে না পারা এবং বিভিন্ন ডিলারের কাছে পৌঁছাতে না পারার কারণে প্রতিদিন তাদের ১০ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। ব্যাংকের সুদ গুনতে হচ্ছে। এর প্রভাব কৃষকের ওপর পড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। পর্যটন : দেশের পর্যটনের ভরা মৌসুম হচ্ছে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত। এ সময়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি, কুয়াকাটা, সিলেট, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, সুন্দরবন, হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ, মনপুরা ইত্যাদি এলাকা ভ্রমণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে এ খাতে এক রকম সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। পর্যটনশিল্পে জড়িতরা বলছেন, গত কয়েক দিনে তাদের ক্ষতির পরিমাণ সব মিলিয়ে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আর এ অবস্থা আরও কিছু দিন চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে বাড়ি যেতে হবে। বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে প্রায় ছয় লাখ বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। আর অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা বছরে প্রায় ১৫ লাখ। কিন্তু গত ১৩ দিনের অবরোধের কারণে ইতিমধ্যে বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ বাতিল করেছে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠান। রিভার অ্যান্ড গ্রিন ট্যুরস পরিচালক ও বাংলাদেশ ডেভলপার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, শুধু তার প্রতিষ্ঠান থেকে গত ১৩ দিনে এক হাজারেরও বেশি পর্যটকের ভ্রমণ বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, কক্সবাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০০ হোটেল আছে। যার সবই এখন পর্যটকশূন্য। একইভাবে সেন্টমার্টিন, স্টেট ওয়ে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের পরিচালক ও সিলেট, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, শ্রীমঙ্গল, সুন্দরবন ও কুয়াকাটার হোটেলগুলোও পর্যটনশূন্য। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) প্রথম সভাপতি এবং স্টেটওয়ে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের পরিচালক মো. রাফিউজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশিরা ইতিমধ্যে তাদের বাংলাদেশ ভ্রমণ বাতিল করেছেন। পর্যটক আসে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। তিনি জানান, এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ট্যুরিজমে। দেশি পর্যটকের সংখ্যা প্রতি বছর কমবেশি ১৫ লাখ। কিন্তু এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ও অস্থিরতার কারণে ট্যুরিস্টরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। অথচ ২০১২ সালে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটন খাতের অবদান ছিল ২ দশমিক ১০ শতাংশ। আর আগামী এক দশকে পর্যটন খাতে যে ১২টি দেশ দীর্ঘ মেয়াদে প্রবৃদ্ধি অর্জন করার কথা তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।পরিবহন : একদিন হরতাল বা অবরোধ হলেই পরিবহন খাতে বিশেষ করে বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ থাকলে গড়ে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হন পরিবহন মালিকরা। সারা দেশে প্রায় সোয়া লাখ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ৬০ হাজারের বেশি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে। অবরোধের কারণে এ সংখ্যা কমে এসেছে অস্বাভাবিকভাবে। এতে আয় কমে গেছে। বেড়েছে ব্যয়ের পরিমাণ। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরতাল-অবরোধের কারণে এ খাতে পরিবহন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, ব্যাংকের সুদ আর ঝুঁকি নিয়ে চলাচলকারী গাড়ি পুড়ে যাওয়ার কারণে সব মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত কয়েক দিনে ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। আর ভাঙচুর হয়েছে তিন শতাধিক। একইভাবে যাত্রী পরিবহন বা বাস পুড়েছে ২৫ থেকে ৩০টি। আর ভাঙচুরও হয়েছে প্রায় অর্ধশত। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী : টানা অবরোধ-হরতালের কারণে পথে বসার উপক্রম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ফুটপাতে ব্যবসা করেন তারা দোকান খুলতে না পারায় প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। এফবিসিসিআই মনে করে, একদিনের হরতালে ফুটপাতের দোকান ও পাইকারি বাজার, শপিং মল, শোরুমের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এ কাদের কিরণ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশে তাদের সমিতিভুক্ত ২৫ লাখ ব্যবসায়ী। হরতাল-অবরোধে বেশির ভাগ দোকান খোলা থাকলেও কোনো বিক্রি হয় না। এসব দোকানের গড় বিক্রি ১২ হাজার টাকা ধরলে ২৫ লাখ দোকানের বিক্রি দাঁড়ায় ৩০০ কোটি টাকা। আর এসব দোকান পরিচালনায় ও ব্যাংক ঋণের সুদ হার বাবদ খরচ হয় প্রতিদিন ১৫০ কোটি টাকা। এর পুরোটাই পকেট থেকে গচ্চা দিতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন ৫৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি প্রধান দুই দলকে নমনীয় হয়ে আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া দোকান মালিক সমিতির নিবন্ধনের বাইরে যারা ফুটপাতে ব্যবসা করেন তাদের সংখ্যাও কম নয়। প্রতিদিন তাদের ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।ব্যাংক ও আর্থিক খাত : ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রেমিটেন্স আহরণেও প্রভাব পড়ছে ব্যাংকগুলোর। চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছে ৪০ কোটি ডলার। আর ডিসেম্বর মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১২৬ কোটি ডলার। সে হিসাবে ডিসেম্বরের অর্ধেক সময়ে রেমিটেন্স আসে ৬৩ কোটি ডলার। যা জানুয়ারি মাসের একই সময়ের তুলনায় ২৩ কোটি ডলার কম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে গ্রাহকরা সময়মতো কাজ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানিসহ সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।তৈরি পোশাকশিল্প : তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্যমতে, এক দিনের হরতালে শুধু এ খাতের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় কমপক্ষে ১০৮ কোটি টাকা। হরতালের কারণে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে পোশাক খাতের ক্ষতি হয়েছে ৮০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। শুধু ১৯৯৯ সালেই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতি বছরে ক্ষতি হয়েছে ৮ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। বর্তমান সময়ে হরতালে প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০০০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।বিজিএমইএর তথ্যমতে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা টাকার অংকে প্রায় ২ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে এক দিন অবরোধ-হরতাল থাকলে ৬৯৫ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। আর প্রতিদিন এই শিল্পে প্রকৃত উৎপাদনের মূল্যমান হচ্ছে প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা। যদি উৎপাদন ৫০ শতাংশও বিঘ্নিত হয়, তাহলে প্রতিদিন উৎপাদন ব্যাহত হয় অন্তত ২১৫ কোটি টাকার। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মান্নান কচি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত দুই সপ্তাহের অবরোধে পোশাক খাতে ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে গেছে। হরতাল-অবরোধের নামে রাজনৈতিক সহিংসতা ও নাশকতায় পোশাকশিল্পে ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। ২০১৪ সালে পোশাকশিল্প যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তখন ২০১৫ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা আবার এ খাতে আঘাত করছে। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে পণ্য পরিবহন তো দূরের কথা, পণ্যের নিরাপত্তাও নেই। আমরা ব্যবসা করতে পারছি না। ক্রেতারা বিকল্প রপ্তানিকারক দেশ খুঁজছে।আমদানি-রপ্তানি : লাগাতার অবরোধে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করতে না পারায় চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরসহ দেশের সব স্থলবন্দরে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নিরাপত্তাহীনতার কারণে সময়মতো আমদানি-রপ্তানির এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, অবরোধ-হরতালের কারণে গত দুই সপ্তাহে ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলার হার প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। বন্দরে আটকে আছে শত শত পণ্যবাহী জাহাজ। স্থলবন্দরগুলোতে কনটেইনারের জট বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এতে জাহাজ ও কনটেইনারের জট সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক সময়ে পণ্য খালাস না হওয়ায় অতিরিক্ত চার্জ গুনতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।রপ্তানিকারক ৩০টি সংগঠনের জোট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রপ্তানিকারকদের চাপাকান্না কেউ দেখছে না। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। তার মতে, ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ দিতে না পারায় ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যা সামগ্রিক রপ্তানি খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, গত দুই সপ্তাহের হরতাল ও লাগাতার অবরোধের কারণে প্লাস্টিক শিল্পে ২৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।শিল্প-কারখানা : উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের মতে, টানা অবরোধে দেশের শিল্প-কারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বস্ত্রশিল্প থেকে সিমেন্ট শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা থেকে ওষুধ কারখানা সব ধরনের শিল্প-কারখানাতেই রাজনৈতিক অচলাবস্থার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পরিচালনা খরচও বেড়ে গেছে। এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ড্রাস্টিজের (বিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, অবরোধের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে আমাদের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়। ট্রাকে মাল আনা-নেওয়া করা যাচ্ছে না। আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে, পেট্রলবোমা ছুড়ছে। বেশি খরচ দিয়েও পরিবহন পাওয়া যায় না। আবার বিদেশি ক্রেতাদের কাছেও ভুল বার্তা যাচ্ছে। এদিকে ব্যাংক ঋণে গড়ে তোলা শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারায় কেবল বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা-ই নয়, বাড়ছে ঋণের বোঝা।এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হরতাল-অবরোধে দেশের সামগ্রিক শিল্প-কারখানার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমদানিকৃত কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল বেশির ভাগ কারখানার চাকা ঘুরছে না প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে। আবার দেশে উৎপাদিত পণ্যও বৈদেশিক বা অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ করা যাচ্ছে না পরিবহন বন্ধ থাকায়। এর ফলে উভয় সংকটে পড়েছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। উপরন্তু রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে বিনিয়োগ ঝুঁকি বাড়ায় শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ।শিক্ষাব্যবস্থা : টানা অবরোধে ভেঙে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা শিক্ষার্থীদের। নতুন বই পাওয়ার পরে স্কুলে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। স্কুলে যাওয়ার পথে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আহত হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে পরীক্ষার্থীরা। দেশজুড়ে বই উৎসবের আয়োজন হলেও অনেকে নিতে পারেনি বই। মধ্যরাতে রাত জেগে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে এ লেভেল এবং ও লেভেল শিক্ষার্থীদের। এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সিনিয়র রিপোর্টার নিজামুল হক বিপুল, রুকনুজ্জামান অঞ্জন, মানিক মুনতাসির ও রুহুল আমিন রাসেল
false
ij
গল্প_ স্বপ্নের নদীর পাড়ে শারমিনের মনের মধ্যে একটা সেলেট আছে । হয়তো প্রতিটি মেয়ের মনের ভিতরেই একটা করে সেলেট থাকে। মনের ভিতরকার ওই অদৃশ্য সেলেটে কতকালের কত যে আঁকিবুকি; ওসব আঁকিবুকি এখন মোছা দরকার-অথচ মুছতে পারছে না শারমিন! বাঁচার স্বার্থেই মোছা দরকার । নাজনীনও আজকাল সেই কথাই বলে। বলে-বাচ্চাটার কথা একবার ভাব মলি। ওরও তো বাবার আদর দরকার। আর জায়েদের মত ছেলে হয় না। বাচ্চা মানে শারমিনের পাঁচ বছরের মেয়ে শান্তা। আর জায়েদ মানে নাজনীনের বর আশরাফের জার্মান ফেরৎ অধ্যাপক বন্ধু । আশরাফও ও তাই বলে। বলে, জায়েদের মত ছেলে হয় না। বয়সটাই যা একটু বেশি। কতই আর। এই ধর বিয়াল্লিশ-তেতাল্লিশ। কথাটা শুনে নাজনীন বলে- সো হোয়াট রাফি? মলিরও তো পয়ত্রিশ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। (নাজনীন শারমিনকে কী এক কারণে মলি বলে ডাকে। ) নাজনীনের বর আশরাফ আছে অক্সফামে;- উচুঁ দরের চাকুরে সে। জায়েদের সঙ্গে ইকোনমিক্সে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে; পাশ করে জার্মানির হাইডেলবার্গ চলে যায় জায়েদ। থিসিস শেষ করে জয়েন করে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে । ছাত্র পড়িয়ে, বই লিখে দিনগুলি কাটছিল তার। বিয়ে করেনি। দেশে ফিরবে না একরকম ঠিকই ছিল । ফিরল-গভীর এক রহস্যের অনুসন্ধানে... নাজনীনও ‘মানবী’ নামে একটা নারীবিষয়ক শীর্ষস্থানীয় এনজিও তে আছে। জাষ্টিস নজরুল ইসলামের একমাত্র মেয়ে নাজনীন। ইকোনমিক্স মেজর নিয়ে পড়াশোনা করেছে অস্ট্রেলিয়ায়। নাজনীনের দুই মেয়ে। মেহেরিন ও বুশরা। ওরা জায়েদ আঙ্কেলকে দেখে আর সেই সঙ্গে নানারকম গিফট পেয়ে দারুন খুশি। সারাক্ষণই ‘আঙ্কেল’, ‘আঙ্কেল’ করছে। নাজনীনও খুশি। আসলে বিয়ের পর থেকেই আশরাফের মুখে জায়েদের কথা শুনে আসছে নাজনীন । বিয়ের পর ইউরোপের ক’টা দেশে বেড়ালেও- যাই যাই করেও কখনও জার্মানি যাওয়া হয়নি। শেষমেশ, গতবছর সবাই মিলে গেল জায়েদের ওখানে হাইডেলবার্গ। কত কত জায়গায় যে বেড়াতে নিয়ে গেল জায়েদ। আগে থেকেই নাজনীন জানত হাইডেলবার্গ বিখ্যাত জায়গা- ওখানেই ইউরোপের সবচে পুরনো মানুষের চোয়ালের হাড় পাওয়া গিয়েছিল। ৫ম শতাব্দীর কেল্টিক দূর্গটা দেখল ঝিরঝির বৃষ্টির দিনে। টাউন স্কোয়ারের ক্যাসলটা দেখার দিন অবশ্য ঝলমলে রোদ ছিল। তাছাড়া চার্চ অভ দ্য হোলি গোস্ট, সেন্ট পির্টাস চার্চ আর প্রোভাইডেন্স চার্চটাও ঘুরে ঘুরে দেখল। তবে বুশরা আর মেহেরিনের সবচে ভালো লাগল নেককার নদীর ধারে পিকনিক। জায়েদ বলল, এই নদীর উত্তর ধারেই জার্মান দার্শনিকরা হাঁটতেন। এই কারনে জায়গাটার নাম দার্শনিকের পথ। জায়েদই বলেছিল: হাইডেলবার্গ শব্দের অর্থ : সাধুদের পাহাড়। নাজনীনের ভাই নেই-জায়েদের সঙ্গে ও ভাইবোন সম্পর্ক পাতিয়েছে। সেই ভাই এবার বেড়াতে এসেছে। নাজনীন তুলা রাশি- গ্রেইট এন্টারটেনার। প্রিয় অতিথিকে কাছে পেয়ে কত কী যে রাঁধছে। অফিসে ছুটি পাওনা ছিল। ছুটি নিয়েছে। হাইডেলবার্গে গতবছর বেড়াতে যাবার পর জায়েদ ওদের জন্য অনেক করেছে। জায়েদকে এবার যত্ন করে খাইয়ে শোধ করে নেবে। কী মনে করে শারমিন আর শান্তার ছবিটা জায়েদকে দেখিয়েছিল নাজনীন। তখনই চার বছরের শান্তার ছবিটা দেখেছিল জায়েদ। ফুটফুটে শিশুর মুখটা মনে গেঁথে গিয়ে থাকবে ...নৈলে বাচ্চাটাকে কেন স্বপ্নে দেখবে...শান্তা তাকে ডাকবে? মৃত মা তো আজও ডাকে। মৃতা মা। এককালে জায়েদুল আলম মিলনের বাড়ি ছিল সাতকানিয়া। ছোটবেলাতেই মা-বাবাকে হারিয়েছিল। চাচার বাড়ি কষ্টেসৃষ্টে মানুষ। তারপর চাচাও মারা গেলে লজিং আর হোস্টেলে থেকে কোনওমতে ইন্টার পাস করেছে। মেধাবী ছাত্র বলেই টিকে গেছে । ঢাকা শহর অবধি এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকার গ্যেয়টে ইনস্টিটিউট থেকে জার্মান ভাষাটা শিখেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একমাত্র আশরাফকেই পছন্দ করত জায়েদ। একই হলে থাকত দুজন। আশরাফ যশোরের ছেলে। তারপর তো স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানির উদ্দেশে দেশ ছাড়ল জায়েদ। ২ জায়েদ ঢাকা আসতেই নাজনীনের মাথায় বিদ্যুৎ চমকের মতো আইডিয়াটা এল। সারা জীবন শারমিন একা থাকবে নাকি। জীবন এত বড়। না হয় শারমিন বিধবা। কেন, বিধবাদের কি বিয়ে হয় না? নাজনীনের কলিগ শারমিন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পাস করার পর ‘মানবী’-তে চাকরিটা হয় শারমিনের। শারমিন কিছুটা গোটানো স্বভাবের। যে কারণে নাজনীনের সঙ্গে শারমিনের সম্পর্কটা প্রথম প্রথম আড়ষ্ঠই ছিল। পরে সম্পর্ক অনেকটা সহজ হয়ে যায়। কথাবার্তায় নাজনীন প্রচন্ড আন্তরিক আর খোলামেলা; অসাধারন প্রাণশক্তি তার। শান্তা তখন শারমিনের পেটে; তখন শারমিনকে কত যে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে নাজনীন । শারমিনের বর হাসান ছিল সরকারি প্রকৌশল দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার। বছর দুয়েক আগে -শান্তার বয়স তখন তিন- বান্দরবানের রুমায় একটা কালভার্টের কাজ চলছিল ... তখনই কে বা কারা খুন করে হাসানের লাশ একটা ঝর্নার ধারে ফেলে রাখে - খুনিদের এখনও ট্রেস করা যায়নি। ...শারমিন বিধবা। কেন, বিধবাদের কি বিয়ে হয় না? শারমিনকে ফোন করে উত্তরায় আসতে বলে নাজনীন । এ এমন নতুন কিছু না। প্রায়ই নাজনীনদের উত্তরার বাড়িতে মেয়েসহ এসে বেড়িয়ে যায় শারমিন। হাসানের মৃত্যুর পর বাংলামোটরে বাপের বাড়িতে উঠেছে। ও বাড়িতে নানান ঝামেলা-তিন ভাইয়ের শরিকি। তবে বেতন ভালো বলে এখনও টিকে আছে। শান্তাকে প্লেগ্র“পে ভরতি করে দিয়েছে। কী রকম গুটিয়ে থাকা মেয়ে। কারও সঙ্গে ঠিক মেশে না। কারও কোলে যায় না। শান্তাকে দেখে জায়েদ চমকে উঠেছিল। তার রিঅ্যাকশন শারমিন ছাড়া অন্যরা লক্ষ করেনি। ধীরে ধীরে শান্তার প্রতি কৌতূহলী হয়ে উঠতে থাকে জায়েদ। শান্তাকে কোলে টেনে নেয় জায়েদ। ভীষন আদর করে । ওর ভিতরের ঘুমিয়ে থাকা চিরকালীন পিতৃ আবেগ জেগে উঠতে থাকে। সে অবাক হয়। আসলে আমি এইরকম কিউট একটি মেয়েশিশুর বাবা হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, ঐ স্বপ্নটা? শান্তাও জায়েদকে দেখে এত খুশি। কী আশ্চর্য! শারমিন অবাক হয়ে যায়। শান্তা তো সহজে যায় না কারও কাছে। আশরাফ ভাইয়ের বন্ধুর কাছে কী পেল! জায়েদকে দেখে শারমিনও স্থির আর গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল । জায়েদের প্রথমেই চোখে পড়ে স্বাস্থ্য। মেদহীন টানটান শরীর। পেশল বাহু। শারমিন মুগ্ধ হয়ে দেখে। লম্বা ফরসা একটা শরীর। হালকা বাদামী পাতলা চুল মাথায়-চোখে গোল্ডরিমের চশমা। হাতে সিগারেট। হাসানও সিগারেট খেতে খুব। বুয়েটে থাকতেই খাওয়ার অভ্যাস। মনের ভিতরের সেলেটে এসব লিখা থাকে। মোছা কি যায়? শারমিন ঠিকই টের পেয়েছে নাজনীনের উদ্দেশ্য। এমন কী গত বছর ছবি দেখানোটাও আঁচ করেছে। আর যাকে হোক-নাজনীনকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। কিন্তু হাসান? সকাল বেলায় আশরাফ অফিসে চলে যায়। নাজনীনের মেয়েরাও স্কুলে চলে যায়। নাজনীন রান্না নিয়ে বসে। কখনও গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায়- পি কিউ এস কি আগোরা। সঙ্গে শারমিনও থাকে। (শান্তা মনের আনন্দে থাকে জায়েদের কাছে) শারমিনের রান্না চমৎকার। সিম আর আলু দিয়ে শুঁটকিমাছ রাঁধে। শারমিন শুনেছে জায়েদ চট্টগ্রামের ছেলে আর লইটক্যা শুঁটকি পছন্দ করে। হাসানরাও রাউজানের ...তো ...এভাবেই উত্তরায় নাজনীনদের বাড়িটা পুরোটাই লাল রঙের সিরামিক ইটের। দোতলায় বেশ বড় টানা বারান্দা । ওখানেই একটা ডিভানে সারাদিন শুয়ে-বসে থাকে জায়েদ। কাপের পর কাপ দুধ-চা খায় আর সিগারেট টানে। এদিকটা এত নির্জন। নীচে ঘন বাগান। ঘাসের গন্ধ পাওয়া যায়। তারপর নারকেল গাছের সারি। দেওয়াল। দেওয়ালের ওপারে মাঠ আর গ্রাম দেখা যায়। বাংলাদেশ একইরকম। সাতকানিয়ার কথা মনে পড়ে। সাতকানিয়াও এমনই মাঠ ছিল। মাঠ আর গ্রাম। এক ফাঁকে নাজনীন (সম্ভবত রান্নাঘর থেকে এসে) মুখোমুখি বেতের চেয়ারে বসে বলল, উহ্, মার্চেই এত গরম। জায়েদ হাসল। ডেইলি স্টারে চোখ বোলাচ্ছিল । সরিয়ে রাখল পেপারটা। হাসল। নাজনীন এবার জায়েদকে জিজ্ঞেস করল, আর কতকাল একা থাকবেন ভাইয়া? জায়েদ সেটাই তো ভাবছি। নাজনীন নাঃ। প্লিজ, এবার সিরিয়াস হন। জায়েদ হলাম। নাজনীন এবার শোনেন আমি কী বলি। জায়েদ বলো। (জায়েদ জানে নাজনীন কি বলবে) নাজনীন শারমিনকে তো দেখলেন। জায়েদ হু। নাজনীন কী ভাবছেন? জায়েদ ভাবছি। ভেরি স্যাড। নাজনীন হ্যাঁ। স্যাড। ওর বরটা এভাবে মরে গেল। আমরা ইচ্ছে করলে ওর স্যাডনেসটা কাটিয়ে দিতে পারি। জায়েদ হুঁ। নাজনীন যা করার জলদি করেন। জায়েদ এসব কী চটজলদি হয়? নাজনীন আমার মুখের দিকে তাকান অন্তত। জায়েদ (সামান্য বিস্মিত হয়ে) কী বলতে চাও। নাজনীন আপনার সঙ্গে না আমি ভাই পাতিয়েছি। জায়েদ তো? নাজনীন আপনার কাছে কী লুকাব। আমার বর, মানে আপনার বন্ধু শারমিনকে পছন্দ করতে শুরু করেছে ; মলিরও তৃষ্ণা আছে। আমি আর কত চোখে চোখে রাখব। ওদের কিছু হয়ে গেলে ব্যাপারটা আমার জন্য ইনসালটিং হয়ে উঠবে না? জায়েদ (ভীষন গম্ভীর হয়ে) ওহ্। নাজনীন তাই বলছিলাম-আপনি ... আপনি মলিকে বিয়ে করলে আমার বিপদ কাটে। ভাইয়া প্লিজ। জায়েদ (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আমি তোমাকে জানাব। আসলে সব ঠিকই আছে। আমাদের বিয়ে হতেও পারে। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয় তোমার বান্ধবী ওর ডেড হাজব্যান্ডকে এখনও ভুলতে পারেনি। এখানেই আমার অস্বস্তি। প্রবল অস্বস্তি। তুমি সফিসটিকেটেড। তুমি বুঝবে নাজনীন। নাজনীন (সামান্য ভেবে) ও। আচ্ছা। এবার বুঝেছি। জায়েদ আমি এখানেই আটকে গেছি।যে কেউই শারমিনের মুখ দেখে বুঝবে ওর শোক কাটেনি। হয়তো ব্যাপারটা কিছুই না। এরকম কত হচ্ছে। কিন্ত আমার কাছে অনেক কিছু। আমি চাই না আমাকে কেউ রেপিষ্ট বলুক। নাজনীন ওহ! বুঝতে পারছি। আমি জানি আপনার মন সেনসেটিভ। (সামান্য ভেবে) ঠিক আছে। আমি আপনাদের সুন্দর একটা দেশে নিয়ে যাব। তখন দেখবেন আপনার মনের সব অস্বস্তি কেটে গেছে। জায়েদ (খানিকটা বিস্মিত হয়ে) সুন্দর একটা দেশে মানে? নাজনীন মানে পরে বুঝবেন। (মুখ টিপে হেসে বলল) বলে নাজনীন উঠে চলে যায়। বারান্দায় একটু পর গুটি গুটি পায়ে শান্তা আসে। জায়েদ ওকে কোলে টেনে নেয়। ওর ভালো লাগে বাদামি চুল আর শ্যাম্পুর গন্ধ। ওর ঘুমন্ত পিতৃ øেহ জেগে ওঠে। আশ্চর্য! আমি একে স্বপ্ন দেখেছিলাম। কেন? কী অদ্ভূত ছিল স্বপ্নটা। টিলার ওপরে একটা বাংলোবাড়ির চাতাল। সিঁড়ি নেমে গেছে। নীচ থেকে শান্তা ডাকছে। আকাশে অনেক ফানুস। শান্তা ভেসে যাচ্ছে। আর অনেক হরিণ নদীর ওপারে। শান্তা টলটলে চোখে চেয়ে বলে- বল ত ম্যাও কই ম্যাও? জায়েদ টেনে বলে-ম্যাও নাই। তুমি কিচ্ছু জান না। ম্যাও ঘুমায়। ও। তাইলে একটা গান বল তো। শান্তা গান বলে- নদীর ধারে পাখির বাসা আমরা যাব ছেখানে - অনেক গান আর কথার পর এক সময় শান্তা ঘুমিয়ে পড়ে। বারান্দায় এসে শারমিন বলে, দিন ওকে শুইয়ে দিয়ে আসি। থাক না। জায়েদ বলে। শারমিন ঝুঁকে পড়েছে। ফিসফিস করে বলে, বন্ধন তৈরি করছেন কিন্তু। জায়েদ হাসে। বন্ধনই তো জীবন। ভাবল। আলতো করে ঘুমন্ত শান্তাকে জায়েদের কোল থেকে নিয়ে যায় শারমিন। ৩ অস্ট্রেলিয়া পড়ার সময় মার্লিন নামে এক অস্ট্রেলিয় মেয়ের সঙ্গে ঘনিষ্টতা হয়েছিল নাজনীনের। সম্পর্কটা এখনও আছে। (এই ইন্টারনেটের যুগে সম্পর্ক আসলে রাখতে চাইলেই রাখা যায়) মার্লিনের একটা ভিলা আছে পোখরায়-জায়গাটা নেপালে। নাজনীনরা ছুটিছাঁটায় বেড়াতে যায় পোখরায়। কাঠমুন্ডু পৌঁছে হেলিকপ্টার ভাড়া করে। কপ্টারটা ল্যান্ড করে ইউক্যালিপটাস গাছে ঘেরা মার্লিনের ‘দয়ারাম ভিলার’ সুপ্রশস্ত চাতালে। পরিকল্পনামাফিক এবার জায়েদও এল। শারমিনকেও রাজি করাল নাজনীন। প্লেনে জায়েদের কোলেই ঘুমিয়ে ছিল শান্তা । নাজনীনের দুই মেয়ে- মেহেরিন ও বুশরার মুখটা খুশিতে ঝলমল করছিল। ওরা ভীষণআ ইনজয় করে পোখরায় মার্লিন আন্টির ভিলা। মধ্য এপ্রিলের ঝলমলে দুপুরে দয়ারাম ভিলার চাতালে নামল লাল রঙের হেলিকপ্টার। পোখরার উত্তরে একটা উঁচু টিলার ওপর ভিলাটি। নীচে সুবিশাল মনোরম উপত্যকা। আর কী এক নদী। নদীর পাড়ে পাথর আর দেবদারু গাছের বন। প্রশস্ত সাদা পাথরের সিঁড়ি নেমে গেছে উপত্যকায়। জায়েদ অবাক হয়ে যায়। শান্তার দিকে তাকায়। মেহরিন আর বুশরার পিছন পিছন শান্তাও রেলিংয়ের কাছে । আশরাফ ওদের হিমালয় দেখাচ্ছে। অনেক রাতে - বাচ্চারা শুয়ে পড়েছে-ওরা চারজন বসে আছে চাতালে। দয়ারাম ভিলার চাতালে জোছনার বন্যা। আর উতল বাতাস। আজ আষাঢ়ি পূর্ণিমা। আলোচনা সেদিকে গড়াল। বাতাসে হুইশকির গন্ধ। আশরাফ যেহেতু স্কচ হুইশকির বোতল খুলেছে। শারমিন শাদা শাড়ি পরেছে। নীল পার। জায়েদ কালো প্যান্ট আর সাদা টিশার্ট। সিগারেট টানছিল। কেমন ঘোর ঘোর লাগছিল ওর । নাজনীনের নকিয়াটা বাজল। ওটা তুলে কার সঙ্গে কথা বলল। তারপর ফোনটা অফ করে বলল, মার্লিনের ফোন। সেভ দ্য চিলড্রেনের একটা ওয়ার্কশপের জন্য কাঠমুন্ডু আসছে মার্লিন । জায়েদ ওর দিকে তাকাল। নাজনীন বলল, ওর, মানে মার্লিনের বর, রজত শর্মা, ইনডিয়ান-ব্যবসা করে। কাঠমুন্ডু আর দিল্লি মিলিয়ে থাকে ওরা। ও। তারপর জায়েদ বলল, আমি আর জার্মানি ফিরছি না নাজনীন। নাজনীন শিশুর মতন হাততালি দিয়ে বলল, তা হলে? আশরাফ জায়েদের দিকে তাকাল। এখানেই থেকে যাব। জায়েদ বলল। এখানে মানে পোখরায়? হ্যাঁ। জায়গাটা আপনার এতই ভালো লেগেছে জায়েদ ভাই? জায়েদ মাথা নাড়ে। নাজনীন বলল, ভালো। আমরা পোখরায় ‘মানবীর’ ব্রাঞ্চ খুলতে যাচ্ছি। দায়িত্বটা তাহলে শারমিনই পাবে। শারমিন গাঢ় চোখে তাকালো জায়েদের দিকে। এই নাজনীন? জ্বী বলেন। তোমার বান্ধবী এই ভিলাটা বিক্রি করবে? নাজনীন বলল, বলে দেখি মার্লিনকে। গত মাসে বলছিল ওর হাজব্যান্ডের বিসনেস ভালো যাচ্ছে না। আর নেপালে মাওবাদীরা ক্ষমতা নিয়েছে। এই টেনশন। দেখি ওকে বলে ও কী বলে। জায়েদ বলল, ভিলাটা কেনার পর নাম বদলে দেব। কী নামে দেবেন শুনি? স্বপ্ন। আশরাফ কেন যেন হো হো করে হেসে ওঠে। ঠিক সেই মুহূর্তে শারমিনের বুকের ভিতরে কী যে হয়ে যায়। আশরাফ বলল, নামটা তারা না আবার বদলে দেয়। কারা? শারমিন সামান্য বিস্মিত। কারা আবার? মাওবাদীরা। ও। ওরা কী নাম রাখবে বলে মনে হয়? প্রচন্ড ভিলা। বলে হা হা করে হেসে উঠল আশরাফ। মদটা তাকে ধরেছে বোঝা গেল। আরও কিছুক্ষণ পর নাজনীন আর আশরাফ উঠে চলে যায়। যাওয়ার আগে নাজনীন বলল, জায়েদ ভাই। যান না, শারমিনকে নিয়ে নিচ থেকে নদীর ধার থেকে ঘুরে আসুন না। আপনার সেই অস্বস্তিটা কেটে যেতেও তো পারে। ৪ ওরা দুজন বসে থাকে। চাতালে এলোমেলো হাওয়া বয়। আর কেমন ইউক্যালিপটাস- ইউক্যালিপটাস গন্ধ। চাতালে অনেক শুকনো পাতা। বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যায়। ইউক্যালিপটাস পাতায় সরসর শব্দ তোলে বাতাস । জায়েদ সিগারেট টানতে থাকে। শারমিনের মাথার ভিতরে অনবরত ঘুরছে জায়েদের কন্ঠস্বর: ভিলাটা কেনার পর নাম বদলে দেব। জায়েদ শান্ত গলায় বলল, শান্তার কথা ভেবেই আমি নতুন একটা বন্ধন নিয়ে গভীর ভাবে ভাবছি । শারমিন চুপ করে থাকে। জায়েদ বলে, তার আগে আপনার মনের সেলেটটা মুছতে হবে। যদি সম্ভব হয়। শারমিন চুপ করে থাকে। আমি খুব সেনসেটিভ। বন্ধুরা বলে র‌্যাডিকাল ফেমেনিস্ট। শারমিন অসহায় ভাবে বলল, মুছতে পারি না যে। জায়েদ এও বলল-স্পর্শ না-করে কি থাকা যায় না। চিরকাল। পাশাপাশি। শারমিন ভাবল-স্পর্শের জন্যই তো সব। মৃদুস্বরে জায়েদ বলে, সম্ভব হলে জানাবেন। কী মনে করে শারমিন জিজ্ঞেস করল, আপনার ডেট অভ বার্থটা বলবেন? ২ জুলাই। জায়েদ বলে। ওমাঃ আপনি কর্কট! হু। আর আপনি? আমিও তো। আমার জুলাই ৮। আশ্চর্য! আমি বুঝি-আপনি কি বলতে চান। আমি আপনাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করি। বলতে বলতে শারমিন পারলে কেঁদে ফেলে। ওপাশে ভিলার দেওয়াল। জানালা। বাতাসে পর্দা সরে যায়। ভিতরে আলো। দেওয়ালে দুটো ছায়াশরীরের উত্থানপতন স্পষ্ট টের পাওয়া যায়।ওদিকে চোখ যায় শারমিনের। ও দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে। শারমিনের মুখটা আরক্ত হয়ে উঠেছে। দুধ দুধ আষাঢ়ি জোছনার আলোয় বোঝার কথা না। শারমিন উঠে দাঁড়ায়। চাতালের উত্তরপাশে সাদা রং করা রেলিং। নিচে নামার সিঁড়িটা ওদিকেই। সেদিকে যেতে থাকে। নাজনীন কি ইচ্ছে করেই ...ছিঃ ...ওর সুখটা বোঝানোর কী এত ...ছিঃ জায়েদ কি দেখেছে? দেখলেও -লোকটা এত ভদ্র ...কী করে টের পেল আমার মনের ভিতরে একটা সেলেট আছে। সেখানে কিছু আছে অমোচনীয়। ওর পাশে জায়েদ। দূরে ছায়া ছায়া পাহাড় ও জোছনাপ্লাবিত উপত্যকা। উত্তরেই কোথাও হিমালয়। দূরন্ত বাতাসে শারমিনের সাদা শাড়ি উঠছে। শারমিন বলল, নীচে নামবেন? চলুন। ওরা সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। কী বাতাস। যেন ফানুসের মত উড়িয়ে নেবে জোছনাøাত পোখরার আকাশে। এই দিনে বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল? হু। আমি তাঁর সম্বন্ধে বেশি কিছু জানি না। না জানাই স্বাভাবিক। কেন? তিনি দূরের তারার মতন। ও। জানেন। শান্তার জন্ম আষাঢ়ি পূর্ণিমার রাতে। ওর বাবাকেও ওরা ধরে নিয়ে যায় আষাঢ়ি পূর্ণিমার রাতেই ... আশ্চর্য! সিঁড়ির শেষে মাঠ। মসৃন ভাবে ছাঁট ঘাস। দুপাশে মেহগনি আর দেবদারু গাছ। পাথর। আর সেই নদী। তার ছির ছির শব্দ। আকাষে ধবল চাঁদ। পূর্ণিমার আলো। আজ বিকেলেই সবাই মিলে এসেছিল নদীর পাড়ে। তখন নরম রোদ ছড়িয়ে ছিল। নদীর পাড়ে একটা হরিণ মরে পড়ে ছিল। পাশে কয়েকটা কাক। হরিণের পিঠে তীর বিঁধে ছিল। সবাই তো অবাক। কে এখানে তীরধনুক দিয়ে শিকার করে। কাকগুলি ‘হুশ’ করতেই উড়ে গিছল। নাজনীন দয়ারাম ভিলার কেয়াটেকার -জয়নাথকে ফোন করল। জয়নাথ এল। হলুদ রঙের নাক চ্যাপ্টা মধ্যবয়েসি থলথলে লোক সে। লোকটা অনায়াসে হরিণটা কাঁধে তুলে নিয়ে গেল। নানরুটি আর সেই হরিণের মাংস খেয়েই ওরা চাতালে বসেছিল। শারমিন আর জায়েদ হেঁটে হেঁটে ঘাসের জমিটুকু পার হয়ে যায়। নদীতে রুপার কুচি। ওপারে ঝাইবন। নদীর দুপারে অজস্র পাথর ও নুড়ি। কোন্ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে পড়ে আছে। ওরা পাথরের ওপর বসল। মুখোমুখি। এবার কথা হবে। যে কথা হয়নি। হঠাৎ ফিরলেন যে? সেটাই তো আশ্চর্যের। মানে। ফিরলাম একটা স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন? হ্যাঁ। স্বপ্ন । স্বপ্নে একটা শিশুর মুখ দেখলাম। সেই শিশুটিকে সামনাসামনি দেখার জন্যই ফিরলাম। শান্তার সঙ্গে শিশুটির খুব মিল কি? হু। আর তখনই কী এক রাত্রীকালীন পাখি উড়ে যায়। তার টী টী শব্দ ওঠে। বাতাস দূরন্ত হয়ে ওঠে। জোছনা গাঢ় হয়ে ওঠে। শারমিন মৃদুস্বরে বলে, আপনাকে ধন্যবাদ। কেন? জায়েদ কিঞ্চিত বিস্মিত। সিগারেট ধরাচ্ছেন না যে। ও। বলে হেসে প্যান্টের থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে নাম না জানা নদীতে ছুড়ে ফেলে দিল জায়েদ। দৃশ্যটায় কী ছিল- শারমিনের বুকটা ধক করে ওঠে। ওর হাসান কথা মনে পড়ে যায়। বিয়ের পর ওরা টেকনাফের রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের বাংলোর সামনে সেই নাফ নদীর সেই হাফ-ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়েছিল। রাতটি ছিল খুব বাতাসময় আর জোছনাসিগ্ধ । খুব সিগারেট খেত হাসান। তবে সেই রাতে ও সিগারেট খাচ্ছিল না। শারমিন মৃদুস্বরে বলেছিল, তোমাকে ধন্যবাদ। কেন? সিগারেট ধরাচ্ছ না যে। সিগারেটের প্যাকেটটা প্যান্টের পকেট থেকে বার করে নাফ নদীতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল হাসান। এসব ভোলা যাচ্ছে না। কেননা, শারমিনের মনের মধ্যে একটা সেলেট আছে । সে জিজ্ঞেস করে আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন? জায়েদ বলল, হ্যাঁ। আবার না। বুঝেছি। শান্তার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার অসম্ভব কষ্ট হয়েছিল। আবার মেয়েটার মুখ দেখে মনে হল আমার জীবন তো এরই জন্য। হঠাৎ জায়েদের মনে হয় নদীর ওপারের ঝোপে পাতার আড়ালে কারা যেন ওঁত পেতে আছে। মাওবাদী গেরিলা? কিন্তু,ওরা তো ক্ষমতায়। এ জীবনে সবই সম্ভব। কিন্ত তখন কারা হরিণটি মেরেছিল? তীর দিয়ে। সে কথা শারমিনকে বলে না। শারমিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমরা কী ভীষন অসুখী। সে কথা এই নদী জল আকাশ আর গাছ পাতারা জানে না। তাই না? হুঁ। সমস্ত উপাচার তৈরি; তারপরও পূজা আরম্ভ হচ্ছে না-একে কী বলে ? সভ্যতা। সভ্যতা? তাই হবে - কী মনে করে জায়েদ বলল, গতবছর নাজনীনরা গেছিল ডুসেলডর্ফ-যেখানে আমি থাকি। জানি। তখনই আপনার আর শান্তার ছবি দেখিয়েছিল নাজনীন। শারমিন চুপ করে থাকে। জায়েদ বলে, শান্তার ছবিটা আমার মনে গেঁথে গিয়ে থাকবে। নৈলে স্বপ্নে কেন শান্তাকে দেখব? ও আমাকে ডাকছিল। কোথায়? এখানে। এখানে? হ্যাঁ। এখানে। বলে চুপ করে থাকে জায়েদ। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, নাজনীন সেদিন আমাকে বলল-আপনাকে সুন্দর একটা দেশে নিয়ে যাব। তখন দেখবেন আপনার মনের সব অস্বস্তি কেটে গেছে। আমি জানতাম আমি কোথায় যাচ্ছি। স্বপ্নে কি দেখলেন? দেখলাম: আমি চাতালের সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে। শান্তা নীচ থেকে আমাকে ডাকছে। আমি নেমে এলাম। আকাশে অনেক ফানুস। আর জোছনার ঢল। আমি এগিয়ে গেলে শান্তা সরে যায়। কী ভাবে যেন নদী পার হয়। আমি এখানে দাঁড়িয়ে-এই পাড়ে। শান্তা নদীর ওপারে। অনেক হরিণ নদীর ওপারে। শারমিন চুপ করে থাকে। জোছনা আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। বাতাসও আষাঢ়ি পূর্ণিমার আলোয় হয়ে ওঠে এলোমেলো। কী-মোছা গেল না? কী। শারমিন চমকে উঠল। আপনার মনের সেলেটের আঁকিবুকি? শারমিন চুপ করে থাকে। আমি কাল চলে যাব। জায়েদ গাঢ় স্বরে বলল। কোথায়? শারমিনের কান্না পাচ্ছে। প্রথমে কাঠমুন্ডু ; তারপর দিল্লি ;তারপর কোলন। তারপর ... তারপর হাইডেলবার্গ। আর শান্তা? ও আমার স্বপ্নের মধ্যে থাকবে। আমার নিঃসঙ্গতার মধ্যে থাকবে। ও। বলে শারমিন চুপ করে থাকে। পাথরের পাশে ওদের গাঢ় ছায়া। সেদিকে তাকিয়ে থাকে। একবার নদীর দিকে তাকায়। নদীতে রুপাগলা জল। ওপারে ঝাউবন। শারমিন মৃদুস্বরে বলে, কেমন? কী কেমন? যেখানে থাকেন। ও। ভালো। জায়েদ বলল। নেককার নামে একটা নদী আছে। নদীর ধারে দার্শনিকরা হাঁটতেন। আমি যে শহরে থাকি তার নাম হাইডেলবার্গ; হাইডেলবার্গ শব্দের অর্থ : সাধুদের পাহাড়। শারমিন বলে, আমি যতদিন বেঁচে থাকব একটা নদীর কথা ভাবব । নেককার। হয়তো স্বপ্নেও দেখব। বিষাদ টের পায় জায়েদ। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, চলুন ফিরি। চলুন। শারমিন উঠে দাঁড়িয়ে বলে। প্রবল বাতাস আর জোছনার ভিতর ওরা সিঁড়ির দিকে এগোতে থাকে। সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৮:২৩
false
rn
রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই-৯৬ সৈয়ত মুজতবা আলী স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কণ্ঠে, তারই সামনে বসে তার আকাংক্ষা বিষয়ক বক্তৃতা শুনেছিলেন। মানে রবীন্দ্রনাথ কে কাছ থেকে দেখার এবং তার বক্তৃতা শোনার সৌভাগ্য, দুটোই হয়েছিল তার। আর তারপর শিশু মুজতবা আলী যে কাণ্ডটি ঘটিয়েছিলেন, তার নমুনা শুনলে আশ্চর্য হবেন নিশ্চিত। মুজতবা আলী কারও সঙ্গে পরামর্শ না করেই চিঠি লিখে বসলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে। চিঠিতে জিজ্ঞাসা ছিলো- আকাংক্ষা উচ্চ করতে হলে কী করা প্রয়োজন? আর তার ক’দিন পরই আসমানী রঙের খামে আসমানী চিঠির কাগজে জবাব এল শিশু মুজতবা আলীর কাছে। রবি ঠাকুর নিজের হাতে ১০/১২ লাইনের জবাবে যা লিখেছিলেন, তার মূল কথা এরকম- ‘আকাংক্ষা উচ্চ করিতে হইবে- এই কথাটার মোটামুটি অর্থ এই- স্বার্থই যেন মানুষের কাম্য না হয়। দেশের মঙ্গলের জন্য ও জনসেবার জন্য স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ কামনাই মানুষকে কল্যাণের পথে নিয়ে যায়। তোমার পক্ষে কী করা উচিত, তা এতদূর থেকে বলে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে তোমার অন্তরের শুভেচ্ছাই তোমাকে কল্যাণের পথে নিয়ে যাবে।’ ওয়াল্ট হুইটম্যান লিখেছেন, " আমি বিশাল, আমি আমাতে ব্যাপককে ধারণ করি" - রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রেও এই কথাটিই সর্বৈব সত্যি। রবি ঠাকুরও তার নিজের মধ্যে ব্যাপককে শুধু ধারণই করেননি বরং তা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখে গিয়েছেন আমাদের জন্য, তার কবিতায়, গানে, গল্পে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে - এমনকি ছবিতেও।এই সঞ্চয়িতা সঙ্গে থাকলে আমি আর কিছুই চাই না। নাটক নয়, উপন্যাস নয়, কবিগুরুর গান ও কবিতাই আমার বেশি প্রিয়। সব মিলিয়ে এগারো বছর কাটিয়েছি জেলে। আমার সব সময়ের সঙ্গী ছিল এই সঞ্চয়িতা। কবিতার পর কবিতা পড়তাম আর মুখস্থ করতাম। এখনও ভুলে যাইনি। এই প্রথম মিয়ানওয়ালি জেলের ন'মাস সঞ্চয়িতা সঙ্গে ছিল না। বড় কষ্ট পেয়েছি। আমার একটি প্রিয় গানকেই- 'আমার সোনার বাংলা' আমি স্বাধীন দেশের জাতীয় সঙ্গীত করেছি। আর হ্যাঁ, আমার আর একটি প্রিয় গান ডি এল রায়ের 'ধন ধান্য পুষ্প ভরা'। দু'টি গানই আমি কাজের ফাঁকে গুনগুন করে গেয়ে থাকি।'' নয় মাসের পাকিস্তানি কারাগারে বন্দীদশা শেষে নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসার বারোদিন পর এই ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উচ্চারণ। যার আন্দোলন-সংগ্রাম এবং জীবন সাধনায় রবীন্দ্রনাথ অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে। তাই শান্তি নিকেতনের এক সময়ের শিক্ষার্থী ও সিলেটে জন্ম সাহিত্যিক-সাংবাদিক অমিতাভ চৌধুরীকে বলেছিলেন, ''রবীন্দ্রনাথকে আমি ভালোবাসি তার মানবপ্রেম ও দেশপ্রেমের জন্য। বড় হয়ে পড়লাম, 'হে মোর দুর্ভাগা দেশ।' আমাদের দেশের দুর্ভাগা মানুষের প্রতি এতো দরদ আর কার আছে।'' স্বাধীন দেশে এসেছিলেন সে সময়ের আনন্দবাজার পত্রিকার বার্তা সম্পাদক অমিতাভ চৌধুরী। ৩২ নম্বরের বাড়ীতে সেদিন রাজনীতি নয়, কথা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব নিয়ে। রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা যে তিনি গড়ে তুলতে চান, সে চাওয়া ও স্বপ্নের কথাও বলেছিলেন।১৯২৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি তাঁর স্নেহধন্য দিলীপ কুমার রায়কে কবি এক দীর্ঘ চিঠি লেখে। বিষয়- নারীর ব্যভিচার। রবীন্দ্রনাথ স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছে, “সমাজে যদি অশান্তি না ঘটে তাহলে ব্যভিচার-ব্যভিচারই হয় না। ব্যভিচারের ফলে যদি সন্তান সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে আজকাল সেটাও সমস্যা নয়। কেননা কন্ট্রাসেপটিভ বেরিয়ে গেছে। নিবারণের উপায়গুলোও সহজ। সুতরাং গর্ভধারণ করতে হয় বলে দেহকে সাবধান রাখার দায় আর তেমন নেই।... সমাজ নিজের প্রয়োজনবশত: স্বভাবকে ঠেকিয়ে রাখে। ঠেকিয়ে রাখতে তার অনেক ছলবল- কৗশল অনেক কড়াকড়ি, অনেক পাহারার দরকার হয়। কিন্তু প্রয়োজনগুলোই যখন আলগা হতে থাকে, তখন স্বভাবকে ঠেকিয়ে রাখা আর সহজ হয় না। ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভোগের দৃষ্টান্ত দেখ না। আমার যখনই ক্ষিদে পায়, তখন আমার গাছে যদি ফল না থাকে, তবে তোমার গাছ থেকে ফল পেড়ে খেতে আমার স্বভাবতই ইচ্ছা হয়। কিন্তু যেহেতু ব্যক্তি সম্পত্তির সীমা রক্ষা করা সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার পক্ষে অত্যাবশ্যক, এজন্যই ফল পেড়ে খাওয়াটা চুরি। এই চুরি সম্পর্কে সমাজ আমাদের মনে যে সংস্কার দৃঢ় বদ্ধমূল করে দিয়েছে সেটা নিজের ব্যবস্থা রক্ষা করবার উদ্দেশ্যে।... বস্তুত: চুরি না করার নীতি শাশ্বত নীতি নয়। এটা মানুষের মনগড়া নীতি। এ নীতিকে পালন না করলে সমাজে যদি অশাস্তি না ঘটে, তবে পরের দ্রব্য নেওয়া চুরিই নয়। এই কারণে তুমি দিলীপ কুমার রায় যদি আমি রবীন্দ্রনাথের লিচু বাগানে আমার অনুপস্থিতিতে লিচু খেয়ে যাও, তুমিও সেটাকে চুরি বলে অনুশোচনা কর না। আমিও সেটাকে চুরি বলে খড়গহস্ত হই না। ব্যভিচার সম্বন্ধে এই কথাটাই খাটে। এর মধ্যে যে অপরাধ সেটা সামাজিক। অর্থাৎ সমাজে যদি অশান্তি ঘটে, তবে সমাজের মানুষকে সাবধান হতে হয়। যদি না ঘটে, তাহলে ব্যভিচার-ব্যভিচারই হয় না। শান্তিনিকেতনে কবি গুরু উঁচু পাতাটনে বসা। নিচে পায়ের কাছে বসা নজরুল। হঠাৎ নজরুলের কি খেয়াল হলো, সে রবীন্দ্রনাথের পা ধরে টেপা শুরু করলেন! এমন জোড়ে টিপলেন যে রবীন্দ্রনাথ ব্যথায়, "বাবাগো" বলে উঠলেন! নজরুল তো লজ্জ্বায় শেষ। প্রিয় কবির লজ্জ্বা কাটানোর জন্য নিজের পায়ে হাত বুলাতে বুলাতে, কবি গুরু মাথা ঝুকিয়ে নজরুলকে বললেন,- কটা গান লিখলে আজ? নাকি খালি চেঁচালে!নজরুল তখন তার দিকে তাকিয়ে বললেন,- মাঝে মাঝে মনে হয়, মোটা একটা লাঠি নিয়ে আপনার মাথায় বাড়ি দেই।বিশ্মিত রবীন্দ্রনাথ বললেন,- কেন, কেন!?- যাতে লোকে, আপনার নামের পাশে আমার নামটি নেয়। আপনার ছবির পাশে আমার ছবি ছাঁপা হয়।রবীন্দ্রনাথ নজরুলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে "হো হো হো" করে হেসে উঠে বললেন,- ওরে কে আছিস, দেখে যা, এই পাগল তো সত্যি সত্যি আমার মাথায় বাড়ি দিয়ে বসবে! ( রাতে ঘুমানোর আগে এই গানটি শুনে ঘুমান। দেখবেন অন্য একরকম অনুভূতি কাজ করবে।) ও যে মানে না মানা। আঁখি ফিরাইলে বলে, 'না, না, না।'যত বলি 'নাই রাতি-- মলিন হয়েছে বাতি' মুখপানে চেয়ে বলে, 'না, না, না।' বিধুর বিকল হয়ে খেপা পবনে ফাগুন করিছে হাহা ফুলের বনে। আমি যত বলি 'তবে এবার যে যেতে হবে' দুয়ারে দাঁড়ায়ে বলে, 'না, না, না।'
false
ij
কার্ল মার্কসের কবিতা কার্ল মার্কস। শ্রমজীবি মানুষের মহান নেতা। আজকের বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার দিনে তাঁর প্রতি বিশ্ববাসীর কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছে .. কবিতা লেখার বয়েসে কার্ল মার্কস কবিতা লিখতেন। অবশ্য তরুণ বয়েসে; পরে সাংবাদিকতা ও জীবনসংগ্রামে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় কবিতার কাছ থেকে ছুটি নিতে বাধ্য হন । এরপর আর তাঁর কবিতার কাছে ফেরা হয়নি। তরুণ বয়েসের কবিতা-মানে হয়তো তৎকালীন জার্মান কবিদের সমকক্ষ নয়-তবে কার্ল মার্কসের লেখা বলেই আগ্রহ জাগে। জেনি ফন ওয়েস্টফালেনকে ভালোবাসতেন কার্ল মার্কস। সে প্রেমকাহিনী পৃথিবীর মানুষ জেনেছে। জেনির প্রতি কবিতায় মার্কস বলছেন: আমার সঙ্গে প্রনয়ে জড়ালের আমার অন্তর্গত শক্তিতে চূর্ণ হবেই। তাইই হয়েছিল ... কিশোরী জেনি জেনির প্রতি শব্দরা-মিথ্যে আর অগভীর ছায়া ছাড়া আর কী! চারপাশে জাগছে জীবন ... তোমার ভিতর- মৃত ক্লান্ত এই আমি বইয়ে দেব আমার ভিতরের সবটুকু শক্তি। যদিও বিশ্বের ঈর্ষনীয় ঈশ্বর বহু আগে থেকেই গভীর দৃষ্টিতে পরখ করে চলেছেন মানুষের অভ্যন্তরীন আগুন এবং চিরদিন দরিদ্র মানব ঈশ্বরের বুকের জ্যোর্তিময় সাংঘর্ষিক শব্দে আহত; যেহেতু, আত্মার মধুর আলোকের প্রতি বন্য গতিতে নির্গত হয় আবেগ; প্রিয়তমা, এসবই হতে পারে তোমার মুক্ত পৃথিবী যা তোমাকে সিংহাসনচ্যূত করবে, তোমাকে টেনে নামাবে ধূলায় নাচগান সব করে দেবে ভন্ডুল ... জীবন বিকাশমান হলেও- জীবনকে কর্ষিত কর! জেনি ফন ওয়েস্টফালেন রাস্তার ওপারে আমার প্রতিবেশি দূর থেকে সে আমাকে দেখে ঈশ্বর, আর আমি সইতে পারছি না। একজন বেঁটেখাটো মানুষ , হলুদ একটি বাড়ি ... ফ্যাকাশে নারীর বমির শব্দ যেহেতু প্রেরণার রয়েছে ডানা অন্ধজনকে আমি শক্ত করে টেনে নামাব নিচে। কার্ল মার্কস ও জেনি মার্কস সান্ধ্যভ্রমন কি দেখছ পাহাড়ের কিনারে দাঁড়িয়ে কেন ফেলছ নম্র দীর্ঘশ্বাস সূর্য আলো ছড়িয়ে বাতাসের ভিতর ডুবে যাচ্ছে পাহাড়ের চূড়াকে চুম্বন করে জানাচ্ছে বিদায়। এইসব তুমি আগে কখনও দেখ নি। সূর্যের পরিধী ধীরে ধীরে বেড়েছে, ভোরের আকাশ; তারপর দুপুর ... এখন উপত্যকায় ডুবে যাচ্ছে। সত্যিই ঐ আলো ক্রিমসন রঙের ভাঁজ যেন। তারপর তার অনিচ্ছুক চোখ চায় না যেতে বাস করতে চায় নারীর কামনায়। আমরা শান্তিতে হাঁটি। জেনির পায়ের শব্দে খাড়ির কিনারায় প্রতিধ্বনি জাগে। হালকা বাতাস চুমু দেয় ওর শালে; ওর চোখ মধুর মেদুর। আহ, প্রেম! আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি। জেনি কাঁপছে রক্তিম গোলাপের মত, আমি ওর হৃদয় স্পর্শ করি, নিচে অস্তমিত সূর্য - প্রেক্ষাপট নক্ষত্রখচিত ... এই জন্যই খাড়ির কাছে এসেছি, এ জন্যই দীর্ঘশ্বাস ফেলি; সন্ধ্যের আলো জ্বলে উঠলে ও ভেসে যায় তারপর, ওপর থেকে ইশারায় ডাকে । গান ঝোপগুলি দুলছে কেন কেন ফুলের মালা ধুলোয় লুটায় কেন স্বর্গীয় দ্বার সর্বদা উপরে উপত্যকায় কেন মেঘলা চূড়া যদি ডানা মেলে উড়ে যাই বাতাসের ভিতর পাথরের প্রতিধ্বনি চোখ কেন সহজ সুখ পায় না আমার দৃষ্টির পথ মেঘাচ্ছন্ন জীবনের ঢেউ গড়িয়ে চল পথের বাধা গুঁড়িয়ে দাও সোনালি স্বাধীনতার প্রেরনায় যখন শুন্য থেকে আত্মাশূন্য এসেছিলে। কবিতাগুলি নিয়েছি- Karl Marx Frederic Engels Collected Works. গ্রন্থ থেকে। ( Volume 1, Progress Publishers. 1975. page, 531/616 ) সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৪৮
false
mk
ফাহিমের জন্য খালেদার মায়াকান্না কেন_ মাদারীপুরে শিক্ষককে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আটক ফাইজুল্লাহ ফাহিম পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় খালেদা জিয়ার নিন্দা জানানোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে তার বক্তব্যকে ‘মায়াকান্না’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, ‘মাদারীপুরে শিক্ষককে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গ্রেপ্তার জঙ্গি ফাইজুল্লাহ ফাহিম পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর তার জন্য খালেদা জিয়া কেন এতো মায়াকান্না করছেন?’বুধবার (২৯ জুন) দশম জাতীয় সংসদ অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, ‘যে লোকটা (ফাহিম) একজন কলেজ শিক্ষককে মারতে গিয়ে জনগণের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে, তার জন্য খালেদা জিয়ার এত কথা কেন- এটা আমার প্রশ্ন?’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই সন্দেহ করেছিলাম- হঠাৎ গুপ্তহত্যা কেন? মাদারীপুরের জনগণ সাহসের সঙ্গে কলেজশিক্ষকের ওপর আঘাতকারীকে ধরে ফেলল। পরে তাকে নিয়ে আরও লোকজন ধরতে গেলে সে ক্রসফায়ারে বা যেকোনো কারণে হোক মৃত্যুবরণ করেছে। তার (ফাহিম) জন্য খালেদা জিয়ার হাঁড়ির ভাত সেদ্ধ হচ্ছে কি না, তা একটা ভাতে টিপ দিলেই বোঝা যাচ্ছে।’‘এ থেকেই বোঝা যায় গুপ্তহত্যার সঙ্গে তাদের একটা সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া জনগণের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব এবং আমরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন মাদারীপুরে সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজের গণিতের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলার পর জনতা ফাহিমকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে দেয়।পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। রিমান্ডে নেয়ার পরদিন সকালে মাদারীপুরের একটি চরে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয় ফাহিম।পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাকি সহযোগীদের ধরতে ফাহিমকে সঙ্গে নিয়েই অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মিয়ার চর এলাকায় সহেযাগীদের সঙ্গে ‍পুলিশের ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। এসময় তাদের গুলিতেই নিহত হয় গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম।ফাহিমের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তবে দীর্ঘদিন ধরেই বাবা-মার সঙ্গে বসবাস করতেন ঢাকায়। পড়তেন একটি বেসরকারি কলেজে। বাবা গোলাম ফারুক একজন ব্যবসায়ী আর মা সাধারণ একজন গৃহিনী।ঢাকার উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে এইচএসসির মেধাবী ছাত্র ছিলেন ফাহিম। এসএসসিতে পেয়েছিলেন জিপিএ-৫। কলেজে হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে বলে দাবি পুলিশের।তবে বাবা গোলাম ফারুক বা পরিবারের অন্য কেউ-ই জানতে পারেননি ছেলের জঙ্গি সংশ্লিষ্টার কথা। ধর্মীয় বই-পুস্তক নিয়ে ছেলে ঘাঁটাঘাঁটি করতো এটুকু জানতেন তারা। সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৮:২৮
false
fe
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পক্ষান্তরে প্রধানমন্ত্রী কে ই সমর্থন করলেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি. জন এফ মরিয়ার্টি পক্ষান্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকেই সমর্থন করলেন। মে দিবসের পৃথক সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘দেশে জঙ্গি হুমকি রয়েছে’ এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ‘দেশে এখন কোনো জঙ্গি হুমকি নেই’ এমন মন্তব্য করেন। তাদের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি বলেন, বাংলাদেশে ভোলায় সাম্প্রতিক অস্ত্র উদ্ধার এবং দেশব্যাপী জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তার প্রমাণ করে, এদেশে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ একটি উদ্বেগের বিষয়। মার্কিন সরকারের তথ্য অনুযায়ীও বাংলাদেশে এখনো সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের হুমকি রয়েছে। -----------------------------------------------------------------------------মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ----------------------------------------------কাগজ প্রতিবেদক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বাংলাদেশে এখনো সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের হুমকি রয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর ও শক্তিশালী করাই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে প্রভাবশালী দেশটি। একই সঙ্গে বিডিআর পুনর্গঠনে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি গতকাল রোববার এসব কথা জানান। ডিআরইউ ভিআইপি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ-ইউএস দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউ সভাপতি শামীম আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মামুনুর রশীদ, মার্কিন দূতাবাসের উপ-পরিচালক হারভে ডব্লিউ সারনভিচ, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মেরিনা ইয়াসমিন প্রমুখ।মে দিবসের পৃথক সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘দেশে জঙ্গি হুমকি রয়েছে’ এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ‘দেশে এখন কোনো জঙ্গি হুমকি নেই’ এমন মন্তব্য করেন। তাদের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি বলেন, বাংলাদেশে ভোলায় সাম্প্রতিক অস্ত্র উদ্ধার এবং দেশব্যাপী জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তার প্রমাণ করে, এদেশে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ একটি উদ্বেগের বিষয়। মার্কিন সরকারের তথ্য অনুযায়ীও বাংলাদেশে এখনো সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের হুমকি রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তার দেশ বিডিআর পুনর্গঠনে সহায়তা দিতে আগ্রহী। এই ব্যাপারে ইতিমধ্যে প্রস্তাবও দিয়েছে তার সরকার। তবে এই পুনর্গঠন কেমন হবে বা নাম কি হবে তা এদেশের সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।বর্তমান সরকারের সামনে স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যুৎ ও পানি সমস্যা থাকলেও মরিয়ার্টির মতে, একটি সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জোরদার করাই এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, শক্তিশালী ও টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সময় লাগে। এই ব্যাপারে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আর স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অস্তিত্ব অসম্ভব।এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুটি বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ ও আলোচনা দরকার। ক্ষমতাসীন দলকে জাতীয় সংসদে আলোচনা ও বিতর্কের জন্য বিরোধী দলকে যথার্থ সুযোগ দিতে হবে, অন্যদিকে বিরোধী দলকেও সরকারকে সহায়তা করতে হবে। বিদেশে পলাতক যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু খুনিদের ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গে মরিয়ার্টি জানান, অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। একই সঙ্গে এই বিচারটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হতে হবে।লিখিত বক্তব্যে মরিয়ার্টি বলেন, দীর্ঘদিনের বন্ধুদেশ বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের উন্নয়নে, উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে এবং সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানাতে সহায়তা দিয়ে যাবে। গত ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে তিনি এ যাবৎকালের সবচেয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেই সংসদের মাধ্যমে ‘বিচার বিভাগ পৃথককরণ’ ও ‘তথ্য অধিকার আইন’ এবং ‘অর্থ পাচার প্রতিরোধ অধ্যাদেশ’ ও ‘সন্ত্রাস বিরোধী অধ্যাদেশ’ পাস করেছে যা প্রশংসনীয়। তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবকে বাংলাদেশের সামনে সংগোপনে আসা ভীতি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এর প্রভাবে এদেশের রপ্তানি ও বিদেশ থেকে অর্থ প্রেরণ প্রবাহ কমে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, একটি দুঃসময়ের মধ্যে আগামী বাজেট হতে যাচ্ছে। আসন্ন বাজেটে তিনি চলমান বিদ্যুৎ সংকট, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প, কৃষি ও শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেয়ার সুপারিশ করেন।মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর সহায়তার পরও বিডিআর সদর দপ্তরে সেনা হত্যাযজ্ঞের ঘটনার তদন্তে সময় লাগছে বলে যুক্তরাষ্ট্র ও এফবিআই মোটেও অবাক হচ্ছে না জানিয়ে মরিয়ার্টি বলেন, এই ধরনের ঘটনায় অনেকের সাক্ষাৎকার নিতে হয়। এই প্রসঙ্গে তিনি ৯/১১ এর দৃষ্টান্ত টেনে বলেন, এ ধরনের ঘটনার তদন্ত সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। উপজেলা চেয়ারম্যানদের ওপর সংসদ সদস্যদের খবরদারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার দেশ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাস করে যাতে তৃণমূল পর্যায় থেকেও জনগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের অবাধ প্রবেশাধিকার বিষয়ক মার্কিন কংগ্রেসে বিবেচনাধীন বিলটি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত জানান, তিনি এই বিলটির সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত নন। তবে এটি খুবই কঠিন হবে।-----------------------------------------------------------------------দৈনিক ভোরের কাগজ । ৪ মে ২০০৯ প্রকাশিত
false
hm
সর্বোচ্চ দেশপ্রেম ইস্কাটন থেকে পাক মোটর সামান্য পায়ে হাঁটা রাস্তা, তবুও আনিসুল হাইয়ের ভয় লাগে। যদি কিছু হয়? জুন মাস নাগাদ এসে ছাত্রলীগের গুণ্ডাপাণ্ডারা সেনাবাহিনীর মার খেয়ে অবশ্য অনেকটাই ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, কদাচিৎ সীমান্তবর্তী এলাকায় কিছু দুমদাম ঠুশঠাশের উড়ো খবর কানে আসে কেবল। ঢাকায় দমবন্ধকরা পরিস্থিতি খুব মন্থর গতিতে আবার স্বাভাবিকের দিকে এগোচ্ছে। পাক মোটরে আনিসুল হাইয়ের সামনে দিয়ে শোঁ-শোঁ করে চলে যায় জলপাই রঙের একটি সৈন্যবাহী ট্রাক। ভয়ে হাইয়ের হাত পা জমে আসে। যদি ট্রাকটা থামে? খাকি উর্দি পরা সেনারা নেমে এসে যদি তার দৈনিক কচুবনের ডাণ্ডি কার্ড দেখে সন্তুষ্ট না হয়? যদি ধরে নিয়ে যায় তাকে? বদি ভাইয়ের কাছ থেকে আনিসুল হাই শুনেছে, প্রায়ই নাকি রাস্তাঘাট থেকে যুবকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা আর ফিরে আসে না। ট্রাকটা এগিয়ে যায় ইন্টারকন্টিনেন্টালের দিকে, থামে না। আস্তিনে কপালের ঘাম মুছে আনিসুল হাই পা চালায়। মেহফিলে মুনাওয়ারার ছায়া ঘেরা উঠানটা যতো কাছে আসে, হাইয়ের মনের চিমনিতে জমে থাকা দুর্ভাবনার কালিও আস্তে আস্তে মুছে যায়। কী যেন এক অদ্ভুত আকর্ষণ আছে এখানে, একটা প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়া মধুর শীতলতা ছড়িয়ে আছে এর আমগাছের ছায়ায়, লাইব্রেরি ঘরের বারান্দায়, দরবার ঘরের সামনের উঠোনটায়। দেশজুড়ে আম্লীগের লোকেরা যে ভয়ানক অস্থিরতার আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে, তার বিপরীতে এ যেন এক টুকরো স্নিগ্ধ মরূদ্যান। আনিসুল হাইয়ের মনে হয়, এই বুঝি একটি মরুর দুম্বা পানি পান করতে এসে দাঁড়াবে মেহফিলে মুনাওয়ারার উঠোনে। এর কৃতিত্ব দিতে হবে আবদেল আবু সাঈদী হুজুরকেই। আনিসুল হাইয়ের মনে হয়, ভদ্রলোক জাদু জানেন। মাদ্রাসা শিক্ষক হয়েও দুনিয়ার হেন বিষয় নেই, যা নিয়ে তিনি কথা বলতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তার সঙ্গে বাহাসে জড়াতে ভয় পায়, এই বুঝি জ্ঞানের পাতলা আস্তর খসে গিয়ে ভেতরের মূর্খতার ইঁটগুলো অট্টহাসি দিয়ে বেরিয়ে আসে! অতি পাষণ্ড নাস্তিকও তাঁর বয়ান শুনে ভক্ত আশেক বনে যেতে বাধ্য। আনিসুল হাই মেহফিলে মুনাওয়ারাতে প্রায়ই আসে আবদেল আবু সাঈদী হুজুরের বয়ান শুনতে। তার ভেতরের অস্থিরতার অপনোদনে আবু সাঈদী হুজুর কখনো ব্যর্থ হননি। আবু সাঈদী লাইব্রেরি ঘরের বারান্দায় আরামকেদারায় শুয়ে একটি কিতাব পাঠ করছিলেন, আনিসুল হাইকে আসতে দেখে মিষ্টি তাবাসসুমে তার মুখ ভরে ওঠে। আনিসুল হাই ইস্কাটন থেকে পাক মোটরের বিপদজনক ঝুঁকিসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে আসার ক্লেশ বিস্মৃত হয়, সে তসলিম জানিয়ে তৃপ্ত মুগ্ধ চিত্তে বলে, আসসালামু আলাইকুম হুজুর। কেমন আছেন? আবদেল আবু সাঈদী মেহমান এলে খুশি হন, আরো খুশি হন যদি মেহমানের হাতে কিছুমিছু থাকে। তাই আনিসুল হাইয়ের শূন্য হাত দুটিতে তার স্নিগ্ধ দুটি চক্ষুর দৃষ্টিপাত ঈষৎ দীর্ঘায়িত হয়। কিন্তু আমীর-ফকির সবার প্রতি তিনি সমান উদার, তাই বলেন, ওয়ালাইকুম সালাম আ্নিসুল হাই। কেমন আছো তুমি? হাই মোড়া টেনে আবু সাঈদী হুজুরের পায়ের কাছটায় বসে পড়ে ধপ করে। এই একটি মানুষের কাছে এসে সে হৃদয়ের কথা উজাড় করে বলতে পারে, তার সব গ্লানি এই মানুষটির ছায়ায় এসে দূর হয়। "ভালো নেই হুজুর। দেশের এই রাজনৈতিক হানাহানি, ক্ষমতার জন্য এই কুৎসিত মারামারি, আমাকে বড় তকলিফ দেয় হুজুর।" হাই কথা শেষ করতে গিয়ে একটু ফুঁপিয়ে ওঠে। আবু সাঈদী হুজুর রেডিও পাকিস্তানে একসময় নিয়মিত ইসলামী ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান করতেন, তিনি সুললিত কণ্ঠে সামান্য সুর করে বলেন, "ভালো থাকা, আর না থাকা, সবই তো নির্ভর করে তোমার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। তুমি কী মনে করো যুবক, আল্লাহ তোমাকে খারাপ রাখতে চান? কখনোই না। তিনি চান তুমি ভালো থাকো। কিন্তু তুমি যদি তোমার নজরকে ঠিক জায়গা থেকে ঠিক জায়গায় ফেলতে শেখো, তাহলেই দেখবে আর খারাপ লাগছে না। আমাকে বাতাও, কী নিয়ে তোমার এতো তকলিফ?" আনিসুল হাই মন খুলে বলে যায় তার কষ্টের কথা। সিরাজউদ্দৌলার মামাকে নিয়ে তার লেখা কিতাব "মামা" মানুষের মাঝে সমাদৃত হওয়ার পর দৈনিক কচুবনের সম্পাদক বদি ভাই রহমান তাকে আরেকটি উপন্যাস লিখতে বলেছিলেন, কিন্তু তার কলম দিয়ে লেখা আসছে না। দেশের রাজনৈতিক হানাহানি বড় বেশি দাম নিয়ে নিচ্ছে। মাঝে মাঝে বদি ভাই রহমান তাকে জিজ্ঞাসা করেন, নতুন উপন্যাস কতোদূর এগোচ্ছে, সে কোনো সাড়া দিতে পারে না। আবু সাঈদী হুজুর মন দিয়ে শোনেন, তারপর শুধান, "তোমার নতুন উপন্যাস কী নিয়ে লিখছো?" আনিসুল হাই মাথা নিচু করে বলে, "তিতু মীরের বাঁশের কেল্লা নিয়ে হুজুর।" তৃপ্তির হাসিতে আবদেল আবু সাঈদী হুজুরের মুখ আলোকিত হয়ে যায়। তিনি বলেন, "য়্যায় নওজোয়ান, তুমি সহী রাহে অগ্রসর হচ্ছো। উপন্যাস লিখতে গেলে নজর দিতে হবে চারপাশের ডামাডোল থেকে নিরাপদ দূরত্বে। আনেওয়ালা কাল কেমন হবে, আমরা জানি না, তা নিয়ে কল্পনা বিলাসিতায় ওয়াক্ত বরবাদ করার কোনো মানে হয় না। আমাদের নজরের একলওতি গন্তব্য তাই গুজরা হুয়া জামানা। হিন্দুর ভাষায় যাকে বলে অতীত, ভূত। ওখানে কী হয়েছে, কী হয়নি, সবই আমাদের জানা। সেই কী হয়েছের সঙ্গে একটুখানি কল্পনার কী হয়নি মিশিয়ে আমাদের কিতাব রচতে হবে। বর্তমান নিয়ে লিখতে গেলেই গণ্ডগোল। তাতে তোমার আপন সংসারের মানুষ তোমাকে পর করে দিতে পারে। তোমার দোস্ত হয়ে উঠতে পারে তোমার দুশমন। তোমার পড়োসান হয়ে উঠতে পারে জালিম। আর সমাজ হয়ে উঠতে পারে বৈরী। ইয়াহিয়া সাহেবের কথা বাদই দিলাম। কখনো সাম্প্রতিক সময় নিয়ে লিখবে না, তাতে মুশকিল বাড়ে। লিখবে এমন সময় নিয়ে, যে সময় নিয়ে লিখলে কোনো সমস্যা নাই। সিরাজউদ্দৌলা, তিতু মীর, শায়েস্তা খাঁ, এদের নিয়ে সাহিত্য লিখবে। সিরাজউদ্দৌলার মামাকে নিয়ে তুমি যে কাহানি রচেছো, তা পাঠ করে আমার দিল রওশন হয়েছে। আহা, কী চমৎকার বয়ান। আমার সাধ্য থাকলে তা ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করতাম। তোমাকে আরো অনেক লিখতে হবে। ফেরদৌসীর শাহনামা, মীর মশাররফের বিষাদ সিন্ধু, কায়কোবাদের মহররম শরীফের মতো অজরামর রচনা সৃষ্টি করতে হবে। লেখকের পুঁজি অতীত ও সমকালের মানুষের আখলাক। তা দিয়েই সে তার আপন ভূবন রচে। তাই লেখক একই সাথে খালেকও বটে। তুমি নিশ্চিন্ত মনে বাঁশের কেল্লা রচনা করো। এই হানাহানি গোলাগুলি মারামারি নিয়ে বেচেয়ন হয়ো না। এগুলো সাময়িক। জ্যৈষ্ঠের ভ্যাপসা গরমের পরই আষাঢ়ের বরসাত নামে, বাগিচায় বেলি চামেলি গুল খিলে। তুমি ডানে বামে না তাকিয়ে শায়েরিতে মন দাও।" এক অপূর্ব আশায় আনিসুল হাইয়ের বুক ভরে ওঠে। কিন্তু তার মনের কোনো জমা হওয়া কালি পুরোটা দূর হয় না। সে আবু সাঈদী হুজুরের একটি পা নিজের কোলে তুলে নিয়ে নীরবে টিপতে থাকে। কিন্তু তার মনের কোণে পুঞ্জ পুঞ্জ ক্ষোভ অশ্রু হয়ে এক ফোঁটা তপ্ততায় আবু সাঈদী হুজুরকে সচকিত করে তোলে। তিনি আরাম কেদারায় সোজা হয়ে বসে বলেন, "কী হয়েছে বেটা? মরদ আদমির তো রোদন শোভা পায় না। কী নিয়ে দুঃখ তোমার?" আনিসুল হাই অশ্রুগলিত কণ্ঠে আবু সাঈদী হুজুরের পা টিপতে টিপতে বলে, "হুজুর, চিলির শায়ের নিকানোর পারা বলেছিলেন, কাকে বলে শায়েরি, যদি ওয়াতন না টেকে?" আবু সাঈদী হুজুর তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, "ও একটা কাফের। ও শায়েরির কী বোঝে? এসব চিলি চিচিঙ্গার নাস্তিকদের কথায় কান দিও না। আমি যা বললাম, তা-ই করো।" তবুও আনিসুল হাইয়ের অন্তরে প্লাবন থামে না। আবু সাঈদী হুজুর সমঝদারের হাসি হাসেন। বলেন, "নওজোয়ানের চোখে আঁসু আনতে পারে কেবল তিনটি জিনিস। মুলতানের পেঁয়াজ, দোস্তের রক্ত ও মাশুকার ভর্ৎসনা। তুমি তো লজিং থাকো, পেঁয়াজ কাটতে হয় না। তোমার দোস্তরাও নিরাপদে আছে। তা মাশুকাটি কে?" আনিসুল হাই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলে, "বিলকিস!" আবু সাঈদী হুজুর এবার আরাম কেদারায় হেলান দিয়ে গড়গড়ার নল মুখে দিয়ে প্রসন্ন গুড়ুক গুড়ুক টান দেন তামাকে। মিষ্টি ইস্তাম্বুলী তামাকের গন্ধে বারান্দা মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। আনিসুল হাই নাক টেনে বলে, "সেদিন ইস্কাটনে পাশের বাড়ির আজাদদের বাসায় গিয়েছিলাম, সন্ধ্যাবেলা একটু গুফতাগু করার খায়েশে। গিয়ে দেখি বিলকিসও সেখানে বসে। জুয়েল আর বদি নামে দুটি বেয়াদব নাফরমানও সেখানে হাজির ছিলো। এ কথা সে কথার পর আজাদ বললো, দেশে যা হচ্ছে, তা ঠিক হচ্ছে না। এভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ কতল করা অপরাধ। হুজুর, আপনি তো জানেন, আমি শান্তি চাই। আশার কথা লিখি। কারণ আশার কথা লিখলে দুটো রূপি লাভ হয়। দেশ নিয়ে আম্লীগের আচরণকে আমি সমর্থনও করি না। পাকিস্তান আমার অন্তরের কর্দমে ফুটে থাকা পদ্ম। আমি তাদের বুঝিয়ে বললাম, ক্ষমতার লোভে শেখ সাহেব কেমন উন্মাদ হয়ে গেছেন। এ সমস্ত হানাহানির দায় তাঁরই। সাধারণ মানুষ শান্তি চায় বলেই গ্রামে গ্রামে পাড়ায় মহল্লায় শান্তি কমিটি হয়েছে। ইউসুফ সাহেব গত মাসে নিরীহ শান্তিপ্রিয় জামায়াতে ইসলামী কর্মীদের নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করেছেন। গোলাম আজম সাহেব নেজামে ইসলামী আর মুসলিম লীগকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ সময় এসব স্বাধীনতা স্বাধীনতা বলে জাতিকে বিভক্ত করার কোনো অর্থ হয় না। স্বাধীনতা বড় না গণতন্ত্র বড়? অবশ্যই গণতন্ত্র বড়। তখন ... তখন," আনিসুল হাই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। আবু সাঈদী হুজুর গড়গড়ায় নীরবে চুমুক দিতে দিতে বলেন, "বাতাও মেরে লাল। তখন?" আনিসুল হাই রুমাল বার করে অশ্রুধারা মুছে বলে, "তখন ঐ বেয়াদব জুয়েল আর বদি আমাকে তিরস্কার করলো। বললো, আমি নাকি চামার। আর ... আর বিলকিস ... বিলকিসও তাদের সঙ্গে সায় দিলো!" তার গলা ধরে আসে। আবু সাঈদী হুজুর নীরবে শুনে যান। আনিসুল হাই বলে, "আমি তখন গত সপ্তাহে আপনার বয়ানে শোনা ট্রয়লাস ও ক্রেসিডার কাব্য থেকে তাদের বয়ান করলাম। বললাম, অনেক শোর মচানোর পর, অনেক খুন বহানোর পর শেষে বেহেস্তে যায় ট্রয়লাস। সেখানে গিয়ে বেহেস্তের একটি বাগিচায় বসে সে বহু নিচে পৃথিবীর পানে দিদার দেয়। তাকিয়ে সে চোখের সামনে দেখতে পায় এক নয়া দিগন্ত। তার মনে হয়, সংগ্রাম আর ইনকিলাবমুখর মানুষের এই দুনিয়া কত ছোটি সি বাত, কত ফিজুল এই হানাহানি। স্বাধীনতার মতো ছোটো স্বার্থ, গদিতে বসার ছোটো লোভ নিয়ে হানাহানি করে মরছে ইনসান। ট্রয়লাসের মতো আমরা যদি একটু দূরে গিয়ে পাকিস্তানের দিকে তাকাই, তবে আজকের এই এক দুই লক্ষ আম্লীগের মৃত্যুকে অত বড় মনে হবে না। আমরা যেন না ভুলি, ইতিহাসে আমাদের কোনো দিন নিজেদের দেশ ছিলো না। আমরা কোনো দিন স্বাধীন ছিলাম না। যেহেতু কোনোদিন স্বাধীন ছিলাম না, তাই আজ স্বাধীন হওয়ার কোশেশ করা ভুল। স্বাধীন হয়ে কী করতে কী করে ফেলবো, তার কোনো ঠিক আছে? ... তখন, তখন আজাদ আমাকে বললো, তুমি একটা ছাগল। হোসেনশাহী আমলের কথা তুমি ভুলে গেছো? আর ... আর ...," আনিসুল হাই আবার চোখে রুমাল চেপে ধরে, "বিলকিসও তাতে সায় দিলো!" আবু সাঈদী হুজুর স্মিত মুখে গড়গড়া টানেন। আনিসুল হাই ধরা গলায় বলে, "আমি তবুও আপনার বয়ান থেকে স্মরণ করে বললাম, দ্যাখো আজাদ, আমরা পুরোপুরি রাষ্ট্রের অভিজ্ঞতাহীন জাতি। আমরা মোগলের চাবুক খেয়ে, ইংরেজের চাবুক খেয়ে, এই প্রথম রাষ্ট্র পেয়েছি। সবে বুঝতে শুরু করেছি একটি ইনসাফি বুনিয়াদে দাঁড়িয়ে থাকা আধুনিক রাষ্ট্র কী। কী করে তা সেনাবাহিনী দিয়ে চালাতে হয়। এ নিয়ে গোটা পাকিস্তানি জাতি কম চেষ্টা করছে না। তুমিই বলো, আজ তুমি আমি কি পাকিস্তান চালাতে পারবো? আমরা উচ্চশিক্ষিতরা একটা সাইকেল চালাতে গিয়ে বার বার কাত হয়ে পড়ে যাই, আর শেখ মুজিব কীভাবে দেশ চালাবেন? আর সব দেশই কোনো না কোনো সময় এ রকম সংকটের ভেতর দিয়ে যায়। বিলাতে বছরের পর বছর যুদ্ধ হয়েছে। আমেরিকায় বছরের পর বছর যুদ্ধ হয়েছে। সেখানে জনজীবন কীভাবে তছনছ হয়ে গেছে। সে তুলনায় আমরা কত দিকে ভালো আছি। বৈঠকখানায় বসে দু'দণ্ড গুফতাগু করছি। বেলা বিস্কুট দিয়ে চা খাচ্ছি। বিলকিসের সঙ্গে ছাদে বসে লুডু খেলছি। তখন ... তখন বিলকিস বললো, সে আর কখনো আমার সঙ্গে লুডু খেলবে না!" আনিসুল হাইয়ের বুক বিদীর্ণ করে কান্না উঠে আসে। আবদেল আবু সাঈদী হুজুর একটি হাত রাখেন আনিসুল হাইয়ের মাথায়। আনিসুল হাই ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে, "আমি তারপরও তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলাম, পাকিস্তানি জাতি আজ দাঁড়াতে চাচ্ছে, বড় হতে চাচ্ছে, জয় করতে চাচ্ছে। কিন্তু এই সমস্ত তালাশ ও আরমানের বুকের ওপর জল্লাদের মতো চেপে বসেছে আম্লীগের রাজনীতি। আজ এই শেখ সাহেবের দেখানো স্বাধীনতার দুঃস্বপ্নের ভুলভুলাইয়া থেকে আমাদের বেরোতে হবে। এই সব অপারেশন সার্চলাইট একটা সাময়িক ব্যাপার। যখন তুফান ওঠে, মনে হয় কোনো দিন এ বুঝি থামবে না। কিন্তু দেখা যায়, তুফান একসময় থেমে গেছে। তার পরে আসে এক লম্বি সি সুন্দর জামানা। আমাদের এখানেও তা আসবে আজাদ। গাছে গাছে গুল খিলবে, বাগিচায় শোনা যাবে কোয়েলের পুকার। আমি আর বিলকিস সেদিন ছেলেমেয়ে নিয়ে তোমার বাড়িতে বেড়াতে আসবো। তখন ... তখন বিলকিস বললো, সে মরে গেলেও কোনোদিন আমার মতো চামারকে শাদী করবে না!" আনিসুল হাই কাঁদতে কাঁদতে মোড়া ছেড়ে বারান্দার মেঝেতে গড়াগড়ি খায়। আবু সাঈদী হুজুর সস্নেহে আনিসুল হাইকে ধরে আবার মোড়ায় উঠিয়ে বসান। মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, "বুঝলাম বেটা, তোমার দিলে এ কীসের কুন্দন। কেন তোমার আঁখেঁ দুটি এমন মাখমুর। তোমার সমস্ত হয়রানির শাবাব আমার নজরে সাফ সাফ ধরা পড়েছে। শোনো হাই, পরওয়ারদিগার এ দুনিয়ায় দুই কিসিমের জানোয়ার তৈরি করেছেন। একটি জানোয়ার খুনে গরম, আরেকটির খুন সর্দ। যে জানোয়ারের খুন সর্দ, যেমন ধরো সাপখোপ কুমীর কচ্ছপ, তার জিসমের তাপমাত্রা মহল্লার তাপমাত্রার সঙ্গে ওঠে আর নামে। সে বৈশাখ মাসে জেগে উঠে নড়েচড়ে, একে ওকে কাটে, আর মাঘমাসে সর্দ-নিদে মগ্ন হয়। কী বুঝলে?" আনিসুল হাইয়ের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সে বলে, "হুজুর, আমি বুঝতে পেরেছি! আমাকে হতে হবে ঠাণ্ডা রক্তের জানোয়ার। যখন যেমন, তখন তেমন হতে হবে। যেদিকে বৃষ্টি, সেদিকে ছাতা ধরতে হবে। যখন আড্ডায় স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা উঠবে, তখন তাতে তাল মেলাতে হবে, আর আড্ডার বাইরে গিয়ে সেসব ভুলে যেতে হবে!" আবু সাঈদী হুজুর একটু বিব্রত কেশে বলেন, "বেটা, হয়েছে কী, কথাটা আসলে অন্য রকম ...।" আনিসুল হাই আবু সাঈদী হুজুরের হাত চেপে ধরে সোল্লাসে বলে, "আমি বুঝে গেছি হুজুর! যখন মহল্লা গরম, তখন আমিও গরম থাকবো, ৭ মার্চের ভাষণে যাবো, বিলকিসকে ছাদে ডেকে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বলবো, মহান জাতির মহান নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব! আজাদ জুয়েল বদিকে বলবো, তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা। আর যখন মহল্লা টিক্কা খানের আর্মির গোলাগুলিতে ঠাণ্ডা, তখন দৈনিক কচুবনে লিখবো, এ জাতি শান্তি চায়, রাজনীতি পচা। তাই না?" আবু সাঈদী হুজুর মিষ্টি হেসে বলেন, "বেটা, আল্লামা প্লেটোর কিতাব রিপাবলিক পাঠ করেছো?" আনিসুল হাই সলজ্জ মুখে বলে, "না হুজুর। উপন্যাসটা কার মামাকে নিয়ে?" আবু সাঈদী হুজুর আবার একটু কেশে বলেন, "ইয়ে ... কী বলে ... ওখানে একটা কথা আছে। আল্লামা প্লেটোর উস্তাদ আল্লামা সক্রাটেসকে একদিন এক শখস এসে শুধায়, দেশপ্রেম কী? জবাবে আল্লামা সক্রাটেস বলেছিলেন, বলছি, আগে আমার জন্য একটি মুরগা কিনে আনো। তখন সে শখস সক্রাটেসের জন্য বাজার থেকে একটি হৃষ্টপুষ্ট মুরগা কিনে আনে। সেটি পাক করতে করতে সক্রাটেস বলেন, নিজের কাজ সর্বোত্তমভাবে করে যাওয়াই সর্বোচ্চ দেশপ্রেম। ... তুমি কি বুঝতে পারছো বেটা, আমি কী বলতে চাইছি?" আনিসুল হাই বিব্রত মুখে হেসে বলে, "জ্বি হুজুর। আমি এক্ষণই কারওয়ানবাজারে যাচ্ছি, দেখি ভালো দেখে মুরগা পাই কি না।" আবদেল আবু সাঈদী হুজুর তার মাথায় হাত বুলিয়ে দু'আ করে বলেন, "যাও জওয়ান, নিশ্চিন্ত মনে আগে বাড়ো। মুল্লুক তুমহারা সাথ হায়। ফি আমানিল্লাহ। " আনিসুল হাই উৎফুল্ল মুখে বেরিয়ে আসে। তার বুক থেকে এক পাষাণভার নেমে যায়। এ শান্তির কাছে একটি মুরগার মূল্য নিতান্তই তুচ্ছ। আর বিলকিসের কাছে ছোটো হয়ে থাকবে না সে। দৈনিক কচুবনে এখন সে দিল উজাড় করে শান্তির সুনাম আর রাজনীতির বদনাম করে লিখবে। সেই সাথে আজ সন্ধ্যার আড্ডাতেই আজাদ, জুয়েল আর বদির কাছে তিন কপি "মামা" বিক্রি করবে সে। নিজের কাজ সর্বোত্তমভাবে করে যাওয়াই সর্বোচ্চ দেশপ্রেম। সে দেশপ্রেম আজাদের, জুয়েলের, বদির বা বিলকিসের দেশপ্রেম থেকে কোনো অংশে কম নয়।
false
ij
গল্প_ নিশি জলতরঙ্গের সুরে নকিয়াটা বাজল । বালিশের পাশে ছিল সেটটা । বালিশে হেলান দিয়ে বিছানার ওপর বসেছিল নিশি -ঝুঁকে তুলে নিল ওটা । ডিসপ্লেতে লেখা: রিজভী। হ্যালো। বল। রিজভী বলল, নিশি, শুন। আমি উত্তরায়। এখন থেকে ঠিক ১ ঘন্টা ১০ মিনিটি পর আমি সুইসাইড করব। এর মধ্যে তুমি উত্তরা আসতে না পারলে আমার লাশ দেখবা। কী! নিশির বুকটা ধক করে ওঠে। নাঃ শোন রিজভী। ফোন ডেড। রিজভী কি ফোনটা কেটে দিল? হ্যালো। রিজভী, হ্যালো। কী বলতেছ তুমি। শুন। নিশি চিৎকার করে ওঠে। তারপর এক লাফে বিছানা থেকে নামল। হায় আল্লা, রিজভী সুইসাইড করবে! কেন? আজ সাদা সালোয়ার-কামিজ পরেছিল নিশি। সবুজ ওড়নাটা বিছানার ওপরে । ঘুরে ওটা টেনে নিয়ে কাঁধে ফেলল। স্লিপার? স্লিপার কই? বুকটা ভীষন কাঁপছে। রিজভী! হায়, আল্লা-আমি এখন কী করি। স্লিপারটা দরজার কাছে। দ্রুত পরে নিল। চোখের পলকে দরজাটা খুলল। ওপাশে করিডর। আলো জ্বলে ছিল না। বাঁ দিকে ড্র্রইংরুম; টিউব লাইটের উজ্জ্বল আলো। টিভিটা অন করা। তবে কী কারণে সাউন্ড কমানো। আব্বা পা তুলে সোফার ওপর বসে। খালি গা। লুঙ্গি পরা। হাতের রিমোট। মন্টি, বড়পার বড় ছেলে, ওপাশের সোফায় বসে তরমুজ খাচ্ছে। মন্টির ফরসা মুখটা লাল। মন্টির পাশে মালিহা-ওকে দেখে হাসল। মালিহার হাতে খেলনা কীবোর্ড। সা রে গা মা ...সুর তুলছে মালিহা । ড্র্রইংরুমটা প্রায় দৌড়ে পেরিয়ে যায় নিশি। দরজাটা কীভাবে খুলল কে জানে। সিঁড়িতে আলো। ওপাশের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে মিলি আন্টি দাঁড়িয়ে; বাইরে থেকে ফিরলেন মনে হয়; হাতে সাদা প্লাস্টিকের ব্যাগ। কি রে কোথায় যাচ্ছিস? আসছি আন্টি। বলে লাফিয়ে নামল সিঁড়ির প্রথম ধাপে। তারপর কী ভাবে সিঁড়ির কটা ধাপ পেরিয়ে নীচে নামল। নীচে অন্ধকার। ঝিরঝির বৃষ্টি। একটা সিএনজি থেমে আছে। মিলি আন্টি কী এটায় ফিরল। উত্তরা। বলে উঠে পড়ল নিশি। ৫টা টাকা বেশি দিয়েন আপা। আচ্ছা। তখনও নিশির মনে হয়নি যে ও পার্সটা আনেনি। সিএনজিন ড্রাইভারটা বুড়ো। সিএনজিটা ঘুরিয়ে নিল সে । বুকটা ভীষন কাঁপছে নিশির। রিজভী কেন বলল, আমি ঠিক ১ ঘন্টা ১০ মিনিটি পর সুইসাইড করব। এর মধ্যে তুমি উত্তরা আসতে না পারলে আমার লাশ দেখবে। কেন বলল রিজভী? নিশি টের পায় ওর শরীর ভিজে গেছে ঘামে। সপ্তাখানে ধরে ঝগড়া হচ্ছিল ওদের। তাই বলে সুইসাইড? ঝগড়া তো প্রায়ই হয়। দুই বছরের সম্পর্ক। রিজভী। রিজভী। তুমি কেন সুইসাইড করবা? আমি কি করছি? হু হু করে ছুটছে সি এন জিটা; বাঁ পাশে দোকানের আলো। ফ্ল্যাটবাড়ির আলো। বিলবোর্ডের আলো। বৃষ্টির ঝাপটা আসে চোখেমুখে। তারপরও গরম লাগে নিশির। পানির তৃষ্ণা পেয়েছে ভীষণ । ভীষন অস্থির অস্থির লাগছে। আমার এমন লাগছে কেন? যদি আমি ১ ঘন্টা ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছতে না পারি? তো? কেন বলল রিজভী আমি তুমি উত্তরা আসতে না পারলে আমার লাশ দেখবে? হু হু করে ছুটছে সিএনজিটা; ডান পাশে ভিজে রেল লাইন। গাছপালা। বিলবোর্ডের আলো।দোকানের আলো। ফ্ল্যাটবাড়ির আলো। সিএনজিটা ভীষন দুলছে। এত ঘাম সারা শরীরে। আর তৃষ্ণা। মাথাটা ঠিক মত কাজ করছে না । কেমন অবশ অবশ লাগে। সামনে একটা জ্যাম। সিএনজিটা থামল। নিশি অস্থির হয়ে ওঠে। কী হইছে? প্রেসিডেন্ট যাইতেছেন মনে লয়। ওহ্ । যদি আমি ১ ঘন্টা ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছতে না পারি? তো? রিজভী? মিনিট দশেক ভীষনই উৎকন্ঠার মধ্যে কাটল। সিএনজিটা আবার হু হু করে ছুটতে শুরু করল। রিজভীদের বাড়িটা উত্তরায়। দোতলা বাড়ি। দূর থেকে অন্ধকারে কেমন জাহাজের মতন লাগছে। ঝিরঝির বৃষ্টিটা থামার লক্ষণ নেই। নিশি ‘রাখেন এইখানে’ বলাতে সিএনজিটা থামল। সি এন জি থেকে নামতেই মনে পড়ল টাকার পার্সটা আনেনি। আপনি অপেক্ষা করেন। আমি আবার যাব চাচা। অসুবিধা নাই আপা। আপনি টাইম মতন আইয়া পইরেন। নীচের ক্যালেপসাবল গেটটা আধ খোলা। দ্রুত পায়ে পেরিয়ে যায়। ভিতরে অন্ধকার। দুদ্দাড় করে সিঁড়ি ভাঙ্গে। রিজভী। রিজভী। তুমি কেন সুইসাইড করবা? আমি কি করছি? দোতলার কলিং বেলটা চেপে রাখল অনেকক্ষণ। দরজা খুলল কাকলী। ফরসা মুখ। বাদামী চুল। কালো চশমা। হলুদ নাইটি পরা। চোখ যায় নিশির। ব্রা পরেনি ...। রিভজী, রিভজী কোথায়? নিশি হাঁপাচ্ছে। ভাইয়া বাথরুমে। আসেন। ও। রিজভী বাথরুমে। তাহলে? তাহলে কি আমার সঙ্গে ফান করল রিজভী? ভিতরে আসেন । বলে কাকলী সরে যায়। ভিতরে টিউব লাইট জ্বলেছিল। বেশ বড় ড্রইংরুম। কালো সোফা। নীল কার্পেট। ছোট গ্লাসের টেবিল। ওপাশে বড় একটা প্লাজমা স্ক্রীনের টিভি। টিভিটা অন করা। ডানপাশে ডাইনিং টেবিল। টাক মাথা, ফরসা, চশমা আর স্যান্ডে গেঞ্জি পরা এক ভদ্রলোক ডাইনিং টেবিলে চেয়ারে বসে আছেন । টেবিলে কলা। পানির জগ আর আধ-কাটা তরমুজ। ভদ্রলোক কাঁটা চামচ দিয়ে তরমুজ খাচ্ছেন। চোখ টিভির দিকে। বসেন। কাকলী বলল। নিশি আড়ষ্ট ভঙ্গিতে একটা সিঙ্গেল সোফার ওপর বসল। কাকলীকে বলল, রিজভীর শরীর কেমন? ভালোই। তবে ব্যথা উঠলে ভীষন ছটফট করে। কাকলী বলল। রিজভীর সঙ্গে আমার জরুরি দরকার ছিল। ওকে একটা খবর দেন। বলছি। বলে কাকলী চলে যায়। নিশি টিভির দিকে তাকাল। এতক্ষণে খেয়াল করল-আশ্চর্য! টিভির ভলিউম কমানো। আল জাজিরার খবর চলছে। একটু পর কাকলী ফিরল। কাকলীর হাতে একটা গ্লাস। গ্লাসের ভিতরে লাল কী যেন। লিকুইড। তরমুজের শরবত বলে মনে হল। বলল, ভাইয়াকে বলছি। আসতেছে। নেন, তরমুজের সরবত খান। বলে গ্লাসটা বাড়িয়ে দিল কাকলী। নিশি গ্লাসটা নিল। ওকে তরমুজ দিলি ক্যান? টেবিলে বসা সেই ফরসা টাকঅলা ভদ্রলোক খেঁকিয়ে উঠলেন। কাকলী রীতিমতো হতভম্ভ। তাইলে কি দিব খালু? ওকে সেভেনাপ দে। দেখনা রৌদ্রে কেমন ঘামায় গেছে গা। কন কি খালু? রাত্রেবেলা রৌদ্র পাইলেন কই? চুপ কর তুই ! নিশি আপারে সেভেনাপ দিব? হ। তরমুজও তো ঠান্ডা খালু। খাইলে ঘাম শুকায়া যাইব। আহা, তর্ক কইর না। তিন সপ্তাহ হয় নাই ঢাকায় আরছে। পাখা গজাইছে। না? নিশির হঠাৎ মনে পড়ল- মানুষ বাথরুমেও সুইসাইড করে। কাকলী তখন বলল: রিজভী বাথরুমে। নিশি গ্লাসটা সামনের ছোট টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ায়। তারপর ভিতরের দিকে যেতে থাকে । এই নিশি! তুমি কই যাও! বলে কাকলী ওকে জড়িয়ে ধরে। এই! নাঃ। ছাড়। টাক মাথা ভদ্রলোকও দ্রুত উঠে আসেন। বলেন, না; তুমি ভিতরে যাইবা না। তুমি ভিতরে যাইবা না। গেলে পুলিশ ডাকব। নাঃ। ছাড়। নিশি চিৎকার করে ওঠে। দুইজন নিশিকে শক্ত করে জাপটে ধরে। ছাড়েন। ছিঃ। নিশির দম বন্ধ হয়ে আসে। ওর সারামুখে চটচটে ঘাম। চোখ মেলতে অসুবিধা হচ্ছে। ভালো করে চোখ মেলে দেখল টিউব লাইটের আলোয় বড় আপু। বড় আপু ওকে ঝাঁকাচ্ছে। কী রে নিশি। কী হইচে তোর। নিশি হতভম্ব। ওর ঘোর তখনও কাটেনা। কি রে? স্বপ্ন দেখছস? নিশির কী বলতে যাবে-গলায় স্বর ঠিক মতন ফুটল না। কি হইসে রে নিশি? আপা পানি। কন্ঠস্বর ফ্যাসফ্যাসে। আচ্ছা পানি দিতাছি। বড় আপা উঠে ঘর ছেড়ে চলে যায়। চলে যাওয়ার আগে টিউব লাইট অফ করে দেয়; জানালার পরদাও সরিয়ে দিয়ে যায়। জানলা দিয়ে রোদ ঢুকল। নিশির মাথাটা ঠিকঠাক কাজ করছে না। নিঃশ্বাস নিতে এখনও কষ্ট হচ্ছে। মাথার ভিতরে কাটা কাটা ছবি। ঝিরঝির বৃষ্টিটা ...অন্ধকার। সিএনজির আওয়াজ। রিজভীদের উত্তরার দোতলা বাড়িটা । অন্ধকারে কেমন জাহাজের মতন লাগছে। বড় আপা পানি নিয়ে এল। ঢকঢক করে পানি খেল নিশি। তারপরও তৃষ্ণাটা গেল না। কি হইসে রে নিশি? আমারে বল তো? রেজাল্ট খারাপ করছস? না। তাইলে? কাকলী। কে? কাকলী; রিজভীর খালাতো বোন। তো কী হইছে। কাকলী রংপুরের মেয়ে । তো? ইন্টার পাস করছে। তো? এখন ঢাকায় রিজভীদের বাড়ি থেকে পড়বে । ও। বুঝছি। তাই তোর এত টেনশন? নিশি চুপ করে থাকে। কাকরীরে তুই দেখছোস? হ্যাঁ। কোথায়? ল্যাব এইডে। ল্যাব এইডে? ক্যান? ২ সপ্তাহ ধরে রিজভীর বুকে ব্যথা। ল্যাব এইডে এক্সরে করতে আসছিল। রিজভীর বুকে ব্যথা? হ্যাঁ। ২ সপ্তাহ ধরে। তারপর? রিজভী ফোন করে আমাকেও ল্যাব এইডে যেতে বলছিল। ও ভয় পাইতেছিল। খালাম্মার সঙ্গে তখন ল্যাব এইডে কাকলীও ছিল। তখন দেখছি। ল্যাব এইড থেকে আমরা ম্যাগডোনান্ডসে খাইতে গেলাম। কাকলী মেয়েটা ভালোই। আলাপী। আমারে মোবাইলন নম্বর দিল। প্রায়ই ফোন করে। অ। তা কেমন দেখতে রে কাকলী? খুব সুন্দরী। ফরসা । লম্বা। শিল্পা শেঠীর মতন দেখতে। বলে নিশি চুপ করে থাকে। বড় আপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আচ্ছা। তুই বয় নিশি। আমি চা বানায়া আনি। তারপরে দুইবোনে মিলে চা খাইতে খাইতে পরামর্শ করব কী করা যায়। আটতলার ফ্ল্যাটের জানালার ওপাশে সকাল বেলার ধূসর রঙের আকাশ। সেদিকে চেয়ে নিশি ভাবল-কয়টা বাজে? নকিয়াটা বালিশের পাশে ছিল। সেটটা তুলে নিল। আটটা বেজে দশ মিনিট। মোবাইলটা বিছানায় রাখতেই বাজল। নিশি সেটটা তুলে নিল। কাকলী। ভীষন চমকে উঠল নিশি ...কাঁপা কাঁপা বলল ... হ্যালো ... সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৮:২০
false
rn
রোগ প্রতিরোধ এক লোক খুব ঘন ঘন ডাক্তারের কাছে যান বলে এক বন্ধু জানতে চাইলো সমস্যাটা কী। তো সে বলে যে, ‘আরে, ডাক্তারদের খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে না!’ বন্ধু জিজ্ঞাসা করলো, তাহলে ওষুধ কিনছে কেন? ‘কারণ ফার্মেসির লোকজনের খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে তাই!’ তাহলে, বন্ধু আবার জানতে চাইলো, ওষুধ কিনে সে বাসায় আনছে, কিন্তু ওষুধ খাচ্ছে না কেন? হাসিমুখে ভদ্রলোক বললেন, ‘আরে, আমাকেও তো বাঁচতে হবে নাকি?’ মশার কামড়ে যেসব রোগ মানুষের দেহে ছড়ায় সেগুলো হচ্ছে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া।এই রোগ আমাদের দেশে সনাতন পদ্ধতিতে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা করে নির্ণয় করা হয়। এতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া জীবাণু দেহে থাকা সত্ত্বেও অনেক কারণে জীবাণু পাওয়া যায় না।যাদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় আমরা বলি অ্যাজমার রোগী। যাকে বাংলায় বলে হাপানি। অ্যাজমা হলে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। সে সময় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, শ্বাসের সঙ্গে একটা টান চলে আসে। এ টানকেই বলে হাপানি। যখন মানুষের লাংগস বা ফুসফুস যথেষ্ট পরিমাণ বাতাস টানতে পারে না তখন শরীরে বাতাসের অভাব দেখা দেয়। আর এটাকেই আমরা অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়া বুঝি। শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে বেশি। আর শীতকালে ঠান্ডাজনিত অ্যালার্জির কারণে অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি থাকে বেশি।ফার্স্ট ফুড নয়, প্রচুর তাজা ফল সবজি খান। দৈনন্দিন জীবনযাপনে এরকম ছোটখাট পরিবর্তন আয়ু যেমন বাড়াবে তেমনি ডায়াবেটিসের মত ক্রনিক রোগ ও এর জটিলতা থেকেও বাচাঁবে।উচ্চ রক্তচাপ কি? উচ্চ রক্তচাপ বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। সারা বিশ্বে ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনী রোগের জন্য উচ্চ রক্তচাপ একটা গুরুত্বপূর্ণ রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান।ভিটামিন-সি পানিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন। এটি একটি এন্টি-অক্সিডেন্ট। মানব শরীরে এর প্রয়োজনীয়তা অনেক। শরীরের ক্ষত শুকাতে, খাদ্যনালী থেকে লৌহ শোষণ করতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কত কাজে দরকার ভিটামিন-সি! অনেক রোগ প্রতিরোধেও ভিটামিন-সি কার্যকর। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এসব।সারদিনের খাটুনির পর রাতের ঘুম দেয় প্রশান্তি। দূর করে সব ক্লান্তি। দেয় পরদিন নতুন উদ্যেমে কাজ করার শক্তি। কিন্তু ঘুমটি হওয়া চাই নির্বিঘ্ন ও অবশ্যই পর্যাপ্ত। ঘুম যদি পর্যাপ্ত না হয় তাহলে তা শরীরের ওপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা অপর্যাপ্ত ঘুম নিরবে শরীরের নানা ক্ষতি করে।এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার জনের মধ্যে ৪ জন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। আর ৫ বছর বয়সের নিচের শিশুদের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার জনের মধ্যে ১৯ জন টাইফয়েডে ভোগে। অর্থাৎ অন্যান্য অনেক রোগের মতো টাইফয়েডের হুমকিও শিশুদের জন্যই বেশি।রোগটি জটিল আকার ধারণ করলে নিউমোনিয়া থেকে শুরু করে হৃদরোগও দেখা দিতে পারে। এছাড়া পেট ফুটো হওয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনা তো রয়েছেই। পানি বা পানিযুক্ত খাদ্যসামগ্রী থেকেই সাধারণত টাইফয়েড রোগটি দেখা দিয়ে থাকে।এপিলেপ্সি রোগের কথা কেউ শোনেননি বা এপিলেপ্সির রোগীকে কেউ দেখেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমাদের সমাজের আশপাশের অনেক পরিবারেই রয়েছেন এপিলেপ্সি রোগী। এসব রোগীকে নিয়ে পরিবারের দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনার শেষ থাকে না।এপিলেপ্সি রোগীকে অনেকে জিনে বা পরীতে ধরেছে বলে মনে করেন। কেউ কেউ ভাবেন তার ‘হাওয়া’ (বাতাস) লেগেছে। আসলে এসবের বৈজ্ঞানিক কোনো কারণ নেই। এগুলো মূলত কুসংস্কার। আর আমাদের দেশে কী অশিক্ষিত, কী শিক্ষিত অনেকের মনেই নানা ধরনের অন্ধবিশ্বাস বা কুসংস্কার বিস্তার লাভ করে রয়েছে।
false
rn
মেজর জেনারেল জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর শুনে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন, প্রেসিডেন্ট নিহত, তাতে কী হয়েছে _ ১৫ আগষ্ট । শুক্রবার । মেজর ফারুকের জন্মবার । তার জন্মের পরপরই আজান হয়েছিল। কাজেই এই দিনটি তার জন্য শুভ । ফারুকের স্ত্রী ফরিদা কোরান শরীফ নিয়ে জায়নামাজে বসেছেন। শুভ সংবাদ (?) না-পাওয়া তিনি কোরান পাঠ করেই যাবেন। মসজিদে আজান হচ্ছে। শেখ মজিব বললেন, তোমরা কি চাও? শেখ মুজিবের কঠিন ব্যক্তিত্বের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব । শেখ মুজিব আবার বললেন, তোমরা কী চাও ? মেজর মহিউদ্দিন বলল, স্যার একটু বাইরে আসুন। কোথায় আসবো ? মেজর আবারও আমতা আমতা করে বলল, স্যার, একটু আসুন । শেখ মুজিব বললেন, তোমরা কি আমাকে খুন করতে চাও ? পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে কাজ করতে পারেনি, সে কাজ তোমরা করবে ? এই সময় স্বংয়ক্রিয় অস্ত্র হাতে ছুটে এলো মেজন নূর। শেখ মুজিব তার দিকে ফিরে তাকানোর আগেই সে ব্রাশফায়ার করল। সময় ভোর পাঁচটা চল্লিশ। বঙ্গপিতা মহামানব শেখ মুজিব সিড়িতে লুটিয়ে পড়লেন। বত্রিশ নম্বরের বাড়িটিতে কিছুক্ষনের জন্য নরকের দরজা খুলে গেল । একের পর এক রক্তভেজা মানুষ মেঝেতে লুটিয়ে পড়তে লাগল । ( দেয়াল, পৃঃ ১০২, হুমায়ূন আহমেদ। ) বঙ্গবন্ধু মন খারাপ করে ৩২ নম্বর বাড়ির উঠানে এসে দাড়ালেন। সঙ্গে সঙ্গে তার মন ভালো হয়ে গেল। উঠান ভরতি মানুষ। ভুখা মিসিলের মানুষ না। সাধারণ মানুষ, যারা বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখতে এসেছে। স্লোগান শুরু হলো, 'জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু'। বঙ্গবন্ধু হাসি মুখে তাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লেন। ধব ধবেসাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা অতি সুপুরুষ এক যুবক দামি ক্যামেরায় মিছিলের ছবি তুলছে। যুবক একপর্যায়ে ইশারায় বঙ্গবন্ধুর ছবি তোলার অনুমতি প্রার্থনা করল।বঙ্গবন্ধু উচ্চ স্বরে বললেন, ছবি তুলতে চাইলে তুলবি। অনুমতির ধার ধারবি না। যুবককে বঙ্গবন্ধুর পরিচিত মনে হচ্ছে। তবে তিনি তারনাম মনে করতে পারছেন না।হঠাৎ হঠাৎ তার এ রকম হয়, নাম মনে আসে না। যুবক এসে বঙ্গবন্ধুকে কদমবুসি করল।বঙ্গবন্ধু বললেন, কই মাছ খেয়ে যাবি।কই মাছ ভাজা হচ্ছে। ( দেয়াল, পৃঃ ৯০,৯১, হুমায়ূন আহমেদ। ) মানুষের আত্মার মতো দেশেও আত্মা থাকে । কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশের আত্মা দেশ ছেড়ে গেল । শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুসংবাদ প্রচারিত হওয়ার পরপর টুঙ্গিপাড়ায় তার পৈতৃক বাড়িতে স্থানীয় জনগন হামলা করে এবং বাড়ির সব জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় । মেজর জেনারেল জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর শুনে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন, প্রেসিডেন্ট নিহত, তাতে কী হয়েছে ? ভাইস প্রেসিডেন্ট তো আছে । জিয়াউর রহমান তার শক্তি দেখাতে শুরু করলেন- মাত্র দুই মাসে জিয়াউর রহমানের নির্দেশে ১১৪৩ জন সৈনিক ও অফিসারকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো হয়। পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনলেন যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে। নাগরিত্ব দিলেন এবং বিশেষ ক্ষমতায় বসালেন। সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:২০
false
rg
প্রথম আলো'র ফান বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ধ্বংস করার নীলনকশার অংশ!! প্রথম আলো তাদের ফান পেজ রস-আলো-তে সাতজন ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট খেলোয়াড় (ক্যাপ্টেন এমএস ধোনি, অজিংকা রাহানে, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজা, শিখর ধাওয়ান ও রবীচন্দন অশ্বিন)-এর ছবি অর্ধেক নেড়ে করে একটা ফেক বিজ্ঞাপন বানিয়েছে। যেখানে বাংলাদেশী পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের নাম ও ছবি ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে টাইগার স্টেশনারি, এখানে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত মুস্তাফিজ কাটার পাওয়া যায়। স্টেডিয়াম মার্কেট, মিরপুর, ঢাকা। এর ঠিক নিচে সাতজন ভারতীয় ক্রিকেটারের অর্ধেক নেড়ে ছবি দিয়ে সেখানে লিখেছে- আমরা ব্যবহার করেছি, আপনিও করুন।প্রথম আলো বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় প্রথম শ্রেণীর দৈনিক পত্রিকা। সেই পত্রিকা এভাবে একটি জঘন্য ফেক বিজ্ঞাপন বানিয়ে বাংলাদেশী তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও সাতজন ভারতীয় ক্রিকেটারকে যেভাবে অপমান করেছে, যে ভাষা ব্যবহার করেছে, যে রুচিবোধের পরিচয় দিয়েছে, তাতে এই দৈনিক পত্রিকায় যে কোনো রুচিশীল ব্যক্তি এখন আর কাজ করেন না, তা তারা হারে হারে প্রমাণ করেছে। একটি দৈনিক পত্রিকার রুচিবোধ, পছন্দ এবং ফান করার মত মেধা কতোটা দেউলিয়া হলে, তারা এমন একটি জঘন্য অপকর্ম করতে পারে, তা যে কোনো বোধসম্পন্ন ব্যক্তি-ই এর নিন্দা করবে। ভারতীয় একটি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া এই সংবাদটি ছেপে সেখানে দাবি করেছে, বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলো ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেটারদের নগ্নভাবে অপমান করেছে। 'বাংলাদেশী নিউজপেপার মকস ইন্ডিয়ান টিম' হেডিংয়ের ওই নিউজটিতে এখন পর্যন্ত ৬১৩টি কমেন্ট পড়েছে। যেখানে অধিকাংশ ভারতীয় জঘন্য ভাষায় এর প্রতিবাদ করেছে। পাশাপাশি তারাও বাংলাদেশকে জঘন্য ভাষায় গালাগালি করেছে। এখন দেখার বিষয় আমাদের তথ্য মন্ত্রণালয় যার অধীনে দৈনিক পত্রিকা, তারা এখন প্রথম আলো'র বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়। প্রথম আলো'র যার মাথা থেকেই ফেক এন্টি কাটারের এই বিজ্ঞাপনের আইডিয়া আসুক না কেন, এটি যে শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটকেই অপমান করেছে তাই নয়, বাংলাদেশের জাতীয় দলের পেসার মুস্তাফিজকে নরসুন্দর বা নাপিতের সঙ্গে তুলনা করেছে। আর সাতজন ভারতীয় ক্রিকেটারকে দেখানো হয়েছে মুস্তাফিজের ক্লায়েন্ট। কী জঘন্য! প্রথম আলো এমন ফান করার ঔদ্বত্ত্য দেখিয়েছে, যা বাংলাদেশকেও অপমান করার সামিল। কি নিয়ে ফান করা যায়, কতোটা ফান করা যায়, তা যদি প্রথম আলো'র মত একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিকের মেধা ও রুচিবোধে না কুলায়, তাহলে এর প্রথম ও প্রধান প্রতিবাদ হওয়া উচিত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যাতে অন্য কোনো দৈনিক এমন ফান করার দুঃসাহস না দেখায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এভাবে ভারতীয়দের গালাগালির টার্গেট বানানোর প্রথম আলোর নীলনকশা মোটেও কেবল ফান-বিজ্ঞাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অত্যন্ত পরিকল্পিত করেই প্রথম আলো বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিশ্বে ছোট করার হীন উদ্দেশ্য নিয়েই এই জঘন্য কাজটি করেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করার জন্য এটি প্রথম আলোর একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এটাকে হালকাভাবে দেখার কোনোই সুযোগ নেই।বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের বিতর্কিত কোয়ার্টার ফাইনালের পর আইসিসি'র প্রেসিডেন্ট আহম মোস্তফা কামাল পদত্যাগ করেন। আইসিসি'র চেয়ারম্যান ভারতীয় শ্রীনিবাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের মোস্তফা কামালের যুদ্ধ এখন অনেকটা প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। আগামী বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নাকানো চুবানো খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন মহল ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে চেষ্টা করছে। তেমন একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে প্রথম আলো যে অপকর্মটি করেছে, এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটকেই বিশ্বে অপদস্থ করার সামিল। এমনিতে এই প্রথম আলো আবার বাংলাদেশে ভারতীয় আনন্দবাজার পত্রিকার প্রকাশ্যে ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে দালালি করে। এবার সেই প্রথম আলো কি উদ্দেশ্যে, কাদের পরামর্শে, কোন লক্ষ্যে এমন একটি অপরাধ করল, তা মোটেও যে সহজ কোনো ভাবনার প্রতিফলন নয়, এটা যারা মনে করবেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করবেন। প্রথম আলো অত্যন্ত গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এটি করেছে। এটাকে হালকাভাবে দেখার কোনোই সুযোগ নেই।প্রথম আলো যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করেই, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, সুচিন্তিত ভাবেই এই অপকর্মটি করেছে। যাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এক ধরনের ঝামেলা মোকাবেলা করতে হয়। তার মানে প্রথম আলো এই বিজ্ঞাপনের আড়ালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ক্ষতি চায়, এটাই আসল কথা। প্রথম আলো'র এই অপকর্মের তীব্র প্রতিবাদ করছি। পাশাপাশি এই অপরাধের জন্য প্রথম আলোকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়াার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করছি। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ছোট করার মত ঔদ্বত্ত্য প্রথম আলো কোথায় পেল, তার জবাবদিহিতাও সরকারকে এখন নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা এমন সুযোগ নিয়ে ভবিষ্যতে অনেকেই আমাদের জাতীয় ক্রিকেট নিয়ে নানান কিসিমের ফান ও মস্করায় মেতে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে। আশা করি, তথ্য মন্ত্রণলায় বিষয়টি সিরিয়াসলি বিবেচনা করবে। কারণ, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এই ঘটনাকে মোটেও সহজভাবে নেবে না। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আসলে অভিশাপ বয়ে আনবে। যা আমরা মানতে পারি না। প্রথম আলো'র এই জঘন্য অপকর্মের পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড নিশ্চয়ই এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে এর ব্যাখ্যা চাইতে পারে। যা দু'দেশের ক্রিকেট সম্পর্ককে ভবিষ্যতে আরো কঠিন করে তুলবে। যা প্রথম আলো'র পরিকল্পিত কোনো নীলনকশারই অংশ। আমরা প্রথম আলো'র এই ফানের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে চাই। নইলে এভাবে কোনো দেশের জাতীয় ক্রিকেটারদের অপমান করার মত ঔদ্বত্ত্য যে কারোরই থাকা উচিত নয়, সেটি সবাইকে আগে উপলদ্ধি করতে হবে। নইলে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নানাভাবে প্রথম আলো'র মত অনেকেই পেছন থেকে কোপ মারার চেষ্টা করবে। যা এখনই শক্তহাতে দমন করতে হবে। এজন্য কোনো ধরনের শীতলতা বা গরিমসি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই ভয়ানক দুঃখসংবাদ ডেকে আনতে পারে। অতএব সাধু সাবধান।১ ঝুলাই ২০১৫ঢাকা সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:০৬
false
fe
আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ও গণমানুষের প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ও গণমানুষের প্রত্যাশাফকির ইলিয়াস====================================================বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। দলে গুরুত্বপূর্ণ রদবদল হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এসেছেন, বিশিষ্ট রাজনীতিক ওবায়দুল কাদের। তাঁর একটি সুসংহত রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। বলা দরকার, তিনি তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা। ছাত্রলীগ করেছেন। জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। নিষ্ঠ থেকেছেন জাতির জনকের আদর্শের প্রতি। দলে গণতন্ত্র দরকার। এটি একটি প্রয়াস। বাংলাদেশের মতো দেশে দলীয় সভাপতি বদলানো সহজ কাজ নয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই- মানুষ বাংলাদেশে দলের চেয়ে নেতা-নেত্রীর নামকেই প্রাধান্য দেয়। এবারও তাই হয়েছে। দলীয় প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাই থেকেছেন। তিনি দলের ঐক্যের প্রতীক, তা বারবারই প্রমাণিত হয়েছে।এবারের কাউন্সিলের পরও শেখ হাসিনা জাতির প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন- তা আমার কাছে তার দূরদর্শী রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বহন করেছে বলে হয়েছে। তিনি বলেছেন- ‘আমি অনুরোধ জানাবো, আপনারা আপনাদের নিজ নিজ এলাকায় ইমাম, ধর্মীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন। প্রত্যেক মসজিদে যেন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। কোনো এলাকায় জঙ্গিবাদ থাকবে না, এ সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।’ তিনি আরো বলেছেন- ‘বিশ্বব্যাপী এ জঙ্গিবাদ বিরাট সমস্যা। এ সমস্যার সমাধান আমাদের নিজেদের করতে হবে। কারো মুখাপেক্ষী থাকলে চলবে না।’তাঁর এ কথাটি খুবই সমসাময়িক ও জরুরি। যা আজ গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে তুলেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে যোগ করেছেন- ‘আমরা চাই বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হোক। আমরা যে উন্নয়নগুলো করেছি, এ উন্নয়নের প্রচারটা করতে হবে। জনকল্যাণে মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে কাজ করতে হবে। সামনে ইলেকশন, মনে রাখতে হবে। ইলেকশনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণের জন্য কী কী কাজ করলাম, জনগণকে তা জানাতে হবে। আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে আরো উন্নয়ন হবে। অর্থনীতিকে সুসংহত করার জন্য যে কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি- এ কথাগুলো না বললে মানুষজন জানবে কীভাবে?’২২, ২৩ অক্টোবরের কাউন্সিল ওবায়দুল কাদেরকে তিন বছরের জন্য এ পদটি দিয়েছে। তিনি একজন চৌকস মন্ত্রী। মাঠে-ঘাটে তাঁকে দেখা যায়। তিনি জানিয়েছেন, দলের তৃণমূল পর্যায়ে তাঁর অথরিটি ছিল না। এখন তিনি তা পেয়েছেন। দলকে গোছাতে এখন বেশি সময় দেবেন। তিনি বলেছেন- ‘আমি আমার পরিশ্রমের পুরস্কার পেয়েছি। আমি আমার রাজনীতির জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পেয়েছি। শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ স্বীকৃতি আমাকে দিয়েছেন।’আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার যে ডাক দিয়েছেন, সে অনুযায়ী শক্তিশালী ‘টিমওয়ার্ক’ গড়ে তোলা, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত গণসংযোগ দৃঢ় করা একটি প্রধান কাজ। জনগণের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আচরণ পরিবর্তন করার কথাও বলেন নতুন সাধারণ সম্পাদক।তাঁর কথাগুলোতে দৃঢ়তা আছে। তিনি বলেছেন- ‘এখন আমার সুবিধা হবে। আমি এখন রাস্তায় যাবো, তৃণমূলে যাবো। আমি এখন একদিকে রাস্তা দেখবো, অন্যদিকে- আগে যেহেতু আমার অথরিটি ছিল না, সে জন্য আমি সমাধান দিতে পারতাম না, শুধু শুনতাম। এখন আমি সামাধান দিতে পারবো, প্রয়োজনে মোবাইল ফোনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলীয় সভাপতির সঙ্গে কথা বলে বা অন্য কারো সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে স্পটেই সিদ্ধান্ত দিতে পারবো।’ তিনি এ কথাও যোগ করেছেন- ‘আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। এ দায়িত্ব সুবিশাল। আমি একটি অঞ্চলের হলেও আমার মধ্যে কোনো আঞ্চলিকতা থাকবে না। আমি যখন এখানে আসি, তখন একটি অঞ্চলের শ্লোগান শুনেছি। তবে এখন আমি আঞ্চলিকতার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করবো। সবার ওপরে দেশ।’হ্যাঁ, সবার ওপরে দেশ- এ কথাটিই একজন রাজনীতিকের ব্রত হওয়া উচিত। এখানে আরেকটি কথা বলা খুবই প্রাসঙ্গিক। তা হলো, এবার বিভিন্ন তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা আওয়ামী লীগে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে আসার অনুরোধ করেছিলেন। জয়, তা বিনয়ের সাথেই প্রত্যাখ্যান করেছেন। দলের পদে থাকার অনাগ্রহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘বিদেশে থেকে দলীয় পদ ধরে রাখা ঠিক না। তবে আমি দল ও দেশের জন্য কাজ করতে চাই।’ ২৩ অক্টোবর বিকালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের গবেষণা সেল সিআরআইর স্টল পরিদর্শনে গেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে, জয় রাজনীতির জন্যই নিজেকে তৈরি করছেন। আমরা প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে তাকালে দেখবো, সোনিয়া গান্ধী চাইলে রাহুল গান্ধীকে যে কোনো মন্ত্রী আগেই বানাতে পারতেন। কিন্তি তিনি তা করেননি। বরং সময় নিচ্ছেন। বলা দরকার- এটাই ধীশক্তিসম্পন্ন রাজনীতির প্রবহমান ধারা গোটা বিশ্বব্যাপী। সজীব ওয়াজেদ জয়, বাংলাদেশের গণমানুষের জন্য যা করছেন তা খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয়। তিনি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং হাইটেক পার্কে বরাদ্দের ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বেশ আগেই। এর আগে তার নির্দেশেই হাইটেক পার্ক উন্নয়নের দায়িত্ব পাওয়া সামিটের হাইটেক পার্কের জায়গা বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করা হয়। তিনি বেশ স্পষ্টই জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে তার নিজস্ব বিনিয়োগেই উন্নয়ন কাজ করতে হবে। কোনো ধরনের অনৈতিক সুযোগ দেওয়া যাবে না। তিনি নৈতিকতা ও সততার সঙ্গে দেশের স্বার্থে দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মকর্তাদের আহবান জানিয়েছিলেন গত নভেম্বর মাসে।আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দুইদিনই কাউন্সিলররা সজীব ওয়াজেদ জয়কে এবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এ প্রেক্ষিতে সম্মেলনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সজীব ওয়াজেদ জয় এখনই অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আছে। ও তো আমার উপদেষ্টা।’জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এবারই প্রথম কাউন্সিলর হয়েছেন ৪৫ বছর বয়সী সজীব ওয়াজেদ জয়। পিতৃভূমি রংপুর থেকে তাকে কাউন্সিলর করা হয়। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনও কাউন্সিলে অংশ নেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে পেয়ে আগের দিনের মতোই উৎফুল্ল ছিলেন দলের নেতারা। শেখ হাসিনাপুত্র কাউন্সিলে যোগ দিলে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাদের শেষ ভরসা। আর এখানে আছেন আরেকজন শেষ ভরসা জয়। জয় আসবে, তার বন্ধুরা আসবে। তিনিই নেতৃত্ব দিয়ে ভবিষ্যতে দলকে এগিয়ে নেবেন।’ একটি আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবারে শেখ হাসিনার বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘এ আওয়ামী লীগই আমার পরিবার। আওয়ামী লীগই আমার আপনজন। আওয়ামী লীগকে আমি সবচেয়ে বেশি সময় দিই। আমি নিজের ছেলেমেয়েকেও এত সময় দিইনি। আমার বাচ্চাদের আমি স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছি। আপনাদের বেশি সময় দিয়েছি।’এগিয়ে যাওয়ার জন্য ‘নতুনভাবে নেতা নির্বাচিত করার’ তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যেখানে যেভাবে থাকি আওয়ামী লীগ থেকে তো বাইরে থাকবো না। আছি আওয়ামী লীগই তো থাকবো। কিন্তু আওয়ামী লীগকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে।’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষকে একটি দেশ দিয়েছে। এ দলের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। এ দলই এ দেশে ঘাতক দালালদের বিচার করেছে। আমার মনে পড়ছে, ঘাতক দালাল নির্মূল সমন্বয় কমিটির বিভিন্ন সভায়, আমি যখন বারবার শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে প্রশ্ন করতাম- ‘তাহলে কীভাবে এ বিচার হবে, মা’? তিনি মুচকি হেসে উত্তর দিতেন- আওয়ামী লীগই এ বিচার করবে। হ্যাঁ, করেছেও। শহীদ জননী দেখে যাননি। কিন্তু বিচার হয়েছে, বিচার চলছে। এটাই শহীদ জননীর দূরদর্শী চিন্তার আলো।আওয়ামী লীগের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। এ প্রত্যাশা দলটিকে পূরণ করতে হবে। প্রথমত দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিমুক্ত যে সমাজের চেতনায় এ দেশে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেই চেতনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। ভোগের রাজনীতির নামে যারা দলের সুনাম ক্ষুণ্ন করছেন, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এ সব পদলোভীকে দল থেকে ছাঁটাই করতে হবে। দলে বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির প্রচলনকে প্রাধান্য দিতে হবে।একটি রাষ্ট্রের মানুষের পরম চাওয়া হচ্ছে ন্যায়বিচার ও শান্তি। আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব সেই শাণিত চেতনা ও ঐক্যে এগিয়ে গেলেই প্রজন্ম তাদের সাথে থাকবে এ দেশের সকল মৌলিক প্রয়োজনে। --------------------------------------------------------------------------------------------------দৈনিক খোলাকাগজ || ঢাকা || ২৮ অক্টোবর ২০১৬ শুক্রবার সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:১৬
false
rn
বিদেশী মানব মানবী’র ভালোবাসা 'জন মাইক্যাল' মার্কিন যুক্তরাষ্টে একটি নামকরা স্কুলে তখন দশম শ্রেনীর ছাএ।একদিন ইংরেজী ক্লাশ চলাকালে জন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিল পাশে বসা 'রোজ এন' মেয়েটির দিকে।এই রোজ এন'ই ছিল জন মাইক্যালের খুব ভালো বন্ধু।জন মাইক্যাল,রোজ এন এর দীর্ঘ এবং সিল্কী চুলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবতো এ মেয়েটি আমার।কিন্তু রোজ এন এমন ভাবতো না তা জন মাইক্যাল'র ভালোই জানা ছিল।ক্লাশ শেষে রোজ এন,জন মাইক্যালের দিকে এগিয়ে এসে একটু মিষ্টি হেসে আগের দিনের নোট চাইলো।সেদিন রোজ এন ক্লাশে অনুপস্থিত ছিলো।জন মাইক্যাল তাকে নোট গুলো দিয়ে দিলো।রোজ এন তাকে ধন্যবাদ জানালো আর কপোলে চুমু খেলো।জন মাইক্যাল তাকে বারবার বলতে চাইলো-"আমি তোমাকে জানতে চাই,শুধু বন্ধু হিসেবে থাকতে চাই না।আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু এ কথা আর বলা হলো না।এক আকাশ ভয়,লজ্জা,দিধা এসে ভর করলো জন মাইক্যালের কাঁধে।জন মাইক্যাল জানে না কেন এমন হয়।তখন জন মাইক্যাল একাদশ গ্রেডে।ক্রমাগত ফোন বাজছে।জন মাইক্যাল ফোন ধরলো।অপর প্রান্তে সেই মেয়েটি 'রোজ এন' কাঁদছিল।খুব নিচু সরে কিছু হয়তো বলছিলো।জন মাইক্যালের কাছে তা স্পষ্ট নয়।রোজ এন একা থাকতে চাইছিল না।তাই জন মাইক্যাল কে কাছে ডাকলো।জন মাইক্যাল গেলো।রোজ এর পাশের সোফায় বসলো।জন মাইক্যাল তার নরম চোখের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।মনে মনে জন মাইক্যাল বললো-তুমি আমার।দু'ঘন্টা চলে গেল।একটি ছবি শেষ হলো।খাওয়া হলো তিন প্যাকেট চিপস্।দুই গ্লাস কোক।এক পর্যায়ে রোজ ঘুমাতে যেতে চাইলো।জন মাইক্যালের দিকে তাকিয়ে বললো-সঙ্গ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।কপোলে একে দিলো একটি চুমু।জন মাইক্যাল রোজ কে বলতে চাইলো-''আমি কেবল তোমার বন্ধু হয়ে থাকতে চাই না।আমি তোমাকে ভালোবাসি।কিন্তু তা আর বলা হয় না।এক আকাশ সংশয় ভয় তছনছ করে দেয় সবকিছু।জন মাইক্যাল জানে না কেন এমন হয়।তখন জন মাইক্যাল সিনিয়র ইয়ারে।বার্ষিক নিত্যের আগের দিন রোজ জন মাইক্যালের কাছে এলো।বললো-আমার সঙ্গী অসুস্থ তাই তার পক্ষে নৃত্যে অংশ নেয়া সম্ভব নয়।জন মাইক্যাল বললো-আমার সঙ্গী যোগাড় হয়নি তাই আমারও সেখানে যাওয়া হবে না।পরে তারা প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হলো-তারা দু'জনে একএে সেখানে যাবে "বন্ধু হিসেবে"।তাই তারা বার্ষিক নৃত্যে অংশ নিতে গেল।তখন রাত।জন মাইক্যাল তার দরজায় দাঁড়িয়ে অবাক চোখে দেখছিল রোজ কে।রোজ হাসি মুখে তার সচ্ছ চোখ মেলে তাকিয়ে রইলো জন মাইক্যালের দিকে।জন মাইক্যাল মনে মনে বললো-তুমি আমার।কিন্তু রোজ কখনো জন কে এমন দৃষ্টিতে দেখেনি।জন মাইক্যালের তা জানা ছিল।এক পর্যায়ে রোজ বললো-আমার খুব চমৎকার সময় কেটেছে,ধন্যবাদ।এক টুকরো চুমুও দিল।জন মাইক্যাল বলতে চাইলো-আমি শুধু তোমার বন্ধু হয়ে থাকতে চাই না।আমি তোমাকে ভালোবাসি।কিন্তু তা আর বলা হলো না।এভাবে দিন গেল,সপ্তাহ গেল, মাস গেল।সেদিন ছিল 'গ্র্যাজুয়েশন ডে' জন মাইক্যাল দেখলো রোজ এন তার ডিপ্লোমা নেয়ার জন্য উঠে গেল মঞ্চে।অসাধারন সুন্দর লাগছে।দেখতে যেন কোন মানবী নয়,স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে কোন পরী কিংবা দেবী প্রতিমা।জন মাইক্যাল তাকে নিজের করে পাওয়ার কথা ভাবলো।কিন্তু মেয়েটি কি তা ভাবছে তার ইঙ্গিত পাওয়া গেল না।জন মাইক্যাল জানে,রোজ তার মতো কখনো ভাবে না।সনদ পএ নিয়ে সবাই চলে যাওয়ার পরে রোজ,মাইক্যালের কাছে এসে হঠাৎ কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো রোজ।জন মাইক্যাল রোজ কে জড়িয়ে ধরলো।এক পর্যায়ে রোজ মাইক্যালের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বললো- তুমি আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।তোমাকে ধন্যবাদ।চুমু দিয়ে রোজ বিদায় নিলো।জন মাইক্যাল,রোজ কে বলতে চাইলো-আমি কেবল তোমার বন্ধু থাকতে চাই না,আমি তোমাকে ভালোবাসি।এক আকাশ লজ্জা,ভয়,সংশয় ভর করলো মাইক্যালের কাঁধে।কিছুই বলা হলো না।আমি জানি না কেন এমন হয়; জন ভাবলো।আজ জন মাইক্যাল বসে আছে একটি চার্চের বেঞ্চিতে।সেই মেয়েটির বিয়ে হচ্ছে যার নাম রোজ এন।জন মাইক্যাল তাকে নিজের করে পেতে চেয়ে ছিল।কিন্তু রোজ তাকে কখনো তেমন চোখে দেখেনি।এটা জন মাইক্যালের জানা ছিল।চার্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে জন মাইক্যাল কে দেখে রোজ অবাক হয়েছিল,কাছে এসে বললো-'তুমি এসেছ!ধন্যবাদ আসার জন্য'।তার পর কপোলে চুমু খেল।জন মাইক্যালের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে।জন মাইক্যাল তাকে বলতে চাইলো-আমি কেবল তোমার বন্ধু হয়ে থাকতে চাইনি।আমি তোমাকে ভালোবাসি।কিন্তু জন মাইক্যালের তা আর বলা হলো না।সংশয় ভয় দিধা।জন জানে না কেন এমন হলো।অনেক বছর পরে।জন মাইক্যাল তাকিয়ে আছে একটি কফিনের দিকে।সেখানে সায়িত সেই মেয়েটি 'রোজ এন'।যাকে জন ভালোবেসেছিল কিন্তু কখনো বলা হয়নি।এবারো জন মাইক্যালের চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়ছে।ভেজা চোখে জন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।অনেক পরে রোজ এনের একটি ডায়েরী পাওয়া যায়।যেটি সে লিখেছিল তার স্কুল জীবনে।সেই ডায়েরীতে লেখা রয়েছে-"আমি জন মাইক্যালের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি।মনে মনে ভাবি জন আমার শুধু আমার।কিন্তু জন আমাকে কখনোই এমন দৃষ্টিতে দেখে না।তা আমি ভালো করেই জানি।আমি তাকে বারবার বলতে চেয়েছি-আমি কেবল তোমার বন্ধু হয়ে থাকতে চাই না।আমি তোমাকে ভালোবাসি।কিন্তু আমার তা বলা হয়নি।অজানা এক ভুবনের সব লজ্জা,ভয়,শংকা যেন এসে ভর করে আমার কাঁধে।আমি জানি না কেন এমন হয়।আমি চাই জন আমাকে বলুক 'তোমাকে ভালোবাসি' আর আমিও বলি ভালোবাসি।কিন্তু কিছুই ঘটে না।শুধু চোখ দিয়ে গরিয়ে পড়ে অশ্রু"। --------------------------------------------------------------------------------
false
mk
প্রসঙ্গ - তনু হত্যা__ তনু হত্যা বিষয় টা দিন দিন কেন যেন অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে। আসুন আমরা সবাই সঠিক তদন্তে সবাইকে সাহায্য করি। আমার এই বিষয় টা নিয়ে লেখার কোনো ইচ্ছা ছিল না। চারদিকে শার্লক হোমস এর ছড়াছড়ি দেখে চুপ থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছিলো। আবশেষে লেখা শুরু করলাম।আজ একজনের সাথে কথা বলার সময় আমি বললাম যে তনুর গায়ে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না। সাথে সাথে তার উত্তর "তাহলে তনুর গায়ে কাপড় ছিল না কেন? গায়ে এত রক্তের দাগ ছিল কেন?" আমার নিজের উপরেই বিশ্বাস হারায়ে ফেলছিলাম যে আমি ভুল করছি কি না? আসলে এখন পর্যন্ত কেউ এই কথা আমাকে বলে নি। সাথে সাথে আমি ফেসবুক এ সার্চ দিলাম তনুর কি ছবি দেওয়া হয়েছে তা দেখার জন্য। এই ছবি সবাই দেখেছে, এই ছবি দিয়েই সবাই বিচারের দাবীতে অনেক কিছু করেছে। অবশই আমরা সবাই বিচার চাই, তনু হত্যার বিচার চাই, তার ফাঁঁসি চাই, নিজের হাতে মারতে পারলে সেটাও চাই। কিন্তু আমার মনে হল কিছু জিনিস সবার জানা উচিত যেন এই ব্যাপার টা অন্য দিকে মোড় না নেয়, আমাদের দেশ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।স্ট্যাটাস এ মাঝে মাঝে ছবি দেয়া যায় না, তাই শেষ করে সব একসাথে দিব। কষ্ট করে একটু লেখার সাথে মিলায়ে নিবেন।তনুর যে ছবি নিয়ে আমরা অনেক গল্প বানিয়েছি, অনেক কথা বলেছি, অন্যদের কে শেয়ার করেছি সেটা নিয়ে আমি গুগোল করলাম। অবাক হলাম আমি ও, আমাদের তরুন সমাজের বুদ্ধি দেখে। গত ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে ভিয়েতনাম এর একটি অনলাইন পত্রিকায় "PHÁT HIỆN 3 XÁC PHỤ NỮ ĐANG TRÊN BÀN MỔ LẤY NỘI TẠNG CĂN BIỆT THỰ TẠI HẢI PHÒNG" শিরনামে একটা প্রবন্ধ লেখা হয়েছে যার বিষয়বস্তু হলো "ভিয়েতনাম এ মানবদেহের যন্ত্রাংশ পাচার।" আর সাথে এই এক ই ছবি ... আমরা তনু বলে চালিয়ে দিচ্ছি। আমার ল্যাপটপ থেকে স্ক্রিনশট নেয়া ছবিগুলো ও দিলাম।অনেকেই আবার হয়ত বলতে পারেন তাহলে আসল ছবি দেয়া হোল না কেন? আমার ও এক ই প্রশ্ন, কেন দেয়া হোল না, কে চায়নি সত্য টা প্রকাশ পাক? কে চেয়েছে এটা নিয়ে দেশে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হোক? আসুন আমরা তাদের কে ও সমান দোষী করি যারা দেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছে মিথ্যা ছবি প্রকাশ করেছে।আর আপনাদের সবার জন্য আমি আবার তনুর সত্যিকার ছবি দিলাম। এই ছবি টি ঘটনার দিন রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে তোলা। আর আরেকটি সত্য কথা, লাশ টা যখন পাওয়া গেছিল তখন তার ড্রেস এভাবেই পরানো ছিল। যারা ১ জন ধর্ষন করেছে না কি ৪/৫ জন মিলে ধর্ষন করেছে এটা নিয়ে দ্বিধায় আছেন তাদের মনে হয় ভেবে দেখা উচিত যে আদৌ ধর্ষন করা হয়েছে কি না। আমরা আমাদের নিষ্পাপ মৃৃত বোন এর গায়ে হয়তো নিজের অজান্তেই ধর্ষিতা নামের অপবাদ জুড়ে দিচ্ছি শুধু জানা ও বোঝার ভুল এ।আমি কাউকে উপদেশ দেওয়ার মতো কেউ না, তবু ও ছোট্ট একটা উপদেশ, "আমাদের বন্ধু ও আছে আবার শত্রু ও আছে, কিছু করার আগে একটু বুঝে নিয়ে কাজ করি যেন কোনভাবেই শত্রু রা লাভবান না হয়ে যায়।"কয়েকদিন আগে ‪#‎জুনায়েদ‬ নাম টি নিয়ে আলোড়ন উঠেছিল নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু কে অন্যের শোনা কথায় কান দিয়ে পিটানোর জন্য। ফলাফল হল, জুনায়েদ কে সবাই ছি ছি করছে। আমাদের কি উচিত না এই ছোট বিষয় থেকে শিক্ষা নেয়া??অনেক লিখেছি। আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত যে, কোন মিথ্যা বা ভুল তথ্য এখানে দেই নি। কারও যদি আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার ইচ্ছা থাকে তাহলে দয়া করে প্রমান সহ করবেন, আমি মেনে নিব। এখন ছবি গুলো দিলাম।ধন্যবাদ। সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৪৯
false
ij
গল্প_ শেষবেলার নানারকম আলো রাজু বলল, দাদু, তুমি কেবল প্রকৃতির সুন্দর দিকটাই দেখ, কেন যে তোমার চোখে প্রকৃতির ভয়াল রুপ পড়ে না ? এই সিডরের কথাই ধরো না কেন? কত লোক মারা গেল সিডরে। জান প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্বজুড়ে কত মানুষ মারা যায়? ঈশ্বর থাকলে তা কি করে সম্ভব হত? চৌধুরী সাহেব চুপ করে রইলেন।জান দাদু, উদ্ভিদেরও ক্যান্সার হয়?চৌধুরী সাহেব চমকে উঠতে উঠতে সামলে নিলেন। মলিন হাসলেন। চশমা খুলে পাঞ্জাবীর কোণে মুছলেন। তারপর চশমা পরে কিশোর নাতির মুখের দিকে তাকালেন। মায়ের কাটাকাটা চোখ-নাক পেয়েছে রাজু, রংটা অবিশ্যি বাপের মতন ফরসা; একমাথা কোঁকড়া চুল; কালো ফ্রেমের চশমা মুখে পড়–য়া পড়–য়া বুদ্ধিদীপ্ত ভাব এনেছে। নাতির সবই ভালো তবে সৃষ্টিকর্তার ওপর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। প্রতিদিনই ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে নাতির সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হয়। নাতির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে চৌধুরী সাহেব ভারী আমোদ পান । তাঁর এখন চলে যাওয়ার সময় হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বাস গাঢ় হয়ে উঠছে, তাঁর বিশ্বাস এত সহজে টলবে না। চারিদিকটা সকালবেলার রোদে ঝলমল করছিল । তিনতলার ছাদের ওপর বাগান। তারই এককোণের শেডয়ের তলায় বেতের চেয়ারে বসে আছেন নাতির মুখোমুখি; এদিকটায় কতগুলি টব। ডালপালার ঘন সবুজ ঘ্রান পাচ্ছেন। এসবই মিছে? এই ঘ্রান? ওদিকটায় ছোট সবজীর ক্ষেত। টমাটো, সীম, মটরশুঁটি বুনেছেন। ধনে পাতা দিয়ে টমাটোর সালাদ খেতে ভালোবাসেন চৌধুরী সাহেব-তার স্বাদ, এসবই কি মিছে? রাজুর যা বয়েস, ঠিক হয়ে যাবে। একদিন ও ঠিকই বিশ্বাস করবে। রাজু ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি যুক্তি দিয়ে যাচ্ছে। চৌধুরী সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। রাজু তাঁর বড় ছেলের একমাত্র ছেলে। বড় ছেলে সিদ্দিক মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করে। কেমিষ্ট। বেতন ভালোই- তবে দেশে খুব কমই আসতে পারে। রাজু পড়ে ক্যাডেট কলেজে; আগামী বছর এইচ এস সি দেবে। সেও বছরে দু-একবারের বেশি আসতে পারে না। বৃদ্ধ বয়েস কেমন নিঃসঙ্গ থেকে গেলাম। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন চৌধুরী সাহেব। তবে রাজু এলে হইচই হয় । ছেলেটা আল্লাখোদায় বিশ্বাস করতে চায় না। বিজ্ঞানের নামে কী সব বলে-চৌধুরী সাহেবের হাসি পায়। আরে বইয়ের ভিতর দিয়ে জীবন বিচার করলে চলে? বেঁচে থাকাটা উপাদেয় করার জন্য দরকার সত্যের সঙ্গে মিথ্যা কল্পনার মিশেল । রাজুরা এটাই বোঝে না। জীবনে শুধু সত্য সত্য করলে জীবন পানসে হয়ে যায় না? রাজু বলে যাচ্ছিল, তোমরা যে কেবল প্রকৃতির সৌন্দর্যের ভিতর সৃষ্টিকর্তার মাহাত্ব্য দেখ, প্রকৃতির ভয়াবহতা উপেক্ষা কর-একে সিলেকটিভ অবজারভেশন বলে দাদু। ফর এভরি নিউ বেবি মিরাকুলাসলি বর্ন ইন দ্য মেটারনিটি ওয়াড, দেয়ার ইজ, ডাউন টু দ্য হল, আ লোনলি ওল্ড ম্যান ডায়িং আ টরচরাস ডেথ ইন দ্য ক্যান্সার ওয়াড। সদ্য পড়া বই থেকে মুখস্ত বলল রাজু।নাতির মুখে ইংরেজি কথা শুনতে শুনতে চৌধুরী সাহেব দূর থেকে বউমাকে আসতে দেখলেন। বউমার হাতে ট্রে। চা এনেছে। এই সময়টায় শেডের তলে তিনজনে বসে চা খায়। টেবিলের ওপর ট্রেটা রেখে রাশেদা বসল। তারপর অনুযোগের সুরে বলল, দেখেন তো বাবা, আপনার নাতি কদ্দিন পরে মায়ের কাছে এল, এখনও বন্ধু বন্ধু করে অস্থির। বুধবার বন্ধুদের সঙ্গে কই যেন যাবার প্ল্যান করছে। আমি রাসেলকে ফোন করেছিলাম। রাসেল এড়িয়ে গেল। আজকালকার ছেলে-কেমন শয়তান!চায়ের কাপ তুলে নিতে নিতে চৌধুরী সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, কই যাবি রে বুধবার?কালেশ্বর বিল দাদু। রাসেল জিপ নিয়ে আসবে। নাহিদ আর সাইদরাও যাবে।তো, যাক না বউমা।অন্য সময় হলে রাশেদা অ-রাজী হতেন না। শ্বশুরের বিরুদ্ধে যাওয়া তার ধাতে নেই -শ্বশুরের সঙ্গে সর্ম্পক বেশ মোলায়েম। তবে আজ কী হল রাশেদার, বেঁকে বসল। তীক্ষ্মস্বরে বলল, না! তুই বুধবার কালেশ্বর বিল যেতে পারবি না। গেলে আমার মরা মুখ দেখবি।চৌধুরী সাহেব ভীষণ চমকে উঠলেন। রাজুর মুখও কালো হয়ে উঠল। বলল, আচ্ছা মা, আমি যাব না। যাবি না, না যাবি,সে তোর ব্যাপার। বলে রাশেদা চা না-খেয়েই উঠে চলে যায়।চৌধুরী সাহেব গম্ভীর। নরম সুরে বললেন, না গেলে কি এমন হয় রে? মায়ের জন্য স্যাক্রিফাইস করতে পারবি না?বললাম তো আমি যাব না। চৌধুরী সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। বুধবার দুপুর বেলা। রাজু ছাদে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। একা। কী কারণে তাকে ভীষণ অস্থির আর বিষন্ন লাগছিল। ওপাশে সার সার নাড়কেল গাছ। কি এর মানে? যদি ঈশ্বর না-ই থাকে। নাড়কেল পাতায় ঝলমলে রোদের দুলুনি। রেলিংয়ের ওপাশে একটা টেনিস বল; হঠাৎ চোখ গেল। সবুজ রঙের। একেবারে নতুন। আরে টেনিস বল এল কোত্থেকে? কোনওকিছু না-ভেবেই রাজু রেলিং টপকালো। এমন সময় ফোনটা বাজল। পকেট থেকে সনি এরিকসনটা বার করে রাজু। হ্যালো ... হ্যালো ... শোন ...তমা ... শোন ... ভীষণ বিরক্ত হয়ে ফোনটা অফ করে টেনিস বলটা নিতে ঝুঁকল, কী কারণে মাথা টলে উঠল, পায়ের নিচে ঘন শ্যাওলা ... ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল । গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল দারোয়ান। দৃশ্যটা দেখতে পেয়ে সে চিৎকার করে উঠল। নিচতলার ভাড়াটে উকিল সাহেবের ড্রাইভার খেতে বসেছিল। চিৎকার শুনে ভাত ফেলে ছুটে আসে। রাজুর রক্তমাখা অচেতন শরীর দ্রুত গাড়িতে তুলে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।লাভ হয়নি।ঘটনার আকস্মিকতায় চৌধুরী সাহেব নির্বাক হয়ে গেলেন। শরীরের সমস্ত শক্তি কে যেন শুষে নিয়েছে। অনেক কষ্টে মানসিক শক্তি সঞ্চয় করে বড় ছেলেকে টেলিফোন করলেন। ছেলে অঝোরে কাঁদল। কাজের ভীষণ চাপ, আসতে পারবে না। ঘোরের মধ্যে চৌধুরী সাহেব নাতির শেষকৃত্য সম্পন্ন করলেন। ক’দিন চারিপাশের দৃশ্য রংশূন্য সাদাকালো দেখলেন। চোখের রং ধীরে ধীরে ফিরে এলেও টের পেলেন পানির পিপাসা একেবারে নিভে গেছে। সকালের দিকে হাঁটতে যেতেন, এখন আর সেরকম ইচ্ছে করে না। সারাদিন ঘরে শুয়ে বসে থাকেন। রাশেদা পাথর। কাঁদতে পারে না। দিন কয়েক আগে রাশেদার ছোট বোন বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসেছে। রিনার শ্বশুরবাড়ি দিনাজপুর, দুদিন থেকে চলেই যেত- বড় বোনের বিপদ দেখে থেকে গেল। ছোটবোনকে জড়িয়ে রাশেদা বারবার বলতে লাগল, আমিই ওকে মেরে ফেললাম। ও ওর বন্ধুদের সঙ্গে কালেশ্বর বিল যেতে চেয়েছিল। আমি যেতে দিলাম না। যেতে দিলে ... যেতে দিলে আমার ছেলে ওভাবে মারা যেত না। রিনা বোনকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, থাক রাশু। সবই আল্লার ইচ্ছে। মনে কর তোর ছেলেকে আল্লা নিয়ে গেছেন।এই কথায় মায়ের কী সান্ত্বনা হয়। এক ফাঁকে চৌধুরী সাহেবের ঘরে এল রিনা। বলল, জানেন খালুজান। আমি কিন্তু গাজীপুর আসার আগে ভীষন খারাপ স্বপ্ন দেখছি।কি দেখছ?দেখছি, গাজীপুরে ভূমিকম্প হইছে। আর আপনার বাড়িটা নাই, সেই যায়গায় খাল। রুপার মতন পানি খলখল করতেছে, আর একটা সাদা রঙের গাভী, গাভীর গায়ে আগুন ...চৌধুরী সাহেব শিউড়ে উঠলেন।একটু চুপ করে রিনা বলল, খবর নিয়ে দেখেন ...কী দেখব?আপনার ছেলে-আমার ছেলে কি?আমার মনে হয় খালুজান সিদ্দিক দুলাভাই ছৌদি আরবে আরেকখান বিয়া করেছেচুপ কর! ফাজিল মেয়ে কোথাকার! চৌধুরী সাহেব চিৎকার করে উঠলেন। ময়নার মা এ বাড়ির পুরনো ঝি। চিৎকার শুনে সে ছুটে এল। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, আমারে কিছু বলেন খালুজান? চৌধুরী সাহেব কি বলবেন। তাঁর শরীর রীতিমতো কাঁপছে। বোনের শ্বশুরের ধমক খেয়ে রিনার মুখ শুকিয়ে যায়। চৌধুরী সাহেব আর কিছু বললেন না। রাশেদার কানে যাবে। বাইরের লোকের জন্য ঘরে অশান্তি করা ঠিক না। চৌধুরী সাহেব রাগ হজম করলেন। পরদিন রাশেদা এসে চৌধুরী সাহেব কে বলল, বাবা। বল মা। বুকটা অল্প অল্প কাঁপছে। রিনা সম্ভবত অন্যরকম ইঙ্গিত করেছে।ময়নার মা গতকাল রাতে কী যেন দেখল।কী দেখল মানে?অল্প বয়েসি ছেলে। রান্নাঘরের অন্ধকারে দাঁড়ায় ছিল। কালরাতে একবার কারেন্ট গেল না, তখন ...হুমম।বাবা? রাশেদা বলল।বল।মৌলবী ডেকে খতম পড়ালে হয় না? ঠিক আছে। বলছ যখন ...পরদিন। বাদ আসর মিলাদ। তার আগে স্থানীয় মাদ্রাসার বারোজন ছাত্র এসে সুর করে সারাদিন কোরান তেলোয়াৎ করল। দুপুরে মিসকিন খাওয়ালেন চৌধুরী সাহেব। এক ফাঁকে রাশেদা বলল, ছেলেটাকে রিনাও দেখেছে। অল্প বয়েসি একটা ছেলে সিঁড়িঘরে দাঁড়িয়ে ছিল। একটুপর দেখে নাই। কথাটা শুনে চৌধুরী সাহেবের মুখ গম্ভীর হয়ে যায়।সন্ধ্যার পর রিনারা চলে গেল । চৌধুরী সাহেব জানেন রিনা আসলে ভয় পেয়েছে। অপঘাতে মারা গেলে ভূত হয় .. লোকের এমনই বিশ্বাস। শোক কিছুটা স্তিমিত হলে চৌধুরী সাহেব রাজুর ঘরে এলেন। দক্ষিণমুখি ঘরটা ছোট, তবে সুন্দর করে সাজানো। খাট, আলমারী, টেবিল। এক কোণে একটা গিটার। বিছানায় অনেক বই ছড়িয়ে। চৌধুরী সাহেব বিছানার ওপর বসলেন। এক এক করে বইগুলো দেখছেন। ডেভিড মিলস এর ‘আথিস্ট ইউনিভারস’; স্তেফান এইনহর্ন এর ‘আ কনসিলড গড’; জেমস ডি স্টেইন এর ‘এর হাউ ম্যাথ এক্সপ্লেইনস দ্য ওয়াল্ড’ ব্রিয়ান রিগ্যাল এর ‘হিউম্যান এভ্যুলেশন’ কার্ল সাগান এর ‘দি কসমিক কানেকশন’; স্টিভেন ওয়েনইবার্গ এর ‘দি ফাস্ট থ্রি মিনিটিস’; প্রতিটি বইয়ে বৃত্তাকার নীল রঙের সিল: ফ্রি থিঙ্কার্স; কনডাকটেড বাই: মাহাবুবুল আলম । কে মাহাবুবুল আলম? অন্যমনস্ক হয়ে ডেভিড মিলস ‘আথিস্ট ইউনিভারস’ বইটা তুলে নিলেন। বইয়ের ভিতর থেকে একটা কী পড়ল, একটা ছবি, কিশোরী মেয়ের ছবি। কার? চৌধুরী সাহেব বিস্মিত। বিছানার পাশে রাখা ল্যান্ড ফোনটা ঝন ঝন করে বাজল। চমকে উঠলেন। ঝুঁকে রিসিভার তুলে বললেন, হ্যালো। ও প্রান্তে কেউ কথা বলল না । অনেকক্ষণ ওপ্রান্ত নীরব থাকলে রিসিভার রেখে দিলেন চৌধুরী সাহেব। ডিসপ্লেতে একটা অপরিচিত নাম্বার। মনে গেথে নিলেন। ছবিটা দেখছেন। চশমা পড়া শ্যামলা মিষ্টি মুখ।হঠাৎ লক্ষ করলেন ছবি পিছনে ছোট ছোট করে লেখা:“ তমা, আমি যেমন সেভাবেই যদি তুমি আমাকে গ্রহন না কর তাহলে আমি ঠিকই কালেশ্বর বিলে ডুবে মরব।” শেষে রাজুর নামটা লেখা। চৌধুরী সাহেব ভীষণ চমকে উঠলেন। রাজু কি তা হলে আত্বহত্যা করল? পরদিন। সকালের দিকে একতলার মেন গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন চৌধুরী সাহেব। মেন গেটের কাছে নাড়িকেল গাছ। দারোয়ান গাছের গোড়া পরিস্কার করছে। একটা কালো রঙের জিপ এসে থামল। চৌধুরী সাহেব মুখ তুলে চাইলেন। জিপ থেকে সতেরো-আঠারো বছরের কিশোর নামল। রাসেল। রাজুর বন্ধু। দূর থেকেই সালাম দিল রাসেল । মুখটা শুকনো। স্বাভাবিক। জীবন থেকে বন্ধু ঝরে গেল। দু-এক কথার পর চৌধুরী সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, মাহাবুবুল আলম কে বলত?মুহূর্তেই রাসেলের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেল। আমাদের স্যার। ফিজিক্স পড়ান। খুবই পপুলার। ভীষণ এনলাইটেড মানুষ। কোয়াটারেই থাকেন?হ্যাঁ। স্যারের বাড়িতেই আমাদের ক্লাব।ক্লাব মানে?মাহাবুব স্যারকে সভাপতি করে আমরা একটা ক্লাব করেছি। ফ্রি থিঙ্কারর্স ক্লাব। কেন রাজু আপনাকে বলেনি? চৌধুরী সাহেব চুপ করে থাকেন।আমরা সবাই রিলিজিয়াস ডগমা আর মধ্যযুগীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। মাহাবুব স্যারের লাইব্রেরিতে অনেক বই আছে। রাজুর কাছেও তো অনেক বই আছে। আপনি দেখেননি?হ্যাঁ। দেখেছি। তা তোমাদের স্যারের ছেলেমেয়ে ক’জন?স্যারের তিনি মেয়ে এক ছেলে। ছেলেটা ছোট, নাম ফিদেল, ক্লাস ওয়ানে পড়ে । আর?স্যারের বড় মেয়ে রুখসানা আপার গত বছর বিয়ে হয়ে গেছে। বাকি দুই মেয়ে পড়াশোনা করে ঢাকায় । রুমা আর তমা। এরা যমজ। এরা দুজনই আমাদের সঙ্গে আগামী বছর ইন্টারমিডিয়েট দেবে । রুমা অবশ্য আমাদের ক্লাবে সদস্য তবে তমা ...।হ্যাঁ। বল, তমা?তমা ... তমা ওর বাবার যুক্তিবাদী শিক্ষা সত্ত্বেও ছোটবেলা থেকেই কী এক কারণে ডিপলি রিলিজিয়াস । তমা আমাদের কাছে এক রিডল। সো ... সো মাহাবুব স্যার মেয়ের ওপর খুব একটা প্লিজড না। ও, আচ্ছা বুঝেছি। সেদিন সন্ধ্যায় ছাদে একা বসেছিলেন চৌধুরী সাহেব। বাগানের ওপর বেলাশেষের ছায়া পড়েছে। আকাশেও শেষবেলার নানারকম আলো। রাজুর মৃত্যুর কারণ অনেকটাই পরিস্কার। রাজু লিখেছিল: “তমা, আমি যেমন সেভাবেই যদি তুমি আমাকে গ্রহন না কর তাহলে আমি ঠিকই কালেশ্বর বিলে ডুবে মরব।” তমার সঙ্গে কথা বলা দরকার। নম্বরটা মনে আছে। তমা সম্ভবত রাজুকে বিশ্বাসের পথে ফেরাতে চেয়েছিল। একদিকে স্বাধীন চিন্তার আকর্ষন, অন্যদিকে কিশোর বয়েসের ভালোবাসা-এই দ্বন্ধই সম্ভবত সহ্য করতে না পেরে ... মাগরিবের আজান শুনতে পেলেন। নামাজ পড়বেন। অজু করাই ছিল। সিঁড়িঘরের দিকে যেতে থাকেন। সিঁড়ি ঘরে আবছা অন্ধকার। ঘরে ঢোকার আগে একবার ফিরে তাকালেন। কে যেন ওখানে দাঁড়িয়ে মনে হল। কিশোর বয়েসি ... দ্রুত ঘরে ফিরে এলেন চৌধুরী সাহেব। রাশেদা আগরবাতি জ্বালাচ্ছিল। বউমা? বউমা?বলেন বাবা।সিঁড়িতে কি যেন দেখলাম।কি ...কি দেখলেন বাবা!কি দেখলাম ঠিক বুঝতে পারলাম না তবে ...কথাটা শেষ না করে নিজের ঘরে চলে এলেন চৌধুরী সাহেব ।আজকাল রাতের বেলায় চৌধুরী সাহেবের খুব একটা ঘুম হয় না। অনেক রাত অবধি তিনি রাজুর ঘরে বসে থাকেন। তমা নামে একটি কিশোরীর ফোনের অপেক্ষায় থাকেন... তখন টের পান কে যেন ঘরের অন্ধকারে এসে দাঁড়ায়-অবশ্য মনের ভুলও হতে পারে ...আসলে জীবনের শেষবেলার মানুষ নানারকম আলো দেখে ।তিনিও দেখছেন ...উৎসর্গ: আকাশ পাগলা
false